Showing posts with label সমাজবিজ্ঞান. Show all posts
Showing posts with label সমাজবিজ্ঞান. Show all posts

উন্নত জাতি গঠনে সেবামূলক পেশার গুরুত্ব

উন্নত জাতি গঠনে সেবামূলক পেশার গুরুত্ব

ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে, একটি জাতির উন্নতি নির্ভর করে তার নাগরিকদের মানসিকতা, মূল্যবোধ এবং পেশাগত দায়িত্ববোধের উপর। বিশেষত, সেবামূলক পেশা সমূহ যেমন—চিকিৎসা, শিক্ষা, সমাজসেবা, নার্সিং, আইন, প্রশাসন ইত্যাদি একটি জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। সুতরাং, উন্নত জাতি গঠনে এসব পেশাকে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত।

উন্নত জাতি গঠনে সেবামূলক পেশার গুরুত্ব


সেবামূলক পেশার সংজ্ঞা

সেবামূলক পেশা হলো এমন ধরনের পেশা যা ব্যক্তিগত লাভের চেয়ে জনকল্যাণকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই পেশার মাধ্যমে সরাসরি মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা হয় এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়।

উন্নত জাতি গঠনে সেবামূলক পেশার গুরুত্ব

১. মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণে সহায়ক:

প্রত্যেক মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষালাভ, আইনের সুরক্ষা পাওয়া মৌলিক অধিকার। শিক্ষক, ডাক্তার, নার্স, আইনজীবী, সমাজকর্মী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এই অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে কাজ করেন।

২. নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে:

সেবামূলক পেশার মূল ভিত্তি হচ্ছে নৈতিকতা ও মানবিকতা। যেমন, একজন চিকিৎসক রোগীর সেবায় আত্মনিয়োগ করেন শুধুমাত্র পারিশ্রমিকের জন্য নয়, বরং রোগীকে সুস্থ করার দায়িত্ববোধ থেকেই। এই ধরনের পেশা তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে মানবিক গুণাবলি অর্জনে।

৩. সমাজে সচেতনতা ও নেতৃত্ব গড়ে:

শিক্ষক বা সমাজকর্মীর মতো পেশাজীবীরা সমাজে সচেতনতা তৈরি করেন, মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উৎসাহ দেন এবং নেতৃত্ব গড়তে সাহায্য করেন। যার ফলে সমাজে গঠনমূলক পরিবর্তন আসে।

৪. দুর্নীতি রোধ ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করে:

সেবামূলক পেশার নৈতিক দায়বদ্ধতা দুর্নীতি রোধে সহায়ক। একজন সৎ প্রশাসক বা আইনের রক্ষক অপরাধ দমন ও সুবিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখেন।

৫. পরিবার ও সমাজ গঠনে সহায়ক:

একজন সেবাকর্মী শুধু একজন পেশাজীবী নন, তিনি একজন সমাজ গড়ার কারিগর। একজন ভালো শিক্ষক যেমন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়েন, তেমনি একজন ভালো চিকিৎসক সুস্থ সমাজ নিশ্চিত করেন।

৬. দুর্যোগকালীন সময়ে বিশেষ ভূমিকা:

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি বা সংকটকালীন সময়ে সেবামূলক পেশার মানুষই সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করেন। যেমন, করোনাকালে চিকিৎসক ও নার্সদের অবদান জাতিকে রক্ষা করেছে।

৭. সামাজিক বৈষম্য কমাতে সহায়ক:

সেবামূলক পেশাজীবীরা দরিদ্র, অসহায়, ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করতে সহায়তা করেন।

৮. টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি:

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) পূরণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং সুশাসন যা সেবামূলক পেশার মাধ্যমে অর্জিত হয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেবামূলক পেশার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষ ও নিষ্ঠাবান পেশাজীবীর ঘাটতি রয়েছে। তাই এসব পেশাকে আরও মর্যাদাপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। তরুণ সমাজকে এই পেশায় উৎসাহিত করতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, সম্মান ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।

উপসংহার: উন্নত জাতি গঠনের জন্য কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, প্রয়োজন মানবিক ও নৈতিক উন্নয়ন। আর এই উন্নয়ন সম্ভব সেবামূলক পেশাগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। তাই সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলেরই উচিত এই পেশার গুরুত্ব অনুধাবন করে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনে অবদান রাখা।

পরিবেশের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব আলোচনা কর

পরিবেশের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব

ভূমিকা:- বিশ্বায়ন বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি এবং বাণিজ্যের মধ্যে আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে এই প্রক্রিয়ার যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে, তেমনি নেতিবাচক প্রভাবও স্পষ্ট, বিশেষ করে পরিবেশের ক্ষেত্রে। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার, দূষণ এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস—এসবই বিশ্বায়নের সরাসরি বা পরোক্ষ ফলাফল।

পরিবেশের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব


পরিবেশের উপর বিশ্বায়নের ১২টি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব নিম্নোক্ত আলোচনা করা হলো

১। গ্রীনহাউজ প্রক্রিয়া: বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও পরিবহনব্যবস্থার সম্প্রসারণে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্যাস নির্গমনের হার বেড়েছে। এই গ্যাসগুলো গ্রীনহাউজ প্রভাব সৃষ্টি করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

২। শিল্পায়ন: বিশ্বায়নের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিল্পায়ন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকাংশ শিল্প-কারখানা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার না করায় বায়ু, পানি এবং মাটির দূষণ বেড়েছে।

৩। নগরায়ন: শহরকেন্দ্রিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির ফলে গ্রাম থেকে শহরে মানুষের প্রবাহ বেড়েছে। এর ফলে নগরায়নের চাপ পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে—যেমন শব্দদূষণ, বর্জ্য বৃদ্ধি এবং ট্রাফিক সমস্যা।

৪। বিপজ্জনক বর্জ্য: আধুনিক শিল্প ব্যবস্থায় বিপজ্জনক রাসায়নিক ও বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বর্জ্য প্রাকৃতিক জলাধার ও মাটিকে বিষাক্ত করে তোলে, যা মানুষের স্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি।

৫। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস: বনভূমি উজাড়, আবাসস্থল ধ্বংস এবং অতিরিক্ত শিকার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। অনেক প্রজাতি এখন বিলুপ্তির মুখে, যা একটি গভীর সংকেত।

৬। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন: বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, যা গ্লেশিয়ার গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক। এই পরিবর্তনের পেছনে বিশ্বায়নের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না।

৭। কৃষির আধুনিকীকরণ: বিশ্বায়নের ফলে হাইব্রিড বীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েছে। এতে উৎপাদন বাড়লেও মাটি ও পানির গুণমান কমে গেছে।

৮। পারমাণবিক বিস্ফোরণ: অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলে পারমাণবিক পরীক্ষা এবং বিস্ফোরণ পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এটি শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, বৈশ্বিক পরিবেশেও প্রভাব ফেলে।

৯। বৃক্ষ নিধন: বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি, নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রয়োজনে বনভূমি কেটে ফেলা হচ্ছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ।

১০। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার: তেল, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ বাড়ায়। নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিবর্তে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে জলবায়ু সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

১১। মেগাসিটির প্রভাব: বিশ্বের বড় শহরগুলোতে অত্যাধিক জনসংখ্যা, যানজট ও আবর্জনার পরিমাণ পরিবেশের উপর চাপ বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ও শব্দদূষণও বেড়েছে।

১২। পরিবেশীয় চাপ বৃদ্ধি: বিশ্বায়ন প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটালেও তা পরিবেশের উপর অস্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী চাপ তৈরি করছে। ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত আহরণ, এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যে ক্ষতি এর উদাহরণ।

উপসংহার: বিশ্বায়ন একদিকে আমাদের উন্নয়ন ও সংযোগের নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে, অন্যদিকে পরিবেশের উপর এক বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছে। এই প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজন টেকসই উন্নয়ন কৌশল, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। সঠিক নীতিমালা ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা পরিবেশ রক্ষা ও বিশ্বায়নের ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করতে পারি।


১. বিশ্বায়ন বলতে কী বোঝায়?
বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং জনগণ পারস্পরিকভাবে সংযুক্ত ও নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এটি প্রযুক্তি, বাণিজ্য, তথ্যপ্রবাহ এবং সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যমে বিশ্বকে একটি "গ্লোবাল ভিলেজ" হিসেবে গড়ে তোলে।
২. বিশ্বায়নের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী কী?
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিস্তার
- বহুজাতিক কোম্পানির উত্থান
- সাংস্কৃতিক বিনিময়
- তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন
- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংযোগ বৃদ্ধি
৩. বিশ্বায়নের সুবিধা কী কী?
- পণ্য ও সেবার সহজ প্রাপ্তি
- উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার
- কর্মসংস্থানের সুযোগ
- বৈদেশিক বিনিয়োগ
- শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রসার
৪. বিশ্বায়নের ক্ষতিকর দিক কী?
- স্থানীয় শিল্প ও সংস্কৃতির ক্ষয়
- শ্রমিকের শোষণ
- পরিবেশ দূষণ
- ধনী-গরিব বৈষম্য বৃদ্ধি
- বৈদেশিক নির্ভরশীলতা
৫. কোন কোন খাতে বিশ্বায়নের প্রভাব সবচেয়ে বেশি?
- অর্থনীতি ও শিল্প
- তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ
- শিক্ষা ও গবেষণা
- সংস্কৃতি ও গণমাধ্যম
- চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা
৬. বাংলাদেশে বিশ্বায়নের প্রভাব কেমন?
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প, রেমিট্যান্স, প্রযুক্তি খাত এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তবে স্থানীয় কৃষি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা চাপে পড়েছেন।
৭. বিশ্বায়ন কি পুরোপুরি ইতিবাচক?
না, বিশ্বায়ন কিছু সুবিধা আনলেও তা সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর নয়। এটি বৈষম্য, শোষণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ও ডেকে আনতে পারে।
৮. বিশ্বায়নের ভবিষ্যৎ কী?
প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়নের ফলে বিশ্বায়ন আরও বিস্তৃত হবে। তবে পরিবেশ সংরক্ষণ, সামাজিক ন্যায্যতা এবং সংস্কৃতির সুরক্ষা না থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাবও বাড়তে পারে।

সমাজবিজ্ঞান কী? সমাজবিজ্ঞান এর উৎপত্তি ও ইতিহাস

সমাজবিজ্ঞান কী? সমাজবিজ্ঞান এর উৎপত্তি ও ইতিহাস

ভূমিকা:- সমাজকে জানার বিজ্ঞানের পথ মানুষ জন্মগতভাবে সামাজিক জীব। একাকী নয়, বরং সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করাই তার স্বাভাবিক প্রবণতা। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ নানা রকম সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। এসব সমস্যাকে বিশ্লেষণ করে, সমাজের গঠন ও কার্যপ্রণালী বোঝার প্রয়াস থেকেই জন্ম নিয়েছে একটি নতুন জ্ঞানশাখা সমাজবিজ্ঞান।

সমাজবিজ্ঞান কী সমাজবিজ্ঞান এর উৎপত্তি ও ইতিহাস


সমাজবিজ্ঞান: সমাজবিজ্ঞান হলো একটি বিজ্ঞান, যা সমাজে বসবাসরত মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, সামাজিক কাঠামো ও মানবসমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে আলোচনা করে। সহজভাবে বললে, সমাজবিজ্ঞান সেই শাস্ত্র, যা সমাজবদ্ধ মানুষের জীবন ও তাদের পারস্পরিক কার্যকলাপ নিয়ে অধ্যয়ন করে।

এই শাস্ত্রের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের গঠন, পরিবর্তন, সমস্যা এবং মানব আচরণের পেছনে থাকা কারণসমূহ বিশ্লেষণ করা। সমাজবিজ্ঞান ব্যক্তি নয়, বরং ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মাঝে গড়ে ওঠা সামাজিক সম্পর্কগুলোকেই গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করে।

ইতিহাস ও পরিভাষা: সমাজবিজ্ঞান শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte)। তিনি ১৮৩৮ সালে প্রথম Sociology শব্দটি ব্যবহার করেন এবং ১৮৩৯ সালে সমাজবিজ্ঞানকে একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। “Sociology” শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Socius (সমাজ) ও গ্রিক শব্দ Logos (বিজ্ঞান)-এর সমন্বয়ে, যার অর্থ দাঁড়ায় “সমাজের বিজ্ঞান”। এই কারণে অগাস্ট কোঁৎ-কে ‘সমাজবিজ্ঞানের জনক’ বলা হয়ে থাকে।

সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে সংজ্ঞাবিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো। 

জি. সিমেল (G. Simmel) বলেন “সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান, যা মানব সম্পর্কের অধ্যয়ন করে।”

ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) এর মতে “সমাজবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো সামাজিক কার্যাবলির অধ্যয়ন এবং তার কার্যকরণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা।”

স্পেন্সার (Spencer) বলেন “মানবগোষ্ঠীর জীবন ও আচরণের পঠন-পাঠনই সমাজবিজ্ঞান।”

সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা:

১. সমাজ ও মানব আচরণ বোঝা: সমাজবিজ্ঞান আমাদের সাহায্য করে সমাজে বসবাসরত মানুষের আচরণ, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও সম্পর্ককে গভীরভাবে বোঝতে। এটি জানায়, মানুষ কীভাবে সামাজিক নিয়ম মেনে চলে এবং কখন তা লঙ্ঘন করে।

২. সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানের পথ খোঁজা: সমাজে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যা (যেমন দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বৈষম্য, অপরাধ, সামাজিক অবিচার) দেখা দেয়। সমাজবিজ্ঞান এসব সমস্যার কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণ করে এবং কার্যকর সমাধানের পথ বাতলে দেয়।

৩. সমাজ পরিবর্তনের ধারা বোঝা: সমাজ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে। সমাজবিজ্ঞান আমাদের শেখায় এই পরিবর্তনগুলো কেন হয়, কীভাবে হয় এবং সমাজে তার প্রভাব কী।

৪. নৈতিক ও মূল্যবোধের শিক্ষা: সমাজবিজ্ঞান পড়লে সহানুভূতি, সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ন্যায়বিচার সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। এটি একজন মানুষকে সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।

৫. বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বোঝা: সমাজবিজ্ঞান শিক্ষা দেয় কীভাবে পরিবার, ধর্ম, শিক্ষা, রাষ্ট্র ইত্যাদি সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমাজে ভূমিকা পালন করে এবং কীভাবে তারা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

৬. পেশাগত দিক থেকে সহায়ক: সমাজবিজ্ঞান সাংবাদিকতা, আইন, প্রশাসন, সমাজকর্ম, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, গবেষণা ইত্যাদি পেশার জন্য অত্যন্ত কার্যকর ভিত্তি গড়ে তোলে।

৭. আত্ম-উপলব্ধি ও আত্ম-পরিচয় গঠন: সমাজবিজ্ঞান আমাদের নিজের সমাজে নিজের অবস্থান বুঝতে সাহায্য করে। আমরা জানি কীভাবে সমাজ আমাদের ব্যক্তিত্ব, চিন্তা ও জীবনযাপনকে প্রভাবিত করে।

পরিশেষে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান হলো এমন একটি বিজ্ঞান, যা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা, গঠন ও কার্যপ্রণালী বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিশ্লেষণ করে। এটি আমাদের সাহায্য করে সমাজকে গভীরভাবে বুঝতে এবং সমাজের পরিবর্তনশীল গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পেতে। সমাজবিজ্ঞান শুধু জ্ঞান নয়, এটি একটি দর্পণ। যার মাধ্যমে আমরা নিজের সমাজ ও সমাজে নিজের অবস্থানকে উপলব্ধি করতে পারি।

সমাজবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান ব্যাখ্যা কর।সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা হয় কেন?

সমাজবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান ব্যাখ্যা কর

অথবা, সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা হয় কেন?
ভূমিকাঃ- মাজবিজ্ঞান সমাজের গঠন কাঠামো ও মানুষের জীবনধারা, সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেয়। আসলে সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞান কিনা এ বিষয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। কোনো বিষয় বিজ্ঞান হিসেবে স্বৃকীতি লাভ করতে হলে তার মধ্য কতক গুলো বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। আজ আমরা জানবো আসলেই সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞান কি না সে বিষয়ে।
সমাজবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান ব্যাখ্যা কর



সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞান কিনাঃ  সমাজবিজ্ঞান কি? সমাজবিজ্ঞানকে কেন বিজ্ঞান বলা হয় সে বিষয় জানতে হলে আগে আমাদের সমাজবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে হবে।

সমাজবিজ্ঞানঃ যে শাস্ত্র সমাজের উৎপত্তি, বিকাশ প্রত্যয় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা করে তাকেই সমাজবিজ্ঞান বলে । অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে জ্ঞানের এমন একটি শাখা যা সমাজ ও মানবিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।

বিজ্ঞানঃ ভৌত বিশ্বের যা কিছু  পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য তার সুশৃঙ্খল নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞান ভান্ডারের নামই বিজ্ঞান । আবার কোন বিষয় সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ ও যাচাইয়ের ভিত্তিতে অর্জিত বিশেষ জ্ঞানই হলো বিজ্ঞান।

যেহেতু বিজ্ঞান হলো কোন বিষয় সম্পর্কে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সুসংবদ্ধ জ্ঞানভান্ডার। সমাজবিজ্ঞান অন্যান্য বিজ্ঞানের মত তথ্যর যাচাই বাছায় ও বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুসংহত জ্ঞান অন্বেষণের প্রচেষ্ঠা চালাই যা মূলত বিজ্ঞানভিত্তিক তাই এই অর্থে সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা হয়।

সমাজবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি হিসেবে তার গবেষণা কাজ চালায় এবং বিষয় নির্বাচন ও তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদির কাজ বিজ্ঞানসম্মত ভাবে করে ।আর সে তথ্যগুলোর ভিত্তিতেই সমাজবিজ্ঞান ভবিষৎবাণী করে।

সমাজবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান যা কতকগুলো বৈশিষ্ট্যর মাধ্যমে প্রকাশ পায়-

১। সমস্যা নির্বাচনঃ সমাজবিজ্ঞান প্রথমত বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সমস্যা নির্বাচন করে থাকে । এটি সমাজবিজ্ঞানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
২। পর্যবেক্ষণঃ সমাজবিজ্ঞান কোন পর্যবেক্ষণ এর মাধ্যম তাদের সমস্যা নির্বাচন করে ।
৩। তথ্য সংগ্রহঃ সমাজবিজ্ঞান যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে তারপর সমাজবিজ্ঞান গবেষণা করে।
৪। তথ্যর শ্রেণীবিন্যাস করণঃ সমাজবিজ্ঞান সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেই তথ্যের শ্রেণীবিন্যাস করে।
৫। বিবৃতি তৈরিঃ সমাজবিজ্ঞান তথ্য শ্রেণি বিন্যাস করার পর সেটার একটি বিবৃতি তৈরি করে।
৬। যাচাইকরণঃ সমাজবিজ্ঞান যে বিবৃতি তৈরি করে তা বাস্তব সম্মত কিনা তা যাচাই- বাচাই করে।
৭। ভবিষ্যৎবাণীঃ সমাজবিজ্ঞান তথ্যটি যাচাই-বাচাই করার পর ভবিষ্যৎবাণী করে । যা সমাজের জন্য মঙ্গল ও অমঙ্গল হতে পারে।
৮। উপসংহার নিরপেক্ষতা: সমাজবিজ্ঞান গবেষণায় ব্যক্তিগত মত বা পক্ষপাত এড়িয়ে নিরপেক্ষ তথ্য বিশ্লেষণ করে।
৯। কারণ ও ফলাফল নির্ধারণ: সমাজবিজ্ঞান কোনো ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে এবং তার প্রভাব বিশ্লেষণ করে।
১০। পুনরাবৃত্তি: একই পদ্ধতিতে পুনরায় গবেষণা করলে একই ফলাফল পাওয়া যায় কিনা তা যাচাই করা হয়, যা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

উপরের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বলা যায় সমাজবিজ্ঞান যে কোন সমস্যা বিজ্ঞানসম্মতভাবে সমাধান করে। এটি সমাজের সমস্যা নির্বাচন, যাচাই ও বিশ্লেষণ করে।বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুসরণ করেই সমাজবিজ্ঞান তত্ত্ব তৈরি করে এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও পূর্বাভাস দেয় তাই নিঃসন্দেহে সমাজবিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান।

কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্ব? কাঠামোগত ক্রিয়াবাদের যৌক্তিক বিশ্লেষণ

কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্ব ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ

ভূমিকা:- বর্তমান বিশ্বে মানুষের আচার-ব্যবহার, এবং মূল্যবোধের ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এ পরিবর্তনের ধারার সাথে কাঠামোগত ক্রিয়াপদ ও পরিবর্তিত হচ্ছে। কারণ, সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সমাজকাঠামো ও পরিবর্তনশীল। আধুনিক সমাজ ও রাজনীতিতে যে সব তত্ত্ব বিশেষ হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্ব। সমাজবিজ্ঞানে এ তত্ত্বটি ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে থাকে। সমাজবিজ্ঞান ও সামাজিক নৃ-বিজ্ঞান বিবর্তনবাদীদের পদ্ধতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্রিয়াবাদ মতবাদটি বিকাশ লাভ করে।

কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্ব? কাঠামোগত ক্রিয়াবাদের যৌক্তিক বিশ্লেষণ


কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্ব (structuralism verb theory):

ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কোন কার্য, কোন কাঠামো দ্বারা সম্পাদিত হয় তার ভিত্তিতেই রাজনীতির তুলনামূলক ব্যাখ্যা করাই হচ্ছে কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্বের মূল বিষয়। অর্থাৎ সমাজের সংগঠন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে যে ক্রিয়াবাদ আলোকপাত করে তাকেই কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্ব বলে।

মূলত এ কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্বের তাত্তিকগণ কোন রাজনৈতিক অবস্থানকে দুটি আলাদা উপায়ে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পায়।

প্রথম পর্যায়ে সরকার বা সর্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ব্যাখ্যা ২য় রাজনৈতিক কার্য সম্পাদনকারী সামাজিক কাঠামো হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কি ও রাভক্লিয়োর দ্বারা সমাজবিজ্ঞানে কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরে সমাজবিজ্ঞানী মার্টনও ট্যালকট পারসন্স বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় এই কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। তবে ১৯৬০ সালে প্রকাশিত Almond ও Coleman সম্পাদিত The Pohtics of developing area কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্ব বিকাশের মাইলফলক হিসেবে কাজ করে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা:

বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো।

S.P Varma said- “Structure refers to those arrangements withir system which performs the functions”

Dvid Cepter এর মতে- “প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদনার প্যার্টান সমূহ কে কাঠামো বলে।”

J.B Powell বলেছেন- “কাঠামো বলতে সেসব পর্যবেক্ষণীয় ক্রিয়াকালাপকে বোঝায় যাদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক অবস্থা গঠিত হয়।”

Marton Kaplan (মার্টন কাপলান) এর মতে “কার্য হচ্ছে ঐসব পর্যবেক্ষণীয় ফলাফল যেগুলো একটি সমাজব্যবস্থায় সামঞ্জস্য করে।”

ওয়ান ইয়াং এর মতে “The objective consequence of a pattern of action for the system in which it occurs.”

 কাঠামোগত ক্রিয়াবাদের যৌক্তিক বিশ্লেষণ:

কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্বে সমাজকে একটি জৈবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়, যেখানে প্রতিটি উপাদান বা প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করে।সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন পরিবার, শিক্ষা, ধর্ম, অর্থনীতি বা রাষ্ট্র জৈবিক দেহের অঙ্গের মতো নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে সমাজকে টিকিয়ে রাখে। এটি যুক্তিনির্ভর কারণ এখানে প্রতিটি কাঠামোর কার্য বিশ্লেষণ করে বোঝা যায় সমাজ কিভাবে টিকে আছে, এবং কিভাবে পরিবর্তন ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্ঞানের বিস্তার ঘটায়, যা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখে।একইভাবে পরিবার সামাজিকীকরণের দায়িত্ব পালন করে, আর আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠান সমাজে শৃঙ্খলা ধরে রাখে।

তবে এই তত্ত্বের সমালোচকরা মনে করেন, কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ সমাজের দ্বন্দ্ব, বৈষম্য এবং ক্ষমতার অসম বণ্টনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না। সমাজ সবসময় স্থিতিশীল নয়; পরিবর্তন, সংঘাত ও অসমতা সমাজের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য যা এই তত্ত্ব পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়। তবুও কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ সমাজের কাঠামো ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে বিশ্লেষণে একটি শক্তিশালী ও যৌক্তিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ সমাজের সংগঠন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করে।  কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ ভাষার কাঠামোগত  বিশ্লেষণে অত্যন্ত শক্তিশালী ও যুক্তিনির্ভর একটি তত্ত্ব। 

শিক্ষা কি? What is Education? শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

শিক্ষা কী? What is Education?

ভূমিকাঃ শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না। শিক্ষা মানুষের ভিতরের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকাশিত করে। শিক্ষা হলো একটি সচেতন ও সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া। শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানুষের প্রকৃতি প্রদত্ত প্রবণতা গুলোকে বিকশিত করা ও মানুষের মনে আদর্শ লক্ষ্যকে স্থির করা। মানব জীবনে সকল ক্ষেত্রেই শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

শিক্ষা কি What is Education


শিক্ষাঃ মানবসমাজ মাত্রেরই একটি মৌলিক কার্যপ্রক্রিয়া হলো শিক্ষা। সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা বলতে বোঝায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকেই। প্রকৃত প্রস্তাবে শিক্ষা হলো এক ধরনের বিশেষ সংস্কার সাধন। ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলতে শুধু বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকেই বোঝায় না বরং পারিবারিক , সামাজিক ও আমাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের উদ্দেশ্য সচেতনভাবে সকল প্রচেষ্টাই শিক্ষা।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ শিক্ষাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।নিম্নে তাদের সংজ্ঞাগুলি প্রদান করা হলো-

এরিস্টটল এর মতে-“শিক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীর দেহে এবং মনের বিকাশ সাধন যা দ্বারা সে তার জীবনের সত্য উপলব্ধি করে।”

মোতাহের হেসেন চৌধুরীর মতে-“মানুষ নিজেকে সৃষ্টি করার পদ্ধতি হলো শিক্ষা। শিক্ষা মূলত অন্তর্নিহিত শক্তি ও চেতনার বিকাশ।”

ম্যাকেঞ্জির মতে-“আমাদের ক্ষমতাকে বিকশিত ও অনুশীলন করার উদ্দেশ্যে সচেতনভাবে পরিচালিত যে কোন প্রচেষ্ঠাই সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা।”

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে-“শিক্ষা বলতে বুঝায় যা কেবল তথ্য অধিবেশন করে না, যা বিশ্বসত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে।”

দার্শনিক রুশোর মতে-“শিক্ষা বলতে বুঝায় ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশকে, যে বিকাশের মাধ্যমে সে সুসামঞ্জস্য স্বাভাবিক জীবনের অধিকারী হয়।”

জন ডিঙ্গরের মতে- সংকীর্ণ অর্থে ইচ্ছেমূলক সকল জ্ঞান অর্জনই শিক্ষা।

পেস্টালৎসি এর মতে-“শিক্ষা বলতে বুঝায় সুপ্ত আত্মশক্তির বিকাশের কথা বুঝিয়েছেন।”

ফ্রান্সিস বেকল এর মতে-“শিক্ষা হচ্ছে মনের চোঁখ। শিক্ষা বলতে তিনি মূলত মানুষের মনের বিকাশকে বুঝিয়েছেন।”

White Head এর মতে-‘শিক্ষা হচ্ছে জ্ঞান অর্জন এবং সুষ্ঠু প্রয়োগের একটি পরিকল্পনা কৌশল মাত্র।”

শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব

শিক্ষা শুধু তথ্য জানার একটি উপায় নয়, বরং একজন মানুষকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রধান মাধ্যম। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ তার জ্ঞান বৃদ্ধি করে, নৈতিকতা শিখে এবং সমাজে নিজের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়।

প্রথমত, শিক্ষা জ্ঞানের আলো দেয়। মানুষ জন্ম থেকে অনেক কিছু জানে না; শিক্ষা তাকে জানতে শেখায়, ভাবতে শেখায় এবং বিচার-বিবেচনা করার ক্ষমতা প্রদান করে। এটি মানুষের চিন্তাশক্তিকে বিকাশ করে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনে সহায়তা করে।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষা চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। একজন শিক্ষিত মানুষ শিষ্টাচার, সততা ও দায়িত্ববোধ শেখে। সে নিজের আচরণ ও কাজের প্রতি সচেতন হয় এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে শেখে।

তৃতীয়ত, শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নতির পথ খুলে দেয়। শিক্ষিত মানুষ সহজেই কর্মসংস্থান পায় এবং নিজেকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করতে পারে। ফলে দারিদ্র্য হ্রাস পায় এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

চতুর্থত, শিক্ষা সমাজে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ শেখে। এটি সমাজে হিংসা, কুসংস্কার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

সর্বোপরি, একটি জাতির উন্নয়ন নির্ভর করে সেই জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। তাই শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্যও অপরিসীম।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। বর্তমান যুগে শিক্ষা অর্জনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়। মানব সমাজকে উন্নত করে তুলতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। মানব জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। একজন অশিক্ষিত লোকের চেয়ে একজন শিক্ষিত লোক সর্বদা আচার ব্যবহার ভিন্ন হয়ে থাকে যা শুধু শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন সম্ভব।

শ্রেণি কি ? সামাজিক শ্রেণি কী?

শ্রেণির কি? সামাজিক শ্রেণি কী?

ভূমিকাঃ- পৃথিবীতে সকল সমাজেই শ্রেণির অস্তিত্ব রয়েছে । শ্রেণি ব্যবস্থা একটি বিশ্বজনীন ব্যবস্থা। সামাজিক অসমতার প্রধান কারণ হলো এই শ্রেণি। সমাজে শ্রেণি ব্যবস্থার ফলে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। সমাজের সামাজিক স্তরবিন্যাসের চতুর্থ স্থর হলো এই শ্রেণি।
শ্রেণি কি ? সামাজিক শ্রেণি কী?



সমাজের উৎপাদন উপাদানসমূহকে কেন্দ্র করে উৎপাদন সম্পর্কের ভিত্তিতে সমাজে শ্রেণি ব্যভস্থার সৃষ্টি হয়। প্রাচীন রোমে এই শ্রেণি ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে মানুষ তার সামাজিক জীবন অতিবাহিত করে।

শ্রেণিঃ সাধারণভাবে বলতে গেলে শ্রেণি বলতে সমাজে মানুষের অবস্থানের উঁচু নিঁচু অবস্থানকে বোঝায়। আর এ অবস্থানের উপর নির্ভর করে সামাজিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। অন্যভাবে বলা যায়, সামাজিক শ্রেণি বলতে সেই শ্রেনিকে বোঝায় যারা একই মূল্যবোধ ও বৈশিষ্ট্যর অধিকারী জনগোষ্ঠী আর এসব বৈশিষ্ট্যর কারণে অন্যান্য জনগোষ্ঠী হতে আলাদা তাদের সামাজিক শ্রেণি বলা হয়। এই শ্রেণি ব্যবস্থা একটি বিশ্বজনীন ব্যবস্থা।

সামাজিক শ্রেণি: সামাজিক শ্রেণি বলতে এমন একটি মানুষের দল বা গোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা একই ধরনের মূল্যবোধ, পেশা, আয়, শিক্ষা, জীবনযাপন ও সামাজিক মর্যাদা ধারণ করে এবং সেই বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিত্তিতে তারা অন্যদের থেকে আলাদা। সামাজিক শ্রেণি নির্ধারিত হয় সাধারণত উৎপাদন সম্পর্ক, সম্পদের মালিকানা, ক্ষমতার তারতম্য এবং মর্যাদার ভিত্তিতে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী শ্রেণির বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা প্রদান করা হলো-
যদিও বিখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক কার্ল মার্কস শ্রেণির সংজ্ঞা সরাসরি প্রদান করেননি। তবে তার অনুসারীদের মতে-“উৎপাদন প্রনালিতে যখন গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ একই ভূমিকা পালন করে তখন তাকে শ্রেণি বলে।”
মেলভিন টিউমিন এর মতে “সম্পত্তির তথ্যর জন্য শ্রেণির সৃষ্টি হয়।ক্ষমতার তারতম্যর জন্য রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি ও আত্মসম্মানের ভিত্তিতে সামাজিক স্তরের সৃষ্টি হয়।
ড্রেসলার বলেন “ শ্রেণী হলো কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি দল যাদের মোটামুটি একই ধরনের মর্যাদা রয়েছে।”
লেনিন এর মতে “Classes are groups of people of which can appropriate the labor of other.” (শ্রেণি হল এমন লোকদের দল যা অন্যের শ্রমকে উপযুক্ত করতে পারে)
সমাজবিজ্ঞানী টি. বি. বটোমোর তার sociology গ্রন্থে সামজিক শ্রেণিকে বাস্তব গোষ্ঠী বা Defacto Groups বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন আইন বা ধর্মের ভিত্তিতে তেমন শ্রেণির ভেদাভেদ নেই। বলা যায় Social classes on defacto but not dejure groups.সামাজিক শ্রেণী হচ্ছে নীতি শাস্ত্র বা ধর্মে শ্রেণি স্বীকার করানো গেলেও বাস্তব সমাজজীবনে শ্রেণি ভেদাভেদ বিদ্যমান।

শ্রেণির প্রকারভেদ:

সামাজিক শ্রেণিকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। কিছু প্রচলিত শ্রেণি হলো তিন প্রকার। যথা-

  • উচ্চ শ্রেণি (Upper Class): ধনী, ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
  • মধ্যবিত্ত শ্রেণি (Middle Class): শিক্ষিত, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী প্রভৃতি।
  • নিম্নবিত্ত শ্রেণি (Lower Class): দরিদ্র, দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ।
এছাড়া আরও বিশ্লেষণ অনুযায়ী, শ্রেণিকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শ্রেণিতে ভাগ করা যায়

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, শ্রেণি হচ্ছে সমাজের এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে একই ধরনের মূল্যবোধ ও বিশ্বাস ধারণ করে তারা একই শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত এবং তারা অন্য থেকে আলাদা। তারা একই মর্যাদার অধিকারী এবং সমাজে তারা একই ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে।

সমাজকাঠামো কি? সমাজকাঠামোর উপাদানসমূহ

সমাজকাঠামো বলতে কী বুঝ? সমাজকাঠামোর উপাদানসমূহ কি কি

ভূমিকাঃসমাজকাঠামো সমাজবিজ্ঞানপর আলোচ্য বিষয়। শুধু সমাজকাঠামোর মাধ্যমেই সমাজকে অনুধাবন করা যায়। যে কোন সমাজকে জানার জন্য সমাজের সমাজকাঠামো জানার বিকল্প নেই। কতকগুলো বিষয় দ্বারা সমাজের বহিঃপ্রকাশ ঘটে সে বিষয়গুলোই সমাজকাঠামোর উপাদান। তাই উপাদান গুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাজকাঠামোর বিশ্লেষণ পরিপূর্ণ হয়।

সমাজকাঠামো কি


সমাজকাঠামো: সমাজবিজ্ঞান এ সমাজকাঠামো একটি স্বতন্ত্র প্রপঞ্চ হিসেবে বিবেচিত। সাধারণ সমাজ যার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত তাকেই সমাজকাঠামো বলে। সমাজকাঠামোর ধারণাকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা (ক) জৈবিক ধারণা (খ) অজৈবিক ধারণা। অজৈবিক ধারণার প্রবর্তক মার্কস ও জৈবিক ধারণার সমাজতাত্ত্বিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রেড ক্লিফ ব্রাউন, ই. আর. লিচ ও মরিচ জিন্সবার্গ।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা: সমাজকাঠামো সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকজন সমাজবিজ্ঞানীর কতিপয় সংজ্ঞা প্রদান করা হলো-

ই. আর. লিচ সমাজকাঠামোকে রাজনৈতিক ক্ষমতার উপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে "ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের যে সমষ্টিগত ধারণা, তার সমন্বয়ে সমাজকাঠামো গঠিত।"


এস. এস. নেডেল তার The theory of social structure গ্রন্থে বলেন "ব্যক্তির নির্দিষ্ট ভূমিকার মাধ্যমে সমাজকাঠামো উপলব্ধি করা যায়।" তার মতে প্রত্যেক ব্যক্তিই কতকগুলো ভূমিকা পালন করে থাকে এবং সে যে ভূমিকা পালন করে থাকে তার মাধ্যমেই সমাজকাঠামোর স্বরূপ উম্মেচিত হয়।

সমাজকাঠামোর উপাদানসমূহ:

সমাজকাঠামো মূলত কিছু মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এই উপাদানগুলো সমাজের অভ্যন্তরে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্পর্ক ও ভূমিকা নির্ধারণ করে। সমাজকাঠামো বিশ্লেষণের জন্য নিম্নলিখিত উপাদানগুলো গুরুত্বপূর্ণ:

১। সামাজিক অবস্থান (Social Status): সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী একটি নির্দিষ্ট সামাজিক অবস্থানে অধিষ্ঠিত থাকে। এই অবস্থান জন্মসূত্রে বা অর্জনসূত্রে  হতে পারে।

২। সামাজিক ভূমিকা (Social Role): প্রত্যেক ব্যক্তি তার অবস্থানের ভিত্তিতে সমাজে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে থাকে। এই দায়িত্ব বা কাজের ধারাকেই বলা হয় সামাজিক ভূমিকা।

৩। সামাজিক প্রতিষ্ঠান (Social Institutions): সমাজে সামাজিক চাহিদা পূরণের জন্য গঠিত সংগঠিত কাঠামোকে সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়। যেমন: পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্ম, রাষ্ট্র ও অর্থনীতি।

৪। সামাজিক সম্পর্ক (Social Relationships): সমাজকাঠামোতে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কগুলো সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখে।

৫। মূল্যবোধ ও বিধিনিষেধ (Values and Norms): সমাজে চলার জন্য কিছু প্রতিষ্ঠিত নিয়ম, আদর্শ ও নৈতিক নীতিমালা থাকে যেগুলো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলো সমাজে শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় রাখতে সহায়ক।

৬। সামাজিক স্তরবিন্যাস (Social Stratification): সমাজে মানুষ বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তিতে স্তরে বিভক্ত থাকে। এই স্তরবিন্যাস সমাজের ক্ষমতা ও সম্পদের বণ্টন নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

কার্ল মার্কস এর মতে "সমাজকাঠামো বলতে দুটি অংশকে বুঝিয়েছেন। যেমন মৌলকাঠামো ও উপরিকাঠামো। মার্কসীয় ব্যাখ্যায় সামাজিক শ্রেণির বা গোষ্ঠীর প্রাধান্য নিরুপণ করা হয়ে থাকে সমাজকাঠামোর উৎপাদন সম্পর্কের প্রেক্ষিতে। মূলত অর্থনৈতিক সম্পর্ক দ্বারা সমাজের বস্তগত বা অর্থনৈতিক কাঠামো বা উৎপাদন শক্তির যে বিকাশ ঘটে তা সমাজে মৌল কাঠামো তৈরী করে। সমাজের উপরিকাঠামো গড়ে উঠে আইন, সাহিত্য, দর্শন, শিল্পকলা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে। উপরিকাঠামোর পরিবর্তন মৌল পরিবর্তন এর সাথে আবশ্যক। 


উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজে বসবাসরত অবস্থায় আমাদের সকল কাঠামো ব্যবস্থার একক ভিত্তি সমাজকাঠামো যা প্রত্যক সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামাজিক সম্পর্কই সমাজকাঠামো কে গড়ে তোলে। সমাজকাঠামো সমাজস্থ ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্কের ফলস্বরূপ যেখানে সবাই নিজস্ব ভূমিকা পালনের মাধ্যমে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়

শিক্ষার কার্যাবলি আলোচনা কর।

শিক্ষার কার্যাবলি আলোচনা কর

ভূমিকাঃ শিক্ষা ব্যক্তিকে সচেতন, দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলে। শিক্ষা একজন ব্যক্তির মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে বিকশিত করে। শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে সুশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায়। সমাজের যোগ্যতম ব্যক্তি বর্গকে বাচাই করার ব্যাপারে শিক্ষা সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে।

শিক্ষার কার্যাবলি আলোচনা কর


শিক্ষা সমাজের ব্যক্তিকে রাজনৈতিকভাবে দক্ষ করে তোলে। জম্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রেই শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

শিক্ষার কার্যাবলিঃ সমাজজীবনে শিক্ষার ভূমিকা সর্বদিক দিয়ে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।নিম্নে শিক্ষার ভূমিকা বা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কার্যাবলি উল্লেখ করা হলো-

১। সু-প্রবৃত্তি সমূহের বিকাশ সাধনঃ শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানুষের প্রকৃতি প্রদত্ত প্রবণতাগুলোকে বিকাশিত করা এবং মানুষের মনের আদর্শ লক্ষকে প্রবিষ্ট করানো। প্রকৃত প্রস্তাবে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের সুপ্ত মানসিক শক্তি বিকাশ সাধন।

২। ত্রুটিপূর্ণ মনোবৃত্তির সংশোধনঃ শিক্সার অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে শিক্ষার্থীকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা। এ মনোভাব ও মানসিকতার ত্রুটিসমূহ সংশোধন করার কথা বলা হয়।

৩। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর বাহনঃ নাংন্কৃতিক ঐতিহ্যকে শিক্ষা উত্তরপুরুষের মধ্যে সঞ্চারিত করে। সাধারণত শিক্ষাক্রমের অপেক্ষাকৃত উচ্চ পর্যায়েই শিক্ষার এ উদ্দেশ্যকে কার্যকর করার জন্য উল্লেখযোগ্য উদ্দোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

৪। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের সৃষ্টিঃ স্কুল কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা হলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের সুস্থ প্রতিযোগিতার মানসিকতা গড়ে উঠে। এ সুস্থ প্রতিযোগিতার মনোভাব পরবর্তী জীবনেও থেকে যায়।

৫। বৃত্তিগত ভূমিকাঃ বৈষয়িক ও বৃত্তিগত ক্ষেত্রেও শিক্ষার ভূমিকা বিশেষভোবে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিকে জীবিকা অর্জনে সক্ষম নাগরিকরুপে পরিণত করার ব্যাপারে শিক্ষার ভূমিকা অপরিসীম।

৬। রাজনৈতিক কার্যকালাপে অংশগ্রহণঃ শিক্ষা সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গকে রাজনৈতিক কার্যকালাপে অংশগ্রহণের উপযোগী করে তোলে। এ কারণে শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যেই রাজনীতিক কাজকর্মে অংশগ্রহণের আনুপাতিক হার বেশি হয়ে থাকে।

৭। স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে ভূমিকাঃ সমাজের যোগ্যতম ব্যক্তিবর্গকে বাছাই করার ব্যাপারে শিক্ষা সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তার ফলে সমাজে অধিকতর যোগ্য ব্যক্তিগণ সমগ্র সমাজ ও সমাজবাসীর স্বার্থে কার্যকর ও অর্থবহ ভূমিকা পালন করতে পারেন।

৮। নৈতিক ও চারিত্রিক গঠন: শিক্ষার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির নৈতিকতা, আদর্শ, সততা, দায়িত্ববোধ ও ন্যায়বিচারের চেতনা গড়ে ওঠে। এটি তাকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হয়।

৯। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় সহায়তা: শিক্ষা ব্যক্তিকে সমাজের নিয়ম, রীতি, প্রথা, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে একজন মানুষ ধীরে ধীরে সামাজিক জীবনে আত্মস্থ হয়।

১০। জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির উন্নয়ন: শিক্ষা দেশের নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা, ধর্মীয় সহাবস্থান ও জাতীয় ঐক্যের চেতনা জাগ্রত করে। এটি একটি সুসংগঠিত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

পরিশেষে বলা যায় যে, মানব জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। একজন অশিক্ষিত লোকের চেয়ে একজন শিক্ষিত লোকের আচার ব্যবহার ভিন্ন হয়ে থাকে। ব্যক্তিকে জীবিকা অর্জনে সক্ষমে নাগরিকরুপে পরিণত করার ব্যাপারে শিক্ষায় ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম।

দাসপ্রথা কি?

দাসপ্রথা বলতে কী বুঝ?

ভূমিকাঃমানব সমাজ সর্বদায় গতিশীল। বিভিন্ন পরিবর্তন এর মধ্য দিয়ে এই গতিশীলতা তৈরী হয়। সামাজিক পরিবর্তন একটি চিরন্তন প্রথা। এক সমাজ পরিবর্তিত হয়ে অন্য সমাজে রুপ লাভ করে এবং পৃথিবীর কোন সমাজ ব্যবস্থায় চিরস্থায়ী থাকে না। এরুপ বিভিন্ন পরিবর্তন এর এক পর্যায়ে সমাজে এই দাসপ্রথার উদ্ভব ঘটে। দাস সমাজ মূলত দাস প্রথার উপরই প্রতিষ্ঠিত তবুও এ প্রথার মধ্যে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।

দাসপ্রথা কি


দাসপ্রথাঃ দাসপ্রথা হলো এমন একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান যা ব্যক্তিগত পর্যায়ে আধিপত্যের বশ্যতা সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। এ সম্পর্কের যাত্রা খুবই গভীর এবং বিস্তৃত। দাস প্রথায় একদিকে যেমন দাস মালিকের হাতে রয়েছে দাসের জীবন-মরণ এর অধিকার অন্যদিকে রয়েছে সুনিশ্চিতভাবে প্রণীত পারস্পরিক দায়দায়িত্বের এবং আইন প্রণয়নের অধিকার। কিন্তু এসবের মূল কথা হলো আপন স্বার্থ হাছিল করার জন্য দামকে কাজে বাধ্য করার অধিকার।

সমগ্র পৃথিবীতে দাসপ্রথা কলঙ্কজনক অধ্যয়ের সূচনা করেছে। আদিম সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা পতনের মধ্য দিয়েই মূলত দাসপ্রথার উদ্ভব ঘটে। সমগ্র প্রাচীন কাল জুড়েই পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে দাস প্রথা প্রচলিত ছিলো এবং প্রাচীন রোমান ও গ্রিক সভ্যতায়ও দাসপ্রথা সম্পর্কে জানা যায়।


প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও গবেষক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে দাসপ্রথাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে দাসপ্রথার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা প্রদান করা হলো

এল. টি. হবহাউজ (L. T. Hobbhouse) এর মতে "দাস হচ্ছে সে ব্যাক্তি যাকে আইন বা প্রথার মাধ্যমে অন্যের সম্পত্তিতে পরিণত করা হয়। চরম অবস্থায় দাম সম্পূর্ণভাবে অধিকারহীন অস্থাবর সম্পত্তি। কখনো তাকে গাধা বা গরুর মত রক্ষা করার ব্যবস্থা পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে দাস তার বিচারশক্তি ও ব্যাক্তিত্বকে হারিয়ে ফেলে মানবীয় অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয় এমনকি বাঁচার অধিকার থেকেও সে বঞ্চিত হয়।"

কার্ল মার্কস দাসপ্রথার সংজ্ঞায় বলেন "দাসসমাজ হলো প্রথম শ্রেণিবিভক্ত সমাজ। এ সমাজে তিনি দুটি বিরোধধর্মী শ্রেণির অস্তিত্ব লক্ষ্য করেছেন প্রথমত দাস মালিক দ্বিতীয়ত দাস।"

প্রাচীন রোমের আইনে দাসকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রাচীন রোমে দাসকে সবসময় অন্যের ইচ্ছেমত চলতে হয়েছে এবং নিজের যাবতীয় ইচ্ছা, স্বভাব ও প্রকৃতি বাদ দিতে হয়েছে।

এরিস্টটল (Aristottle) এর মতে "এরিস্টটল দাসকে প্রাণযুক্ত হাতিয়ার বলে অভিহিত করেছেন তার মতে মানুষ সকলে মৌলিকভাবে সমান নয় কেউ শরীরিকভাবে দুর্বল এবং কেউ হীনমানসিকতার আর এসব লোকেরাই দাস।"

নাজমুল করিম বলেন (Nazmul Karim) বলেন "ভারতের দাসপ্রথা পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে উঠতে পারেনি কারণ উৎপাদন কাজের জন্য ভারতে দাসদের ব্যবহার করা হতো না দাসরা সাধারণত ব্যক্তিগত চাকর হিসেবে পরিগনিত হতো।

সুতরাং বলা যায় যে সকল সমাজেই দাসপ্রথা ছিলো মানবতা বিরোধী।এটি একটি অমানবিক ও শোষণমূলক সামাজিক প্রথা, যা ব্যক্তির স্বাধীনতা ও মর্যাদাকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করে। বহু দার্শনিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দাসপ্রথা মেনে নিলেও বর্তমানে দাসপ্রথা বিলোপের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আধুনিক মানবাধিকার চেতনার যুগে এই প্রথা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। তাই দাসপ্রথার বিলোপই মানব সভ্যতার অগ্রগতির প্রতীক।

শিল্পবিপ্লবের সুফল কুফল। শিল্প বিপ্লবের ফলাফল আলোচনা কর

শিল্পবিপ্লবের সুফল কুফল। শিল্পবিপ্লবের ফলাফল আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ মানবজীবনে শিল্পবিপ্লবের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। শিল্পবিপ্লব (Revolution) মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক জীবনের সর্বক্ষেত্রেই বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের ফলে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে। পরবর্তীতে ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশসমূহে পরিবর্তন ঘটে। শিল্পবিপ্লবের সুফলের পাশাপাশি কিছু কুফলও ছিল। আজ আমরা শিল্পবিপ্লবের সুফল-কুফল/ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করব।

শিল্পবিপ্লবের সুফল কুফল ও ফলাফল



শিল্প বিপ্লব (Revolution) এর সুফলঃ নিম্নে শিল্পবিপ্লবের সুফল আলোচনা করা হলো-

১। আমদানি বৃদ্ধিঃ প্রচুর পরিমাণে উৎপাদনের ফলে শুধু রপ্তানিই বৃদ্ধি পায় না, বরং উৎপাদিত পণ্যের জন্য প্রচুর পরিমাণ কাঁচামাল আমদানিও করতে হচ্ছে।

২। সম্পদের সদ্ব্যবহারঃ প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ও অব্যবহৃত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জনে শিল্পায়ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

৩। নিরাপত্তা কর্মসূচিঃ শিল্পবিপ্লবের সুফল এর মধ্যে নিরাপত্তা কর্মসূচি অন্যতম। অদৃষটপূর্ব ঘটনাসমূহ (দূর্ঘটনা, পঙ্গুত্ব, বার্ধ্যক্যতা, মৃত্যু প্রভৃতি মোকাবেলা ও মানুসের নূন্যতম চাহিদা মেটানোর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রবর্তিত হয় যা শিল্পবিপ্লবের জন্য যথেষ্ট হয়েছে।

৪। প্রাকৃতিক শক্তি আয়ত্তকরণঃ প্রাকতিক শক্তি ও সম্পদসমূহের আয়ত্তকরণের মাধ্যমে শিল্পায়নের জয়যাত্রা শুরু হয়। বাষ্পীয় আবিষ্কার থেকে শিল্পবিপ্লবের বৈপ্লবিক সূচনা শুরু হয়। পরবর্তীতে তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পরমাণু প্রভৃতি সম্পদ ও শক্তি ভান্ডার আয়ত্তকরণের মাধ্যমে এর অব্যাহত অগ্রযাত্রা বহাল রয়েছে।

৫। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণঃ শিল্পবিপ্লব ব্যবসা-বাণিজ্যর সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ফলে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।

৬। নগর সভ্যতার উম্মেষঃ শিল্পবিপ্লবের ফলে গ্রামাঞ্চল থেকে মানুষ শহরে আসতে শুরু করে। ফলে শহর জনবহুল হয়ে উঠে । শিল্প বিপ্লব এর ফলেই নগর সভ্যতার উম্মেষ ঘটে।

৭। নতুন শিল্পনগরীর উত্থানঃ শিল্প বিপ্লবের ফলে বহু নতুন শিল্পনগরী গড়ে উঠে। যেমন- ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব এর পূর্বে শুধু লন্ডন এ জনবহুল নগরী ছিলো তবে শিল্পবিপ্লবের ফলে লিভারপুল, বার্মিংহামসহ অন্যান্য জায়গায় ও জনবহুল নগরীতে পরিণত হয়। 

শিল্প বিপ্লবের (Revolution) কুফলঃ শিল্পবিপ্লবের ফলে শিল্পের প্রসার ঘটেছিল একথা সত্য। তবে এর পাশাপাশি শিল্পবিপ্লবের কুফলও দেখা যায় ।

১। পেশাগত দূর্ঘটনাঃ শিল্পবিপ্লবের ফলে যান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতিতে শ্রমিকরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হতে থাকে। এতে পেশাগত দুর্ঘটনার ফলে অকাল মৃত্যু ঘটে অনেকের।

২। শিশু শ্রমঃ শিল্পবিপ্লবের ফলে শিশুদের শ্রমে বাধ্য করা হয়। কম অর্থের বিনিময়ে শিশুদের অধিক সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে হয়। ফলে তারা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় অকাল মৃত্যু ঘটে।

৩। নির্ভরশীলতাঃ শিল্পবিপ্লবের পর মানুসের জীবন অর্থ নির্ভর হয়ে পড়ে এবং র্ভিরশীলতা প্রকট আকার ধারণ করে। একজনের জীবন ধারনের মান বহুলাংশে অন্যর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

৪। কুটিরশিল্পের বিলুপ্তিঃ শিল্পপ্লিব ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পের বিলুপ্তি ঘটিয়ে তদস্থলে ভারী ও বৃহৎ শিল্প প্রবর্তন করে। বৃহৎ শিল্পের উৎপাদন ব্যয় কম এবং উৎপাদন বেশি। ফলে কুটিরশিল্প প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বিলুপ্ত হয়।

৫। শ্রমিকদের গুরুত্ব হ্রাসঃ শিল্প বিপ্লবের ফলেপুজিবাদের বিকাশ ঘটে। শ্রমিকের গুরুত্ব চলে যায় পুঁজিপতি মালিকদের হাতে।

পরিশেষে বলা যায় যে, শিল্পবিপ্লবের (Revolution) ফলে নতুন নতুন কলকারখানা স্থাপিত হয়। ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।উৎপাদন, উপার্জন, সঞ্চয় বৃদ্ধি পায় অবাধ বাণিজ্য েপ্রসার ঘটে অপরদিকে শিল্প বিপ্লবের ফলে বিভিন্ন কলকারখানা ধোয়া ও বর্জ্য, দূষিত পানি ইত্যাদি পরিবেশ দূষণ ঘটায়। কৃষি উৎপাদন হ্রাস পায় ও বিভিন্ন কুটির শিল্প ধ্বংস হয়। এতএব শিল্প বিপ্লব এর সুফল ও কুফল দুইদিকই সমানভাবে প্রভাব ফেলে

সালিশ কি? বাংলাদেশের সালিশের প্রকৃতি সম্পর্কে লিখ

সালিশ কি? বাংলাদেশের সালিশের প্রকৃতি সম্পর্কে লিখ।

ভূমিকাঃ বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৬০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। আংলাদেমের বেশি ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে।আর গ্রামের মানুষের মাঝে শিক্ষার হার অনেক কম। বাংলার গ্রামের মানুষের মধ্যে যেকোন ধরনের বিচার করার জন্য সালিশ প্রথা অন্যতম। কারণ, গ্রামের মানুষের মধ্যে সালিশ প্রথার মাধ্যমে যে কোনো ধরনের গ্রাম পর্যায়ের অপরাধের বিচার করা হয়।


সালিশ কি? বাংলাদেশের সালিশের প্রকৃতি সম্পর্কে লিখ।


সালিশঃ সালিশ হলো এমন এক ধরনের বিচার ব্যবস্থা যা গ্রামাঞ্চলের মধ্যে কোন ধরনের অপরাধ সংঘঠিত হলে তা গ্রামের মাতবর, মেম্বার, চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে পরিচালিত হয়। সালিশ ব্যবস্তা যুগ যুগ ধরে চলে আসা একটি বিচারব্যবস্থা যা সমাজব্যবস্থার জন্য এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমাদের সমাজের সকল জায়গায় কোন না কোন ধরনের অপরাধ সংঘঠিত হয়।আর এ সব অপরাধ সংঘঠিত হলে গ্রামের মাতবররা সবাই মিলে তার বিচার কার্য সম্পন্ন করে। আর গ্রামের সকল কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য গ্রামের সাধারণ মানুষগুলো এসব মন্ডল , মাতবরের উপর নির্ভর করে। কারণ এরা গ্রামের সকল আচার অনুষ্ঠান পালনের জন্য এসব নেতার উপর নির্ভর করে থাকে। আর এসব মাতবরের সালিশের মাধ্যমেই গ্রামের যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধান করা যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক সমাজে সালিশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ সালিশের মাধ্যমে সমাজের সকল ধরনের অস্থায়ী বা স্থায়ী সমস্যার সমাধান করা যায়।

বাংলাদেশের সালিশের প্রকৃতিঃ আমাদের দেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ । আর এ কৃষি প্রধান দেশে কৃষক পরিবার বেশি এবং এসব কৃষি সমাজে কোন প্রকার অপরাধ হলে সেটা মাতবর, চেয়ারম্যানসহ, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সালিশের মাধ্যমে তা সমাধান করা হয়।নিম্নে সালিশের প্রকৃতি আলোচনা করা হলো। 

১। বৈঠকঃ আমাদের দেশের সালিশ কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য প্রথমে বৈঠক আবশ্যক। কারণ সালিশের মাধ্যমে গ্রামের অনেক বিচারিক কার্যক্রম সম্পাদন করে। যা গ্রামের সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হয়।

২। বিচারিক ব্যবস্থাঃ আমাদের দেমের সালিশের প্রধান কাজ হলো বিচারিক ব্যবস্থা সম্পাদন করা। কারণ সালিশে সব গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ মাতবর, মেম্বর, চেয়ারম্যান সকলে একসাথে কাজ করে।কারণ সবাই মিলে মিশে দেশের বিচারের কার্যক্রম সম্পাদন করে। যা সমাজের জন্য বেশ উপকারি।

৩। সালিশের ভূমিকাঃ অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে গ্রামের সালিশের বৈঠক বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারন আমাদের দেশের সকল কার্যক্রম আইন ব্যবস্থার করা সম্ভব হয় না। তাই গ্রামের বিচার কার্যে সালিশের ভূমিকা অপরিসীম।

৪। সালিশের রায়ঃ সালিশের রায় নির্ভর করে মূলত অপরাধের মাত্রার উপর।আর গ্রামে যারা সালিশ পরিচালনা করে সাধারণত তারা সরাসরি নির্যাতিত ব্যক্তির ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ শুনে তারা সালিশের রায় নির্ধারণ করে।

পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল ও গ্রাম-নির্ভর সমাজে সালিশ বিচার ব্যবস্থা একটি কার্যকর, গ্রহণযোগ্য এবং ঐতিহ্যবাহী সামাজিক পদ্ধতি। এটি দ্রুত ও সহজ সমাধান প্রদান করে থাকে। যদিও সালিশ ব্যবস্থায় কখনো কখনো পক্ষপাতিত্ব, লিঙ্গবৈষম্য বা সামাজিক চাপের প্রভাব। তাই বলা যায়, সালিশ বিচার বাংলাদেশের সামাজিক জীবন ও গ্রামীণ শাসন ব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।  গ্রামের মাঝে সালিশের ব্যবস্থা আজো প্রচলিত আছে বলে গ্রামে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের মাত্রা খুবই কম।

গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান কি

গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান কি ও আলোচ্য বিষয়

ভূমিকাঃ- সভ্যতার উষাকাল থেকে যৌথবদ্ধ মানুষ একত্রে থাকার সুযোগ সুবিধা এবং সমস্যা নিয়ে ভেবেছে।সমাজজীবনকে অর্থবহ করার নানা উপায় ও কৌশল উদ্ভবন করেছেন। ফলে জম্ম হয় বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানের, দর্শন শাস্ত্র, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের, ইতিহাসের মনস্তত্ত্বের সবশেষে আত্মপ্রকাশ করেছে একদিকে আদি মানব চিন্তার মতই প্রাচীন আবার অন্যদিকে প্রতি দিনের সংবাদপত্রের মতই নতুন বিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞান।

গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান কি


গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানঃ আমরা জানি, প্রাচীনতম স্থায়ী জনসমষ্টি হচ্ছে গ্রাম। গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে গ্রামীণ সমাজব্যবস্থার সমাজবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানের যে শাখাটি গ্রামীণ মানুষের যীবনযাত্রা, আচার-আচরণ, ধ্যান-ধারণা ও গ্রাম সমাজের সংগঠন, কাঠামো প্রক্রিয়া এর মৌলিক সামাজিক ব্যবস্থাসমূহ এবং পরিবর্তনকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে থাকে তাকেই গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বলা হয়।


প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী নানা ধরনের  অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন । নিম্নে তাদের অভিব্যক্ত কয়েকটি উ্রল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।

গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানী লরী নিলসন বলেন ''গ্রামীণ পরিবেশে যে সকল সামাজিক গোষ্ঠী অবস্থান করে তাদের বর্ণণা ও বিশ্লেষণ হচ্ছে গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান।''

Bogardrs এর মতে ''সমাজবিজ্ঞানের যে শাখাটি গ্রাম সমাজের সংগঠন, কাঠামো প্রক্রিয়ার মৌলিক ও সামাজিক ব্যবস্থাসমূহ এবং পরিবর্তনকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলোচনা এবং বিশ্লেষণ করে তাকে গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বলে।''

D. Sanderson গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় বলেছেন ''গ্রামীণ পরিবেশে জীবন ব্যবস্থার সামাজিক অধ্যয়নই হলো গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান।

A. R. Desai এর মতে ''যে বিজ্ঞান গ্রামীণ সমাজের উন্নয়ননীতি সম্পর্কে আলোচনা করে তাই গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান।''

F.S. Chapin এর ভাষায় ''গ্রামের জীবনের সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে গ্রামের জনসংখ্যার সামাজিক সংগঠন এবং গ্রামীণ সামাজিক প্রক্রিয়া যা গ্রামীণ সমাজকে পরিচালনা করে।''

গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

১. গ্রামীণ জনজীবন ও জীবনধারা সম্পর্কে আলোচনা করে।

২. গ্রামীণ সমাজের সামাজিক কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান

৩. পরিবার, আত্মীয়তা ও বৈবাহিক সম্পর্কের ধরণা

৪. গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষিভিত্তিক জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে বিবরন

৫. গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থা ও ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা।

৬. গ্রামীণ সমাজে নেতৃত্ব, ক্ষমতা ও রাজনীতি

৭. সংস্কৃতি, রীতি-নীতি ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ

৮. গ্রামীণ সমাজে পরিবর্তন ও আধুনিকতার প্রভাব

৯. গ্রামীণ দারিদ্র্য, সমস্যা ও উন্নয়ন নীতি

১০. সামাজিক শ্রেণি ও বর্গ বিভাজন

১১. গ্রামীণ নারী ও নারীর অবস্থান

১২. গ্রামীণ সমাজে প্রযুক্তির প্রভাব ও বৈষম্যসহ গ্রামীণ সমাজের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয় নিয়ে গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান হলো গ্রাম সমাজের বিজ্ঞান। এটি মূলত জ্ঞানের একটি সুশৃঙ্খল কাঠামো যা গ্রামীণ সমাজকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অধ্যয়নের ফলশ্রুতি। গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান একটি নতুন শাস্ত্র হলেও ‌এর প্রকৃতি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিজ্ঞানভিত্তিক। কারণ, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান তার বিষয়বস্তুতে বস্তুনিষ্ঠ, মূল্যবোধ ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে আলোচনা ও পর্যালোচনা করে। তাই বলা যায় গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান একাধারে বিজ্ঞান ও কলা বটে। গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান গ্রামীণ মানুষের যীবনযাত্রা তাদের আচার-আচারণ, ধ্যান-ধারণা, প্রথা, প্রতিষ্ঠান তথা গ্রামীণ সমাজ কাঠামোর অধ্যয়ন।

ভূমিসংস্কার কী? ভূমিসংস্কারের গুরুত্ব

ভূমিসংস্কার বলতে কী বুঝ? 

ভূমিকাঃ- প্রাক ভারতে ভূমি মালিকানা সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদরা ভিন্ন মতামত পোষণ করেন।ভূমিতে ব্যক্তি মালিকানা বা রাষ্ট্রীয় মালিকানা বা গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মালিকানার কথা বিভিন্ন জন বিভিন্ন সময়ে বলেছেন। বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে ক্ষুদ্রার্থে হলে ভূমিতে মালিকানা ছিলো। এক কথায় ভূমি বিষয়ে যে সংস্কার আইন তৈরী করা হয় তাই ভূমি সয়স্কার আইন নামে পরিচিত।

ভূমিসংস্কার কী


ভূমিসংস্কারঃ সাধারণভাবে ভূমিসংস্কার বলতে বুঝায় চাষির নিকট জমি ও কৃষি আয়ের পুনঃবন্টনকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এদেশের সরকার ৮০ জন Gundar Mydral এর মতে ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে আমরা মানুষ এবং জমির মধ্যে সম্পর্কের একটি পরিকল্পিত এবং প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন বুঝি।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবীদ, তাত্ত্বিক ও ভূমি বিশেষজ্ঞ ভূমি সংস্কার সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ প্রদান করেছেন। নিম্নে তা উপস্থাপন করা হলো-

অধ্যাপক এম এ হামিদ বলেন পল্লীউন্নয়নের লক্ষ্যে অস্তিত্বমান ভূমিব্যবস্থার সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা শনাক্ত করে তার সংস্থারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নের রুপরেখাই ভূমি সংস্কার।

বদরুদ্দীন উমর এর মতে ভূমি সংস্কার বলতে বোঝায় মূলত ভূমি সম্পর্কের পরিবর্তন অর্ণব জমি ও উৎপাদনের অপরাপর উপকরণের মালিকানার ভিত্তিতে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে যে সম্পর্ক প্রচলিত আছে তার পরিবর্তন।

Thomas F. Currel এর মতে There are defination ranging all the way from simple slogan land to tiller through the large scale change in exciting tenure patterns to the more economic concept of redistribution of agriculture income and earning capacity.

জাতিসংঘের ভূমি সংস্কার কমিটির মতে land বা ভূমি সংস্কার হচ্ছে একটি সমন্বিত কর্মসূচি যা কৃষি কাঠামোর সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি যা বাধার সৃষ্টি করে তাকে সরিয়ে দেই।

ভূমিসংস্কারের গুরুত্ব ও ফলাফল:

১. ভূমির ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা: ভূমিসংস্কারের মাধ্যমে জমির উপর অভিজাত শ্রেণির একচেটিয়া মালিকানা ভেঙে চাষিদের মধ্যে জমি বণ্টন করা হয়। এতে ভূমিহীন কৃষকরা জমির মালিক হয়ে ওঠে এবং সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা পায়।

২. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি: যারা নিজের জমিতে কাজ করে, তারা জমির প্রতি যত্নবান হয় এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করে। ভূমিসংস্কার কৃষিতে উৎসাহ বৃদ্ধি করে এবং ফলন বাড়ায়।

৩. শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা: জমিদার বা মহাজনের হাত থেকে ভূমির মালিকানা তুলে নিয়ে বাস্তব চাষিদের হাতে তুলে দিলে সামাজিক শোষণ কমে এবং দারিদ্র্য হ্রাস পায়।

৪. গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক: ভূমিসংস্কারের ফলে কৃষক জমি চাষ করে উপার্জনের সুযোগ পায়, যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হয়

উপরের আলোচনার পরিপেক্ষিতে বলা যায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির পরিপন্থী কৃষি কাঠামোয় বিরাজমান ত্রুটিসমূহ নিরসনের উদ্দেশ্য যে অবিচ্ছেদ্য কার্যক্রম গৃহীত হয় তাকেই ভূমি সংস্কার বলা হয়। বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের permanent settlement এর মাধ্যমে ভূমি সংস্কারের সূচনা হয়। লোকের ভাগ্য বিজরিত ভূমি সংস্কার ব্যবস্থায় অসংখ্য ত্রুটি লক্ষ্য করে যার কারণে ভূমি সংস্কার সাধনে সরকার গভীরভাবে মনোনিবেশ করে এবং ১৯৭২ ও, ১৯৮৪ সালে দুটি ভূমি সংস্কার নীতি প্রণয়ন করেন।

সমাজ কী? সমাজ বলতে কি বুঝ? সমাজের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিখ

সমাজ কী? সমাজের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিখ
অথবা, সমাজ বলতে কি বুঝ?

ভূমিকাঃ সমাজ একটি সর্বজনীন মানব সংগঠন।সমাজ এমন একটি সংগঠন যা গঠিত হয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সমন্বয়ে। সমাজ হচ্ছে মানুষের এমন একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, যা পরস্পর সম্পর্ক, সহযোগিতা, প্রতিযোগিতা ও পরিবর্তনশীলতার মধ্য দিয়ে টিকে থাকে। সমাজকে ঘিরেই মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ যাবতীয় কাজকর্ম সম্পন্ন হয়। রাষ্ট্র হলো একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। জনগণের কল্যাণ সাধন এবং সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।মানব জীবনে সমাজের ভূমিকা অনেক।
সমাজ কী? সমাজ বলতে কি বুঝ?



সমাজঃ সমাজ হচ্ছে মানুষের এমন একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, যা পরস্পরের সম্পর্ক, সহযোগিতা, প্রতিযোগিতা ও পরিবর্তনশীলতার মধ্য দিয়ে টিকে থাকে। জীবিকা ধারনের জন্য যখন একদল লোক একটি স্থানে ঐক্যবদ্ধ হয় তখন তাকে সমাজ বলে। সাধারণ ভাষায় আমরা সমাজ বলতে বুঝি আমাদের চারিপাশের সবকিছুকে যা আমাদের মানব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সমাজকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞাগুলো তুলে ধরা হলো-

সমাজবিজ্ঞানী ওয়েস্টারমার্ক এর মতে “সমাজ বলতে বুঝায় এমন একদল ব্যক্তির সমষ্টি যারা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জীবনযাপন করে।”

জিসবার্ট এর মতে “সমাজ হলো সামাজিক সম্পর্কের একটি বন্ধন যার দ্বারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সাথে পরস্পর সংযুক্ত থাকে।”

সমাজবিজ্ঞানী গিডিংস এর মতে-“সমাজ বলতে সেই সংঘবদ্ধ মানবগোষ্ঠীকে বুঝায় যারা কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মিলিত হয়ে মনের ভাব প্রকাশ ও আদান প্রদান করে।”

অধ্যাপক বার্কার এর মতে “সমাজ বলতে আমরা সকল ব্যক্তি সমষ্টিগতভাবে বসবাস করাকে বুঝি।
জিন্সবার্গ এর মতে-“মানুষের সাথে মানুষের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, সংগঠিত বা অসংগঠিত, সচেতন বা অসচেতন, সহযোগিতামূলক বা বৈষম্যমূলক সকল সম্পর্কই সমাজ।”

সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহ:


১. মানবসমষ্টি: সমাজ গঠিত হয় মানুষের দ্বারা। সমাজের মূল ভিত্তিই হলো মানুষ।

২. পারস্পরিক সম্পর্ক: সমাজে মানুষ একে অপরের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে এই সম্পর্কই সমাজকে সংহত করে।

৩. সহযোগিতা ও সংগঠন: সমাজে সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা থাকে এবং তারা নির্দিষ্ট সংগঠনের মাধ্যমে একসাথে চলে, যেমন পরিবার, ধর্মীয় সংগঠন ইত্যাদি।

৪. নিয়ম ও রীতি-নীতি: প্রতিটি সমাজে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম, রীতি, প্রথা ও আইন থাকে, যা সমাজের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখে।

৫. নিত্য পরিবর্তনশীলতা: সমাজ একটি পরিবর্তনশীল সত্তা। সময়ের সাথে সাথে সমাজের মূল্যবোধ, বিশ্বাস, রীতি, প্রযুক্তি ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়।

৬. সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য: প্রতিটি সমাজের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য থাকে যা সমাজকে স্বাতন্ত্র্য দেয়।

৭. স্থায়িত্ব:সমাজ কোনো ক্ষণস্থায়ী বিষয় নয়, এটি দীর্ঘস্থায়ী ও ধারাবাহিক।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ বলতে বোঝায় এমন এক ব্যবস্থা যেখানে একাধিক চরিত্রের বা বৈশিষ্ট্যর মানুষ কিছু নিয়ম কানুনন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একত্রে বসবাস করে। অতি আদিম কালেই মানুষ তার বেঁচে থাকার প্রয়োজনে যৌথবদ্ধ সমাজের মধ্যদিয়ে এর বীজ রোপন করে যা বিকাশ ও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সমাজ গঠন হয়।এতএব আমরা বলতে পারি যে, সমাজ হলো একটি সংঘবদ্ধ মানবগোষ্ঠী যেখানে মানুষ একটি উদ্দেশ্য সকলে মিলে সমবেত হয়। আমরা সকলেই সমাজের অংশ কারণ মানুষ সামাজিক জীব।

(French Revolution) ফরাসি বিপ্লব এর কারণসমূহ আলোচনা কর।

ফরাসি বিপ্লব (French Revolution) এর কারণসমূহ

ভূমিকাঃ ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব এবং ফরাসি বিপ্লব এর ফলে ইউরোপসহ সমগ্র পৃথিবীর সমাজ চিন্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক সমাজ সচেতন মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। যা সমাজবিজ্ঞান বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ফরাসি বিপ্লবের কারণসমূহ


সাধারণভাবে ১৭৮৯-১৭৯৫/১৭৯৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ফ্রান্সে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয় তাকে ফরাসি বিপ্লব (French Revolution) বলা হয়। 
ফরাসি বিপ্লব (French Revolution) কারণসমূহঃ ফরাসি বিপ্লব কোন একটি বিশেষ কারণে বা আকস্মিক ঘটনার ফলে সংঘঠিত হয়নি। বহুদিনের পুঞ্জীভূত নানাবিধ অভীযোগ ফরাসি বিপ্লবের রুপ লাভ করেছিল। ১৭৮০ এর দশকে ফ্রান্সে বিপ্লবী পরিস্থিতি গড়ে উঠার কেন্দ্রে ছিলো রাজা ও রাজত্বের ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা আর এ কারণে অর্থনৈতিক সংকট হয় যা ফরাসি বিপ্লবের কারণ ছিলো। ফরাসি বিপ্লবের সকল কারণসমূহ নিম্নরূপ-

১। রাজনৈতিক কারণঃ ফরাসি রাজতন্ত্র ছিলো স্বৈরাচারী জনসাধারণের প্রতিনিধি সভায় বা জনমতের স্থান তাতে ছিলো না। রাজা ইৃশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতার নাম করে স্বৈরাচারী শাসন চালাতো। প্রগতিশীল সংস্কারের প্রতি ফরাসি নৃপতিদের কোন আগ্রহ ছিলো না। যা ফরাসি বিপ্লবের দ্বার উম্মোচন করেছিল।


২। সামাজিক কারণঃ ফরাসি সমাজ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিলো। প্রথম শ্রেণিতে ছিলো যাজক সম্প্রদায়। দ্বিতীয় ছিলো অভিজাত সম্প্রদায়। তৃতীয় শ্রেণিতে ছিলো মধ্যবিত্ত শ্রেণি, কৃষক ও শ্রমিক মজুর। উল্লেখ্য শ্রেণির মধ্য সামাজিক দুরুত্ব ছিলো ব্যাপক। বিশেষ করে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কোন কর ছিল না। করের সমস্ত বোঝা বহন করতে হত তৃতীয় শ্রেণীকে যা ফরাসি বিপ্লবকে (French Revolution) অনিবার্য করে তুলেছিল।


৩। অর্থনৈতিক কারণঃ অর্থনৈতিক কারণ ফরাসি বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছিল। তৎকালীন ফরাসি সমাজে সমগ্র করভার স্বভাবতই তৃতীয় শ্রেণির লোকদের বহন করতে হতো। এছাড়া কৃষকদের বিভিন্ন রাজপথ প্রস্তুত ও মেরামত করার জন্য বেগার খাটতে হতো। যা ফরাসি বিপ্লব (French Revolution) এর অন্যতম কারণ।


৪। আইন ব্যবস্থায় ত্রুটিঃ তৎকালীন ফ্রান্সে আইনবিধি ছিলো বিশৃঙ্খল। সমগ্রদেশের সর্বজনীন আইনকানুনন বলতে কিছুই ছিলো না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম আইন প্রচলিত ছিলো। কোথাও জার্মান আবার কোথাও রোমান আইন।এক তথ্য থেকে জানা যায় যে, সমগ্র ফ্রান্সে বিভিন্ন ধরনের মোট ৪০০ আইন ব্যভস্থা বলবৎ ছিলো। যা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট ছিলনা।


৫। অভিজাত শ্রেণির প্রাধান্য ও অত্যাচারঃ রাজশক্তির দূর্বলতার সুযোগে অভিজাত সম্প্রদায় ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সক্রিয় হয়ে উঠে। রাজসভা অভিজাত শ্রেণির ষড়যন্ত্রের লীলাভূমিতে পরিণত হয়। রাজশক্তির দূর্বলতার সুযোগে অভিজাত সম্প্রদায়রা রাজসভায় প্রাধান্য লাভ করে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তগত করে।


৬।প্রাদেশিক পার্লামেন্টঃ ফরাসি বিপ্লব (French Revolution) এর অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রাদেশিক পার্লামেন্ট। পার্লামেন্টগুলো সাধারণত বিত্তশালী ও অভিজাতদের দ্বারা পরিচালিত হতো। ঐতিহাসিক ফিশার (Fisher) মন্তব্য করেন-“অভিজাতদের বিশেষ সুযোগ সুবিধার প্রশ্ন মীমাংসা করতে রাজতন্ত্রের ব্যর্থতাই ফরাসি বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করে।”


৭। সমসাময়িক দার্শনিকদের প্রভাবঃ সমসাময়িক ফরাসি দার্শনিকগণ তাদের বক্তব্যর মধ্য দিয়ে ফরাসি সমাজে প্রচলিত এক শ্রেণির মানুষের বিশেষ অধিকার এর বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করেছিলেন তা সমাজ বিভেদের দেয়ালকে চূর্ণবিচূর্ণ করতে সহায়ক হয়েছিল।দার্শনিকদের চিন্তাধারা ফরাসিদের মানসিক বিকাশে সহাযতা করেছিল ও তাদের বিপ্লবের মুখোমুখি হবার শক্তি সঞ্চার করেছিল।


৮। রাজপ্রসাদের উচ্ছৃঙ্খলতা ও অমিতব্যায়ীতাঃ রাজপ্রসাদের উচ্ছৃঙ্খলতা ও অমিতব্যায়ীতা ফরাসি জনগণকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছিল। ভার্সাই রাজপ্রসাদ ছিলো বিলাস ব্যাসনের ও ঐশ্বর্য এর স্বর্গপুরী। জানা যায় ১৭৮৯ সালে ভার্সাই রাজপ্রসাদে বিলাস ব্যাসনে প্রায় দুই কোটি মুদ্রা ব্যয় করেন। তখন রাজপ্রসাদ সর্বদা আনন্দে মুখরিত থাকতো যা ফরাসি বিপ্লব (French Revolution) কে ত্বরান্বিত করে।


৯। ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতিঃ ফরাসি বিপ্লবের প্রক্কালে মুদ্রাস্ফীতি ফ্রান্সে (France) চরম আকার ধারণ করে। পণ্যসামগ্রীর মূল্য ৬৫% বেড়ে যায় অথচ সে অনুযায়ী আয় বৃদ্ধি পায় না। ১৭৮৮ সালে France এ ব্যাপক ফসলহানী ঘটে।যার কারণে ১৭৮৯ সালে গ্রামাঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহের সূচনা হয়।


১০। ফরাসি দার্শনিকদের অবদানঃ ফরাসি দার্শনিকগণ প্রত্যক্ষভাবে না বললেও পরোক্ষভাবে ফরাসি বিপ্লবের গতিকে ত্বরান্বিত করেছিল। কেননা তৎকালীন সময়ে ফরাসি জাতির কাছে দার্শনিকদের প্রচারিত মতামত ও নীতি ধর্মনীতির ন্যায় পবিত্র বলে বিবেচিত হতো। তৎকালীন ফরাসি দার্শনিকদের মধ্য হবস, রুশো, মন্টেস্কু, ভলতেয়ার প্রমুখ দার্শনিকগণ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া বেকারত্বের উচ্চহার, খাদ্যদ্রব্যর উচ্চমূল্য, খাদ্য সংকট, রাজপরিবারের অতিরিক্ত খরচে রাজকোষ শূন্য, কৃষক শ্রেণীদের অত্যাচার যার কারণে ফরাসি বিপ্লব ঘটে।


উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব সংঘঠিত হলেও পরবর্তীতে ইউরোপ ও বিশ্বের একাংশে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। সুতরাং বলা যায় যে একক কোন কারনে ফরাসি বিপ্লব (French Revolution) সংঘঠিত হয়নি। ফরাসি বিপ্লবের পিছনে বহুবিধ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণ নিহিত ছিলো

রেঁনেসা কী? রেঁনেসার বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ (write down the Characteristics of Renaissance)

রেঁনেসা (Renaissance) কী? রেঁনেসার বৈশিষ্ট্য লিখ

ভূমিকাঃ- রেঁনেসা (Renaissance) সভ্যতার ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ন শব্দ। মাবসভ্যতাকে মধ্য যুগ থেকে আধুনিক যুগে নিয়ে আসার পিছনে মূল ভূমিকা পালন করে রেঁনেসা । অধিকাংশ তাত্ত্বিকগণের মতে, রেঁনেসা (Renaissance) বলতে মধ্যযুগের শেষে আধুনিক যুগের মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার সমন্বয় কে বোঝায়। রেনেসাঁ সূচনা হয় ফ্লোরেন্স প্রজাতন্ত্রে, ইতালির অনেক রাজ্যের মধ্য একটি।

রেঁনেসা কী?  রেঁনেসার বৈশিষ্ট্যসমূহ  লিখ

রেঁনেসা (Renaissance): রেঁনেসা শব্দের অর্থ পুনর্জাগরন বা নবজাগরন। বহুকালের অবহেলিত প্রাচীন গ্রিস এবং রোমের কৃষ্টি ও সাহিত্য নবজম্ম দান করার জন্য সমগ্র ইউরোপে ত্রয়োদশ শতাব্দিতে এক বিরাট সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে উঠে। এ সাংস্কৃতিক আন্দোলন ইউরোপের ইতিহাসে রেঁনেসা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এতএব বলা যায় যে রেঁনেসা মধ্যযুগীয় অন্ধকার থেকে ইউরোপীয় সমাজকে আলোর দিকে নিয়ে আসে ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ ঐতিহাসিক ডেভিস (Davies) বলেন-“মধ্যযুগে মানুষের শৃঙ্খলিত ও অবরুদ্ধ স্বাধীনতা প্রীতি ও সাহসিকতাপূর্ণ চিন্তাধারা যে পুনর্জম্ম তাই রেঁনেসা নামে পরিচিত।
আসলে রেঁনেসা বলতে বোঝায়, সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক তথা অন্য যে কোন ধরনের বন্ধন থেকে মুক্ত। আর চিন্তা, যুক্তি ও বুদ্ধি বৃত্তির উপ নির্ভর করে, শিল্প, সৌন্দার্য, দর্শন ও বুদ্ধি বৃত্তির চর্চা করা। রাষ্ট্র-সমাজে, শিল্পে-সাহিত্যে, ব্যবসা-বাণিজ্যে এক কথায় জীবনের সকল স্তরে বিপ্লব আনার নামই রেঁনেসা। (আহমদ, ২০০৪:৯৬১)

উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে রেঁনেসা হলো চিন্তা জগৎ এ জাগরণ। Renaissance রেঁনেসা মানুষের মধ্যে পুরাতন ধ্যানধারনা বদলে দিয়ে নতুন ধ্যানধারনার সৃষ্টি করে। ইতালিতে সংঘটিত রেঁনেসা ক্রমান্বয়ে ইউরোপ হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

রেঁনেসার বৈশিষ্ট্যসমূহ  লিখ

রেঁনেসা আন্দোলনের ফলে যে বৈপ্লাবক পরিবর্তন সাধিত হয় তা নিম্নরুপ-
১। হিউম্যানিজমঃ রেনেসা যুগের যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে তার মধ্য হিউম্যানিজম অন্যতম। এর মূল উপজীব্য বিষয় ছিলো মানুষের দেবত্ব গুনাবলিকে প্রাধান্য দিয়ে সাহিত্যকর্মে মানবতার জয়গানকে মুখর করে তোলা।

২। ধর্মীয় মুক্তিঃ রেনেসার পূর্বে মানুষের চিন্তা, সাহিত্য যাজক সম্প্রদায় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হত। ল্যাটিন ভাষায় লিখিত ‘দ্যা বাইবেল’ ছিলো সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ।

৩। যুক্তিবাদী মানসিকতার উদ্ভবঃ অন্ধ বিশ্বাসের পরিবর্তে সকল বিষয়কে যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেবার মানসিকতা হলো রেঁনেসার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৪। ব্যক্তিত্বের বিকাশঃ ধর্মীয় পরিমশুলে পোপ তার প্রশাসনিক পরিমন্ডলে রাজা বাদশাহ ব্যতীত তৎকালীন সমাজে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিত্বের কোন মূল্যয়ন ছিলো না। রেঁনেসা মানুষকে স্বীয় ব্যক্তিত্ব খুজে নিয়ে নিজের প্রাপ্ত আইনত অধিকারগুলো বাস্তবায়িত করার জন্য প্রেরণা যুগিয়েছিল।

৫। বিজ্ঞানের অগ্রগতিঃ ষোড়শ শতাব্দিতে প্রাকৃতিক ও গবেষনামূলক বিজ্ঞান চরম উৎকর্ষ লাভ করে। এক্ষেত্রে কোপারনিকাস, টলেমি ও গ্যালিলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে মানুষের মনে এ বৈজ্ঞানিক মননশীলতার পশ্চাতে ছিলো হিউম্যানিস্টি পন্ডিতদের দ্বারা উদীপ্ত নতুন যুক্তিবাদী ও অনুসন্ধানী যুক্তিবাদী।

৬। চিত্রকলার স্বাধীনতাঃ প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যর প্রতি অনুরাগ ধর্মীয় প্রভাব বর্জিত কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও আকর্ষণ বর্ধিত হয়। ফলে কলা, স্থাপত্যবিদ্যা, ভাস্করবিদ্যা, সংগীত, চিত্রবিদ্যা ও অংকনবিদ্যা অনুশীলনের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবরবতন সূচিত হয়।

রেঁনেসা মধ্যযুগীয় অন্ধকার থেকে ইউরোপীয় সমাজকে আলোর দিকে নিয়ে আসে।রেঁনেসার (Renaissance) ফলে ধর্মনিরপেক্ষতা, শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনা, ঐতিহাসিক গবেষণায় যে চেতনা জাগ্রত হয় সেই চেতনাটি মানবসভ্যতাকে আজকের পর্যায় এ নিয়ে এসছে।