সমাজ কী? সমাজ বলতে কি বুঝ? সমাজের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিখ

সমাজ কী? সমাজের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লিখ
অথবা, সমাজ বলতে কি বুঝ?

ভূমিকাঃ সমাজ একটি সর্বজনীন মানব সংগঠন।সমাজ এমন একটি সংগঠন যা গঠিত হয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সমন্বয়ে। সমাজ হচ্ছে মানুষের এমন একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, যা পরস্পর সম্পর্ক, সহযোগিতা, প্রতিযোগিতা ও পরিবর্তনশীলতার মধ্য দিয়ে টিকে থাকে। সমাজকে ঘিরেই মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ যাবতীয় কাজকর্ম সম্পন্ন হয়। রাষ্ট্র হলো একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। জনগণের কল্যাণ সাধন এবং সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।মানব জীবনে সমাজের ভূমিকা অনেক।
সমাজ কী? সমাজ বলতে কি বুঝ?



সমাজঃ সমাজ হচ্ছে মানুষের এমন একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, যা পরস্পরের সম্পর্ক, সহযোগিতা, প্রতিযোগিতা ও পরিবর্তনশীলতার মধ্য দিয়ে টিকে থাকে। জীবিকা ধারনের জন্য যখন একদল লোক একটি স্থানে ঐক্যবদ্ধ হয় তখন তাকে সমাজ বলে। সাধারণ ভাষায় আমরা সমাজ বলতে বুঝি আমাদের চারিপাশের সবকিছুকে যা আমাদের মানব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সমাজকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞাগুলো তুলে ধরা হলো-

সমাজবিজ্ঞানী ওয়েস্টারমার্ক এর মতে “সমাজ বলতে বুঝায় এমন একদল ব্যক্তির সমষ্টি যারা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জীবনযাপন করে।”

জিসবার্ট এর মতে “সমাজ হলো সামাজিক সম্পর্কের একটি বন্ধন যার দ্বারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সাথে পরস্পর সংযুক্ত থাকে।”

সমাজবিজ্ঞানী গিডিংস এর মতে-“সমাজ বলতে সেই সংঘবদ্ধ মানবগোষ্ঠীকে বুঝায় যারা কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মিলিত হয়ে মনের ভাব প্রকাশ ও আদান প্রদান করে।”

অধ্যাপক বার্কার এর মতে “সমাজ বলতে আমরা সকল ব্যক্তি সমষ্টিগতভাবে বসবাস করাকে বুঝি।
জিন্সবার্গ এর মতে-“মানুষের সাথে মানুষের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, সংগঠিত বা অসংগঠিত, সচেতন বা অসচেতন, সহযোগিতামূলক বা বৈষম্যমূলক সকল সম্পর্কই সমাজ।”

সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহ:


১. মানবসমষ্টি: সমাজ গঠিত হয় মানুষের দ্বারা। সমাজের মূল ভিত্তিই হলো মানুষ।

২. পারস্পরিক সম্পর্ক: সমাজে মানুষ একে অপরের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে এই সম্পর্কই সমাজকে সংহত করে।

৩. সহযোগিতা ও সংগঠন: সমাজে সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা থাকে এবং তারা নির্দিষ্ট সংগঠনের মাধ্যমে একসাথে চলে, যেমন পরিবার, ধর্মীয় সংগঠন ইত্যাদি।

৪. নিয়ম ও রীতি-নীতি: প্রতিটি সমাজে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম, রীতি, প্রথা ও আইন থাকে, যা সমাজের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখে।

৫. নিত্য পরিবর্তনশীলতা: সমাজ একটি পরিবর্তনশীল সত্তা। সময়ের সাথে সাথে সমাজের মূল্যবোধ, বিশ্বাস, রীতি, প্রযুক্তি ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়।

৬. সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য: প্রতিটি সমাজের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য থাকে যা সমাজকে স্বাতন্ত্র্য দেয়।

৭. স্থায়িত্ব:সমাজ কোনো ক্ষণস্থায়ী বিষয় নয়, এটি দীর্ঘস্থায়ী ও ধারাবাহিক।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ বলতে বোঝায় এমন এক ব্যবস্থা যেখানে একাধিক চরিত্রের বা বৈশিষ্ট্যর মানুষ কিছু নিয়ম কানুনন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একত্রে বসবাস করে। অতি আদিম কালেই মানুষ তার বেঁচে থাকার প্রয়োজনে যৌথবদ্ধ সমাজের মধ্যদিয়ে এর বীজ রোপন করে যা বিকাশ ও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সমাজ গঠন হয়।এতএব আমরা বলতে পারি যে, সমাজ হলো একটি সংঘবদ্ধ মানবগোষ্ঠী যেখানে মানুষ একটি উদ্দেশ্য সকলে মিলে সমবেত হয়। আমরা সকলেই সমাজের অংশ কারণ মানুষ সামাজিক জীব।

No comments:

Post a Comment