Showing posts with label গ্রামীণ ও নগর সমাজবিজ্ঞান. Show all posts
Showing posts with label গ্রামীণ ও নগর সমাজবিজ্ঞান. Show all posts

জনসংখ্যার উপর স্থানান্তর গমনের প্রভাব আলোচনা কর

জনসংখ্যার উপর স্থানান্তর গমনের প্রভাব 

জনসংখ্যার উপর পরিবেশের স্থানান্তর গমনের প্রভাব আলোচনা কর। 

ভূমিকাঃ- উন্নত দেশ বা অনুন্নত দেশ সব দেশেই গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে গ্রামে, শহর হতে শহরে স্থানান্তর সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে সব দেশে একই কারণ বিদ্যমান তা নয়। কোন দেশে বিকর্ষণজনিত কারনে আবার কোন কোন দেশে আকর্ষণ জনিত কারণে জনসংখ্যা স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। 

জনসংখ্যার উপর স্থানান্তর গমনের প্রভাব আলোচনা কর


১। জনসংখ্যার উপর গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের প্রভাবঃ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের ফলে শহরে আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরের জনসংখ্যা ও ঘনত্ব বাড়ছে। গ্রামের লোক শহরমুখি হচ্ছে বলেই শহর ও শহরের আশেপাশের শিল্প কারখানা গড়ে তোলার সুযোগ হচ্ছে। বাংলাদেশের শহর ও শহরের আশেপাশে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানা স্থাপিত হচ্ছে। এসব খাতে নারী পুরুষ জনসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অতিরিক্ত লোকের চাপ পড়ছে শহরের বিভিন্ন খাতে। বিশেষ করে শহর এলাকায় দেখা দিচ্ছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত চাহিদা। ক্রেতার প্রতিযোগিতার কারনে বৃদ্ধি পাচ্ছে পণ্যর মূল্য। 

২। জনসংখ্যার উপর গ্রাম থেকে গ্রামে স্থানান্তরের প্রভাবঃ গ্রাম থেকে গ্রামে স্থানান্তর বেশির ভাগই অস্থায়ী। দৈনন্দিন কাজের সন্ধানে বা কাজ করার উদ্দেশ্য গ্রামের মানুষ স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। আবার সম্পর্কের কারণে স্ত্রী যেমন স্বামীর বাড়িতে স্থানান্তরিত হয় তেমনি আবার স্বামীও স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। এছাড়া কাজের প্রয়োজনেও মানুষ এক গ্রাম হতে অন্য গ্রামে স্থানান্তরিত হয়। এ ধরনের স্থানান্তর দ্বারা গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থার পরস্পর পরস্পর কর্তৃক স্বসমর্থিত হয়ে ওঠে। একে অপরের সমর্থিত হয়ে প্রায় ভারসাম্য জীবনযাত্রা নির্বাহ করার সুযোগ পায়। একজনের বিপদে অন্য গ্রামের লোকের এগিয়ে আসে। জন্ম, মৃত্যু, উন্নয়ন সর্বক্ষেত্রে পারস্পরিক সমর্থিত হয়ে একে অপরের প্রতি হৃদয় সুলভ সম্পর্ক দ্বারা জীবনযাত্রা নির্বাহ করার সুযোগ পায়। শ্রমদক্ষতা বিনিময়, সংস্কৃতির প্রভাব, উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধির জীবিকা শক্তি বৃদ্ধি, জীবিকা শক্তিবৃদ্ধি পায় এ ধরনের স্থানান্তর দ্বারা।

৩। জনসংখ্যার উপর শহর থেকে গ্রামে স্থানান্তরের প্রভাবঃ গ্রাম প্রধান দেশগুলোর এ ধরনের স্থানান্তর যদি দক্ষ ব্যবস্থাপক, প্রশাসক, ডাক্তার, কৃষিবিদ, মৎস্যবীদ, অর্থনীতিবিদ কর্তৃক সম্ভাব হয় তবে উন্নয়ন গ্রাম থেকে শুরু হবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কৃষি ক্ষেত্র, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, প্রশাসন ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, সেতু, শিক্ষা ও মৎস্য প্রভৃতির উন্নয়ন শুরু করলে গ্রামের বেকার অসংখ্য লোকের কর্মসংস্থান হবে। গ্রামের লোক শহরমুখী হবেনা।উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ নীতির বলবৎ থাকলে গ্রামের লোক শহরে আসবে না। বরং শহরের লোক গ্রামমুখী হবে বেশি স্থানান্তরিত হবে। তখন শহরের অতিরিক্ত বোঝা কমবে।

৪। শহর থেকে শহরে স্থানান্তরের প্রভাবঃ শহর থেকে শহরের স্থানান্তর দ্বারা কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের কর্মের দক্ষতা বাড়ে। কর্ম দক্ষতা পরস্পর বিনিময় হয়। এক শহরের লোকেরা অন্য শহরের স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে দেশের শহরের আয়তন বাড়ে। সব শহরের মধ্যে কর্মদক্ষতার বিস্তৃতি ঘটে। উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধি পায়, আয় বাড়ে, আয়ের সঞ্চয় বাড়ে, বিনিয়োগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক ও নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করে।

উপসংহার: জনসংখ্যা স্থানান্তর দ্বারা গ্রাম, শহর প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক, সামাজিক শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক হয়। আবার উৎপাদনমুখী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই জনসংখ্যা স্থানান্তরের ঋণাত্মক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। জনসংখ্যার রাষ্ট্র সমগ্র সমাজ অর্থনীতি এই তিন বৃহৎ শক্তির উন্নয়নের সহায়ক হয়।

কৃষিকাজ কি? কৃষিকাজের ধরণ ও উপাদানসমূহ

কৃষিকাজ কি?

ভূমিকাঃ- কৃষিকাজ হলো সমাজের কৃষি ব্যবস্থার মূল ধরণ। কারণ কৃষিভিত্তিক সমাজের প্রধান উপার্জন বা জীবিকার মাধ্যম হলো কৃষিকাজ। আর সভ্যতার প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ কৃষিকাজ করে আসছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রকার কৃষিকাজ বিদ্যমান। কৃষির উপর নির্ভর করে বর্তমানে বিশ্বে ১৫০ টি দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

কৃষিকাজ কি? কৃষিকাজের ধরণ ও উপাদানসমূহ


কৃষিকাজঃ মানুষের সাথে কৃষির নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। কারণ সমাজব্যবস্থায় কৃষিজদ্রব্য উৎপাদন করে মানুষ তার জীবিকা নির্বাহ করে। অধুনিক যুগে কৃষিজ উৎপাদন অনেক দ্রুতগতিতে সম্ভব হচ্ছে। কৃষিজ উৎপাদন বা কাজ হলো সমাজে বেচে থাকার জন্য যেসব দ্রব্য মানুষ উৎপাদন করে তার শ্রম বা উৎপাদন প্রণালিকেই কৃষিকাজ বলে। কৃষিকাজ হলো এমন এক ধরনের উৎপাদন বা চাষাবাদ পদ্ধতি যা সমাজের সকল জনগোষ্ঠীর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে।

সাধারণত মাটি চাষ হতে শুরু করে ফসল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল কর্মকান্ডকেই একত্রে কৃষিকাজ বলা হয়।

কৃষিকাজের ধরণসমূহ লিখ

কৃষিকাজের ধরনসমূহঃ আগে শুধু ব্যক্তি নিজের জন্য কৃষিকাজ করতো এখন সকলের জন্য কৃষিকাজ করা হয়।

  • প্রান্তিক কৃষিকাজ:- সাধারণত ক্ষুদ্র কৃষকেরা স্বল্প পরিসরে নিজেদের প্রয়োজন পূরণের জন্য করে থাকেন।
  • পড়ন্ত কৃষিকাজ:- প্রাকৃতিক সম্পদের অপ্রতুলতা ও প্রতিকূল পরিবেশে সীমিত ফসল উৎপাদন।
  • যৌথ কৃষিকাজ:- কাধিক ব্যক্তি মিলে যৌথভাবে চাষাবাদ পরিচালনা করেন।
  • কেন্দ্রীয় কৃষিকাজ:- সরকারের বা বড় প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত কৃষিকাজ।
  • নিবিড় কৃষিকাজ:- অল্প জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে পরিচালিত কৃষিকাজ।
  • সমবায় কৃষিকাজ:- কৃষকদের সমবায় ভিত্তিতে সংগঠিত হয়ে কৃষিকাজ করা।

এগুলো কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

কৃষিকাজের ব্যবহৃত উপাদানসমূহ

কৃষিকাজ সফলভাবে সম্পাদনের জন্য কিছু মৌলিক উপাদান অপরিহার্য।

কৃষিকাজের প্রধান উপাদানঃ ১। আধুনিক যুগে কৃষিকাজ বা চাষাবাদ করা হয় যন্ত্র বা প্রযুক্তি দিয়ে। কিন্তু প্রাচীন যুগে হাত দিয়ে বা গরু দিয়ে চাষ করা হতো।ফলে উৎপাদন এখন বহুগুণে বেড়ে গেছে।

২। প্রাচীন বা মধ্যযুগে অর্থনীতি ছিল দুর্বল তাই কৃষি তেমন উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু আধুনিক যুগে মানুষের মধ্যে অর্থনীতি উন্নত হওয়ায় কৃষিতে অনেক বিনিয়োগ করছে যা দেশের অর্থনীতির জন্য বিশাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কৃষি যন্ত্রপাতিঃ সাধারণত কৃষি যন্তপাতি সেসব বিষয় যা সরাসরি কৃষির সাথে জড়িত এবং যেগুলি ছাড়া কৃষিকাজ সম্ভব নয়। যেমন-

  • ট্রাক্টর
  • লাঙ্গল
  • নিড়ানী যন্ত্র
  • ফসল সংগ্রহের মেশিন
  • কাস্তে
  • পাওয়ার টিলার
  • উর্বর জমি ও পর্যাপ্ত পানি
  • গরুর গাড়ী ও বহনকারী যন্ত্র ইত্যাদি।

উপসংহারঃ উপরের আলোচনা হতে পরিশেষে বলা যায় যে, কৃষিকাজ সম্পাদন করার জন্য কৃষি যন্ত্রপাতি আবশ্যক। বর্তমানে কৃষির উন্নয়ন ঘটেছে। কৃষিজ ব্যবস্থা আজ বহুমুখী উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিনত হয়েছে। কৃষিকাজ একটি দেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ, কৃষিকাজের মাধ্যমে মানুষ যেমন তার মৌলিক চাহিদা পূরণ করে তেমনি কৃষির উপর নির্ভর করে একটি দেশের সকল আর্থসামাজিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে থাকে যা মানব সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মাদকাসক্তির কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

মাদকাসক্তির কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর

ভূমিকাঃমাদকাসক্তি একটি ব্যতিক্রমধর্মী সমস্যা এর পিছে বহুবিধ কারণ বিদ্যমান। এসব কারণ সমাজ থেকে উদ্ভুত।নিম্নে কয়েকটি মাদকাসক্তির কারণ আলোচনা করা হলো-

মাদকাসক্তির কারণ ও ফলাফল

১। মাদকদ্রব্যর সহজলভ্যতাঃ মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ হলো মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা।আমাদের দেশে খুব সহজেই মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়। মাদকদ্রব্এর মধ্যে হিরোইন সবাই ব্যবহার করে। এমনকি নিম্ন শ্রেণীর লোকজনের মধ্যে ও এর ব্যবহার রয়েছে।

২। দারিদ্র্যঃ দারিদ্র্যের কষাঘাতে ক্ষণিকের জন্য মানুষ কষ্টকে ভূলতে চায়। বিশেষ করে রিক্সাচালক, ঠেলাগাড়ি চালক, দিনমজুর, শ্রমিক এ শ্রেণীর লোকেরা নেশা আতীয় দ্রব্য সেবন করে আরাম পেয়ে থাকে।

৩। কৌতুহলঃ মাদক আসক্তির অন্যতম আরও একটি কারণ হলো কৌতুহল। কৌতুহল বশে অনেকেই প্রথমে মাদক গ্রহণ করে ।অনেক সময় রোমাঞ্চকর অনুভূতি উপলব্ধি করা জন্য প্রথমে অনেকেই মাদকদ্রব্য সেবন করে। পরবর্তীতে মাদক গ্রহনের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে যায় যে এ মাদকাসাক্ত অবস্থা হতে আর বের হতে পারে না। 

৪। মূল্যবোধের অবক্ষয়ঃ সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে যুবসমাজ হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং তারা হতাশা হতে মুক্ত হওয়ার জন্য মাদক সেবনে যুক্ত হয়ে পড়ে।

৫। অস্থিতিশীল পরিবেশঃ এদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল । একদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অন্যদিকে সামাজিক অক্ষয় যুবকদেরকে চরম অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

উপরিউক্ত কারণ ছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে সেগুলি হলো- প্রেম প্রত্যাখ্যান, আনন্দলাভ, অনুকরণ, অতিরিক্ত পরিশ্রম ইত্যাদি মাদকাসক্তির জন্যো দায়ী।

মাদকাসক্তির প্রভাব বা ফলাফলঃ মাদকাসক্তি আমাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নিম্নে সেগুলি আলোচনা করা হলো।

১। ব্যক্তির উপর প্রভাবঃ মাদকাসক্তি ব্যক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে ব্যক্তি ধীরে ধীরে বিপন্ন হয়ে পড়ে। এমনকি এক সময় ব্যক্তি অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে যা মাদকাসক্তির নেতিবাচক প্রভাব।

২। পরিবারের সুখ শান্তির উপর প্রভাবঃ মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার পরিবারের সুখ-শান্তি বিনষ্ট করে ফেলে। পরিবারের কেউ যদি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সমাজের দ্বারা হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। ফলে পরিবারের সুখ শান্তি বিনষ্ট হয়। 

৩। অপরাধ সৃষ্টিঃ আমাদের দেশের নানা ধরনের অপরাধের জম্ম হচ্ছে মাদকাসক্তির আসক্তের ফলে। মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে ব্যক্তির মানসীকতা ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়ে যায় । ফলে মাদকাসকবত ব্যক্তি খুন, সিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতির মত অপরাধ করে থাকে।

৪। অর্থনীতির উপর প্রভাবঃ মাদকাসক্তি আমাদের অর্থনীতির উপর গুরুত্বপূর্ণ নেতিবাচক প্রভাব রাখছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে ধীরে ধীরে সে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এমনকি মাদকদ্রব্য আমদানির জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় এবং ব্যক্তির অর্থনীতিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।

৫। এইডস এর প্রভাবঃ মাদকাসক্তি ব্যক্তির এইডস এর উপর মাদকাসক্তি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কেননা মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা দল বেধে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে। ফলে দলের কারো এইডস থাকলে অন্য ব্যক্তির দেহে সে ভাইরাস সহজে প্রবেশ করতে পারে। এইভাবে মাদকাসক্ত ব্যক্তি এইডস এর সৃষ্টিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সর্বশেষ বলা যায় মাদকাসক্তির প্রভাব আমাদের দেশ ও জাতির জন্য এক ভয়ানক অভিশাপ। মাদকাসক্তির প্রভাবে আমাদের যুব-সমাজ আজ ধ্বংসের পথে।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ভূমি সংস্কার নীতি আলোচনা কর

১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ভূমি সংস্কার নীতি 

ভূমিকাঃ- স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাঙালি জাতি পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাঁড়ানোর অভিপ্রায়ে সরকারিভাবেই ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো শুরু। গ্রামীণ কৃষি কাঠামো ভেঙে পড়া অবস্থাকে উত্তরণের জন্য তৎকালীন সরকার উপলব্ধি করেন যে ভূমি ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। এজন্যই ১৯৭২ সালে ভূমি সংস্কার নীতি গৃহীত হয়।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ভূমি সংস্কার নীতি ও সমস্যাসমূহ

১৯৭২ সালের ভূমি সংস্কার নীতিঃ  ১৯৭২ সালের ভূমি সংস্কার নীতিতে যে সকল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১। প্রতি পরিবার জমির পরিমাণ ১০০ বিঘা নির্ধারন রাখা। তবে চা, রাবার সমবায় চাষ ইত্যাদির ক্ষেত্রে এ সীমা শিথিলযোগ্য।

২। ১০০ বিঘার বেশী সকল জমি ৬০ দিনের মধ্যে অধ্যাদেশ বলে হস্তান্তর করা।

৩। ১০০ বিঘার উদ্বৃত্ত জমি সরকার হাতে নিয়ে  ক্ষুদ্র ও ভূমিহীনদের মাঝে বন্টন করা। এ বন্টনে জমির আকার হবে ১.৫ একরের কম।

৪। ১৯৭২ সালের ভূমি সংস্কারে ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ হয় যা ১৪ই এপ্রিল ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকে।

৫। ১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সকল বকেয়া খাজনা মওকুফ।

৬। সরকারি ইজারাদারি প্রথা বিলুপ্ত করেন এবং অকৃষিকে কৃষি থেকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন।

৭। ভূমি প্রশাসন ও ভূমি মন্ত্রণালয় স্থাপন।

৮। নতুন এ সংস্কারে চর সম্পত্তির মালিক হবেন সরকার এবং এ সম্পত্তি ভূমিহীনদের মাঝে বন্টন করা হবে।

৯। ১৯৭২ ভূমি সংস্কারে সেলামী ব্যতীত জমি বন্টনের ব্যবস্থা করা ।

এগুলিই ছিলো সাধারণত ১৯৭২ সালের ভূমি সংস্কার নীতিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত।

বাংলাদেশের  ভূমিসংস্কারে বিরাজমান সমস্যাসমূহ লিখ।

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৪০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও ৭০ ভাগ লোক পরোক্ষ ভাবে কৃষির সাথে জড়িত।  কারন আমাদের দেশ শিল্পোন্নত নয় বরং কৃষিকে কেন্দ্র করেই আমাদের সকল অবস্থার পরিবর্তন হয়। তবে আমাদের কৃষিতে ভূমি সংস্কারে কিছু সমস্যা বিরাজমান। আর ভূমি সংস্কারের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তার পথে নানা ধরনের বাধা রয়েছে যা ভূমিসংস্কারের জন্য বাধাস্বরুপ।

১। রাজনৈতিক সমস্যাঃ যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনীতি বেশ সহায়ক হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তেমনি ভূমিসংস্কারের জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আমাদের দেশে ভূমিসংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনীতি হলো একটি বড় পাঠ।

২। বেনামী লেনদেনঃ আমাদের দেশে ৯০ এর দশকে যে ভূমি সংস্কার আইন প্রবর্তন করা হয়েছে তাতে অনেকে নামে বেনামে জমির মালিকানা লাভ করেছে। তাছাড়া উপযুক্ত খাজনা না দেওয়ার জন্য অনেক জমির জন্য আদালতের দৌড় গোড়ায় পৌছায়ছে। যা ভূমিসংস্কারে বড় বাধা।

৩। ভূমির অসম বন্টনঃ আমাদের দেশে ভূমির অসম বন্টনের কারনে অনেক সময় গ্রামীণ মানুষের মাঝে নানা ধরনের অসমতা দেখা যায়। কারণ এখানে যারা বেশি জমির মালিক তারা সাধারণত দরিদ্র চাষীদের উপর প্রভাব বিস্তার করে।

৪। সামাজিক অসাম্যঃ আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষই গ্রামে বাস করে। আর গ্রামের মাঝে তেমন বৈষম্য দেখা যায় না। বূমি ব্যতীতযত বৈষম্য সব ভূমিকে কেন্দ্র করে । যারা অনেক জমির মালিক তারা সবসময় দরিদ্র কৃষকের উপর কর্তৃত্ব করে। কারণ দরিদ্র কৃষকরা ধনীদের জমি বর্গাচাষ করে করে যা সমাজিক অসমতা বৃদ্ধি করে।

সর্বশেষ বলা যায় ভূমি সংস্কার আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। কারন উপযুক্ত ভূমিসংস্কারের অভাবে আমাদের দেশের আবদি জমির নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে যা কৃষির জন্য বেশ হুমকিস্বরুপ।

নগর দারিদ্র্য কী? নগর দারিদ্র্যের বৈশিষ্টসমূহ লিখ

নগর দারিদ্র্য কী? নগর দারিদ্র্যের বৈশিষ্টসমূহ লিখ

ভূমিকাঃ- একটি দেশের গতিশীল উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নগরায়ন অপরিহার্য হলেও দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়নের সামগ্রিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যক তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দারিদ্র্য সমস্যা। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় নগর দারিদ্র্য অনুপস্থিত নয়। কেননা প্রতিবছরই গ্রাম থেকে শহরে আসে। যার ফলে নগর দারিদ্র্য প্রতিনিয়ত বিশাল আকার ধারণ করছে।

নগর দারিদ্র্য কী? নগর দারিদ্র্যের বৈশিষ্টসমূহ লিখ

নগর দারিদ্র্যঃ সাধারণত নগর দারিদ্র্য হলো নগরে বসবাসরত মানুষের জীবন যাত্রা যেমন নিম্নমানের ঘরবাড়ি, নিম্ন আয়, অজ্ঞতা, কুসংস্কার, কর্মদক্ষতার অভাব, নিম্নমানের শিক্ষা ইত্যাদির মান বজায় রাখার জন্য অপারগতা  প্রকাশ করা।

ব্যাপক অর্থে নগর দারিদ্র্য হচ্ছে শহরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর এমন  একটা স্তরযেখানে যীবন ধারণের জন্য নূন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা সমূহ পূরণ করতে অক্ষম এবং মাথাপিছু আয় অতি নিম্নমানের। আর যে সকল নগরবাসী এই ধরনের জীবন যাত্রার মৌলিক চাহদা পূরণের অপারগতা প্রকাশ করে তারাই নগর দারিদ্র্য।

শিলিন এর মতে- ''যাদের জীবনমান সমাজ নির্ধারিত জীবনযাত্রা মানের চেয়ে নিচে তারাই দরিদ্র। আর এ দরিদ্র অবস্থাকে নগর দারিদ্র্য বলে।''

আয়েশা নোমানের মতে- ''সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দারিদ্র্য হলো মানবজীবনের এমন একটি স্তর যেখানে মানুষের জীবন ধারণের মৌল চাহিদাসমূহ পূরণে অক্ষম।''

এতএব বলা যায় যে নগর দারিদ্র্য হলো নগরবাসীর এমন এক অবস্থা যেখানে তারা তাদের মৌল ও মানবিক চাহিদা পূরণে অক্ষম।

নগর দারিদ্র্যর বৈশিষ্ট্যসমূহ

নগর দারিদ্র্যের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলি নিম্নে দেওয়া হলো-

১। নগর দারিদ্র্য শিল্পায়িত সমাজ ব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য ফলশ্রুতি।

২। নিম্নমানের জীবনযাত্রা নগর দারিদ্র্যর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৩। নগর দারিদ্র্যের সাধারণ বৈশিষ্ট্য মৌল ও মানবিক চাহিদা পূরণে অপারগতা প্রকাশ করা।

৪। নিম্নমানের আয় নগর দারিদ্র্যের একটি বৈশিষ্ট্য

৫। নগর দারিদ্র্যর ফলে নগর বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত।

৬। নগর দারিদ্র্যর সাধারণ বৈশিষ্ট্য উচ্চ জম্মহার ও উচ্চ মৃত্যুহার।

৭। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড যেমন- বেকারত্ব, মাদকাসক্তি, পতিতাবৃত্তি, ছিনতাই, যৌন অপরাধ নগর দারিদ্র্যর সাধারণ চিত্র।

৮। স্বাস্থ্যের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া নগর দারিদ্র্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৯। নগর দরিদ্র্য অন্ত:ভুক্ত পরিবারের শিশুরা বিদ্যালয়ে না গিয়ে কাজে যুক্ত হয়, ফলে অশিক্ষার হার বেশি।

১০। তারা এক জায়গায় স্থায়ী হতে পারে না, ফলে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না।

১১। বস্তি এলাকায় প্রতি বর্গমিটারে অনেক মানুষ গাদাগাদি করে বসবাস করে।

১২। অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে বসবাসের পরিবেশ অত্যন্ত দূষিত হয়।

১৩। নারী ও শিশুরা বিশেষ করে নির্যাতনের শিকার হয়, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা পায় না।

১৪। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নগর দরিদ্ররা।

১৫। উপার্জন এতই কম যে তারা সঞ্চয় করতে পারে না, ফলে দারিদ্র্য চক্রে আটকে যায়।

১৬। দারিদ্র্যের কারণে হতাশা, আত্মহত্যা প্রবণতা ও মানসিক রোগ বেড়ে যায়।

১৭।জলাবদ্ধতা, যানজট, বর্জ্য সমস্যা, অপরাধ বৃদ্ধি ইত্যাদির সঙ্গে নগর দরিদ্ররা জড়িত বা প্রভাবিত হয়।

সুতরাং উপরের আলোচনার উপর ভিত্তি করে বলা যায়, উল্লেখিত দিকগুলি ছাড়াও অসচেতনতা, অদক্ষতা, কুসংস্কারচ্ছন্নতা ইত্যাদি নগর দারিদ্র্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

কৃষি কাঠামো কি? কৃষির উপকরণসমূহ লিখ

কৃষি কাঠামো কি?

কৃষি কাঠামো বলতে কি বুঝ?

ভূমিকাঃ- বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ।এদেশের শতকরা ৬০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত এবং কৃষির উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। আর গ্রামের মানুষের মাঝে শিক্ষার হার অনেক কম। তাছাড়া আমাদের দেশের সকল ক্ষেত্র যথেষ্ট উন্নয়ন করা সম্ভব নই। কৃষি কাঠামোর উন্নয়ন করতে হলে  আমাদের দেশের কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি ব্যবহার করায় কোনো বিকল্প নেই।

কৃষি কাঠামো কি?


কৃষি কাঠামোঃ কৃষি কাঠামোর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Agrarian Structure কৃষি কাঠামো হলো এমন এক ধরনের কাঠামো যা কৃষিভিত্তিক সকলের কার্যক্রম  সম্পাদন করাকে বোঝায়। কৃষির সাথে সংযুক্ত সকল কাজকর্ম যেমন- বীজ, সার, তেলবীজ, তেল, জনবল ইত্যাদির সাথে ভূমির সম্পৃক্ত সব ধরনের কার্যাবলিকে কৃষি কাঠামো বলে।

প্রামাণ্য সজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও কৃষিবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে কৃষি কাঠামোর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি জনপ্রিয় সংজ্ঞা প্রদান করা হলো।

বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী বেতেলর মতে- ''কৃষি কাঠামো এমন এক ধরনের কাঠামো যেখানে মালিকানার নিয়ন্ত্রণে ভূমি সঠিক ব্যবহার করে শ্রমিক, সার, তেলবীজ ইত্যাদি সরবরাহ করাকে বোঝায়। মূলত কৃষি কাঠামো হলো সেই কাঠামো যা কৃষিকাজে সম্পৃক্ত সকল ধরনের কৃষিকাজকে বোঝায়। মূলত বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করাকেই কৃষি কাঠামো বলা হয়।''

সমকজবিজ্ঞানী কাতার সিং বলেন- ''কৃষি কাঠামো হলো সেই কাঠামো যা প্রযোজনীয় যোগান ও সেবায় সমর্থন দিয়ে যৌথ চাষ ব্যবস্থা এবং জমির যথাযথ ব্যবহার করে কৃষি কাঠামোর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ধরনের কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। একটি দেশের সমগ্র অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ ও উন্নতি নির্ভর করে সে দেশের কৃষি কাঠামোর উপর। এজন্য উন্নয়নশীল দেশ হতে হবে।কারণ, শিল্পভিত্তিক দেশে কখনো কৃষির মাপকাঠি অনুযায়ী আর্থিক উন্নয়ন বিবেচনা করা হবেনা। কারণ, মানুষ সর্বদা পরিবর্তন চায়। আর এ পরিবর্তনের জন্য চায় যে কোনো ধরনের কাঠামো। তেমনি আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে কৃষি কাঠামো হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কৃষির উপকরণসমূহ:

কৃষি কাঠামোর কার্যকারিতা নির্ভর করে কৃষির বিভিন্ন উপকরণের উপর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপকরণগুলো হলো:

১. উপযুক্ত জমি: চাষের জন্য উর্বর ও পানির সহজলভ্যতার জমি।

২. বীজ: উন্নত ও উচ্চফলনশীল বীজ কৃষির ফলন বাড়াতে সাহায্য করে।

৩. সার ও কীটনাশক: মাটির উর্বরতা রক্ষা ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন।

৪. শ্রম ও জনবল: কৃষিকাজে নিয়োজিত দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক।

৫. সেচ ব্যবস্থা: পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

৬. যান্ত্রিক সরঞ্জাম: আধুনিক কৃষিযন্ত্র (যেমন ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার) ব্যবহারে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৭. বাজার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা: উৎপাদিত ফসলের বিপণনের জন্য সহজ বাজার ব্যবস্থা।

উপসংহারঃ উপরিউক্ত আলোচনা হতে পরিশেষে বলা যায় যে,  একটি দেশের বিশেষ করে একটি উন্নয়নশীল দেশের প্রধান সম্পদ বা উন্নয়নের মাধ্যম হলো কৃষি।কারণ আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। আর গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা হলো কৃষি। কারণ, ভূমি হচ্ছে গ্রামীণ সমাজের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। আর এ ধারা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তবে কৃষিতে বিরাজমান সমস্যাগুলি সমাধান করলে কৃষি কাঠামোতে পরিবর্তন সম্ভব।


ভূমিস্বত্ব প্রথা কি? ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আলোচনা কর

ভূমিস্বত্ব প্রথা কি? ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে সম্পর্ক

ভূমিকাঃ- সামাজিক স্তরবিন্যাসের মধ্যে অন্যতম স্তর হলো ভূমিস্বত্ব প্রথা। ভূমিস্বত্ব কখনো ভূসম্পত্তি আবার কখনো সামাজিক শ্রেণি ইত্যাদিকে বোঝায়। ইউরোপ এবং রাশিয়ার স্তরবিভাগ বলতে বুঝাতে এটি ব্যবহৃত হয়। এ স্তর ব্যবস্থায় প্রতিটি স্তর ভূমিস্বত্ব নামে পরিচিত।

ভূমিস্বত্ব প্রথা কি? ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আলোচনা কর


ভূমিস্বত্ব প্রথাঃ মধ্যযুগে ইউরোপের সামন্ত্রতান্ত্রিক সমাজে প্রথমে ভূমিস্বত্ব প্রথা বলতে জমিদারি বুঝাতো। ইংরেজি Esitates শব্দের অর্থ একজন জমিদার। পরে রাশিয়াসহ পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সামন্ত ব্যবস্থার অধীনে এস্টেট শব্দটি এক ধরনের সামাজিক স্তর ব্যবস্থা তথা শ্রেণি ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উক্ত স্তর ব্যবস্থার প্রতিটি ভিন্ন গোষ্ঠী বা স্তর এস্টেটস বা ভূমিস্বত্ব নামে পরিচিত হইতো। যেমন- যাজক, অভিজাত এবং জনসাধারণ।ভূমিস্বত্ব প্রথা বা Estate system কে তিনভাগে ভাগ করা যায়।যথা-

(ক) যাজক শ্রেণীঃ যারা প্রার্থনা ও ধর্মীয় কাজে নিয়োজিত তাদেরকে যাজক শ্রেণী বলা হতো।

(খ) অভিজাত শ্রেণিঃ যুদ্ধ ও নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত লোকদের অভিজাত শ্রেণী বলা হতো।

(গ) সর্বসাধারণ শ্রেণিঃ যারা সকলের জন্য খাদ্যের ব্যবস্তা করেন তাদের সর্বসাধারণ শ্রেণি বলা হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীনকালে ভূমিস্বত্ব প্রথা প্রচলিত ছিলো । যাজক ও অভিজাতগণ সমাজের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। বর্তমান সমাজের স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে ভূমিস্বত্ব প্রথার তেমন কোন ভূমিকা নেই।

প্রশ্নঃ ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আলোচনা কর

একটি দেশের  ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা সে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে থাকে। ব্যবস্থা যদি ভালো হয় তাহলে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু দূর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ হলে তা নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে। আর প্রত্যেকটি সমাজেরই একটা নির্দিষ্ট কাঠামো থাকে যার উপর ভিত্তি করে সমাজ তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে।

ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে সম্পর্কঃ ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান । নিম্নে বিদ্যমান সম্পর্কগুলি তুলে ধরা হলো।

১। ভূমি ব্যবস্থা লতে ভূমির সাথে ভূমি ব্যবহারকারীর মালিকানা ও ভোগ দখলের আইনগত অবস।তাকে বুঝায়। আর সামাজিক শ্রেণি কাঠামো বলতে বুঝায় একটি বিশেষ মানবগোষ্ঠী দ্বারা গঠিত কাঠামোকে ব্যবস্থাকে । যারা অন্য গোষ্ঠি হতে স্বতন্ত্র এবং তদানুসারে কাজ করে।

২। ভূমি ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে শ্রেণি কাঠামো নির্ধারণ করা হয়। যার ভূমি যত বেশি সমাজকাঠামোতে সে তত মর্যাদাপূর্ণ।

৩। ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা কৃষির উন্নয়নের গতিধারা বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। একটি দেশের কৃষির উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা একান্ত অপিরহার্য। আবার কৃষি উন্নয়ন কৃষক শ্রেণির হাত ধরেই হয়। ভূমিস্বত্বের সাথে শ্রেণি কাঠামোরও উন্নয়ন আবশ্যই।

৪। ত্রুটিপূর্ণ ভূমিব্যবস্থা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধিকতা সৃষ্টি করে। আবার শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা বা ভূমি মালিকানার সুষ্ঠু বন্টন না হওয়ার ফলে উন্নয়ন অনেকাংশে ত্বরান্বিত হয় না।

৫। ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামো উভয়কে কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়।

৬। গ্রামীণ সমাজকাঠামোতে শ্রেণি কাঠামো নির্ধারণ অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্য করা যায়। আর্থিক পরিস্থিতি বা সম্পত্তির অধিকারের ভিত্তিতে শ্রেণি বিন্যাস করা হয়। গ্রামের অর্থনীতি হচ্ছে কৃষি এবং সম্পদ হচ্ছে ভূমি।

পরিশেসে বলা যায় যে ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামো অনেকাংশেই একে অপরের উপর নির্ভরশীল। একটি সমাজ ব্যবস্থায় শ্রেণি কাঠামো যেমন অবশ্যম্ভী, তেমনি ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থাও অবশ্যম্ভী। সুতরাং এ দুয়ের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। 

পরিবারের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর

পরিবারের বৈশিষ্ট্য বা মানদন্ডসমূহ লিখ

ভূমিকাঃ- পরিবার হচ্ছে সমাজের সেই আদিম ক্ষুদ্রতম এবং স্থায়ী প্রতিষ্ঠান যেখানে নারী পুরুষ বিবাহের ভিত্তিতে একত্রে বসবাসের স্বৃকৃতি পায় ও সন্তান উৎপাদন এবং লালন পালন করে থাকে। পরিবার হলো সমাজের সবচেয়ে প্রাচীন প্রতিষ্ঠান যেখানে মানুষ সুখে-দুঃখে একত্রে বসবাস করে। পরিবার হলো সমাজের মূল ভিত্তি।
পরিবারের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর

পরিবারের বৈশিষ্ট্য বা মানদন্ডসমূহ

সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পরিবার। নিম্নে পরিারের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-

১। স্থায়িত্বঃ পরিবারের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। শত শত বছর পূর্বে পরিবারের উদ্ভব হলেও এর বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা এখনও নেই।একবিংশ শতাব্দির নগর সভ্যতা ব্যাপক উৎকর্ষ লাভ করলেও পরিবারের গুরুত্ব একটুও হ্রাস পাইনি।

২। প্রচীন প্রতিষ্ঠানঃ পরিবার সর্বপ্রথম কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে সমাজবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে একমত যে পরিবার হলো প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। কৃষির সূচনালগ্নে মানুষ একত্রিত হয়ে পরিবার গঠন করে।

৩। বৈবাহিক সম্পর্কঃ পরিবার গঠনের পূর্ব শর্ত হলো বিবাহ।বিবাহ ছাড়া আধুনিক ও সভ্য সমাজের পরিবার গঠন সম্ভব নয়। বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী যুগল জীবনযাপন করে। কেবল স্বামী-স্ত্রী একটি পরিবার গঠন করতে পারে তাই বিবাহ ব্যতীত পরিবার গঠন সম্ভব নয়।

৪। সমাজের ক্ষুদ্রতম এককঃ সমাজে পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবার হলো সমাজের একটি ক্ষুদ্র একক। মাত্র ২ জন সদস্য যেমন স্বামী ও স্ত্রী নিয়ে একটি পরিবার গঠন হতে পারে। সমাজে এত কম বিশিষ্ট সদস্য আর কোন প্রতিষ্ঠান দেখা যায় না।

৫। নিরাপদ আশ্রয়স্থলঃ পরিবার হলো ঐ পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বিপদ- আপদে, সুখে-দুখে মানুষ পরিবারেই আশ্রয় খুজে। সারাদিন যেখানেই থাক কাজ শেষে মানুষ ফিরে আসে তার পরিবারে। অসুস্থ হলে সবাই পরিবারের সান্নিধ্য পায়।

৬। প্রয়োজন মেটানোর বাহনঃ পরিবার তার সদস্যদের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। শিশু, বৃদ্ধ, অসহায় সবাই পরিবারের উপর নির্ভরশীল। খাদ্য, বস্তু, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদি প্রয়োজন পরিবার থেকেই মিটিয়ে থাকে।

৭। সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনঃ পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহন। পরিবারের কোন সদস্য যা ইচ্ছে তাই করতে পারে না। পরিবারের সবাই সবার কাছে দায়বদ্ধ। সবসময় পরিবারের সদস্য এক অপরের উপর নির্ভরশীল।

৮। ক্ষুদ্রতম সংগঠনঃ পরিবার হলো সমাজের ক্ষুদ্রতম সংগঠন। সমাজকাঠামো গঠনকারী উপাদানগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্রতম উপাদান হলো পরিবার।

৯। জৈবিক সম্পর্কঃ পরিবার সমাজ অনুমোদিত পন্থায় স্বামী-স্ত্রীর জৈবিক সম্পর্ক বজায় রাখে এবং সন্তান উৎপাদনের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে।

১০। মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির ধারকঃ পরিবার একটি প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সমাজের মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সংস্কৃতি স্থানান্তরের প্রধান বাহক। শিশুরা প্রথম শিক্ষা লাভ করে পরিবার থেকেই। পরিবারের মাধ্যমে তারা ভালো-মন্দ, শিষ্টাচার, ধর্মীয় ও সামাজিক আচরণবিধি শিখে থাকে। তাই পরিবারকে বলা হয় ব্যক্তিত্ব গঠনের মূল ভিত্তি।
পরিশেষে বলা যায় যে, পরিবার এমন একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান যা সমাজস্বীকৃত পন্থায় নারী পুরুষ এর একত্রে বসবাসের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। পরিবার হলো মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন পরিপূরকের প্রাথমিক কেন্দ্র।

পরিবারের কার্যাবলি লিখ ? একক ও যৌথ পরিবারের পার্থক্য লিখ?

পরিবারের কার্যাবলি গুলো কি কি?

ভূমিকাঃপরিবার সমাজ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক প্রতিষ্ঠান। পরিবার এমন সব গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পাদন করে যা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সম্ভব না। পরিবারের কার্যাবলি নিম্নে দেওয়া হলো।

পরিবারের কার্যাবলি লিখ ? একক ও যৌথ পরিবারের পার্থক্য লিখ?

১। জৈবিক কাজঃ পরিবারের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর জৈবিক সম্পর্ক বজায় রাখা ও সন্তান-সন্ততি জম্মদান এবং লালনপালন করা। মানব শিশু পরিবারে জম্মগ্রহণ করে ও পরিবারেই লালিত-পালিত হয়ে বড় হয় এবং পরিবারেই মৃত্যুবরণ করে তাই পরিবারকে 'চিরন্তর মাতৃসদন' বলা হয়।

২। শিক্ষামূলক কাজঃ পরিবারকে বলা হয় শ্বাশত বিদ্যালয়।কেননা পরিবার অতীতকাল থেকেই মানব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। মানব শিশু জম্মের পর হতেই পরিবার থেকে সামাজিক নিয়মনীতি, আচার-আচরণ, আদব-কায়দা, শিষ্টাচার, ধর্মীয় শিক্ষা ইত্যাদি শিখে থাকে।

৩। অর্থনৈতিক কাজঃ আদিম সমাজে অর্থনৈতিক কার্যাবলির মূল কেন্দ্রিক ছিলো পরিবার।বর্তমানে কৃষি ভিত্তিক সমাজে ফসল উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বন্টন ব্যবস্থা পরিবারের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।এমন কি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কাজগুলো বর্তমানে পরিবার সম্পন্ন করে থাকে কিন্তু  আধুনিককালে নগরায়ন শিল্পায়ন ও নব্য প্রযুক্তির প্রসারের ফলে পরিবারের অর্থনৈতিক কার্যাবলি হ্রাস পাচ্ছে।

৪। ধর্মীয় কাজঃ সর্বপ্রথম পরিবার থেকেই একজন শিশু ধর্মীয় শিক্ষা পেয়ে থাকে।ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সদস্যদের মনে সৃষ্টকর্তা, ইহকাল-পরকাল, পাপ-পূণ্য, সত্য-মিথ্যা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। ফলে স্রষ্টার প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধরের সৃষ্টি হয়।

৫। অবকাশমূলক কাজঃ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে অবকাশমূলক কার্যাবলি কাজের অবসরে পরিবার তার সদস্যদের নিয়ে খেলাধুলা, আমোদ-প্রমোদ, গল্প-গুজব ইত্যাদি বিনোদনমূলক কার্যাবলি সম্পন্ন করে থাকে।

৬। সামাজিকীকরণঃ পরিবার একটি শিশুকে সমাজের নিয়ম-কানুন, রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও আচার-আচরণ শেখায়। শিশুর ভাষা, সংস্কৃতি, আচরণ ও পরিচয় গঠনে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়াই সামাজিকীকরণ।

৭। মানসিক ও আবেগিক সহায়তাঃ পরিবার তার সদস্যদের মধ্যে ভালোবাসা, সহানুভূতি, স্নেহ ও আবেগিক নিরাপত্তা প্রদান করে। বিপদের সময় পরিবার সদস্যদের পাশে দাঁড়ায় এবং মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস জোগায়।

একক ও যৌথ পরিবারের পার্থক্য লিখ?

একক ও যৌথ পরিবারের পার্থক্যঃ একক ও যৌথ পরিবারের পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হলো।

১। এক স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যে পরিবার গঠিত তাই একক পরিবার। অপরদিকে, যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, ভাইবোন ও বাবা-মা একত্রে বসবাস করে তাই যৌথ পরিবার বলে।

২। একক পরিবার আকৃতিতে অনেক ছোট। যৌথ পরিবার আকৃতিতে অপেক্ষাকৃত বড়।

৩। একক পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম অপরদিকে যৌথ পরিবারের সদস্য সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।

৪। শহরের সমাজব্যবস্থায় একক পরিবার বেশি লক্ষ্য করা যায়। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজে যৌথ পরিবারের প্রাধান্য বিদ্যমান।

৫। একক পরিবারের আয়-ব্যয় স্বামী-স্ত্রীর মতামতের ভিত্তিতে হয় অন্যদিকে যৌথ পরিবারের আয়-ব্যয় হিসাব পরিবারের বায়োজোষ্ঠ কর্তার মতামতে হয়।

৬। একক পরিবারের জীবন যাত্রা সহজ-সরল অপরদিকে যৌথ পরিবারের জীবন-যাত্রা অনেকটা জটিল ও কঠিন।

৭। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের ফলে একক পরিবারের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে শিল্পায়ন, নগরায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যৌথ পরিবার দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

মাদকাসক্তি কি? মাদকাসক্তির বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ।

মাদকাসক্তি কী?

ভূমিকাঃমাদকাসক্তি পৃথিবীর জন্য ভয়ংকর সামাজিক সমস্যা। এর প্রভাবে ব্যক্তি থেকে শুরু করে দেশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।মাদকদ্রব্য বন্ধ করতে না পারলে একসময়ে সমাজব্যবস্তা অচল হয়ে পড়বে।বিশ্ব আজ মাদকাসক্তির ক্রমবিস্তারে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করার জন্য জাতিসংঘ ১৬ই জুন কে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

মাদকাসক্তি কি? মাদকাসক্তির বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ।



মাদকাসক্তিঃ মাদকাসক্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো  Drug Addiction। Drug বলতে বুঝায় কোন রাসায়নিক দ্রব্যকে আর Addiction বলতে আসক্তিকে। সুতরাং বলা যায় জীবদেহে রাসায়নিক দ্রব্য গ্রহণে আসক্ত হ্যওয়াকে মাদকাসক্তি বলে।

মাদকাসক্তি এক প্রকার আত্মবিনাশকারী নেশা।এর প্রভাবে ব্যক্তির আচার-আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেই।প্রথম দিকে সেবনকারী দেহ ও মনের বিরুপ প্রতিক্রয়া দেখা দেই।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিশ্ব সংস্থার মতে, ''মাদকাসক্তি হলো মানসিক বা শারীরিক প্রতিক্রয়া, যা জীবিত প্রাণী ও মাদকের মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়ার উল্লেখ যোগ্য লক্ষণ গুলো হচ্ছে মাদকদ্রব্যটি কমবেশি নিয়মিত গ্রহণের দুর্দমনীয় ইচ্ছা, মাদকদ্রব্য সৃষ্টির ফল বা প্রতিক্রিয়া পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা অথবা মাদকদ্রব্য না থাকার অস্বস্তি এড়ানোর প্রচেষ্টা''

According to ''Social work Dictionary'' 'Addicction is physiological and psychological dependence on a chemical that results is incresed tolerance and in withdrawal symptoms when the substance is unavilable.'

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে মাদকদ্রব্য গুলো হলো গাঁজা, আফিম, রেস, ভাং, মদ, মরফিন,হাসিস, কোকেন, হেরোইন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

মাদকাসক্তির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর

 নিম্নে মাদকাসক্তির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো-

১। যে কোন মূল্যে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করার প্রচন্ড ইচ্ছা।

২। জীবদেহে গ্রহণের মাধ্যমে নেশা করা।

৩। মাদকদ্রব্য গ্রহণের মাত্রা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়া।

৪। মাদক দ্রব্যর ক্রিয়ার উপর শব্দ ও মানসিক নির্ভরশীলতা সৃষ্টি।

৫। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।

৬। ব্যক্তি ও সমাজের উপর অনিষ্টকর ক্রিয়া করে।

৭। মাদকদ্রব্য না পাওয়ার অস্বস্তি এড়ানোর প্রচেষ্ঠা

৮। মানুষের কেন্দ্রীয় স্বায়তন্ত্রে এবং বাস্তব কর্মকান্ডের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার প্রভৃতি।

৯। মাদক কেনার টাকার জন্য চুরি, ছিনতাই, হত্যা, প্রতারণা ইত্যাদি অপরাধে জড়িয়ে পড়া।

১০। শিক্ষা, কর্মজীবন, সংসার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে।

১১। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আত্মবিধ্বংসী কাজ করা।

১২। অতিরিক্ত মাদক গ্রহণে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে (ওভারডোজ)।

১৩। মাদকাসক্ত ব্যক্তির কারণে পরিবারে কলহ, বিচ্ছেদ, নির্যাতন ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়।

১৪। মাদক কেনার জন্য নিজের ও পরিবারের সম্পদ বিক্রি করে দেয়, দারিদ্র্য নেমে আসে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় মাদকাসক্তি হলো ্মন একটি স্নায়বিক অবস্থা যার ফলে কোন ব্যক্তি রাসায়নিক উপাদানের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং নেশার প্রভাবে তার মানবৈকল্য ঘটায়। মাদকের নেশা মানুষকে নৈতিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে ধ্বংস করে দেয়। এটি প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রকে একযোগে সচেতন ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে এখনই সময় মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার।

গ্রামীণ সমাজ কাকে বলে? গ্রামীণ সমাজের প্রকারভেদ

গ্রামীণ সমাজ কাকে বলে ও প্রকারভেদ আলোচনা

ভূমিকা:- ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক দেশ আর এ কৃষি প্রধান দেশের ঐতিহ্যগত জনপদ গ্রামীণ জনপদ। এখানকার মোট জনসমষ্টির প্রায় ৮০ ভাগ মানুষই গ্রামে বসবাস করে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬১.৩% সরাসরি কৃষির উপর নির্ভরশীল।মোট দেশজ উৎপাদনের ৪৫ ভাগ আসে কৃষি খাত হতে। এটি বাংলাদেশের সমাজকাঠামোর ঐতিহ্যগত পরিচয়।

গ্রামীণ সমাজ কাকে বলে

গ্রামীণ সমাজের সংজ্ঞা

সাধারণ অর্থে গ্রামীণ সমাজ বলতে এমন এক জনপদকে বোঝায় যেখানকার অধিবাসীদের অধিকাংশ কৃষক এবং কৃষি কাজকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবন জীবিকা আবর্তিত হয়। গ্রামীণ আঁকাবাঁকা মেঠো পথ, লাঙল-জোয়ালসহ কৃষকের মাঠে কাজের দৃশ্য, ফসলের মাঠ, সন্ধ্যায় তিমির অন্ধকার, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, নিরব নিস্তবতা ইত্যাদি হচ্ছে গ্রামীণ সমাজের দৈনন্দিন চিত্র। নিভৃত পল্লী কিংবা গ্রাম সমাজের আর্থসামাজিক চিত্রে যে সামাজিক ব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায় তাই গ্রামীণ সমাজ। গ্রামীণ সমাজের সামগ্রিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে গ্রামীণ সমাজের পরিবার কাঠামো যৌথ পরিবার কেন্দ্রিক। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামীণ পরিবার কাঠামোতেও পরিবর্তন এসেছে। বর্ধিত একক পরিবার স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা ও ছোট ভাই-বোনকে ঘিরে নতুন ধাচের পরিবার কাঠামোকে বর্ধিত একক পরিবার বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে একক পরিবার ও লক্ষ্য করা যায়। তবে গ্রামীণ সমাজে জ্ঞাতি সম্পর্কের বন্ধন অত্যন্ত সুদৃঢ়। পেশাগত দিক চিন্তা করলে দেখা যায় গ্রামীণ সমাজ কৃষিভিত্তিক পেশা এবং কৃষি সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে আবর্তিত হয়। গ্রামীণ পরিবেশের সাথে কৃষির সম্পর্ক সর্বজনীন। গ্রামীণ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির প্রভাব বিদ্যমান। অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সামাজিক সম্পর্ক, প্রথা, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কৃষির সাথে সম্পর্কযুক্ত এমনকি কখনো কখনও নিয়ন্ত্রিত।তাই গ্রামীণ সমাজ বললেই কৃষি সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও গ্রামীণ সমাজে অধিকাংশ মানুষই কৃষি পেশার সাথে জড়িত তারপরও এখানে অনেকে ব্যবসায়ী, মৎস্যজীবী, কুমার, তাঁতি, ধোপা সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ গ্রামে বসবাস করে থাকে।

গ্রামীণ সমাজের প্রকারভেদ

. অর্থনৈতিক ভিত্তিতে:

কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজ: যেখানে অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত এবং প্রধান জীবিকা কৃষি

-কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজ: যেখানে কৃষির পাশাপাশি অনেকে অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত

. ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে:

পাহাড়ি গ্রামীণ সমাজ: যেখানে মানুষ পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে খাসিয়া, মারমা, চাকমা জাতিগোষ্ঠীর প্রাধান্য রয়েছে

সমতল ভূমির গ্রামীণ সমাজ: দেশের অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকা যেখানে ধান, পাট, গম, আখ ইত্যাদি চাষাবাদ হয়

. সামাজিক গঠনের ভিত্তিতে

যৌথ পরিবারভিত্তিক গ্রামীণ সমাজ: যেখানে একাধিক প্রজন্ম একসঙ্গে বসবাস করে, সম্পদ ভাগ হয় না

একক পরিবারভিত্তিক গ্রামীণ সমাজ: যেখানে পরিবার ছোট আকারে পৃথকভাবে বসবাস করে

. উন্নয়নের ভিত্তিতে:

অনুন্নত গ্রামীণ সমাজ: যেখানে শিক্ষার হার কম, আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি, সনাতন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ হয়

উন্নয়নধর্মী গ্রামীণ সমাজ: যেখানে সেচ, সার, বিদ্যুৎ, রাস্তা, স্কুল-কলেজসহ উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে

উপসংহার: সর্বেশষ উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাধারণত কৃষি এবং কৃষিভিত্তিক কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে যে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠে তাকেই গ্রামীণ সমাজ বলে। গ্রামীণ সমাজের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

সামাজিক গতিশীলতা কী? বাংলাদেশের সামাজিক গতিশীলতার প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা কর।

সামাজিক গতিশীলতার সংজ্ঞা? বাংলাদেশের সামাজিক গতিশীলতার প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা

ভূমিকা:- মানুষ সামাজিক জীব সমাজে বসবাস করা হলো মানুষের ধর্ম। কারণ মানুষ সবসময় সমাজে বসবাস করতে চায় নিজের চাহিদা পূরণ করার জন্য। আর সমাজ ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। কারণ, সমাজের সকল কার্যক্রমের অংশ সামাজিক গতিশীলতা। যা প্রাচীন কাল থেকে এক চিরন্তন গতিতে চলে আসছে। সমাজ মানুষের অশ্রয়ের প্রধান জায়গা যেখানে মানুষ তার ইচ্ছামতো বা খুশিমতো কাজ সম্পাদন করতে পারে কিছু সামাজিক নিয়মনীতি বজায় রেখে। তাই সমাজের সকল নাগরিকের মাঝে পরিবর্তনের একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায়।
সামাজিক গতিশীলতা কী? বাংলাদেশের সামাজিক গতিশীলতার প্রকৃতি ও স্বরুপ


সামাজিক গতিশীলতার সংজ্ঞা:

সামাজিক গতিশীলতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Social Mobility আর Social Mobility means movemnet of status.সামাজিক গতিশীলতার মধ্যে দিয়ে প্রতিটি মানুষ তার সক্ষমতা অনুসারে Status পরিবর্তনের জন্য কাজ করে। আমাদের দেশে গ্রাম থেকে শহরে সকল জায়গায় মানুষ সামাজিক গতিশীলতার জন্য কাজ করছে। যা সামাজিক পরিবর্তনকে আরো গতিশীল করতে সাহায্য করছে। মূলত সামাজিক গতিশীলতা হলো মানুষের মর্যাদা পরিবর্তনের একটি পদ্ধতি যা সাজের সকল মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে। সামাজিক গতিশীলতা হলো ব্যক্তির স্বার্থে, সমাজের মধ্যে ব্যক্তির মর্যাদা পরিবর্তনের একটি চিরন্তন প্রক্রিয়া। কারণ, মানুষ একই পেশায় বা একই মর্যাদা নিয়ে বাস করতে চাই না তাই সে সামাজিক গতিশীলতা চায়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা:

সমাজবিজ্ঞানী অর্গবান ও নিমকফ বলেন- ''সামাজিক গতিশীলতা হলো সামাজিক মর্যাদা পরিবর্তন যা ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী হতে পারে।''
সমাজবিজ্ঞানী সরোকিন এর মতে-''সামাজিক গতিশীলতা এমন এক ধরনের পরিবর্তনশীলতা যা ব্যক্তি তার নিজের চেষ্টায় করে এবং তার পরিবর্তনের এই স্তরকে সামাজিক গতিশীলতা বলে।''
সমাজবিজ্ঞানী Authony Giddence বলেন ''সামাজিক গতিশীলতা হলো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিভিন্ন আর্থসামাজিক অবস্থানে স্থানান্তরিত হওয়া।''
মোটকথা বলা যায় সামাজিক গতিশীলতা এমন এক ধরনের পরিবর্তন যা সামাজিক মর্যাদার পরিবর্তনে সহায়তা করে। মানব সভ্যতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষ সর্বদা তার মর্যাদা পরিবর্তনের কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সামাজিক গতিশীলতার প্রকৃতি ও স্বরূপ

বাংলাদেশের সামাজিক গতিশীলতার প্রকৃতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় সবার মাঝেই সামাজিক মর্যাদা পরিবর্তনের একটা প্রবণতা রয়েছে। নিম্নে বাংলাদেশের সামাজিক গতিশীলতার প্রকৃতি আলোচনা করা হলো।

১। শিক্ষা:

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। একটি দেশের সকল ধরনের পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ ইচ্ছামতো তার মর্যাদা পরিবর্তন করতে পারে। যেমন শিক্ষা গ্রহণ করে একজন কৃষকের সন্তান সচিব হয় এবং অন্যান্য কাজও করে। এখানেই দেখা যায় শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক গতিশীলতার প্রকৃতি ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

২। কৃষি:

আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের পেশা হলো কৃষি। কারণ আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। গ্রামের মানুষ অশিক্ষিত হওয়ায় তারা কৃষিকে জীবিকার প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাই সামাজিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে কৃষি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩। জনসংখ্যা:

একটি দেশের সকল ধরনের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য জনসংখ্যা বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। জনসংখ্যা সবসময় পরিবর্তনের জন্য কাজ করে।

৪। ধর্ম:

ধর্মের মাধ্যমে মানুষের নানা পরিবর্তন হয়। ধর্ম হলো সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম নিয়ামক। সামাজিক গতিশীলতার জন্য ধর্মের গুরুত্ব অনেক কারণ, মানুষ ধর্মের কথা মেনে অনেক অন্যায় কাজ হতে নিজেকে বিরত রাখে। যা ব্যক্তির মর্যাদা প্রকাশে সাহায্য করে।

৫। রাজনীতি:

বর্তমান সমাজব্যবস্থায় রাজনীতি এক প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান। কারণ, রাজনীতিতে এসে অনেক মানুষ তাদের ব্যক্তিগত জীবন দর্শন পরিবর্তন করে থাকে। মানবসভ্যতায় বর্তমান অবস্থায় যেকোন ধরনের পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি অপরিহার্য। তাই রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের দেশের সামাজিক পরিবর্তন হয়।

৬। সংস্কৃতি:

সংস্কৃতি হলো দেশের যাবতীয় দিকসমূহ। কারণ একটি দেশ কিভাবে চলে একটি সমাজ কিভাবে চলে তার উপলব্ধি করা হয় সে দেশের সংষ্কৃতির মাধ্যমে। কারণ সংস্কৃতি হলো মানুষের আচরণের সমষ্টি। তাই সংস্কৃতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৭। পরিবার:

যেকোন ধরনের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য পরিবার সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। পরিবারের কাছ থেকেই মানুষ সর্বপ্রথম সকল ধরনের কার্যক্রম সম্পাদন করে। পরিবার হলো মানুষ গঠনের হাতিয়ার। পরিবারকে কেন্দ্র করেই সকল ধরনের কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। তাই সামাজিক গতিশীলতায় পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম।

৮। অর্থনীতি:

যেকোনো দেশের পরিবর্তনে অর্থনীতি বেশ সুদূরপ্রসারী প্রসার ফেলতে পারে। কারণ অর্থনৈতিক সমস্যা হলো সকল সমস্যার মূল। তাই অর্থনীতি সামাজিক গতিশীলতাকে প্রভাবিত করে।
সর্বশেষ বলা যায়, সামাজিক গতিশীলতা হলো এমন এক ধরনের পরিবর্তন যা সমাজের পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। সামাজিক গতিশীলতা হলো মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন।

সংস্কৃতি কি? জ্ঞাতি সম্পর্ক কী? what is culture and kingship?

সংস্কৃতি ও জ্ঞাতি সম্পর্ক সংজ্ঞা

ভূমিকা:- সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের সামাজিক পরিচিতি। যেকোন সমাজে বিদ্যমান সামগ্রিক আচার-আচরণ, শিক্ষাদীক্ষা, রীতিনীতি, বিচার বুদ্ধি, আস্থা, বিশ্বাস, শিল্পকলা ইত্যাদি সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত রূপই হলো সংস্কৃতি। সামাজিক জীবনবোধ হতে সৃষ্ট প্রত্যয়টি হলো সংস্কৃতি।

সংস্কৃতি কি?  জ্ঞাতি সম্পর্ক কী? what is culture and kingship?

সংস্কৃতির সংজ্ঞা:

সংস্কৃতি শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Culture। যা এসেছে ল্যাটিন শব্দ Colere থেকে যার অর্থ হলো কর্ষণ করা। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, সংস্কৃতি হলো কর্ষণের দ্বারা প্রাপ্ত বিষয়।অর্থাৎ ব্যুৎপত্তিগত দৃষ্টিকোণ হতে সংস্কৃতি হলো সংস্কারের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিষয়।সাধারণভাবে সংস্কৃতি বলতে একটি জাতির আচার-আচরণ মূল্যবোধ, খাওয়া, পরা, কথা বলা চলাফেরা, ভাষার ব্যবহার ইত্যাদির আবেগীয় বা মানসিক অবস্থাকে বুঝায়। অন্যভাবে বলা যায়, সংস্কৃতি হলো চিন্তার ক্রিয়াশীল এবং সৌন্দর্য ও মানবিক অনুভূতিতে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা

সংস্কৃতি বিষয়ে যেসকল মনীষী মতামত প্রদান করেছেন তা নিম্নরুপ দেওয়া হল-

নৃবিজ্ঞানী টেইলরের মতে- ''সংস্কৃতি এমন এক জটিল সত্তা যার ভেতরে রয়েছে জ্ঞান, আস্থা, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতিবোধ আইন, প্রথা পদ্ধতি এবং সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষের অর্জিত অন্য সকল দক্ষতা ও অভ্যাস।''

According to Mathew Arnold, ''সংস্কৃতি, যা পরিপূর্ণতার অধ্যয়ন, আমাদেরকে প্রকৃত মানবিক পরিপূর্ণতাকে একটি সুরেলা পরিপূর্ণতা হিসেবে কল্পনা করতে পরিচালিত করে, যা নিজস্ব কুমানিতার সকল দিককে বিকশিত করে এবং একটি সাধারণ পরিপূর্ণতা হিসেবে, যা আমাদের সমাজের সকল দিককে বিকশিত করে।.''

ম্যালিনোস্কি এর মতে-''সংস্কৃতি মানুষের আপন কর্মের সৃষ্টি, যার মাধ্যমে সে তার উদ্দেশ্য সাধন করে।''

বিখ্যাত মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী আর, এস, ম্যাকাইভারের মতে, "আমরা মানুষ হিসেবে কি সেটাই হলো আমাদের সংস্কৃতি।"

সমাজবিজ্ঞানী বায়ারস্টেড এর মতে, 'সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জটিল সমন্বয়, যা সমাজের সদস্য হিসেবে একজন মানুষ, চিন্তা করে, কোনো কিছু করে এবং যা তাদের থাকে।"

সমাজবিজ্ঞানী জে. এম. শেফার্ড-এর মতে, "মানবসৃষ্ট সকল বস্তু এবং সমাজের সদস্যদের মধ্যে বংশপরম্পরায় বর্তিয়ে থাকে এমন সকল চিন্তা-ভাবনা ধ্যান-ধারণা এবং আচার-ব্যবহারের ধরনই হচ্ছে সংস্কৃতি।"

অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারিতে সংস্কৃতির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, "সংস্কৃতি হচ্ছে প্রতিক্ষণ এবং আত্মার বিশোধন উপভোগ এবং আচার-আচরণ, শিক্ষিত এবং বিশোধিত সত্তার অবস্থা।"

সমাজবিজ্ঞানী ই. সি. নর্থের মতে, মানুষ তার অভাব মোচনের জন্য যেসব কলাকৌশল উদ্ভাবন করেছে সেটাই তাঁর সংস্কৃতি।"

সুতরাং উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, মানুষের জীবন-যাত্রার সামগ্রিক বিষয় হলো তার সংস্কৃতি। সমাজের সদস্য হিসেবে প্রতিটি মানুষ পরিচিত হয় সংস্কৃতির দ্বারা।

জ্ঞাতি সম্পর্ক বলতে কি বুঝ

মানুষ সামাজিক জীব সমাজের মধ্যেই মানুষ জন্মগ্রহণ করে। সমাজ ছাড়া মানুষ চলাচল করতে পারে না। মানুষ তার সমাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি চাহিদা পূরণের জন্য সমাজেই বসবাস করে। সমাজে একসাথে বসবাস করে ফলে পরস্পরের সাথে একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে সেটাই জ্ঞাতি সম্পর্ক।

জ্ঞাতি সম্পর্ক সংজ্ঞা:

জ্ঞাতি শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Kinship। kin এবং ship যার অর্থ হলো সম্পর্ক। সুতরাং kinship হলো জ্ঞাতি বা আত্মীয়তার সম্পর্ক। সাধারণত আমাদের জীবনে জ্ঞাতি সম্পর্ক বা আত্মীয়তার সম্পর্ক হলো রক্তের সম্পর্ক। এছাড়া বিবাহ ও দত্তক সম্পর্কও জ্ঞাতি সম্পর্কে অন্তর্ভুক্ত।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা

kinship বা আত্মীয়তার সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষী মতামত প্রকাশ করেছেন সেগুলি নিম্নে দেওয়া হলো-

আমেরিকার নৃবিজ্ঞানী লুইস হেনরি মর্গান সর্বপ্রথম 'Ancient society' নামক গ্রন্থে kinship সম্পর্কে বিস্তারিত বিজ্ঞান নির্ভর আলোচনা করেন।

ম্যালিনোস্কি এর মতে ''জ্ঞাতি সম্পর্ক সেই সকল সমস্ত ব্যক্তিবর্গের সম্পর্কের বন্ধন যা সন্তান উৎপাদনের সামাজিক মূল্যায়নের উপর প্রতিষ্ঠিত।''

Lucy Main states, ''Kinship is the expression of social relations in a biological idiom.''

Keesing এর মতে, ''জ্ঞাতি সম্পর্ক ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা ও অস্তিত্বের নির্ধারক।''

সুতরাং উপরের আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে, জ্ঞাতি সম্পর্ক হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক। জ্ঞাতি সম্পর্ক মানুষের সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে এবং ব্যক্তির অস্তিত্ব ও মর্যাদা সমুন্নত রাখে। সংস্কৃতি ও জ্ঞাতি সম্পর্ক মানুষের সামাজিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংস্কৃতি মানুষের চিন্তা-চেতনা ও জীবনের চালচলন নির্ধারণ করে, আর জ্ঞাতি সম্পর্ক সামাজিক বন্ধন ও আত্মীয়তার বন্ধুকে সুদৃঢ় করে। এ দুয়ের সমন্বয়ে সমাজে মানুষের পরিচয়, মর্যাদা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত হয়।

শ্রেণি ও জাতিবর্ণের মধ্যে পার্থক্যসমূহ আলোচনা কর

শ্রেণি ও জাতিবর্ণের মধ্যে পার্থক্যসমূহ আলোচনা

ভূমিকা:- সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ সমাজে বসবাস করে। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি ও সমাজের লোক বসবাস করে। জাতিবর্ণ প্রথা এমন একটি স্তরবিন্যাস যা কোনো সমাজকে বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত করে। শ্রেণি ও জাতিবর্ণের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। পুঁজিবাদী সমাজে সমাজ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত যথা- পুঁজিপতি শ্রেণি ও শ্রমিক শ্রেণি।

শ্রেণি ও জাতিবর্ণের মধ্যে পার্থক্য লেখ।

জাতিবর্ণ ও শ্রেণির মধ্যে পার্থক্য

নিম্নে জাতিবর্ণ ও শ্রেণির মধ্যে কয়েকটি পার্থক্য আলোচনা করা হল।

১। উন্মুক্ত ও বহু ব্যবস্থা

জাতিবর্ণ হলো একটি বড় ব্যবস্থা অন্যদিকে শ্রেণি হলো উন্মুক্ত ব্যবস্থা । কোনো বিশেষ জাতিবর্ণের সদস্য অন্য কোনো জাতিবর্ণের সদস্যপদ অর্জন করতে পারে না। তার জন্ম ও মৃত্যু একই জাতিবর্ণের মধ্য সীমিত। অন্যদিকে কোনো বিশেষ শ্রেণির সদস্য স্বীয় প্রচেষ্টা বা অন্য কোনো উপায়ে অন্যান্য উঁচু বা নিচু শ্রেণীতে মিল হতে পারে।

২। বিবাহভিত্তিক গোষ্ঠী

জাতিবর্ণ হলো একটি অন্তঃগোত্র বিবাহভিত্তিক গোষ্ঠী। অন্যদিকে শ্রেণি হলো কোনো বিবাহভিত্তিক গোষ্ঠী নয়। জাতিবর্ণের কোনো সদস্যকে নিজ জাতিতেই বিবাহ করতে হয়। অন্যদিকে এক শ্রেণির সদস্য অন্য জাতিতে বিবাহ করতে পারে।

৩। মর্যাদা অর্জনের ক্ষেত্রে

জাতিবর্ণ ও শ্রেণির মধ্যে মর্যাদা অর্জনের ক্ষেত্রে ও ভিন্নতা রয়েছে।জাতিবর্ণের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির মর্যাদা জন্মসূত্রে নির্ধারিত বা জাতিবর্ণ কর্তৃক অর্পিত। অন্যদিকে শ্রেণির ক্ষেত্রে ব্যক্তির মর্যাদা তার যোগ্যতার ভিত্তিতে অর্জিত।

৪। পেশাভিত্তিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে

জাতিবর্ণগুলো সাধারণত একটি পেশাভিত্তিক গোষ্ঠী। এই পেশা যেন জন্ম কর্তৃক নির্ধারিত। অন্যদিকে শ্রেণিগুলো কোনো পেশাভিত্তিক গোষ্ঠী নয়। শ্রেণির ক্ষেত্রে যে কোনো মানুষ যে কোনো পেশা গ্রহণ করতে পারে।

৫। নিয়মবিধি

জাতিবর্ণের কতকগুলি অপরিবর্তনীয় বা দুরপরিবর্তনীয় নিয়মবিধি বা সামাজিক বিধিনিশেধ থাকে যা জাতিবর্ণের সদস্যদের মেনে চলতে হয়। অন্যদিকে শ্রেণির ক্ষেত্রে এ ধরনের নিয়ম অপরিবর্তনীয়।

৬। দাস ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে

জাতিবর্ণের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ব্যক্তি যেন সমাজব্যবস্থার অধীন দাস। তার স্বাধীন চিন্তা, স্বাধীনভাবে পেশা গ্রহণ, স্বাধীনভাবে মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের যেন সুযোগ নেই। অন্যদিকে শ্রেণি ব্যবস্থায় মানুষ অনেকটা স্বাধীন ও মুক্ত।

৭। সামাজিক গতিশীলতা:

জাতিবর্ণ প্রথায় ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান জন্মসূত্রে নির্ধারিত এবং আজীবন অপরিবর্তনীয় থাকে। তবে শ্রেণি ব্যবস্থায় একজন ব্যক্তি তার শিক্ষা, আয়, প্রতিভা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে উঁচু শ্রেণিতে উন্নীত হতে পারে, অর্থাৎ শ্রেণি ব্যবস্থা অধিক সামাজিক গতিশীল।

৮। ধর্মীয় ভিত্তি:

জাতিবর্ণ সাধারণত ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-আচরণের উপর ভিত্তি করে গঠিত। যেমন: ভারতে হিন্দু ধর্মে জাতি ও বর্ণের ভিত্তিতে বিভাজন প্রচলিত। অপরদিকে শ্রেণি ব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষ এবং এটি মূলত অর্থনৈতিক ও সামাজিক শক্তির উপর নির্ভরশীল।

৯। সামাজিক সম্পর্ক:

জাতিবর্ণ প্রথায় এক জাতিবর্ণের মানুষ সাধারণত অন্য জাতির সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, ওঠাবসা বা সামাজিক সম্পর্ক রাখে না বা তা সীমিত থাকে। শ্রেণি ব্যবস্থায় যদিও শ্রেণি পার্থক্য থাকে, তবুও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ একসাথে বসবাস, কাজ বা সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।

১০। বৈষম্যের প্রকৃতি:

জাতিবর্ণ প্রথায় বৈষম্য অধিকতর স্থায়ী ও প্রাতিষ্ঠানিক। এটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে। শ্রেণি ব্যবস্থায় বৈষম্য থাকলেও তা তুলনামূলকভাবে পরিবর্তনযোগ্য ও অস্থায়ী। একটি শ্রেণির মানুষ তার অবস্থা পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়।

১১। আইনগত স্বীকৃতি

জাতিবর্ণ প্রথা সাধারণত সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির উপর নির্ভরশীল, আইনের দ্বারা সরাসরি নিয়ন্ত্রিত নয়। অন্যদিকে শ্রেণি ব্যবস্থা অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর সাথে যুক্ত এবং অনেক ক্ষেত্রে আইন ও রাষ্ট্রীয় নীতির দ্বারা প্রভাবিত।

১২। পরিবর্তনের গতি

জাতিবর্ণ ব্যবস্থায় পরিবর্তন খুব ধীরগতির এবং প্রায় স্থবির। কিন্তু শ্রেণি ব্যবস্থায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে দ্রুত রূপান্তর ঘটে।

১৩। আধুনিক সমাজে প্রাসঙ্গিকতা

আধুনিক শিল্পায়িত ও গণতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণি ব্যবস্থা অধিক কার্যকর ও বাস্তবসম্মত। বিপরীতে জাতিবর্ণ প্রথা আধুনিক মূল্যবোধের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে বিবেচিত।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, শ্রেণি হলো একটি উন্মুক্ত ব্যবস্থা এবং জাতিবর্ণ হলো একটি বদ্ধ ব্যবস্থা। মানব সমাজের প্রতিটি পর্যায়ে সামাজিক স্তরবিন্যাস বিদ্যমান।সমাজে বিভিন্ন জাতির লোক বসবাস করে থাকে। সমাজে এই দুটি স্তরবিন্যাস প্রথার আলাদা বৈশিষ্ট্য ও প্রভাব রয়েছে।

নগর উন্নয়নের মৌল নীতিমালাসমূহ উল্লেখ কর

নগর উন্নয়নের মৌল নীতিমালাসমূহ উল্লেখ কর

ভূমিকা:- নগর উন্নয়ন বলতে নগরের ক্রমাগত উন্নয়ন বা বিকাশকে বোঝায়। কোনো নির্দিষ্ট নগরের অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বসত স্থাপনার উন্নয়ন, নাগরিক সচেতনতার উন্নয়ন প্রভৃতি যে কোন ধরনের উন্নয়ন নগরের সাথে যুক্ত হলে তখন তাকে নগরের উন্নয়ন হিসেবে ধরা হয়।

নগর উন্নয়নের মৌল নীতিমালাসমূহ উল্লেখ কর

নগর উন্নয়নের মৌল নীতিমালা

নিম্নে নগর উন্নয়নের কতিপয় নীতিমালা আলোচনা করা হলো-

১। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন

নগর উন্নয়ন করতে হলে ঐ এলাকার লোকজনের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে। জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য যে সব বিষয় প্রয়োজন সেগুলি স্থাপন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২। অর্থনৈতিক উন্নয়ন

নগর উন্নয়ন করতে হলে অর্থনৈতিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা প্রয়োজন। কেননা আর্থিক অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে নগরের উন্নয়ন সাধিত হবে।

৩। পৌর ব্যবস্থাপনা

পৌর ব্যবস্থাপনা পরিকল্পিতভাবে স্থাপন না করলে নগরের  উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যাহত হয়। এজন্য পৌর ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য উপাদানগুলোর যথাযথ উন্নয়ন সাধন করা খুবই জরুরি।

৪। নগর দারিদ্র্য দূরীকরণ

শহরে কাজের সুযোগ বেশি থাকায় গ্রামাঞ্চল হতে বিভিন্ন লোকজন এসে শহরে অবস্থান করে যাতে করে নগরের দারিদ্র্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসকল দারিদ্র্যতা নির্মূল করতে হবে।

৫। উত্তম পরিকল্পনা

উত্তম পরিকল্পনার মাধ্যমেই কেবল একটি দেশের নগর উন্নয়ন সম্ভব। নগর উন্নয়নের প্রাথমিক শর্তই হলো উত্তম পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন। যদি উত্তম পরিকল্পনা নিয়ে সেট বাস্তবায়িত হয় তবেই নগরে উন্নয়ন সাধিত হবে।

৬। যোগাযোগ ব্যবস্থা

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না ঘটলে নগরের উন্নয়ন সাধিত হয় না। এতএব নগর উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত হবে নগরের উন্নয়ন ও তত দ্রুত প্রসারিত হবে।

৭। নগরের আয়তন

সীমিত আয়তনের নগরের উন্নয়ন মূলত কষ্টসাধ্য। এজন্য নগরের আয়তন বাড়াতে হবে। নগরের আয়তন বাড়লে বসতবাড়ি প্রসারিত হবে ফলে ভারসাম্য ও রক্ষা হবে।

৮। পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন

নগরের উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্মল বায়ু, সবুজ এলাকা, খাল-বিল-নদী রক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই নগর গড়ে তোলা যেতে পারে।

৯। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (ICT) ব্যবহার

স্মার্ট নগর গড়তে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। ডিজিটাল প্রশাসন, অনলাইন নাগরিক সেবা, স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সিসিটিভি মনিটরিং ইত্যাদির মাধ্যমে নগরকে আরও উন্নত ও সুশাসিত করা সম্ভব।

১০। জনসম্পৃক্ততা ও নাগরিক সচেতনতা

নগর উন্নয়নের জন্য জনগণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা প্রয়োজন। নাগরিকদের মতামত, স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও কর্তব্যবোধ নগর উন্নয়নকে টেকসই ও কার্যকর করে তোলে।

১১। আবাসন ও বস্তি উন্নয়ন

নগর উন্নয়নের জন্য পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। বস্তি উন্নয়ন, স্বল্পমূল্যের আবাসন এবং নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা নগরকে বাসযোগ্য করে তোলে।

১২। স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা

নগরবাসীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হাসপাতাল, ক্লিনিক, বিশুদ্ধ পানি ও আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য।

১৩। নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা

নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পুলিশিং, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জোরদার করা প্রয়োজন।

১৪। সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন

নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর উন্নয়ন গড়ে তুলতে হবে।

এতএব সর্বশেষ বলা যায়, নগর উন্নয়ন হলো নগর এলাকার শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, বসতি, জীবন-যাত্রার মান উন্নয়ন, ব্যাংকিং কার্যক্রম, বীমা কর্যক্রম, যাতায়াত এবং নগর পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন অবকাঠামোর সার্বিক উন্নয়ন প্রভৃতি কার্যক্রমের সমষ্টি। এই নীতিমালাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলেই একটি নগর টেকসই, পরিকল্পিত এবং বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে।