গ্রামীণ সমাজ কাকে বলে ও কত প্রকার
ভূমিকাঃ- ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক দেশ আর এ কৃষি প্রধান দেশের ঐতিহ্যগত জনপদ গ্রামীণ জনপদ। এখানকার মোট জনসমষ্টির প্রায় ৮০ ভাগ মানুষই গ্রামে বসবাস করে। দেমের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬১.৩% সরাসসসরি কৃষির উপর নির্ভরশীল।মোট দেশজ উৎপাদনের ৪৫ ভাগ আসে কৃষি খাত হতে। এটি বাংলাদেশের সমাজকাঠামোর ঐতিহ্যগত পরিচয়।
গ্রামীণ সমাজঃ সাধারণ অর্থে গ্রামীণ সমাজ বলতে এমন এক জনপদকে বোঝায় যেখানকার অধিবাসীদের অধিকাংশ কৃষক এবং কৃষি কাজকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবন জীবিকা আবর্তিত হয়। গ্রামীণ আঁকাবাঁকা মেঠো পথ, লাঙল-জোয়ালসহ কৃষকের মাঠে গঠন, ফসলের মাঠ, সন্ধ্যায় তিমির অন্ধকার, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক নিরব নিস্তবতা ইত্যাদি হচ্ছে গ্রামীণ সমাজের দৈনন্দিন চিত্র। নিভৃত পল্লী কিংবা গ্রাম সমাজের আর্থসামাজিক চিত্রে যে সামাজিক ব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায় তাই গ্রামীণ সমাজ। গ্রামীণ সমাজের সামগ্রিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে গ্রামীণ সমাজের পরিবার কাঠামো যৌথ পরিবার কেন্দ্রিক। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে গ্রামীণ পরিবার কাঠামোতেও পরিবর্তন এসেছে। বর্ধিত এক পরিবার স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা ও ছোট ভাই-বোনকে ঘিরে নতুন ধাচের পরিবার কাঠামোকে বর্ধিত একক পরিবার বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে একক পরিবার ও লক্ষ্য করা যায়। তবে গ্রামীণ সমাজে জ্ঞাতী সম্পর্কের বন্ধন অত্যান্ত সুদৃঢ়। পেশাগত দিক চিন্তা করলে দেখা যায় গ্রামীণ সমাজ কৃষিভিত্তিক পেশা এবং কৃষি সংক্রান্ত কর্মকান্ডে আবর্তিত হয়। গ্রামীণ পরিবেশের সাথে কৃষির সম্পর্ক সর্বজনীন। গ্রামীণ প্রতীটি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির প্রভাব বিদ্যমান। অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সামাজিক সম্পর্ক, প্রথা, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কৃষির সাথে সম্পর্কযুক্ত এমনকি কখনো কখনও নিয়ন্ত্রিত।তাই গ্রামীণ সমাজ বললেই কৃষি সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও গ্রামীণ সমাজে অধিকাংশ মানুষই কৃষি পেশার সাথে জড়িত তারপরও এখানে অনেকে ব্যবসায়ী, মৎসজীবী, কুমার, তাঁতী, ধোপাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ গ্রামে বসবাস করে থাকে।
গ্রামীণ সমাজের প্রকারভেদ
১. অর্থনৈতিক ভিত্তিতে:
কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজ: যেখানে অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজে নিয়োজিত এবং প্রধান জীবিকা কৃষি।
অ-কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজ: যেখানে কৃষির পাশাপাশি অনেকে অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত।
২. ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে:
পাহাড়ি গ্রামীণ সমাজ: যেখানে মানুষ পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করে ও খাসিয়া, মারমা, চাকমা জাতিগোষ্ঠীর প্রাধান্য রয়েছে।
সমতল ভূমির গ্রামীণ সমাজ: দেশের অধিকাংশ গ্রামীণ এলাকা যেখানে ধান, পাট, গম, আখ ইত্যাদি চাষাবাদ হয়।
৩. সামাজিক গঠনের ভিত্তিতে
যৌথ পরিবারভিত্তিক গ্রামীণ সমাজ: যেখানে একাধিক প্রজন্ম একসঙ্গে বসবাস করে, সম্পদ ভাগ হয় না।
একক পরিবারভিত্তিক গ্রামীণ সমাজ: যেখানে পরিবার ছোট আকারে পৃথকভাবে বসবাস করে।
৪. উন্নয়নের ভিত্তিতে:
অনুন্নত গ্রামীণ সমাজ: যেখানে শিক্ষার হার কম, আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি, সনাতন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ হয়।
উন্নয়নধর্মী গ্রামীণ সমাজ: যেখানে সেচ, সার, বিদ্যুৎ, রাস্তা, স্কুল-কলেজসহ উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।উপসংহারঃ সর্বেশষ উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাধারণত কৃষি এবং কৃষিভিত্তিক কর্মকান্ডের উপর ভিত্তি করে যে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠে তাকেই গ্রামীণ সমাজ বলে। গ্রামীণ সমাজের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড।

No comments:
Post a Comment