নগর উন্নয়নে ভি গর্ডন চাইল্ড এর তত্ত্ব ব্যাখা কর
ভূমিকাঃ- ভি গর্ডন চাইল্ড এর মতে নগর সভ্যতার উম্মেষ ঘটেছিল নতুন প্রস্তর যুগের আবির্ভাবের সাথে সাথে। এ সভ্যতা মূলত গড়ে উঠেছিল আফ্রো-ইউরেশিয়া ভূমির উপর। টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস, নীলনদ গঙ্গা ও ইয়াংসি নদীর তীঁর ঘেষে গড়ে উঠেছিল প্রাচীন নগর সমাজ।
নগর উন্নয়নে ভি গর্ডন চাইল্ড এর তত্ত্বঃ উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্যই মূলত পল্লী সমাজ হতে নগর সমাজের উত্তরণের মূল হাতিয়ার। তাছাড়া যুদ্ধ বিগ্রহ অন্যদেশে বসবাস করার ইচ্ছা এবং বিক্ষিপ্ত বাণিজ্য দূর দুরান্তের নগর সভ্যতার সংস্কৃতিকে ত্বরান্বিত করত। মেসোপটেমিয়া, ইজিপ্ট, ভারতবর্ষ, গ্রিক ও ইতালিতে যে নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তার পিছনে উপযুক্ত তিনটি উপাদানই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।ক্রমে ক্রেম অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যতা এক বিশেষ রুপ লাভ করে এবং নগর সমাজের উত্তরণের পথ তরান্বিত করে। বণিক গোষ্ঠীর বিশেষ ভূমিকা ও তৎপরতার সাথে সাথে কিছু কিছু শিল্প তথা বয়নশিল্প, মৃৎ শিল্প, ধাঁতু শিল্প, অলংকার শিল্প, আসবাবপত্র, পূর্তশিল্প ইত্যাদি ও তখন গড়ে উঠতে শুরু করে।
সে যুগের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যতা, আধুনিক নগর সভ্যতার কিছু উপকরণ যথা সেভপদ্ধতি, সাহিত্যকর্ম, বিজ্ঞান, দর্শন এবং সামরিক বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে নিঃসন্দেহে তরান্বিত করেছে । বাণিজ্য ছিলো তখন নগর সভ্যতার মূল অর্থনৈতিক কার্যক্রম। সুমেরীয়রা তখন গম, বীয়ার ও বার্লী বিক্রি করত। মিশরীয়রা উত্ত্র আফ্রিকা ও নিকটস্থ প্রাচ্য দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য করত। ক্রিটান মিনোয়ানের নগরগুলো ডুমুর, বার্লি এবং অলিভ নিয়ে বাণিজ্য করে বেড়াতো গ্রিক শহর তথা এথেন্স এবং ইতালিতে বাণিজ্যক উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।
মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক অধিকার ও কর্তব্যের সীমারেখা সুনির্দিষ্ট হতে লাগলো। নগর অঞ্চলে অচেনা এবং বিদেশি বণিকগণ নিজেদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াসী হলো। অর্থাৎ নিয়মতান্ত্রিক নগর সভ্যতার এক জোয়ার ধাক্কা দিলো তদানীন্তন নগর সমাজকে। হাম্বুরাবির বিধান, দ্বাদশ স্মারণী সম্বলিত আইন, তদানীন্তন গ্রিক শহরের সংবিধান এবং চরাম সম্রাজ্যের জটিল আইনতান্ত্রিক নগর সভ্যতারই বার্তাবহ।
উপর্যুক্ত উপাদান ছাড়া আর যে উপাদান প্রথম নগর সভ্যতার প্রেক্ষাপটে রয়েছে তা হলো জটিল ও সর্বজনীন ধর্মের প্রভাব। আধুনিক নগরায়ন যা সম্পূর্ণভাবে ধর্ম নিরপেক্ষ, যুক্তিপূর্ণ এবং ধর্মীয় প্রভাব মুক্ত ও বিরোধী কিন্তু আদি নগর সভ্যতার ধর্মীয় প্রভাব, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান এবং আতীন্দ্রিয়বাদ এর গর্ভেই সৃষ্ট। পারস্য নগর সমাজ মূলত জোরো অস্ট্রনিয়াজম ধর্মের প্রভাবে গড়ে উঠেছিল। হিন্দু নগর সমাজ বলতে তখন ব্রাহ্মণ ধর্ম চর্চাই বুঝাতো।