Showing posts with label পরিচিতি. Show all posts
Showing posts with label পরিচিতি. Show all posts

বাংলা গদ্যের জনক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর জীবনী

জ্ঞানের সাগর ও সমাজ সংস্কারের পথিকৃৎ বাংলা গদ্যের জনক  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী

ভূমিকা: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০ – ১৮৯১) ছিলেন উনিশ শতকের অন্যতম বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, লেখক এবং গদ্যকার। তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য, মানবতাবাদী চিন্তা ও নির্ভীক সমাজ সংস্কারমূলক কার্যক্রম তাঁকে বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অসামান্য দক্ষতার জন্য তিনি “বিদ্যাসাগর” (অর্থাৎ জ্ঞানের সাগর) উপাধি লাভ করেন।

বাংলা গদ্যের জনক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর জীবনী


জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবনঈশ্বরচন্দ্রের জন্ম ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর (১২ আশ্বিন ১২২৭ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে। তাঁর পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দরিদ্র ব্রাহ্মণ, যিনি জীবিকার জন্য কলকাতায় পুরোহিতের কাজ করতেন। মাতা ভগবতী দেবী ছিলেন ধর্মপরায়ণ ও স্নেহময়ী নারী, যিনি ছেলেকে সততা ও পরিশ্রমের শিক্ষা দেন। অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যেও ঈশ্বরচন্দ্র অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে শিক্ষা অর্জনের জন্য ছোটবেলায় পায়ে হেঁটে বীরসিংহ থেকে কলকাতায় আসেন।


শিক্ষা জীবন: ১৮২৮ সালে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। সেখানে ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলংকার শাস্ত্র, বেদান্ত, স্মৃতি, ও জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে গভীর অধ্যয়ন করেন। ১৮৩৯ সালে তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ কলেজ থেকেই “বিদ্যাসাগর” উপাধি লাভ করেন।

তিনি পরবর্তীতে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজেও অধ্যয়ন করেন এবং ১৮৪১ সালে সংস্কৃত সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।


বিবাহ: চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি ১৮৩৪ সালে দীনময়ী দেবীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের একমাত্র পুত্র ছিলেন নারায়ণ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।


কর্মজীবনবিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। অল্প বয়সেই তিনি অধ্যাপক থেকে অধ্যক্ষের পদে উন্নীত হন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কলেজে শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক সংস্কার আনেন।তাঁর উদ্যোগে কলেজে সকল শ্রেণির হিন্দু ছাত্রদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়, যা আগে কেবল ব্রাহ্মণ ও বৈদ্যদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। এভাবে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।


সমাজ সংস্কারে অবদান

বিধবা বিবাহ: ঊনবিংশ শতকে হিন্দু সমাজে বিধবারা অমানবিক জীবনযাপন করতেন। বিদ্যাসাগর তাঁদের পুনর্বিবাহের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেন। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ সরকার “হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন” পাস করে। এটি ভারতীয় সমাজে নারী স্বাধীনতার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল।

বাল্যবিবাহের বিরোধিতা: তিনি বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করেন। প্রবন্ধ ও বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি দেখান যে, অল্পবয়সে বিবাহ নারী ও সমাজ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।

নারী শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা: নারী শিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অনন্য। তাঁর উদ্যোগেই কলকাতায় বহু বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন, “নারী শিক্ষিত হলে সমাজও শিক্ষিত হবে।”


✍️ সাহিত্যকর্ম ও বাংলা গদ্যে অবদান:

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হয়। তিনি বাংলা ভাষাকে তৎকালীন কৃত্রিম ও জটিল অবস্থা থেকে মুক্ত করে সরল, প্রাঞ্জল ও যুক্তিপূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠিত করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে "বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলা লেখায় যতিচিহ্ন ও শৃঙ্খলার ব্যবহার প্রবর্তনের কৃতিত্বও তাঁর। 

মৌলিক রচনা:

  • প্রভাবতী সম্ভাষণ: বাংলা সাহিত্যের প্রথম মৌলিক শোকগাথা, যা তিনি বন্ধুর কন্যার মৃত্যুতে রচনা করেন।
  • অতি অল্প হইল ও আবার অতি অল্প হইল: সমাজের নানা অসঙ্গতি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমূলক রচনা।
  • ব্রজবিলাস: সমাজ ও মানবজীবনের নানা দিক নিয়ে লেখা একটি মৌলিক গ্রন্থ।
  • বিধবা বিবাহ ও যশোরের হিন্দু ধর্মরক্ষিণী সভা: রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে যুক্তিনির্ভর প্রতিবাদ।
  • রত্ন পরীক্ষা: নৈতিকতা ও মানবমূল্যবোধ বিষয়ক রচনা।
  • বর্ণপরিচয় (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ): শিশুদের জন্য লেখা বাংলা শিক্ষার ভিত্তিপ্রস্তরস্বরূপ পাঠ্যপুস্তক।
  • বোধোদয়: নৈতিক শিক্ষা ও প্রাথমিক পাঠের সহায়ক বই।
  • আত্মচরিত: বাংলা সাহিত্যের প্রথম আত্মজীবনীমূলক গদ্য রচনা।

অন্যান্য শিক্ষামূলক গ্রন্থ:

  • কথামালা: শিশুদের গল্প সংকলন।
  • আখ্যানমঞ্জরী: বিভিন্ন শিক্ষণীয় আখ্যানের সমাহার।
  • ব্যাকরণ কৌমুদী: বাংলা ব্যাকরণের একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।


অনুবাদমূলক রচনা:

বিদ্যাসাগর বহু বিশ্বসাহিত্য বাংলায় অনুবাদ করেন

  • শকুন্তলা: কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তলম নাটকের অনুবাদ।
  • সীতার বনবাস: সংস্কৃত সাহিত্যের অনুবাদ।
  • বেতাল পঞ্চবিংশতি: হিন্দি কাহিনি অবলম্বনে অনূদিত গ্রন্থ।
  • ভ্রান্তিবিলাস: শেক্সপিয়ারের Comedy of Errors-এর বাংলা অনুবাদ।

এইসব অনুবাদ বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারা সৃষ্টি করে এবং পাঠকদের বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত করে তোলে।


বিদ্যাসাগরের জীবনদর্শন: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন এক অদম্য মানবতাবাদী। দরিদ্র ছাত্রদের সহায়তা করা, বিধবাদের পাশে দাঁড়ানো, নারীর প্রতি সম্মান ও শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা এসব কাজ তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, “মানুষের সেবাই পরম ধর্ম।”


মৃত্যু১৮৮৮ সালে তাঁর স্ত্রী দীনময়ী দেবী মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তিনি কলকাতায় কিছুদিন নিভৃত জীবনযাপন করেন। ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই (১৩ শ্রাবণ ১২৯৭ বঙ্গাব্দ) এই মহান মানুষ পরলোকগমন করেন।


উত্তরাধিকার ও স্মৃতি: বিদ্যাসাগর শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি যুগের প্রতীক। বাংলা সমাজে আধুনিক শিক্ষার বিস্তার, নারী মুক্তি আন্দোলন, এবং মানবতাবাদী চিন্তাধারার সূচনা তাঁর হাত ধরেই। তাঁর লেখা বর্ণপরিচয় আজও শিশু শিক্ষার প্রথম পাঠ্যপুস্তক হিসেবে অমর হয়ে আছে

বাংলা গদ্যের জনক হিসেবে তাঁর নাম উচ্চারণ মানেই যুক্তি, মানবতা ও প্রগতির এক আলোকবর্তিকা

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর আত্মজীবনী

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর আত্মজীবনী

ভূমিকা: বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অমর নাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সাহিত্য যেন প্রতিধ্বনি তোলে গ্রামীণ বাঙালির হৃদয়ে, আবার শহুরে মানুষের মনের টানাপোড়েনেরও দর্পণ হয়ে ওঠে। প্রেম, সমাজ, আত্মত্যাগ ও বাস্তবতা এসবই যেন মিশে থাকে তার লেখায়। আজকের এই ব্লগে আমরা জানব তাঁর জন্ম, মৃত্যু, পারিবারিক জীবন, শিক্ষাজীবন, সাহিত্যকর্ম ও স্থায়ী অবদান সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ও অনন্য আলোচনা।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর আত্মজীবনী


জন্ম ও পারিবারিক পটভূমি

জন্ম: ১৫ই সেপ্টেম্বর, ১৮৭৬

জন্মস্থান: দেবানন্দপুর, হুগলি জেলা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ)

শরৎচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে। তাঁর পিতার নাম ছিল মতিলাল চট্টোপাধ্যায় এবং মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিল “ন্যাঁড়া”। পিতৃসূত্রে কাঁচড়াপাড়ার মামুদপুর ও মাতৃসূত্রে হালিশহর ছিল তাঁর পারিবারিক শিকড়।


বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন: 

শরৎচন্দ্রের শৈশব কেটেছে ভাগলপুর শহরে। তার বাবার আর্থিক দুরবস্থার কারণে পড়াশোনায় বেশ কিছু বাধা আসে।


* প্রথমে দেবানন্দপুরের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।

* পরে ভাগলপুরের দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয় এবং পরে ভাগলপুর জেলা স্কুলে পড়াশোনা করেন।

* অবশেষে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৮৯৪ সালে এনট্রান্স পাশ করেন।

* অর্থাভাবে এফএ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

এই সময়ই তিনি সাহিত্য চর্চা শুরু করেন, লিখেছিলেন 'কাশীনাথ’, ‘ব্রহ্মদৈত্য’ ইত্যাদি গল্প।


ব্যক্তিগত জীবন ও বিবাহ: 

শরৎচন্দ্রের ব্যক্তিজীবন ছিল বর্ণময় এবং কিছুটা বেদনাদায়ক।

* প্রথম বিয়ে করেন শান্তি দেবী নামে এক ব্রাহ্মণ মিস্ত্রির কন্যাকে। তাঁদের এক পুত্রসন্তান জন্মায়, তবে রেঙ্গুনে প্লেগে আক্রান্ত হয়ে স্ত্রী ও পুত্র উভয়েই মৃত্যুবরণ করেন।

* পরবর্তীতে মোক্ষদা (পরে নাম রাখা হয় হিরন্ময়ী দেবী) নামে এক কিশোরীকে বিয়ে করেন। এই দাম্পত্য জীবন নিঃসন্তান ছিল।


কর্মজীবন:

জীবনের এক পর্যায়ে তিনি পাড়ি জমান রেঙ্গুন (বর্তমান ইয়াঙ্গুন)-এ। সেখানে বর্মা রেলওয়ে ও পাবলিক ওয়ার্কস বিভাগে কেরানির চাকরি করেন প্রায় দশ বছর। এরপর লেখালেখির প্রতি মনোনিবেশ করতে চেয়ে চাকরি ছেড়ে তিনি বাংলায় ফিরে আসেন।


✍️ সাহিত্যকর্ম ও বিখ্যাত উপন্যাস: 

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম সমাজের বাস্তবতা, নারীর অবস্থান, প্রেম-বিরহ, দুর্বলতা ও সংগ্রামের এক অসাধারণ প্রতিচ্ছবি। তার উপন্যাসগুলো পড়লে মনে হয় যেন সে সময়ের বাংলার জীবনযাপন চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ও গল্পসমূহ:

*দেবদাস (১৯১৭)

*পরিণীতা (১৯১৪)

*বড়দিদি (১৯১৩)

*চরিত্রহীন (১৯১৭)

*শ্রীকান্ত (১৯১৭–১৯৩৩)

*দত্তা (১৯১৮)

*পথের দাবী (১৯২৬)

*শেষ প্রশ্ন (১৯৩১)

*গৃহদাহ, পল্লীসমাজ, চন্দ্রনাথ, রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত প্রভৃতি


কবিতা ও প্রবন্ধ:

যদিও তিনি মূলত কথাসাহিত্যিক, তবুও তাঁর কিছু গল্প ও সংলাপ কবিতার মতোই ছন্দবদ্ধ ও হৃদয়গ্রাহী।

সাহিত্যকর্মের চলচ্চিত্রায়ন: 

শরৎচন্দ্রের উপন্যাসগুলোকে ভিত্তি করে প্রায় ৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সবচেয়ে আলোচিত হলো 'দেবদাস', যেটি বাংলা, হিন্দি ও তেলুগু ভাষায় একাধিকবার নির্মিত হয়েছে।

* অভিনেতা: প্রমথেশ বড়ুয়া, দিলীপ কুমার, শাহরুখ খান

* অভিনেত্রী: কানন দেবী, সুচিত্রা সেন, মাধুরী দীক্ষিত, ঐশ্বর্য রাই

অন্যান্য চলচ্চিত্র:

* বড়দিদি

* চন্দ্রনাথ

* পরিণীতা

* দত্তা

* স্বামী

* ছোটি বহু (বিন্দুর ছেলে অবলম্বনে)

* তুমহারি পাখি (নববিধান অবলম্বনে)


সম্মাননা ও পুরস্কার

*কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯২৩ সালে *জগত্তারিণী স্বর্ণপদক* প্রদান

*ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯৩৬ সালে *ডি.লিট উপাধি*

*ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড: ১৯৭৭ সালে ‘স্বামী’ সিনেমার জন্য সেরা লেখক


মৃত্যুকাল

তারিখ: ১৬ই জানুয়ারি, ১৯৩৮।

স্থান: কলকাতা

শরৎচন্দ্র তার জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন হাওড়ার সামতাবেড় গ্রামে। তাঁর যকৃতের ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং অস্ত্রোপচারের পরও আর সুস্থ হননি। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য হারিয়েছিল এক অদ্বিতীয় কথাসাহিত্যিককে।


উপসংহার: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শুধু একজন সাহিত্যিক নন, তিনি বাংলা সাহিত্যের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী কণ্ঠস্বর। তাঁর সাহিত্য আজও পাঠকের হৃদয় জয় করে চলছে। গ্রামীণ সমাজ, নারীজীবন, সামাজিক অনুশাসন আর মানবিক টানাপোড়েন  সবকিছুই তিনি তুলে ধরেছেন সহজ কিন্তু প্রাঞ্জল ভাষায়।

আজকের এই ডিজিটাল যুগেও শরৎচন্দ্রের লেখা আমাদের শেখায় জীবন, প্রেম, দায়িত্ব আর প্রতিকূলতাকে জয় করার দীক্ষা।

সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী

সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী

ভূমিকা:- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যিনি বাংলা সাহিত্যে “সাহিত্যসম্রাট” নামে খ্যাত, ছিলেন প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, কবি, সাংবাদিক এবং এক দক্ষ সরকারি কর্মকর্তা। বাংলা উপন্যাসের প্রথম সার্থক রচয়িতা হিসেবে আখ্যায়িত, তিনি বাংলা ভাষায় গদ্য সাহিত্যের আধুনিক বুকডেল গড়ে তুলেছেন ।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী


শৈশব ও পারিবারিক জীবন

জন্ম ও পরিবার:  ২৬ জুন (বিভিন্ন সূত্রে ২৬ বা ২৭ জুন) ১৮৩৮ সালে তিনি উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে–কাঁঠালপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মেদিনীপুরে ডেপুটি কালেক্টরের দায়িত্বে কর্মরত। তিনি পরিবারের তৃতীয় সন্তান, এবং তাঁর দুই ভাই পূর্ণচন্দ্র ও সঞ্জীবচন্দ্রও সাহিত্যরুচির অধিকারী ছিলেন ।


প্রাথমিক শিক্ষা ও মেধাপাঁচ বছরের মধ্যে তিনি বাংলা বর্ণমালা আত্মস্থ করেছিলেন বলে জানা যায়, এবং পাঠশালায় না গিয়ে গৃহশিক্ষক থেকে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তৎকালীন শিক্ষাব্যবস্থায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। মেদিনীপুরে ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন জন এফ. টিড-এর পরামর্শে, যেখানে তিনি খুব শিগগিরই নিজের মেধা প্রমাণ করেন। পরবর্তীতে সিনক্লেয়ার-এর অধীনে দেড় বছর উচ্চমানের ইংরেজি শিক্ষা লাভ করেন ।


১৮৪৯ সালে তিনি কাঁঠালপাড়ায় ফিরে এসে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় শ্রীরাম ন্যায়বাগীশের কাছে ও মহাভারত শ্রবণে পণ্ডিত হলধর তর্কচূড়ামণির পড়াশোনা করেন, যা তার গদ্য-শৈলীতে গভীর প্রভাব ফেলে ।


শিক্ষা ও মেধার বিকাশ

কলেজ জীবন ও প্রথম প্রকাশনা ১৮৪৯ সালে তিনি হুগলী মহসিন কলেজে ভর্তি হন; সেখানে তিনি ১৮৫৩ সালে জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং মাসিক আট টাকা বৃত্তি লাভ করেন । কলেজে পড়ার সময় সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকায় কবিতা ও গদ্য লিখে জনপ্রিয়তা পান । ১৮৫৬ সালে সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন, এবং এখান থেকেই পদ্য গ্রন্থ ‘ললিতা তথা মানস’ প্রকাশিত হয়, যা তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ।

উচ্চ স্তরের শিক্ষা ও সরকারি চাকরি ১৮৫৬ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৮৫৭ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং ১৮৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ব্যাচে স্নাতক সমপন্ন করেন । ১৮৬৯ সালে আইন (LLB) ডিগ্রিও লাভ করেন। সরকারি কাজে যোগ দেন, প্রথমে যশোরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং পরবর্তীতে ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন, অবসর নেন ১৮৯১ সালে ।


দাম্পত্য জীবন: 

প্রথম বিয়ে ১৮৪৯ সালে, ষোল–সতের বছর বয়সে, নারায়ণপুর গ্রামের একটি ছোট মেয়ের (মোহিনীদেবী) সঙ্গে হয়; কিন্তু তিনি তীক্ষ্ণভাবে মারা যান ১৮৫৯ সালে। এরপর ১৮৬০ সালের জুন মাসে রাজলক্ষ্মী দেবীর সঙ্গে পুনরায় বিয়ে সম্পন্ন হয় । তাদের কোনও পুত্র ছিল না, তিন কন্যা: শরৎকুমারী, নীলাজকুমারী ও উৎপলকুমারী।

সাহিত্য জীবনের অগ্রযাত্রা এবং রসায়ন

কাব্য থেকে গদ্য ও প্রথম উপন্যাস

তিনি শুরুতে কবিতা লিখছিলেন (“সংবাদ প্রভাকর” প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত), এরপর ইংরেজিতে “Rajmohan's Wife” উপন্যাস লিখেন যা ১৮৬৪-এ প্রকাশিত হয়। ১৮৬৫ সালে তাঁর প্রথম বাংলা উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’ প্রকাশ পায়; এটি বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত হয় ।


অন্যান্য উপন্যাস ও প্রবন্ধতার পরের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে – কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬), মৃণালিনী (১৮৬৯), বিষবৃক্ষ (১৮৭৩), ইন্দিরা (১৮৭৩), যুগলাঙ্গুরীয়া (১৮৭৪), চন্দ্রশেখর (১৮৭৫), রজনী (১৮৭৭), কৃষ্ণকান্তের উইল (১৮৭৮), রাজসিংহ (১৮৮২), আনন্দমঠ (১৮৮২), দেবী চৌধুরাণী (১৮৮৪), সীতারাম (১৮৮৭) 

প্রবন্ধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: *লোকরহস্য, বিজ্ঞানরহস্য, কমলাকান্তের দপ্তর, বিবিধ সমালোচনা, সাম্য, কৃষ্ণচরিত্র, বিবিধ প্রবন্ধ (১ম ও ২য় খন্ড), ধর্মতত্ত্ব, শ্রীমদ্ভাগবতগীতা* ইত্যাদি ।


আনন্দমঠ’ ও 'বন্দে মাতরম'

১৮৮২ সালে প্রকাশিত *আনন্দমঠ* উপন্যাসে প্রকাশিত *‘বন্দে মাতরম’* গানটি পরবর্তীতে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীকী স্লোগান ও ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা হয় ।

'দেবী চৌধুরাণী’ অকুন্তিত প্রতীক'

১৮৮৪ সালে প্রকাশিত ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাসে একজন শক্তিশালী নারী নেতার মাধ্যমে সংগ্রাম ও জাতীয়তাবাদ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করার কারণে এটি নিষিদ্ধও হয়েছিল; স্বাধীনতা পর এটির বিধিনিষেধ উঠে যায় ।


শেষ জীবন বা অবসানকেন্দ্র

১৮৯১ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন; আগ্রহী ছিলেন উচ্চশিক্ষা ও সাহিত্যচর্চায় অব্যাহত রাখতে। মহাপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর পর, তিনি Society for Higher Training প্রতিষ্ঠা করেন ও তার সাহিত্য শাখার সভাপতি হন। ১৮৯২ সালে “রায় বাহাদুর” খেতাব পান এবং ১৮৯৪ সালে “Companion of the Most Eminent Order of the Indian Empire” (CIE) খেতাবে ভূষিত হন।

পরলোকগমন: সার্কুলারি রোগ (ব্যথাপিড ও বহুমূত্র সমস্যা)–এর অবনতির ফলে ৮ এপ্রিল ১৮৯৪ সালে কলকাতায় তিনি পরলোকগমন করেন ।


উপসংহার ও সাহিত্যিক গুরুত্ব: এক কথায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের এক অগ্রদূত, যিনি কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, তত্ত্বচর্চা সবখাতে অনবদ্য ভুমিকা রেখেছেন। তার সাহিত্যচর্চার গুরুত্ব দেখতে পাওয়া যায়—প্রথম বাংলা উপন্যাস, বাংলা গদ্যভাষার আদর্শ, ঐতিহাসিক ও সামাজিক চেতনার উন্মেষ, জাতীয় চেতনায় “বন্দে মাতরম”–এর উপস্থিতি এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক “দেবী চৌধুরাণী” তে। সরকারি চাকরি ও লেখালেখির সংঘাতময় জীবনে তিনি অসাধারণ দূরদৃষ্টি, প্রাণ ও মেধা দিয়ে বাংলা ভাষাকে আধুনিকতার পথে রূপান্তরিত করেছেন। এই কারণে বাংলা সাহিত্যে নিষ্প্রয়োজনীয়ভাবে বৈশিষ্ট্যবাহী ও অনন্য, এবং আজও তিনি “সাহিত্য সম্রাট” নামে স্মরণীয় ।

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী: এক অনন্য প্রতিভার পথচলা

ভূমিকাঃ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, চিত্রশিল্পী ও সুরকার। বাংলা সাহিত্যের এই পুরোধা ব্যক্তিত্বকে 'কবিগুরু', 'বিশ্বকবি' এবং ‘গীতাঞ্জলির স্রষ্টা’ নামে সম্বোধন করা হয়। তার সাহিত্যকর্ম ও জীবনদর্শন আজও কোটি মানুষের অনুপ্রেরণা।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী


জন্ম ও শৈশবকাল

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন *৭ মে ১৮৬১ সালে (২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ), কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়িতে। তার পিতা "দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর" ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের একজন গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগুরু এবং মাতা "সারদাসুন্দরী দেবী"। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাদের চতুর্দশ সন্তান। ধনাঢ্য পরিবারে জন্ম হলেও, ছোটবেলায় তাকে পিতার সান্নিধ্য খুব একটা পাওয়া যায়নি। মায়ের মৃত্যু ও বাবার অধিকাংশ সময় ভ্রমণে ব্যস্ত থাকায়, তার শৈশব কেটেছে ভৃত্যদের তত্ত্বাবধানে।

শিক্ষা জীবন

শিক্ষার শুরু হয় বড় ভাই "হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের" হাতে। বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় অনাগ্রহী রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি ও সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে। এরপর ১৮৭৮ সালে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয় আইন পড়ার জন্য। তিনি ব্রাইটনের একটি স্কুলে ও পরে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি হন। তবে, সাহিত্যপ্রেম তাকে আইন পড়া থেকে দূরে নিয়ে যায় এবং তিনি পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখেই দেশে ফিরে আসেন।

পারিবারিক জীবন

১৮৮৩ সালে রবীন্দ্রনাথ বিবাহ করেন "ভবতারিণী দেবীকে", যাকে পরে "মৃণালিনী দেবী" নামে পরিচিত করা হয়। তাঁদের পাঁচটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে, তবে দুজন ছোট বয়সে মৃত্যুবরণ করে। মৃণালিনী দেবীর অকালমৃত্যু রবীন্দ্রনাথের জীবনে গভীর শোক বয়ে আনে।

শিলাইদহ ও জমিদারির অভিজ্ঞতা

১৮৯০ সালে তিনি কুষ্টিয়ার "শিলাইদহ" পরগনায় পারিবারিক জমিদারির তদারকির দায়িত্ব নেন। এখানেই তার সাহিত্যজীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সময় কেটেছে। পদ্মার তীরে বসে লেখা বহু কবিতা, চিঠি ও গানের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলার প্রকৃতি ও সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে একাত্ম হন।

সাহিত্যজীবন ও কীর্তি

রবীন্দ্রনাথ মাত্র আট বছর বয়সে কবিতা লিখতে শুরু করেন। তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা ছিল “অভিলাষ", যা ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রথম গল্প “ভিখারিণী” প্রকাশিত হয় ১৮৭৭ সালে। তিনি ‘ভানুসিংহ ঠাকুর’ ছদ্মনামে মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষায় কিছু কবিতা লিখে সাহিত্যে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন।

তার রচনার সংখ্যা সত্যিই বিস্ময়কর –
🔸 ৫২টি কাব্যগ্রন্থ
🔸 ১৪টি উপন্যাস
🔸 ৩৮টি নাটক
🔸 ৩৬টি প্রবন্ধগ্রন্থ
🔸 ৯৫টি ছোটগল্প
🔸 ১৯১৫টি গান
এছাড়াও, তিনি প্রায় **দুই হাজারের** বেশি চিত্র অঙ্কন করেন। তার রচিত গান “আমার সোনার বাংলা” ও “জনগণমন” যথাক্রমে বাংলাদেশের ও ভারতের জাতীয় সংগীত।

 নোবেল পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

১৯১৩ সালে, “Gitanjali (গীতাঞ্জলি)” কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর **সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার** লাভ করেন। তিনি প্রথম এশীয় ও অ-ইউরোপীয় ব্যক্তি যিনি এই সম্মান অর্জন করেন। এটি শুধু তার নয়, সমগ্র ভারতবর্ষের জন্য গৌরবের মুহূর্ত ছিল।

মৃত্যুবরণ:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন *৭ আগস্ট ১৯৪১* সালে (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ), তার প্রিয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতেই। তাঁকে কলকাতার নিমতলা মহাশ্মশানে সমাধিস্থ করা হয়।

✍️ উপসংহার

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একজন সাহিত্যিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক যুগান্তকারী দার্শনিক ও মানবতাবাদী চিন্তাবিদ। তার লেখা আজও বাঙালির চিন্তা-চেতনা, সংস্কৃতি ও জাতীয়তাবোধে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও সাহিত্য আমাদের জন্য চিরন্তন অনুপ্রেরণার উৎস।

পল্লী কবি জসীম উদ্দীন এর জীবনী

পল্লী কবি জসীম উদ্দীন এর জীবনী

ভূমিকা:বাংলা সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র পল্লী কবি জসীম উদ্দীন। গ্রামবাংলার লোকজ সংস্কৃতি, জীবনধারা, আবেগ-অনুভূতি এবং প্রকৃতির সহজ-সরল রূপ তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার অবদান অনন্য। তিনি কেবল কবি ছিলেন না, ছিলেন একাধারে গীতিকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। তার সাহিত্যকর্মে গ্রামীণ জীবনের যে আবহ সৃষ্টি হয়েছে, তা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। 

পল্লী কবি জসীম উদ্দীন এর জীবনী


জন্ম ও পারিবারিক পটভূমি:

জসীম উদ্দীনের জন্ম ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে তার নানাবাড়িতে। তার পূর্ণ নাম ছিল মোহাম্মাদ জমীর উদ্দীন মোল্লা, তবে ডাকনাম ছিল 'জসীম উদ্দিন', এবং লেখালেখিতে তিনি এই নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন। তার পিতা আনসার উদ্দিন মোল্লা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক, আর মাতা আমিনা খাতুন ছিলেন একজন মমতাময়ী গৃহিণী।


শিক্ষাজীবন:

ছোটবেলা থেকেই জসীম উদ্দীন ছিলেন মেধাবী ও সংস্কৃতিমনস্ক। প্রাথমিক শিক্ষার পর তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ১৯২১ সালে প্রবেশিকা পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে বিএ (১৯২৯) ও এমএ (১৯৩১) ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তার সাহিত্য প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটে।


কর্মজীবন:

শিক্ষা জীবন শেষে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান পণ্ডিত ড. দীনেশচন্দ্র সেনের সঙ্গে লোকসাহিত্য সংগ্রহের কাজে নিযুক্ত হন। এরপর ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন। তবে দীর্ঘদিন সেখানে না থেকে সরকারি তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


সাহিত্যকর্ম ও অবদান:

জসীম উদ্দীনের সাহিত্যকর্মের মূল উপজীব্য ছিল গ্রামীণ জীবন। তার লেখা কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধে তিনি এক নিখুঁত শিল্পীর মতো গ্রামের সহজ-সরল জীবনধারা তুলে ধরেছেন। তার ‘কবর’ কবিতাটি তিনি কলেজ জীবনেই রচনা করেন, যা পরবর্তীতে প্রবেশিকা শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়।


তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ "নকশী কাঁথার মাঠ" ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয় এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এতে গ্রামীণ প্রেম, বেদনা ও মানবিক সম্পর্কের নিখুঁত চিত্রায়ণ রয়েছে। এ ছাড়া ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’, ‘রাখালী’, ‘ধানখেত’, ‘হাসু’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থেও গ্রামবাংলার প্রাণচিত্র উঠে এসেছে।


গীতিকবিতা:

তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় লোকগীতি রচনা করেছেন, যা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। তার লেখা কিছু বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে:

"আমার সোনার ময়না", "কাজল ভ্রমরা রে", "নদীর কূল নাই কিনার নাই", "আমায় ভাসাইলি রে" ইত্যাদি। এসব গানে প্রেম, বিরহ ও গ্রাম্য আবেগের ছোঁয়া রয়েছে।


পুরস্কার ও স্বীকৃতি:

তার সাহিত্যকীর্তির জন্য তিনি দেশ-বিদেশে বহু সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সরকার তাকে "প্রাইড অব পারফরম্যান্স" পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি "রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট" (১৯৬৯), "একুশে পদক" (১৯৭৬), এবং মরণোত্তর "স্বাধীনতা পদক" (১৯৭৮) লাভ করেন। তবে তিনি "বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান" করেন।


মৃত্যুবরণ ও উত্তরাধিকার:

১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর, তার ইচ্ছানুসারে ফরিদপুর জেলার অম্বিকাপুর গ্রামে দাদির কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। তিনি রেখে গেছেন এক বিশাল সাহিত্যভাণ্ডার এবং একটি অনন্য সাহিত্যধারা—যা ‘পল্লীকবিতা’ নামে পরিচিত।


উপসংহার:

জসীম উদ্দীন শুধু একজন কবি ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলার গ্রামীণ জীবনের এক অনবদ্য চিত্রকর। তার সাহিত্যকর্ম আজও বাঙালির হৃদয়ে জীবন্ত। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তার লেখা হয়ে উঠবে গ্রামবাংলার জীবনের অনন্ত দলিল।

সনেট ছন্দের প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত এর জীবনী

সনেট প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত: বাংলা সাহিত্যের এক বিপ্লবী সাধক

ভূমিকাঃ- বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের সূচনালগ্নে যে কজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব নিজের স্বকীয়তা ও সাহিত্যসাধনার মাধ্যমে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁদের অন্যতম। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার প্রথম সনেটকার এবং অমিত্রাক্ষর ছন্দের জনক, পাশাপাশি নাটক ও প্রহসনের নতুন ধারার প্রবর্তক। ঊনবিংশ শতাব্দীর এই কবি কেবল সাহিত্যকেই সমৃদ্ধ করেননি, বরং তাঁর জীবনও হয়ে উঠেছে এক বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময় অধ্যায়।

সনেট প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত এর জীবনী


জন্ম ও শৈশবকাল:

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশের) যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত এবং মাতার নাম জাহ্নবী দেবী। উচ্চশিক্ষিত এবং সংস্কৃতিবান পরিবারে জন্ম নেওয়া মধুসূদনের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় মায়ের কাছেই। পরে শেখপুরার মসজিদের ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে তিনি বাংলা, ফারসি ও আরবি শিখেন।


ধর্মান্তর ও শিক্ষা জীবন:

কলকাতায় হিন্দু কলেজে পড়াশোনার সময় থেকেই মধুসূদন পাশ্চাত্য সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৮৪৩ সালে তিনি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন এবং "মাইকেল" নামটি গ্রহণ করেন। এই ধর্মান্তরের কারণে তাকে হিন্দু কলেজ ত্যাগ করতে হয় এবং পরে তিনি বিশপস কলেজে ভর্তি হন। ১৮৪৮ সালে বন্ধুদের সঙ্গে মাদ্রাজে গিয়ে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ইংরেজি পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে সাহিত্যে প্রবেশ করেন। এসময় তার দুটি ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ—*The Captive Lady* ও *Visions of the Past*—প্রকাশিত হয়।


বিবাহ ও ব্যক্তিগত জীবন:

মাদ্রাজে অবস্থানকালে তিনি ইংরেজ যুবতী রেবেকা ম্যাকটাভিসকে বিবাহ করেন, যার সঙ্গে তার চারটি সন্তান জন্মে। পরে এই সম্পর্ক ভেঙে গেলে তিনি ফরাসি তরুণী এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়াকে বিয়ে করেন, যিনি আজীবন তার পাশে ছিলেন। তাদের সন্তান ছিল নেপোলিয়ন ও শর্মিষ্ঠা।


সাহিত্যকর্ম ও অবদান:

মাইকেল বাংলা নাট্যসাহিত্যের অন্যতম প্রবর্তক। তাঁর প্রথম নাটক *শর্মিষ্ঠা* (১৮৫৮) বাংলা ভাষার প্রথম মৌলিক নাটক হিসেবে বিবেচিত হয়। এরপর প্রহসন হিসেবে রচিত *একেই কি বলে সভ্যতা* এবং *বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ* বাংলা নাট্যজগতে অনন্য সংযোজন।


কবিতা রচনায় তিনি পশ্চিমা কাব্যপ্রথার প্রভাবে বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ ও সনেট চালু করেন। তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো *মেঘনাদবধ কাব্য* (১৮৬১), যা রামায়ণের এক ব্যতিক্রমী পুনর্বিন্যাস। অন্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আছে *তিলোত্তমাসম্ভব*, *বীরাঙ্গনা*, *ব্রজাঙ্গনা কাব্য*, *চতুর্দশপদী কবিতাবলী* (সনেট), প্রভৃতি।


বিদেশে পড়ালেখা ও শেষ জীবন:

আইন পড়ার উদ্দেশ্যে তিনি ইউরোপে পাড়ি জমান। ইংল্যান্ডে কিছুদিন থাকার পর ফ্রান্সের ভার্সাইয়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহায়তায় দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে আইনচর্চা শুরু করলেও আর্থিকভাবে কখনোই স্বচ্ছল হতে পারেননি। অমিতব্যয়ী স্বভাব ও সাহিত্যে অতিমগ্নতার কারণে তিনি ক্রমে নিঃস্ব হয়ে পড়েন।


মৃত্যু ও উত্তরাধিকার:

১৮৭৩ সালের ২৯ জুন, মাত্র ৪৯ বছর বয়সে, কলকাতার আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে অর্থাভাবে মৃত্যুবরণ করেন এই অসামান্য কবি। সার্কুলার রোড কবরস্থানে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর সমাধিস্তম্ভে খোদাই করা তারই এক কবিতার পঙ্‌ক্তি—

**“দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব বঙ্গে...”**

আজও বাঙালির সাহিত্যভাণ্ডারে অনন্ত স্মরণ হয়ে আছে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর আত্মজীবনী

কাজী নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী 

ভূমিকা:- কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর প্রতিভা, যিনি বিদ্রোহের কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। তাঁর কাব্য, গান ও সাহসী চিন্তা বাংলা জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিল। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবেও সম্মানিত।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর আত্মজীবনী

জন্ম ও শৈশব:

কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৯ সালের ২৪ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। তাঁর ডাকনাম ছিল “দুখু মিয়া”, যা যেন তাঁর শৈশবের দারিদ্র্যের প্রতিচ্ছবি। পিতা কাজী ফকির আহমেদ ছিলেন মসজিদের ইমাম। পিতার অকালমৃত্যুর পর মাত্র ৯ বছর বয়সে নজরুলকে সংসারের হাল ধরতে হয়।

শিক্ষাজীবন ও লেটো দলে যোগদান:

প্রাথমিক শিক্ষা নেওয়ার পর নজরুল লেটো দলে যোগ দেন, যেখানে তিনি অভিনয়, গান ও কবিতা রচনার চর্চা করেন। এখানেই তাঁর সাহিত্যিক সত্তার ভিত্তি তৈরি হয়। পরে আবার স্কুলে ফিরে এলেও আর্থিক সমস্যার কারণে শিক্ষাজীবন বারবার ব্যাহত হয়। জীবিকার জন্য তিনি বিভিন্ন কাজ যেমন মুয়াজ্জিন, রুটি বানানো, খানসামা ইত্যাদি করতে বাধ্য হন।

সেনা জীবন:

১৯১৭ সালে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং করাচি সেনানিবাসে কর্মরত থাকাকালে সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রাখেন। এই সময়েই তিনি 'মুক্তি' নামের প্রথম কবিতা লেখেন এবং 'বাউন্ডুলের আত্মকাহিনি'সহ বেশ কিছু গল্পও রচনা করেন।

সাহিত্য ও সাংবাদিকতা:

সেনাবাহিনী ত্যাগ করে নজরুল কলকাতায় ফিরে আসেন এবং সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জীবনে প্রবেশ করেন। তিনি *ধুমকেতু* নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন, যা ব্রিটিশবিরোধী লেখার কারণে বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি কারাবরণ করেন। এ সময়েই লেখা ‘বিদ্রোহী’ কবিতা তাঁকে চিরস্মরণীয় করে তোলে।

সংগীত ও সাহিত্যকর্ম:

নজরুলের লেখা গানের সংখ্যা ৪০০০ ছাড়িয়েছে। তাঁর গানগুলো 'নজরুলগীতি' নামে পরিচিত। তিনি হিন্দু ও মুসলিম উভয় সংস্কৃতিকে সম্মান করে গান ও কবিতা রচনা করেন, যা ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন। উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে *অগ্নিবীণা*, *বাঁধনহারা*, *চল চল চল*, *বিশের বাঁশি* ইত্যাদি।

রাজনীতি ও বিদ্রোহ:

নজরুল অসহযোগ আন্দোলনের সময় গান ও কবিতার মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য একাধিকবার কারাবন্দীও হন।

পারিবারিক জীবন:

নজরুল প্রথমে নার্গিস নামে এক তরুণীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও পরে প্রমীলা দেবীর সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তিনি তাঁকেই জীবনসঙ্গিনী হিসেবে বেছে নেন। দাম্পত্য জীবনে তাঁদের চার সন্তান জন্মগ্রহণ করে, তবে দুজন অল্প বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন।

অসুস্থতা ও জীবনের শেষ পরিণতি:

১৯৪২ সালে নজরুল দুরারোগ্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারান। এরপর থেকে তিনি দীর্ঘদিন মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিলেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং নাগরিকত্ব প্রদান করে। তিনি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সমাধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে।

পুরস্কার ও সম্মাননা:

নজরুল পেয়েছেন পদ্মভূষণ, জগত্তারিণী স্বর্ণপদক, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা। ১৯৭৪ সালে তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

উপসংহার: কাজী নজরুল ইসলাম শুধু একজন কবি নন, তিনি বাংলা সাহিত্যে এক বিদ্রোহী চেতনার প্রতীক। তাঁর জীবনসংগ্রাম ও সাহিত্য কর্ম আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়। তিনি ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে মানবতার কণ্ঠস্বর হয়ে থাকবেন চিরকাল।