সফল সাক্ষাৎকারের কী কী শর্তাবলি বিদ্যমান থাকে উল্লেখ কর।
ভূমিকা: সমাজকর্ম সাক্ষাৎকার বা Interview একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। আর ব্যক্তি সমাজকর্মে এটির গুরুত্ব অপরিসীম। শুধু সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ নয়, তার সমস্যার অনুধ্যান এবং সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে কার্যকরী পথের সন্ধান এবং সামগ্রিকভাবে ব্যক্তির সমস্যা সমাধান ও তাকে সঠিকভাবে সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলায় একটি অন্যতম প্রক্রিয়া হলো এই 'সাক্ষাৎকার বা Interview'
উত্তম সাক্ষাৎকারের শর্তাবলিসমূহ
যখন কোনো সাক্ষাৎকারে কতিপয় নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা হয় তখনই সেই সাক্ষাৎকারকে ফলপ্রসূ বা উত্তম সাক্ষাৎকার হিসাবে অভিহিত করা চলে।
মনীষী Annette Garrett-এর মতে উত্তম সাক্ষাৎকারের ৪টি শর্ত বিদ্যমান
১. সাক্ষাৎকারের সুপারিশ (Psysical seeting of interview)
২. লিপিবদ্ধকরণ (Recording);
৩. গোপনীয়তা (eonfidential nature of interview)
৪. সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর পূর্বে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান (Background knowledge of the interview);
Hussain & Alaudding তারা ভালো সাক্ষাৎকারের ৪টি শর্তের কথা বলেছেন-
১. অতীত জ্ঞান (Background knowledge);
২. রেকর্ডিং (Recording);
৩. গোপনীয়তা (confidentiahity);
৪. নিয়োগ ও সময় (Appointment & time)
নিচে উত্তম সাক্ষাৎকারের শর্তাবলি বর্ণনা করা হলো।
১. পরিবেশ: সাক্ষাৎকার একটি নিরিবিলি, গোপন ও আরামপ্রদ স্থানে অনুষ্ঠিত হতে হবে। খুব কোলাহলপূর্ণ খোলা জায়গায় সাক্ষাৎ গ্রহণ ও প্রদান উভয় অস্বস্তির পর্যায়ে পড়ে। সাক্ষাৎকার এমন একটি উত্তম পরিবেশের অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত যাতে করে সাহায্যার্থী অনুধাবন করতে সক্ষম হন যে, তার প্রতি গুরুত্বারোপ করেই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানটির আয়োজন ফলে সে মন খুলে ভাবকে প্রকাশ করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে Annette Garrett বলেন, "The Physical setting of the interview may determine it's entire potentiahity. Some clegree of privacy & a comfortable relax atomosphere are important."
২. পূর্ব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা: নির্দিষ্ট সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সাক্ষাত্থাহীতার জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য তার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা বাঞ্ছনীয়। অনভিজ্ঞ সাক্ষাৎ গ্রহীতার পক্ষে সাহায্যার্থীর আস্থাভাজন হওয়া সম্ভব নয়। সেজন্য তাকে পূর্বে থেকেই প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে হবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা নির্বিঘ্নে সাক্ষাৎকার গ্রহণের পক্ষে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. তারিখ ও সময় নির্ধারণ: তারিখ ও সময় পূর্ব থেকেই ঠিক করতে হবে। সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী তাদের সুবিধানুসারে আগে থেকে সাক্ষাৎকারের তারিখও নির্ধারণ করে নিবেন। সমাজকর্মী এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না যাতে করে সাহায্যার্থী মনে করতে পারেন যে তার ওপর সময় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কত সময় ধরে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়ে তা আগে থেকেই ঠিক করতে হয়ে।
৪. লিপিবদ্ধকরণ: সমাজকর্মী যা শুনছে সবকিছু স্মৃতিপটে ধরে রাখা সম্ভব নয়। লেখার সাথে সাহায্যার্থী তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে যেন মনে করতে পারেন। সমাজকর্মী অত্যন্ত সর্তকতার সাথে সাহায্যার্থীর মানসিকতা বিচেনা করে লিপিবদ্ধকরণের কাজ করবেন। মনীষী মার্গারেট ডুয়ার (Margaret Dwyer) লিপিবদ্ধকরণের ছয়টি কাঠামোর কথা উল্লেখ করেছেন।
যথা: সাক্ষাৎকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য Aim & Purpose);
- সাহায্যার্থীর দৈহিক ও আবেগীয় অবস্থার পর্যবেক্ষণ (Observation);
- সাক্ষাৎকারের ও সমাজকর্মীর অভিব্যক্তি বা অনুভূতি (Impression);
- সমাজকর্মীর ভূমিকা (Role of social worker): - সাক্ষাৎকারের পরিকল্পনা (Planning)।
৫. গোপনীয়তা: গোপনীয়তার নিশ্চয়তা সাক্ষাৎপ্রার্থীকে তার ব্যক্তব্য অধিকতর খোলাখুলিভাবে উপস্থাপন করতে উদ্বুদ্ধ করে। একান্ত নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি না হলে কেউ কারো গোপন দুর্বল দিক কারো কাছে প্রকাশ করতে চায় না। সুতরাং সাক্ষাৎকারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী অত্যন্ত কঠোরভাবে তাদের কথা গোপন রাখবেন। গোপনীয় তথ্যকে সাধারণত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
যথা: (i) স্বাভাবিক গোপন তথ্য;
(ii) অঙ্গীকারাবদ্ধ গোপন তথ্য এবং
(iii) অর্পিত গোপন তথ্য।
৬. সাক্ষাৎকার পরিচালনা: উত্তম সাক্ষাৎকারের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে সাক্ষাৎকার পরিচালনা। সাক্ষাৎকার পরিচালনা একটি কলা এবং এর জন্য কিছু পদজেন গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।
যেমন- (ক) সমাজকর্মী ও সাক্ষাৎদানকারীর মধ্যে সহানুভূতি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ কার্যকরী সম্পর্ক স্থাপন;
(খ) সাক্ষাৎকারের বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্য বর্ণনা;
(গ) মূল বিষয়বস্তুর সহজ দিক হতে সাক্ষাৎকার শুরু করা।
(ঘ) সাক্ষাৎকার পরিচালনার জন্য সাক্ষাৎকার কাঠামো ও রূপরেখা ব্যবহার করা;
(ঙ) তথ্যাবলি পরীক্ষাকরণ বা চেকিং,
(চ) কথা কম বলা;
(ছ) বিরক্তিকর পরিস্থিতি পরিহার করা;
(জ) সাক্ষাৎকার সতর্ক দৃষ্টি;
(ঝ) সচেতনা ও সতর্কতা এবং
(ঞ) অনুমোদন ও অনুমোদনের চিহ্ন।
৭. উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা: সমাজকর্মীকে সাহায্যার্থীর। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা পূর্বেই সাক্ষাৎকারের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হবে। কেননা সমাজকর্মে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এটি তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে সাহায্যার্থীকে জটিলতা থেকে মুক্ত করে সমাজকর্মীকে তার আপন গতিতে কাজ করতে সক্ষম হয়। ফলে সাক্ষাৎকার সহজ ও সফল হয়।
৮. তথ্যাদির নির্ভরযোগ্যতা: সাক্ষাৎকার থেকে সংগ্রহীত তথ্যাদি হতে হবে। অধিকতর নির্ভরযোগ্য এবং সে লক্ষোই সমাজকর্মীকে কাজ করতে হয়। তথ্যের অধিকতর নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে পূর্বে থেকেই চিন্তাভাবনা করতে হয়। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী তার নিজস্ব যোগ্যতা ও দক্ষতা কাজে লাগালে আশাব্যঞ্জক ফল পাবে।
৯. র্যাপো স্থাপন: সাহায্যার্থী সমাজকর্মী পেশাগত সম্পর্ক বা ব্যাপো প্রতিষ্ঠা সাক্ষাৎকারের একটি অন্যতম শর্ত। এর ফলে সাহায্যার্থীর মধ্যে সমাজকর্মীর প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
১০. পূর্ব যোগাযোগ: সাক্ষাৎকারকে সফল করার জন্য পূর্ব যোগাযোগ অত্যাবশ্যক। সমাজকর্মী সাক্ষাৎকার গ্রহণের পূর্বেই সাহায্যার্থীর সাথে যোগযোগ রক্ষা করে চলবেন। সমাজকর্মী পূর্ব প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা দিবেন। থেকেই সাহায্যার্থীকে সাক্ষাৎকারের উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু, সময় উত্তম সাক্ষাৎকারের শর্তাবলি যথাযথ পালনের মাধ্যমে।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, একটি সাক্ষাৎকারের সফলতা নির্ভর করে। সাক্ষাৎকার দাতা এবং গ্রহীতা উভয়কেই এসব শর্ত মেনে চলতে হবে। এজন্য সমাজকর্মী এবং সাহায্যার্থী উভয়ই উভয়কে গুরুত্ব দিবে। বিশ্লেষণ করে সমাজকর্মী সাহায্যার্থীকে গুরুত্বসহকারে দেখবেন।