Showing posts with label রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান. Show all posts
Showing posts with label রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান. Show all posts

রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ কী? উন্নয়নশীলদেশে রাজনৈতিক আধুনিকীকরণের সমস্যাসমূহ আলোচনা কর।

রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ কী?

ভূমিকাঃ- রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচিত প্রত্যয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো। রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ এমন একটি বিষয় যার অন্যতম লক্ষ্য হলো আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা । কেননা রাজনীতি এখন আর একটি দেশের মধ্য সীমাবদ্ধ নয়। পরিবর্তনশীল বিশ্বের মধ্যে বিশ্ব রাজনীতির সাথে মিল রেখে রাজনীতির আধুনিকীকরণ জরুরি।

রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ কী? উন্নয়নশীলদেশে রাজনৈতিক আধুনিকীকরণের সমস্যাসমূহ


রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ

সাধারণভাবে রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ হলো প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন করে আধুনিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা। আধুনিকীকরণ বলতে বোঝায় জীবন সম্পর্কে যুক্তিভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিক সম্পর্কের ব্যাপারে ধর্ম নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি, সরকারি বিষয়াদির ক্ষেত্রে ন্যায়বোধ এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনই রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ রবার্ট ই ওয়ার্ড বলেন-“ রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ হচ্ছে একটি আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবেশের জন্য একটি আধুনিক সমাজের অস্তিত্ব প্রয়োজন।”

রবার্ট এ কার্ন বলেন-“রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বিকাশ সাধন করাকে বোঝায় যেটার উপর আরোপিত দাবি সমূহকে মিটানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট নমনীয় ও শক্তিশালী।”

স্যামুয়েল পি হান্টিংটন বলেন-“ রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ, যুুক্তি সংঙ্গত কর্তৃত্ব, রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের পৃথকীকরণ এবং সামাজিক গোষ্ঠীর অধিক মাত্রায় রাজনীতিতে অংশগ্রহণকে নির্দেশ করে।”

পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ হচ্চে বিশ্ব সংস্কৃতির প্রসারণের একটি দিক নির্দেশনা।

উন্নয়নশীলদেশে রাজনৈতিক আধুনিকীকরণের সমস্যাসমূহ।

অথবা, উন্নয়নশীলদেশে রাজনৈতিক আধুনিকীকরণের সমস্যাগুলো চিহৃিত কর।

উন্নয়নশীলদেশে রাজনৈতিক আধুনিকীকরণের সমস্যাসমূহঃ উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে স্থিতিশীল রাজনীতি ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা রাজনীতির ব্যবস্থা যত ভালো হবে দেশের উন্নয়ন তত বেশি হবে। আর তাই রাজনীতির অবস্থা ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন রাজনীতির আধুনিকীকরণ। কিন্তু রাজনীতি আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশে কছিু সমস্যা দেখা যায় তা নিম্নরুপ-

১। শিক্ষার অভাবঃ উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সমস্যা শিক্ষার অভাব। এ সকল দেশে শিক্ষা হার তুলনামূলক অনেক কম। যার কারণে রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা কম। যার ফলে রাজনৈতিক আধুকীককরণ হচ্ছে না।

২। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাঃ উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। সারা বছর কোন না কোন বিষয়কে ইস্যু করে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত থাকে যার কারণে রাজনৈতিক আধুনিকীকরণ হচ্ছে না।

৩। রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপঃ উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাজনীতি দূর্বল হওয়ায় সামরিক শাসনের কবলে মাঝে মাঝে পড়তে হয়। যার কারনে ঐ শাসনের বৈধতা থাকে এবং রাজনীতি ব্যবস্থা আরও দূর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে রাজনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয় না।

৪। শৃঙ্খলার অভাবঃ উন্নয়নশীল দেশে শৃঙ্খলার অভাব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। রাজনৈতিক এ শৃঙ্খলহীনতা রাজনৈতিক আধুনিকীকরণের অন্যতম বাধা।

৫। সরকার ও জনগণের যোগাযোগঃ উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকার এবং জনগণের মধ্রে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক দুরত্ব পরিলক্ষিত হয়। এরা এক অপরের উপর যেমন আস্থা অর্জন করতে পারেনা তেমনি একে অপরের উপর নির্ভরশীল হতে পারে না। কারণ রাজনৈতিক দল যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় যায় সেটা রাখতে ব্যর্থ হয় ফলে জনগণ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কে দুরত্ব বৃদ্ধি পায়।

পরিশেষে বলা যায়, উন্নয়নশীল দেশের উন্নত রাজনীতি ব্যবস্থা মূলত সে দেশের উন্নয়নকে আরও বেগবান করবে। এজন্য যে সকল বাধা আছে তা দূর করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সুবিধা গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাসমূহ লিখ

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সুবিধা, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা


ভূমিকা:- রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা নয়; বরং নাগরিকের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা এবং মানবিক জীবন যাপনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এই বিস্তৃত দায়িত্ব পালনের ধারণা থেকেই ‘কল্যাণমূলক রাষ্ট্র’ (Welfare State) ধারণার জন্ম। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে সরকারের প্রধান কর্তব্য হলো নাগরিকের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার এবং সর্বোপরি মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করা। আধুনিক বিশ্বে এই ধারণাটি উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সুবিধা গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাসমূহ লিখ

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ উন্নয়নের কাঠামো তৈরি করতে এবং দারিদ্র্য কমাতে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থার বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা, সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ভূমিকা অপরিসীম।


কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সুবিধা

১. সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে:

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সামাজিক নিরাপত্তার জাল বিস্তার। এই ব্যবস্থায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সহায়তা, খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজের দুর্বল শ্রেণিকে সহায়তা দেওয়া হয়।
এতে তারা আর্থিক দুরবস্থায় না পড়ে সমাজে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করে।

২. দারিদ্র্য হ্রাস করে:

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যে দেশ যত বেশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করে, সে দেশে দারিদ্র্যের হার তত কমে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে শিক্ষা-চিকিৎসা সাশ্রয়ী হওয়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক ভাতা এসবের ফলে মানুষের আয়-ব্যয় সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং দারিদ্র্য কমে।

৩. স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করে:

একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। সরকারি হাসপাতালে কম খরচে চিকিৎসা, বিনামূল্যে টিকা, মাতৃস্বাস্থ্য কর্মসূচি এসবই সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত করে। স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি পেলে মানুষের আয়ুষ্কালও বৃদ্ধি পায়।

৪. সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করে:

শিক্ষা হলো উন্নয়নের ভিত্তি। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সরকারি পর্যায়ে বিনামূল্যে বা স্বল্প খরচে শিক্ষা প্রদান করা হয়। বৃত্তি, উপবৃত্তি, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজে শিক্ষার বিস্তার ঘটে। ফলে শিক্ষিত জনশক্তি তৈরি হয়, যা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেয়।

৫. কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে:

রাষ্ট্র যখন অবকাঠামো, কৃষি, শিল্পায়ন ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করে তখন নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি মানেই জনগণের আয় বৃদ্ধি, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সরকার উদ্যোক্তা তৈরিতেও সহায়তা করে, যার ফলাফল দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

৬. সামাজিক বৈষম্য কমায়:

অসমতা সমাজে অশান্তি তৈরি করে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র করনীতি, ভর্তুকি, সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য হ্রাস করে। ফলে সমাজে সমতা ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

৭. মানবাধিকারের সুরক্ষা দেয়:

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা এসবই মানুষের মৌলিক অধিকার। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র এসব অধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে। এর ফলে নাগরিকের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা বাড়ে এবং রাষ্ট্রীয় ঐক্য শক্তিশালী হয়।

৮। দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা:

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অর্থনৈতিক মন্দার সময় নাগরিকদের দ্রুত সহায়তা প্রদান করে। যেমন খাদ্য ও নগদ সহায়তা, জরুরি চিকিৎসা।

৯। সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি:

বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং ভর্তুকির মাধ্যমে রাষ্ট্র নাগরিকদের মধ্যে সমবেদনা ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলে।


কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের গুরুত্ব

১. সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে:

দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং বৈষম্য কমে গেলে সমাজে অপরাধ, সন্ত্রাস, অস্থিতিশীলতা কমে যায়। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র মানুষকে সুযোগ দেয়, যা তাদের হতাশা কমায় এবং সামাজিক শান্তি আনে।

২. মানবসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখে:

সুস্থ, শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি হলো দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ করে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে, যা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে সহায়তা করে।

৩. গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে:

যে দেশে নাগরিকেরা মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে, সে দেশেই গণতন্ত্র টিকে থাকে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র মানুষের জীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, ফলে তারা রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত হয়।

৪. করদাতার দেশপ্রেম ও অংশগ্রহণ বাড়ায়:

যখন মানুষ দেখে যে তাদের করের অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় হচ্ছে, তখন কর প্রদানে তাদের আগ্রহ বাড়ে।
এতে রাষ্ট্রের আয় বৃদ্ধি পায় এবং উন্নয়ন আরও গতিশীল হয়।

৫. সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করে:

মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অর্থনৈতিক মন্দার সময় কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নাগরিকদের পাশে দাঁড়াতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য সহায়তা, নগদ ভাতা, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান মানুষের জীবন বাঁচায় এবং তাদের অর্থনৈতিক ধ্বংস থেকে রক্ষা করে।

৬। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে:

নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা অর্জন করে এবং রাজনীতি ও প্রশাসনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

৭। দেশের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়:

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষার প্রসার ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করে

৮। সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে:

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সকল নাগরিককে, বিশেষ করে প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় যুক্ত করে। এটি সাম্য ও ন্যায়বিচারের পরিবেশ তৈরি করে।

৯। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে:

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ ও উদ্ভাবনের মানসিকতা তৈরি করে, যা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা

১. দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য:

বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বৈষম্য রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় জরুরি:

হিজড়া, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, সুবিধাবঞ্চিত শিশু, দরিদ্র নারী এদের উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় সহায়তা ছাড়া অগ্রগতি সম্ভব নয়।
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে সমাজের মূলধারায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়।

৩. দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত্তি:

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র তাৎক্ষণিক সাহায্য নয়; বরং শিক্ষা-স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, দক্ষতা উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা সবকিছুর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করে।
এ ধরনের বিনিয়োগ ভবিষ্যতে রাষ্ট্রকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে।

৪. বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন:

একবিংশ শতাব্দী হলো জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির যুগ। এখানে টিকে থাকতে হলে দক্ষ, সুস্থ ও শিক্ষিত নাগরিক প্রয়োজন। সেই প্রেক্ষিতে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ছাড়া উন্নত জাতি হওয়া সম্ভব নয়।

৫. ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে প্রয়োজন:

সমাজের সকলে যদি সমান সুযোগ না পায়, তবে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব নয়।

৬। যুবসমাজের ক্ষমতায়ন:

শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র যুবসমাজকে দক্ষ ও আত্মনির্ভর করে তোলে।

৭। সামাজিক বৈষম্য ও বঞ্চনা হ্রাস:

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ সহায়তা এবং সুযোগ প্রদান করে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সমাজে সমতা ও ন্যায়ের পরিবেশ বজায় রাখে।


কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নিশ্চিত করে
সবার জন্য শিক্ষা
সবার জন্য চিকিৎসা
সবার জন্য কর্মসংস্থান
সবার জন্য ন্যায়বিচার
এর ফলে সমাজে সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র শুধু একটি রাজনৈতিক ধারণা নয়, বরং একটি মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে মানুষের জীবন, মর্যাদা ও নিরাপত্তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। আধুনিক সভ্য রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জন করতে হলে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা অপরিহার্য।
এ ধরনের রাষ্ট্র মানুষের উপর বিনিয়োগ করে, যার ফলাফল ভবিষ্যতে বহুগুণে ফিরে আসে সমাজ ও অর্থনীতির উন্নতির মাধ্যমে।
অতএব, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র শুধু রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়; এটি জাতির অগ্রগতির অন্যতম প্রধান শর্ত। সমাজে বৈষম্য দূর করে মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চাপসৃষ্টকারী গোষ্ঠী কারা। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি আলোচনা কর।

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কী ও কার্যাবলি লিখ

ভূমিকাঃ- বর্তমানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী একটি আলোচিত বিষয়। বর্তমান রাজনৈতিক স্বার্থকামী গোষ্ঠী অত্যন্ত প্রভাবশালী অঙ্গ হিসেবে পরিচিত। এসব গোষ্ঠী বিভিন্ন উপায়ে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

চাপসৃষ্টকারী গোষ্ঠী কারা। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি আলোচনা কর।


চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীঃ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে বুঝায় বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত এমন এক গোষ্ঠীকে যাদের কতিপয় সাধারণ স্বার্থ রয়েছে এবং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে সরকারি নীতিমালা প্রভাবিত করে সাধারণ লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন মনীষী বিভিন্নভাবে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর দু্ইটি সংজ্ঞা দেওয়া হলো-

ডেভিড ট্র‌ুম্যান এর মতে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হলো বহু ব্যক্তির সমষ্টি যা এক বা একাধিক অংশিদারী মনোভাব নিয়ে গঠিত।

সিগলার এর মতে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হলো এমন এক সংঘবদ্ধ সমষ্টি যা তার সদস্যবর্গকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি পদে আসীন করার চেষ্ঠা করে, সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্ঠা করে।

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলতে বোঝায় এমন এক সুসংগঠিত জনগোষ্ঠী যা সরকারি নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে।  চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা দখল নয় বরং নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করা।

চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলিসমূহ

চাপসৃষ্টিকারী স্বার্থ প্রত্যাশী গোষ্ঠী বিভিন্ন উপায়ে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। সরকারি সিদ্ধান্তকে নিজেদের অনুকুলে আনতে সচেষ্ট থাকে। বিশেষ গোষ্ঠীগত স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রভাব বিস্তার করা হলো চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর লক্ষ্য উদ্দেশ্য।চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি সম্পাদন করে। নিম্নে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর কার্যাবলি আলোচনা করা হলো-

১। জনমত গঠনঃ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী জনমত গঠনে সাহায্য করে জনগণকে তাদের পক্ষে আনার চেষ্ঠা করে।

২। সরকারের উপদেষ্টা স্বরুপ কার্যপালনঃ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী উপদেষ্টা স্বরুপ কাজ করে থাকে। তারা সরকারকে বিভিন্ন রকম উপদেশ দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে সাহায্য করে।

৩। সরকারের ত্রুটি বিচ্যুতি দূরীকরণঃ সরকারের ত্রুটি বিচ্যুতি দূরীকরণে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সহায়তা করে । সরকার যখন বিভিন্ন ভূল ভ্রান্তি করে  তখন এ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সেটা ত্রুটিমুক্ত করে।

৪। রাজনৈতিক দলকে সহায়তাঃ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কিন্তু রাজনৈতিক দল নয়। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক দলকে প্রভাবিত করে াদের স্বার্থ সিদ্ধি করে থাকে।

৫। নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তারকারীঃ সরকারি নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করে নায্য কাজ আদায় করা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর প্রধান কাজ। মন্ত্রী সভার কাছে এ চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বিভিন্ন অভিযোগ করে এবং মন্ত্রীসভা তা সমাধানের চেষ্ঠা করে।

বৈশিষ্ট্য: চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সদস্যরা একটি সাধারণ স্বার্থ বা লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সমন্বিতভাবে কাজ করে। গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমঝোতা থাকাই তাদের শক্তি ও প্রভাব বৃদ্ধির মূল কারণ।

পরিশেষে বলা যায় যে, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তারা সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নিজের স্বার্থ রক্ষায়ও সক্রিয়। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী উপরিউক্ত কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী মূলত গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির জ্য সরকারি নীতি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী? what is political sociology?

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী? আলোচ্য বিষয়সমূহ

ভূমিকাঃ- রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান হলো মূলত একটি মিশ্র প্রকৃতির বিজ্ঞান।সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সমন্বয়ে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান লাভ করে। এই দুই বিজ্ঞানের মধ্যে চলমান সংযোগ সম্পর্কের ফলে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আবির্ভাব হয়েছে। বিশ শতাব্দির পূর্ব থেকেই মানুষের জ্ঞান চর্চার অগ্রগতির ফলে সমাজবিজ্ঞানের শাখা সমূহ পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।আর এই শাখাগুলিকে । ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হয়। আর এই শাখাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের আবির্ভাব মূলত আধুনিককালে। যদিও এর আবির্ভাব আধুনিককালে তারপরও এর বিকাশ এখনও  বর্তমান।বর্তমানে বিশ্বের গতিশীল রাজনীতিতে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের নতুন নতুন ধারা সংযোজিত হচ্ছে যার ফলে মানুষের নিকট রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী


রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান (political sociology): সাধারণভাবে বলতে গেলে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে রাজনীতি নিয়ে আলোকপাত করা হয়, যেখানে রাজনীতির বিষয়বস্তুকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা না করে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়। সুতরাং রাজনৈতিক বিষয়াদি আলোচনার জন্য সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ধারার প্রয়োগ পদ্ধতিকেই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বলে।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান হলো ক্ষমতার অধ্যয়ন এবং সমাজ, রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক বিষয়ের মধ্যকার সম্পর্ক। রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যেখানে সমাজ, রাষ্ট্র, সামাজিক কাঠামো ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। অন্যভাবে বলা যায় রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সমাজ ও রাজনীতির পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের জনক ম্যাক্স ওয়েবার। তিনি ছাড়া বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা নিম্নরুপ-

উইলিয়াম সি মিশেল এর মতে-“রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীগণ যা করেন বা করেছেন বলে দাবি করেন তার সবকিছু নিয়েই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান।

অধ্যাপক টি বি বটোমোর বলেন political sociology is concerned with power in its social contest.

S. M. Lipset বলেন-“সমাজ, রাজনীতি, সমাজকাঠামো ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে যে বিজ্ঞান অধ্যয়ন করে তাই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান।”

theodore cap এর মতে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও শ্রেণী কাঠামোর সম্পর্কে পারস্পরিক অধ্যয়নকে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বলে।

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়সমূহ:

নিম্নে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো। যথা;
১. ক্ষমতার উৎস, প্রকৃতি ও বন্টন।
২. শ্রেণী ও সামাজিক স্তরবিন্যাস এবং এর প্রভাব।
৩. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ও মতাদর্শ।
৪. সামাজিক আন্দোলন ও নাগরিক সমাজ।
৫. রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক।
৬. গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র এবং অন্যান্য শাসনব্যবস্থার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।

সারসংক্ষেপ: পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান (political sociology) মূলত রাজনীতির বিষয়বস্তুকে রাজনৈতিক দিক দিয়ে না দেখে সামাজিক দিক বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। যেখানে সামাজিক অবস্থানটাই বেশি গুরুত্ব পায়। সুতরাং বলা যায়, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এমন একটি বিষয় যেখানে মানুষের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক এবং সামাজিক জীবনের রাজনৈতিক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। সামাজিক কাঠামোর মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতার অবস্থান, এর ব্যবহার এবং এর ফলাফল বিশ্লেষণ করাই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য। বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক জটিলতা এবং ক্ষমতার পরিবর্তনশীল প্রকৃতির আলোকে এই শাখাটির গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে।

আইন কী? আইন বলতে কি বুঝ? What is Law

আইন কী? আইন বলতে কি বুঝ?

(what is law?)

ভূমিকাঃ- আইন মানব সমাজের দর্শনস্বরুপ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি মৌল প্রত্যয় হলো আইন। প্রত্যকটি নাগরিক কম বেশি আইনের সাথে পরিচিত। প্রত্যক নাগরিকের সামাজিক জীবন থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে আইনের বন্ধন বিস্তৃত্ব। রাষ্ট্র হলো একটি আইনমূলক প্রতিষ্ঠান। আইন হলো সর্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশ। শুধু নাগরিক জীবনেই নয় রাজনৈতিক জীবনেও আইনের গুরুত্ব অপরিসীম।
আইন কী



আইনঃ আইন মানব সমাজের দর্পণ স্বরুপ। আইনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Low। Low শব্দটি টিউটনিক যা lag শব্দ থেকে ব্যুৎপত্তি লাভ করছে। lag শব্দের অর্থ হলো অপরিবর্তনীয়। অর্থাৎ উৎপত্তিগত অর্থে আইন হলো কতিপয় নিয়মকানুন বা বিধিবিধানের একত্র রুপ। সাধারণ ভাষায় রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত এবং বিচারকার্যে প্রয়োগযোগ্য সকল বিধিবিধান এর সমষ্টিই হলো আইন। রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনার জন্য যেসব নিয়ম কানুন তৈরী করা হয় এবং তা প্রয়োগের জন্য রাষ্ট্রের কর্তৃক প্রদত্ত সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃতি থাকে সে সকল রীতিনীতি বা বিধিবিধানের সমষ্টিকেই আইন বলা হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আইনকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তাদের প্রদত্ত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো-
অধ্যাপক হল্যান্ড এর মতে-“রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বলবৎকৃত 
 সকল বিধি নিয়ম যা মানুষের বাহ্যিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে তাই আইন।”
স্যামন্ডস এর মতে আইন বলতে রাষ্ট্র কর্তৃক ন্যায় শাসনের জন্য স্বীকৃত এবং প্রয়োগকৃত নীতির মূল অংশকে বুঝায়।
এরিস্টটল এর মতে-“আইন হলো পক্ষপাতহীন যুক্তি।”
হবসের মতে-“জনগণের ভবিষ্যৎ কার্যাবলি নির্দিষ্ট করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশ দিয়ে থাকেন তাই দেশের আইন।”
T.H. Green এর মতে-“যে নিয়ম দ্বারা জনগণের অধিকার ও কর্তব্যসমূহ রাষ্ট্রের অধীনে রক্ষিত ও সম্পাদিত হয় তাকে আইন বলা হয়।”

আইনের গুরুত্ব:
আইন ছাড়া কোনো রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি হলো আইন। এটি নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ করে এবং দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করে। আইন মানুষকে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার দেয় এবং অন্যায়, অপরাধ বা বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করে। আইন না থাকলে সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি হতো এবং ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এছাড়াও, আইন সকল নাগরিকের প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত করে এবং দুর্নীতি, বৈষম্য ও অনিয়ম প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিক সমাজে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখে। তাই একটি শান্তিপূর্ণ ও উন্নত রাষ্ট্র গঠনে আইনের গুরুত্ব অপরিসীম।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আইন হলো কতিপয় যুক্তি ও বিধিবদ্ধ এমন নিয়ামাবলি যার পিছনে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে এবং যা মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। আইন মানব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই আইনের প্রয়োগ রয়েছে। আইন দ্বারা একটি রাষ্ট্রের মানুষ বা নাগরিকদের সঠিক পথে পরিচালিত করা হয়। প্রতিটি রাষ্ট্র বা দেশসহ বিশ্ব সংসারে সকল দেশের সকল ক্ষেত্রেই আইনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আইনের মাধ্যমে সমাজে বা রাষ্ট্রে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকে।

রাজনৈতিক দল কি? রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি লিখ

রাজনৈতিক দল কি? রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি লিখ

ভূমিকাঃ রাষ্ট্র হলো একটি জাতির রক্ষা কবজ। কারণ রাষ্ট্র ছাড়া কোন জাতি টিকে থাকতে পারে না। রাজনৈতিক দল ছাড়া আবার কোন রাষ্ট্র সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে না। কারণ রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকে। কারণ রাজনৈতিক দল সবসময় চায় তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা লাভ করুক।

রাজনৈতিক দল


 এজন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দল তার সুবিধামত সরকার গঠন করতে চায়। এখানেই শেষ নই। রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে সুষ্ঠু সরকার গঠন করা হয় কারণ, রাজনীতি হলো গণতন্ত্রের প্রাণ আর এ গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্যই রাজনৈতিক দল কাজ করে যা সরকার গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


রাজনৈতিক দলঃ রাজনৈতিক দল সর্বদা রাষ্ট্রের সাথে সম্পৃক্ত। কারণ, তারা সর্বদা সুষ্ঠু সরকার গঠনের জন্য কাজ করে। রাজনৈতিক দল এমন একটি সংঘ যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করা হয়ে থাকে। রাজনৈতিক দল সব সময় জনগণের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্ঠা করে। কারণ এখানে জনগণ  ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর রাজনৈতিক দল হলো এমন একটি গোষ্ঠী যারা সবসময়বেধ উপায়ে ক্ষমতা লাভ করার চেষ্ঠা করে। কিন্তু যারা সামরিক হস্তক্ষেপ ক্ষমতায় আসে তাদের কোন রাজনৈতিক দেলের সাথে সামঞ্জস্যতা থাকে না।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাজনৈতিক দলকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হলো।

ম্যাকাইভারের মতে “রাজনৈতিক দল হলো এমন একটি দল যারা একটি নির্দিষ্ট কার‌্যনীতির ভিত্তিতে একত্রিত ও যুক্ত হতে হয় এবং যারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সরকার গঠনে আগ্রহী।”

মোট কথা রাজনৈতিক দল হলো এমন দল যারা সরকার গঠনে সবসময় কাজ করে।জনগনের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করে । গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে রাজনৈতিক দল আত্ম সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে।

রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি

১. নির্বাচনে অংশগ্রহণ: সরকার গঠনের লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা।

২. জনমত সৃষ্টি: নীতি, আদর্শ ও কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের সমর্থন অর্জন করা।

৩. জনগণের দাবি তুলে ধরা: জনগণের সমস্যা ও প্রয়োজনীয়তা সরকার বা প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করা।

৪. নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি: রাজনৈতিক শিক্ষা ও সচেতনতা তৈরি করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।

৫. সুশাসন নিশ্চিতকরণ: নির্বাচিত হলে দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা।

উপসংহার: উপরের আলোচনা হতে পরিশেষে বলা যায় যে,রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের আশায় স্বেচ্ছায় একক কোন ব্যক্তি কিংবা যৌথ প্রয়াসের মাধ্যমে কিছু নীতি আদর্শ ও কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ জনসমষ্টিকেই রাজনৈতিক দল বলে। রাজনৈতিক দল একটি গণতান্ত্রিক দেশে সব ধরনের উন্নয়নের জন্য কাজ করে থাকে। কারণ রাজনৈতিক দলই সরকার গঠন করার কাজে বেশি ভূমিকা পালন করে থাকে। রাজনৈতিক দলের কাজই হলো তাদের নিজের দলের লক্ষ উদ্দেশ্য গুলো জগণের মাঝে তুলে ধরা ও নিজের দলকে নির্দিষ্ট স্থানে পৌছে দেওয়া। জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনৈতিক দল সর্বদা জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে।

আসাবিয়া কী? রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে আসাবিয়ার গুরুত্ব

আসাবিয়া কী?

ভূমিকাঃ- আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম পথপ্রদর্শক হিসেবে ইবনে খালদুন পরিচিত। তিনি সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের অগ্রদূত এবং তার অনন্য অবদান হলো আসাবিয়া তত্ত্ব। আসাবিয়া শব্দটি সামাজিক সংহতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই তথ্যটি আবিষ্কার করেন সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুন। আসাবিয়া তত্ত্বে তিনি গোষ্ঠী সংহতির উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, যা সমাজ গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিসেবে বিবেচিত।

আসাবিয়া কী? রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে আসাবিয়ার গুরুত্ব


আসাবিয়া: ইবনে খালদুন তার আসাবিয়া তত্ত্বে বলেন যে, রাষ্ট্র পারিবারিক বন্ধনের সংহতির মাধ্যমে গঠিত হয়। রাষ্ট্র ঐতিহ্যের বন্ধন ও গোষ্ঠী সংহতি দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা রাষ্ট্র তৈরির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। এই সংহতিকেই ইবনে খালদুন আসাবিয়া তত্ত্ব বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি আরও বলেন যে, আসাবিয়া কোনো ধরনের শর্তযুক্ত নয় এটি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমাজে কার্যকর হতে পারে। এই তত্ত্বে তিনি বলেন, রাষ্ট্র তৈরির জন্য প্রয়োজন বিশ্বাস, ভ্রাতৃত্ববোধ, পরস্পরের প্রতি দয়ামায়া, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা। এসবের সমন্বিত রূপই হলো সংহতি বা আসাবিয়া।

ইবনে খালদুনের আসাবিয়া তত্ত্ব ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং এটি অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য একটি তত্ত্ব। কারণ, কোনো কিছু গঠনের জন্য সংহতি অপরিহার্য। মানুষ যখন একত্রিত হয় এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে, তখন তারা একটি সুসংগঠিত সমাজ কিংবা রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হয়।

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে  ইবনে খালদুনের আসাবিয়ার গুরুত্ব আলোচনা 

প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুন তার প্রবর্তিত তত্ত্বসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো আসাবিয়া তত্ত্ব। এই তত্ত্ব রাষ্ট্রের উৎপত্তি বিষয়ক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করে।রাষ্ট্রে উৎপত্তির ক্ষেত্রে ইবনে খালদুনের আসাবিয়ার গুরুত্ব নিম্নে আলোচনা করা হলো।

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে আসাবিয়ার গুরুত্বঃ-

ইবনে খালদুন তার আসাবিয়া তত্ত্বের মাধ্যমে এক সংস্কারমূলক ও আধুনিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেন, মানব জীবনে স্বাভাবিক প্রয়োজনের তাগিদে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতা থেকেই সমাজের উদ্ভব ঘটে। কিন্তু সমাজের সকল মানুষ যুক্তি ও বুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত হয় না, ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

এই বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য প্রয়োজন পারস্পরিক সহযোগিতা ও শৃঙ্খলা, যা আসে গোষ্ঠীগত সংহতি বা আসাবিয়ার মাধ্যমে। এই সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমেই রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। মানুষ একা রাষ্ট্র গঠন করতে পারে না, তাই দলবদ্ধভাবে কাজ করার মনোবৃত্তি থেকেই রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়ে ওঠে।

ইবনে খালদুনের মতে, রাষ্ট্র একটি প্রাকৃতিক ও প্রয়োজনভিত্তিক সৃষ্ট পদ্ধতি। সমাজে নিরাপত্তা, খাদ্য, বাসস্থান এবং পরস্পরের সহায়তার প্রয়োজন থেকেই রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এবং এই প্রক্রিয়ায় আসাবিয়া একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আসাবিয়ার অনুপস্থিতিতে সমাজ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রাষ্ট্রের পতন ঘটে। তাই ইবনে খালদুন বলেন, রাষ্ট্রের সৃষ্টি, স্থিতি এবং পতনের পেছনে আসাবিয়ার শক্তি বা দুর্বলতা প্রধান ভূমিকা পালন করে।

আসাবিয়া কেবল একটি তত্ত্ব নয়; বরং সমাজ গঠনের একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। ইবনে খালদুন যেভাবে সংহতির কথা বলেছেন, তা রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সংহতি ছাড়া সমাজ বা রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। সংহতির মাধ্যমেই রাষ্ট্রের সৃষ্টি সম্ভব। তাই রাষ্ট্রের উৎপত্তি তত্ত্বে ইবনে খালদুনের সংহতি বা আসাবিয়া তত্ত্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য একটি তত্ত্ব হিসেবে বিবেচিত।

নির্বাচকমন্ডলী কী? নির্বাচকমণ্ডলীর গুরুত্ব ও ভূমিকা

নির্বাচকমন্ডলী কী? নির্বাচকমণ্ডলীর ভূমিকা

ভূমিকাঃ- নির্বাচন হলো রাষ্ট্রের মানুওেষর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচনের মাধ্যমে একটি দেশের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। কারণ নির্বাচন একটি দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নির্বাচন পৃথিবীর সকল দেশেই হয়ে থাকে তবে রাজনৈতিক বা স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাদে। আমাদের মত কতকগুলি গণতান্ত্রিক দেশ রয়েছে যেখানে প্রতিটি দেশে গণতন্ত্রিক নির্বাচন হয়ে থাকে।আর এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণের স্বার্থরক্ষা হয়ে থাকে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে নির্বাচকমন্ডলী। কারণ নির্বাচকমন্ডলী নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্রহণ করে থাকে।

নির্বাচকমন্ডলী কী?


নির্বাচকমন্ডলীঃ  নির্বাচকমন্ডলী হলো এমন এক ধরনের গোষ্ঠী যারা সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকে। আর একটি নির্দিষট ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করে থাকে। কারণ, যারা নির্বাচকমন্ডলী তারা প্রত্যক্ষভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলে।বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক গণতান্ত্রিক দেশ রয়েছে প্রতিটি দেশের সরকার গঠনে নির্বাচকমন্ডলী কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ নিম্নে নির্বাচকমনন্ডলীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা প্রদান করা হলো-

প্রফেসর Lecky বলেন নির্বাচকমন্ডলী হলো এমন এক ধরনের গোষ্ঠী যারা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রতিনিধি মনোনীত করে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Appadorai বলেন “নির্বাচকমন্ডলী হলো এমন এক ধরনের শ্রেণি যারা প্রত্যক্ষ ভোট প্রদানের ক্ষমতা রাখে।”

এককথায় বলা যায় নির্বাচকমন্ডলী হচ্ছে সকল ভোটার বা নির্বাচকদের সমষ্টি। প্রত্যেক আধুনিক রাষ্ট্রে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে যারা আইন অনুযায়ী প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার রাখে। এ সকল ব্যক্তির সমাহারতেই নির্বাচকমন্ডলী বলে। মোট কথা নির্বাচকমন্ডলী হলো রাষ্ট্রের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যারা সরকারের মা্যেমে গণতন্ত্র নিশ্চিত করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। কারণ ভোটধিকার হলো রাজনৈতিক অধিকার। আর ভোট প্রদান ছাড়া কখনও একটি দেশে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা যায় না। সকল ভোটারের সর্বোচ্চ সম্মতিক্রমে ভোট প্রদানের মাধ্যমেই জনগণ তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা প্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকে। কারন নেতা ছাড়া কোন দেশ চলতে পারে না। গণতান্ত্রিক দেশে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনই গণতন্ত্র রক্ষার সর্বজনীন পদ্ধতি।

নির্বাচকমণ্ডলীর গুরুত্ব ও ভূমিকা:

১. গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা: নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়। তারা ভোটের মাধ্যমে সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পায়, যা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।

২. জনগণের মতামতের প্রতিফলন: নির্বাচকমণ্ডলী হচ্ছে জনগণের প্রতিনিধি। তাদের ভোটই বলে দেয় কে জনপ্রিয় এবং কে জনগণের আস্থাভাজন।

৩. ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা: জনগণ যখন ভোট দেয়, তারা প্রকৃতপক্ষে শাসকদের কার্যকলাপ মূল্যায়ন করে থাকে। এটি শাসকদের জবাবদিহিতামূলক করে তোলে।

৪. নীতি-নির্ধারণে প্রভাব: ভোটারদের পছন্দানুযায়ী সরকার গঠিত হয়। ফলে সরকারের নীতিনির্ধারণে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটে।

পরিশেষে বলা যায় যে, একটি গণতান্ত্রিক দেশে ভোট প্রদান করে নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচিত একটি ঐতিহ্যবাদী ঘটনা। কারণ, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে গ্রিসে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে  রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হতো। সেখান থেকে এ ভোট প্রদানের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে দেশ পরিচালনা করা হয় যা গণতন্ত্র রক্ষা করে । এজন্য নির্বাচকমন্ডলী বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই নির্বাচকমন্ডলীর ভূমিকা অপরিসীম।

গণতন্ত্র কী? What is democracy? গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব

গণতন্ত্র কী? গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব

ভূমিকাঃ- রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচিত প্রত্যয় গুলোর মধ্যে অন্যতম বিষয় হলো গণতন্ত্র। বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থায় গণতন্ত্রের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্ব জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে।গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণই সর্বভৌম ক্ষমতার চূড়ান্ত অধিকারী বলে গণ্য করা হয়। ফলে গণতন্ত্র কেবল একটি সামাজিক ব্যবস্থা অর্থনৈতিক আদর্শ বা রাজনৈতিক তত্ত্ব নয় বরং এটি হলো একটি জীবন যাপন পদ্ধতি যেখানে গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাচেতনা এবং আচার আচরণ লক্ষ্য করা যায়।

গণতন্ত্র কী?


গণতন্ত্রঃ গণতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ গণতন্ত্র যেকানে ডেমো শব্দের অর্থ জনগণ ও করটারিয়া শব্দের অর্থ ক্ষমতা বা সংস্থা। তাই গণতন্ত্র সামনের জনগণের সরকার। অন্যভাবে বলা হয় যে একটি রাষ্ট্রের যে কোন ধরনের সংস্থা ব্যবস্থাপনা মুষ্টিমেয় লোকের হাতে না দিয়ে রাষ্ট্রের জনগণের উপর ন্যাস্ত থাকে এবং রাষ্ট্রের জনগণের মত প্রকাশের সুযোগ থাকে তাকেই গণতন্ত্র বলা হয়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গণতন্ত্র এর বিভিন্ন  সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।

অধ্যাপক ম্যাকাইভার বলেন “গণতন্ত্র বলতে সংখ্যাগরিষ্ঠের বা অন্য কারো দ্বারা শাসন কার্য পরিচালিত হওয়ার পদ্ধতিকে বুঝায় না বরং এটা কে বা কারা করবে এবং মোটামুটিভাবে কোন উদ্দেশ্য শাসন করবে তা নির্ধারণ করার উপায়ই গণতন্ত্র।”

অধ্যাপক বার্কার এর মতে “গণতন্ত্র হলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত সরকার।”

লর্ড ব্রাইস তার আধুনিক গণতন্ত্র গ্রন্থে বলেন “গণতন্ত্র বলতে বুঝায় যে শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতা কোন শ্রেণির উপর ন্যস্ত না থেকে সমগ্র সমাজের সদস্যদের উপর ন্যস্ত থাকে  ।”

অধ্যাপক সিলির মতে “গণতন্ত্র বলতে বুঝায় এমন এক শাসন ব্যবস্থা যেকানে প্রত্যেকেরই অংশগ্রহণের অধীকার থাকে।”

কার্ল জে. ফ্রেডরিক বলেন “রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন আনয়নের একটি  স্বীকৃত উপায় হলো গণতন্ত্র।”

হেরোডোটাস এর মতে “গণতন্ত্র এমন সরকার ব্যবস্থা নির্দেশ করে যাতে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা ব্যাপকভাবে সমাজের সকল সদস্যদের উপর ন্যস্ত থাকে।’

গণতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য:

১. জনগণের সার্বভৌমত্ব

২. জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাসন

৩. বিনামূল্যে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন

৪. মত প্রকাশের স্বাধীনতা

৫. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা

৬. বহু দলে বিশ্বাস ও বিরোধীদলের অধিকার

৭. মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার রক্ষা

৮. সাংবিধানিক শাসন ও বিচারের স্বাধীনতা


গণতন্ত্রের গুরুত্ব:

১। গণতন্ত্র মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করে।

২। এটি নাগরিকদের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করে।

৩। জনগণ সরকার গঠন ও নীতিনির্ধারণে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে অংশ নিতে পারে।

৪। এটি নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা, মুক্ত গণমাধ্যম এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

৫। গণতন্ত্র শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের অন্যতম শর্ত।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, গণতন্ত্র হিসেবে তাকেই অভিহিত করা যায় যেকানে সরকার গঠিত ও পরিচালিত হয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা এবং সেই অধিকার প্রদান করে দেশের জনগণ। সুতরাং জনগণের শাসন ব্যবস্থাই গণতন্ত্র।

রাজনৈতিক উন্নয়ন কী? রাজনৈতিক উন্নয়নের নির্ধারক গুলো কী কী?

রাজনৈতিক উন্নয়ন কী?

ভূমিকাঃ- রাজনৈতিক উন্নয়ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জনগণকে সংগঠিত করে, সক্রিয় করে এবং তাদের অংশগ্রহণের প্রতি নির্দেশ করে। রাজনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি অর্থনৈতিক ধারনার সাথে সম্পৃক্ত।
রাজনৈতিক উন্নয়ন কী? রাজনৈতিক উন্নয়নের নির্ধারক গুলো কী কী?

রাজনৈতিক উন্নয়নঃ সাধারণভাবে, একটি সমাজ বা দেশের রাজনৈতিক অবস্থার অগ্রগতিকে রাজনৈতিক উন্নয়ন বলে। অন্যভাবে, পাশ্চাত্য উন্নয়ন মডেলের অনুরুপ প্রক্রিয়া তৃতীয় বিশ্বে প্রয়োগই হলো রাজনৈতিক উন্নয়ন।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান S.M. Lipset বলেন-“যে দেশে শিল্পায়নের মাত্রা অধিক, শহরাঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যা বেশি, শিক্ষার হার বেশি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে  সেখানে গণতন্ত্রের তথা রাজনৈতিক উন্নয়নের সম্ভবনা রয়েছে।”
 H.P Huntiagtonবলেন-“রাজনৈতিক উন্নয়ন বলতে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানিকীকরণকে বোঝায়।”
Dominic Harrod মতে-“রাজনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যবস্থার এমন একটি অবস্থা, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করে। যে অর্থনৈতিক উন্নয়নই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় তাই রাজনৈতিক উন্নয়ন।”
G.A, Almon ('Comittee on Comparative Politics of the social science research council') এর মতে-“রাজনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামোগত পৃথকীকরণ, ক্ষমতার প্রয়োজনীযতা এবং একত্রীকরণ ও খাপ খাওয়ানোর দক্ষতার এক নিরবিচ্ছিন্ন পারস্পরিক  ক্রিয়া  প্রতিক্রিয়ার প্রক্রিয়া বিশেষ।
এতএব রাজনৈতিক উন্নয়ন হলো রাজনীতির উন্নয়ন। যা একটি দেশ ও সমাজের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা একটি দেশের উন্নয়ন সে দেশের রাজনীতি ব্যভস্থার উপর নির্ভর করে তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে রাজনীতির উন্নয়ন প্রয়োজন।

রাজনৈতিক উন্নয়নের নির্ধারক গুলো কী কী?

রাজনৈতিক উন্নয়ন ধারণাটি মূলত রাজনীতির উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত। এটি একটি আপেক্ষিক ধারণা। রাজনৈতিক উন্নয়নের কতকগুলো নির্ধারক বা উপাদান  বিদ্যমান যা রাজনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।
রাজনৈতিক উন্নয়নের নির্ধারকসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১। জাতীয়তা ও জাতীবদ্ধতাঃ বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক যে মতাদর্শ বা চিন্তাধারা সেগুলো জাতীয়তা বিকাশের অন্তরায় হিসেবে দেখা যায়। যার পিছনে সনাতন বিশ্বাস কাজ করে। এক্ষেত্রে মানুষের মনে দুই শ্রেণির জাতীয়তাবাদ লক্ষ্য করা যায়।একটি দুর্বল জাতীয়তা ও অন্যটি এলিট শ্রেণির প্রবল জাতীয়তাবোধ। এই জাতীয়তা ও জাতীয়তাবোধ রাজনৈতিক উন্নয়নকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
২। আইনসভা ও রাজনীতিঃ রাজনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম নির্ধারক হলো আইনসভা ও রাজনীতি সংসদীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতা দলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দিতা তৈরী হয়। আর  এতে জনগণের অভাব অভিযোগ কিছুটা হলেও লাঘব হয়। জনগণ ভোটধিকারের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে। আর তাদের দায়দায়িত্ব অনেক বেশি।
৩। সেনাবাহিনীঃ একটি সেই দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হলে সেনাবাহিনীর কোন বিকল্প নেই।
৪। গোষ্ঠী ভূখন্ড সম্প্রদায়ঃ রাজনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম নির্ধারক হলো গোষ্ঠী ভূখন্ড সম্প্রদায় । এগুলি রাজনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে। একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডের নির্দিষ্ট গোষ্ঠী আলাদা রাজনীতি বিরাজ করে। যেমন পার্বত্য অঞ্চলে আলাদা জীবন যাত্রার মান তািই সেখানে আলাদা রাজনীতির উন্নয়ন বিরাজ করে।
৫। সর্বজনীন ভোটাধিকারঃ রাজনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম নির্ধারক হলো সর্বজনীন ভোটাধিকার। তৃতীয় বিশ্বে ভোট দেওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য শুধুমাত্র ১৮ বছর হলেই চলে। অন্য কোন যোগ্যতা দেথা হয় না। যেটি রাজনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬। সিভিল সার্ভিসঃ উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আমলাদের দক্ষ ও অদক্ষতার প্রশ্ন উঠে। তাই রাজনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এই সিভিল সার্ভিসকে ঢেলে সাজাতে হবে।
৭। জনমতঃ রাজনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম নির্ধারক হলো জনমত। কেননা জনমত ছাড়া কোনভাবে রাজনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই জনমত বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিশেষে বলা যায় যে, দেশের স্বার্থে ও দেশের মানুষের স্বার্থে রাজনৈতিক উন্নয়ন কাজ করে এবং রাজনৈতিক উন্নয়ন করতে হলে এর নির্ধারক সমুহের উপর জোর দিতে হবে।

রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কি বুঝ?

রাজনৈতিক ব্যবস্থা কি ?  রাজনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্ব লিখ

ভূমিকাঃ- রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য প্রত্যয় গুলোর মধ্য অন্যতম হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থা বা রাজনীতি। একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা দ্বারা সেই দেশ বা সমাজ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। আবার একটি দেশ বা সমাজের উন্নয়ন সেই দেশের রাজনীতি ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। যে দেশের রাজনীতি রাজনীতি ব্যবস্থা যত স্থিতিশীল ও শক্তিশালী হবে সে দেশ বা সমাজ তত বেশি উন্নতি লাভ করবে। তাই রাজনৈতিক ব্যবস্থা একটি দেশ বা সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কি বুঝ?


রাজনৈতিক ব্যবস্থাঃ সাধারণভাবে রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলতে বোঝায় একটি সমাজের সামগ্রিক ব্যবস্থা বিশ্লেষণকারী প্রক্রিয়া, যেখানে সেই সমাজের ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সামাজিক সংগঠন ইত্যাদির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা। একটি সমাজের রাজনীতি ব্যবস্থা মূলত ঐ সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে ।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি বিজ্ঞানীর সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।

সমাজতাত্ত্বিক ডেভিড ইস্টন (David Easton) রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন-“রাজনৈতিক ব্যবস্থা হলো এক পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থা যার মাধ্যমে মূল্যের বাধ্যতামূলক এবং কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দের কাজ সম্পন্ন করা হয়।”

সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) এর মতে-“রাজনৈতিক ব্যবস্থা হলো একটি জনগোষ্ঠী যা কোন নির্ধারিত ভূখন্ডে সফলতার সঙ্গে একচেটিয়া ভাবে বৈধ দৈহিক শক্তি প্রয়োগ করে।”

প্রফেসর রবার্ট ডাল (Prof. Robert Dhull) এর মতে-“একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা বলতে যেকোন মানব সম্পর্কের স্থায়ী কাঠামো বা পরিমাণ অন্তর্ভূক্ত করে ক্ষমতা, বিধি বা কর্তৃত্বকে বোঝায়।”

বিয়াব ও ওলম এর মতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি ব্যবস্থাই হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থা।

অ্যালমন্ড ও পাওয়েল এর মতে রাজনৈতিক ব্যবস্থা হলো সেই ব্যবস্থা যার মধ্যে সব ধরনের মিথস্ক্রিয়া বর্তমান। এসব মিথস্ক্রিয়ার দ্বারা বিধিসম্মত দৈহিক পীড়নের প্রয়োগের হুমকি প্রভাবিত হয়।

রাজনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্ব:

১. সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা: একটি কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা সমাজে আইন-শৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে।

২. উন্নয়নে সহায়তা: উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পিত রাজনৈতিক ব্যবস্থাই উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নে সহায়ক হয়।

৩. জনগণের অংশগ্রহণ: গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের মতামত, মত প্রকাশ ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে।

৪. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা কেমন, তা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।

৫. নীতিনির্ধারণ ও সম্পদ বণ্টন: রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় সম্পদ, সুযোগ ও ক্ষমতা বণ্টিত হয়।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক ব্যবস্থা কোন সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। যেখানে ঐ নির্দিষ্ট সমাজের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আইনগত প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করে।আর এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা কোন সমাজের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাই প্রভাবিত করেনা, বরং আন্তর্জাতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করে। সুতরাং রাজনৈতিক ব্যবস্থা একটি সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা সেই সমাজের কাঠামো ও পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে।তাই রাজনৈতিক ব্যবস্থা যত সুদৃঢ়, জবাবদিহিমূলক ও জনমুখী হবে, সেই সমাজ বা রাষ্ট্র ততই উন্নত, সুশাসিত ও স্থিতিশীল হবে।

ফ্যাসিবাদ কী? ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর

ফ্যাসিবাদ কী?

ভূমিকাঃ- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যে কয়েকটি মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্য ফ্যাসিবাদের মতবাদ অন্যতম। ফ্যাসিবাদ মতবাদ একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী মতবাদ।

ফ্যাসিবাদ কী? ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর

ফ্যাসিবাদঃ ফ্যাসিবাদের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Fascism শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Fascia থেকে এসেছে। এই শব্দটির অর্থ হলো এক বোঝা লাটির সাথে একটি কুঠার। সাধারণত ফ্যাসিবাদ একটি প্রসারিত কুঠার ফলক যা ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রতীক। Fasic শব্দটি ছিলো ঐক্য,সংহতি এবং কর্তৃত্বের প্রতীক। প্রাচীন রোমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতীকরুপে এক বোঝা লাঠির সাথে একটি কুঠার বাধা থাকত। সাধারনত শক্তিশালী কর্তৃত্ব বোঝাতে এটি ব্যবহৃত হত।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃবিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তিা নিম্নরুপ-

অধ্যাপক সেবাইনের মতে “ফ্যাসিবাদ হলো পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তা অনুসারে বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন ভাবধারার সমন্বয়।”

মরিস ক্রাসটন এর মতে “ফ্যাসিবাদে হেগেলের অধিবিদ্যামূলক চিন্তাধারা েএবং সরলের সক্রিয়তাবাদী মতবাদের সমন্বয় ঘটেছে।”

এতএব বলা যায় যে ফ্যসিবাদ হলো এমন একটি মতবাদ যা পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আইন কানুন তৈরী করে।

ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।

ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্যঃ তৎকালীন সময়ে ফ্যাসিবাদের প্রয়োজন অনেক বেশি পরিমাণে ছিলো। ফ্যাসিবাদের বিশেষ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো।
১। গণতন্ত্র বিরোধীঃ ফ্যাসিবাদ ছিলো গণতন্ত্রবিরোধী, এই শাসন ব্যবস্থা অনেকটা এক নায়কতন্ত্রের মতই।

২। ব্যক্তিগত স্বাধীনতাহীনঃ ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থায় কোন ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থাকবে না।

৩। ব্যক্তিগত মালিকানাঃ ফ্যাসিবাদে সম্পদের কোন ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না।

৪। স্বাতন্ত্র‌বাদের বিলোপঃ সম্পদ ও ক্ষমতা সবকিছুই রাষ্ট্র কেন্দ্রিক। স্বাতন্ত্র‌বাদ বলতে কোন জিনিস নেই ফ্যাসিবাদে।

৫। শ্রেণি বৈষম্যঃ ফ্যাসিবাদে শ্রেণি বৈষম্য বিদ্যমান।

৬। সমাজতন্ত্র বিরোধীঃ ফ্যাসিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য  হলো সমাজতন্ত্র বিরোধী। এই শাসন ব্যবস্থা সমাজতন্ত্রকে স্বীকার করে না।

৭। নারী স্বাধীনতা বিরোধীঃ ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্রে নারীর স্বাধীনতাকে স্বীকার করা হয় না।নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমান অধিকারের বিষয়টি ফ্যাসিবাদে উপেক্ষা করা হয়।

৮। এলিট  শাসনে বিশ্বাসীঃ ফ্যাসিবাদ রাষ্ট এলিট শাসনে বিশ্বাসী। তারা মনে করেন কিছু মানুষের জম্ম হয়েছে শাসন করার জন্য কিছু মানুষের সৃষ্টি হয়েছে শাসিত হওয়ার জন্য তারা এটি মনে করে।

৯। চরম জাতীয়তাবাদ: ফ্যাসিবাদী মতবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো চরম জাতীয়তাবাদ। এই মতবাদে নিজ জাতিকে শ্রেষ্ঠ ও অন্য জাতিগুলোকে নিকৃষ্ট মনে করা হয়।

১০। সামরিকীকরণ: ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে সামরিক বাহিনীকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই ধরনের রাষ্ট্রে যুদ্ধকে গৌরবজনক মনে করা হয় এবং জনগণকে সবসময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়।

১১। বিরোধী মত দমন: ফ্যাসিবাদী শাসনে ভিন্নমত সহ্য করা হয় না। যারা সরকারের বিরোধিতা করে, তাদের দমন করা হয়।

১২। একনায়কতান্ত্রিক নেতৃত্ব: ফ্যাসিবাদে একজন নেতাই সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হন। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং কোনো গণতান্ত্রিক পরামর্শ বা অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে না।

১৩। রাষ্ট্রের উপর ব্যক্তির অধীনতা: ফ্যাসিবাদে ব্যক্তির চেয়ে রাষ্ট্র বড়। নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের নিচে আনতে বাধ্য করা হয়।

১৪। আদর্শগত সহিংসতা : ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র নিজেদের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সহিংসতা, ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসকে বৈধভাবে ব্যবহার করে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ফ্যাসিবাদ মূলত একচেটিয়া শাসন ব্যবস্থা। সম্পদ ও ক্ষমতার উপরে শাসক একচেটিয়াভাবে আধিপাত্য বিস্তার করে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ- রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো রাষ্ট্র। অপরদিকে, সমাজবিজ্ঞান হলো এমন একটি বিজ্ঞান  যা সমাজের প্রতিষ্ঠান, সংঘ, সংস্থা, সামাজিক পরিবর্তন, গতিশীলতা, সামাজিক ও মানবিক সম্পর্ক, আচার-আচরণ, মূল্যবোধ ও সামাজিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে। সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমুহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রাষ্ট্র। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।


রাষ্টবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানরে মধ্যে সম্পর্ক

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান  সামাজিক বিজ্ঞানের দুটি পৃথক শাখা। মানুষ একাধারে যেমন  সামাজিক জীব তেমনি রাজনৈতিক জীব। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তা আলোচনা করা হলো-

১। পরিপূরক সম্পর্কঃ রাষ্টবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানরে মধ্যে পরিপূরক সম্পর্ক বিদ্যমান।সমাজবিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান অপরিপূ্র্ণ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় মানুষ ও রাষ্ট্র। সমাজতত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে বিভিন্ন কার্যাবলি সংক্রান্ত জ্ঞান সরবরাহ করে থাকে।

২। উৎপত্তিগত সম্পর্কঃ রাষ্টবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানরে মধ্যে উৎপত্তির দিক থেকে ঘনিষ্ঠতা বিদ্যমান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় মানুষ ও রাষ্ট্র। রাষ্ট্র প্রথম অবস্থায় সামাজিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত ছিলো। কালক্রমে তা পরিবর্তিত হয়ে রাষেট্র রুপ নেই।

৩। সমস্যায় সম-সূত্রতাঃ সামাজিক সমস্যা ও রাজনীতির মধ্যে সম-সূত্রতা বিদ্যমান। এদিক  থেকে সমাজবিজ্ঞান  ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান এর মধ্যে  ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।প্রচলিত অর্থে রাজনীতি ও সামাজিক সমস্যা প্রায় একই।

৪। নির্ভরশীল সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে নির্ভরশীল সম্পর্ক বিদ্যমান।সামাজিক বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সমাজতত্ত্ব লক্ষ করা যায়।

৫। অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সমাজতত্ত্ব থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়। সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান উৎপত্তি। রাজনৈতিক পরিবেশকে সামাজিক পরিবেশ থেকে পৃথক করা যায় না।

৬। সামাজিক কার্যকালাপঃ সামাজিক কার্যকালাপের ক্ষেত্রে  রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান এর মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। তারা উভয়েই কার্যকালাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

৭। রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজতত্ত্বের মূলভিত্তিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের দর্শনের মূল ভিত্তি ছিলো সমাজভিত্তিক জ্ঞান, রাজনৈতিক বিপ্লব , পরিবর্তন রাজনৈতিক দল, নির্বাচনমন্ডলী, স্বার্থগোষ্ঠী ইত্যাদি আধুনিক সমাজতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।

৮। রাজনৈতিক সামাজিককরণঃ সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সামাজিককরণ (socialization)। একজন মানুষ কিভাবে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে সামাজিকভাবে গড়ে ওঠে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সামাজিককরণ নিয়ে আলোচনা করে, অর্থাৎ কীভাবে একজন নাগরিক রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনায় গড়ে ওঠে, নাগরিকত্বের অধিকার-দায়িত্ব বুঝতে শেখে। এ ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সহায়তা করে।

৯। সামাজিক পরিবর্তন ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্পর্কঃ সমাজে যখন কোনো সামাজিক পরিবর্তন ঘটে তখন তার প্রভাব রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও পড়ে। যেমন, নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বা সংখ্যালঘুদের অধিকার আন্দোলন। এ কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান পরিবর্তনের অধ্যয়নে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।

১০। গবেষণা পদ্ধতির মিলঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান উভয়েই গবেষণাভিত্তিক শাস্ত্র। তারা পরিসংখ্যান, সাক্ষাৎকার, জরিপ, তুলনামূলক বিশ্লেষণ ইত্যাদি একই গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করেৃ।

পরিশেষে বলা যায় যে, মানব কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি। উভয় বিজ্ঞানই সমাজের মানুষের সুশৃঙ্খল জীবনধারা নিয়ে আলোচনা করে। সমাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়। রাষ্ট্র সম্পর্কিত জ্ঞান লাভের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মার্গানের তত্ত্বটি আলোচনা কর

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মার্গানের তত্ত্বটি আলোচনা কর

অথবা,রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত নৃবিজ্ঞানী মার্গানের মতবাদ আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ রাষ্ট্র হলো একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিকতার চরম ও চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হলো রাষ্ট্র। রাষ্ট্রে মধ্যে মানুষ নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারে। রাষ্ট্রে উপাদান হলো মানুষ। রাষ্ট্র  উৎপত্তি একদিনে হয় নি। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন মতবাদ ব্যক্ত করেছেন।
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মার্গানের তত্ত্বটি আলোচনা কর


রাষ্ট্রে উৎপত্তি সংক্রান্ত মর্গানের মতবাদঃ নৃবিজ্ঞানী মর্গান রাষ্ট্র উৎপত্তি সংক্রান্ত তথ্যর মূল কথা হলো আদিম সমাজে মানুষ প্রথম অবস্থায় সহজ সরল ও স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু ক্রমান্বয়ে কৃষিকাজ শুরু করে।তারপর যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করে।বন্য প্রাণী শিকার বাদ দিয়ে  তারা গৃহপালিত পশু পালন শুরু করে। এরপর নগরকেন্দ্রিক জীবনযাপন করে তথন কেউ উৎপাদক শ্রেণি, কেউ বণিক শ্রেণি, কেউ সৈনিক শ্রেণি সৃষ্টি হয়। এ শ্রেণি বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ার পর বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হয় যার ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তখন এ অবস্থার পরিবর্তন করার জন্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা সমানভাবে ভাগ করার জন্য রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে।
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ অনেকটায় শ্রেণি সংগ্রাম এর সাথে সম্পর্কিত । কেননা মর্গানের মতে আদিম সাম্যাবদী সমাজে ছিলনা ব্যক্তিগত মালিক, ছিলনা  একক বিবাহ, 
ছিলনা বিবাহ ভিত্তিক পরিবার জীবন। মর্গান আরও বলেন রাষ্ট্র সৃষ্টিতে যেসব উপাদানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো নিম্নরুপ-
  • ফসল উৎপাদন
  • ব্যক্তিগত মালিকানা
  • সামাজিক শ্রেণির উদ্ভব।
ফসল উৎপাদনঃ কৃষিকাজ করার ফলে ফসল উৎপাদন হয় তখন মানুষ যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে । তখনই ব্যক্তিগত মালিকানার সূত্রপাত হয়।
ব্যক্তিগত মালিকানাঃ ব্যক্তিগত মালিকানার সৃষ্টির ফলে সমাজে শ্রেণি ও সম্পদের অসম াবন্যাস সৃষ্টি হয়। যারা বেশি সম্পদ আরোহণ করে তারা একভাগে ধনীক ব্যক্তি অন্যদিকে গরীব শ্রেণি।
সামাজিক শ্রেণির উদ্ভবঃ এই সামাজিক শ্রেণির উদ্ভবের জন্য তারা একসময় কর্তৃত্ব বিস্তার লাভ করা শুরু করে ও শাসন করা শুরু করে।এভাবে ক্রমান্বেয়ে রাষ্ট্রে উৎপত্তি হয়।
সমালোচনাঃ মর্গান যতই নিখুতভাবে রাষ্ট্রে উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ আলোচনা করুক না কেন তার এই মতবাদ সমালোচনার উদ্ধে নয়। সমালোচনা নিম্নরুপ-
১। অস্পষ্টতাঃ মর্গানের মতবাদে অনেক অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা যায়।কারণ তিনি আদিম সমাজ কিভাবে উৎপত্তি হয়েছিল, কৃষির ধারণা থেকে এলো, মানুষ কিভাবে সংঘবদ্ধভাবে বসবাস শুরু করল তার নির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্য পাওয়া যায়নি।
২। শ্রেণিবৈষম্যঃ শ্রেণি বৈষম্য থেকে নাকি রাষ্ট্রে উৎপত্তি কিন্তু এটা কোন গ্রহণযোগ্য সংঙ্গা নয়। কারণ রাষ্ট্র হলো একটি শান্তির প্রতিষ্ঠান। এ শান্তির প্রতিষ্ঠান তো কোন বৈষম্য থেকে তৈরি হতে পারে না। কারণ সকলের একত্রে সমঝোতার মাধ্যমে রাষ্ট্রের উৎপত্তি।
৩। বণিক ও সৈনিক শ্রেণিঃ কৃষক শ্রেণি না হয় কৃষিকাজ করে উৎপাদক শ্রেনিতে পরিণত হয়েছিল তবে বণিক শ্রেণি, সৈনিক শ্রেণির ধারণা কোথা থেকে আসলো এই বিষয়ে মর্গান মতবাদে কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।

এতএব পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্র উৎপত্তি সংক্রান্ত মর্গানের যতগুলো মতবাদ আছে সবগুলো মতবাদ বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় রাষ্ট্র কোন অনাকাঙ্খিত ফল নয়। রাষ্ট্র ধীরে ধীরে অনেক সময় পেরিয়ে অনেক চরাই -উৎরায় করে সুসংবদ্ধ অবস্থা লাভ করে।

কল্যাণ রাষ্ট্র বা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র কী? কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ

কল্যাণ রাষ্ট্র বা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র কী?  কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ


ভূমিকাঃ- কল্যাণ রাষ্ট্র সমাজবিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা। সুস্থ রাজনীতি প্রতিষ্ঠা ও জনকল্যাণের জন্য কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কল্যাণরাষ্ট্র জনকল্যাণমূলক কাজ করে থাকে। কল্যাণরাষ্ট্র ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা করেন না ও ব্যক্তির অধিকার সংরক্ষণ করে না। আধুনিক যুগে কল্যাণ রাষ্ট্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
কল্যাণ রাষ্ট্র কী? কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কী?  জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র কী?


কল্যাণ রাষ্ট্র/কল্যাণমূলক রাষ্ট্রঃ কল্যাণ রাষ্ট্র (welfare state) সরকারের একটি ধারণা, যেখানে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণ রক্ষা ও প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কল্যাণ রাষ্ট্র বলতে এমন রাষ্ট্রকে বোঝায় যে রাষ্ট্র সামাজিক কল্যাণ সাধন করে। এক কথায় জনকল্যাণে নিয়োজিত রাষ্ট্রই হলো কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। জনসাধারণের কল্যাণের জন্য যে রাষ্ট্র কাজ করে তাকেই কল্যাণরাষ্ট্র বলে। জনকল্যাণ রাষ্ট্র এমন একটি রাষ্ট্র যা ব্যক্তি স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রেখে জনসেবামূলক কাজ করে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা কল্যাণরাষ্ট্রকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তাদের প্রদত্ত কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো-
অধ্যাপক হার্বার্ট লেম্যান (Herbert Lchman) বলেন-“যে রাষ্ট্রে নাগরিকের ব্যক্তিক্ষতা পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে এবং তাদের প্রতিভার সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় সে রাষ্ট্রকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলে।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্লেটো (Plato) বলেন- “জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হলো এমন একটি রাষ্ট্র যার উদ্দেশ্য হলো সকল মানুষের মাঝে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা।”
টি ডব্লিউ কেন্ট (T.W Kent) এর মতে-“কল্যাণ রাষ্ট্র এমন একটি রাষ্ট্র যা নাগরিকদের জন্য ব্যাপক সমাজ সেবার ব্যবস্থা করে থাকে।”
আর. এম টিটমাসের মতে-“কল্যাণমূলক রাষ্ট্র  হচ্ছে এমন রাষ্ট্র যা জনগণের সার্বিক কল্যাণের দায়িত্বভার গ্রহণ করে থাকে।”
অর্থনীতিবীদ এ. সি. পিগু (A.C. Pigo) বলেন-“যে রাষ্ট্র নাগরিকদের আর্থিক সন্তুষ্টি বিধানের জন্য চেষ্টা করে তাকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলে।”
Austin Ranney বলেন-“পূর্ণ সনাতন ও পূর্ণ ব্যক্তি স্বাতন্ত্র‌্যবাদের মধ্যবর্তী স্থানই হলো জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জি. ডি. এইচ কোন এর মতে-“কল্যাণরাষ্ট্র হচ্ছে এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা যা প্রত্যেক নাগরিকের নুন্যতম জীবনযাত্রার মান এবং অধিকারের সুযোগ সৃষ্টি করে।”

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

১। জনকল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা: কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। রাষ্ট্র জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে থাকে এবং তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হয়।

২। সমাজসেবামূলক রাষ্ট্র: এই ধরনের রাষ্ট্র নাগরিকদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, বাসস্থান, খাদ্য, পানীয় জল, কর্মসংস্থান প্রভৃতি সামাজিক সেবা নিশ্চিত করে।

৩। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা: কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য কাজ করে। অর্থ ও সম্পদের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা হয়।

৪। বিচার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা: কল্যাণরাষ্ট্র সকলের জন্য সমান আইন এবং বিচার নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা হয়।

৫। সর্বজনীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা: কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়, যাতে সকল নাগরিক এই সেবা উপভোগ করতে পারে।

৬। বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূরীকরণ: এই ধরনের রাষ্ট্র বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দরিদ্র জনগণের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে।

৭। নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ: ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, নিরাপত্তা, ও সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত রাখে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।

৮। রাষ্ট্র কর্তৃক পরিকল্পিত উন্নয়ন: কল্যাণমূলক রাষ্ট্র দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করে।

৯। নারী ও শিশুকল্যাণে গুরুত্বারোপ: নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষা ও কল্যাণে বিশেষভাবে কাজ করে কল্যাণরাষ্ট্র। এটি শিশু শ্রম, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে উদ্যোগ গ্রহণ করে।

১০। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা: কল্যাণমূলক রাষ্ট্র শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধ, সহমর্মিতা, ন্যায্যতা ও নৈতিকতা চর্চায়ও গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
১১। ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষাঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম পরিবার হলো ব্যক্তি স্বাধীনতা সংরক্ষণ। রাষ্ট্র জনকল্যাণের সাথে ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। এ রাষ্ট্র ব্যক্তি স্বাধীনতা স্বকীয়তা রক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথকে উন্নত করে।

১২। জীবনযাত্রার উন্নয়নঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম পরিসর হল জনগণের জীবনযাত্রার মানের নিশ্চয়তাবিধান। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের্র জনগণের রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে।

১৩। চিত্তবিনোদনের অভাবঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা । চিত্তবিনোদন মানুষকে কর্মের প্রতি উৎসাহ যোগায়। কর্মময় জীবনের ফাঁকে মানুষ চিত্তবিনোদনের সুযোগ খোঁজে।

১৪। সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান: অসহায়, বিধবা, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী এবং বেকার জনগণের জন্য বিভিন্ন ভাতা ও সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। এটি সমাজে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করে।


উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হলো এমন একটি রাষ্ট্র যা বহিৃস্বাধীনতা অক্ষুন্ন রেখে জনসেবামূলক কাজের দ্বারা জনকল্যাণ নিশ্চিত করে। কল্যাণরাষ্ট্র মানব কল্যাণে নিয়োজিত থাকে। নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা দ্বারা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র তার দায়িত্ব শাসন করে। এককথায় কল্যাণ রাষ্ট্রের কাজই হলো জনকল্যাণমূলক কাজ করা। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সর্বদা রাষ্ট্রের জনগণের নিয়ে চিন্তা করে।