গণতন্ত্র কী? What is democracy?
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচিত প্রত্যয় গুলোর মধ্যে অন্যতম বিষয় হলো গণতন্ত্র। বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থায় গণতন্ত্রের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্ব জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে।গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণই সর্বভৌম ক্ষমতার চূড়ান্ত অধিকারী বলে গণ্য করা হয়। ফলে গণতন্ত্র কেবল একটি সামাজিক ব্যবস্থা অর্থনৈতিক আদর্শ বা রাজনৈতিক তত্ত্ব নয় বরং এটি হলো একটি জীবন যাপন পদ্ধতি যেখানে গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাচেতনা এবং আচার আচরণ লক্ষ্য করা যায়।
গণতন্ত্রঃ গণতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ গণতন্ত্র যেকানে ডেমো শব্দের অর্থ জনগণ ও করটারিয়া শব্দের অর্থ ক্ষমতা বা সংস্থা। তাই গণতন্ত্র সামনের জনগণের সরকার। অন্যভাবে বলা হয় যে একটি রাষ্ট্রের যে কোন ধরনের সংস্থা ব্যবস্থাপনা মুষ্টিমেয় লোকের হাতে না দিয়ে রাষ্ট্রের জনগণের উপর ন্যাস্ত থাকে এবং রাষ্ট্রের জনগণের মত প্রকাশের সুযোগ থাকে তাকেই গণতন্ত্র বলা হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গণতন্ত্র এর বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।
অধ্যাপক ম্যাকাইভার বলেন “গণতন্ত্র বলতে সংখ্যাগরিষ্ঠের বা অন্য কারো দ্বারা শাসন কার্য পরিচালিত হওয়ার পদ্ধতিকে বুঝায় না বরং এটা কে বা কারা করবে এবং মোটামুটিভাবে কোন উদ্দেশ্য শাসন করবে তা নির্ধারণ করার উপায়ই গণতন্ত্র।”
অধ্যাপক বার্কার এর মতে “গণতন্ত্র হলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত সরকার।”
লর্ড ব্রাইস তার আধুনিক গণতন্ত্র গ্রন্থে বলেন “গণতন্ত্র বলতে বুঝায় যে শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতা কোন শ্রেণির উপর ন্যস্ত না থেকে সমগ্র সমাজের সদস্যদের উপর ন্যস্ত থাকে ।”
অধ্যাপক সিলির মতে “গণতন্ত্র এমন এক শাসন ব্যবস্থা যেকানে প্রত্যেকেরই অংশগ্রহণের অধীকার আছে।”
কার্ল জে. ফ্রেডরিক বলেন “রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন আনয়নের একটি স্বীকৃত উপায় হলো গণতন্ত্র।”
হেরোডোটাস এর মতে “গণতন্ত্র এমন সরকার ব্যবস্থা নির্দেশ করে যাতে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা ব্যাপকভাবে সমাজের সকল সদস্যদের উপর ন্যস্ত থাকে।’
পরিশেষে বলা যায় যে, গণতন্ত্র হিসেবে তাকেই অভিহিত করা যায় যেকানে সরকার গঠিত ও পরিচালিত হয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা এবং সেই অধিকার প্রদান করে জনগণ। সুতরাং জনগণের শাসন ব্যবস্থাই গণতন্ত্র।