Showing posts with label সামাজিক সমস্যাসমূহ. Show all posts
Showing posts with label সামাজিক সমস্যাসমূহ. Show all posts

উন্নয়নের কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা সমূহ আলোচনা কর।

বাংলাদেশের উন্নয়নের কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা সমুহ আলোচনা কর।


ভূমিকাঃ- উন্নয়ন একটি ব্যাপক শব্দ যা অন্তর্ভুক্ত করে জীবনের সর্বক্ষেত্রে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তন যা অবিচ্ছেদ্যভাবে পরস্পরের সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে জড়িত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি ভীষণ গুরুত্ব লাভ করে। বর্তমান প্রায় সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। কোন দেশের সাফল্যের প্রথম শর্ত হচ্ছে তার সার্বিক দিক থেকে উন্নয়ন করা। তবে এ উন্নয়ন কাঠামোই অনেক সময় অনেক প্রতিবন্ধকতা দেখা যায় যার ফলে উন্নয়ন ব্যহত হয়।

উন্নয়নের কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা সমূহ আলোচনা কর।


উন্নয়নের কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা সমূহ

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ এদেশের উন্নয়নের বহু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে নিম্নে উন্নয়নের কাঠামোগত প্রতিবন্ধী কত সমুহ উল্লেখ করা হলো।

১। সামাজিক সমস্যাঃ বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত। একটি হলো উচ্চ শ্রেণী আরেকটি হলো সাধারণ শ্রেণি। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। তারা অতি কষ্টে জীবন যাপন করে। নিম্ন শ্রেণি মোটামুটি ভালো আবার রাজনীতির পালাবদলে কোন কোন ব্যক্তি লুটপাট, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি ধনী শ্রেণিতে পরিণত হচ্ছে। এটা দেশের সুষম উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতি বাধাস্বরূপ যা উন্নয়ন কাঠামোর একটি বড় সমস্যা।

২। অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ দেশে অর্থ দুর্নীতি ও পরিচালনা ব্যায়ের অভাবে বড় বড় শিল্প-কারখানা বন্ধ। সকল ক্ষেত্রেই প্রচন্ড দুর্নীতি। রাতারাতি এসব শ্রেণি চাঁদাবাজি ঘুষ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে ধনী হচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়সহ, মেডিকেল কলেজের প্রশ্ন জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে। কেবল গার্মেন্টস সেক্টর, বেসরকারি ব্যাংক, বিদেশে পাড়ি জমানো বাঙালিরা টাকা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল রাখছে। দেশে বেকারত্ব তীব্র। তাছাড়া অন্য সব আর্থিক সমস্যা দেশকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ফলে উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। 

৩। জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠার অভাবঃ জাতীয় সংহতি হলো ধর্ম, বর্ণ, আঞ্চলিকতা ভেদে দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার কৌশল। বাংলাদেশের জনগণ বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও শ্রেণীতে বিভক্ত।দেশের রাজনৈতিক প্রশ্ন কোন মৌলিক ঐক্যমত নেই। এজন্য দেশে জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠার সমস্যা রয়ে গেছে। এটা যতদিন থাকবে ততদিন জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। এটা উন্নয়নের সমস্যাকে পুষে রাখবে যা দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করবে।

৪। জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সমস্যাঃ এটি একটি দেশের উন্নয়নের বড় সমস্যা। দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও সন্ত্রাস জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সবচেয়ে বড় সমস্যা। দুর্নীতি করে, সন্ত্রাসী করে,মাদকদ্রব্য পাচার করে, চোরাচালান করে এক ধরনের লোক রাতারাতি বড়লোক হচ্ছে অপরদিকে দরিদ্র মানুষ দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। এটা উন্নয়নের বড় একটি সমস্যা।

৫। অতি দরিদ্রতা দূরীকরণের অভাবঃ এদেশের উন্নয়নের একটি বড় বাধা হলো অতি দরিদ্রতা দূরীকরণ। এ দেশে বহু বেশি-বিদেশি এনজিও এ অতি দরিদ্রতা দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের সীমাহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ঘুষ গ্রহণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভর্তি বাণিজ্য দেশকে দারিদ্র্য চরম পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতা যত তাড়াতাড়ি রোধ করা যায় ততই মঙ্গল তা না হলে এটা উন্নয়নের একটি স্থায়ী সমস্যা হিসেবে বিরাজমান হয়ে থাকবে। 

৬। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাধাঃ বাংলাদেশে ব্যাপক দুর্নীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন একটি বড় বাধা। যার কারনে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ কমে যাচ্ছে ও উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। 

৭। দলীয়করণঃ দলীয়করণ উন্নয়নের একটি বড় সমস্যা।কারন, সব সরকার ক্ষমতায় এসে একে অন্যের কর্মসূচি বাতিল করে নতুন পদ্ধতি চালু করে এর ফলে বেশি অর্থ নষ্ট হয় যা উন্নয়নের দিক হতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও উন্নয়নে বাধা হয়ে থাকে।

৮। বৈদেশিক লোনের সহজলভ্যতার অভাব ও কঠিন শর্তঃ উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক লোনের বিকল্প নেই। কিন্তু কড়া সুদ ও কঠিন শর্তের জন্য তেমন লোন পাওয়া যায় না যা উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে।

৯। সামাজিক মূল্যবোধের অভাবঃ সর্ব শ্রেণীর লোক অর্থ উপার্জনে বৈধ-অবৈধ যেকোনো উপায় গ্রহণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ফলে দুর্নীতি বেড়ে যায় পাশাপাশি সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে যার ফলে উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

১০। রাজনৈতিক মূল্যবোধের অভাবঃ রাজনৈতিক মূল্যবোধের অভাবে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। একটি বড় সমস্যা। একটি দেশের উন্নয়ন কাঠামোতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বা মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দিলে দেশের উন্নয়নে কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

১১। জনসংখ্যা রোধ করায় অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাঃ ব্যাপক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অথচ এর রোধ করার কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বেকারত্বসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা একটি দেশের জন্য হুমকি স্বরুপ। অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেশের উন্নয়নে বাধা ।

১২। পরিচ্ছন্ন পরিবেশের অভাবঃ বাংলাদেশের উন্নয়নের আরেকটি সমস্যা হলো পরিচ্ছন্ন পরিবেশের অভাব।গাড়ির কালো ধোঁয়া, কল-কারখানার বর্জ্য প্রভৃতি প্রস্তুতির কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এর ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

১৩। টেকসই উন্নয়নের অভাবঃ টেকসই উন্নয়ন না হওয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পরিকল্পিত নগরায়নের অভাব, পরিচ্ছন্ন পরিবেশের অভাব, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ অভাবের ফলে টেকসই উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে যার ফলে উন্নয়নও ব্যাহত হচ্ছে। 

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে বাংলাদেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টিকারী বিভিন্ন প্রতিবন্ধীকতা সমাধান করতে পারলে অতি দূরত্বই এদেশের উন্নয়ন এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের কারণ ও প্রভাব আলোচনা কর

বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের কারণ ও প্রভাব আলোচনা কর 

ভূমিকাঃ- মানুষ জীবনের প্রয়োজনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে নতুনভাবে বসবাস করলেই স্থানান্তর গমন হয়। মানব সমাজে এটি একটি অতি সাধারণ প্রবণতা। বিশেষ করে অনুন্নত সমাজ থেকে অপেক্ষাকৃত উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় মানুষ স্থানান্তর গমনে উৎসাহিত হয়। যেহেতু বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত তাই এমন অবস্থা হতে পরিত্রাণ পেতে গড়ে ওঠে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর গমনের প্রবণতা।

গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের কারণ ও প্রভাব


বাংলাদেশের গ্রাম হতে শহরে স্থান্তরের কারণ

১। বেকারত্ব: বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের অন্যতম কারণ বেকারত্ব। মানুষের তুলনায় যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ শহরের দিকে কর্মসংস্থানের আশায় স্থানান্তরিত হয়ে থাকে।

২। ব্যবসা বাণিজ্য: বাংলাদেশে গ্রামীণ এলাকায় অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। ফলে গ্রামের ধনী শ্রেণীর লোকজন বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যর জন্য শহরে স্থানান্তরিত হয়।

৩। দারিদ্র্য: এদেশের গ্রাম এলাকায় অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র তারা দুবেলা দুমুঠো অন্যের জোগাড় করতে পারে না। এসব দরিদ্র জনগোষ্ঠী উন্নতম জীবন ধারণের আশায় নগরে স্থানান্তরিত হয় 

৪। ভূমিহীনতা: বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় জনসংখ্যা যতই বাড়ছে ভূমি মানুষের সম্পর্কের অনুপাত ততই কমছে।ফলে ক্রমবর্ধমান হারে ভূমিহীনদের সংখ্যা বাড়ছে। তাই উপায় না পেয়ে তারা শহরের দিকে ধাবিত হয় ফলে শহরে স্থানান্তর বাড়ছে।

৫। নগরায়ন ও শিল্পায়নঃ নগরায়ন ও শিল্পায়ন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থানান্তর। বিশেষ করে যা গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রামীণ বেকার ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী নতুন কর্মসংস্থানের আশায় তাই শহরে স্থানান্তরিত হয়।

৬। যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থাঃ বাংলাদেশ গ্রামীণ এলাকায় রাস্তাঘাট তথা যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ অনুন্নত। অপরদিকে শহর এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। ফলে শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবনযাত্রা প্রভৃতি নগরে অনেকটা সুবিধাজনক ও আরামদায়ক। এ কারণে মানুষ গ্রাম হতে শহরে  উন্নত সুবিধা লাভের আশায় নগরমুখী হচ্ছে ফলে নগরায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

৭। শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাঃ বাংলাদেশের গ্রাম এলাকায় শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত অনুন্নত।  অন্যদিকে শহর এলাকায় শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা অনেক উন্নত। যার কারনে গ্রামীণ লোকজন উন্নত শিক্ষা ও চিকিৎসা এবং বেকারত্ব দূর করতে শহরে স্থানান্তরিত হচ্ছে।

৮। প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় না। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার এবং পরিমাণ অনেক বেশি। বস্তুত বাংলাদেশের বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভাঙ্গন, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, , খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে যার জন্য মানুষ গ্রাম থেকে শহরে অভিগমন করে।

বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের প্রভাব/ফলাফল 

১। জনসংখ্যা কাঠামো পরিবর্তনঃ গ্রাম ছেড়ে যখন মানুষ শহরে স্থানান্তরিত হয় তখন জনসংখ্যা কাঠামোতে বিশাল পরিবর্তন দেখা দেয়। কারণ গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের ফলে শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়, গড় বয়স,  স্ত্রী-পুরুষ ভেদে জনসংখ্যার পরিমাণ প্রভৃতিতে পরিবর্তন দেখা দেয়। এমনকি বস্তির মত জন জীবনও দেখা যায়। 

২। সমাজকাঠামোতে পরিবর্তনঃ গ্রাম ছেড়ে শহরে স্থানান্তরের ফলে শহরে সমাজকাঠামোতে পরিবর্তন দেখা যায়।কারণ গ্রাম থেকে আসা মানুষ শহরে বিভিন্ন শ্রেণী, গোষ্ঠী বা পেশাজীবীদের সাথে যুক্ত হয় এবং এর ফলে ঐসব গোষ্ঠীতে সামাজিক সম্পর্ক প্রভৃতিতে পরিবর্তন আসে বা সম্পর্কের পরিধি বেড়ে যায়। ফলে সমাজ কাঠামোয় দেখা দেয় রদবদল।

৩। বস্তির সৃষ্টিঃ বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের ফলে শহরের আবাসিক এলাকায় বসবাস চরম আকার ধারণ করে। সাধারণত গ্রাম থেকে যারা শহরে স্থানান্তরিত হয় তাদের অধিকাংশই দারিদ্র। যার কারনে তারা অধিক মূল্যর আবাসস্থলে থাকতে পারে না। এজন্য তারা নিম্নমান সম্পন্ন বাসস্থানে বসবাস করে এমনকি বস্তিতেও অনেকের বসবাস করতে হয়। এভাবে শহরে অসংখ্য বস্তির সৃষ্টি হয়।

৪। শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তনঃ গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের ফলে নগরবাসীর শিক্ষার হারে আসে পরিবর্তন। কারন, দেশের নগরবাসীর তুলনায় গ্রামের মানুষ কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত। ফলে গ্রাম ছেড়ে শহরে আগতদের শিক্ষার নিম্ন হারের প্রভাব শহরবাসীর গড় শিক্ষা হারের উপর প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, শিক্ষিত লোকের আগমনের ফলে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পায়।

৫। নিম্ন জীবনযাত্রার মানঃ   গ্রাম হতে শহর/নগরে স্থানান্তরের ফলে নগরের সীমিত সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি প্রকৃতির উপর চাপ পড়ে। এমনকি জাতীয় অর্থনীতিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শহর ভিত্তিক গড় জীবনযাত্রার মান নিম্নমানের হয়ে ওঠে।

৬। যোগাযোগ বৃদ্ধিঃ বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের ফলে শহরের সাথে গ্রামের যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। শহরের স্থানান্তরিত হয়েছে এমন ব্যক্তিদের কাছে গ্রামের মানুষ আসা-যাওয়া করেন ও স্থানান্তরিত হয়ে গ্রামে বেড়াতে যান। ফলে সাধারণ নগর সংস্কৃতির একটা প্রভাব গ্রামে গিয়ে পড়ে এতে করে গ্রামের জীবন প্রণালীতেও আসে পরিবর্তন।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে মানুষ বিভিন্ন কারণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের স্থানান্তর লক্ষ্য করা যায় তবে এক্ষেত্রে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের হার অনেক বেশি। নগরায়ন, শিল্পায়ন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, উন্নত জীবনযাত্রার আকাঙ্ক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতির কারণে এদেশের মানুষ গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরিত হয়।

যৌথ খামার কি? যৌথ খামারের অসুবিধাসমূহ লিখ

যৌথ খামার কী?

ভূমিকাঃ- মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বসবাস করে মানুষ তার চাহিদা মেটানোর জন্য বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করে। সমাজে প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু চাহিদা রয়েছে। মানুষ হলো প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণে সামাজিক প্রাণী। সমাজে বসবাসকালে মানুষকে কিছু না কিছু করে তার চাহিদা পূরণ করতে হয় । যৌথ খামার তার মধ্যে অন্যতম। যা আমাদের দেশসহ অন্যান্য দেশের জন্য বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। যৌথ খামার ব্যবস্থা হলো আমাদের দেশের একটি সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার। তাই যৌথ খামার দেশের সব জায়গায় গড়ে তোলা উচিত।

যৌথ খামার কি? যৌথ খামারের অসুবিধাসমূহ লিখ


যৌথ খামারঃ যৌথ খামার হলো এমন এক ধরনের খামার যেখানে কৃষকরা কাজ করে। তবে তারা পারস্পরিক সহযোগিতার আলোকে একসাথে কাজ করে। যৌথ খমারে কৃষকগণ সর্বদা পরামর্শ করে সম্মিলিতভাবে কাজ করে। যা আমাদের দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজতান্ত্রিক দেশের ধরন যৌথ ভিত্তিক। কারন তারা সকল কাজ করে সবাইকে নিয়ে। সকল কাজ সম্পাদন করার জন্য অলাদা আলাদা জনবল আছে যা সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করে। অর্থাৎ যৌথ খামার বলতে বোঝায় গ্রামীণ সমাজে বসবাসরত নারী,পুরুষ, কৃষক, শ্রমিক যৌথভাবে যে কাজ সম্পাদন করে থাকে সেটাকে । যেমন- মুরগির খামার, গরুর খামার।


যৌথ খামারের অসুবিধাসমূহ লিখ

যৌথ খামারের কিছু উল্লেখযোগ্য অসুবিধাসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো


🧑‍🌾 যৌথ খামারের অসুবিধাসমূহ: বাস্তবতার আলোকে বিশ্লেষণ

যৌথ খামার (Cooperative Farming) একটি কৃষি ভিত্তিক ব্যবস্থা যেখানে একাধিক কৃষক একত্রিত হয়ে জমি, শ্রম ও সম্পদ ভাগ করে কৃষি কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এটি মূলত সমবায় ভিত্তিতে পরিচালিত হয় এবং উদ্দেশ্য থাকে উৎপাদন বাড়ানো ও সবার মাঝে সমান লাভ ভাগাভাগি করা। যদিও এর অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে, তবুও কিছু বাস্তব ও কাঠামোগত অসুবিধা এই ব্যবস্থাকে অনেক সময় অকার্যকর করে তোলে।


১. দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব

যৌথ খামার পরিচালনার জন্য দক্ষ ও সৎ ব্যবস্থাপনা দরকার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নেতৃত্বে অনভিজ্ঞতা বা দুর্নীতির কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ফলে উৎপাদন কমে যায় ও সদস্যদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়।


২. ব্যক্তিগত প্রণোদনার ঘাটতি

যেহেতু সকল সদস্য সমান ভাগে লাভ পায়, তাই অনেকেই নিজের শ্রম বা অবদানের প্রতি যত্নবান হয় না। এতে শ্রমের গুণমান কমে যায় এবং ফলনেও তার প্রভাব পড়ে।


৩. অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ

একাধিক মানুষের মধ্যে কাজ করার সময় মতানৈক্য হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যৌথ খামারে এই মতপার্থক্য অনেক সময় বড় ধরনের বিভাজনের কারণ হয়।


৪. সম্পদের অপব্যবহার

যেহেতু সম্পদ সবার, তাই দায়িত্ববোধের অভাব দেখা যায়। কেউ যদি যন্ত্রপাতি বা কৃষি উপকরণ ঠিকভাবে ব্যবহার না করে, তার দায় পুরো দলের উপর পড়ে।


৫. উদ্ভাবনের অভাব

যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ধীরগতি ও জটিল হওয়ায় নতুন প্রযুক্তি বা কৌশল দ্রুত প্রয়োগ করা কঠিন হয়।


৬. স্বচ্ছতার অভাব

আর্থিক লেনদেন, লাভ বণ্টন ও খরচের বিষয়ে স্বচ্ছতা না থাকলে সদস্যদের মধ্যে বিশ্বাসহীনতা তৈরি হয়। অনেক সময় এটি যৌথ খামারের ভাঙনের কারণ হয়।


 ৭. উৎপাদন ও লাভের ঘাটতি

যদি শ্রম ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার না হয়, তবে ফলন কমে যায় এবং লাভও তেমন হয় না। এতে সদস্যদের আগ্রহ কমে যায়।


✍️ উপসংহার

যৌথ খামার একটি আদর্শ চিন্তা হলেও বাস্তব প্রয়োগে কিছু জটিলতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা এবং সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা থাকলে এই অসুবিধাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তবে এগুলো না থাকলে যৌথ খামার অনেক সময় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।


গ্রামীণ পরিবারের পরিবর্তনের ধারাসমূহ আলোচনা কর

গ্রামীণ পরিবারের পরিবর্তনের ধারাসমূহ আলোচনা কর।

ভূমিকাঃগ্রামীণ সমাজ হলো একটি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর গ্রামীণ সমাজের সবচেয়ে বড় বিষয় হলো পরিবার। কারন পরিবারের উপর নির্ভর করে গ্রামীণ সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠে। আর গ্রামীণ পরিবার প্রথার মধ্যে আজ নানা রকম পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। মানবসমাজ পরিবর্তিত হয়ে আজ আধুনিক সমাজে রুপ নিয়েছে। এর জন্য গ্রামীণ পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। একটি দেশের আর্থ সামাজিক সকল উন্নয়নে পরিবার বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

গ্রামীণ পরিবার পরিবর্তন ধারাসমূহ



গ্রামীণ পরিবারের পরিবর্তনের ধরণসমূহ

নিম্নে গ্রামীণ সমাজেরপরিবর্তনের কয়েকটি ধারা তুলে ধরা হলো-

১। একক পরিবার গঠনঃ আমাদের দেশে গ্রামীণ সমাজে নানা ধরনের পরিবর্তনের মাধ্যমে একক পরিবার রুপ নিয়েছে। কারন, আজ যৌথ পরিবার ভেঙে আধুনিক একক পরিবার স্থান করে নিয়েছে। তাই আধুনিক যুগে একক পরিবার গঠন অন্যতম একটি সামাজিক পরিবর্তন।

২। সিদ্ধান্ত গ্রহণঃ এমন একটা সময় ছিলো যখন মেয়েরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারতো না।কিন্তু বর্তমানে যে কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মেয়েরা পুরুষদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

৩। শিক্ষার অধিকার সমানঃ এক সময় ভাষা হতো যে মেয়েদের শিক্ষার কোন দরকার নেই। কিন্তু বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এ ধারনা পাল্টে গিয়েছে। কারন বর্তমানে ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য সমান শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিটি পরিবার করে থাকে। যা সমাজ পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

৪। সমঅধিকারঃ বর্তমানে প্রতিটি পরিবার তার মেয়ে সদস্যদের সমঅধিকার নিশ্চিত করছে। কারন, নারী হলো সমাজ গঠনের অন্যতম সদস্য।তাই নারীকে সকল কাজে যথাযথ সুযোগ সুবিধা প্রদান করে সমাজের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। তাহলে দেমের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে।

৫। প্রযুক্তির ক্ষেত্রঃ আগে পরিবারের কেই আধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তেমন ধারনা ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি সদস্য আধুনিক প্রযুক্তি ও ব্যবস্থা সম্পর্কে অনেক সচেতন।

৬। নেতৃত্বঃ বর্তমানে পরিবারের যে কোন সদস্য যে কোন নেতৃত্বে আসতে পারে। বর্তমানে একই পরিবারের সকলেই ভিন্ন ভিন্ন রাজনীতি পছন্দ করতে পারে।

৭। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি: পূর্বে পরিবারে উপার্জনকারী ব্যক্তি একজন পুরুষ হতো। এখন নারী সদস্যরাও উপার্জন করে পরিবারের আয়ের অংশীদার হচ্ছে। এতে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটছে।

৮। বিয়ের ক্ষেত্রে পরিবর্তন: বিয়ের ক্ষেত্রে আগে পরিবারই সব সিদ্ধান্ত নিত। বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা নিজের পছন্দে বিয়ে করছে।

৯। প্রজনন ও পরিবার পরিকল্পনায় সচেতনতা: পূর্ব যুগে অধিক সন্তানকে আশীর্বাদ মনে করা হতো। এখন পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে সচেতনতা এসেছে। কম সন্তান, সুস্থ পরিবার এই ধারণা গ্রহণ করেছে অধিকাংশ গ্রামীণ পরিবার।

১০। অভিবাসন ও প্রবাস জীবনের প্রভাব: বর্তমান অনেক পরিবারের সদস্যরা বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক উন্নতি যেমন হচ্ছে, তেমনি পরিবারেও নতুন চিন্তাভাবনার সূচনা হচ্ছে।

১১। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা: গ্রামীণ পরিবারগুলো এখন পরিচ্ছন্নতা, টয়লেট ব্যবহার, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সচেতন হয়েছে। স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রসার এবং মিডিয়ার ভূমিকা এই পরিবর্তনে সহায়ক হয়েছে।


উপরের আলোচনা হতে পরিশেষে বলা যায় যে, পরিবার হলো সমাজ গঠনের প্রধান হাতিয়ার। তাই সমাজ যদি কোন কারণে পরিবর্তন হয়  তবে পরিবারও পরিবর্তন হবে। কারণ পরিবার ও সমাজ একে অপরের পরিপূরক।

জনসংখ্যা কী? জনসংখ্যা বিস্ফোরণ কি? জনসংখ্যা বিস্ফোরণের কারণ ও ফলাফল

জনসংখ্যা কী? 

ভূমিকাঃরাষ্ট্র গঠনের একটি মৌলিক উপাদান জনসংখ্যা। জনসংখ্যা ব্যতিত সামাজিক গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান তথা সামাজিক কাঠামো অকল্পনীয়। কিন্তু জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। অনেক সময় দেখা যায় কো ভূখন্ডের জনসংখ্যা কিছু সময়ের জন্য হ্রাস পেলেও অন্যত্র বৃদ্ধি পায়। আবার জম্মহার বৃদ্ধিজনিত কারনেও জনসংখ্যা বেড়ে যায়।জনসংখ্যার এ হ্রাস বৃদ্ধি জৈবিক প্রবৃত্তি ও আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির সাথেঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।

জনসংখ্যা কী? জনসংখ্যা বিস্ফোরণ কি?


জনসংখ্যাঃ ইংরেজি Population শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে জনসংখ্যা। এ Population শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ Popjular থেকে, যার অর্থ হলো Particular group or type of people or animals living in an area. সাধারণভাবে বলা যায় কোন নির্দিষ্ট সময়ে পরস্পর সম্পর্কিত ও সংঘবদ্ধভাবে বসবাসরত বিবিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের সমষ্টিকে জনসংখ্যা বলে।

উইলিয়াম পি স্কট এর Dictionary of sociology ব্যাখ্যা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোন ভৌগলিক সীমায় যেমন- একটি জাতি , একটি ভৌগলিক অঞ্চল রাষ্ট্র, মোট্রোপলিটন এলাকা বা একটি শহরে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীকে জনসংখ্যা বলা হয়।

Oxford Advanced Learner's Dictionary এর ভাষায় 'Population on the people who live in a particular area, city or countries' জনসংখ্যা মানুষ সমপর্কে একটি সংখ্যাত্মক ধারণা যেকোন নির্দিষ্ট ভূখন্ডের সব জনগোষ্ঠিকে নির্দেশ করে। জনসমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে জনসংখ্যা।

পরিশেষে বলা যায় যে, কোন নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও সুসংবদ্ধভাবে বসবাসরত বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের জনসমষ্টিকেই জনসংখ্যা বলা হয়।

জনসংখ্যা বিস্ফোরণ কি?

দেশের সম্পদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ জনসমষ্টি থাকলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব কিন্তু জনসংখ্যা যদি দেশের সম্পদের তুলনায় অধিক হয়ে যায় তবে তা অর্থনীতি ও গোটা বিশ্ব পরিবেশের ক্ষেত্রে বিরুপ প্রভাব ফেলে।

জনসংখ্যা বিস্ফোরণঃ আধুনিক যুগে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ একটি পরিচিত শব্দ। সাধারণ অর্থে বিস্ফোরণ বলতে কোন কিছুর হঠাৎ এ অতিদ্রুত প্রকাশিত হওয়াকে বোঝায়। যখন কোন দেশের বা অঞ্চলের জনসংখ্যা অতিদ্রুত বা উচ্চহারে বৃদ্ধি পেতে থাকে  তখন তাকে বিস্ফোরণ নামে অভিহিত করা হয়। মোটকথা যখন কোন দেশের জনসংখ্যা বন্যার ঢালের ন্যায় বৃদ্ধি পায় তখন তাকে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ বলা হয়। এ অবস্থায় জনসংখ্যা অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিস্ফোরণ একটি ভীতিপ্রদ শব্দ। এটি অগ্নি ও ধ্বংসের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই পারমানবিক বিস্য়োরণের ন্যায় জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও দেশের ার্থনৈতিক মেরুদন্ডকে ভেঙে দেয়। 

জনসংখ্যা বিস্ফোরণের কারণসমূহ:

  • উচ্চ জন্মহার
  • মৃত্যুহার হ্রাস
  • অশিক্ষা ও সচেতনতার অভাব
  • ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার
  • অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা
  • গ্রামীণ সংস্কৃতি

জনসংখ্যা বিস্ফোরণের পরিণতি:

  • সম্পদের ওপর চাপ বাড়ে, জীবনমান নিম্নমুখী হয়।
  • কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।
  • শিক্ষা খাতে চাপ সৃষ্টি হয়, শিক্ষার মান ও সুযোগ কমে যায়।
  • স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায় না সকলের কাছে, রোগবালাই বাড়ে।
  • জীবনযাত্রার মান নিচে নামলে সামাজিক অপরাধ বাড়ে।
  • বন, পানি, মাটি ইত্যাদি অতিরিক্ত চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ হতে বাংলাদেশে ও তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে এ অস্বাভাবিক জনস্ফিতিকে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ নামে অভিহিত করা হয়েছে। জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ফলে দেশে অভাব অনটন, বেকারত্ব, অর্থনীতির বেহাল অবস্থা হয়ে যায়।

পানি দূষণের কারণসমূহ আলোচনা কর

পানি দূষণের কারণসমূহ আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ- পানির অপর নাম জীবন পুথিবীতে সকল উদ্ভিদ প্রাণীর জীবন ধারণের জন্য পানি অপরিহার্য।পানি ছাড়া কোন জীবনের অস্তিত্ব টিকে থাকে না।কিন্তু পানি নানা কারণে দূসিত হয়ে থাকে যা পুথীব সকল জীবের জন্য মারাত্মক হুমকি কারণ।এসকল পানি দূষণের জন্য প্রধান দায়ী করা মানুষকে। কারণ মানুষ সৃষ্টির জীব।

পানি দূষণের কারণসমূহ আলোচনা কর


পানি দূষণের কারণসমূহঃ বিভিন্ন কারণে পানি দূষিত হয়ে থাকে। নিম্নে কয়েকটি কারণ আলোচনা করা হলো।

১। করকারখানার বর্জ্যঃ বর্তমানে পুজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার শিল্পায়নের ফলে কলকারকানার বর্জ্য বেড়ে গেছে। তবে এসব নিষ্কাশনের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। এগুলি পানির সাথে মিশে যাচ্ছে পানি দূষিত হচ্ছে। আর পানি দূষণের ফলে আমরা বিভিন্ন অসুকে ভুগতেছি।

২। কীটনাশকের ব্যবহারঃ বর্তমানে কৃষিতে উন্নতি সংগঠিত হওয়ার ফরে কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছেঅ কিটনাশকের ব্যবহার একদিকে যেমন ফসলের উপকার করছে অন্যদিকে তেমনি মানুষের ক্ষতি করছে। কারণ জমিতে প্রয়োগকৃত এসব কীটনাশক পানির সাথে মিশে পুকুর, নদীনালা, খালবিলের পানিকে দূষিত করছে যাতে মাছসহ অন্যান্য প্রানী ও মারা যায়।

৩।রাসায়নিক সার সরঞ্জামঃ বর্তমানে কৃষিতে ফলন বাড়ানোর জন্য রাসায়নিক সার ও সরঞ্জাম ব্যাপক হারে ব্যবহার হচ্ছে।কি্তু এসব রাসায়নিক সার বৃষ্টির পানির সাথে মিশে পুকুর, খালবিল, নদীর পানি দূষণ করছে। আর পরিবেশ মারাত্মকভাবে খতিগ্রস্থ হচ্ছে।

৪। ময়লা আবর্জনাঃ ময়লা আবর্জনা পানি দূষণের জন্য বেশি দায়ী। কারণ ময়লা আবর্জনা যদি অপরিচ্ছন্ন থাকে তবে সেটা ড্রেন বা বৃষ্টির পানির সাথে মিশে নদীর পানিতে যায়। যা নদীর মাছের জন্য ক্ষতিকর।এতে নদীর মাছ মারা যায় মাছের সাথে মানুষেরো ব্যাপক ক্ষতি হয় যদি সেটা গোছল ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়।

৫। আর্সেনিকঃ আর্সেনিক কথাটি বর্তমান সময়ে বিষের সাথে সম্পৃক্ত।আর্সেনিক এম একটি জৈব যেটা মাটির নিচে থাকে। মাটির নীচে থেকে ভূগর্ভস্থ পানির সাথে মিশে মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করছে। কারণ আর্সেনিকের কারণে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয় যা মানুষসহ সকল প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

৬। প্লাস্টিকের ব্যবহারঃ বর্তমকনে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে। প্লাস্টিক মাটি যেমন দূষিত করে পানিও তেমন দূষিত করে।

৭। অজৈব রাসায়নিক পদার্থঃ সীসা, পারদ, দস্তা, ইত্যাদি পানিতে থাকলে সে পানি দূষিত হয়ে যায়। কারণ অজৈব রাসায়নিক পদার্থ পানিকে ব্যাপকভাবে দূষিত করে।

৮। ডিটারজেন্ট ব্যবহারঃ বর্তমানে কাপড় পরিষ্কারক হিসেবে ডিটারজেন্ট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পুকুরের পানিতে যদি ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় পরিষ্কার করা হয় তবে পুকুরের পানি দূষিত হয় এতে পুকুরের মাছের জীবনযাত্রা ব্যহত হয়।

৯। গবাদি পশুর গোছল করানোঃ যদি পুকুরের পানিতে গবাদি পশুর গোছল করানো হয় তবে পুকুরের পানি দূষিত হয়ে যায়।

১০। তেল নিঃসরণঃ বর্তমানে তেল নিঃসরণ ব্যাপকভাবে পানি দূষণ করছে। গত বছর সুন্দরবনের বিভিন্ন মাছ, কচ্ছপ ইত্যাদি প্রাণী মারা যায়। তেলের কারণে পানিতে থাকা মাছের প্রজনন কমে যায়। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের উপকূলে তেলবাহী জাহাজ হতে তেল উপছে পড়ে হাজার হাজার সামদ্রিক মাছ মারা যায়।

পরিশেষে বলা যায়, পানি দূষণের জন্য বেশকিছু নিয়ামক দায়ী। এসব নিয়ামকগুলোর ব্যবহার না কমানো গেলে পরিবেমের মারাত্মক ক্ষতি হবে। তাই পানি দূষণ রোধ করা অতি জরুরি।

দারিদ্র্য কী? বিশ্বে দারিদ্র্যর কারণসমূহ আলোচনা কর।

দারিদ্র্য কী? দারিদ্র্যর কারণ আলোচনা কর

ভূমিকাঃ- বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দারিদ্র‌্যপ্রবণ দেশ। আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা দারিদ্র‌্য সমস্যা । আভিধানিক অর্থে দারিদ্র‌্যতা বলতে আমাদের অভাব-অনটনকে বোঝায়। এটি  এক প্রকার নেতিবাচক অর্লনৈতিক অবস্থা। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির অর্থনৈতিক দূর্বলতা, অস্বচ্ছলতা ও অক্ষমতাকে দারিদ্রতা বলে। দারিদ্রের প্রকাশ ঘটে আয়ের স্বল্পতা, জীবনধারনের নূন্যতম প্রয়োজন পূরণের ব্যর্থতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুযোগের অভাবের মাধ্যম।

দারিদ্র্য কী? বিশ্বে দারিদ্র্যর কারণসমূহ আলোচনা কর।

দারিদ্র‌্যর সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন মনীষী  বিভিন্নভাবে দারিদ্র‌্যর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকজনের সংজ্ঞা দেওয়া হলো-
সমাজবিজ্ঞানী গিলিন এর মতে-যাদের জীবন-যাপনের মান সমাজে বিরাজমান জীবনযাত্রার  মানের নিচে তারাই দরিদ্র। সেজন্য তারা সমাজ জীবনে মানবিক ও দৈহিক নৈপূণ্য প্রমাণে অক্ষম হয়।
বিশ্বব্যাংকের মতে- “যদি কোন ব্যাক্তির মাথাপিছু আয় ৫০১ বা তার কম হয় তবে সে দরিদ্র এবং তার পীড়াদায়ক অবস্থায় দারিদ্রতা। (১৯৬৯ সালের রিপোর্ট)
জি গোলার্ড এর মতে- দারিদ্র‌্য হলো এমন একটি পরিস্থিতি  যেখানে একজন ব্যক্তি ও তার উপর নির্ভরশীল অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের স্বাস্থ্য ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রবাদি সরবরাহের ক্ষেত্রে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়।

বিশ্বে দারিদ্র‌্যর কারণসমূহ:

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দারিদ্র‌্যপ্রবণ দেশ। আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা দারিদ্র‌্য সমস্যা । শুধু বাংরাদেশেই নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্যতম সমস্যা হলো দারিদ্রতা।দারিদ্রতাকে বৈশ্বয়িক সমস্যা ও বলা যায় আর  এ সমস্যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি , নিম্নে দারিদ্র্যতার কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো-

১। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বৃদ্ধিঃ আমাদের দেশে যেমন দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সারা বিশ্বে তেমনই জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ বর্ধিত অবস্থার ফলেই বিশ্বব্যাপী দ্রুত দারিদ্র্যতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

২। সম্পদ ও সুযোগের অসম বন্টনঃ বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সম্পদের অসম বন্টন ব্যবস্থা। অধিকাংশ সম্পদ ধনীদের  হাতে এবং গরীবদের হাতে অল্প পরিমাণ সম্পদ। এছাড়া সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ ও ধনী- গরীবের মধ্যে অসমভাবে বন্টিত যার কারণে ধনীরা দিনে দিনে ধনী ও গরীবরা দিনে দিনে আরও গরীব হচ্ছে ফলে দারিদ্র‌্যতার হার ও বেড়ে চলেছে।

৩। সম্পদের স্বল্পতা ও ভূমি মালিকদের দৈরাত্ম্যঃ বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক সম্পদ বর্তমান বর্ধিত জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম । এছাড়া, ভূমির অসম বন্টনও দারিদ্র‌্যতা সৃষ্টি করে থাকে কারণ ভূমি মালিকদের দৌরাত্মের কারণে হতদরিদ্র‌্যরা আরও দরিদ্র হচ্ছে ।

৪। বর্ণ বৈষম্য, ধনী-গরীবের পার্থক্যঃ বিশ্বব্যাপী বর্ণ বৈষম্য খুবই প্রকট আকার ধারণ করেছে । সাদা  কালো চামড়ার মানুষের মধ্য  বর্ণ বৈষম্য বেশি যা বিভিন্নভাবে কর্মক্ষেত্র হতে শুরু করে জীবনযাপন এর মাঝে পার্থক্য দাড় করিয়ে দারিদ্র‌্যতার হারকে বাড়িয়ে তুলছে ।
৫। সুশিক্ষার অভাবঃ শিক্ষার অভাব, কারিগরি জ্ঞানের অভাব ও অদক্ষতা দারিদ্র‌্যতার পিছে অন্যতম কারণ। অশিক্ষিত ও অদক্ষ লোক অধিকাংশ কর্মহীন হয় যার ফলে তারা দেশের বোঝাস্বরুপ যা দারিদ্রতার অন্যতম কারণ এছাড়া কারিগরি শিক্ষার অভাবে দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি পায়।

৬। দুর্নীতি অনিয়ম ও ন্যায় বিচারের অভাবঃ দুর্নীতি একটি দেশের জন্য অন্যতম প্রধান সমস্যা দুর্নীতি একটি দেশের কাঠামো ও উন্নয়নকে ধ্বংস করে। দুর্নীতির ফলে একদল তাদের নিজেদের সম্পদের পাহাড়  গড়ছে অন্যদিকে এক শ্রেণীর মানুষ না খেয়ে দিন পার করছে। দুর্নীতির ফলে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে গরীবরা আরো গরীব হচ্ছে। দুর্নীতির ফলে যোগ্যরা অযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে সব মিলে দুর্নীতির ফলে দেশের দারিদ্র‌্যতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

 ৭। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবঃ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে দারিদ্র‌্যতা বৃদ্ধির কারণ হলো সরকারের অসহযোগিতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। সরকারের খামখেয়ালিপনা দারিদ্র অবস্থাকে আরো প্রকট করে তুলছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পারে দারিদ্র‌্য অবস্থাকে দূর করতে।

৮। বিদেশি বিনিয়োগের অপর্যাপ্ততা ও সুযোগের অভাবঃ আমাদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগের অপর্যাপ্ততা দারিদ্র্যতাকে দিনের পর দিন আরও প্রকট করে তুলেছে।অনুন্নত দেশগুলিতে  বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ কমে যাওয়ায় এসব অনুন্নত দেশকে দরিদ্র করে ফেলছে।

৯। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যাঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসলীলা যে কোন দেশকে দারিদ্র‌্য করে ফেলতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর ফলে দেশে দারিদ্র‌্যতা বিরাজ করে। এছাড়া নানা সামাজিক সমস্যার ফলে একটি দেশে দারিদ্র্র্যতা দেখা দেই ।

উযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দারিদ্র‌্যতা পূর্বে ছিল বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যৎ এ থাকবে এটা পুরোপুরি নির্মুল সম্ভব নয় তবে আমরা এই দারিদ্র‌্যতার প্রকোপ কমাতে পারি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আমাদের আন্তরিক হতে হবে ও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে তবেই দারিদ্র‌্যতা কমানো সম্ভব।

বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি কর্মসূচীসমূহ কী কী

বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি পদক্ষেপ সমূহ কী কী?

ভূমিকাঃ১৬ কোটি জনসংখ্যার এই বাংলাদেশ বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি দেশ। বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালের হিসাব অনুয়ায়ী দেখা যায় ১২.৯ শতাংশ। দারিদ্র্যতা বলতে মৌলিক চাহিদা যেমন খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয়, ইত্যাদি মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় অসম্পূর্ণ বা অনুপস্থিতি অবস্থাকে নির্দেশ করা হয়।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি কর্মসূচীসমূহ কী কী



সাধারণ অর্থে আমরা দারিদ্র্য বলতে অভাব অনটনকে বুঝি। কোন ব্যক্তি যদি অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল থাকে তখন তাদেরকে আমরা দরিদ্র বলে থাকি। দারিদ্র্য সমস্য শুধু বাংলাদেশে না এটা গোটা বিশ্বে বর্তমানে একটি বড় সমস্যা।

বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি পদক্ষেপ/কর্মসূচীসমূহঃ

নিম্নে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি কর্মসূচীর কয়েকটি কারন তুলে ধরা হলো-

১। সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিঃ দুস্থ, অসহায়, বৃদ্ধ, অক্ষম, বিধবা, এতিম এদের জন্য ভাতা, অবসর ভাতা, ভবিষ্যৎ তহবিল, কল্যাণ তহবিল, শ্রমিক ক্ষতিপূরণ, মাতৃত্ব সুবিধা প্রভৃতি কার্যক্রম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্তর্ভূক্ত।

২। বয়স্কভাতা কর্মসূচিঃ বয়স্কদের জন্য বয়স্ক ভাতার প্রচলন করতে হবে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে মাথাপিছু মাসিক ভাতার পরিমাণ ৩০০ টাকা ও উপকার ভোগীর সংখ্যা ছিল ২৪.৭৫ লক্ষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ  কার্যক্রমে ৮৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

৩। নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিঃ দেশের অতি দরিদ্র্য লোকজনের জন্য বাজেটে নিরাপত্তা বেষ্টনী নামে একটি বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ভিজিডি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, টি আর ডিপি, জি আর, টি আর প্রভৃতি কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র্য দুরীকরনের প্রচেষ্টা চলছে।

৪। অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা প্রদানঃ অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ কর্মসূচির আওতায় উপকার ভোগ করেন ১.৫০ লক্ষ, মাসিক ভাতার পরিমাণ ২০০০ টাকা উন্নীত করা হয়েছিল। এ বাবদ ৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

৫। একটি ঘর একটি খামারঃ দারিদ্র্যতা দূরীকরনের জন্য প্রতিটি বাড়িতে একটি খামার গড়ে তোলার নিমিত্তে ২০০৯ সালে একটি খামার একটি বাড়ি প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এ প্রকল্পটি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীনস্ত। এ প্রকল্পটি ১,১৯৭.০০ কোটি টাকা ব্যায়ে চালু করার প্রচেষ্ঠা চলছে। এর বাস্তবায়নকাল ২০০৯ থেকে ২০১৪ জুন পর্যন্ত।

৬। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিঃ খাদ্য ও দুর্যগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়াধীন এ কর্মসূচির আওতায় ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৮১.৯৬ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়।

৭। সমাজসেবাঃ দেশের দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক সমাজসেবা  কার্যক্রম হচ্ছে চালু করা হয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শিশু কল্যাণ, গ্রামীন ও শহর সমাজসেবা, নারী কল্যাণ, হাসপাতাল সমাজসেবা, যুব কল্যাণ, প্রতিবন্ধী কল্যাণ, জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি কার্যক্রমসমুহ।

৮। আবাসন প্রকল্পঃ বাংলাদেশের ৬৫ হাজার ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল মহিলাদের জন্য  মোট ৬৫৭.২০ কোটি টাকার ব্যয় সম্বলিত আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

৯। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমঃ সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে মহিলাদের জন্য প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান, শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র, কর্মজীবী মহিলাদের জন্য বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালিত করছে।

১০। কর্মসংস্থান ব্যাংকঃ মূলত যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য এই ব্যাংক স্থাপিত হয়। দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলায় এ ব্যাংক তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যুবকদের এরা স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্য কাজ করছে।

সর্বশেষ বলা যায় আমাদের দেশে বর্তমানে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কাজ করা হচ্ছে।

ভূমিকম্পের কারণসমূহ আলোচনা কর

ভূমিকম্পের কারণসমূহ আলোচনা কর

ভূমিকাঃপৃথিবীর প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে ভূমিকম্প এক অবিস্মরণীয় নাম। ভূমিকম্প হলো এমন এক ধরনের দূর্যোগ যা পুরো পৃথিবীর অর্ধেক অঞ্চল বা পুরো পুথিবী জুড়ে অনুভূত হতে পারে। ভূমিকম্পের ফলে বহু জিনিস ধ্বংস হয়ে যায়। বেশিরভাগ ভূমিকম্পের কারণ হ‌ল ভূগর্ভে ফাটল ও স্তরচ্যুতি হওয়া এছাড়া অন্যান্য কারণেও ভূমিকম্প হতে পারে যেমন: অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, খনিতে বিস্ফোরণ বা ভূগর্ভস্থে নিউক্লিয়ার গবেষণায় ঘটানো আণবিক পরীক্ষা।

ভূমিকম্পের কারণসমূহ আলোচনা কর

ভূমিকম্প সৃষ্টির কারণসমূহঃ  ভূমিকম্প সৃষ্টির বহুবিধ কারণ রয়েছে নিচে কয়েকটি কারণ আলোচনা করা হলো।

১। ভূ্-অন্দোলনঃ উত্তপ্ত ভূঅভ্যন্তরভাগ প্রতিনিয়ত আন্দোলিত হচ্ছে। যা প্রত্যক্ষভাবে ভূমির উপর পড়ে আর এজন্য ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

২। পাথর বা শিলাচ্যুতিঃ পাহাড়ের উচু স্থান থেকে যদি কোনো শিলা বা পাথর সরে যায় তবে ভূপৃষ্ঠে হালকা ঝাকুনি অনুভব করবে। এর ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

৩। বিস্ফোরণঃ বর্তমানের প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের ফলে মানুষ নানা ধরনের পারমানবিক জিনিস আবিষ্কার করেছে যার বিস্ফোরণের ফলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

৪। আগ্নেয়গিরির অগ্যুৎপাতঃ ভূমিকম্প সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো অগ্যুৎপাত। আগ্নেয়গিরি থেকে গলিত লাভা প্রচন্ড গতিতে যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

৫। ভূগর্ভে পানির উপস্থিতিঃ  পৃথিবীর বিভিন্ন ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভূগর্ভে পানি ঢুকে পড়ে। এ পানি ঢুকে পড়ার সাথে সাথে সেখানে উত্তাপে প্রচুর বাষ্পের সৃষ্টি হয় যা ভূপৃষ্ঠকে আন্দোলিত করে ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

৬। ভূগর্ভস্থ বাষ্পঃ বাষ্প বিভিন্নভাবে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠকে ধাক্কা দেই যার ফলে হালকা নড়াচড়া হয় ও পরবর্তীতে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

৭। খনিজ পদার্থের ভাঙনঃ পৃথিবীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে।যদি কোন কারণে এসব খনিজ পদার্থের ভাঙন ঘটে তবে ভূকম্পিত হয়।

৮। ভূগর্ভস্থ আগ্নেয় পদার্থঃ বর্তামানে আগ্নেয়গিরির অগ্যুৎপাতের কারণ ছাড়াই কখনো আগ্নেয় পদার্থের চাপে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বিভিন্ন ধাক্কাধাক্কির সৃষ্টি হয়।

৯। তাপ বিকিরণঃ পৃথীবি সৃষ্টির আদিকাল থেকেই তাপ বিকিরিত হচ্ছে। তাপ বিকিরণ করার পর প্রয়োজনীয় তাপ মহাকাশে ফিরে যাএয়ার ফলে পৃথিবী ঠান্ডা থাকে। ভূ-পৃষ্ঠ ঠান্ডা হওয়ার কারণে তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আর এ সংকোচনের ফলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

১০। ভূ-পৃষ্ঠের চাপ বৃদ্ধিঃ ভূ-পৃষ্ঠে নিম্ন স্থান থেকে পানি গঠিত হয়ে উঁচু স্তরে তা অবস্থান করে তখন সেখানকার চাপ অনুভূত হয়।সেই সাথে ভারী পাললিক শিলা নিচে চলে আসে এবং এর ফলে ভূ-আন্দোলন সৃষ্টি হয় যা ভূমিকম্প সৃষ্টি করে

১১। টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষঃ পৃথিবীর ভূত্বকের বিভিন্ন ভাগ বা প্লেট একে অপরের সাথে ধীরে ধীরে নড়াচড়া করে। যখন দুটি প্লেট একে অপরকে ধাক্কা দেয় বা একটির নিচে আরেকটি স্লাইড করে, তখন ভূত্বকে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয় এবং হঠাৎ করে সেই চাপ মুক্ত হয়ে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এটি ভূমিকম্পের সবচেয়ে সাধারণ ও প্রধান কারণ।

১২। মানবসৃষ্ট কার্যকলাপঃ বর্তমান যুগে বড় বড় বাঁধ নির্মাণ, গভীর খনন কাজ, ভূগর্ভস্থ খনিজ আহরণ, ভূগর্ভে জলাধার বা গ্যাস সংরক্ষণ এবং ফ্র্যাকিং (hydraulic fracturing) এর মতো কর্মকাণ্ড ভূত্বকে চাপ সৃষ্টি করে। এসব কৃত্রিম কারণে অনেক সময় ভূমিকম্প হতে পারে, যাকে বলা হয় "প্ররোচিত ভূমিকম্প"।

পরিশেষে বলা যায়, প্রধানত অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত ভূমিকম্পের কারণে ভূপৃষ্ঠের ব্যাপক রদবদল হয়েছে। ভূমিকম্পের জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে চলাচল করা উচিত।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কী? দুর্যোগের প্রকারভেদ

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কী? দুর্যোগের প্রকারভেদ

ভূমিকাঃ- দুর্যোগ স্বাভাবিক অর্থে প্রাকৃতিক। তবে দূর্যোগের কাল, ঘটনা, সংখ্যা, ঘটন প্রকৃতি এবং ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপ্তি বিশ্লেষণে তা একই সাথে মানবসৃষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়।  এ করণেই দূর্যোগের পরিবেশগত ও সামাজিক উভয় প্রেক্ষাপট আছে। দূর্যোগটাই গ্রামের সবকিচু হারাচ্ছে। আধুনিক বিশ্বে দূর্যোগ সংগঠন একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে।দূর্যোগের কারণে প্রাণ হারাচ্ছে অনেক মানুষ।তাই দূর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে চাইলে আমাদের কার্যকরী কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কী?

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলতে বুঝায় দূর্যোগ ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ বা কৌশল।সাম্প্রতিক সময়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলতে প্রাক-দূর্যোগ ও দূর্যোগ পরবর্তী সময়ে ব্যাপক কর্মকান্ড ও নীতিমালার বাস্ত-বায়নকে নির্দেশ করে। এই কর্মকান্ডের মধ্যে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষের দূর্যোগজনিত কষ্ট হ্রাস ও দূর্যোগ প্রতিষেধক, দূর্যোগ উপশম নিবৃত্তি এবং এই পূর্ব প্রস্তুতিকে প্রাক দূর্যোগ মোকাবেলা কৌশল হিসেবে গণ্য করা হয়। 

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ নিম্নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কয়েকটি প্রামাণ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।

Jemes L. Jundy এর মতে ''দুর্যোগ্য ব্যবস্থাপনা হলো দূর্যোগ নিবরণ, দূর্যোগের প্রস্তুতি, মোকাবেলা এবং দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাঠিয়ে উঠার জন্য পরিকল্পিত উপায়।''

Wikipedia তে বলা হয়েছে, ''দুর্যোগের প্রভাব কমানোর জন্য জরুরি মুহূর্তে প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া পুনরুদ্ধারে সকল মানবিক দিকগুলি মোকাবেলা করার জন্য সম্পদ ও দায়িত্ব একত্রিকরণ ও ব্যবস্থাপনা করাকে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলা হয়।''

দূর্যোগ সম্পর্কে বলা হয়েছে-''দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের লক্ষ্যে দূর্যোগপূর্ব, দূর্যোগকালীন ও দূর্যোগপরবর্তী যাবতীয় কার্যক্রমের বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পর্যন্ত সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করাকে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলা হয়।''

Dr. Kshanda Mohan Das এর মতে ''Disaster managment is a body of policy and administrative decision and operational activities which pertain to the various stages of disaster (pre, during and post) and of all levels.''

সুতরাং বলা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা হলো এক ধরনের প্রক্রিয়া বা চলমান কার্যক্রম যা দূর্যোগ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করে।আর এর মাধ্যমে দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা ও পুনর্বাসন করার চেষ্টা করা হয়।

দুর্যোগের শ্রেণিবিন্যাস (ধরন):

দুর্যোগ প্রধানত দুই ধরনের:

(ক) প্রাকৃতিক দুর্যোগ: যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, খরা, ভূমিধস ইত্যাদি।

(খ) মানবসৃষ্ট দুর্যোগ: যেমন অগ্নিকাণ্ড, রাসায়নিক বিস্ফোরণ, যুদ্ধ, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি।


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারের ভূমিকা:

  • দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (DDM) গঠন
  • ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ
  • আগাম বার্তা প্রচার ব্যবস্থা (SMS, রেডিও, টিভি)
  • ত্রাণ তহবিল বরাদ্দ
  • সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের সমন্বিত উদ্যোগ

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এনজিও ও জনগণের ভূমিকা:

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন এনজিও ও সিভিল সোসাইটির বড় ভূমিকা পালন করে। যেমন- ব্র্যাক, রেড ক্রিসেন্ট, ঘাসফুল, ওয়ার্ল্ড ভিশন প্রভৃতি এনজিও ত্রাণ, পুনর্বাসন ও সচেতনতামূলক কাজ করে।

পরিশেষে বলা যায় যে, দুর্যোগ এক প্রকার ক্ষতিকর নেতিবাচক মারাত্মক পরিস্থিতি যা মানবজীবনে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে মানবজীবনকে দূর্বিসহ করে তোলে।দুর্যোগ ক্ষয়ক্ষতি কমাতে  বা ক্ষতিকর পরিস্থিতি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নিরক্ষরতা কি? What is illiteracy? নিরক্ষরতা দূরীকরণের উপায়

নিরক্ষরতা কি? নিরক্ষরতা দূরীকরণের উপায়

ভূমিকাঃ- কোন দেশের আর্থ সমাজিক পরিবর্তন ও অগ্রগতির মৌল প্রয়োজন হলো শিক্ষা। মানব সম্পদ উন্নয়নের সর্বোত্তম মৌলিক উপাদান শিক্ষা। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। ব্যক্তিগত ও জাতীয় উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো শিক্ষা।আর এ শিক্ষার অভাব হলো নিরক্ষরতা। নিরক্ষরতা বাংলাদেশের অন্যতম সমাজিক সমস্যা কেননা এর কুফল আর্থ সামাজিক জীবনে মারাত্মক ক্ষতিকর। বাংলাদেশে শিক্ষা পর্যায় উন্নত নয় বলে মৌল চাহিদা পূরণে শিক্ষা এখনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না।

নিরক্ষরতা কি?

নিরক্ষরতাঃ সাধারণ অর্থে অক্ষর জ্ঞানের অভাবই নিরক্ষরতা। তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে নিরক্ষর হলো অক্ষর জ্ঞানহীনতা। কারণ, শিক্ষার চাবিকাঠি হলো অক্ষরজ্ঞান আর এ অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন ব্যাক্তিকে বলা হয় স্বাক্ষর বা শিক্ষিত। সুতরাং নিরক্ষর হলো স্বাক্ষরতার বিপরীত অবস্থা।

UNESCO এর মতে, ''দৈনন্দিন জীবনেরক্ষুদ্র ও সাধারণ বক্তব্যকে উপলদ্ধী সহকারে লেখতে ও পড়তে সক্ষম ব্যক্তিই স্বাক্ষর।''

১৯৬১ সারের লোকশুমারিতে বলা হয়-''উপলদ্ধি সহকারে যে কোন ভাষা পড়তে সক্ষম ব্যক্তিই স্বাক্ষর বা শিক্ষিত আর যে ব্যক্তি অক্ষম তাকে নিরক্ষর বলা হয়।''

১৯৭৪ সালের লোকশুমারিতে বলা হয়  ''যে কোন ভাষা লিখতে ও পড়তে সক্ষম হওয়াকে স্বাক্ষরতার মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।''

১৯৮১ সালের লোকশুমারিতে বলা হয় ''পাঁচ বছর বয়সের উপরের যে কোন ব্যক্তি যে কোন ভাষায় চিঠি লিখতে সক্ষম হলে তাকে স্বাক্ষর হিসেবে ধরা হয়েছে এবং যে কোন ভাষায় চিঠি লিখতে অক্ষম ব্যক্তিকে নিরক্ষর হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।''

১৯৯১ সালের লোক শুমারিতে বলা হয় ''যে কোনো ভাষায় ঠিঠি লিখতে সক্ষম ব্যক্তিকে স্বাক্ষর ও যে কোন ভাষায় চিঠি লিখতে অক্ষম ব্যক্তিকে নিরক্ষর হিসেবে ধরা হয়েছে।

According to Statistical Poket Book of  Bangladesh ''The concept illtieracy used in various censuses conducted in Bangladesh has not been uniformed in 1981 censuses a person was treated a literature if he could write a letter any language age more than 5 years.''

নিরক্ষরতা দূরীকরণের উপায়

নিরক্ষরতা দূরীকরণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় তুলে ধরা হলো

১। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন: প্রত্যেক শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক ও বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের স্কুলে পাঠানো ও পাঠদানের সকল ব্যবস্থা করতে হবে।

২। শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধি: শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন ও সরকারের উদ্যোগে প্রচার কার্যক্রম চালাতে হবে।

৩। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা: যেসব ব্যক্তি শিশুকালে শিক্ষার সুযোগ পাননি, তাদের জন্য রাতের স্কুল, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র, প্রবীণ শিক্ষা কেন্দ্র ইত্যাদি চালু করতে হবে।

৪। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণোদনা: দারিদ্র্য অনেক সময় শিক্ষার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের সন্তানদের জন্য শিক্ষা উপকরণ, বৃত্তি, স্কুলে দুপুরের খাবার, পোশাক সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫। নারী শিক্ষা উন্নয়ন: নারীদের মধ্যে নিরক্ষরতার হার বেশি। তাই নারী শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

৬। এনজিও ও বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা: বিভিন্ন এনজিও ও সমাজসেবামূলক সংগঠন গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষাবিস্তারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সরকার ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে বৃহৎ পরিসরে এ কার্যক্রম চালাতে পারলে নিরক্ষরতা কমানো সম্ভব।

পরিশেষে বলা যায়, পাঁচ বছর বয়সের উপরের যে কোন চিঠি লিখতে অক্ষম ব্যক্তি বা ব্যক্তির সমষ্টিই হলো নিরক্ষর। নিরক্ষর হলো এমন একটি নেতিবাচক অবস্থা যে অবস্থায় সমাজের সদস্য হিসেবে ব্যক্তি তার ভাষাগত ক্ষেত্রে পঠন-পাঠন ও লিখতে সমর্থ হয় না।

পরিবেশ দূষণ কি What is Environment pollution পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব

পরিবেশ দূষণ কি? পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব

ভূমিকাঃ- আধুনিক বিশ্বে অগ্রগতির অন্যতম হাতিয়ার হলো যান্ত্রিকতা। যান্ত্রিতকতাই শিল্পায়নকে উন্নতির দিকে ধাবিত করে। শিল্পায়নের ফলে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলেও শিল্পকারখানার বিভিন্ন দূষণের ফলে  আমাদের চারপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।  পরিবেশ দূষণের শুরু মূলত আদিকাল থেকেই চলছে।আর দিন দিন পরিবেশ দূষণের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিবেশ দূষণের মাত্রাকে প্রকটতর করে তুলছে। এভাবে পরিবেশ দূষণ হতে থাকলে একদিন এ পৃথিবী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। মানুষের জীবনকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখার জন্য নির্মল পরিবেশ বজায় রাখা অপরিহার্য।

পরিবেশ দূষণ কি What is Environment pollution


পরিবেশ দূষণঃ পরিবেশ দূষণের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Environment pollution. Environment শব্দটির অর্থ বলতে The natural Condition কে বুঝায়। আর pollution শব্দটি pollute থেকে এসেছে; এর অর্থ হচ্ছে to make  a something dirty or no longer pure especially adding harmful অথবা, unpleasant substan to it.

সুতরাং শাব্দিক দিক থেকে বলতে বুঝায়  to make  a something dirty or no longer pure especially adding harmful unpleasant substaces to the natural conditions example land, air, water in which people animals and plants live.

সাধারণত, পরিবেশের যে রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের যে অবাঞ্চিত পরিবর্তন জীবের জীবনধারণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাকেই পরিবেশ দূষণ বলে। এছাড়া পরিবেশ দূষণ বলতে আমরা মানুষের বসবাস করার জন্য যেসব প্রত্যাশিত ও প্রয়োজনীয় উপাদানের প্রয়োজন সেসব উপাদানের অনুপস্থিত এবং মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীকুলের ক্ষতি সাধন করে এমন অবস্থাকে বুঝায়।

আবদুল্লাহ আল মুতী বলেন- ''মাত্রাতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ যদি পরিবেশে মিশে মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তবে তাকে আমরা পরিবেশ দূষণ বলতে পারি।''

এফ এম মনিরুজ্জামান বলেন-''পরিবেশের কোন উপাদান যখন ভৌত রাসায়নিক, জৌবিক তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন ঘটে ও মানুষসহ পরিবেশের মধ্যে বসবাসকারীদের উপর নেতিবাচক ও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে  এমতবস্থাকেই পরিবেশ দূষণ বলা হয়।''

এতএব, আমরা বলতে পারি যে প্রক্রিয়া যা মানুষের ব্যবহৃত পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি, শিল্পকারখানার বর্জ্য এসব পরিবেশের সাথে মিশে পরিবেশে উপর যে ক্ষতিকর ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে মানুষসহ উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের ক্ষতি সাধন করে তাই পরিবেশ দূষণ।

পরিবেশ দূষণের ফলে সৃষ্ট ক্ষতিসমূহঃ-

১। মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি: পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে মানুষের স্বাস্থ্যর উপর। বায়ু দূষণের ফলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। জল দূষণের কারণে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

২। উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের ক্ষতি: পরিবেশ দূষণের কারণে উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে এবং ফসল উৎপাদন হ্রাস পায়। জমির উর্বরতা কমে যায় এবং ফলত কৃষির উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। পানির দূষণের কারণে জলজ প্রাণী মারা যায়। একইভাবে, বায়ু ও শব্দ দূষণের ফলে বনের জীবজন্তু ও পাখি বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে।

৩। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া: পরিবেশ দূষণের ফলে প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, ওজোন স্তরের ক্ষয়, মরুকরণ, বৃষ্টিপাতের অনিয়ম ইত্যাদি ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর আবহাওয়ার চরম তারতম্য ঘটছে, যার ফলে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার বাড়ছে।

৪। জীববৈচিত্র্যের হ্রাস: পরিবেশ দূষণ জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। বহু প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে। এই প্রক্রিয়া প্রকৃতির ভারসাম্যকে চরমভাবে ব্যাহত করছে।

৫। অর্থনৈতিক ক্ষতি: দূষণের কারণে কৃষি, মৎস্য ও বনজ সম্পদের উৎপাদন কমে যায়। চিকিৎসা খাতে ব্যয় বেড়ে যায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়। শিল্পকারখানার বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়।

সর্বশেষ আমরা বলতে পারি যে পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষসহ সকল জীব ও প্রাণীকুলের ক্ষতি সাধন করে। তাই মানুষসহ, অন্যান্য প্রাণীকুলের বসবাসের জন্য সুস্থ স্বাভাবিক  ও অনুকুল পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য আমাদের সকলের সমন্বিত উদ্যোগে পরিবেশ দূষণ রোধ করা উচিত।

এইডস কি? এইডস (AIDS) বিস্তারের মাধ্যমগুলি উল্লেখ কর।

এইডস কি?

ভূমিকাঃ AIDS একটি মারাত্মক নিরব ঘাতক ব্যাধি।এই রোগে কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে সে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে পতিত হয়। বিশ্বে আজ ও কোন প্রকার এইডস এর ঔষধ আবিস্কার হয়নি।যার কারনে বর্তমানে মানুষেরা HIV/AIDS নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত । AIDS এক আশ্চার্য রুদ্ধশ্বাস লড়াই।

এইডস কি? এইডস (AIDS)  বিস্তারের মাধ্যমগুলি উল্লেখ কর।


এইডস (AIDS): ইংরেজি বর্ণমালার A.I.D.S নিয়ে গঠিত AIDS.  AIDS এর পূর্ণরুপ Acquired Immune Deficiency Syndrome. যার বাংলা  অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব লক্ষণের সমষ্টি কে বোঝায় যা এমন একটি রোগ যাতে মস্তিস্কের ক্ষতিসাধন হয় এবং দেহের স্বাভাবিক কমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ও নিস্তেজ হয়ে আসে। এইডস রোগটি নিজে নিজে আসে না।এটি বহুলাংশে মানুষ নিজেই ডেকে আনে। এইডস এ আক্রান্ত ব্যক্তি ছত্রাক, ব্যকটেরিয়া, প্রটোজোয়া ইত্যাদি অন্যান্য ভাইরাস থেকেও রক্ষা পায় না। এইডস এর জন্য HIV ভাইরাস দায়ী। HIV (Human Immune Deficiency Virus)  এর প্রাণঘাতী অবস্থাকেই  (AIDS) এইডস বলে। বাহির থেকে এ ভাইরাস প্রবেশ করার  সাথে সাথে প্রকাশ পায় না। এতে প্রায় ৭/৮ বছর সময় লেগে যায়। Syndrome হলো যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পেতে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় তাকে (AIDS) এইডস বলে।

এইডস বিস্তারের মাধ্যমগুলি লিখ

(AIDS) এর বিস্তারের  মাধ্যমসমূহঃ নিম্নে এইডস রোগের বিস্তৃতির মাধ্যমগুলি উল্লেখ করা হলো।

১। অরক্ষিত যৌন মিলনঃ এইচআইভি আক্রান্ত পুরুষ বা নারীর সাথে অরক্ষিত যৌন মিলনের ফলে এইডস বেশি ছড়িয়ে থাকে। এচাড়া অবাধে যৌন আচরণ, অনিয়ন্ত্রিত যৌন কার্যক্রম, যৌন মিলনে অসতর্কতা AIDS রোগের বিস্তৃতির কারণ। Varginal ও Oral উভয় ধরনের যৌন মিলনের মাধ্যমে  HIV/AIDS রোগ বৃদ্ধি পাবার সম্ভবনা থাকে।

২। রক্তের মাধ্যমেঃ AIDS এ আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে এইডস হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি যেমন- সুঁচ, সিরিঞ্জ, ব্লেড, খুর ইত্যাদি ব্যবহারের দ্বারা ও এইডস ছড়িয়ে থাকে। এইডস রোগে আক্রান্ত রোগীর রক্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। রক্ত গ্রহণের আগে পরীক্ষা করে নিতে হবে।

৩। আক্রান্ত মায়ের দ্বারাঃ AIDS রোগে আক্রান্ত মহিলা গর্ভধারণ করলে তার সন্তানের মধ্যে এ রোগ ছড়াতে পারে। জম্মের পর মায়ের দুগ্ধপানের মাধ্যমে শিশুর HIV/AIDS হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও রক্তজাত সামগ্রী শরীরে গ্রহণের দ্বারা এইডস রোগ ছড়ায়।

৪। মাদকাসক্তদের ইনজেকশন ভাগাভাগি করে ব্যবহারের মাধ্যমেঃ ড্রাগ বা ইনজেকশন ব্যবহারে যদি একই সূঁচ একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করে, তবে HIV ভাইরাস সহজেই একজন থেকে আরেকজনের শরীরে প্রবেশ করে।

৫। অন্যান্য কারনঃ নগরায়ন, শহরায়ন, ভ্রাম্যমাণ শ্রমিক, জানবহন শ্রিমক, দরিদ্র্য মানুষ AIDS রোগের জন্য বেশি ঝুকিপূর্ণ। কেননা তারা তাদের জীবনমান সম্পর্কে তেমন সচেতন থাকে না। পতিতাবৃত্তি এইডস রোগ ছড়ানের অন্যতম একটি কারণ। পতিতাদের মধ্যে এইচআইভি/এইডস রোগের সম্ভবনা বেশি থাকে কারণ পতিতারা বিবিন্ন মানুষের সাথে সঙ্গমে মিলিত হয়। এদরন মধ্য ড্রাগ ব্যবহারের প্রবণতাও বেশি লক্ষ্য করা যায় যা HIV/AIDS রোগ ছড়ানোতে সহায়ক।

বন্যা কি? বন্যার ফলাফল বা ক্ষতিসমূহ লিখ

বন্যা কি? বন্যার ক্ষতিসমূহ লিখ

ভূমিকাঃ- বর্তমানে প্রাকৃতিক দূর্যোগ হিসেবে যে নামটি সবচেয়ে বেশি শোনা যায় তা হলো বন্যা।বন্যা প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে অন্যতম। প্রতি বছরই বন্যা সংঘঠিত হয়ে থাকে।তবে এর মাত্রা প্রতিবছর সমান হয় না কোন বছর বেশি বা কোন বছর কম হয়। বন্যার ফলে ঘরবাড়ি নষ্ট সহ পশু-পাখি, প্রাণীর ও জীবন বিপন্ন হয়।

বন্যা কি? বন্যার ফলাফল বা ক্ষতিসমূহ লিখ


বন্যাঃ বন্যা এমন একটি জিনিস যেটির অর্থ এটায় যে খাল-বিল, নদী-নালার পানি যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে জনপদে ঢুকে পড়ে জনজীবনে ক্ষতি সৃষ্টি করে। অর্থাৎ, নদী-নালার পানি যখন স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে বেশি থাকে তখন তাকে বন্যা বলে। বন্যা হলো একটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন্যা হল পানির অত্যধিক প্রবাহ যা সাধারণত শুষ্ক জমিকে নিমজ্জিত করে। অর্থাৎ বন্যা হলো এমন  একটি পানি প্রবাহ যা স্বাভাবিক অবস্থায় প্লাবনমুক্ত ভূমিকে প্লাবিত করে। "প্রবাহিত পানি" অর্থে শব্দটি জোয়ারের প্রবাহের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।

বন্যার ফলাফল বা বন্যার ফলে সৃষ্ট ক্ষতিসমূহ আলোচনা কর

বন্যার ফলাফলঃ নিম্নে বন্যার ফলাফল বা ক্ষতি আলোচনা করা হলো-

১। বন্যার ফলে বিভিন্ন জীব বৈচিত্র নষ্ট হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রাণীর আবাসন সমস্যা দেখা দেই।

২। বন্যার ফলে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়।

৩। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেয় 

৪। বন্যার ফলে রোগ-জীবাণু মহামারি আকারে ধারণ করে।বন্যার ফলে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ সহ পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়।

৫। বন্যার ফলে পরিবেশ দূষিত হয় পরিবেশ দূষণের ফলে মানব সমাজ বিপর্যস্ত হয়। বন্যার ফলেই বিভিন্ন পচা বর্জ্য পরিবেশকে দূষিত করে।

৬। বন্যার ফলে নদীতে পলি জমে যার কারণে নদী ভরাট হয়ে যায় এবং পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।

৭। জ্বালানি সংকট দেখা দেয় কারণ, মানুষ সহ আবাসনের সবকিছু বন্যার পানিতে ভেসে যায়।

৮। বন্যার ফলে নদীর প্রবাহের ব্যাপক পরিবরতন হয়।

৯। বন্যার ফলে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয় যার কারণে অনেক মানুষ ও প্রাণী মারা যায়।

১০। বন্যার ফলে দূর্ভিক্ষের সৃষ্ট হয়। এতে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যায়।

১১। বন্যার ফলে দেশে খাদ্য সংকট দেখা যায় কারণ বন্যার ফলে সকল প্রকার ফসল নষ্ট হয়ে যায়।

১২। বন্যার ফলে মানুষের সবকিছু নিঃস হয়ে যায় যার ফলে ব্যক্তি ঋণে জর্জরিত হয়ে যায়।

১৩। বন্যার ফলে অর্থনৈতিতে ব্যাপক ক্ষতি হয় কারণ গ্রামের অর্থনীতির মূল হলো কৃষি আর বন্যায় যখন কৃষি জমি প্লাবিত হয় তখন মানুষের সকল ফসল পানিতে ডুবে যায় যাতে করে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে আসে।

১৪। শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটে: বন্যার কারণে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যায় বা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায় এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয়।

১৫। যোগাযোগ ব্যবস্থার ভেঙে পড়া: বন্যার সময় রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, রেললাইন ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে গ্রামের সঙ্গে শহরের এবং এক জেলার সঙ্গে আরেক জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

পরিশেষে বলা যায় যে, বন্যার ফলে মানব জীবন ও সমাজ জীবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাংলাদেশে বন্যা অভিশাপস্বরুপ। 

অপরাধ কী? অপরাধের কারণসমূহ লেখ

অপরাধ কি? অপরাধের কারণসমূহ আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ- আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে করে দিয়েছে অনেক সহজতর। এর সাথে সাথে আমাদেরকেও দিয়েছে নানা ধরনের জটিল সমস্যা। এসব সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো অপরাধ প্রবণতা। মানুষের অবাঞ্ছিত আচরণই অপরাধ। বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলিতে অপরাধের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা নগরের জনগণকে অতিষ্ঠ করছে।

অপরাধ কী? অপরাধের কারণসমূহ লেখ

অপরাধঃ অপরাধ হলো এমন এক ধরনের সমাজবিরোধী আচরণ বা কাজ যা জনসাধারণের স্বাভাবিক অনুভূতির বিরুদ্ধে কাজ করে ও দেশের আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়ে থাকে।

সমাজবিজ্ঞানী স্টেফেন এর মতে ''অপরাধ হলো সেই সকল কাজ যা করা বা না করর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে।''

অধ্যাপক এফ আর খানের মতে ''যেসব আচরণ সমাজ ও নৈতিকতা বিরোধী তাকে অপরাধ বলে।''

স্টিফেন বলেছেন অপরাধ হলো সেই সব কাজ বা আচরণ না করা যার জন্য আইনে শাস্তিন বিধান রয়েছে।''

Readcliffe Brown  এর মতে ''যে প্রচলিত রীতিনীতি ভঙ্গ করলে শাস্তির ব্যবস্থা আছে তাই অপরাধ।''

পরিশেষে বলা যায় যে সকল কাজ সমাজের চোখে অন্যায় এবং আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য সে সকল কাজই অপরাধ।

অপরাধের কারণসমূহ:-

অপরাধের পেছনে বহুবিধ কারণ বিদ্যমান রয়েছে। দেশ, কাল, পাত্র ভেদে এসব কারণ ভিন্ন হতে পারে। নিম্নে কয়েকটি কারণ আলোচনা করা হলো।

১। মূল্যবোধের অবক্ষয়ঃ অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়।দিন দিন আমাদের মূল্যবোধগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে অপরাধের সংখ্যাও বাড়ছে।

২। ধর্মঃ অপরাধের আর একটি অন্যতম কারন হলো ধর্ম। কেননা অনেকেই ধর্মকে ব্যবহার করে অপরাধ সংঘঠিত করে। এর মধ্যে অন্যতম উদাহরণ হলো বাংলা ভাই। 

৩। অনুন্নত শিক্ষাব্যবস্থাঃ উন্নত আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাব্যবস্থার বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের চরিত্র গঠনে আমাদের শিক্ষা তেমন অবদান রাখতে পারছেনা।ফলে মানুষের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাব দেখা যাচ্ছে । যার কারণে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৪। দারিদ্র্যঃ অপরাধ প্রবণতার অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্যতা। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ ফলে এ দেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। আর এই দারিদ্র্যতার জন্য তারা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মত অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

৫। শিল্পায়নঃ অপরাধের আর একটি কারণ হলো শিল্পায়ন। শিল্পায়নের ফলে মানুষ শহরে এসে কল-কারখানায় কাজ করে অল্প বেতন পায় যাতে তার মাসব্যাপী চলতে অসুবিধা হয় তখন সে চুরি, ছিনতাইয়ের অপরাধে যুক্ত হয়ে যায়।

৬। বেকারত্ব: চাকরি বা কর্মসংস্থানের অভাবে যুবসমাজ হতাশ হয়ে অপরাধে জড়ায়। কাজ না পেলে তারা অবৈধ পথে উপার্জনের চেষ্টা করে।

৭। মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব: টিভি সিরিয়াল, সিনেমা বা সোশ্যাল মিডিয়াতে অপরাধমূলক বিষয় glorify করার কারণে অনেকেই তা অনুসরণ করে।

৮। পারিবারিক অবহেলা ও ভাঙন: পারিবারিক দারিদ্র্য, মা-বাবার বিচ্ছেদ, অসুখী দাম্পত্য জীবন ইত্যাদি কিশোর-তরুণদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে এবং তারা অপরাধী হয়ে ওঠে।

৯। মাদকের সহজলভ্যতা: মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ সহজেই নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে এবং অপরাধ করে টাকা জোগাড় করে।

১০। দুর্বল আইন ও বিচারব্যবস্থা: অপরাধ করে অনেকেই শাস্তি পায় না। ফলে অপরাধীরা উৎসাহ পায় এবং অপরাধ বাড়ে।

বাংলাদেশের অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার জন্য অনেক কারণ বিদ্যমান রয়েছে। তাই আমাদের উচিত অপরাধ কমানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

কিশোর অপরাধ কি? কিশোর অপরাধের প্রকৃতি আলোচনা কর।

কিশোর অপরাধ কি? 

ভূমিকাঃ- কিশোর অপরাধের প্রবণতা সাম্প্রতিককালে একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা। উন্নত দেশগুলিতে এ সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিল্পায়ন ও শহরায়নের সাথে সাথে কিশোর অপরাধ প্রবণতা ও বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিশোর অপরাধ কি? কিশোর অপরাধের প্রকৃতি আলোচনা কর।


কিশোর অপরাধঃ অপ্রাপ্ত বয়সের ছেলেমেয়েদের অবাঞ্জিত কার্যকালাপই হলো কিশোর অপরাধ। অর্থাৎ অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়েদের দ্বারা সংঘটিত দেশের আইন ও সমাজবিরোধী এবং সমাজের রীতিনীতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থি কার্যকলাপই কিশোর অপরাধ।

সমাজবিজ্ঞানী বিসলার এর মতে ''কিশোর অপরাধ প্রচরিত সামাজিক নিয়মকানুনের উপর অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের অবৈধ হস্তক্ষেপ।''

বার্টের মতে-''কোনো ছেলে মেয়েকে তখনই অপরাধী মনে করতে হবে যখন তার অসামাজিক কাজের জন্য আইনগত ব্যবস্থা প্রয়োজন পড়ে।''

কিশোর অপরাধের প্রকৃতি আলোচনা কর।

কিশোর অপরাধ সংক্রান্ত এ. ভি. জন এর মতে-''কিশোর অপরাধী হচ্ছে নির্দিষ্ট বয়ঃসীমার মধ্যে দেমের প্রচলিত আইন ভঙ্গকারী ও সামাজিক নিয়ম লঙ্ঘনকারী  যাকে চারিত্রিক সংশোধনের জন্য কোন বিশেষ কর্তৃপক্ষ বা বিচারের সম্মুখে হাজির করা হয়।''

কিশোর অপরাধের প্রকৃতিঃ অপরাধ ও কিশোর অপরাধের প্রকৃতি নির্ভর করে প্রধানত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সমাজের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ভৌগলিক অবস্থার উপর। কিশোর অপরাধ মূলত শিল্প সমাজের একটি ব্যাধি। শিল্পায়ন ও নগরায়নের সূচনা থেকে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। তবে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দ্রুত আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন, মূল্যবোধের অবক্ষয়, পাশ্চাত্য ধ্যা-ধারণা ও জীবনধারা অনুপ্রবেশের ফলে কিশোর অপরাধ ব্যাপকতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৬৩ সালের তুলনায় ১৯৭৩ সালে কিশোর অপরাধ ৪৯৩.৬ ভাগ বেড়েছে। বর্তমানে তা আরো অনেক বেশি।

বাংলাদেশের কিশোররা সাধারণত নিম্নলিখিত অপরাধ বেশি করে থাকে। যেমনঃ

১। স্কুল থেকে পালানো।

২। বাড়ি থেকে  নিরুদ্দেশ হওয়া।

৩। পরীক্ষায় নকল করা।

৪। পথেঘাটে উচ্ছৃঙ্খলতা প্রদর্শন করা।

৫। পকেট মার।

৬। জোর পূর্বক টাকা আদায় করা।

৭। রাস্তাঘাটে মারপিট, চুরি, ছিনতাই।

৮। বোমাবাজি, এসিড নিক্ষেপ।

৯। রাজনৈতিক দলের নামে নাশকতামূলক কাজ করা।

১০। মাদকদ্রব্য গ্রহণ ।

১১। মা-বাবা বা গুরুজনের অবাধ্য হয়ে খারাপ পতে চলা।

১২। ছোট-খাট চুরি করা।

১২। বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ।

১৩। সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করে হুমকি, প্রতারণা বা ব্ল্যাকমেইল করা।

১৪। মেয়েদের ইভটিজিং ও যৌন হয়রানি করা।

১৫। অনলাইনে গ্যাং সংস্কৃতির চর্চা ও সহিংসতা ছড়ানো

কিশোর অপরাধের প্রকৃতির বিশ্লেষণ:

  • কিশোর অপরাধ ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের পারস্পরিক ব্যর্থতার ফল।
  • এটি অপরিকল্পিত নগরায়ন, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং নৈতিক শিক্ষার অভাবের প্রতিফলন।
  • পরিবারে বিচ্ছিন্নতা, মা-বাবার ব্যস্ততা, ও নজরদারির অভাব কিশোরদের বিপথগামী করে।
  • বর্তমানে গ্রামাঞ্চলেও কিশোর অপরাধ প্রবেশ করেছে, যা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও মিডিয়ার প্রভাবের ফল।
  • কিশোর অপরাধীরা একসময় প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীতে পরিণত হয়, যদি সঠিকভাবে সংশোধনের সুযোগ না পায়।

বাংলাদেমের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও মানুষের চলনশীলতা বৃদ্ধির ফলে কিশোর অপরাধ গ্রামাঞ্চলেও প্রবেশ করেছে। তবে গ্রামের কিশোর অপরাধ মূলত দারিদ্র্যতার সাথে জড়িত।

পরিশেষে বলা যায় কিশোর অপরাধ সামাজিক সমস্যার মধ্য অন্যতম একটি সামাজিক সমস্যা। যা প্রতিরোধ করা প্রয়োজন তা না হলে পরবর্তীতে এই সকল কিশোর অপরাধীরাই বড় বড় অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হবে।

অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য গুলি লেখ

অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য লিখ?

ভূমিকা:- অপরাধ হলো আইনবিরোধী কাজ। যখন ব্যক্তি সমাজ স্বীকৃত পন্থায় আচরণ না করে সমাজের অস্বীকৃত পন্থায় আচরণ করে সামাজিক সংহতি ও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত করে তখন এ ধরনের আচরণকে বিচ্যুত আচরণ বলে।

অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য কি কি

অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য

নিম্নে অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে কয়েকটি পার্থক্য আলোচনা করা হলো-

১। সংজ্ঞাগত পার্থক্য

আইন লঙ্ঘন করাই অপরাধ। সমাজ ও আইন কর্তৃক অস্বীকৃতি ও অস্বাভাবিক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত। সমাজে এমন অনেক কাজ লক্ষ্য করা যায় যা আইনে নিষিদ্ধ না হলেও সামাজিক স্বাভাবিক ও কাঙ্খিত আচরণের পরিপন্থি তাকেই বিচ্যুতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

২। আওতাভুক্ততা

আইন ভঙ্গমূলক বা বিরোধী যে কোন কাজ অপরাধের আওতায় পড়ে। সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থি কাজ যা আচরণ বিচ্যুতির পর্যায়ে পড়ে।

৩। সামাজিক পরিবর্তন

সামাজিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় সামাজিক বিচ্যুতিমূলক আচরণের কোনো দিক কখনো বা অপরাধমূলক আচরণে পরিণত হতে পারে। যাই হোক সামাজিক পরিবর্তন ঘটুক না কেন অপরাধ সবসময় বিচ্যুত আচরণের মধ্যে পড়ে।

৪। আচরণ

সব অপরাধই সামাজিক বিচ্যুতির আচরণ। কিন্তু সব সামাজিক বিচ্যুত আচরণ অপরাধ নয়।

৫। ধরণ

কোন কোন কাজ আইন দ্বারা লিপিবদ্ধ হলে অথবা আইন অনুসারে নির্ধারিত কর্তব্যে অবহেলা হলে তা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। সমাজের ঐতিহ্য, মূল্যবোধ ও রীতিনীতির দৃষ্টিকোণ হতে যেসব আচরণ সমাজের ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ বিরোধী সেটাই বিচ্যুতি।

৬। নিয়ন্ত্রণ

অপরাধ হলো এমন এক কাজ যা আনুষ্ঠানিক কোন সংস্থা দ্বারা পর্যাপ্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না । বিচ্যুতিমূলক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা অপরাধ থেকে অপেক্ষাকৃত সহজ কাজ।

৭। শাস্তি

অপরাধমূলক আচরণ বা কাজের জন্য রাষ্ট্র বা সমাজ কর্তৃক শাস্তি নির্ধারিত থাকে।বিচ্যুতিমূলক আচরণের জন্য শাস্তি নির্ধারিত হয়। অপরাধের শাস্তি কঠোর হয়ে থাকে তবে বিচ্যুতির নয়।

৮। আইনগত গ্রহণযোগ্যতা

অপরাধ আইন দ্বারা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য কাজ। অপরাধের ক্ষেত্রে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিচার ও দণ্ড কার্যকর করা হয়। অন্যদিকে, বিচ্যুতি সবসময় আইনগতভাবে নিষিদ্ধ নয়; এটি সামাজিক বা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য হলেও আইনের আওতায় পড়ে না।

৯। বিচার ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি

অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীকে আদালতের মাধ্যমে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু বিচ্যুতির ক্ষেত্রে সাধারণত সামাজিক প্রতিক্রিয়া বা ভর্ৎসনা দিয়ে তা মোকাবিলা করা হয়  কোনো আনুষ্ঠানিক বিচার প্রয়োজন হয় না।

১০। প্রভাবের মাত্রা

অপরাধ সমাজে সরাসরি ও গুরুতর ক্ষতির সৃষ্টি করে, যেমন: হত্যা, চুরি, দুর্নীতি ইত্যাদি। আর বিচ্যুতি সমাজের নীতি-নৈতিকতা বা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে আঘাত করে, যেমন: অশোভন পোশাক, ব্যতিক্রমী জীবনযাপন, ইত্যাদি যা সবসময় গুরুতর ক্ষতি করে না।

১১। সামাজিক প্রতিক্রিয়া

অপরাধের ক্ষেত্রে সমাজ ও রাষ্ট্র উভয়ই কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায়। কিন্তু বিচ্যুত আচরণের ক্ষেত্রে সমাজ সাধারণত অবহেলা, সমালোচনা বা সামাজিক বর্জনের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায়।

১২। সর্বজনীনতা

অপরাধ সর্বজনীনভাবে নিন্দিত ও শাস্তিযোগ্য। কিন্তু বিচ্যুতি সময়, সমাজ ও সংস্কৃতি ভেদে ভিন্ন হতে পারে।

১৩। সংশোধনের পদ্ধতি

অপরাধ সংশোধনের জন্য আইন, আদালত ও কারাগার ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। বিচ্যুতি সংশোধনে পরিবার, শিক্ষা ও সামাজিকীকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

উপসংহার: সর্বশেষ বলা যায় অপরাধ ও বিচ্যুতি মূলত এমন এক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত এবং আইনবিরোধী আচরণ যা সমাজের সদস্য কর্তৃক গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজের সকলের দৃষ্টিতে যে কাজ আইন ভঙ্গ করে ও শাস্তির বিধান আছে তাই অপরাধ ও যেটার জন্য শাস্তি না থাকলেও সমাজের স্বাভাবিক নিয়মে বেঘাত হয় তাকেই বিচ্যুতি বলে গণ্য করা হয়।