নিরক্ষরতা কি? What is illiteracy? নিরক্ষরতা দূরীকরণের উপায়
ভূমিকাঃ কোন দেশের আর্থ সমাজিক পরিবর্তন ও অগ্রগতির মৌল প্রয়োজন হলো শিক্ষা। মানব সম্পদ উন্নয়নের সর্বোত্তম মৌলিক উপাদান শিক্ষা। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। ব্যক্তিগত ও জাতীয় উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো শিক্ষা।আর এ শিক্ষার অভাব হলো নিরক্ষরতা। নিরক্ষরতা বাংলাদেশের অন্যতম সমাজিক সমস্যা কেননা এর কুফল আর্থ সামাজিক জীবনে মারাত্মক ক্ষতিকর। বাংলাদেশে শিক্ষা পর্যায় উন্নত নয় বলে মৌল চাহিদা পূরণে শিক্ষা এখনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না।
নিরক্ষরতাঃ সাধারণ অর্থে অক্ষর জ্ঞানের অভাবই নিরক্ষরতা। তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে নিরক্ষর হলো অক্ষর জ্ঞানহীনতা। কারণ, শিক্ষার চাবিকাঠি হলো অক্ষরজ্ঞান আর এ অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন ব্যাক্তিকে বলা হয় স্বাক্ষর বা শিক্ষিত। সুতরাং নিরক্ষর হলো স্বাক্ষরতার বিপরীত অবস্থা।
UNESCO এর মতে, ''দৈনন্দিন জীবনেরক্ষুদ্র ও সাধারণ বক্তব্যকে উপলদ্ধী সহকারে লেখতে ও পড়তে সক্ষম ব্যক্তিই স্বাক্ষর।''
১৯৬১ সারের লোকশুমারিতে বলা হয়-''উপলদ্ধি সহকারে যে কোন ভাষা পড়তে সক্ষম ব্যক্তিই স্বাক্ষর বা শিক্ষিত আর যে ব্যক্তি অক্ষম তাকে নিরক্ষর বলা হয়।''
১৯৭৪ সালের লোকশুমারিতে বলা হয় ''যে কোন ভাষা লিখতে ও পড়তে সক্ষম হওয়াকে স্বাক্ষরতার মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।''
১৯৮১ সালের লোকশুমারিতে বলা হয় ''পাঁচ বছর বয়সের উপরের যে কোন ব্যক্তি যে কোন ভাষায় চিঠি লিখতে সক্ষম হলে তাকে স্বাক্ষর হিসেবে ধরা হয়েছে এবং যে কোন ভাষায় চিঠি লিখতে অক্ষম ব্যক্তিকে নিরক্ষর হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।''
১৯৯১ সালের লোক শুমারিতে বলা হয় ''যে কোনো ভাষায় ঠিঠি লিখতে সক্ষম ব্যক্তিকে স্বাক্ষর ও যে কোন ভাষায় চিঠি লিখতে অক্ষম ব্যক্তিকে নিরক্ষর হিসেবে ধরা হয়েছে।
According to Statistical Poket Book of Bangladesh ''The concept illtieracy used in various censuses conducted in Bangladesh has not been uniformed in 1981 censuses a person was treated a literature if he could write a letter any language age more than 5 years.''
নিরক্ষরতা দূরীকরণের উপায়
নিরক্ষরতা দূরীকরণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় তুলে ধরা হলো
১। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন: প্রত্যেক শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক ও বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের স্কুলে পাঠানো ও পাঠদানের সকল ব্যবস্থা করতে হবে।
২। শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধি: শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন ও সরকারের উদ্যোগে প্রচার কার্যক্রম চালাতে হবে।
৩। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা: যেসব ব্যক্তি শিশুকালে শিক্ষার সুযোগ পাননি, তাদের জন্য রাতের স্কুল, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র, প্রবীণ শিক্ষা কেন্দ্র ইত্যাদি চালু করতে হবে।
৪। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণোদনা: দারিদ্র্য অনেক সময় শিক্ষার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের সন্তানদের জন্য শিক্ষা উপকরণ, বৃত্তি, স্কুলে দুপুরের খাবার, পোশাক সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। নারী শিক্ষা উন্নয়ন: নারীদের মধ্যে নিরক্ষরতার হার বেশি। তাই নারী শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
৬। এনজিও ও বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা: বিভিন্ন এনজিও ও সমাজসেবামূলক সংগঠন গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষাবিস্তারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সরকার ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে বৃহৎ পরিসরে এ কার্যক্রম চালাতে পারলে নিরক্ষরতা কমানো সম্ভব।
পরিশেষে বলা যায়, পাঁচ বছর বয়সের উপরের যে কোন চিঠি লিখতে অক্ষম ব্যক্তি বা ব্যক্তির সমষ্টিই হলো নিরক্ষর। নিরক্ষর হলো এমন একটি নেতিবাচক অবস্থা যে অবস্থায় সমাজের সদস্য হিসেবে ব্যক্তি তার ভাষাগত ক্ষেত্রে পঠন-পাঠন ও লিখতে সমর্থ হয় না।

No comments:
Post a Comment