Showing posts with label গবেষণা ও পরিসংখ্যান. Show all posts
Showing posts with label গবেষণা ও পরিসংখ্যান. Show all posts

ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সহ সম্বন্ধ কি? সহ-সম্পর্ক ও নির্ভরণকের মধ্যে পার্থক্য লিখ

ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সহ সম্বন্ধ কি? সহ-সম্পর্ক ও নির্ভরণকের মধ্যে পার্থক্য লিখ

ভূমিকা:- কোন চলক যদি প্রাকৃতিক বা যে কোন কারণে পরিবর্তিত হয় কায়লে তার প্রভাবে তার সাথে সামাজিকভাবে সংশ্লিষ্ট লোকগুলোও আপনা আপনি পরিবর্তিত প্রায় সামাজিক প্রভাবগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হয়। তাদের এ সম্পর্ক সহজাত। তবে যে পরিবর্তন ধনাত্মক যা ঋণাত্মক যে কোনটিই হতে পারে।

ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সহ সম্বন্ধ কি? সহ-সম্পর্ক ও নির্ভরণকের মধ্যে পার্থক্য

ধনাত্মক সহনম্বন্ধ (possitive correlation):

পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলাকের মধ্যে যদি একটি চলকের পরিবর্তনের সাতে সাথে অপর চলকটিও একই দিকে একই গতিতে পরিবর্তিত হয় তাহলে তাকে ধনাত্মক সহসম্বন্ধ বলে। উদাহরণস্বরূপ, বেকারত্বের যাত্রা বৃদ্ধি পেলে সন্ত্রাসের মাত্রাও বৃদ্ধি পায় এখানে বেকারত্ব ও সন্ত্রাস দুটি চলকেরই মাত্রা  একমুখী।


ঋণাত্মক সহ সম্বন্ধ (Negative correlation):

পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত দুটি চলকের মধ্যে যদি একটি চলক একদিকে হয়  দিতে এবং অপর চলকটি বিপরীত দিকে পরিবর্তিত হয় তাহলে তাকে ঋণাত্মক সহসম্বন্ধ বা বিপরীতমুখীসম্পর্ক বলে।   উদাহরণস্বরুপ-  সমাজে আর্থিক সাচ্চলতা সাথে সাথে আর্থিক দুর্নীতি হ্রাস পায়। এখানে আর্থিক সাচ্চলতা ও আর্থিক দূর্ণীতি চলক দুটির মধ্যে ঋণাত্মক বা বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান।

এতএব, পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলকের একটির পরিবর্তনে অন্যটির মধ্যেও পরিবর্তন সৃষ্টি  হয়।  তবে যে পরিবর্তন একমুখী বা ঋণাত্মক আবার বিপরীতমুখৗ বা ঋণাত্মক যে কোনটিই হয়ে থাকে।

 

সহ-সম্পর্ক  নির্ভরণকের মধ্যে পার্থক্য

সহ-সম্পর্ক ও নির্ভরণের মধ্যে কয়েকটি পার্থক্য নিম্নে তুলে ধরা হলো।।


১. দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে যে সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয় তা একই দিকে বা বিপরীত দিকে পরিবর্তনের প্রবণতা পরিমাণ করতে সহ-সম্পর্ক নির্ণয় করতে হয়।অপরদিকে, পরিবর্তনশীল দুটি চলকের একটি নির্দিষ্ট কোন মানের উপর ভিত্তি করে অপর চলকের অনুরূপ গড় মানের যে পরিবর্তন হয় তাকে নির্ভরণ বলা হয়।


২. সহ-সম্পর্কের গাণিতিক বা সংখ্যাত্মক প্রকাশ হলো সহ-সম্পর্ক সহগ বা আংক। নির্ভরণের গাণিতিক বা সংখ্যাত্মক প্রকাশ হলো নির্ভরাংক।


৩. সহ-সম্পর্ক এককমুক্ত বিশুদ্ধ সংখ্যা। নির্ভরণ বিশুদ্ধ সংখ্যা নয়।


৪. সহ-সম্পর্কের উদ্দেশ্য হলো উভয় চলকের মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা পরীক্ষা করা। নির্ভরণ দ্বারা একটি চলকের উপর অন্যটির কতখানি। নির্ভরশীলতা রয়েছে তা পরিমাপ করা হয়।


৫. সহ-সম্পর্ক দ্বারা পরিবর্তনের কারণ প্রকাশ পায় না। নির্ভরণ দ্বারা একটি চলকের পরিবর্তনই যে অপর চলকের পরিবর্তনের কারণ তা প্রমাণিত হয়।


৬. সহ-সম্পর্ক হলো সম্বন্ধযুক্ত চলকদ্বয়ের আপেক্ষিক পরিমাপ। নির্ভরণ হচ্ছে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটো চলকের পরম পরিমাপ।


৭. সহ-সম্পর্ক দ্বারা দুটি চলকের মধ্যে সম্পর্কের ধাপ জানা যায়। নির্ভরণ দ্বারা দুটি চলকের সম্পর্কের প্রকৃতি সম্বন্ধে জানা যায়।


৮. সহ-সম্পর্কে উভয় চলকই সমান গুরুত্ব পায় এবং কোনটি নির্ভরশীল বা স্বতন্ত্র তা নির্ধারিত হয় না। নির্ভরণে একটি চলক নির্ভরশীল এবং অন্যটি স্বতন্ত্র চলক হিসেবে নির্ধারিত হয়।


৯. সাধারণত একটি স্কেলার মান (–1 থেকে +1) দিয়ে সম্পর্কের মাত্রা বোঝানো হয়। একটি সমীকরণ বা রেখা (Line of best fit) দিয়ে দুটি চলকের মধ্যে নির্ভরতা প্রকাশ করা হয়।


উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, সহ-সম্পর্ক ও নির্ভরণ উভয়ই চলকগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হলেও, এগুলোর উদ্দেশ্য, ব্যাখ্যা ও ফলাফল ভিন্ন। সহ-সম্পর্ক কেবল চলকের মধ্যে সম্পর্কের উপস্থিতি ও তার দিক নির্দেশ করে, যেখানে নির্ভরণ চলকগুলোর নির্ভরতার মাত্রা ও পূর্বাভাস প্রদান করে। গবেষণার উদ্দেশ্য অনুসারে কোন পদ্ধতি প্রয়োগ হবে তা নির্ধারণ করতে পার্থক্যগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বহুপর্যায়ী নমুনায়ন কী? স্তরিত নমুনায়ন ও বহুপর্যায়ী নমুনায়নের মধ্যকার পার্থক্য লিখ

বহুপর্যায়ী নমুনায়ন কী?  স্তরিত নমুনায়ন ও বহুপর্যায়ী নমুনায়নের মধ্যকার পার্থক্য

উত্তর:- নমুনায়ন হলো একটি কৌশল। নমুনা নির্বাচন কর হয় কৌশলের মাধ্যমে। এ কৌশলকে সাধারণত দু'ভাগে ভাল করা যায়। যথা সম্ভাবনা ও নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন। সম্ভাবন নমুনায়ন পদ্ধতির অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে বহুপর্যায়ী নমুনায়ন।

বহুপর্যায়ী নমুনায়ন কী? স্তরিত নমুনায়ন ও বহুপর্যায়ী নমুনায়নের মধ্যকার পার্থক্য

বহু পর্যায়ী নমুনায়ন:

এই পদ্ধতি গুচ্ছ নমুনায়নে একটি বর্ধিত রূপ। এই পদ্ধতিতে প্রথমে সমগ্রকটিকে কয়েকটি গুচ্ছে পরিণত করে দৈব নমুনায়নের সাহায্যে কয়েকটি গুচ্ছ চয়া করা হয়। চয়নকৃত গুচ্ছগুলোকে প্রথম পর্যায়ী একক বলে তারপর পর্যায়ী একক বা গুচ্ছগুলোকে আবারও গুচ্ছে পরিণ করে সেখান থেকে দৈবচয়নের সাহায্যে নতুন কিছু গুচ্ছ চায় করা হয়। অনুরূপভাবে প্রয়োজন অনুসারে কয়েক পর্যায়ে গুল চয়ন করে শেষ পর্যায় থেকে দৈবচয়নের মাধ্যমে নমুনার জন্য একক সংগ্রহ করা হলে তাকে বহু পর্যায় নমুনায়ন বলা হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, বহুপর্যায়ী নমুনায়ন ক্রমান্বয়ে তথ্য সমা করে। বিশেষ ক্ষেত্রে বহু পর্যায়ী নমুনায়নের ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ।


স্তরিত নমুনায়ন ও বহুপর্যায়ী নমুনায়নের মধ্য পার্থক্য

স্তরিত নমুনায়ন ও বহুপর্যায়ী নমুনায়ন সরল চোখে। দেখলে অনেকাংশে একই রকম মনে হলেও এদের মধ্যে কতকগুলো পার্থক্য দৃশ্যমান।

স্তরিত ও বহুপর্যায় নমুনায়নের পার্থক্য: নিচে স্তরিত নমুনায়ন ও বহুপর্যায়ী নমুনায়নের মধ্যকার পার্থক্যগুলো নিচে দেওয়া হলো।

১. সমগ্রকের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে বিভক্ত করে যে দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়, তাকে স্তরিত নমুনায়ন বলা হয়। অন্যদিকে, একাধিক পর্যায় নির্বাচন করার পদ্ধতিতে বহুপর্যায়ী নমুনায়ন বলা হয়।

২. স্তরিত নমুনায়ন পদ্ধতিতে খরচ বেশি পড়ে। অপরদিকে, বহুপর্যায়ী নমুনায়ন পদ্ধতিতে খরচ তুলনামূলক বেশি।

৩. স্তরিত নমুনায়নে নমুনা বিচ্যুতির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হয়। বহুপর্যায়ী হওয়ার কারণে, নমুনা বিচ্যুতি বেশি হয়।

৪. অধিক প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনার প্রয়োজন হলে স্তরিত নমুনায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, বহুপর্যায়ী নমুনায়নে পর্যায়ের সংখ্যা বেশি হলে বহুপর্যায়ী পদ্ধতির ব্যবহার দেখা যায়।

৫ স্তরিত নমুনায়ন পদ্ধতিতে সমগ্রকের বিশেষ উদ্দেশ্যে কতগুলো অংশে ভাগ করা হয় এবং এ ভাগগুলোই হলো স্তর। বহুপর্যায়ী নমুনায়নে প্রথমেই সমগ্রককে যে কতগুলো বড় বড় নমুনা এককে  বিভক্ত করা হয়। সেগুলোকে প্রাথমিক নমুনা একক বলা হয়।

৬. প্রতিটি স্তর থেকে দৈবচয়িতভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বহুপর্যায়ী নমুনায়নে প্রাথমিক নমুনা একককে পুনরায় ক্ষুদ্র ক্ষুন্ন অংশে বিভক্ত করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

৭. স্তরিত নমুনায়নের ক্ষেত্রে পূর্বনির্ধারিত বৈশিষ্ট্য এর ভিত্তিতে স্তরবিন্যাস করা হয়। বহুপর্যায়ী নমুনায়নে অনুসন্ধানের ক্ষেত্র বড় হলেই পর্যায় সৃষ্টি করা হয়।

৮. স্তরিত নমুনায়ন তুলনামূলকভাবে সহজ ও সরল পদ্ধতি। বহুপর্যায়ী নমুনায়ন জটিল এবং ধাপে ধাপে পরিচালনা করতে হয়।

৯. স্তরিত নমুনায়ন-এ তথ্য সংগ্রহ হয় নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য অনুসারে গঠিত স্তর থেকে। বহুপর্যায়ী নমুনায়ন-এ তথ্য সংগ্রহ হয় বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে।

১০. স্তরিত নমুনায়ন বেশি নির্ভুল ও সঠিক ফলাফল প্রদান করে, কারণ প্রতিটি স্তরের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়। বহুপর্যায়ী নমুনায়ন-এ পর্যায় বেশি হলে সঠিকতা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।

স্তরিত নমুনায়ন ও বহুপর্যায়ী নমুনায়ন উভয়ই সম্ভাব্য নমুনায়নের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। স্তরিত নমুনায়ন পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সমগ্রককে স্তরে ভাগ করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যা তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ভুল ও সঠিক ফলাফল দেয়। অপরদিকে, বহুপর্যায়ী নমুনায়ন পদ্ধতি বড় আকারের এবং জটিল সমগ্রকে ধাপে ধাপে ভাগ করে নমুনা সংগ্রহে সহায়ক, বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের সময়।


সহসম্বন্ধ সহগ ও নির্ভরণের মধ্যে পার্থক্য লিখ। সহসম্বন্ধ সহগের অসুবিধা আলোচনা কর।

সহসম্বন্ধ সহগ ও নির্ভরণের মধ্যে পার্থক্য এবং অসুবিধাসমূহ

ভূমিকা:- সহসম্বন্ধ সহগ ও নির্ভরণ উভয়ই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত চলকের মধ্যে সম্পর্কের মাত্রা ও গতির ধারা নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়। তবে এদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।

সহসম্বন্ধ ও নির্ভরণের মধ্যে পার্থক্য লিখ। সহসম্বন্ধ সহগের অসুবিধা আলোচনা কর।

সহসম্বন্ধ সহগ ও নির্ভরণ পার্থক্য:

সহসম্বন্ধ সহগ ও নির্ভরণের মধ্যে পার্থক্যগুলো নিম্নে দেওয়া হলো-

১. সহসম্বন্ধ  সহগ এর উদ্দেশ্য হলো দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে পরিবর্তনের কোন যোগসূত্র আছে কি না তা প্রকাশ করা।

অপরদিকে, নির্ভরণ বিশ্লেষণসহ সম্বন্ধপূর্ণ দুটি চলকের একটি অপরটির উপর কতখানি নির্ভর করে তা প্রকাশ করে।

২. সহসম্বন্ধ সহগ দ্বারা দুটি চলকের পরিবর্তনের মধ্যে সম্পর্ক কতটুকু তা পরিমাপ করা গেলেও একটি চলকের পরিবর্তনের তুলনায় অন্য চলকের সম্ভাব্যের কি পরিবর্তন ঘটবে তা নির্ণয় করা যায় না। অন্যদিকে, নির্ভরণ এর সাহায্যে একটি চলকের তুলনায় অন্য চলকে গড় পরিবর্তন কিরূপ হবে তা পরিমাপ করা যায়।

৩. দুটি চলকের সহসম্বন্ধ সহগ দ্বারা চলকটির পরিবর্তনের কোন কারণগত সম্পর্ক প্রকাশিত হয় না। নির্ভরণ বিশ্লেষণ দ্বারা একটি চলকের পরিবর্তন যে অন্য চলকের পরিবর্তনের কারণ একথা প্রমাণিত হয়।

৪. সহসম্বন্ধ সহগ বিশ্লেষণ ব্যবসায়ের বিভিন্ন কার্যকলাপের বা উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণে ব্যবসায়ীকে সাহায্য করে।

নির্ভরণ বিশ্লেষণ কোন উপাদানের গতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে অন্য উপাদানে যে গতিশীলতা পরিলক্ষিত হয় সে সম্পর্কে যথার্থ পূর্ব অনুমানে পৌঁছাতে ব্যবসায়ীকে সাহায্য করে।

৫. সমসম্বন্ধের সংখ্যাত্মক প্রকাশকে সহসম্বন্ধ সহগ বলে। নির্ভরণের সংখ্যাত্মক প্রকাশকে নির্ভরাঙ্ক বলে।

একই বা বিপরীত দিকে দুই বা ততোধিক চলকের পরিবর্তিত হওয়ার প্রবণতাকে সহসম্বন্ধ সহগ বলে। আর একটি চলকের প্রভাবে অন্য চলকের মধ্যে পরিবর্তন সাধিত হলে তা নির্ণয় করার পদ্ধতি হলো নির্ভরণ। এদের মধ্যে সামান্য কিছু মিথ্যা থাকলেও আসলের পাল্লাটাই ভারী।

সহসম্বন্ধ সহগ অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতা বা সমস্যা

দুটি চলক পরস্পরের মধ্য কিভাবে এবং কি পরিমানে সম্বন্ধযুক্ত সেটা সহসম্বন্ধ নির্দেশ করে। সামাজিক পরিসংখ্যানে একাধিক চলকের মধ্য পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ে সহসম্বন্ধ সহগের একটি আলোচিত পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি।

সহসম্বন্ধ সহগ:

দুটি চলকের মধ্য কি পরিমাণে সহসম্বন্ধ বিদ্যমান সেটা জানার প্রয়োজন হয়। দুই ও ততোধিক পরিবর্তনশীল চলকের সম্পর্কের প্রকৃতি এবং পরিমাণের গানিতিক পরিমাণকে সহসম্বন্ধ সহগ বলে।যা r প্রতীকের সাহায্য প্রকাশ করা হয়।

সহসম্বন্ধ  সহগের অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতা

সহসম্বন্ধ  সহগের মান ধনাত্মক ও ঋণাত্মক উভয়ই হতে পারে। তবে এর মান -১ থেকে +১ এর মধ্য সীমাবদ্ধ থাকে। নিম্নে সহসম্বন্ধ সহগের অসুবিধা দেওয়া হয়।

  • পরিবর্তকের সাধারণ সম্বন্ধ নির্দেশ করে মাত্র। এর সঠিকতা নিরুপণ করতে পারে না।
  • সহসম্বন্ধ সহগ পদ্ধতি একটি জটিল পদ্ধতি। এর মাধ্যমে কোন বিষয়ে ভূল ব্যাখ্যা প্রদান করা হতে পারে।
  • সহসম্বন্ধ  সহগ নির্ণয়ে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। কেননা, এটি নির্ণয় পদ্ধতি জটিল।
  • সহসম্বন্ধ সহগ কোন দফার প্রান্তিক মান দ্বারা প্রভাবিত।
  • অনেক সময় সহসম্বন্ধ  সহগের তুলনায় নির্ভরণের প্রয়োজন হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, সহসম্বন্ধ সহগের বহুবিধ সুবিধা থাকলেও ক্ষেত্রে বিশেষ এর কতকগুলো অসুবিধা পরিলক্ষিত হয়। অসুবিধাগুল্যেই মূলত সীমাবদ্ধতা। তবে সুবিধার তুলনায় এর অসুবিধাগুলো খুবই নগণ্য।

নমুনায়ন কি? নমুনায়নের প্রকারভেদ আলোচনা কর

নমুনায়ন কি? নমুনায়নের প্রকারভেদ

উত্তর:- নমুনায়ন হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে সমগ্রকের একটি অংশ পরীক্ষা করে সমগ্রক সম্বন্ধে তথ্য পাওয়া যায়। সামাজিক গবেষণায় নমুনায়ন বা Sampling এর ভূমিকা অপরিসীম। কারণ, গবেষণায় সমগ্রক হতে তথ্যসংগ্রহ অনেক সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। নমুনায়ন বা Sampling এই ব্যয়ভার এবং সময় সামাজিক গবেষণায় দুটোই কমিয়ে এনেছে।

নমুনায়ন কি? নমুনায়নের প্রকারভেদ আলোচনা কর

নমুনায়ন সংজ্ঞা

বিভিন্নভাবে নমুনায়নের সংজ্ঞায়ন করা যায়। বিভিন্ন মনীষী, বিজ্ঞানী নমুনায়নের সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। নিচে কয়েকজন গবেষক এর সংজ্ঞা আলোকপাত করা হলো। যথা-

P.V. Young বলেন, "পরিসংখ্যানিক নমুনা হচ্ছে কোনো সমষ্টির একটি ক্ষুদ্র অংশ, যা সমগ্রক থেকে চয়ন করা হয়ে থাকে।"

এ প্রসঙ্গে W.G. Good - and P.K. Hatti বলেন যে, "আক্ষরিক অর্থে নমুনায়ন হলো - বৃহৎ সমষ্টির প্রতিনিধিত্বশীল অংশ বা ক্ষুদ্রাংশ।"

C.R. Kothari তাঁর রচিত 'Research methodology method and technique' নামক গ্রন্থে বলেন যে, "A Sampling design is a definite plan for obtain a sample from a given population. It refers to the technique or the procedure the researcher would adopt in selecting items for the sample." অর্থাৎ বলা যায় যে, যে পদ্ধতির সাহায্যে নমুনা নির্বাচন করা হয়, তাকে নমুনায়ন বা Sampling বলে।

সুতরাং বলা যায়, কোনো জরিপের বিষয়বস্তুর একটি প্রতিনিধিত্বশীল মূলক অংশকে নমুনায়ন বলে বিবেচিত হয়।

নমুনায়নের প্রকারভেদ

(ক) দৈবচয়িত নমুনায়ন পদ্ধতি

যে পদ্ধতিতে তথ্য বিষ্বের প্রতিটি একক বা উপাদান নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা সমান থাকে বা স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা সমান থাকে তাকে দৈবচয়িত নমুনায়ন বা সম্ভাবনা নমুনায়ন বলে। দৈবচয়িত নমুনায়নের শ্রেণিবিভাগগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

১. সরল দৈব নমুনায়ন: দৈবচয়িত নমুনায়ন পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও সরল পদ্ধতি হলো সরল দৈব নমুনায়ন। এটি সরল নমুনায়ন পদ্ধতির ভিত্তিস্বরূপ। এ পদ্ধতিকে আবার দু ভাগে ভাগ করা যায়।

(ক) লটারি পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে তথ্য বিশ্বের N সংখ্যক একক হতে পুনঃস্থাপন করে অথবা পুনঃস্থাপন না করে উভয়ভাবে নমুনা নির্বাচন করার পদ্ধতিকে বলা হয় লটারির মাধ্যমে সরল দৈব নমুনায়ন।

(খ) দৈব সংখ্যার সারণী পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে প্রথম তথ্যর এককগুলোকে ক্রমিক নং অনুসারে সাজাতে হয়। সারাবিশ্বের আকার যত দৈব সংখ্যা সারণী হতে তত অংকের একটা কলাম বেছে নিতে হবে। তথ্যবিশ্বের আকারের সর্বোচ্চ গুণিতক গণ্য করে গুণিতকের অধিক দৈবসংখ্যা বাতিল করতে হবে। তারপর নির্বাচিত দৈবসংখ্যাকে তথ্যবিশ্বের আকার দিয়ে ভাগ করে যে ভাগশেষ পাওয়া যায় সেই সংখ্যানুযায়ী ক্রমিক নং এককই হবে নির্বাচিত একক। ভাগশেষ শূন্য হলে তথ্যবিশ্বের শেষ একক নির্বাচিত একক। একই নম্বর যুক্ত একক দুবার নির্বাচিত হলে সে নির্বাচন বাতিল করতে হবে।

২. স্তরকৃত দৈব নমুনায়ন: কোনো সমগ্রককে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভক্ত করে প্রতিটি বিভাগ হতে প্রয়োজনীয় নমুনা দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করার পদ্ধতিকে স্তরকৃত দৈব নমুনায়ন বলে। এ পদ্ধতিতে সমগ্রক বিশেষ উদ্দেশ্য কতকগুলো অংশভাগ করা হয়। এ ভাগগুলোকে বলা হয় স্তর। প্রতিটি স্তর হতে নমুনা দৈবচয়ন ভাবে সংগ্রহ করা হয়।

৩. গুচ্ছে নমুনায়ন: গুচ্ছ নমুনায়ন হলো এমন নমুনায়ন পদ্ধতি যেখানে সমগ্রক থেকে নমুনা উপাদান বা একটি করে নির্বাচন না করে দল বা গুচ্ছে হিসাবে নির্বাচন করা হয়। প্রতিটি এ সমগ্রকের ক্ষুদ্র প্রতিনিধিত্বকারী হতে নেয়া হয়।

৪। বহুপর্যায়ী নমুনায়ন: একাধিক পর্যায়ে নমুনা নির্বাচন করার পদ্ধতিকে বহুপযোগী নমুনায়ন বলে। এ পদ্ধতিতে প্রথম তথ্য বিশ্বকে কতকগুলো বড় বড় নমুনা এককে বিভক্ত করা হয়। অতঃপর প্রতিটি বড় নমুনাকে আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা হয়।

৫. কোটা নমুনায়ন:  কোটা নমুনায়ন কেবল সরকারি চাকুরি ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শাখায় নিয়োগের ক্ষেত্রে দৈবচয়িত প্রক্রিয়া থেকে নিরুপণ করা হয়। সরকার প্রতিটি এলাকা বা গোষ্ঠীকে কোটাভুক্ত করে দৈবচয়িত নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। এলাকা বা বিশেষ গোষ্টিকে কোটাভুক্ত করে নমুনা সংগ্রহ করা হয় বলে এটিকে কোটা নমুনায়ন বলে।

(খ) উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন:

যে পদ্ধতিতে অনুসন্ধানকারী উদ্দেশ্যমূলক ভাবে নিজের পছন্দ অনুযায়ী নমুনা নির্বাচন করেন, তাকে উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন বলে। এ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানকারী গবেষণার উদ্দেশ্য প্রতি লক্ষ্য রেখে নমুনা নির্বাচনে তার নিজের বিচার পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে না।

এছাড়া অন্যান্য আরো কিছু নমুনায়ন পদ্ধতি রয়েছে। যেমন-

১. পর্যায়ক্রমিক নমুনায়ন।

২. থোকে নমুনায়ন;

৩. অন্তঃপ্রবেশ নমুনায়ন ও

৪. রেখা নমুনায়ন।

নমুনায়নের সুবিধা অসুবিধাগুলো আলোচনা কর

নমুনায়নের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর

উত্তর:- গবেষণা মাত্রই তথ্যসংগ্রহ আবশ্যক। তথ্যসংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তবে গবেষণার জন্য দুটো পদ্ধতিতে সর্বাধিক তথ্যসংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এদের মধ্যে শুমারি একটি এবং অপরটি হলো নমুনায়ন। শুমারি পরিচালনার জন্য বাস্তবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর অন্যদিকে নমুনায়নে অনেক সমস্যা থাকে না। তাই সামাজিক গবেষণায় তথ্যসংগ্রহের জন্য নমুনায়ন বা Sampling অধিক গ্রহণযোগ্য এবং সুবিধাসম্মত উপায়।

নমুনায়নের সুবিধা অসুবিধাগুলো আলোচনা কর

নমুনায়নের বিভিন্ন সুবিধাবলি

১. মিতব্যয়ী পদ্ধতি:

শুমারি অপেক্ষা নমুনায়ন একটি মিতব্যয়ী পদ্ধতি। কারণ শুমারিতে প্রতিটি একক হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আর নমুনায়ন পদ্ধতিতে সমগ্রকের একটি নির্বাচিত অংশ হতে তথ্যসংগ্রহ করা হয় বলে এটি কম ব্যয়বহুল পদ্ধতি। এর ফলে আর্থিক মিতব্যয়িতা সে নমুনায়নের বৈশিষ্ট্য তা সকলের কাছে পরিষ্কার হয়ে দাঁড়ায়।

২. স্বল্পসময়:

শুমারিগুলোতে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিটি এককের নিকট পৌঁছাতে হয় বলে, এতে সময় বেশি লাগে। আবার সমগ্রকের একটি অংশের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয় বলে কম সময়ে এই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব।

৩. দ্রুত ফলাফল:

এমন অনেক সামাজিক গবেষণা আছে যেগুলো তুলনামূলক দ্রুততম সময়ে ফলাফল প্রকাশ করতে হয়। তখন শুমারি পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের চেয়ে নমুনায়ন পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহ করে সঠিকভাবে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ কর। সম্ভবপর হয়ে উঠে।

৪. কম পরিশ্রম:

শুমারি পদ্ধতিতে অধিক তথ্য সংগ্রহের কারণে শ্রমের অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক থাকে, তবে নমুনা জরিপে তুলনামূলক অল্পসময় এবং কম পরিশ্রমে অতি সহজেই সুনির্দিষ্ট তথ্যসংগ্রহ করা সম্ভব।

৫. গবেষণা মূল্যায়ন:

সামাজিক গবেষণায় অধিকাংশ সময়েই গবেষণার মূল্যায়ন বার বার করা হয়ে থাকে। তাই শুমারি পদ্ধতিতে মূল্যায়নের জন্য অধিক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। অপরদিকে, নমুনা জরিপে খুব সহজেই গবেষণার মূল্যায়ন সম্ভব।

৬. ব্যাপক ও সঠিক তথ্য:

নমুনায়ন বাছাইকৃত বা নির্বাচিত এককগুলোর তথ্যানি মাঠ পর্যায় হাত সংগৃহীত হয়। ফলে প্রাপ্ত তথ্যাদির সূক্ষ বিশ্লেষণ ও কার্যকরি ফলাফল লাভ করা যায়। কিন্তু শুমারির ক্ষেত্রে এক ব্যাপক তথ্যাদির যুদ্ধ বিশ্লেষণ সম্ভব হয় না।

৭. সহজ পরিচালনা পদ্ধতি:

নমুনায়ন প্রক্রিয়ার দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাপ্ত লোকের উপস্থিতিতে সময়, শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় ঘটিয়ে খুব সহজেই গবেষণা পরিচালনা করে দ্রুত নির্ভরশীল ফলাফল পাওয়া যায়। কিন্তু শুমারি জারিপ পদ্ধতি পরিচালনা বেশ দুরূহ, সময়সাপেক্ষে ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এজন্য সামাজিক গবেষণায় তথ্য সংগ্রাহ নমুনায়ন আর্থিক সুবিধাজনক পদ্ধতি।

৮. বিজ্ঞানভিত্তিক:

নমুনা জরিপে তথ্যসংগ্রহ করার জন্য নানাবিধ নমুনায়ন কৌশল ব্যবহৃত হয়। কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে সে সমস্ত তথ্য পাওয়া যায় সেগুলোকে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে এবং অভিজ্ঞতামূলক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু শুমারি জরিপের তেমন কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি নেই।


নমুনায়নের অসুবিধাসমূহ

১. প্রতিনিধিত্বের সমস্যা:

নমুনায়নের সমস্যাগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুতর সমস্যা হলো প্রতিনিধিত্বের সমস্যা। এই সমস্যা হলো সমগ্রক হতে একক অর্থাৎ গবেষণার বস্তু হতে যেসব একক বাছাই করা হয় নমুনা নিয়ে তথ্য গ্রহণের জন্য সেই সকল একককে প্রতিনিধিত্বশীল একক বলে। এখন এই প্রতিনিধিত্বশীল একক যদি ভুল বাছাই হয়, তবে গবেষণার উপাদানের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণ সম্ভব নয়।

২. নমুনা প্রাপ্তির সমস্যা:

নমুনা প্রাপ্তির সমস্যা নমুনায়নের অন্যতম প্রধান সমস্যা। গবেষণায় যেসব ব্যক্তি বা বস্তুকে নমুনা হিসেবে ধরা হয় তার উপর নির্ভর করে গবেষণার ফলাফল। কিন্তু অনেক সময় নির্বাচিত নমুনাগুলোকে যথাসময়ে পাওয়া যায় না। ফলে গবেষণাকর্মে ব্যাপক সমস্যা হয় এমনকি গবেষণার ফলাফল পর্যন্ত ভুল আসতে পারে।

৩. দক্ষ গবেষকের সমস্যা:

যেকোনো গবেষণাকে বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তবভিত্তিক করে তোলার জন্য প্রয়োজন দক্ষ অভিজ্ঞ ও নিষ্ঠাবান গবেষক বা গবেষণাকর্মীর। কেননা মঞ্চ গবেষক বা গবেষণাকর্মীই পারে সঠিক উপযুক্ত নমুনা সংগ্রহ করতে। কিন্তু বাস্তবে এরকম দক্ষকর্মীর অভাব প্রকট। এর ফলে কম দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির দ্বারা গবেষণা পরিচাল করা হয়। ফলশ্রুতিতে গবেষণার ফল সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ হয় না।

৪. নমুনার বৈচিত্র্য:

সমগ্রকের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি এককস্থ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট। ধারণ করে। কাজেই প্রতিটি একই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নমুনায়ন পদ্ধড়িতে একটি নির্দিষ্ট অংশকে নমুনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে কেবল নির্বাচিত অংশের বৈশিষ্ট্যগুলো নমুনা হিসেবে নির্বাচিত হয়। কিন্তু ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বৃহৎ বা একটা অংশ বাদ পড়ে যায়।

৫. বাস্তবতা বর্জিত:

যদি বাছাইকৃত প্রতিনিধিত্বশীল এককে ধর্মের বা বৈশিষ্ট্যের সাথে সমগ্রকের ধর্মের না বৈশিষ্টোয় মিল না থাকে তাহলে গবেষণার ফলাফল বাস্তবতা বর্জিত হবে।

৬. পক্ষপাতিত্ব সমস্যা:

গবেষক বা তথ্য সংগ্রাহক অনেক সময় মানবিক বা যেকোনো কারণেই নিজের পরিচিত বা বিশেষ গ্রুপের সাথে একাত্ব হয়ে গবেষণা কর্ম পরিচালনা করে ফলে নিরপেক্ষ ফল হয় না। এর ফলে গবেষণা কর্ম প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

৭. সমগোত্রীর এককের সমস্যা:

নমুনায়নের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করলে শুধু সেটা সমগোত্রীর গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে প্রযোগ্য হবে। কিন্তু সমগ্রকের প্রতিটি উপাদান যদি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয় তাহলে নমুনায়ন দ্বারা তথ্যসংগ্রহ সম্ভব নয়। সমগোত্রীয় এককের উপস্থিতি ছাড়া নমুনা জরিপ সম্ভব নয়।

উপসংহার: নমুনায়নের ভূমিকা গবেষণা কাজে অপরিহার্য। উপরোক্ত আলোচনা হতে বুঝা যায় যে নমুনায়নের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তবে গবেষণার তথ্য সংগ্রহের জন্য নমুনায়ন পদ্ধতির সুবিধাই বেশি।

নির্ভরণ রেখা কী? নির্ভরণ রেখা নির্ণয়ের পদ্ধতি

নির্ভরণ রেখা কী? নির্ভরণ রেখা নির্ণয় পদ্ধতি আলোচনা

ভূমিকা:- নির্ভরণ শব্দটি দুটি পরস্পর নির্ভরশীল চলকের সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বিখ্যাত জীবতত্ত্ববিজ্ঞানী স্যার ফ্রান্সিস গ্যাল্টন বংশগতির ধারা বিশ্লেষণে নির্ভরণ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন।

নির্ভরণ রেখা কী? নির্ভরণ রেখা নির্ণয়ের পদ্ধতি

নির্ভরণ রেখা:

লেখচিত্র বা বিক্ষেপ চিত্রের সাহায্যে দুটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত চলকের মান ছক কাগজে উপস্থাপন করার  জন্য যে রেখা ব্যবহার করা হয়, তাকে নির্ভরণ রেখা বলে। নির্দেশিত পথটির প্রকৃতি চলক দুটির সম্পর্কের ভিত্তিতে সরল বা বক্র হতে পারে । রেখা সরল হলে সমানুপাতিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে এবং একে সরলরৈখিক সম্পর্ক বলে। চলক দুটির মধ্যে সম্পর্ক অসমানুপাতিক হলে রেখাটি বক্র হবে এবং সম্পর্ক টিকে বক্ররৈখিক সম্পর্ক বলা হয়।

নির্ভরণ রেখা বিপরীতমুখী চলকসমূহে গড় মানগুলোকে নির্দেশ করে। এ চলকদ্বয়কে যথাক্রমে x ও y নামে অভিহিত করা হয়। এদের একটি স্বাধীন চলক এবং অপরটি নির্ভরশীল চলক। x স্বাধীন চলক এবং y নির্ভরশীল চলক হলে এক্ষেত্রে পরিবর্তকের x চলকের উপর y চলকের নির্ভরণ রেখা হবে। কিন্তু y চলক স্বাধীন এবং x নির্ভরশীল চলক  হলে y চলকের উপর x চলকের নির্ভরণ রেখা হবে।

x চলকের উপর y চলাকের নির্ভরণ রেখার ক্ষেত্রে সমীকরণ হবে y=a1+b1x

আবার, y চলকের উপর x চলকের নির্ভরণ সমীকরণ হবে, x=a2 +b2y, যেখানে a1, a2, b1, b2 হলো ধ্রুবক।

পরিশেষে বলা যায় যে, নির্ভরণ রেখা একটি পরিবর্তনযুক্ত মানগুলোর বিপরীতে অপর পরিবর্তকের মানগুলোকে প্রদর্শন করে।

নির্ভরণ রেখা নির্ণয়ের পদ্ধতি আলোচনা

নির্ভরণ রেখা নির্ণয় পদ্ধতি: দুটি পদ্ধতিতে নির্ভরণ রেখা নির্ণয় করা যায়। যথা- বিক্ষেপ চিত্র ও নূন্যতম বর্গপ্রক্রিয়া।

১. বিক্ষেপ চিত্র (Scatter Diagram):

দুটি চলকের মধ্যকার সম্পর্ক যথার্থভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য বিক্ষেপ চিত্রকে প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে স্বাধীন চলককে ox অক্ষে ও  নির্ভরশীল চলককে oy অক্ষে স্থাপন করা হয়। ছক কাগজে স্বাধীন চলক ও নির্ভরশীল চলক উপস্থাপন করলে যদি সেটি সরল রেখার ন্যায় পথ নির্দেশ করে তাহলে বুঝতে হবে চলকগুলোর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় সম্বন্ধ বিদ্যমান। কিন্তু অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক  নানাবিধ সমস্যার কারনে চলকদ্বয় পূর্ণমাত্রায় সম্বন্ধযুক্ত হয়না।বিক্ষেপ চিত্র পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আঙ্কন করা হয় বলে অঙ্কনের সময় বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কতিপয় বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়। যথা-

(ক) ছক কাগজে যেসব বিন্দু স্থাপন করা হবে সেগুলোর নিকটবর্তী স্থানে সরল রেখাটি হবে।

(খ) সরল রেখার দুই পাশে প্রায় সমসংখ্যক বিন্দু থাকবে।

(গ) সরল রেখার উভয়দিকে অবস্থিত বিন্দুগুলো সমান দূরত্বে অবস্থান করবে।

২. ন্যূনতম বর্গপ্রক্রিয়া:

উনিশ শতকে ফরাসি গণিতবিদ মি. এনড্রিন লেগানড্রি ন্যূনতম বর্গপ্রক্রিয়া প্রবর্তন করেন। বিক্ষেপ চিত্র চলকের সম্পর্ককে গাণিতিক উপায়ে উপস্থাপন করা যায় না। চলকসমূহের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সম্পর্ককে গাণিতিক উপায়ে উপস্থাপন করার জন্য ন্যূনতম বর্ণ প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন করা হয়। ন্যূনতম বর্গ প্রক্রিয়ার চলকসমূহের প্রতিটি বিন্দুর বিচ্যুতির বর্গের সমষ্টি সবচেযে ন্যূনতম মান গ্রহণ করে।এ প্রক্রিয়ায় সরল রেখা অঙ্কনে কতিপয় নিয়ম মেনে চলা হয়।

উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, নির্ভরণকে নির্ভরণ রেখার মাধ্যমে গাণিতিক উপায়ে উপস্থাপন করা যায়। এ জন্য বিশেষ নিয়ম পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।


দৈবচয়িত নমুনায়ন কি? দৈবচয়িত নমুনায়নের প্রকারভেদ ও সুবিধা অসুবিধাসমূহ লিখ

দৈবচয়িত নমুনায়নের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও সুবিধা অসুবিধাসমূহ

দৈবচয়িত নমুনায়ন সংজ্ঞা:-

যে পদ্ধতিতে সমগ্রক (Population) এর প্রতিটি এককের (বা সদস্যের) নির্বাচিত হওয়ার সম্ভবনা সমান থাকে তাকে দৈবচয়িত নমুনায়ন পদ্ধতি বলা হয়। এতে নমুনার এককগুলো দৈবভাবে (বা ক্রমান্বয়ে) নির্বাচিত করার করণে ব্যক্তিগত ঝোঁক বা পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা কম থাকে।

দৈবচয়িত নমুনায়ন কি? দৈবচয়িত নমুনায়নের প্রকারভেদ ও সুবিধা অসুবিধাসমূহ লিখ

সুতরাং বলা যায়, যে পদ্ধতিতে তথ্য বিশ্বের প্রতিটি একক বা উপাদান নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা সমান থাকে বা স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা সমান থাকে তাকে দৈবচয়িত নমুনায়ন বা সম্ভাবনা নমুনায়ন বলে। এতে নমুনার এককগুলো দৈবভাবে নির্বাচিত হবার কারণে গবেষক, পরিচালক বা বাক্তির পক্ষপাতিত্ব করার সম্ভাবনা থাকে না।


দৈবচয়িত নমুনায়ন পদ্ধতিসমূহ

দৈবচয়িত নমুনায়ন পদ্ধতি আবার পাঁচ প্রকার। যথা-

১. সরল দৈব নমুনায়ন,২. স্তরকৃত নমুনায়ন, ৩. প্রণালিবদ্ধ নমুনায়ন, ৪. স্বাচ্ছ নমুনায়ন ও ৫. বহু পর্যায় নমুনায়ন।

সরল দৈব নমুনায়ন:

দৈবচয়ন পদ্ধতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও সহজ নিয়ম হলো সরল দৈব নমুনায়ন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে নমুনায়নের সকল একক বা সদস্যের নমুনায় আসার সম্ভাবনা সমান থাকে। যখন সমগ্রক এক জাতীয় হয় তখন এই পদ্ধতি সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্যতা পায়। সরল দৈব নমুনায়ন পদ্ধতি সময়ের দিক বিবেচনায় দুই ভাগে ভাগ কার যায়।

(ক) পুরাতন পদ্ধতি ও (খ) নতুন পদ্ধতি যা আধুনিক পদ্ধতি।

স্তরকৃত নমুনায়ন:

কোনো সমগ্রককে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভক্ত করে প্রতিটি বিভাগ হতে প্রয়োজনীয় নমুনা দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করার পদ্ধতিকে স্তরকৃত দৈব নমুনায়ন বলে। এ পদ্ধতিতে সমগ্রক বিশেষ উদ্দেশ্য কতকগুলো অংশভাগ করা হয়। এ ভাগগুলোকে বলা হয় স্তর। প্রতিটি স্তর হতে নমুনা দৈবচয়ন ভাবে সংগ্রহ করা হয়। সমগ্রকের খন্ডিতকরণ দৈবচয়িত নমুনায়ন ও উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন পদ্ধতির সংমিশ্রণে উদ্দেশ্যমূলক, কিন্তু নমুনা নির্বাচন সম্পূর্ণ দৈবচয়িত। প্রকৃতপক্ষে এ পদ্ধতিটির সৃষ্টি।

প্রণালিবদ্ধ নমুনায়ন:

কতগুলো নির্দিষ্ট নিয়মানুসারে এককগুলোকে চয়ন করা হয় বলে একে প্রণালিবদ্ধ নমুনায়ন। বলে। এই পদ্ধতিতে সমগ্র একক হতে একক বা সদস্য নির্বাচনের জন্য সরল দৈবচয়নের ন্যায় এককগুলোকে ক্রমিক নম্বর দিয়ে লিখতে হয়। সমগ্রকের একক সংখ্যা N. হলে এককগুলোকে ১,২,৩------ N দিয়ে প্রকাশ করতে হবে। এখান থেকে দৈব রাশিমালার সহিত একক নির্বাচন করতে হবে।

গুচ্ছ নমুনায়ন:

গুচ্ছ নমুনায়ন হলো এমন নমুনায়ন পদ্ধতি যেখানে সমগ্রক থেকে নমুনা উপাদান বা একটি করে নির্বাচন না করে দল বা গুচ্ছ হিসাবে নির্বাচন করা হয়। প্রতিটি গুচ্ছ সমগ্রকের ক্ষুদ্র প্রতিনিধিত্বকারী হতে নেয়া হয়। এরপর গুাচ্ছসমূহের একটি অংশকে নির্বিচারে নির্বাচন করা হয় এবং নির্বাচিত গুচ্ছ সমূহের মধ্যকার বিশ্লেষণের একককে আবার নির্বিচারভাবে নমুনার জন্য নির্বাচন করা হয়।

বহুপর্যায় নমুনায়ন:

গুচ্ছ নমুনায়নের বর্ধিত রূপ হচ্ছে বহুপর্যায় নমুনায়ন। প্রথমে সমগ্রককে কয়েকটি গুচ্ছে রূপান্তরিত করে একক নির্বাচন করতে হবে। পরবর্তীতে নির্বাচিত এককগুলোকে আবারও গুচ্ছে পরিণত করে নমুনার একক নির্বাচিত করা হয়। এভাবে বহুপর্যায়ে দৈবচয়নের ভিত্তিতে একক নির্বাচন করা হয় বিধায় এই পদ্ধতির নাম বহুপর্যায় নমুনায়ন।


দৈবচয়িত নমুনা পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা 

যে পদ্ধতিতে সমগ্রকের প্রতিটি একবের বা সদস্যদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা সমান থাকে। তাকে দৈবচয়িত নমুনায়ন পদ্ধতি বলা হয়। এতে নমুনার এককগুলো দৈবভাবে নির্বাচিত করা হয়। দৈবচয়িত নমুনা পদ্ধতির কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো। যথা-

দৈবচয়িত নমুনা পদ্ধতির সুবিধা

১. দৈবচয়িত নমুনায়ন হলো নমুনায়ন সংগ্রহের সবচেয়ে সহজতম ও সহজবোধ্য পদ্ধতি।

২. এ পদ্ধতি সম্পূর্ণ ব্যক্তি নিরপেক্ষ।

৩. এতে সময় অন্য আলাদা পদ্ধতির চেয়ে কম লাগে।

৪. অর্থের প্রয়োজনীয়তাও কম। অর্থাৎ স্বল্প খরচে গবেষণার নমুনায়ন সংগ্রহ সম্ভব।

৫. এ পদ্ধতিতে সংগৃহীত নমুনাসমূহ বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে সংগৃহীত হয়। যার ফলে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য।

৬. এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত নমুনা হতে নিরূপণ ও সেগুলোর বিচ্যুতির নিরূপক নির্ণয় করা সম্ভব।


দৈবচয়িত নমুনা পদ্ধতির অসুবিধা

১. এ পদ্ধতিতে সমগ্রকের সমান আর একটি নতুন সমগ্র তৈরি করতে হয়। যা অনেক সময় সম্ভব হয় না।

২. সমগ্রকের উপাদানগুলোর মধ্যে অধিক অসমত্ব থাকলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না।

৩. সমগ্রকের আকার বড় হলে নৈবচয়ন পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ প্রতিনিধিত্বকারী হয় না।


উপসংহার: পৃথিবীতে সকল কিছুরই ভালো মন্দ থাকে। ভালো মন্দের মধ্য থেকে আমাদের ভালকে বেছে নিতে হয়। কেন সাবধানতার সাথে, ধৈর্য্যের সাথে দৈবচয়িত নমুনার অসুবিধাগুলো মোকাবেলা করা যায়, তবে দৈবচয়ন নমুনায়ন সফল হবে।

অনমুনায়ন ত্রুটি কি? অনমুনায়ন ত্রুটির কারণসমূহ ও ত্রুটি কমানোর উপায়

অনমুনায়ন ত্রুটি সংজ্ঞা, কারণ ও প্রতিরোধ উপায়সমূহ

উত্তর: তথ্য বিশ্ব হতে নমুনা সংগ্রহের সময় বেশ কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। এদের মধ্যে অনমুনায়ন ত্রুটি একটি। নিচে অনমুনায়ন ত্রুটির বিশদ বিবরণ দেওয়া হলো।

অনমুনায়ন ত্রুটি কি? অনমুনায়ন ত্রুটির কারণসমূহ ও ত্রুটি কমানোর উপায়

অনমুনায়ন ত্রুটি:

নমুনায়ন ব্যতীত অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে ত্রুটির ফলে পরামিতি ও নমুনাজমানের যে পার্থক্য সৃষ্টি হয় তাকে অনমুনায়ন ত্রুটি বলা হয়। অনমুনায়ন ত্রুটি সাধারণত শুমারি জরিপ এবং নমুনা জরিপ ক্ষেত্র হতে উদ্ভূত হয়। এ ত্রুটি উদ্ভব হয় নমুনা বা শুমারি জরিপের ব্যবহারিক কাজের সময়, যেমন- ভুল পরিবেশন, তথ্য প্রক্রিয়াকরণে ভুল, নমুনা সংগ্রহে ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে। অনমুনা ত্রুটি কোনোভাবেই পরিমাণ করা সম্ভব হয় না। তাত্ত্বিকভাবে এ ত্রুটি হয় না ব্যবহারিক কাজের সময় এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায়।

অনমুনায়ন ত্রুটির বিভিন্ন কারণসমূহ

১. পরিকল্পনা ত্রুটি:

কোনো সুনির্দিষ্ট কাজের পূর্ব সিদ্ধান্ত হলো পরিকল্পনা। শুমারি বা নমুনা জরিপের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যর ভিত্তিতে প্রশ্নমালার ধরন, তথ্যসংগ্রহ কৌশল, দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনুসন্ধানকারী নিয়োগ জরিপের ব্যপ্তি, অর্থ ও সময় ইত্যাদি সম্পর্কে সুচিন্তিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। গবেষকের দক্ষতা, অসততা তথ্যগত আন্তি ও অন্যান্য কারবেন ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে জরিপ কাজে ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা দেয়, অনমুনাজ ত্রুটির উদ্ভব হয়।

২. নতুন চয়নের ত্রুটি:

উদ্দেশ্যমূলক নমুনা চয়নে গবেষকের পক্ষপাত দুষ্টতার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। সৈব চয়নের মাধ্যমে নমুনা বাছাই না করে আকস্মিক উদ্দেশ্যমূলক বা অন্যান্য নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নের মাধ্যমে নমুনা বাছাই করা হলে প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা একক সবসময় পাওয়া যায় না। তাছাড়া জটিলতার কারণে নির্বাচিত নমুনা এককের পরিবর্তে সমগ্রকের অন্য কোনো একক থেকে তথ্যসংগ্রহ করা হলেও বিচ্যুতি দেখা দেয়। ফলে চূড়ান্ত ফলাফলের বিপত্তি সৃষ্টি হয়।

৩. তথ্য সংগ্রহে ত্রুটি:

নির্বাচিত নমুনা এককের নিকট থেকে তথ্য সপ্তাহে অসুবিধা হতে পারে। বার বার যোগাযোগ করেও উত্তরদাতাকে না পেয়ে তথ্যসংগ্রহ না করা, উত্তরদাতার উত্তর এড়িয়ে যাওয়া, ভুল তথ্য প্রদান, উত্তর প্রদানে উত্তরদাতার অস্বীকৃতি, স্মৃতিহীনতা, অনিচ্ছাকৃত ভুল, অনুসন্ধান বা তথ্যসংগ্রহকারীর বিশেষ কোন উত্তরের প্রতি পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে তুল, ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ উত্তর সংগৃহীত হতে পাবে যা অনমুনাজ বিচ্যুতির জন্য দায়ী।

৪. দক্ষ লোকের অভাব:

জরিপ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট গবেষক, তথ্যসংগ্রহকারী ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ এর অদক্ষতার। জন্য জরিপ কাজ ত্রুটিপূর্ণভাবে পরিচালিত হতে পারে। যা। অনমুনা বিচ্যুতির পথ প্রশস্ত করে।

৫. বিশ্লেষণ-পূর্ব বিচ্যুতি:

তথ্য বিশ্লেষণের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে তথ্য সম্পাদনা, সারণি তৈরি, কোডিংসহ নানা কাজে অসাবধানতাবসত কারণে ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা দিতে পারে। ফলে অনমুনা বিচ্যুতির উদ্ভব হয়।

৬. প্রকাশনাজনিত ত্রুটি:

শুমারি বা নমুনা জরিপের রিপোর্ট। প্রকাশ করার সময় মুদ্রণজনিত ত্রুটি, ব্যবহার উপযোগী করে প্রকাশের ব্যর্থতা ও অন্যান্য প্রকাশনাজনিত ত্রুটি অনমুনায়ন বিচ্যুতির জন্ম দেয়।

উপরে উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও ত্রুটিপূর্ণ শুমারি বা নমুনা কাঠামো, যোগাযোগ ও যাতায়াত সংক্রান্ত সমস্যা, পর্যাপ্ত সময়ের অভাব, অর্থ ও শ্রম প্রদানে অসমর্থ হওয়া অনমুনায়ন বিচ্যুতি সৃষ্টি করতে পারে।


অনমুনায়ন ত্রুটি কমানোর উপায়সমূহ

নিচে অনমুনায়ন ত্রুটি হ্রাসের উপায়সমূহ বর্ণনা করা হলো। যথা।

১. প্রশিক্ষিত অনুসন্ধানকারী নিয়োগ:

জরিপ কাজে অভিজ্ঞ এ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনুসন্ধাদকারী নিয়োগ করে তথ্যসংগ্রহ করা হলে অনমুনায়ন ত্রুটি হ্রাস পেতে পারে।

২. যথার্থ নমুনায়ন কাঠামো প্রস্তুতি:

নমুনায়ন কাঠামো হালনাগাদ, আধুনিক ও সম্পূর্ণ হলে অনমুনায়ন ত্রুটি এড়ানো সম্ভব।

৩. প্রশ্নপত্র যাচাই:

জরিপের জন্য প্রথমে একটি খসড়া প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। অতঃপর প্রশ্নপত্রের যথার্থতা যাচাই করে ত্রুটিমুক্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করা হলে বিচ্যুতি হ্রাস পায়।

৪. পরীক্ষামূলক জরিপ:

মূল জরিপ ত্রুটিমুক্ত করার জন্য সমগ্রকের একটি ক্ষুদ্র অংশের উপর প্রাথমিক বা পরীক্ষামূলক জরিপ পরিচালনা করা হয়। যা বিচ্যুতি হ্রাসে সহায়তা করে।

৫. ত্রুটিমুক্ত যন্ত্রপাতি:

গবেষণায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো রতে ত্রুটিমুক্ত থাকে সেদিকে গবেষক অবশ্যই সতর্ক নজর রাখতে হবে।

৬. নির্ভুল তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা:

তথ্যসংগ্রহকারী অবশ্যই বা উত্তরদাতাকে প্রশ্ন বুঝিয়ে দিয়ে সঠিক তথ্যসংগ্রহ করতে পারেন। এফ এতে বিচ্যুতির হ্রাস পায়।

৭. তথ্য বিশ্লেষণের সতর্কতা:

সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের পূর্বে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, শ্রেণিকরণ ও সারণিকরণে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

সংশ্লেষাঙ্ক কী? সংশ্লেষের প্রকারভেদ

 সংশ্লেষাঙ্ক কী? সংশ্লেষের প্রকারভেদ লিখ

সহসম্পর্ক সহগ বা সংশ্লেষাঙ্কঃ-

দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তার গাণিতিক পরিমাপকে সহসম্পর্ক সহগ বা Coefficient of correlation বলে। এটি একটি সিরিজকে বিশ্লেষণ করে না, বরং নমুনার দুটি চলকের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়েই শুধু সহসম্পর্ক কাজ করে। একে r দ্বারা সূচীত করা হয়। এর মান -১ হতে শুরু করে +১ এর মধ্যেসীমাবদ্ধ থাকে।  সহসম্পর্ক সহণের কোনো একক গোষ্ঠীর সহসম্পর্ক সহণকে সীমাবদ্ধ থাকে। তবে '0' সহসম্পর্কের অনুপস্থিতিকে বুঝায়।সহসম্পর্ক সহগের কোন একক গোষ্ঠীর সহসম্পর্ক সহগকে  P(রো) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

সংশ্লেষাঙ্ক কী? সংশ্লেষের প্রকারভেদ

১. যদি দুটি চলকের মাধ্য ধনাত্মক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে, অর্থাৎ, একটি চলকের মান বৃদ্ধির সাথে সাথে অপর চালকের মান সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায় অথবা উভয়ের মান একই হারে হ্রাস পায় তবে সে ধরনের পরিবর্তনকে ধনাত্মক সহসম্পর্ক দলে। অর্থাৎ, দুটি চলকের পরিবর্তন একইমুখী হবে। এখানে r এর মান হবে শূন্য অপেক্ষা বড় তবে ১ পর্যন্ত।

২. যদি দুটি চলকের মধ্যে যে কোন একটি চলকের মান বৃদ্ধির সাথে সাথে সমানুপাতিক হারে অপর চলকের মান হ্রাস পায় অথবা একটি চলকের মান হ্রাসের সাথে সাথে সমানুপাতিক হাতে অপর চলদের মান বৃদ্ধি পায় তবে তাদের মধ্যে পরিবর্তনকে ঋণাত্মক সহসম্পর্ক বলে। অর্থাৎ, দুটি চলকের পরিবর্তন বিপরীতমুখী হবে। এক্ষেত্রে r এর মান শূন্য থেকে -১ পর্যন্ত।

৩. দুটি চলকের মধ্য কোন প্রকার সহসম্পর্ক না থাকলে r এর মান শূন্য হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দুটি চলকই স্বাধীন হয়।


সংশ্লেষের প্রকারভেদ আলোচনা

পরিসংখ্যানিক অনুসন্ধানের যে সব ক্ষেত্রে বা ততোধিক চলকের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের প্রকৃতি ও মাত্রা নির্ণয়ের প্রয়োজন হয় সেসব ক্ষেত্রে সংশ্লেষ ব্যবহার করা যায়। পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে সংশ্লেষ বা Correlation অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কতকগুলো চলক এমন হয় যে, যাদের একটির মান পরিবর্তিত হলে অপরটির মানও পরিবর্তিত হয় তবে সে মান চলকগুলোকে Coriclution বলা হয়। এর মাধ্যমে চলকগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়।

সংশ্লেষের প্রকারভেদ: সাধারণত সংশ্লেষকে আমরা ০৩ ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা-

১. সহজ সংশ্লেষ বা Simple Correlation;

২. বহুধা সংশ্লেষ বা Multiple Correlation এবং

৩. আংশিক সংশ্লেষ বা Partial Correlation

১. সহজ সংশ্লেষ:

কোন দৈব পরিমিত সমগ্রক হতে নেওয়া দুটি চলক যদি একই সাথে পরিবর্তিত হয়, অন্য কথায় যে চলক দুটির মধ্যে কোনরূপ সম্পর্ক আছে। দুটি চলকের পরিবর্তনের প্রকৃতি একইরূপে বা ভিন্নরুপে হতে পারে। দুটি চলকের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের একই সাথে পরিবর্তন হওয়ার প্রবণতাকে সহজ সংশ্লেষ বা Simple Correlation বলে। সহজ সংশ্লেষকে আবারও কয়েকভাগে ভাগ করা যায়। যথা:-

(ক) সহযোগী সংশ্লেষ:

যদি দুটি চলকের পরিবর্তনের দিক একই হয় এবং উভয় চলকের পরিবর্তনের হার সমান না হয়, তবে একটি চলকের মানের বৃদ্ধিতে অপর চলকের মানের কিছু না কিছু বৃদ্ধি ঘটে। এরূপ চলকদ্বয়ের মধ্যকার সংশ্লেষক একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশ্লেষের অংশ, যা সর্বদা ব্যবহৃত হয়।

(খ) পূর্ণ সহযোগী সংশ্লেষ:

যদি দুটি চলক এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত হয় যে, তাদের মানের পরিবর্তনের হার সমান এবং দিক সমমুখী, তবে তাদের মধ্যকার সংশ্লেষকে পূর্ণ সহযোগী সংশ্লেষ বলে।

(গ) অসহযোগী সংশ্লেষ:

যদি দুটি চলকের মানের পরিবর্তনের দিক বিপরীত হয় এবং হার অসমান হয়। তবে একটি চলকের মানের বৃদ্ধিতে অপর চলকের মান কিছু না কিছু হ্রাস পায়।

(ঘ) পূর্ণ অসহযোগী সংশ্লেষ:

যদি দুটি চলক এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত হয় যে, একটির পরিবর্তনের হার অন্যটির পরিবর্তনের হারের সমান কিন্তু পরিবর্তনের দিক একটি অপরদিকে বিপরীত তখন চলকদ্বয়ের মধ্যকার সংশ্লেষকে পূর্ণ অসহযোগী সংশ্লেষ বলে। উদাহরণস্বরুপ, যদি x ও y চলকদ্বয় ax + by + c = 0 এ সমীকরণ দ্বারা সম্পর্ক যুক্ত হয় এবং a ও b একই চিহ্ন বিশিষ্ট ধ্রুবক হয়, তবে চলকদ্বয়ের মধ্যকার সংশ্লেষকে পূর্ণ অসহযোগী বা পূর্ণ ঋণাত্মক সংশ্লেষ বলা হয়।

(ঙ) শূন্য সংশ্লেষ:

যদি একটি চলকের পরিবর্তন অন্যটির উপর কোন প্রকার প্রভাব ফেলতে না পারে তবে তাদের মধ্যে সংশ্লেষ নেই বলে বিবেচিত হয় শূন্য সংশ্লেষের ক্ষেত্রে একটি চলকের পরিবর্তনে অপর চলকের পরিবর্তন সমমুখী না বিপরীতমুখী বুঝা যায় না।

২. বহুধা সংশ্লেষ:

যদি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অনেকগুলো চলকের মধ্যে কোন একটি চলকের উপর অন্য সব চলকের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তবে সে নির্দিষ্ট চলক ও ঐ একদল চলকের মধ্যে যে সম্পর্ক পাওয়া যায় তাই বহুধা সংশ্লেষ। যেমন- ধানের ফসল (y) কতকগুলো স্বাধীন চলক (যেমন-সার (x'), পানি সরবরাহ (x1), কীটনাশক (x2) ইত্যাদি) দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখানে ধানের ফলনের সাথে অন্যান্য উপকরণের মধ্যে যে সম্পর্ক তাই বহুধা সংশ্লেষ।

৩. আংশিক সংশ্লেষ:

যদি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অনেকগুলো চলকের মধ্যে একটি নির্ভরশীল চলকের উপর অন্যসব চলকের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তবে স্বাধীন চলকগুলোর মধ্য হতে একটি নির্দিষ্ট চলকও ঐ নির্ভরশীল চলকের মধ্যে যে সম্পর্ক পাওয়া যায় তাকে আংশিক সংশ্লেষ বলে। যেমন ধানের ফলন (x) কতকগুলো স্বাধীন চলক (x1) (x2) (x3) ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয়। ধানের ফলন ও অন্যান্য উপাদানের মধ্যে এ সম্পর্ককে আংশিক সংশ্লেষ বলে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সংশ্লেষ পরিসংখ্যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর মাধ্যমে দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয় করা যায় যা পরিসংখ্যানে অত্যন্ত কার্যকরী। এ সংশ্লেষ আবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক।

সহ-সম্পর্ক কি? সহ সম্পর্কের প্রকারভেদ লিখ

সহ-সম্পর্ক কি? সহ সম্পর্কের প্রকারভেদ

ভূমিকাঃ- সহ-সম্পর্ক দুটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত চলকের মধ্যে সম্পর্কের প্রকৃতি পরিমাপ করে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মতামত পাওয়া গেছে সহ-সম্পর্ক সম্পর্কে। নিম্নে সহ-সম্পর্কের সংজ্ঞা দেওয়া হলো:

সহ-সম্পর্ক কি? সহ সম্পর্কের প্রকারভেদ

সহ-সম্পর্কের সংজ্ঞা:

সাধারণ কথায় সহ-সম্পর্কে হলো দুই বা ততোধিক পরিবর্তনশীল চলকের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক। সামাজিক পরিসংখ্যানের দৃষ্টিকোণ থেকে দুই মা ততোধিক চলকের একই সাথে পরিবর্তিত হওয়ার প্রধণতা না পরস্পর নির্ভরশীলতাকে সহ-সম্পর্ক নামে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ, পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলকের একটির মান বৃদ্ধি পেলে অপরটি বৃদ্ধি পায় বা একটির মান হ্রাস পেলে অপরটি হ্রাস পায় অথবা একটির মান বৃদ্ধি পেলে অপরটি হ্রাস পায় বা একটির মান হ্রাস পেলে অপরটি বৃদ্ধি পায়। যেমন চিনির মূল্য বৃদ্ধি পেলে এর ব্যবহার হ্রাস পায়। অথবা, পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে এর রপ্তানির পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।

সহ-সম্পর্ক প্রামাণ্য সংজ্ঞা:

নিম্নে সহ সম্পর্ক বিষয়ক কয়েকজন মনীষীর উল্লখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো

ডব্লিউ, আই, কিং (W. 1. King) এর মতে, "দুটি তথ্যসারি বা দুই শ্রেণির তথ্যাবলির কার্যকারণ সম্বন্ধীয় সম্পর্কই হলো সহ বৃদ্ধি সম্পর্ক।"

গুপ্ত এবং গুপ্ত তাদের Business statistics গ্রন্থে বলেন, চলকসমূহের মধ্যকার সম্পর্কের নৈকট্য পরিমাপের কৌশল নিয়ে সহ-সম্পর্ক আলোচনা করে।

কন্নর এর মতে, "কোন উপাত্তের দুই বা ততোধিক চলক সহানুভুতি সহকারে পরিবর্তিত হয় যে, একটির পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্যটির ও পরিবর্তন হয় তখন দুটি চলকের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়।

টাটল (A. M. Tutile) এর মতে, "An analysis of the covanaticin of two or more variables is usually called correlation অর্থাৎ, দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করাকে সহ-সম্পর্ক বলা হয়।

প্রফেসর বডিংটন এর মতে, "যখন দুই বা ততোধিক শ্রেণির উপাত্তের মধ্যে কোন সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয় তাকে সহ-সম্পর্ক বলে।

উপরিউক্ত সংজ্ঞাসমূহ পর্যালোচনা করে আমরা বলতে পারি যে, সহ-সম্পর্ক হলো দুটি চলকের মধ্যকার গারস্পরিক সম্পর্ক যাতে কোন এফটির পরিবর্তন ঘটলে অন্যটিরও পরিবর্তন হয়।

সহ-সম্পর্ক প্রকারভেদসমূহ

সহ-সম্পর্কের প্রকারভেদ: সম্পর্কের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে সহ-সম্পর্ককে নিম্নোক্ত পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে সেই সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-

 ১. পূর্ণ ধনাত্মক সহ-সম্পর্ক:

যদি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলকের মধ্যে একটির মান বৃদ্ধি পেলে অপরটির মান সমপরিমাপ বৃদ্ধি পায় অথবা একটির মান হ্রাস পেলে অপরটির মান সমপরিমাণ হ্রাস পায় অথবা একটির মান হ্রাস পেলে অপরটির মান সমপরিমাণ, হ্রাস পায় তাকে পূর্ণ ধনাত্মক সহ-সম্পর্ক বলে।

২. আংশিক ধনাত্মক সহ-সম্পর্ক:

যদি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলকের মধ্যে একটির মান বৃদ্ধি পেলে অপরটির মান অসম পরিযাণ বৃদ্ধি পায় অথবা একটির মান হ্রাস পেলে অপরটির মান অসম পরিমাণ হ্রাস পায় তাকে আংশিক ধনাত্মক সহ-সম্পর্ক বলে।

৩. পূর্ণ ঋণাত্মক সহ-সম্পর্ক:

যদি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলকের মধ্যে একটির মান বৃদ্ধি পেলে অপরটি সমপরিমাণ, হ্রাস পায় অথবা একটির মান হ্রাস পেলে অপরটির মান সমপরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাকে পূর্ণ ঋণাত্মক সহ-সম্পর্ক বলে।

৪. আংশিক ঋণাত্মক সহ-সম্পর্ক:

যদি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলকের মধ্যে একটি মান বৃদ্ধি পেলে অপরটি অসম পরিমাণ হ্রাস পায়, অথবা একটির মান হ্রাস পেলে অপরটির মান অসম পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাকে আংশিক ঋণাত্মক সহ-সম্পর্ক বলে।

৫. শূন্য যা সম্বন্ধহীন সহ-সম্পর্ক:

দুটি চলকের মধ্যে একটি চলকের মানের পরিবর্তনের সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট অপর চলকের মানের মধ্যে কোনো পরিবর্তন সূচিত না হলে তাকে শূন্য সহ-সম্পর্ক বলে। এক্ষেত্রে সহ-সম্পর্কের সহগের মাত্রার মান  r = 0 যেমন- করিমের আয় বৃদ্ধি পেলে রহিমের আয় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সহ-সম্পর্কের এ সকল প্রকারভেদের গুরুত্ব অপরিসীম।

সম্ভাবনা নমুনায়ন কি? সম্ভাবনা নমুনায়নের প্রকারভেদ ও সম্ভাবনা এবং নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নের পার্থক্য

সম্ভাবনা নমুনায়ন কি? সম্ভাবনা নমুনায়ন প্রকারভেদ ও সম্ভাবনা এবং নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নের পার্থক্য

ভূমিকা:- নমুনায়ন তত্ত্বে নমুনা চয়ন পদ্ধতি নির্ভর করে গবেষণার ধরন, সমগ্রকের প্রকৃতি, বাজেট, জনবল ইত্যাদির উপর। সমগ্রক থেকে প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা চয়নের জন্য বিভিন্ন নমুনায়ন পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছে। তন্মধ্যে সম্ভাবনা নমুনায়ন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।

সম্ভাবনা নমুনায়ন কি? সম্ভাবনা নমুনায়নের প্রকারভেদ ও সম্ভাবনা এবং নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নের পার্থক্য



সম্ভাবনা নমুনায়ন:

সম্ভাবনা নমুনায়ন বলতে সে নমুনায়নকে বোঝানো হয় যেখানে সমগ্রকের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকে। সম্ভাবনা নমুনায়নের মূল কথা হলো দৈবচয়ন সম্ভাবনা নমুনায়নের মাধ্যমেই শুধুমাত্র প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনায়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব। কারণ এ পদ্ধতির মাধ্যমেই একজন গবেষক নমুনার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের নমুনাজমান (Statistic) এবং সমগ্রক হতে প্রাপ্ত তথ্যের পরমমানের (Parameter) মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে নমুনায়নের ভুল ত্রুটি নির্ধারণ করতে পারেন।

সম্ভাবনা নমুনায়নের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পূর্ব শর্তাবলি বিদ্যমান। যথা-

(ক) নমুনা নির্বাচনের জন্য সমগ্রকের আকার নির্ধারণ করা।

(খ) নমুনায়ন কাঠামো বা সমগ্রক তালিকা প্রস্তুতকরণ।

(গ) সমগ্রকে প্রতিটি এককের নমুনায়ন অন্তর্ভূক্ত হওয়ার ভাবনা নিশ্চিত করা।


সম্ভাবনা নমুনায়নের প্রকারভেদ:

সম্ভাবনা নমুনায়নকে পাঁচভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:

১. সরল দৈবচয়িত নমুনায়ন:

সরল দৈবচয়িত নমুনায়ন হলো সম্ভবনা নমুনায়ন যেখানে প্রত্যেক উপাদানের নমুনায়ন নির্বাচিত হওয়ার সমান সম্ভাবনা থাকে। এটি সবচেয়ে সহজ ও প্রবল পদ্ধতি।

২. নিয়মতান্ত্রিক নমুনায়ন:

একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে সমগ্রক থেকে নমুনা একক নির্বাচন করা হয় তখন তাকে নিয়মতান্ত্রিক নমুনায়ন বলে।

৩. স্তরিত নমুনায়ন:

যে পদ্ধতিতে সমগ্র এককসমূহকে তাদের সমসত্ত্বা (Homogeneous) অনুযায়ী কতগুলো স্তরে তৈরী করে আনুপাতিক হারে নমুনা সংগ্রহ করা হয় তাকে স্তরিত নমুনায়ন বলে।

৪. গুচ্ছ নমুনায়ন:

এর দুটি পর্যায় রয়েছে। প্রথমে সমগ্রককে কতিপয় গুচ্ছে বিভক্ত করে নির্দিষ্ট নম্বর দিয়ে তালিকা সাজিয়ে দৈবচয়িত নমুনায়ন পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক গুচ্ছকে বাছাই করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত গুচ্ছের অন্তর্ভূক্ত প্রতিটি একক থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

৫. বহুপর্যায়ী নমুনায়ন:

যে নমুনায়ন পদ্ধতিতে বহু ধাপ বা পর্যায় অনুসরণ করে নমুনা একক নির্বাচন করা হয় তাকে বহুপর্যায়ী নমুনায়ন বলা হয়।


সম্ভাবনা ও নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নের মধ্যে পার্থক্য

নমুনায়ন একটি প্রক্রিয়া যা পদ্ধতির নাম। এ পদ্ধতির জন্য সমগ্রক থেকে একটি নমুনা বাছাই করা হয়। নমুনায়নের প্রধান দুটি পদ্ধতি হলো সম্ভাবনা নমুনায়ন এবং নিঃসম্ভাবনা। সম্ভাবনা নমুনায়ন বলতে সে নমুনায়নকে বুঝায় যেখানে সমগ্রকের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর অন্যদিকে যে নমুনায়নে সমগ্রকের অন্তর্ভূক্ত প্রতিটি এককের নমুনায়ন অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান সম্ভবনা থাকে না তাকে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন বলে।

সম্ভাবনা ও নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন পার্থক্য:

১. সম্ভাবনা নমুনায়নকে সমগ্রকের অন্তর্ভূক্ত প্রতিটি এককের নমুনায়ন অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সমান সম্ভবনা থাকে। অন্যদিকে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নে সমান সমান সম্ভাবনা থাকে না।

২. সম্ভাবনা নমুনায়নে প্রতিটি এককের নমুনায়ন অন্তর্ভূক হওয়ার সম্ভাবনাকে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়। অন্য দিকে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নে এভাবে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায় না।

৩. সম্ভাবনা নমুনায়নের সাহায্যে নমুনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই নমুনা কাঠামো দরকার হয়। কিন্তু নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নের সাহায্যে নমুনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নমুনা কাঠামোয় দরকার হয় না।

৪. সম্ভাবনা নমুনায়নে নমুনা একক নির্বাচনে দৈব সংখ্যা সারণি বা লটারি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আর নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নের নমুনা একক নির্বাচনে দৈবসংখ্যা সারণি বা লটারি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় না।

৫. সম্ভাবনা নমুনায়নে পক্ষপাতিত্ব করার সুযোগ কম। অন্যদিকে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নে অনেক ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে।

৬. সম্ভাবনা নমুনায়নে গবেষক পছন্দমাফিক নমুনা নির্বাচন করতে পারেন না। ফলে এটি অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ। অন্যদিকে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নে গবেষক পছন্দমাফিক নমুনা একক নির্বাচন করতে পারে। ফলে এক্ষেত্রে সময় ও অর্থ কম লাগে।

৭. সম্ভাবনা নমুনায়ন অধিক বিজ্ঞানভিত্তিক। অন্যদিকে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন অপেক্ষাকৃত কম বিজ্ঞানসম্মত।

৮. সম্ভাবনা নমুনায়নে প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা পাওয়া যায়। অপরপক্ষে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নে নির্বাচিত নমুনা প্রতিনিধিত্বশীল নাও হতে পারে।

৯. সম্ভাবনা নমুনায়ন পাঁচ প্রকার। আর নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন তিন প্রকার।

১০. সম্ভাবনা নমুনায়নে ভুলত্রুটি নির্ধারণ করা যায়। অন্যদিকে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নে ভুলত্রুটি নির্ধারণ করা যায় না। 

১১. সম্ভাবনা নমুনায়নের ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। অন্যদিকে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নের ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা কম।

১২. সম্ভাবনা নমুনায়ন সম্পূর্ণরূপে সম্ভাবনা তত্ত্বের উপর নির্ভরশীল। অপরদিকে নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন সম্ভাবনা তত্ত্বের উপর নির্ভরশীল নয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সম্ভাবনা নমুনায়ন ও নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন উভয়ই নমুনায়ন পদ্ধতি হিসেবে ভিন্ন। সমগ্রক থেকে প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা চয়নের জন্য এ দু'পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তাই সামাজিক গবেষনায় উভয় নমুনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

কেন্দ্রীয় প্রবণতা কি? কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপগুলোর পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ

কেন্দ্রীয় প্রবণতা কাকে বলে? কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপগুলোর পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ

ভূমিকা:- কোনো গণসংখ্যা নিবেশনের প্রতি লক্ষ করলে দেখা যায় যে, কতগুলো রাশি বা মান বারবার সংঘটিত হচ্ছে। আবার কতগুলো রাশিকে অপেক্ষাকৃত কমবার সংঘটিত হতে দেখা যায়। কেন্দ্রীয় রাশিগুলো বেশি থাকে বা কেন্দ্রীয় শ্রেণিগুলোর গণসংখ্যা বেশি থাকে, অধিকবার সংঘটিত রাশিগুলো নিবেশনের কেন্দ্রীয় স্থানে (central Part) একটি ক্ষুদ্র পরিসরে পুঞ্জীভূত থাকে।

কেন্দ্রীয় প্রবণতা কি? কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহ

কেন্দ্রীয় প্রবণতা সংজ্ঞা:

কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলতে কেন্দ্রের দিকে আগমনের প্রবণতাকে বুঝায়। রাশিমালার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো কেন্দ্রীয় মানের কাছাকাছি অবস্থান করতে চায়। রাশিমালার কেন্দ্রীয় মানের কাছাকাছি আসার প্রবণতাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা:

বিভিন্ন পরিসংখ্যানবিদ কেন্দ্রীয় প্রবণতার সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো।

মাননান ও মেরির মতে, একটি গণসংখ্যা নিবেশনে যেসব তথ্য থাকে, সেগুলোকে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, অধিকাংশ তথ্য বা সংখ্যাই একটি কেন্দ্রবিন্দুর দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ক্রাইডার-এর মতে, কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলতে X অক্ষের উপর একদল স্কোরের অবস্থানকে বুঝায়।

গণসংখ্যার কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের ক্ষেত্রে গড়, খ্যক ও প্রচুরক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গড়কে ফেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিযাপক হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের মাধ্যমে সহজেই উপায়গুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো জানা যায়


কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপগুলোর পার্থক্য

আমরা জানি, কোনো সংখ্যা বিন্যাসের কেন্দ্র নির্দেশক সংখ্যাবাচক মান হচ্ছে উক্ত বিন্যাসের কেন্দ্রীয় প্রবণতা। কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপগুলোকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- গাণিতিক গড়, মধ্যমা এবং প্রচুরক।


গাণিতিক গড়:

১. গাণিতিক গড়ের সংখ্যা সহজবোধ্য এবং নির্ণয় পদ্ধতি সহজ

২. উন্মুক্ত শ্রেণিব্যবধান ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে গাণিতিক গড় নির্ণয় সম্ভব।

৩. গাণিতিক গড় পরবর্তী বীজগাণিতিক ক্রিয়ার উপযোগী

৪. গুণগত বৈশিষ্ট্যর ক্ষেত্রে গাণিতিক গড় নির্ণয় সম্ভব।

৫. লেখচিত্র হতে গাণিতিক গড় নির্ণয় করা যায় না।

৬. এটি নমুনার তারতম্য অতি সামান্য।

৭. তথ্যসারির বড় বা ছোট মান দ্বারা গাণিতিক গড় প্রভাবিত হয়।

৮. দৈনন্দীন জীবনে গাণিতিক গড়ের ব্যবহার বেশি।


মধ্যমা:

১. মধ্যমার সংজ্ঞা সহজবোধ্য এবং নির্ণয় পদ্ধতিও সহজ

২. উন্মুক্ত শ্রেণিব্যবধান থাকলে মধ্যমা নির্ণয় করা সম্ভব।

৩. মধ্যমা পরবর্তী বীজগাণিতিক ক্রিয়ার উপযোগী নয়।

৪. গুণগত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে মধ্যমা নির্ণয় করা সম্ভব।

৫. লেখচিত্র হতে মধ্যমা নির্ণয় করা যায়।

৬. এটি নমুনার তারতম্য বেশি।

৭. তথ্য সারির ছোট বা বড় মান দ্বারা মধ্যমা প্রভাবিত হয়না।

৮. দৈনন্দিন জীবনে মধ্যমার ব্যবহার কম।


প্রচুরক:

১. প্রচুরকের সংজ্ঞা সহজবোধ্য এবং এটি দ্রুত নির্ণয় করা যায়।

২. উন্মুক্ত শ্রেণি ব্যবধান থাকলেও প্রচুরক নির্ণয় সম্ভব।

৩. প্রচুরক পরবর্তী বীজগাণিতিক ক্রিয়ার উপযোগী নয়।

৪. গুণগত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে প্রচুরক নির্ণয় সম্ভব।

৫. লেখচিত্র হতে প্রচুরক নির্ণয় করা যায়।

৬. এটির নমুনার তারতম্য বেশি।

৭. তথ্য সারির ছোট বা বড় মান দ্বারা প্রচুরক প্রভাবিত হয়।

৮. দৈনন্দিন জীবনে প্রচুরকের ব্যবহার কম।


কেন্দ্রীয় প্রবণতার বৈশিষ্ট্যসমূহ বা আদর্শ গড়ের বৈশিষ্ট্য

কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ হলো কথাসারি কেন্দ্রীয় মান নির্ণয় করা যা সাধারণভাবে গড় নামে অভিহিত করা হয়। কেন্দ্রীয় প্রবণতার বৈশিষ্ট্য বা আদর্শ গড়ের বৈশিষ্টা নিচে দেওয়া হলো।

১. সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা:

কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপসমূত্রের সংজ্ঞা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হতে হয়। তাহলে কেন্দ্রীয় মান নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

২. নির্ণয় সহজতা:

যে-কোনো গড় নির্ণয়ের উপযুক্ত হবে।

৩. কম প্রভাবিত:

খুব বেশি বড় বা ছোট মান দ্বারা এটি কম প্রভাবিত।

৪. সহজ ব্যবহার:

একটি উত্তম গড় সহজবোধ্য হবে এবং এটি সাধারণভাবে ব্যবহার করা যাবে।

৫. বীজগণিত বিশ্লেষণ:

কেন্দ্রীয় প্রবণতা বীজগাণিতিক বিশ্লেষণের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং সহায়তা করে থাকে।

৬. উচ্চতর গণিত ব্যবহার:

কেন্দ্রীয় প্রবণতা উচ্চতর গণিতে বিশ্লেষণের কাজে সহায়তা ও ব্যবহার হয়ে থাকে।

৭. নমুনাভিত্তিক তারতম্য:

একটি আদর্শ গড় দ্বারা নমুনা ভিত্তিক মানে তার তাম্য ঘটবে না। অর্থাৎ, একই সমগ্রক থেকে একই আকারে ভিন্ন ভিন্ন নমুনা নিয়ে গড়ে নির্ণয় করলে নির্ণীত মানের তারতাম্য বেশি হবে না।

৮. আদর্শ মান :

তুলনাকরণে এটি একটি আদর্শ মান হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এগুলো অতি প্রয়োজনীয়।


উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, কেন্দ্রীয় প্রবণতা বৈশিষ্ট্য বা আদর্শ গড়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ অনেক এবং উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যাবলি থাকলে তাকে উত্তম বা আদর্শ মান হিসেবে গণ্য করা হয় বা করা যেতে পারে।

বিস্তার পরিমাপ কাকে বলে? বিস্তারের আদর্শ পরিমাপ কোনটি এবং কেন?

বিস্তার পরিমাপ কাকে বলে? বিস্তারের আদর্শ পরিমাপ কোনটি এবং কেন?

ভূমিকা:- পরিসংখ্যানের গাণিতিক তথ্য প্রয়োগের ফেত্রে বিস্তার পরিমাপ একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। অভ্যন্তরীণ প্রখ্যার মানের দূরত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এর প্রযোজা প্রয়োগ লক্ষ্য না যায়। গড় ও মধ্যমা ও প্রচুরকের সাহায্যে গণসংখ্যা বিরেশনের কেন্দ্রীয় মান পরিমাপ করা যায়। বিস্তার পরিমাপের আম্যে তথ্যসারির প্রতিটি সংখ্যামানের অবস্থান জানা যায়। আজিক পরিসংখ্যানে কেন্দ্রীয় প্রবণতায় পাশাপাশি বিস্তার গরমাণ ও ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ।

বিস্তার পরিমাপ কাকে বলে? বিস্তারের আদর্শ পরিমাপ কোনটি এবং কেন?

বিস্তার পরিমাপ:

সাধারণভাবে বলা যায় যে, দুই বা ততোধিক নিবেশনের তুলনা করতে কিংবা কোনো নিবেশনের মানগুলো থেকে অন্যান্য সংখ্যাগুলোর ব্যবধান বা বিচ্যুতির গড় পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য যে পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তাকে বিস্তার পরিমাপ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, তথ্যসারির মানগুলো গড় থেকে কতটুকু ভিন্ন হয়েছে সেসব পার্থক্যের গড় নির্ণয়কেই বিস্তারের পরিমাণ বলা হয়। এ কারণে বিস্তার পরিমাপকে গড়ের ‘দ্বিতীয় পর্যায়ের গড়’ও বলা হয়। গড় থেকে প্রতিটি সংখ্যার ব্যবধানের পরম মানের গড় নিয়ে গড় ব্যবধান নির্ণয় করা হয়। আবার কোনো নিবেশনের মধ্যককে ভিত্তি ধরে পরম বিস্তারগুলো তুলনা করলে বিভিন্ন নিবেশনের আপেক্ষিক ভিন্নতাও পরিমাপ করা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি নিবেশনের মধ্যকমান ১০০ ধরে তার পরম বিস্তার কত, তা নির্ণয় করা হয়।

বিস্তার:

বিস্তার হলো এক ধরনের পরিসংখ্যানিক পরিমাপ, যার সাহায্যে একটি নিবেশনের রাশিগুলোর মধ্যকার দূরত্ব বা পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। আবার বিস্তার বলতে দুই বা ততোধিক নিবেশনের সাপেক্ষ সংখ্যাগুলোর ভেদ বা পার্থক্যকেও বোঝায়।


বিস্তার পরিমাপ প্রামাণ্য সংজ্ঞা:

বিভিন্ন মনীষীগণ বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিচে তাদের কয়েকটি সংগ্রা প্রামাণ্য সংজ্ঞা: বিভিন্ন মনীষীদের পরিসংখ্যান সম্পর্কে প্রদান উপস্থাপন করা হল।

 Spiegle বলেছেন, "The degree of which mamerical data tend to spread about and average value is called the variation or disspersion গড় থেকে অন্যান্য মানগুলোর বিচ্যুতির পরিমাণকে তথ্যের ভেদ বা বিস্তার বলে।

Dr.M.G. Mustafa বলেছেন, 'Dispersion is an important characteristics of frequency distribution. it tells us how compately the individual values are distributed around the average.

Hans raj বসেন, "Dispersion in other words is deviation from central tendency the latter being understand as an average   

নিবেশনের মধ্যমান থেকে অন্যান্য সংখ্যাগুলোর দূরত্ব পরিমাণ করতে এবং দুই বা ততোধিক নিবেশনকে তুলনা করতে যে পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় তাকে পরিমাণ বিস্তার বলে। বিস্তার পরিমাশেষ সাহায্যে তথ্যসারির প্রতিটি সংখ্যামানের অবস্থান জানা যায়।


বিস্তারের আদর্শ পরিমাপ:

আদর্শ বিস্তার পরিমাপকের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আদর্শ দ্বিজ্ঞার পরিমাপ সঠিক ও সুস্পর সংখ্যা সহজবোধ্যতা, সহজ নির্ণয় পদ্ধতি, তথাসারির সকল তথ্যের ব্যবহার, নমুনা বিচ্যুতি দ্বারা কাম প্রভাবিত, বীজগাণিতিক প্রক্রিয়া ব্যবহারের উপযোগী হওয়া ইত্যাদি বিয়ার পারমাগত আদর্শ বিস্তার পরিমাপক বলে।

আদর্শ বিস্তার পরিমাপক: সাধারণত গড়ের ভিত্তিতেই বিস্তার পরিমাণ করা হয়। তাই কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপের উপযুক্ত তার উপর নির্ভর করে বিস্তার পরিমাণের উপযুক্ততা। মোটামুটিভাবে আদর্শ বিস্তায় পরিমাপের শুণাবলি বলতে আদর্শ। কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপের গুণাবলিকেই বোঝায়। নিচে এগুলো উল্লেখ করা হলো-

১. আদর্শ বিস্তার পরিমাপ গণনার এবং হিসাবের উপযোগী হতে হবে এতে তাড়াতাড়ি ভুল হবে না।

২. ইহা প্রান্তিক চরমমানসমূহ দ্বারা প্রভাবিত হবে না।

৩ একটি আদর্শ বিস্তার বিস্তার পরিমাপের অত্যন্ত সুস্পষ্ট সংজ্ঞা থাকতে হবে যাতে ইহাকে সহজে বুঝা যায় এবং কোন প্রকার দ্বিধাদ্বন্দের সৃষ্টি না হয়।

৫. ইহা তথ্যসারির সবল মানের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। কারণ সকল মানের উপর নির্ভরশীল না হলেই উহ্য নির্ভরযোগ্য ও প্রতিনিধিত্বমূলক পরিমাপ হবে।

৫. ইহা সহজে বীজগাণিতিক প্রক্রিয়া আরোপের এবং ভবিষ্যতে পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে কাজে লাগানোর উপযোগী হতে হবে।

=আদর্শ বিস্তার পরিমাণের উপযুক্ত বাঞ্ছনীয় বৈশিষ্ট্যসমূহের যে পরিমাণটি ধারণা করে তাকেই আদর্শ পরিমাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। বস্তুত উল্লেখ্য বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে আলোচনা করলে দেখা যায় যে, পরিসর সহজে বুঝা যায় ও সহজে গণনা করা যায়। কিন্তু ইহা সকল মানের উপর নির্ভরশীল নয়। পরিসর প্রান্তিক মান দ্বারা প্রভাবিত হয়। ইহাতে সহজে গাণিতিক ও বীজগাণিতিক প্রয়োগ করা যায় না। তাছাড়া নিবেশনের মধ্যকমান থেকে অন্য সংখ্যাগুলোর বিস্তৃতি সম্বন্ধে সঠিক ধারণা দিতে পারে না। অন্যদিকে চতুর্থক ব্যবধান এমন একটি বিস্তার পরিমাপ যার সুস্পষ্ট।সংজ্ঞা রয়েছে এবং যা নির্ণয় করা সহজ। ইহ্য প্রান্তিক মান দ্বারা কম প্রভাবিত হয় এবং নমুনা বিচ্যুতি দ্বারা পরিসর অপেক্ষা অনেক কম পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।


⇒ এজন্য পরিসর অপেক্ষা চতুর্থক ব্যবধান উৎকৃষ্ট বিস্তার পরিমাপ। তবে চতুর্থক ব্যবধান বীজগাণিতিক প্রক্রিয়া আরোপের অনুপযোগী এবং কোন নির্দিষ্ট গড়ের চতুর্দিকে বিস্তার পরিমাপ করে না। তাছাড়া ইহা সকলমানকে বিবেচনায় আনে না। তাই চতুর্থক ব্যবধানকে বিস্তার পরিমাপক হিসেবে তেমন কোন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে আমরা দেখতে পায় না।

 আবার গড় ব্যবধান প্রকৃত অর্থে বিস্তার পরিমাপক ইহা যে কোন একটি গড়ের ভিত্তিতে নির্ণয় করা হয়। মূলত এ গড় ব্যবধান প্রায় সবগুলো বাঞ্ছনীয় বৈশিষ্ট্যর উপযোগী। ইহা সহজে বুঝা যায় এবং সকল মানের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া ইহা নমুনা তারতম্য ও প্রান্তিক মান দ্বারা কম প্রস্তাবিত হয়। কিন্তু ইহাতে পরবর্তীতে কোন গাণিতিক প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা যায় না। তবে ইহা যেকোন মূল্যে পরিসর ও চতুর্থক ব্যবধান অপেক্ষা উত্তম।

⇒ সর্বশেষে বিস্তার পরিমাপের পরিমিত ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। উপরে উল্লেখিত একটি আদর্শ বিস্তার পরিমাপের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে পরিমিত ব্যবধান সহজবোধ্যতা ছাড়াই প্রায় সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। ইহা সকল মানের উপর নির্ভরশীল। ইহাতে অধিক গাণিতীক ও বীজগাণিতিক প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা যায়। এটা নমুনা বিচ্যুতির ক্ষেত্রে প্রায় স্থির থাকে প্রর্থাৎ, এটা নমুনা তারতম্য দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তবে পরিমিত ব্যবধানের বহু ভাল দিকের পাশাপাশি কম হলেও কিছু খারাপ দিক আছে, যেমন নির্ণয় কাজে ইহা জটিল। চরম ও প্রান্তিক মান দ্বারা ইহা প্রভাবিত হয়। কিন্তু এগুলো পরিমিত ব্যবধানের বর্ণাঢ্য জলাবলির তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। সর্বোপরি একটি আদর্শ বিস্তার পরিমাণের উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য এর প্রেক্ষিতে তুলনামূলক আলোচনা হতে দেখা যায় যে, সহজে নগণ্য, সহজবোধ্যতা ও প্রান্তিক মান দ্বারা প্রভাবিতের উপর বেশি গুরুত্ব না হলে পরিমিত ব্যবধান একটি আদর্শ বিস্তার পরিমাপ।

উপসংহার: তথ্যরাশির বিচ্যুতির পরিমাপের জন্য উপযুক্ত কয়েকটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হলেও একটি আদর্শ বিস্তার পরিমাপের  নগণ্য কিছু গুণাবলি বাদে সবগুলি গুণাবলি থাকার কারণে পরিমিত ব্যবধানকে একটি আদর্শ পরিমাপক বলা হয়।

যোজিত বা গাণিতিক গড় কি? যোজিত বা গাণিতিক গড়ের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা, ব্যবহার আলোচনা কর

যোজিত বা গাণিতিক গড় কাকে বলে। বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা ও ব্যবহার আলোচনা কর।

ভূমিকা:- যোজিত গড় হলো সমজাতীয় কতকগুলো রাশির কেন্দ্রীয় পরিমাপের একটি সংখ্যা যা রাশিগুলোর সমষ্টিকে রাশিগুলোর মোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে যে সংখ্যা পাওয়া যায় তার সমান যোজিত গড় ও গাণিতিক গড় একটি কেন্দ্রীয় পরিমাপক।

যোজিত বা গাণিতিক গড় কি? যোজিত বা গাণিতিক গড়ের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা, ব্যবহার আলোচনা কর

যোজিত গড় বা গাণিতিক গড়:

একই বৈশিষ্ট্যসমূহকে সম্পূর্ণ তথ্য সারির মানসমূহের যোগফলকে মোট তথ্যসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাকে যোজিত গড় বা গাণিতিক গড় বলা হয়। যোজিত গড় x = ✔ Σx/ N। এটিকে ২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- সরল ও ভারযুক্ত যোজিত গড়। 

একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন তথ্যসারির মানসমূহের যোগফলকে মোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাই গাণিতিক বা যোজিত গড়।

যোজিত গড়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

যোজিত গড়ের গাণিতিক বৈশিষ্ট্য: যোজিত গড়ের কিছু গাণিতিক বৈশিষ্ট্য আছে। যথা-

১. গড়কে একটি ভারসাম্য বিন্দু হিসেবে ধরা হয়।

২. গড় হতে প্রতিটি সংখ্যা মানের বিচ্যুতি নির্ণয় করলে দেখা যায় ধনাত্মক বিচ্যুতিগুলোর যোগফল ধনাত্মক বিচ্যুতিগুলোর যোগফলের সমান হয়। অর্থাৎ, সমস্ত বিচ্যুতির যোগফল শূন্য হয়।

৩. তথ্যসারির যতগুলো মান থাকবে তার সংখ্যাও তাদের যোজিত গড়ের গুণফলের মানগুলোর সমষ্টির সমান হবে।

৪. গড় হতে প্রতিটি সংখ্যা মানের বিচ্যুতি বর্গের যোগফল সর্বনিম্ন বিচ্যুতিগুলো যোজিত গড় হতে নেওয়া হবে।

৫. দুটি চলক x ও y যদি y= ✔Ax + B সম্পর্কে আবদ্ধ থাকে এবং চলকের যোজিত গড় x হয়, তবে y চলকের যোজিত গড় হবে ax + b

উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় যোজিত গড় একটি আদর্শ পরিমাপক। এর নানা প্রকার গুণাবলি একে অন্যান্য মধ্যম মানের চেয়ে সুবিধাজনক হওয়ার কারণে আলাদা অস্তিত্ব দান করেছে।


যোজিত গড় বা গাণিতিক গড়ের সুবিধাসমূহ:

গাণিতিক গড় একটি আদর্শ কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপক। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক উপাত্তগুলোর কেন্দ্রীয় প্রবণতার হারকে যোজিত গড়ের মাধ্যমে সহজভাবে সমাধান সম্ভব।

যোজিত গড়ের সুবিধা:

সংজ্ঞা:

যোজিত গড়কে সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। তাই ব্যাখ্যার কোনো পার্থক্য দেখা যায় না।

ব্যবহার:

পরিসংখ্যানের সর্বত্র এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় তা ছাড়া প্রতিদিন সাধারণ মানুষ যোজিত গড়কে ব্যবহার করে থাকে।

বোধগম্যতা:

যোজিত গড় অতিসহজে সকল মানুষ বুঝতে পারে।

বীজগাণিতিক:

যোজিত গড় বীজগাণিতিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।

তুলনামুলক:

যোজিত গড় দ্বারা সকল চলকের মধ্যে তুলনা করা যায়। তাই তুলনামূলক বিষয় হিসেবে যোজিত গড় কাজ করে।।

সম্মিলিত গড়:

যোজিত গড় ব্যবহার করে সম্মিলিত গড় নির্ণয় করা হয় এবং ব্যবহারে উপযোগী হয়ে ওঠে।

গণিতে ব্যবহার:

যোজিত গড় গণিত শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়।

কম প্রভাবিত:

যোজিত গড় অন্যান্য গড়, যেমন- মধ্যমা ও প্রচুরকের তুলনায় বাক্যে নমুনা গড় দ্বারা কম প্রভাবিত হয়।

ঋণাত্মক সংখ্যা:

কোনো নিবেশনে যদি ঋণাত্মক মান ও থাকে তাহলেও যোজিত গড় নির্ণয় করা যায়।

স্থিতিশীলতা:

যোজিত গড় একটি স্থিতিশীলতা কেন্দ্রীয় মান


যোজিত গড় বা গাণিতিক গড় কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপে একটি আদর্শ পরিমাপক হিসেবে পরিগণিত হয় এবং এগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি।


যোজিত গড় বা গাণিতিক গড়ের সীমাবদ্ধতাসমূহ

যোজিত গড়ের ব্যবহার ও প্রয়েগ সর্বজনীন হলেও এর কিছু কিছু অনুপযোগিতাও রয়েছে। যোজিত গড় হলো সমজাতীয় কতকগুলো রাশির কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপক একটি সংখ্যা।

যোজিত গড়ের অসুবিধা:

পর্যবেক্ষণ গতি:

যোজিত গড় পর্যবেক্ষনা গতির অনুপযোগী। কারণ, এটি সাধারণ পর্যবেক্ষন দ্বারা নির্ণয় করা যায় না। অন্যন্য পরিমাপ পর্যবেক্ষণযোগ্য, কিন্তু যোজিত গড়ে তা সম্ভব নয়।

প্রভাবিত:

যোজিত গড় প্রান্তিক মান ছাড়াও যে-কোন মান দ্বারা প্রভাবিত। তবে প্রান্তিক মান দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত।

লেখচিত্রে:

যোজিত গড় লেখচিত্রে প্রকাশ করা যায় না।

অজানা তথ্য:

যোজিত গড় অজানা তথ্যে ব্যবহার অসুবিধাজনক।

বহির্ভূত রাশি:

কোনো নিবেশনে উল্লেখ নেই এমন সংখ্যার যোজিত গড় হতে পারে। এজন্য অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।

লুপ্ত সংখ্যা:

কোনো নিবেশনের সংখ্যা যদি লুপ্ত থাকে যোজিত গড় নির্ণয় করা যায় না এবং ব্যবহারে অসুবিধাজনক।

ভুল সিদ্ধান্ত:

বিস্তারিত বিবরণ না থাকলে যোজিত গড় ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকে।


যোজিত গড় একটি আদর্শ কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপক এর কিছু অসুবিধা থাকবে এটিই স্বাভাবিক।


যোজিত গড় বা গাণিতিক গড়ের ব্যবহার

যোজিত গড়ের ব্যবহার: যোজিত গড় একটি প্রবণ পরিমাপক হিসেবে সামাজিক অর্থনৈতিক ও ব্যবসায় সংক্রান্ত অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যা নিচে উল্লেখ করা হলো।

নিত্য দিনের জীবন ব্যবস্থা:

যোজিত গড়ের উপযোগিতাসমূহ থেকে সহজেই বুঝা যায় এ কেন্দ্রীয় পরিমাপটি প্রতিদিনের জীবন ব্যবস্থায় ব্যবহার করা যায়।

সমাজ গবেষণা কর্ম:

আধুনিককালে বিজ্ঞানের জগতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে গবেষণাকার্য পরিচালনা করতে হয়।যেখানে গবেষণালব্ধ তথ্যের গড় পরিমাপ বের করার জন্য গাণিতিক গড়ের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

উচ্চতর গাণিতিক কর্ম:

আধুনিককালে উচ্চতর গাণিতিক সকল কর্মে যোজিত গড় ব্যবহার করা হচ্ছে বিশ্লেষকের তত্ত্ব নির্মাণেও এর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে।

সূচক নির্ণয় সংখ্যা:

বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সূচক সংখ্যা নির্ণয়ে ভারপ্রাপ্ত যোজিত গড় ব্যবহার করা যায়।

পরিসংখ্যানিক নমুনা বিন্যাসের ক্ষেত্র:

পরিসংখ্যানিক গবেষণা কর্মের নমুনা পর্যবেক্ষণে যোজিত গড় ব্যবহার হয়।

কালীন সারির ক্ষেত্রে:

কালীন সারি বিশ্লেষণে যোজিত গড় কাজে লাগে।

সম্ভাবনা বিন্যাস:

পরিসংখ্যানিক কর্মের সম্ভাবনা বিন্যাস ও বিভিন্ন অভীক্ষায় যোজিত গড় ব্যবহার করা হয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মূলত পরিসংখ্যানিক যথ্য বিশ্লেষণের একটি অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে যোজিত গড়। হামাড়া সার্বিক তথ্য সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য যোজিত গড় ব্যাবহার করা হয়।