অনমুনায়ন ত্রুটি কি? অনমুনায়ন ত্রুটির কারণসমূহ ও ত্রুটি কমানোর উপায়

অনমুনায়ন ত্রুটি কি? এই ত্রুটির কারণসমূহ ও ত্রুটি কমানোর উপায় কি কি?

উত্তর: তথ্য বিশ্ব হতে নমুনা সংগ্রহের সময় বেশ কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। এদের মধ্যে অনমুনায়ন ত্রুটি একটি। নিচে অনমুনায়ন ত্রুটির বিশদ বিবরণ দেওয়া হলো।

অনমুনায়ন ত্রুটি কি? অনমুনায়ন ত্রুটির কারণসমূহ ও ত্রুটি কমানোর উপায়

অনমুনায়ন ত্রুটি: নমুনায়ন ব্যতীত অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে ত্রুটির ফলে পরামিতি ও নমুনাজমানের যে পার্থক্য সৃষ্টি হয় তাকে অনমুনায়ন ত্রুটি বলা হয়। অনমুনায়ন ত্রুটি সাধারণত শুমারি জরিপ এবং নমুনা জরিপ ক্ষেত্র হতে উদ্ভূত হয়। এ ত্রুটি উদ্ভব হয় নমুনা বা শুমারি জরিপের ব্যবহারিক কাজের সময়, যেমন- ভুল পরিবেশন, তথ্য প্রক্রিয়াকরণে ভুল, নমুনা সংগ্রহে ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে। অনমুনা ত্রুটি কোনোভাবেই পরিমাণ করা সম্ভব হয় না। তাত্ত্বিকভাবে এ ত্রুটি হয় না ব্যবহারিক কাজের সময় এ ধরনের ত্রুটি দেখা যায়।

অনমুনায়ন ত্রুটির বিভিন্ন কারণসমূহ

১. পরিকল্পনা ত্রুটি: কোনো সুনির্দিষ্ট কাজের পূর্ব সিদ্ধান্ত হলো পরিকল্পনা। শুমারি বা নমুনা জরিপের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যর ভিত্তিতে প্রশ্নমালার ধরন, তথ্যসংগ্রহ কৌশল, দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনুসন্ধানকারী নিয়োগ জরিপের ব্যপ্তি, অর্থ ও সময় ইত্যাদি সম্পর্কে সুচিন্তিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। গবেষকের দক্ষতা, অসততা তথ্যগত আন্তি ও অন্যান্য কারবেন ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে জরিপ কাজে ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা দেয়, অনমুনাজ ত্রুটির উদ্ভব হয়।

২. নতুন চয়নের ত্রুটি: উদ্দেশ্যমূলক নমুনা চয়নে গবেষকের পক্ষপাত দুষ্টতার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। সৈব চয়নের মাধ্যমে নমুনা বাছাই না করে আকস্মিক উদ্দেশ্যমূলক বা অন্যান্য নিঃসম্ভাবনা নমুনায়নের মাধ্যমে নমুনা বাছাই করা হলে প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা একক সবসময় পাওয়া যায় না। তাছাড়া জটিলতার কারণে নির্বাচিত নমুনা এককের পরিবর্তে সমগ্রকের অন্য কোনো একক থেকে তথ্যসংগ্রহ করা হলেও বিচ্যুতি দেখা দেয়। ফলে চূড়ান্ত ফলাফলের বিপত্তি সৃষ্টি হয়।

৩. তথ্য সংগ্রহে ত্রুটি: নির্বাচিত নমুনা এককের নিকট থেকে তথ্য সপ্তাহে অসুবিধা হতে পারে। বার বার যোগাযোগ করেও উত্তরদাতাকে না পেয়ে তথ্যসংগ্রহ না করা, উত্তরদাতার উত্তর এড়িয়ে যাওয়া, ভুল তথ্য প্রদান, উত্তর প্রদানে উত্তরদাতার অস্বীকৃতি, স্মৃতিহীনতা, অনিচ্ছাকৃত ভুল, অনুসন্ধান বা তথ্যসংগ্রহকারীর বিশেষ কোন উত্তরের প্রতি পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে তুল, ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ উত্তর সংগৃহীত হতে পাবে যা অনমুনাজ বিচ্যুতির জন্য দায়ী।

৪. দক্ষ লোকের অভাব: জরিপ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট গবেষক, তথ্যসংগ্রহকারী ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ এর অদক্ষতার। জন্য জরিপ কাজ ত্রুটিপূর্ণভাবে পরিচালিত হতে পারে। যা। অনমুনা বিচ্যুতির পথ প্রশস্ত করে।

৫. বিশ্লেষণ-পূর্ব বিচ্যুতি: তথ্য বিশ্লেষণের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে তথ্য সম্পাদনা, সারণি তৈরি, কোডিংসহ নানা কাজে অসাবধানতাবসত কারণে ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা দিতে পারে। ফলে অনমুনা বিচ্যুতির উদ্ভব হয়।

৬. প্রকাশনাজনিত ত্রুটি: শুমারি বা নমুনা জরিপের রিপোর্ট। প্রকাশ করার সময় মুদ্রণজনিত ত্রুটি, ব্যবহার উপযোগী করে প্রকাশের ব্যর্থতা ও অন্যান্য প্রকাশনাজনিত ত্রুটি অনমুনায়ন বিচ্যুতির জন্ম দেয়।

উপরে উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও ত্রুটিপূর্ণ শুমারি বা নমুনা কাঠামো, যোগাযোগ ও যাতায়াত সংক্রান্ত সমস্যা, পর্যাপ্ত সময়ের অভাব, অর্থ ও শ্রম প্রদানে অসমর্থ হওয়া অনমুনায়ন বিচ্যুতি সৃষ্টি করতে পারে।


অনমুনায়ন ত্রুটি কমানোর উপায়গুলো আলোচনা কর।

যেসব কারণে অনমুনায়ন ত্রুটির উদ্ভব হয় সেগুলো ভালোভাবে আয়ত্ব করলে অনমুনায়ন ত্রুটির ব্যাপকতা রোধ করা সম্ভব।

অনমুনায়ন ত্রুটি কমানোর উপায়: নিচে অনমুনায়ন ত্রুটি হ্রাসের উপায়সমূহ বর্ণনা করা হলো। যথা।

১. প্রশিক্ষিত অনুসন্ধানকারী নিয়োগ: জরিপ কাজে অভিজ্ঞ এ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনুসন্ধাদকারী নিয়োগ করে তথ্যসংগ্রহ করা হলে অনমুনায়ন ত্রুটি হ্রাস পেতে পারে।

২. যথার্থ নমুনায়ন কাঠামো প্রস্তুতি: নমুনায়ন কাঠামো হালনাগাদ, আধুনিক ও সম্পূর্ণ হলে অনমুনায়ন ত্রুটি এড়ানো যায়।

৩. প্রশ্নপত্র যাচাই: জরিপের জন্য প্রথমে একটি খসড়া প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। অতঃপর প্রশ্নপত্রের যথার্থতা যাচাই করে ত্রুটিমুক্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করা হলে বিচ্যুতি হ্রাস পায়।

৪. পরীক্ষামূলক জরিপ: মূল জরিপ ত্রুটিমুক্ত করার জন্য এমগ্রকের একটি ক্ষুদ্র অংশের উপর প্রাক বা পরীক্ষামূলক জরিপ পরিচালনা করা হয়। যা বিচ্যুতি হ্রাসে সহায়তা করে।

৫. ত্রুটিমুক্ত যন্ত্রপাতি: গবেষণায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো রতে ত্রুটিমুক্ত থাকে সেদিকে গবেষক অবশ্যই সতর্ক নজর রাখতে হবে।

৬. নির্ভুল তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা: তথ্যসংগ্রহকারী অবশ্যই বা উত্তরদাতাকে প্রশ্ন বুঝিয়ে দিয়ে সঠিক তথ্যসংগ্রহ করতে পারেন। এফ এতে বিচ্যুতির হ্রাস পায়।

৭. তথ্য বিশ্লেষণের সতর্কতা: সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের পূর্বে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, শ্রেণিকরণ ও সারণিকরণে অত্যন্ত চির সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

উপরিউক্ত আলোচনাসমূহ সঠিকভাবে খেয়াল করলে গবেষণা কার্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।

No comments:

Post a Comment