সংশ্লেষাঙ্ক কী? সংশ্লেষের প্রকারভেদ

 সংশ্লেষাঙ্ক কী? সংশ্লেষের প্রকারভেদ লিখ

ভূমিকাঃ সহসম্পর্ক সহগ বা সংশ্লেষাঙ্কঃ দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তার গাণিতিক পরিমাণকে সহসম্পর্ক সহগ বা Coefficient of correlation বসে। এটি একটি সিরিজকে বিশ্লেষণ করে না, বরং নমুনার দুটি চলকের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়েই শুধু সহসম্পর্ক কাজ করে। একে r দ্বারা সূচীত করা হয়। এর মান -১ হতে শুরু করে +১ এর মধ্যেসীমাবদ্ধ থাকে।  সহসম্পর্ক সহণের কোনো একক গোষ্ঠীর সহসম্পর্ক সহণকে সীমাবদ্ধ থাকে। তবে '0' সহসম্পর্কের অনুপস্থিতিকে বুঝায়।সহসম্পর্ক সহগের কোন একক গোষ্ঠীর সহসম্পর্ক সহগকে p (রো) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

সংশ্লেষাঙ্ক কী? সংশ্লেষের প্রকারভেদ

১. যদি দুটি চলকের মাধ্য ধনাত্মক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে, অর্থাৎ, একটি চলকের মান বৃদ্ধির সাথে সাথে অপর চালকের মান সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায় অথবা উভয়ের মান একই হারে হ্রাস পায় তবে সে ধরনের পরিবর্তনকে ধনাত্মক সহসম্পর্ক দলে। অর্থাৎ, দুটি চলকের পরিবর্তন একইমুখী হবে। এখানে r এর মান হবে শূন্য অপেক্ষা বড় তবে ১ পর্যন্ত।

২. যদি দুটি চলকের মধ্যে যে কোন একটি চলকের মান বৃদ্ধির সাথে সাথে সমানুপাতিক হারে অপর চলকের মান হ্রাস পায় অথবা একটি চলকের মান হ্রাসের সাথে সাথে সমানুপাতিক হাতে অপর চলদের মান বৃদ্ধি পায় তবে তাদের মধ্যে পরিবর্তনকে ঋণাত্মক সহসম্পর্ক বলে। অর্থাৎ, দুটি চলকের পরিবর্তন বিপরীতমুখী হবে। এক্ষেত্রে r এর মান শূন্য থেকে কম হবে ১ পর্যন্ত।

৩. দুটি চলকের মধ্য কোন প্রকার সহসম্পর্ক না থাকলে r এর মান শূন্য হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দুটি চলকই স্বাধীন হয়।


সংশ্লেষের প্রকারভেদ আলোচনা কর।

পরিসংখ্যানিক অনুসন্ধানের যে সব ক্ষেত্রে বা ততোধিক চলকের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের প্রকৃতি ও মাত্রা নির্ণয়ের প্রয়োজন হয় সেসব ক্ষেত্রে সংশ্লেষ বাবহার করা যায়। পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে সংশ্লেষ বা Correlation অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কতকগুলো চলক এমন হয় যে, যাদের একটির মান পরিবর্তিত হলে অপরটির মানও পরিবর্তিত হয় তবে সে মান চলকগুলোকে Coriclution বলা হয়। এর মাধ্যমে চলকগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়।

সংশ্লেষের প্রকারভেদ: সাধারণ সংশ্লেষকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা-

১. সহজ সংশ্লেষ বা Simple Correlation;

২. বহুধা সংশ্লেষ বা Multiple Correlation এবং

৩. আংশিক সংশ্লেষ বা Partial Correlation

১. সহজ সংশ্লেষ: কোন দ্বি-সৈব পরিমিত সমগ্রক হতে নেওয়া দুটি চলক যদি একই সাথে পরিবর্তিত হয়, অন্য কথায় যে চলক দুটির মধ্যে কোনরূপ সম্পর্ক আছে। দুটি চলকের পরিবর্তনের প্রকৃতি একইরূপ বা ভিন্নরূপ হতে পারে। দুটি চলকের মধ্যে বিদ্যমান এ সম্পর্ককে একই সাথে পরিবর্তন হওয়ার প্রবণতাকে সহজ সংশ্লেষ বা Simple Correlation বলে। সহজ সংশ্লেষকে আবার নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়। যথা।

(ক) সহযোগী সংশ্লেষ: যদি দুটি চলকের পরিবর্তনের দিক একই হয় এবং উভয় চলকের পরিবর্তনের হার সমান না হয়, তবে একটি চলকের মানের বৃদ্ধিতে অপর চদকের মানের কিছু না কিছু বৃদ্ধি ঘটে। এরূপ চলকদ্বয়ের মধ্যকার সংশ্লেষক একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশ্লেষের অংশ, যা সর্বদা ব্যবহৃত হয়।

(খ) পূর্ণ সহযোগী সংশ্লেষ: যদি দুটি চলক এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত হয় যে, তাদের মানের পরিবর্তনের হার সমান এবং দিক সমমুখী, তবে তাদের মধ্যকার সংশ্লেষকে পূর্ণ সহযোগী সংশ্লেষ বলে।

(গ) অসহযোগী সংশ্লেষ: যদি দুটি চলকের মানের পরিবর্তনের দিক বিপরীত হয় এবং হার অসমান হয়। তবে একটি চলকের মানের বৃদ্ধিতে অপর চলকের মান কিছু না কিছু হ্রাস পায়।

(ঘ) পূর্ণ অসহযোগী সংশ্লেষ: যদি দুটি চলক এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত হয় যে, একটির পরিবর্তনের হার অন্যটির পরিবর্তনের হারের সমান কিন্তু পরিবর্তনের দিক একটি অপরদিকে বিপরীত তখন চলকদ্বয়ের মধ্যকার সংশ্লেষকে পূর্ণ অসহযোগী সংশ্লেষ বলে। এক্ষেত্রে r =f I হয় যদি x ও y চলকদ্বয় ax + by + c = 0 এ সমীকরণ দ্বারা সম্পর্ক যুক্ত হয় এবং a ও b একই চিহ্ন বিশিষ্ট ধ্রুবক হয়, তবে চলকদ্বয়ের মধ্যকার সংশ্লেষকে পূর্ণ অসহাযাগী বা পূর্ণ ঋণাত্মক সংশ্লেষ বলা হয়।

(৬) শূন্য সংশ্লেষ: যদি একটি চলকের পরিবর্তন অন্যটির উপর কোন প্রকার প্রভাব ফেলতে না পারে তবে তাদের মধ্যে সংশ্লেষ নেই বলে বিবেচিত হয় শূন্য সংশ্লেষের ক্ষেত্রে একটি চলকের পরিবর্তনে অপর চলকের পরিবর্তন সমমুখী না বিপরীতমুখী বুঝা যায় না।

২. বহুধা সংশ্লেষ: যদি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত আনকগুলো চলকের মধ্যে কোন একটি চলকের উপর অন্য সব চলকের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তবে সে নির্দিষ্ট চলক ও ঐ একদল চলকের মধ্যে যে সম্পর্ক পাওয়া যায় তাই বহুধা সংশ্লেষ। যেমন- ধানের ফসল (y) কতকগুলো স্বাধীন চলক (যেমন-সার (x'), পানি সরবরাহ (x1), কীটনাশক (x2) ইত্যাদি) দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখানে ধানের ফলনের সাথে অন্যান্য উপকরণের মধ্যে যে সম্পর্ক তাই বহুধা সংশ্লেষ।

৩. আংশিক সংশ্লেষ: যদি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অনেকগুলো চলকের মধ্যে একটি অধীন চলকের উপর অন্যসব চলকের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তবে স্বাধীন চলকগুলোর মধ্য হতে একটি নির্দিষ্ট চলকও ঐ অধীন চলকের মধ্যে যে সম্পর্ক পাওয়া যায় তাকে আংশিক সংশ্লেষ বলে। যেমন ধানের ফলন (x) কতকগুলো স্বাধীন চলক (x1) (x2) (x3) ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয়। ধানের ফলন ও অন্যান্য উপাদানের মধ্যে এ সম্পর্ককে আংশিক সংশ্লেষ বলে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সংশ্লেষ পরিসংখ্যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর মাধ্যমে দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ণয় করা যায় যা পরিসংখ্যানে অত্যন্ত কার্যকরী। এ সংশ্লেষ আবার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা আবশ্যক।

No comments:

Post a Comment