Showing posts with label সমসাময়িক সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব. Show all posts
Showing posts with label সমসাময়িক সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব. Show all posts

বিচ্যুতি কি? বিচ্যুতি আচরণ কি ? বিচ্যুতি আচরণের ফলাফল

বিচ্যুতি কি? What is deviation?

অথবা, বিচ্যুতি আচরণ কি ? What is deviant behavior?

ভূমিকাঃ- সমাজবদ্ধভাবে জীবন-যাপনের মধ্য দিয়েই  মানব গোষ্ঠীকে সমাজস্থ কিছু নিয়ম কানুন এবং আদর্শের মানদন্ডে পরিচালিত হতে হয়েছে। এই নিয়মকানুন ও আদর্শের বেঘাত ঘটলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় সমাজে নেমে আসে অন্তঃনির্হিত দ্বন্দ্ব। তাই এ অবস্তা থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ও আদর্শকে সমুন্নত রাখা।

বিচ্যুতি কি? বিচ্যুতি আচরণ কি

বিচ্যুতিঃ বস্তুত সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধের পরিপন্থি আচরণই বিচ্যুতি। অন্যভাবে বলা যায় যে বিচ্যুতি হলো সমাজের স্বাভাবিক এবং বঞ্চিত আচরণের বিরোধী বা পরিপন্থি কোন কাজ।

বিচ্যুতি আচরণ হলো এমন কোনো কর্মকাণ্ড যা সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি, আইন-কানুন, নৈতিকতা, ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তবে, সব বিচ্যুতি আচরণ যে অপরাধ তা নয়। অনেক সময় সমাজে প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তনের জন্যও কিছু বিচ্যুতি ঘটতে পারে, যা সমাজে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা ঘটায়।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিচ্যুতি সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাদের কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো।

ডেভিড পোপেন বলেন ''বিচ্যুতি হলো এমন এক আচরণ যা কোনো গোষ্ঠী বা সমাজের সামাজিক আদর্শকে ভঙ্গ করে।''

প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী আর. টি. শেফার তাঁর সাজবিজ্ঞান গ্রন্থে  বলেন ''বিচ্যুতি হলো সেই আচরণ যা কোন গোষ্ঠী বা সমাজের প্রত্যশিত আচরণের মানকে ভঙ্গ করে।'' 

রস এর মতে ''বিচ্যুতি হলো সেই আচরণ যা সামাজিক প্রত্যাশাকে অনুমোদন করে না।''

বি ভূষণ বলেন ''বিচ্যুতি প্রত্যয়টি কোন আচরণকে বুঝতে ব্যবহৃত হয় না যা নিয়ামাবলি বা অন্যের প্রতাশাকে লঙ্ঘন করে এবং যা অনুমোদিত বা শাস্তির প্রতি আকৃষ্ট করে।''

রবার্টসন এর মতে, ''বিচ্যুতি হলো এমন এক ধরনের আচরণ বা বৈশিষ্ট্য যা তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্যাশিত সামাজিক মূল্যবোধকে ভঙ্গ করে এবং সমাজের বহু লোক নোতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করে।''

বিচ্যুতি আচরণের ফলাফল (Consequences of Deviant Behavior):

বিচ্যুতি আচরণের ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় ধরনের প্রভাব বা ফলাফল রয়েছে। নিচে তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

ক. ব্যক্তিগত ফলাফল:

  • অপরাধমূলক বিচ্যুতি আচরণের কারণে জেল, জরিমানা ইত্যাদি শাস্তি পেতে হয়।
  • সমাজে বদনাম বা অসম্মানিত হওয়ার কারণে ব্যক্তি একঘরে হয়ে যেতে পারে।
  • বিচ্যুতি আচরণ করে অনেকে পরে অনুশোচনায় ভোগে।
  • অনেক সময় এই আচরণের কারণে শিক্ষা, চাকরি বা ভালো জীবনের সুযোগ হারিয়ে যায়।


খ. সামাজিক ফলাফল:

  • একাধিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি নিয়ম ভঙ্গ করে, তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
  • সমাজে অপরাধ, সহিংসতা বা ভয় বাড়ে।
  • দীর্ঘ সময় ধরে বিচ্যুতি আচরণ চলতে থাকলে সমাজের নৈতিকতা ও আদর্শ দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • বিচ্যুতি আচরণ সমাজের ভেতরে শ্রেণি, গোষ্ঠী বা সংস্কৃতির মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি ।


উপসংহারঃ উপযুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে বিচ্যুতি হলো সামাজিক সংহতি  ও শৃঙ্খলার পরিপন্থি কাজ। বিচ্যুতি আচরণের জন্য আইনত শাস্তির বিধান নেই বিধায় সব সমাজেই বিচ্যুতি আচরণ কমবেশি দেখা যায়। বস্তুত বিচ্যুতি আচরণের জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা এবং সকলের সম্মিলিত প্রয়াস।বিচ্যুতি আচরণ সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। এটি ব্যক্তির জীবনকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করে, তেমনি সমাজের স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্যও হুমকি তৈরি করে।

ব্যবস্থা তত্ত্ব কি? ব্যবস্থা তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য

ব্যবস্থা তত্ত্ব কি? ব্যবস্থা তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য লিখ

ভূমিকা:- সমাজ রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিংশ শতাব্দিতে বিভিন্ন ধরনের চিন্তা চেতনার উদ্ভব ঘটে। সামাজিক পেক্ষাপটকে বিশ্লেষণ করেই এসব তত্ত্বের উদ্ভাবনকে গ্রহণ করা হয়।

ব্যবস্থা তত্ত্ব কি

ব্যবস্থা তত্ত্ব এমন একটি তত্ত্ব যা সমসাময়িক সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষণে সক্ষম একটি তাত্ত্বিক দৃষ্টভঙ্গি। যদিও অনেক আগে ব্যবস্থা তত্ত্বের উদ্ভব হয় তথাপি এর বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় বিংশ  শতকে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ পরবর্তীসময়ে সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষণে এ তত্ত্ব ছিল বিশেষভাবে উপযোগী একটি তত্ত্ব। বর্তমান সময়েও রাজনীতির বিশ্লেষণে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ডেভিড ইস্টান ১৯৫৩ সালে The political system  গ্রন্থে এ তত্ত্বটি প্রয়োগ করে। সামগ্রিক রাজনৈতিক বিশ্লেষণকে সামনে রেখে এ তত্ত্বের উদ্ভব ঘটানো হয়। তাই সমাজ ও রাজনীতি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে এই ব্যবস্থা তত্ত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ব্যবস্থা তত্ত্ব (System Theory):

সাধানণত কোনো একটি বিষয়কে সামাজিকভাবে পর্যালোচনা করার জন্য যে তত্ত্ব ব্যবহৃত হয় তাকেই ব্যবস্থা তত্ত্ব বলে। এটি একটি সমন্বিত তত্ত্ব। এ তত্ত্বে অনেকগুলো একক একসাথে কাজ করে। ব্যবস্থা তত্ত্বে এককগুলো পরস্পর সংযুক্ত এবং একে অপরের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। কোনো একটি এককের পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ কোনো একটি এককের পরিবর্তন অপরাপর এককের পরিবর্তনকেও নির্দেশিত করে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা

বিভিন্ন তাত্ত্বিক দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদ ব্যবস্থা তত্ত্বকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো-

Almond and Powell  ব্যবস্থা তত্ত্ব সম্পর্কে তারা বলেছেন- ''ব্যবস্থা হচ্ছে বিভিন্ন অংশগুলোর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং ব্যবস্থার সাথে এর পরিবেশের মধ্যে কোন না কোন ধরনের সীমাবদ্ধতা।''

Anatol Rapport এর মতে ''A who which function as a hole by virtue of the independence of its part is called a system.''

Morton Cuplan (মরটন কাপলান) বলেছেন ''A set of interrelated variables as distinguished  from the environment  of set.''

James Colemen said to ''A system implies a set of odered relastionship having stable boundaries and a certain persistence over time.''

লাডউইপ বার্টালানাফি এর মতে ''সিস্টেম হলো এমন কিছু উপাদানের সমষ্টি যা স্থায়ীভাবে মিথস্ক্রিয়া করে।''

ব্যবস্থা তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য

১. সমন্বিত গঠন:

ব্যবস্থা তত্ত্ব বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি উপাদান (যেমন: ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন) নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে এবং পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।

২. পারস্পরিক নির্ভরতা:

প্রত্যেক একক বা উপাদান একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং একটির পরিবর্তন অন্যটির ওপর প্রভাব ফেলে। এটি একটি "ইন্টারডিপেনডেন্ট" কাঠামো।

৩. ইনপুট ও আউটপুট পদ্ধতি:

ডেভিড ইস্টনের মতে, সমাজ বা রাজনীতির মধ্যে বিভিন্ন দাবি, অভিযোগ বা সমর্থন ইনপুট হিসেবে আসে এবং সেগুলোর প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্র বা সমাজ ব্যবস্থা থেকে নীতিমালা, সিদ্ধান্ত ইত্যাদি আউটপুট হিসেবে নির্গত হয়।

৪. পরিবেশ নির্ভরতা:

ব্যবস্থা তত্ত্ব কোনো নির্জীব কাঠামো নয়; এটি পরিবেশের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখে এবং পরিবেশের পরিবর্তন অনুযায়ী নিজেকে পরিবর্তন করে।

৫. ফিডব্যাক প্রক্রিয়া:

ফিডব্যাকের মাধ্যমে একটি ব্যবস্থা জানে তার আউটপুট কার্যকর হয়েছে কি না। সমাজের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা আবার নিজেকে নতুনভাবে সাজায়।

৬. সীমাবদ্ধতা ও স্থিতিশীলতা:

প্রতিটি ব্যবস্থার নির্দিষ্ট সীমা থাকে, যেখানে এককগুলো একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে কাজ করে। দীর্ঘমেয়াদে এই কাঠামো একটি স্থায়িত্ব বজায় রাখে।

৭. প্রয়োগযোগ্যতা:

ব্যবস্থা তত্ত্ব কেবল রাজনীতি নয়, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রশাসনসহ বিভিন্ন শাখায় বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়

উপসংহার: উপরের সংজ্ঞা গুলো পর্যালোচনা করে বলা যায় যে ব্যবস্তা তত্ত্ব হলো কতিপয় এককের সমন্বয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থা। ব্যবস্থা তত্ত্বে প্রতিটি এককের মধ্যে এক ধরনের পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ একটির পরিবর্তন আরেকটির পরিবর্তন ঘটায়।

সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব কী? ট্যালকট পারসন্সের প্যাটার্ন ভেরিয়েবল সংজ্ঞা ও প্রকারভেদসমূহ

সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব? পারসন্সের প্যাটার্ন ভেরিয়েবল সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ

ভূমিকা:- সমাজবিজ্ঞানে যে সকল প্রত্যয় ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। এ তত্ত্বের মাধ্যমেই মানুষ সমগ্র সমাজ সম্পর্কে এবং সমাজস্থ বিভিন্ন মানুষ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। এছাড়া সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পর্কে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়।এছাড়া ব্যক্তি ও সমাজজীবনের প্রতিটি বিষয়ের ব্যাখ্যা একমাত্র সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বেই পাওয়া সম্ভব।

সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব কী? পারসন্স এর প্যাটার্ন ভেরিয়েবল কী?

সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব

অধ্যাপক জে. জে ম্যাকিউনিস বলেন ''সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব হলো এমন এক বিকৃতি যার সাথে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় (যেমন- কখন ও কিভাবে) সম্পর্কিত।''
রবার্ট কে মার্টনের মতে ''সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব হচ্ছে এমন কতকগুলো অভিজ্ঞতা দ্বারা লব্ধ প্রস্তাবনার সমষ্টি যারা যুক্তির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।''
কনসাইজ অক্সফোর্ড ডিকশোনারিতে বলা হয় ''সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব হচ্ছে প্রত্যাহিক উদ্দেশ্যর একটি নির্দেশক অনুমান বা কল্পনা ব্যাখ্যাকারী কোনোকিছু যা ঘটনার নিরপেক্ষতার মূল সূত্র সমূহের উপর প্রতিষ্ঠিত।


পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ সম্পর্কিত কোনো সাধারণ সূত্রই হচ্ছে সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব। সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব হলো সমাজের গঠন, কার্যপ্রণালী ও পরিবর্তন সম্পর্কিত নিয়মিত ব্যাখ্যা বা সাধারণ সূত্র যা সমাজবিজ্ঞানীরা উপস্থাপন করেন

পারসন্সের প্যাটার্ন ভেরিয়েবল তত্ত্ব

সমাজ বিশ্লেষণে যে সব ক্রিয়াবাদী তাত্ত্বিক রয়েছেন তাদের মধ্যে ট্যালকট পারসন্স হলেন উল্লেখযোগ্য। তার চিন্তাধারা জটিল ও বিমূর্ততায় আচ্ছন্ন। এ কারণে অনেকে তার গ্রন্থ অধ্যয়ন করে পশুশ্রম নামে আখ্যায়িত করেছেন। ট্যালকট পারসন্স সমাজবিজ্ঞানে যতগুলি তত্ত্ব প্রদান করেছেন তার মধ্যে অন্যতম প্যাটার্ন ভেরিয়েবল তত্ত্ব ।

প্যাটার্ন ভেরিয়েবল/ ধরণ চলকসমূহ সংজ্ঞা

সাধারণভাবে বলা যায়, সামাজিক সম্পর্ক বা আচরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সামনে নির্বাচন করার যে সব সুযোগ বিদ্যমান থাকে সেগুলোই প্যাটার্ন ভেরিয়েবলস।
১৯৫১ সালে ট্যালকট পারসন্স এবং ই-মিলস নামক একজন বিজ্ঞানী values Motives and system of social Action নামক গ্রন্থে প্যাটার্ন ভেরিয়েবল এর কথা আলোচনা করেছেন।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা

ট্যালকট পারসন্স এর মতে, প্রত্যেক মানুষের আচরণের একটি বিশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এ উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে অনেকগুলো অপশন থেকে বিকল্প একটি গ্রহণ করে। একজন মানুষের সামনে যেসব অপশন বিকল্প থাকে তাকে Pattern Variable বলে।
জি. ই. সোয়ানসন বলেছেন ''কোনো সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে দ্বৈতক অবস্থান বিরাজ করে তাকেই প্যাটার্ন ভেরিয়েবল বলে।
ট্যালকট পারসন্স বলেন -''A pattern variable is a dischotomy one side of which must be chosen by an actor before the meaning of a situation is determinate for him and thus before the can act with respect to that situation. In other words catch pattern variable represent a problem or a dilemma that must solved the actor before action can take place.
ডিভেরেক্স এর মতে, "The Pattern variables are described as representing dilemas paced by individuals actors in attempting to deteine sifuations,"
উন্নয়ন সমাজচিন্তাবিদ হুগভেন্ট এর মতে, "Pattern variables are alternative pattern of value orientation in the role expectations of the actors in a social system."

Timasheff এর মতে, "একজন ব্যক্তির পছন্দের বিকল্পসমূহই হচ্ছে প্যাটার্ন ভেরিয়েবলস।"

প্যাটার্ন ভেরিয়েবলসের/ ধরন চলকসমূহের প্রকারভেদ:

পাঁচ ধরনের প্যাটার্ন ভেরিয়েবলসের কথা উল্লেখ করেছেন। নিম্নে এগুলো উল্লেখ করা হলো-

১. স্নেহাশীলতা বনাম স্নেহনিরপেক্ষতা:

পারসন্স সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মনোভাবের উপাদান নির্ণয়ে এ ভিন্নকদ্বয় ব্যবহার করেন কোনো আন্তঃব্যক্তিকে সম্পর্ক স্নেহজাত নাকি স্নেহনিরপেক্ষ তা ব্যাখ্যা করবে সম্পর্কের ধরনকে। যেমন- শিশু মায়ের মধ্যে যে সম্পর্ক তা স্নেহনিরপেক্ষ নয়। কেননা এ সম্পর্কের মধ্যে এক ধরনের হৃদয়বোধের বিষয় নিহিত থাকে। কিন্তু একজন ডাক্তার ও রোগীর মধ্যে সম্পর্ক তা অনেকাংশে হৃদয়বোধের নয়।

২. নির্দিষ্টতা বনাম সর্বাত্মকতা:

এ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অহমের নিয়োজিত হবার মাত্রা নির্দেশ করে তা বিশেষায়িত নাকি সর্বাত্মক। যেমন- বাবা-মায়ের সম্পর্ক সর্বাত্মক। কিন্তু অন্যদিকে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যে সম্পর্ক তা সাময়িক, স্থানিক এবং সংক্ষিপ্ত পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই এ ধরনের সম্পর্ক নির্দিষ্টতা আপন করে।

৩. বিশ্বজনীনতা বনাম বিশিষ্টতা:

এ ভিন্নকদ্বয় সামাজিক যেকোনো বস্তুর প্রকারভেদের প্রক্রিয়া নির্দেশ করে। কোনো বিষয়কে অহম বিশ্বজনীন কিংবা বিশেষভাবে পরিমাপ করতে পারে। যেমন ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বিশ্বজনীনতাকে নির্দেশ করে। কিন্তু বাংলা ভাষা বিশেষ অঞ্চলের ভাষাকে বুঝায়। তাই এটা বিশিষ্টতার পর্যায়ে পড়বে।

৪. গুণ বনাম দক্ষতা:

এই ভিন্নক জোড়া নির্দেশ করে অহম তার সামাজিক লক্ষ্যবস্তুটি কীভাবে প্রত্যক্ষ করছে। অর্থাৎ জন্মগত বা অনার্জিত গুণাবলির দৃষ্টিকোণ থেকে নাকি অর্জিত দক্ষতার সৃষ্টিকোণ থেকে। যেমন- একজন ছাত্রের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সে একজন ছাত্র এটা মূল্যায়ন করা হবে নাকি 'তার লেখা মূল্যায়ন করা হবে। মোটকথা অহমের আচরণ নির্ধারিত করবে কোন দিকটি অধিক গুরুত্ব পাবে।

৫. ব্যক্তিস্বার্থ বনাম গোষ্ঠীস্বার্থ:

কোনো ব্যক্তি তার নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করতে পারে আবার কেউ সমষ্টির স্বার্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালাতে পারে। যেমন- একজন লেখক বহির্বিশ্বে নিজের কর্ম ও জীবন সম্পর্কে লিখে নিজের উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে এবং অন্যদিকে নিজ দেশের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, ভালো দিকগুলো লিখে বহির্বিশ্বে নিজের দেশকে এবং দেশের জনগণকে পরিচিত করতে পারে।

সমালোচনা:

পারসন্সের প্যাটার্ন ভেরিয়েবলসের তত্ত্বটি নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে। যেমন-
১. অনেকের মতে, পারসন্সের এ তত্ত্বটি শুধু ধনতান্ত্রিক সমাজের উদাহরণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। তাই ধনতান্ত্রিক সমাজের ব্যাখ্যায় তত্ত্বটির গুরুত্ব থাকলেও অন্য কোনো সমাজের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব নেই।
২. প্যাটার্ন ভেরিয়েবলসের জোড়াগুলোর কমসংখ্যক বিকল্পই কর্তার নিকট সত্য হিসেবে প্রতিফলিত হয় বলে অনেকে মনে করেন। যখন সমাজের বিধিনিষেধের সম্মুখীন হয় তখন সেগুলো স্বাধীনভাবে চয়ন করা যায় না।
৩. যেকোনো বিকল্পের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা বলে একটা কথা থাকে। কর্তা এমন আচরণ সম্পাদন করতে পারে, যা উভয় বিকল্পকেই সন্তুষ্ট করে। কিন্তু পারসন্স তাঁর তত্ত্বে এরূপ সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করেছেন।

আলফ্রেড সুজ এর সংজ্ঞানুযায়ী প্রপঞ্চবিদ্যা কি? Social Phenomenology কী?

প্রপঞ্চবিদ্যা বলতে কি বুঝ? সামাজিক ঘটনাবিদ্যা কী?

ভূমিকা:- সমাজবিজ্ঞানী হার্শেলকে বলা হয় আধুনিক প্রপঞ্চবিদ্যার জনক। তার মাধ্যমে এ ধারণাটির উৎপত্তি ঘটলেও হার্শেলের বন্ধু আলফ্রেড সুজ মূলত এ প্রত্যয়টি নিয়ে কাজ করেন। প্রপঞ্চবিদ্যা অনুযায়ী কর্তার মন্ময় জগৎই প্রকৃত সামাজিক বাস্তবতা ও মানের সৃজনশীল ভূমিকা বাহ্যিক জগৎকে যেভাবে তুলে ধরেন সেটাই মানবীয় সচেতনতার স্বরুপ।

আলফ্রেড সুজ এর সংজ্ঞানুযায়ী প্রপঞ্চবিদ্যা কি

প্রপঞ্চবিদ্যা সংজ্ঞা

আলফ্রেড সুজ (Alfred Schutz)  এর মতে ''প্রপঞ্চবিদ্যা বস্তুর অধ্যয়ন যা দৃষ্টগোচর হয়। একে প্রায়শই ব্যাখ্যামূলক এর চেয়ে বর্ণণামূলক বলা হয়।''

প্রপঞ্চবিদ্যার পিছে অনেকগুলি অনুসিদ্ধান্ত থাকে । এসব অনুসিদ্ধান্ত এর তাৎপর্যকে গভীরভাবে ব্যাখ্যা করে। যেমন-

প্রথমত,

প্রপঞ্চবিদ্যা বস্তুগত গবেষণার প্রত্যয়টিকে বাতিল করে। প্রপঞ্চবিদরা Phenomenological epoche হিসেবে অভিহিত একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গোষ্ঠী সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।

দ্বিতীয়ত,

প্রপঞ্চবিদ্যাতে এটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রতিদিনের মানব আচরণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জগৎ সম্পর্কে একটি সামগ্রিক ধারণা লাভ করা যায়।

তৃতীয়ত,

ব্যক্তিবিশেষ অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে পরীক্ষা করতে এবং প্রশ্ন করতে চায়। সমাজাতাত্ত্বিকভাবে এটি জীবনেরই একটি অংশ, ব্যক্তি বিশেষ ভালোভাবে এ বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে। কেননা একটি সমাজের সদস্য হিসেবেই সে লালিত পালিত হয় এবং সমাজের আচার আচরণ দ্বারাই সে প্রভাবিত হয়।

চতুর্থত,

প্রপঞ্চবিদরা প্রথাগত উপাত্তের চেয়ে সচেতন অভিজ্ঞতা বা  Consceous experience এর উপর বেশি গুরুত্ব দেই।

পঞ্চমত,

প্রপঞ্চবিদরা সবসময় অনুসন্ধানমূলক বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেই। যার কারণে এগুলোকে তারা অধিক বিবেচনায় আনে এবং ঐ প্রপঞ্চবিদরা গবেষণায় ব্যবহৃত পদ্ধতিকে চয়ন করে যা অন্যান্য বিজ্ঞানের চেয়ে কম সীমাবদ্ধ।

উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে সামাজিক মনোবিজ্ঞান তথা সমাজবিজ্ঞানে প্রপঞ্চবিদ্যা একটি বহুল আলোচিত বিষয়। প্রথমে হার্শেল এবং পরবর্তীতে তার বন্ধু স্যুজ এই প্রপঞ্চবিদ্যা নিয়ে বহুল আলোচনা ও গবেষণা করেন এবং খুজে পান প্রপঞ্চবিদ্যার কেন্দ্রীয় কাজ হচ্ছে দৃষ্টি গ্রন্থ বস্তুর একটি স্বচ্ছ  এবং স্থীর ব্যাখ্যা দান করা


Alfred Schutz এর মতে Social Phenomenology বা সামাজিক ঘটনাবিদ্যা


প্রখ্যাত মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী আলফ্রেড স্যুজ সর্বপ্রথম প্রপঞ্চকেন্দ্রিক সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করেন। প্রপঞ্চকেন্দ্রিক মৌল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে বাস্তবতার সমাজ সম্পর্কিত আলোচনা। আলফ্রেড স্যুজ ছিলেন সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম প্রবক্তা। তিনিই Max Weber de Interpretive Sociology এর ব্যাখ্যা প্রদান করেন এবং হার্শেল এর মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত করে অভ্যাসতত্ত্বের যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। Alfred Schutz এর Social Phenomenology: আলফ্রেড স্যুজ এর প্রধান কৃতিত্ব হচ্ছে তিনি প্রপঞ্চ প্রপঞ্চবিদ্যাকে Max Weber এর Interpretive Sociology (Verstehen Sociology) এবং মার্কিন মিথস্ক্রিয়াবাদের তত্ত্বের সাথে সংশ্লেষণ করে উপস্থাপন করেন। এই সংশ্লেষণের মাধ্যমে তিনি মূলত প্রপঞ্চবিদ্যার আরো. বিকাশসাধন করেন যেখান থেকে Phenomenological Sociology-র উদ্ভব ঘটে এবং এর মাধ্যমে আরো অনেক তাত্ত্বিকের আগমন ঘটে। Phenomenological Sociology-র সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Alfred Sehutz বলেন, বাস্তব সামাজিক সত্তার বাহ্যিক কাঠামোর অধ্যয়নই হলো অবভাসতাত্ত্বিক সমাজবিজ্ঞান যা অভিপ্রেত সচেতনতামূলক কর্মের বিশ্লেষণাত্মক কর্ণনার মাধ্যমে সচরাচর তৈরি হয়। এ ধরনের বিশ্লেষণের বিষয় হচ্ছে প্রতিদিনকার জীবন তথা জীবন-বিশ্বের অর্থপূর্ণ অবস্থান।

Farganis এর মতে, "বিস্ময়কর সমাজবিজ্ঞানকে বিশেষভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রকৃতির হিসেবে চিহ্নিত করা হয় কারণ এটি কার্যকারী পর্যবেক্ষকের মাধ্যমে দৃষ্টিকোণের মাধ্যমে বাস্তবতা বোঝার উপর জোর দেয়।" subject rather than the lens of the scientific আলফ্রেড স্যুজ তাঁর বন্ধু হার্শেলের (Husserl) অবভাসতত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। হার্শেল বলেন, মানবজাতির একটা প্রাকৃতিক প্রবণতা ও জীবনবিশ্ব।

সমাজতাত্ত্বিক সামান্যীকরণ কী? জ্ঞানালোকের যুগ কী

সমাজতাত্ত্বিক সামান্যীকরণ কী? জ্ঞানালোকের যুগ কী

ভূমিকা:- সামগ্রিক সমাজব্যবস্থায় জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় প্রয়োগ যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু সেটা নির্ধারণ করার উপায় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের তাত্ত্বিক সর্বজনীনতা। এ প্রেক্ষিতে একটি বিষয়কে বিজ্ঞান পদবাচ্য হতে হলে বিষয়টির তাত্ত্বিক সাধারণীকরণ ও সর্বজনীনতা অবশ্যই থাকতে হবে।

সমাজতাত্ত্বিক সামান্যীকরণ কী?

সাধারণীকরণ বা সামান্যীকরণঃ

সাধারণীকরণ হচ্ছে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রধান নির্ধারক।অতএব, সাধারণভাবে বলা যায় যে, সাধারণীকরণ হলো এমন এক ধরনের প্রক্রিয়া যাকে অনুসন্ধান কাজের ফলাফলের জন্য প্রযোজ্য বলে গণ্য করে।

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কোনো প্রপঞ্চ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও নবতর জ্ঞান লাভের বা জ্ঞান আহরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে সামান্যীকরণ প্রক্রিয়া। কেননা সাধারণীকরণ নিজেই ঘটনা এবং জ্ঞানের বাহক হিসেবে কাজ করে। কোন একটি তত্ত্ব সম্পর্কে যে সাধারণীকরণ নিজেই দাঁড় করানো হয় সেটি ভবিষ্যৎ অনুসন্ধান কাজের নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে যে সাধারণীকরণ করা হয় সেটি মূলত নিশ্চিত কিংবা স্থায়ী নয় বরং এটা প্রকৃতগতভাবে অস্থায়ী। এটাকে বলা হয় Variable generalization বা Approximate or probable generalization তবে এর পাশাপাশি কিছু Invariable generalization  ও রয়েছে যেগুলো সর্বজনীন সত্য অপেক্ষাকৃত স্থায়ী।

সমাজবিজ্ঞান কিংবা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে সাধারণীকরণের ক্ষেত্রে যে চিত্র ফুটে তোলে সেটা মূলত দুটি রূপ পরিগ্রহ করে। যথা- (ক) অভিজ্ঞতামূলক সাধারণীকরণ (খ) বিশ্লেষণাত্মক সাধারণীকরণ।

(ক) অভিজ্ঞতামূলক সাধারণীকরণ:

এ ধরনের সাধারণীকরণ অভিজ্ঞতামূলক বা পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল। এ ধরনের সাধারণীকরণের ক্ষেত্রে কোনো একটি Situation উদ্ভব হয়। কারণ, নির্ণয়ের বিষয়টি মূখ্য নয় বরং Situation টি কিরূপ সেটি মূখ্য।

(খ) বিশ্লেষণাত্মক সাধারণীকরণ:

এ ধরনের সাধারণীকরণের ক্ষেত্রে গবেষক তার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গবেষণা লব্ধ বিষয় সম্পর্কে একটি ব্যাখ্যা দাড় করানো। প্রপঞ্চ কার্যকরণ সম্পর্ক আবিষ্কার প্রচেষ্টা চালাই। এটাকে Empirical generalization এর পরবর্তী ধাপ বলে গণ্য করা হয়।

উপসংহারঃ সর্বশেষ বলা যায় সমাজিক বিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের আত্মপ্রকাশ ঘটার পর থেকে অদ্যাবধি সমাজ সম্পর্কিত প্রচুর গবেষণা ও তত্ত্ব  নির্মিত হলেও সার্বজনীন কোনো তত্ত্ব দাড় করানো সম্ভব হয়নি।করণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে এটা একটি নবীন বিজ্ঞান যা নিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় তত্ত্ব নির্মাণ কম হয়েছে। বস্তুত সমাজ একটি গতিশীল প্রতিষ্ঠান। সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তাছাড়া এক সমাজের জন্য যে তত্ত্ব প্রযোজ্য সেই তত্ত্ব অন্য সমাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। সুতরাং বলা যায় সমাজবিজ্ঞানের বা সমাজতাত্ত্বিকতত্ত্বের সামান্যীকরণ এখনো সম্ভব হয়নি।

জ্ঞানালোকের যুগ বলতে কী বুঝ?

সমাজজীবনের আদিকাল থেকে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ একেকটি যুগ পার করেছে। এ যুগের ধারাবাহিকতায় আধুনিক যুগের শুরু হয়েছিল ১৫শ শতক থেকে ১৮শ শতকের শেষ পর্যন্ত আর এ যুগকেই বলা হয় ইউরোপের আলোকিত যুগ। শিল্পবিপ্লব হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত আধুনিক যুগ বলে বিবেচিত। পাশ্চাত্য ইতিহাসে রোমের পতনকে প্রাচীন যুগের শেষ ও মধ্যযুগের সূচনা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু পূর্ব ইউরোপ রোমান সাম্রাজ্য থেকে রাইজানটাইন সাম্রাজ্যের অধীনে আসে, যার পতন আরো পরে ঘটে। ১৫ শতকের মাঝামাঝি গুটেনবার্গ আধুনিক ছাপাখানা আবিষ্কার করেন। যা যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফলে মধ্যযুগের সমাপ্তি ঘটে এবং বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূত্রপাত হয়। ১৮ শতকের মধ্যে ইউরোপে জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসার এমন একটি চরম অবস্থায় উপনীত হয় যা শিল্পবিপ্লবকে অবধারিত করে তুলে। বিশ্বের অন্যান্য অংশে বিশেষ করে প্রাচীন নিকট প্রাচ্য, প্রাচীন চীন, প্রাচীন ভারতে সভ্যতা ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়, যেমন চীনের অনন্য চার আবিষ্কার, ইসলামের স্বর্ণযুগ, ভারতীয় গণিত। তবে ১৮ শতকের পর হতে ব্যাপক ব্যবসা-বাণিজ্য ও উপনিবেশায়নের ফলে সভ্যতাগুলো বিশ্বায়িত হতে থাকে। গত পাঁচশো বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, জ্ঞানবিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, অস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতা, পরিবেশগত ক্ষতি প্রভৃতি অসামান্য গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বর্তমান বিশ্বের মানুষের সামনে একই সঙ্গে ব্যাপক সম্ভাবনা ও বিপদের দ্বার উন্মোচন করেছে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ স্থিতিশীল নয়। সব সময় পরিবর্তনশীল। এ কারণেই সমাজ কখনো এক অবস্থায় থাকবে না। কালের বিবর্তনের ধারায় মানুষের প্রয়োজনে সমাজের পরিবর্তন অব্যাহত থাকবে।

জর্জ হার্বার্ট মিড কে ছিলেন? জর্জ হার্বার্ট মিডের প্রতীকী মিথস্ক্রিয়া তত্ত্বটি পর্যালোচনা কর।

জর্জ হার্বার্ট মিড কে ছিলেন? জর্জ হার্বার্ট মিডের প্রতীকী মিথস্ক্রিয়া তত্ত্বটি পর্যালোচনা

ভূমিকা:- আধুনিক সমাজতাত্ত্বিকদের মধ্যে সমাজবিজ্ঞানে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন হার্বার্ট মিড তাদের মধ্যে অন্যতম।সমাজবিজ্ঞানে জর্জ হারবার্ট মিডের প্রতীকী মিথস্ক্রিয়াবাদ তত্ত্বটি গুরুত্ব বহন করে। যদিও প্রতীকী মিথস্ক্রিয়াবাদ একটি সামাজিক মনোবিজ্ঞানীর দৃষ্টভঙ্গি। মিথস্ক্রিয়া মূলতসামাজিক এবং সামাজিক সম্পর্কের অধ্যয়নের উপর জোর দেয়। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
জর্জ হার্বার্ট মিড কে ছিলেন? জর্জ হার্বার্ট মিডের প্রতীকী মিথস্ক্রিয়া তত্ত্ব



জর্জ হার্বার্ট মিডের জীবনী:

জর্জ হার্বার্ট মিড শিকাগো স্কুলের একজন বাস্তববাদী দার্শনিক। হারবার্ট মিড ১৮৬৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণ হ্যাডলি নামক স্থানে জম্মগ্রহন করেন। হার্বার্ট মিডের পিতার নাম Herm Mead এবং মাতার নাম Elizabeth Storrs Billing. হার্বার্ট মিড ছিলেন তার মাতা-পিতার দ্বিতীয় সন্তান। ১৮৮০ সালে হারবার্ট মিডের পরিবার দক্ষিণ হ্যাডলি থেকে ওহিও অঙ্গরাজ্যের Oberlin এ চলে আসেন। হার্বার্ট মিডের বাবা ছিলেন Oberlin College এর অধ্যাপক। হার্বার্ট মিড ১৮৭৯ সালে ১৬ বছর বয়সে Oberlin College এ ভর্তি হন এবং ১৮৮৩ সালে তিনি অত্র কলেজ হতে স্নাতক (বি.এ) ডিগ্রি অর্জন করেন। ঐ কলেজে থাকা অবস্থাতেই তার এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু Henry Northerup Castle অতিমাত্রায় সাহিত্য, কবিতা এবং ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। সাহিত্যের ক্ষেত্রে তিনি বড় সাহিত্যিকদের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হন। মিড ১৮৮২-১৮৮৩ সালে Oberlin Radio তে Charls Lab এর উপর একটি প্রবন্ধ লিখেন। ১৮৮৩ সালে Oberlin এ স্নাতক করার পর সেখানেই কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৮৮৩ সালের শেষ হতে ১৮৮৭ পর্যন্ত একটি Railroad কোম্পানির Seerveyor হিসেবে চাকরী করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি হার্বার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শুরু করে এবং হার্বার্ট বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৮৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষে দর্শনে স্নাতকোত্তর (এম.এ) ডিগ্রি অর্জন করেন। এই সময়টাতে তিনি রোমান্টিকতা ও আদর্শবাদ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। এরপর ১৮৮৮ সালে তিনি ইউরোপে যান এবং সেখানে তিনি দর্শন ও মনস্তাত্ত্বিক দর্শনের উপর গবেষণা করেন।হার্বার্ট মিড যখন তার বন্ধুর পরিবারে কেসেলের সাথে জীবনযাপন করেন তখন তার হেলেন কেসেলর সাথে প্রেম হয় এবং ১৮৯১ সালের ১ অক্টোবর বিয়ে করেন। ১৮৯১ সালে মিড গবেষণা কাজে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। কারণ তখন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় তাকে দর্শন ও মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক হওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। সেখানে কিছুদিন দর্শন ও মনোবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। এখানেই তিনি বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী Charles Horton Cooley এর সন্নিধ্যে আসেন এবং তার দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। এরপর ১৮৯২ সালে তিনি প্রাশসনিক কর্মকর্তা পদে নিযুক্ত হন।পরবর্তীতে তিনি ১৮৯৪ সালে পূর্ণ অধ্যপক নিযুক্ত হন এবং বাকি জীবন সেখানেই কাটান। তার এ দীর্ঘ জীবন শেষে ১৯৩১ সালের ২৬ শে এপ্রিল এই মহান দার্শনিক শিকাগো শহরে মৃত্যুবরণ করেন।

হার্বার্ট মিডের রচনাবলি (Writing Of George Herbert Mead):

হারবার্ট মিড মূলত দার্শনিক হলেও বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক দিক দিয়েও গবেষণা করেনএবং গ্রন্থ রচনা করেন। যেসব গ্রন্থের মধ্যে হার্বার্ট মিড তার চিন্তাধারা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন নিম্ন এসগুলোর নাম উল্লেখ করা হলো-

i- The Philosophy Of Present (1932)
ii- Mind self and Society (1934)
iii- Movement of the thought in nineteenth Century (1936)
iv- The Philosophy of the Act (1938)
v- The Objective Reality of Perspective (1927)
vi- The Psychology of Social consciousness implied in Instruction Science (1910)
vii- Essays on his Social Philosophy.
viii- The Indevidual and the Social self by D. Miller (1982)
ix- Selected writing Ed by. A Rock (1964)

পরিশেষে বলা যায় অসংখ্য রচনাবলির মাধ্যমে হার্বার্ট মিড সমাজবিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেন।

হারবার্ট মিডের প্রতীকী মিথস্ক্রিয়াবাদ:

সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে মূলত মানুষ বস্তুগত ও মানবজগতের প্রতি কিভাবে আচরণ করে এবং কিভাবে তাদের আচরণের অর্থ উপলব্ধি করে। হার্বার্ট মিড মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এছাড়া আরো অনেকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

আরো পড়ুন- প্রতীকী মিথস্ক্রিয়াবাদ কী?

জর্জ হার্বার্ট মিড প্রতীকী মিথস্ক্রিয়াবাদের ব্যাখ্যায় চারটি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। যথা- (ক) অহমবোধ (খ) আত্মমিথস্ক্রিয়া (গ) আত্মার বিকাশ (ঘ) প্রতীকী অর্থ।

১। অহমবোধ:

প্রতীকী মিথস্ক্রিয়াবাদের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো অহমবোধ। হার্বার্ট মিড অহমবোধকে সমাজবিজ্ঞানের একটি কার্যকরী অঙ্গ হিসেবে দেখিয়েছেন। ব্যক্তি তার নির্দিষ্ট পরিবেশে আচরণ করে এবং তার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে নেই। তিনি things and object এর মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে দেখিয়েছেন যে, ব্যক্তি কার্যক্রমের মাধ্যমে Things Object এ পরিণত হয়। তিনি এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলেছেন টমেটো যখন খাওয়া হয় এটি পুষ্টি হিসেবে ব্যবহৃত হয় কিন্তু যখন কারো দিকে ছুড়ে মারা হয় তথন ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
মিড অহমকে আবার ২ ভাগে ভাগ করেছেন (ক) আমি (খ) আমাকে।

(ক) আমি: আমি হচ্ছে অন্যর প্রতি মনোভাব প্রকাশে ব্যক্তির বা প্রাণীর অসংগতির প্রতিক্রিয়া এবং আচরণের স্বয়ংক্রিয় ও আবেগজড়িত অবস্থা।
(খ) আমাকে: এটি হচ্ছে ব্যক্তির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি যা সে অন্যর কাছ থেকে শিখেছে।

২। আত্মমিথস্ক্রিয়া:

আত্মমিথস্ক্রিয়াকাজ করে মানব কর্মকান্ডে মিডের ধারনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। এর ভিত্তি হলো আত্মমিথস্ক্রিয়া। হারবার্ট মিডের মতে যোগাযোগ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে প্রতিটি ব্যক্তির ভূমিকা থাকে।

৩। আত্মার বিকাশ:

এই বিকাশের ক্ষেত্রে তিনি তিনটি পর্বের কথা বলেছেন।
(i) অনুকরণ স্তর, (ii) খেলা স্তর, (iii) ক্রীড়া স্তর

(i) Imitation Stage (অনুকরণ স্তর):

এই স্তরের শুরু হয় শিশুর ২ বছর বয়সে। শিশু এই সময় তার পরিচিত সামাজিক পরিমন্ডল মধ্যকার প্রতিটি ব্যক্তির অভিব্যক্তি অনুকরণ করতে শেখে।

(ii) Play stage (খেলা স্তর):

এই স্তরের শুরু হয় ৩ বছর বয়স থেকে । একে মিড বলেছেন সক্রিয়তার স্তর হিসেবে। এ সময় শিশু নিজেকে অন্যর স্থানে নিয়ে আসতে পারে।

(iii) Game stage (ক্রীড়া স্তর):

শিশুকাল বয়সের পর এ পর্যায়ের শুরু হয়। বালক এই সময়ে সাধারণত নিয়মকানুনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে।

৪। প্রতীকী অর্থ:

মিড ভাষাকে প্রতীকে একটি বিস্তৃত ব্যবস্থা মনে করেন।শব্দ ও প্রতীক সেটিও কোনো বস্তুর প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি প্রতীকী মিথস্ক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দু ধরনের কার্যকারিতার উপর নির্ভর করেন-
(ক) তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি (Significant gesture)
(খ) তাৎপর্যহীন অঙ্গভঙ্গি (Non- Significant gesture)

হারবার্ট মিড মনে করেন তাৎপর্যহীন অঙ্গভঙ্গি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাড়া দেয় কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাড়া দেয় না।
হারবার্ট মিড প্রতীকী মিথস্ক্রিয়ার ৩টি মৌলিক নীতির কথা বলেছেন-
(i) অর্থ বা উদ্দেশ্য, (ii) ভাষা, (iii) চিন্তা

(i) অর্থ বা উদ্দেশ্য (Meaning):

অর্থ বা উদ্দেশ্যকে সামাজিক বাস্তবতার গঠন বলা হয়। মানুষ অন্যের বা অন্য বস্তুর প্রতি ভূমিকা পালন করে সেই অর্থে যা তারা ঐ মানুষ বা বস্তুগুলোর উপর আরোপ করে।

(ii) ভাষা (Language):

ভাষা হলো অর্থ বা উদ্দেশ্যর অর্থ। অর্থ বা উদ্দশ্যের সামাজিক মিথস্ক্রিয়া থেকে আসে যা মানুষ একে অন্যের মধ্যে প্রত্যক্ষ করে।

(iii) চিন্তা (Thought):

চিন্তা বলতে বোঝায় অন্যর ভূমিকা গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে ব্যক্তি কোন কাজের পূর্বে চিন্তা করে অথবা চিন্তার প্রতি সাড়া দেই।

সমালোচনা:

এ তত্ত্বের গুরুত্ব থাকলে তত্ত্বটি বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে।
* এই তত্ত্বটি তাত্ত্বিক গঠন অনেকটা অস্পষ্ট এবং এটা ক্ষমতা ও দ্বন্দ্বের পরিবর্তনে কিছুই বলে না।
*ক্রিয়া করার ক্ষেত্রে মানুষ এয প্রতীকীর অর্থ বের করে তার উৎস কী সে ব্যাখ্যা এ তত্ত্বে পাওয়া যায় না।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে হার্বার্ট মিডের প্রতীকী মিথস্ক্রিয়াবাদ তত্ত্বটি সমাজ মনোবিজ্ঞানে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। যদিও তার তত্ত্বের গুরুত্ব অপরিসীম্ আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের মর্যাদা উচ্চ আসনে সমাসীন হয়ে আছে।

AGIL প্রত্যয়টি ব্যাখ্যা কর

ট্যালকট পারসন্সের AGIL প্রত্যয়টি ব্যাখ্যা

ভূমিকা:- ট্যালকট পারসন্স ছিলেন বিংশ শতকের একজন অন্যতম আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী। তিনি কাঠামোগত কার্যকারিতার আলোকে তার Social Action, Social System, Social Change  সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বের ব্যাখ্যা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক ক্রিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আবার Action এর সাথে তিনি সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক পরিবর্তন ও ব্যবস্থার মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন।

ট্যালকট পারসন্সের AGIL প্রত্যয়টি ব্যাখ্যা কর
ট্যালকট পারসন্স এর দৃষ্টিভঙ্গিতে সামাজিক ক্রিয়া, সামাজিক পরিবর্তন এবং সমাজব্যবস্থা একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এই কাঠামোর মধ্য দিয়ে তিনি ‘AGIL’ নামক একটি বিশ্লেষণ কাঠামো তৈরি করেন যা সমাজের যেকোনো ব্যবস্থার টিকে থাকার জন্য চারটি মৌলিক কার্যকারিতার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে।

AGIL পরিকল্পনার ব্যাখ্যা:

নিম্নে সংক্ষেপে AGIL প্রত্যয়টি এর ব্যাখ্যা দেওয়া হলো-

১। অভিযোজন:

অভিযোজন পদ্ধতি এবং পারস্পরিক অবস্থার মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয়। এটা দুই ধরনের। যথা- (ক) বশ্যতা বা আত্মসমর্পণ (খ) সুবিধাকরণ।

পরিবেশের চাপের মাধ্যমে বশ্যতা স্বীকার করা হয়। আর সুবিধাকরণ হলো অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।

২। লক্ষ্য অর্জন:

পারসন্সের মতে প্রত্যক কাজের পিছনেই একটি Goal বা লক্ষ্য রয়েছে। লক্ষ্য দুই প্রকার যথা (ক) অভিপ্রায় লক্ষ্য (খ) অনভিপ্রায় লক্ষ্য

অভিপ্রায় লক্ষ্য (Intended goal):

এটা মানুষের জন্য জরুরি ও প্রাথমিক  প্রয়োজন নির্দেশ করে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য অর্থনৈতিক স্বচ্চলতা আনয়ন করা।

অনভিপ্রায় লক্ষ্য (Unintended goal):

মানুষের সব লক্ষ্যই অভিপ্রায় লক্ষ্য নয় কিছু কিছু লক্ষ্য অনভিপ্রায় হয়।

৩। একাঙ্গীকরণ/মিশ্রণ:

সমাজ ব্যববস্থায় যেসব কার্যকারীতা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একাঙ্গীকরণ (Intergration)। সামাজিক ব্যবস্থায় অনেক সদস্য বাস করে সুতরাং এ বসবাসকারী সদস্যদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক থাকতে হয়। একাঙ্গীকরণ এর কাজ হলো সমাজ ব্যবস্থার বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় করা।

৪। আদর্শরীতির রক্ষণাবেক্ষণ:

সমাজের দুটি সংঘর্ষমূলক পরিস্থিতির মাঝখানে যে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজমান করে তাই হলো  আদর্শরীতির রক্ষণাবেক্ষণ। প্রত্যেক সমাজের গুরুত্ব পূর্ণ প্যাটার্ন হলো বিলম্ব।

সামাজিক ব্যবস্থা ও উপব্যবস্থা:

সমাজের কাঠামো কিভাবে তৈরি হয় এবং অন্যান্য পদ্ধতির সাথে কীভাবে সমন্বয় করা যায় সেটাই এর আলোচ্য বিষয়। এক্ষেত্রে পারসন্স চারটি পদ্ধতির কথা বলেছেন।

(ক) সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা:

সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় বিষয় হলো ভাষাগত এবং সব সাংকেতিক ব্যবস্থা। পারসন্সের মতে আমাদের সব সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা সমাজের মূল্যবোধ ব্যক্তি আত্মস্থ করে।

(খ) সমাজব্যবস্থা:

সমাজ ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় একক হলো ভূমিকা প্রত্যাশা। আমরা সবার কাছে কিছু না কিছু আশা করি।

(গ) ব্যক্তিত্ব ব্যবস্থা:

ব্যক্তিত্ব ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় একক হলো স্বতন্ত্র কর্ম। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।

(ঘ) আচরণিক জৈব তত্ত্ব ব্যবস্থা:

আচরণিক তত্ত্বের কেন্দ্রীয় প্রত্যয় হলো জৈবিক অনুভূতি। পারসন্স বলেন সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় সব কিছু একে অপরের সাথে যুক্ত।

পরিশেষে বলা যায় যে, AGIL মডেল সমাজবিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ কাঠামো। সমাজ কীভাবে টিকে থাকে, কাজ করে এবং পরিবর্তনের সাথে খাপ খায়, তা বুঝতে এই তত্ত্ব সহায়ক।ট্যালকট পারসন্সের সামাজিক পদ্ধতি  AGIL তত্ত্বের কিছু সমলোচনা থাকলেও সমাজবিজ্ঞানে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পারসন্স যতগুলি তত্ত্ব প্রদান করেছেন তার মধ্যে সমাজব্যবস্থা তত্ত্বই অন্যতম। AGIL প্রত্যয় সমাজের কাঠামোগত ও কার্যকরী বিশ্লেষণে একটি শক্তিশালী তাত্ত্বিক মডেল হিসেবে বিবেচিত।

ট্যালকট পারসন্স এর পরিচয় দাও। কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ কি?

ট্যালকট পারসন্স এর পরিচয় ও কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্ব

ভূমিকা:- বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিশ্ববিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পারসন্স। এছাড়া তিনি আমেরিকান সমাজবিশ্লেষণ ক্রিয়াবাদী তাত্ত্বিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।

ট্যালকট পারসন্স এর পরিচয় দাও। কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ কি?

ট্যালকট পারসন্স এর জীবনী:

ট্যালকট পারসন্স ১৯০২ সালে আমেরিকার কলারাডো রাজ্যের এক ধর্মীয় ও বুদ্ধিভিত্তিক পরিবারে জম্মগ্রহণ করেন। তিনি কংগ্রেসের একজন মন্ত্রীর পুত্র ছিলেন। যিনি পরবর্তীতে Oheo তে Marictta College এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ট্যালকট পারসন্স ১৯২৪ সালে আসহার্স্ট  কলেজ হতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯২৫ সাল পর্যন্ত  লন্ডন স্কুল অভ ইকোনোমিক্সে হব হাউস, জিন্সবার্গ এবং ম্যালিনোস্কির নিকট শিক্ষা লাভ করে। পরবর্তীতে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর কাটান ও আমহার্ট কলেজে এক বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯২৭ সালে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২৭ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত তিনি হার্বার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। সে সময়ে অধ্যাপক সরোকিন পারসন্সকে আমন্ত্রণ করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করার জন্য। অধ্যাপক ট্যালকট পারসন্স তার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ১৯৩১ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৪৪ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৪৬ সালে তিনি সামাজিক সম্পর্ক আমে নতুন বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।তারপর পারসন্স ১৯৪৯ সালে আমেরিকান সমাজবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি মনোনীত হন। যদিও ট্যালকট পারসন্স অধ্যাপক সরোকিনের আমন্ত্রণে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন কিন্তু ট্যালকট পারসন্স এর দ্রুত খ্যাতি লাভের ফলে পরবর্তীতে সরোকিন ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেন। ক্রমে দুজনের মধ্যে একটি তিক্ত সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং সরোকিন প্রকাশ্য এমনকি জার্নালে লিখিতভাবে পারসন্স এর সমালোচনা শুরু করেন। সরোকিনের তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও ট্যালকট পারসন্স এর খ্যাতি আরও বেড়ে যায়। তিনি বহু সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন।পরিশেষে বলা যায় পারসন্স মূলত আমেরিকার সমাজবিজ্ঞানী এবং তিনি আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে থেকে সর্বাধিক খ্যাতি লাভ করেন।

কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ তত্ত্ব

কাঠামোগত ক্রিয়াবাদী তাত্ত্বিকদের মধ্যে রবার্ট কে মার্টন, ম্যালিনোস্কি, রেডক্লিফ ব্রাউন, এমিল ডুর্খেইম ও ট্যালকট পারসন্স অন্যতম তবে রবার্ট কে মার্টন এসব পুর্বসূরি তাত্ত্বিকদের ক্রিয়াবাদী বিশ্লেষণের ধরন এবং ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন। তিনি যে বিষয়টিকে নিয়ে জোর দেন তা হলো সমাজ পরিবর্তন ও ক্রিয়ার মাধ্যম। তার এ অবদান পারসন্স দ্বারা প্রভাবিত।

কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ:

ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গি হলো সমাজ ব্যবস্থার সামগ্রিক বা আংশিক ধরন, প্রকৃতি প্রত্যয়, অভিজ্ঞতা এবং বাস্তব তথ্য সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত প্রয়োজন সমূহের উপর উক্ত ধরন সমূহের বিভিন্ন রকম ফলশ্রুতি এবং এগুলি কিভাবে একে অপরের সাথে ক্রিয়া করার মাধ্যমে পারস্পরিক উপযোগিতা পূরণে সক্ষম হয় তারই প্রক্রিয়া। সহজ কথায় সমাজের কোন Unit অপর কোন Unit এর উপর যেভাবে ক্রিয়া সম্পাদন করে পরস্পরকে পরস্পরের সাথে অভিযোজনে সাহায্য করে সেই প্রক্রিয়া হলো ক্রিয়াবাদ। সমাজ কাঠামোর নিজস্ব অস্তিত্ব আছে  সমাজ কাঠামো একটি প্রতিষ্ঠান অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত যা জৈব সম্পর্কের মতই বলে রেডক্লিফ ব্রাউন মনে করেন। অরণ্যে যেমন নানা প্রজাতি পরস্পর পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত তেমনি সমাজ কাঠামোর জন্য তিনটি শর্ত উল্লেখ করেছেন, যা পরস্পর সম্পর্কিত। যেমন- (i) Social Unit গুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত (ii) Social Unit গুলো পরস্পর নির্ভরশীল এবং (iii) প্রতিটা Unit সমগ্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য অবদান রাখে। প্রতিটি Unit এর Contribution এর মাধ্যমে সমগ্রকে টিকিয়ে রাখতে তাদের কাজ ভিন্ন ভিন্ন। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ মানবদেহ। একেক অঙ্গ এক এক কাজ করছে। এরা পরস্পর নির্ভরশীল এবং এরা সমগ্র শরীরকে টিকিয়ে রাখে।

পরিশেষে বলা যায় যে, কাঠামোগত ক্রিয়াবাদীরা একটি সামাজিক কাঠামো  অথবা প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্যটির কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেছেন। একটি সামাজিক ঘটনা অন্য একটি সামাজিক ঘটনার উপর নেতিবাচক প্রভাবও থাকতে পারে।

জর্জ হোমান্স এর সামাজিক আচরণ সম্পর্কিত প্রধান নীতিমালা ব্যাখ্যা কর

জর্জ হোমান্স এর সামাজিক আচরণ সম্পর্কিত প্রধান নীতিমালা বা বিনিময় তত্ত্ব আলাচনা কর

ভূমিকা:- জর্জ ক্যাসপাস হোমান্স একজন আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ। এই চিন্তাবিদ ক্ষুদ্র গোষ্ঠির সামাজিক প্রক্রিয়া সম্বন্ধে অগ্রসরমান পরীক্ষালব্ধ পূর্বানুমান এবং ব্যাখার ক্ষেত্রে একজন পথিকৃৎ তাত্ত্বিক হিসেবে সমাদৃত। এই তাত্ত্বিক সমজাবিজ্ঞানী ট্যালকট পারসন্স এর সাথে দীর্ঘদিন ঘনিষ্টভাবে কাজ করতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হন। বিনিময় তত্ত্ব ও স্তরায়ন তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানী হোমান্সের দুইটি উল্লেখযোগ্য তাত্ত্বিক অবদান।

জর্জ হোমান্স এর সামাজিক আচরণ সম্পর্কিত প্রধান নীতিমালা ব্যাখ্যা কর

জর্জ হোমান্স এর সামাজিক বিনিময় তত্ত্ব:

জর্জ ক্যাসপাস বোমান্স-এর একটি যুগান্তকারী তত্ত্ব হলো সামাজিক বিনিময় তত্ত্ব। নিম্নে তাঁর এই তত্ত্বটি আলোচনা করা হলো-

সামাজিক বিনিময় তত্ত্বের প্রাথমিক ধারণা:

সামাজিক বিনিময় তত্ত্ব বলতে সাধারণ অর্থে সেই তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বুঝানো হয়েছে যেখানে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা দলের মধ্যকার সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করা হয়। সামাজিক বিনিময় তত্বের মূল বিষয়বস্তু হলো মানুষের সামাজিক সম্পর্ক, যা গঠিত হয় Subjective cast benefit analysis এবং Comparison of alternative বিষয় দুটি ব্যবহার ও বিবেচনার মাধ্যমে। ১৯৫৮ সালে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী জর্জ হোমান্সের দ্বারা সামাজিক বিনিময় তত্ত্বটি বিকাশিত হয়।

তিনি সামাজিক বিনিময় তত্ত্বকে বাস্তব বা অবাস্তব। ব্যয়বহুল অথষ্য পুরস্কৃত কমপক্ষে দুইজন ব্যক্তির মধ্যকার কার্যকলাপের বিনিময় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সামাজিক বিনিময় তত্ত্ব বিকাশের মূল লক্ষ্য ছিল মানুষকে সামাজিক সম্পর্কগুলো ভালোভাবে বুঝানো। আমরা কোনো সম্পর্ক তৈরি করি এবং সম্পর্কগুলোর মধ্যে কোন বিশেষ সম্পর্কে Continue করি তা ব্যাখ্যা করে এই তত্ত্বটি। তাছাড়া যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়া এবং মানুষের মিথস্ক্রিয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো কাজ করে সেগুলো সম্পর্কেও আলোকপাত করে এই সামাজিক বিনিময় তত্ত্ব।

জর্জ হোমান্সের সামাজিক আচরণ সম্পর্কিত প্রধান নীতিমালা:

সমাজবিজ্ঞানী George Homan's  সামাজিক বিনিময় তত্ত্বকে সংক্ষেপে তিনটি প্রস্তাবনার মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। প্রস্তাবনা তিনটি হলো-

(ক) সাফল্য প্রস্তাবনা (Success Proposition):

যখন কোন ব্যক্তি কোনো কাজের জন্য পুরস্কৃত হয় তখন সে কাজটি পুনরায় এবং বার বার করতে থাকে। এটাকে হোমান্স সাফল্য প্রস্তাবনা নামে অবিহিত করেছেন।

(খ) কর্মপ্রেরণা প্রস্তাবনা (Stimulus Proposition):

অতীতে কোন ব্যক্তি যে উদ্দীপনায় যত তাড়াতাড়ি উদ্দীপৃত হয়, ব্যক্তি তত তাড়াতাড়ি সেই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। অর্থাৎ সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কর্মপ্রেরণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(গ) বঞ্চনা (Deprivation):

সামাজিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে হোমান্স বর্ণিত তৃতীয় প্রস্তাবটি হলো  বঞ্চনা। অতীতে কোন কাজ করার পর যত পুরষ্কার কম পাওয়া যায়, সেই কাজটি ব্যক্তির কাছে তত মূল্যহীন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ পুরস্কারের আশা না থাকলে কোন কাজ পুনরাবৃত্তি হার অনেকটা কমে যায়।

১। হোমান্সের মতে, মানুষ তার ব্যক্তিগত লাভ সর্বোচ্চ করার লক্ষ্যে যৌক্তিক গণনার ওপর ভিত্তি করে আচরণ করে।

২। অধিকাংশ মানুষই গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বস্ততা, আর্থিক সহযোগিতা, স্নেহ ও সহচর্য্য কে মূল্য দেয় এবং তার জন্য কোন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক যা আমাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাকে আমরা ফলপ্রসূ বিবেচনা করি। তা্‌ই এ ধরনের সম্পর্ক তৈরীতে মানুষ আগ্রহী হয়ে থাকে।

৩। অন্যদিকে সামাজিক সম্পর্কে মূল্য আবির্ভূত হয় যেখানে সেখানে মানুষের জন্য নেতিবাচক Value কাজ করে।

৪। এই সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে Cost এবং Reward এর  net outcome এক থাকে।

অর্থাৎ হোমান্স যে সমাজিক সম্পর্কে বা সমাজিক বিনিময়ের কথা বলেছেন তা মূলত Cost এবং Benefit নির্ভর। একজন আরেকজনের সাথে তখনই সামাজিক সম্পর্ক করবে যখন তাদের  Cost benefit analysis তাদের অনুকুলে থাকবে এবং ব্যক্তি মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হোমান্স তার সামাজিক বিনিময় তত্ত্বে benefit বুঝাতে reward শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং তিন প্রস্তাবনার মাধ্যমে সামাজিক বিনিময়ের পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।

সামাজিক বিনিময় তত্ত্বের প্রয়োগ:

বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা সামাজিক বিনিময় তত্ত্বের প্রয়োগ দেখতে পাই। বিশেষ করে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও গণমাধ্যমগুলোতে এই তত্ত্বের প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়। নিম্নে সামাজিক বিনিময় তত্ত্বের প্রয়োগ আলোচনা করা হলো- 

যোগাযোগ ক্ষেত্রে সামাজিক বিনিময় তত্ত্বের প্রয়োগ:

সামাজিক বিনিময় তত্ত্ব মানুষের আন্তঃসম্পর্ক বিকাশে সহায়তা করে। এই তত্ত্বের প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ তার অগভীর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে রূপান্তরিত করতে পারে। তাছাড়া একজন আরেকজনের চাহিদা এবং চিন্তা সম্পর্কে ভাবে বা তাদের কার্যকরী সম্পর্ক তৈরিতে সাহায্য করে। এই তত্ত্ব থেকে অর্জিত জান মানুষের মধ্যকার যোগাযোগ ও সম্পর্ক দৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে সামাজিক বিনিময় তত্ত্বের প্রয়োগ:

আধুনিক বিশ্বে তথ্যের অবাধ প্রবাহের সুন্দর দৃষ্টান্ত বুঝা যায় স হোমান্সের সামাজিক বিনিময় তত্ত্বের মাধ্যমে। এই তত্ত্বটি ৪ গণমাধ্যমেও বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই তত্ত্বটি মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেভাবে Cost benefit analysis-এর ব্যাখ্যা দিয়েছে মিডিয়া তা পর্যালোচনা করে তার ব্যবসার কাজে। স মানুষের সামাজিক সম্পর্কের বিষয়গুলো মাথায় রেখেই -গণমাধ্যমগুলো মূলত তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।


পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক আলোচনায় জর্জ হোমান্সের সামাজিক বিনিময় তত্ত্বটি একটি বিশেষ সংযোজন। তবে এটি কেবলমাত্র তাত্ত্বিক সমাজবিজ্ঞানেই নয়, প্রায়োগিক সমাজবিজ্ঞানেও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি হোমান্স এর সামাজিক বিনিময় তত্ত্বটি সমাজবিজ্ঞানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এই তত্ত্ব মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, সামাজিক আচরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণে বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকর কাঠামো প্রদান করে। আধুনিক সমাজে ব্যক্তি কেন কাকে, কখন, কীভাবে মূল্য দেয়—তা বিশ্লেষণ করতে হোমান্সের তত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতএব, এই তত্ত্ব আজও প্রাসঙ্গিক।

ট্যালকট পারসন্স এর সামাজিক ক্রিয়াতত্ত্ব আলোচনা কর

ট্যালকট পারসন্স এর সামাজিক ক্রিয়াতত্ত্ব আলোচনা কর

ভূমিকা:- আদর্শ, উদ্দেশ্য, প্রকৃত ও চিন্তন প্রক্রিয়ার স্বকীয়তার কারণে ট্যালকট পারসন্স এর চিন্তা ভাবনা কিছুটা অতীত ও বিচ্ছিন্ন। তবুও তিনি সমাজবিজ্ঞান অর্থনীতি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সমাজবিজ্ঞানের উন্নতি ও অগ্রগতিতে কার অবদান সর্বাধিক। তিনি মূলত ক্রিয়াবাদী তাত্ত্বিক। তাঁর চিন্তাধারা জটিল ও বিমূর্ততায় আচ্ছন্ন।

ট্যালকট পারসন্স এর সামাজিক ক্রিয়াতত্ত্ব আলোচনা কর।

ট্যালকট পারসন্স এর সামাজিক ক্রিয়াতত্ত্ব:

সমাজবিজ্ঞানের ইতিহাসে ট্যালকট পারসন্স এর অবদান অতুলনীয়। তিনি তার *Classical Theory* (শাস্ত্রীয় তত্ত্ব) ব্যবহার করে আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্বসমূহ দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। ক্রিয়াবাদী সমাজবিজ্ঞানীদের জগতে ট্যালকট পারসন্স এর অবদান বিশেষভাবে স্বীকৃত। পারসন্স ছিলেন একজন Micro Sociologist। তিনি মনে করতেন যে সামাজিক সম্পর্কে সামাজিক কর্মের দ্বারা বিশ্লেষিত হতে পারে। অর্থাৎ পারসন্স অবস্থান বিশ্লেষণে Action বা কর্মের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ১৯৩৭ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ The Structure of Social Action প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে তিনি Social Action সম্পর্কিত তত্ত্বটি প্রদান করেন।

ট্যালকট পারসন্স তিনটি প্রধান Intellectual tradition এর মাধ্যমে বিশিষ্ট চিন্তাবিদদের ব্যক্তিত্ব ও দূর্বলতাকে চিহ্নিত করেছেন। Intellectual tradition হলো- Utilitarianism, Positivism, Idealism.

এই তিনটি Tradition কিভাবে মূল পরিকল্পনা ও প্রত্যয় সম্পর্কে Synthesis তিনি তা নির্দেশ করেছেন। ট্যালকট পারসন্স তার The Structure of Social Action এ সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব নির্মাণে  Analytical Prelims কে উপস্থাপন করেছেন। এখানে তিনি European Classical Sociological Theory of Analysis করে তত্ত্ব তৈরি করেছেন। তিনি ম্যাক্স ওয়েবারের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে Ideal Type Strategy প্রয়োগ করেন। ক্রিয়াবাদী তত্ত্বের ভিত্তিতে তিনি জ্ঞাতি সম্পর্ক, সামাজিক স্তরবিন্যাস, রাজনৈতিক আন্দোলন ও গণযোগাযোগ বিষয়ো বিশ্লেষণ করেন। তিনি সমাজকে ক্রিয়া প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্লেষণের পক্ষে মত প্রকাশ করেন।তার মতে প্রত্যেক ব্যক্তির বিভিন্ন কর্মকান্ডের দ্বারা সমাজ পরিচালিত হয়। তাই সমাজ সম্পর্কিত যে কোন বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে হলে অবশ্যই ক্রিয়াকে মুখ্য বিষয় হিসেবে ধরে নিতে হবে। তিনি মনে করেন সামাজিক সম্পর্ক Social Action দ্বারাই বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।তিনি তার গ্রন্থে Action frame of reference এর কথা উল্লেখ করেন। অর্থাৎ মাক্স যেখানে সমাজ বিশ্লেষণের কাঠামো হিসেবে শ্রেণীর কথা উল্লেখ করেছেন পারসন্স সেখানে ক্রিয়াতত্ত্বের কথা বলেছেন। পারসন্স পূর্ববর্তী চারজন তাত্ত্বিকের অবদান পর্যালোচনা করে নতুন একটি গ্রন্থ রচনা করেন যার নাম হলো স্বেচ্ছামূলক ক্রিয়াতত্ত্ব The theory of Voluntaristic Action। এখানে তিনি তিনটি মৌলিক চিন্তাধারার কথা উল্লেখ করেন। (ক) Utiliterianism (উপযোগিতাবাদ), (খ)  Positivism (পজিটিভিজম/ইতিবাচকতাবাদ), (গ) Idealism (আদর্শবাদ)

উপযোগিতাবাদ:

এখানে বলা হয় ব্যক্তি সম্পূর্ণ যুক্তিনিষ্ঠ এবং অর্থনৈতিক স্বার্থমূলক উদ্দেশ্য দ্বারা প্রভাবিত।কিন্তু পারসন্স বলেন আচরণ সম্পূর্ণ যুক্তিনিষ্ঠ বা অর্থনৈতিক স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত নয়।

ইতিবাচকতাবাদ:

পারসন্স তার গ্রন্থের প্রথম অংশে Positivism Theory of Action সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তার মূল কাজ হলো Positivism এর তাত্ত্বিক বিরোধিতা করা।

আদর্শবাদ:

Idealism এর মূল উপাদান হলো মানুষের সমস্ত কর্মই যুক্তিহীন। কিন্তু পারসন্স বলেন মানুষের আচরণ যেমন বাস্তব নির্ভর তেমনি মানসিক ধারনাভিত্তিকও।

ট্যালকট পারসন্স-এর সামাজিক ক্রিয়াতত্ত্বের উপাদান:

ট্যালকট পারসঙ্গ তাঁর সামাজিক ক্রিয়াতত্ত্বের মাধ্যমে সমাজের এমন একস্তরে পৌঁছাতে চেয়েছেন যেখানে Idealism এবং Positivism-কে এক ফর্মে মেলানো যায়। পারসন্স তাঁর 'The Structure of Social' গ্রন্থে সামাজিক ক্রিয়ার বেশ কিছু উপাদানের কথা বলেছেন। যথা- 

১। কর্তাবৃন্দ যারা বর্তমান প্রেক্ষিতে একক ব্যক্তি।

২। কর্তাবৃন্দের লক্ষ্য অভিসারী চরিত্র।

৩। লক্ষ্য অর্জনের বিকল্প উপায়।

৪। কর্তাবৃন্দ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিরোধিতার মুখোমুখি হয়ে থাকবে।

৫। কর্তাবৃন্দ বিভিন্ন মূল্যবোধ, নিয়মনীতি ও আদর্শ হয় যা তাদের লক্ষ্য ও উপায়কে প্রভাবিত করে।

৬। ক্রিয়া সম্পাদন কর্তার লক্ষ্য ও উপায় নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভাবগত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে নির্দেশ করে।

উল্লিখিত উপাদানসমূহ আলোচনা করে এটাই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় - যে, মানুষের আচরণ সর্বদা Volunteristic.

সামাজিক সম্পর্কের বিষয়কেন্দ্রিক পরিস্থিতি:

ট্যালকট পারসন্স মনে করেন, মানুষ কোন ধরনের আচরণ করবে তা নির্ভর করে বিষয়কেন্দ্রিক পরিস্থিতির উপর। আর এটাকে প্যার্টান ভেরিয়েবল বলে। ব্যক্তিগত অভিযোজনের উপর নির্ভর করে কর্মের দুটি দিক নির্ধারণ করা যায়। যথা:-

Motivational orientation: প্রেষণানির্ভর পরিস্থিতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (i) Cogenitive (ii) Contetniuc (iii) Evaluative.

Valu orientation: মূল্যবোধ পরিস্থিতির সাধারণত Cultural pattern-এর প্রতিফলন ঘটে। এই ক্ষেত্রে Pattern variable-এর ব্যবস্থা করা হয়। এটি তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা- (i) Cognitive standard (ii) Appreciative standard (iii) Moral standard.

সমালোচনা:

পারসন্সের সামাজিক ক্রিয়া তত্ত্বের কিছু সমালোচনা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো-

১। পারসন্স যে দ্বৈতিক অবস্থার কথা তার Pattern variable-এ বলেছেন তা নতুন নয়।

২। পারসন্স যে স্বেচ্ছামূলক ক্রিয়াতত্ত্বের কথা বলেছেন সেটা নতুন কিছু নয়। কারণ Marks অনেক আগেই এ সম্পর্কে বলেছেন।

৩। তিনি একই কথা Norms এবং Values বরাবর তার সামাজিক তত্ত্বে উল্লেখ করেছেন, যা সমালোচকদের নজর কাড়ে।

৪। পারসন্স যে তত্ত্ব প্রদান করেছেন তা মূলত Comprehensive। এর জন্য তিনি অনেকবার সমালোচিত হয়েছেন।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, যদিও সমালোচকরা বিভিন্ন যুক্তিতর্কের মাধ্যমে পারসন্সের তত্ত্বসমূহের অসারতা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন এবং তত্ত্বসমূহের বাস্তব বাচ্চা বলেন। তবুও অন্যান্য তত্ত্বের

সর্বশেষ বলা যায় যদিও পারসন্স এর Action Theory এর কিছু সমালোচনা রয়েছে তারপরও সামাজিক সম্পর্কের আলোচনায় এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

CERD কী? CERD এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

CERD কী?

ভূমিকাঃ- CERD স্বাক্ষরকারী দেশসমূহ কোনভাবেই তার নাগরিক তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য, অর্থনৈতিক,সামাজিক, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে তাদের সাথে কোনরুপ অসম রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করবে না, কোনো জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় আইন বৈষম্যের ভিত্তিতে প্রণয়ন করবে না।

CERD কী? CERD এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

CERD চুক্তিঃ

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ১৯৬৫ সালে ২১ শে ডিসেম্বর পৃথিবীর সর্বপ্রথম বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণে একটি সাধারণ সনদ উপস্থাপন করা হয় । যাতে পৃথিবীর অধিকাংশ কার্যাবলির ১৯ নং প্রতিবেদন হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়। এই অধিবেশনকে বলা হয়  **convention on the elimination off all forms of racial discrimination** বা CERD. সব ধরনের জাতিগত বৈষম্য দূর করার কনভেনশনের এই অধিবেশনে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তাকে CERD চুক্তি বলা হয়।

Cerd লক্ষ্য-উদ্দেশ্য

CERD এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ CERD চুক্তি মূলত তৎকালীন সময়ে বিশ্ববাস্তবতার সাথে কতকগুলো বিষয়কে সামনে রেখে কিছু সাধারণ সমস্যা দূরীকরণের উদ্দেশ্য নিয়েই স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

১। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের  মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণঃ

বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এবং জীব ও প্রাণী জম্মগতভাবে স্বাধীন বা মুক্ত। কিন্তু বৈষম্যের চর্চা এই স্বাধীনতাকে বন্ধ করে দেয়। ফলে ব্যক্তির মুক্ত স্বাধীন বিকাশ ঘটাতে পারে না। ব্যক্তির মুক্ত স্বাধীন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিকাশকে সুনিশ্চিত করতে CERD গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২। প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিতকরণঃ

বিশ্বব্যাপী বৈষম্যের পেক্ষাপটে ব্যক্তির নাগরিক অধিকার এবং সঠিক মানবধিকার নিশ্চিত করা ও তার বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বর্ণগত, জাতিগত, মর্যাদাগত সাধারনের বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমেই দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা কাঠামোকে বৈষম্যমুক্ত করে নাগরিক অধিকার সঠিক এবং সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ঘটাতে পারে। বৈষম্যের পরিমন্ডলে নাগরিক অধিকার এর বাস্তবায়ন তো দূরের কথা এর সঠিক বোধটিও সবার মধ্যে জাগ্রত হতে  পারে না। কিন্তু CERD এটি নিশ্চিত করতে কাজ করেছে।

৩। ঔপনিবেশিকবাদ ও বৈষম্য দূরীকরণঃ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে সদ্য ঔপনিবেশিক শাসন হতে স্বাধীন হওয়া দেশগুলো তাদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একদিকে বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল অন্যদিকে বৈষম্যের নিজ দেশের বাস্তবতায় নিজস্ব নাগরিকদের ক্ষেত্রে আগে থেকে চলে আসা শোষণ , বৈষম্যে এবং চর্চা বন্ধ করতে পারছিল না। ফলে দেশে অভ্যন্তরেও তীব্রভাবে মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছিল। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ও জাতীয়  পর্যায়ে বৈষম্য দূরীকরণই ছিলো CERD এর অন্যতম  লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

৪। আইনের বাস্তব ঘটানোঃ

বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য আইন সমান। আইনের চোখে কোন ভেদাভেদ নেই । কিন্তু বৈষম্যের পেক্ষাপটে আইনের সঠিক ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছিল না।যার ফলে এ আইনের সঠিক প্রয়োগ ঘটানোই ছিল CERD এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।


CERD এর মূলনীতিসমূহ

নিম্নে CERD এর মূলনীতিসমূহ আলোচনা করা হলো।

১। নাগরিক ও মানব অধিকার দেশে বসবাসকারী প্রতিটি ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ ও শারীরিক বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে  সকলের জন্য নির্ধারিত থাকবে। এক্ষেত্রে যদি কেউ দেশের অভ্যন্তরের নাগরিক নয় এমন কেউ বসবাস করে তার ক্ষেত্রেও CERD এর মূলনীতি একইভাবে প্রযোজ্য হবে।

২। বৈষম্য বলতে বোঝানো হবে ধর্ম, বর্ণ, শারিরীক বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে ব্যক্তির সাথে বৈষম্যমূলক বা অসমতাসূচক আচরণ যা তাকে তার নায্য অধিকার হতে বঞ্চিত করে এবং তার নায্যতাকে সম্পূন্নরুপে অস্বীকার করে।

৩। রাষ্ট্রীয় অভ্যন্তরে বৈষম্যমূলক যেকোন কর্মকান্ড সেটা সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক যাই হোক না কেন, তা শুধু সম্পূর্ণরুপে নিসিদ্ধ ঘোষণা করবে।

৪। CERD এ স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ বৈষম্যমূলক বাস্তবতা পরিহারে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি মনে করবে তা অতি সত্বর এবং প্রাধান্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়নে বাধ্য থাকিবে।

৫। রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু এবং অসমতায় বঞ্চিত শ্রেণির জন্য এবং শোষণ ও অধিকার বোধের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করবে। যার কাজ হবে যে কোন স্থানে যে কোন সময়ে সংখ্যালঘু ক্ষমতাহীন অংশের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার ও নির্যাতন ঘটলে তার তাৎক্ষণিক ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক দোষীকে চিহ্নিত করে তার শাস্তি বিধান এবং নির্যাতিত সংখ্যালঘু  অংশের সঠিক পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।

৬। CERD এ স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ  জাতিগত, ধর্মগত ও অন্যান্য কারণে বৈষম্যের স্বীকার জনগোষ্ঠীর কিছু  কিছু অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সরাসরি ভূমিকা রাখবে।

৭। CERD এ স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ  তার সীমানার অভ্যন্তরে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা সংগঠন এর নিজেকে উচ্চতর হিসেবে প্রকাশকারী কোনো ধরনের প্রচারণা, অনুষ্ঠান ইত্যাদি থেকে নিজেকে বিরত রাখবে অবং অন্যকে বিরত রাখতে সচেষ্ঠ হইবে।

পরিশেষে বলা যায় যে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাই CERD এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে কাজ করছে।