CERD কী? CERD এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

CERD কী? CERD এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

 CERD কী?

ভূমিকাঃ- CERD স্বাক্ষরকারী দেশসমূহ কোনভাবেই তার নাগরিক তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য, অর্থনৈতিক,সামাজিক, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে তাদের সাথে কোনরুপ অসম রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করবে না, কোনো জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় আইন বৈষম্যের ভিত্তিতে প্রণয়ন করবে না।

CERD কী? CERD এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

CERD চুক্তিঃ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ১৯৬৫ সালে ২১ শে ডিসেম্বর পৃথিবীর সর্বপ্রথম বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণে একটি সাধারণ সনদ উপস্থাপন করা হয় । যাতে পৃথিবীর অধিকাংশ কার্যাবলির ১৯ নং প্রতিবেদন হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়। এই অধিবেশনকে বলা হয়  **convention on the elimination off all forms of racial discrimination** বা CERD. সব ধরনের জাতিগত বৈষম্য দূর করার কনভেনশনের এই অধিবেশনে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তাকে CERD চুক্তি বলা হয়।

Cerd লক্ষ্য উদ্দেশ্য লিখ

CERD এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ CERD চুক্তি মূলত তৎকালীন সময়ে বিশ্ববাস্তবতার সাথে কতকগুলো বিষয়কে সামনে রেখে কিছু সাধারণ সমস্যা দূরীকরণের উদ্দেশ্য নিয়েই স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

১। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের  মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণঃ বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এবং জীব ও প্রাণী জম্মগতভাবে স্বাধীন বা মুক্ত। কিন্তু বৈষম্যের চর্চা এই স্বাধীনতাকে বন্ধ করে দেয়। ফলে ব্যক্তির মুক্ত স্বাধীন বিকাশ ঘটাতে পারে না। ব্যক্তির মুক্ত স্বাধীন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিকাশকে সুনিশ্চিত করতে CERD গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২। প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিতকরণঃ বিশ্বব্যাপী বৈষম্যের পেক্ষাপটে ব্যক্তির নাগরিক অধিকার এবং সঠিক মানবধিকার নিশ্চিত করা ও তার বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বর্ণগত, জাতিগত, মর্যাদাগত সাধারনের বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমেই দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা কাঠামোকে বৈষম্যমুক্ত করে নাগরিক অধিকার সঠিক এবং সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ঘটাতে পারে। বৈষম্যের পরিমন্ডলে নাগরিক অধিকার এর বাস্তবায়ন তো দূরের কথা এর সঠিক বোধটিও সবার মধ্যে জাগ্রত হতে  পারে না। কিন্তু CERD এটি নিশ্চিত করতে কাজ করেছে।

৩। ঔপনিবেশিকবাদ ও বৈষম্য দূরীকরণঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে সদ্য ঔপনিবেশিক শাসন হতে স্বাধীন হওয়া দেশগুলো তাদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একদিকে বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল অন্যদিকে বৈষম্যের নিজ দেশের বাস্তবতায় নিজস্ব নাগরিকদের ক্ষেত্রে আগে থেকে চলে আসা শোষণ , বৈষম্যে এবং চর্চা বন্ধ করতে পারছিল না। ফলে দেশে অভ্যন্তরেও তীব্রভাবে মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছিল। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ও জাতীয়  পর্যায়ে বৈষম্য দূরীকরণই ছিলো CERD এর অন্যতম  লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

৪। আইনের বাস্তব ঘটানোঃ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের জন্য আইন সমান। আইনের চোখে কোন ভেদাভেদ নেই । কিন্তু বৈষম্যের পেক্ষাপটে আইনের সঠিক ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছিল না।যার ফলে এ আইনের সঠিক প্রয়োগ ঘটানোই ছিল CERD এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

CERD এর মূলনীতিসমূহঃ নিম্নে CERD এর মূলনীতিসমূহ আলোচনা করা হলো।

১। নাগরিক অধিকার ও মানব অধিকার: নাগরিক ও মানব অধিকার দেশে বসবাসকারী প্রতিটি ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ ও শারীরিক বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে  সকলের জন্য নির্ধারিত থাকবে। এক্ষেত্রে যদি কেউ দেশের অভ্যন্তরের নাগরিক নয় এমন কেউ বসবাস করে তার ক্ষেত্রেও CERD এর মূলনীতি একইভাবে প্রযোজ্য হবে।

২। বৈষম্য বলতে বোঝানো হবে ধর্ম, বর্ণ, শারিরীক বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে ব্যক্তির সাথে বৈষম্যমূলক বা অসমতাসূচক আচরণ যা তাকে তার নায্য অধিকার হতে বঞ্চিত করে এবং তার নায্যতাকে সম্পূন্নরুপে অস্বীকার করে।

৩। রাষ্ট্রীয় অভ্যন্তরে বৈষম্যমূলক যেকোন কর্মকান্ড সেটা সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক যাই হোক না কেন, তা শুধু সম্পূর্ণরুপে নিসিদ্ধ ঘোষণা করবে।

৪। CERD এ স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ বৈষম্যমূলক বাস্তবতা পরিহারে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি মনে করবে তা অতি সত্বর এবং প্রাধান্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়নে বাধ্য থাকিবে।

৫। রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু এবং অসমতায় বঞ্চিত শ্রেণির জন্য এবং শোষণ ও অধিকার বোধের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করবে। যার কাজ হবে যে কোন স্থানে যে কোন সময়ে সংখ্যালঘু ক্ষমতাহীন অংশের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার ও নির্যাতন ঘটলে তার তাৎক্ষণিক ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক দোষীকে চিহ্নিত করে তার শাস্তি বিধান এবং নির্যাতিত সংখ্যালঘু  অংশের সঠিক পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।

৬। CERD এ স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ  জাতিগত, ধর্মগত ও অন্যান্য কারণে বৈষম্যের স্বীকার জনগোষ্ঠীর কিছু  কিছু অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সরাসরি ভূমিকা রাখবে।

৭। CERD এ স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ  তার সীমানার অভ্যন্তরে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা সংগঠন এর নিজেকে উচ্চতর হিসেবে প্রকাশকারী কোনো ধরনের প্রচারণা, অনুষ্ঠান ইত্যাদি থেকে নিজেকে বিরত রাখবে অবং অন্যকে বিরত রাখতে সচেষ্ঠ হইবে।

পরিশেষে বলা যায় যে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাই CERD এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে কাজ করছে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post