Showing posts with label প্যারেটো. Show all posts
Showing posts with label প্যারেটো. Show all posts

প্যারেটোর যুক্তি পরীক্ষণ পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর

প্যারেটোর যুক্তি পরীক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে লিখ।

ভূমিকা:- সমাজ চিন্তার ইতিহাস এ প্যারেটোর অবদান এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন।সমাজ সম্পর্কিত তার চিন্তা ও তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা, বিশেষ, বৈশিষ্ট্য ও সমৃদ্ধ। তিনি যুক্তিবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তার যুক্তিবাদ যেন পূর্ববর্তীকালের ডেকার্টের যুক্তি থেকে ভিন্ন। প্যারেটোর সমাজতাত্ত্বিক আলোচনার অন্যতম মৌলিক বিষয় যুক্তি পরীক্ষণ পদ্ধতি।

প্যারেটোর যুক্তি পরীক্ষণ পদ্ধতি ব্যাখ্যা


প্যারেটোর যুক্তি পরীক্ষণ পদ্ধতি

প্যারেটো মনে করেন, মার্কসবাদ একটি অগ্রহণযোগ্য মতবাদ। তবুও ইতালীয় যুবকদের কাছে কেন এটি এক জনপ্রিয় হয়ে উঠল এ নিয়ে তিনি জোর গবেষণা শুরু করেছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি অনুভব ধরণের যে, মানুষেরয় কর্মশীলতা ও কর্মকান্ড কোন Rational কার্মকান্ড দ্বারা চালিত এবং ভাবাবেগ দ্বারা নিঃসৃত।

প্যারেটোর সমাজতাত্বিক আলোচনার অন্যতম যৌলিক বিষয় হলো যুক্তি পরীক্ষণ পদ্ধতি। তাঁর সমাজতত্ত্ব মূলত যুক্তি পরীক্ষণ (Logico experimental) পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। এ পদ্ধতির মূলসূত্র হলো পরীক্ষণ ও যুক্তির আশ্রয়ে সমাজ বিশ্লেষণ। এখানে দূরকল্পনামূলক বা স্বজ্ঞার (Speculation or Intuition) জোন ভূমিকা নেই। প্যারেটোর যুক্তি পরীক্ষণ পদ্ধতি তিনটি মৌল উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।

যথা- ১. পর্যবেক্ষণ (Observation);

২. বস্তুনিষ্ঠ (Objective) এবং অভিজ্ঞতা (Experience),

৩. পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞত্য থেকে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া।

এখানে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এই পদ্ধতি আরোহ (inductive) পদ্ধতির অন্তর্গত। উল্লেখ্য, এ যুক্তি পরীক্ষণ প্রক্রিয়ার চিন্তার আধারে ভাবাবেগ (Sentiment) সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত, যদিও অধিকাংশ ভাবাবেগ থেকেই সৃষ্ট আচরণের নির্দেশক হিসেবে কাজ করছে যুক্তি পরীক্ষণ চিন্তা (Logico-Experiment thinking)।

প্যারেটো মানুষের মধ্যকার দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন।

যথা: ক. যৌক্তিক ক্রিয়া (Logical Action)। যেমন-Science and Logic.

খ. যৌক্তিকতাবিহীন ক্রিয়া (Non-Logical Action)। যেমন-Sentiment.

প্যারেটো মনে করেন, সমাজে মানুষের অধিকাংশ কর্মকাণ্ডই যুক্তিহীন, যা Sentiment বা আবেগের দ্বারা পরিচালিত হয়। অপরদিকে অল্প কিছু কর্মকাণ্ড আছে যা যুক্তিযুক্ত, এগুলো বিজ্ঞান দ্বারা পরিচালিত। তাই প্যারেটো মনে করেন যে, সমাজে মানুষ যুক্তির চেয়ে Sentiment দ্বারাই বেশি পরিচালিত হয়। তাঁর মতে মানুষ কোন কাজ করার আগে চিন্তা করে না এবং কোম কাজ করার পর বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে তাকে Rationalization করার চেষ্টা করে। যেমন-অযথাই চাকরকে চড় মেরে ঘটনাকে যৌক্তিক করার জন্য বলা হয় যে, চাকর চা আনতে দেরি করেছে। যুক্তিহীন ক্রিয়া ও যৌক্তিক ক্রিয়া সম্পর্কে Finer বলেন, "যদি তুলনা করে দেখা হয় তাহলে কোনটা যুক্তিসংগত ও কোনটা অযৌক্তিক তা বেরিয়ে আসবে। মূলত ভা নিজেই নির্ধারণ করবে। যখন তুলনা করে উভয় দিক হতে প্রমাণিত হবে কোন কর্মকাণ্ড যৌক্তিক তখনই তা বৈধতা পাবে।" (Thus the criterion as to what is logical and what is non logical is a comparism, a comparism between the ends-meansclalship as by the performer as seen by the observer. Where the two correspond the action is logical, where they fail to correspond the action is non logical.)

প্যারেটোর Method কে আমরা নিম্নোক্তভাবে উপস্থাপন করতে পারি-

i. Non-Logical Experiment;

ii. Sentiment is the predominate force in the society.

iii. Not laws but tendences are atomost achievement of social research society is not govern by laws.

iv. Social System কে Mind দ্বারা ব্যাখ্যা করতে হবে।

v. Many action is mostly guided by non rational act.

vi. মানুষের সামাজিক ব্যবহারে দুটি বিপরীত ধর্মীয় প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। যথা a. Logic b. Seatiment.

vii. সমাজবিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতোই যৌক্তিক হতে পারে।

vili. Society is system in which inquire is distributed.

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, প্যারোটা যুক্তি পরীক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা: যৌকিক ক্রিয়া ও যৌক্তিকতাহীন ক্রিয়া: প্যারেটো যৌক্তিক ক্রিয়া বলতে সেসব ত্রিকাকে বুঝিয়েছেন যা যুক্তি যারা প্রভাবিক ও পরিচালিত। আর যে ক্রিয়ার উদ্দেশ্য ও উপায় সম্পূর্ণ অসংগত এবং তাদের মাধ্য সামঞ্জস্যহীনাতার প্রভাব লক্ষ্য করা যায় তখন তাকে স্মৃতিহীন ক্রিয়া বলা হয়।

ইতিহাস অভিজাততন্ত্রের সমাধিক্ষেত্র ভিলফ্রেডো প্যারেটো

"ইতিহাস অভিজাততন্ত্রের সমাধিক্ষেত্র" ভিলফ্রেডো প্যারেটোর উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকা:- ১৯৪৮ সালে ইতালিতে জন্মগ্রহণ করেন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ও সমাজতত্ত্ববিদ ডিলফ্রেডো প্যারেটো। অর্থনতি, গণিতশাস্ত্র এবং প্রকৌশল বিদ্যায়ও তিনি ছিলেন সবিশেষ পারদর্শী। তাঁর পিতা মানবতাবাদ ও গণতন্ত্রের প্রতি বিশেষভাবে অনুরক্ত ছিলেন। কিন্তু প্যারেটো পিতার প্রভাবে তেমন প্রভাবিত হন নি। তিনি বরং সম্পূর্ণ এক বিপরীতমুখী মতাদর্শ দিয়ে প্রভাবিত হন। প্যারেটোর চিন্তাধারায় আমরা লক্ষ্য করি নিকোলো ম্যাকিয়াভেলীর রাষ্ট্রচিন্তার ব্যাপক প্রভাব

ইতিহাস অভিজাততন্ত্রের সমাধিক্ষেত্র ভিলফ্রেডো প্যারেটো


প্যারেটোর মতে, "এলিট গোষ্ঠী হলো সংখ্যালঘু যারা সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তগত করার গুণের অধিকারী হিসেবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হন। মানুষের ব্যক্তিগত গুণাবলির ক্ষেত্রে যে অসমতা বিরাজমান প্যারেটো তাতে এলিট ধারণার উৎস খুঁজে পেয়েছেন।" তিনি বিশ্বাস করতেন যে, প্রতিটি সমাজই মুষ্টিমেয় সংখ্যালঘু বাক্তির দ্বারা প্রচালিত ও প্রতিপালিত। সে যাই হোক, এখানে "ইতিহাস অভিজারতন্ত্রের সমাধিক্ষেত্র" ভিলফ্রেডো প্যারেটোর এ কথাটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

ইতিহাস অভিজাততন্ত্রের সমাধিক্ষেত্র"- ভি. প্যারেটোর একটি বিশ্লেষণ

এলিটবাদ বা এলিটতত্বের ক্ষেত্রে প্যারেটোর এক উল্লেখযোগ্য অবদান হচ্ছে তাঁর এলিট আবর্তনের ধারণা। এলিট আবর্তনের কথা বলতে গিয়ে প্যারেটো বলেছেন, "এলিট গ্রুপ গতিশীল (Dynamic) অর্থাৎ, জনগণের মধ্য থেকে যোগ্য ব্যক্তিগণ এলিট গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।” এলিট গ্রুপে রূপান্তর বা পরিবর্তন না ঘটলে রাজনৈতিক ব্যবস্থা অনিশ্চিত ও স্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং তা একপ্রকার সংকীর্ণ এলিট গ্রুপে (Closed Elite) এ পরিণত হয়।

প্যারেটো বলেছেন, "History is a graveyard of aristocracies." অর্থাৎ, ইতিহাস কুলীনতন্ত্রের সমাধিস্থল বা ইতিহাস অভিজাততন্ত্রের সমাধিক্ষেত্র। প্রতিটি সমাজেই ব্যক্তি এবং এলিট গোষ্ঠীর নিরস্তর পরিবর্তন ও অব্যাহত গাড়িতে প্রবহমান। এ প্রবাহ সমাজের উচ্চশ্রেণী থেকে নিম্নশ্রেণী এবং নিম্নশ্রেণী থেকে উচ্চশ্রেণীতে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত ও রূপান্তরিত হয়। এর ফলে সমাজে একটি বিশেষ প্রবণতা দেখা যায়, যাকে প্যারেটো ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে-"This leads to a considerable increase of the degenerate elements in the classes which still hold power, and on the other hand, in an increase of elements of superior quality in the subject classes." [Source: Vilfredo Pareto; The Mind and Society, PP. 1430-31.) এভাবে শেষ পর্যন্ত সমাজের প্রতিটি এলিট গ্রুপই তিরোহিত বা বিলুপ্ত হয়ে যায়। এলিট গ্রুপের এ বিলুপ্তি সামাজিক ভারসাম্যকে (Social equilibrium) অস্থিতিশীল করে তোলে যা প্যারোটোকে সর্বদাই তাড়া করত।

এলিট আবর্তন: প্যারেটো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের এলিট আবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন-

১. শাসক এলিটদের বিভিন্ন ক্যাটাগরির মধ্যে আবর্তন (Between different categories of the governing Elite)

২. এলিট গোষ্ঠী এবং বাদবাকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে আবর্তন (Between the Elite and the rest of the population)। এ শেষোক্ত এলিট আবর্তন আধার দুটি রূপ পরিগ্রহ করে।

যথা- (ক). সমাজের নিস্তর থেকে ব্যক্তিবর্গ বিদ্যমান এলিট শ্রেণির মধ্যে প্রবেশ করতে পারে এবং (খ). সমাজের নিস্তরের ব্যক্তিবর্গ নতুন এলিট গোষ্ঠী গঠন করে বিদ্যমান এলিট শ্রেণির সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে পারে।

অতঃপর প্যারেটো যে প্রশ্নটির সম্মুখীন হন তা হলো শাসক এলিটের বিকৃতি কেন ঘটে এবং সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয় যা আবার এলিট আবর্তনের দিকে ধাবিত হয়। এ প্রসঙ্গের উত্তরে প্যারোটো বলেছেন, "বিভিন্ন ধরনের এলিটের মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটে তা দিয়ে এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা যায়। এ গ্রেক্ষাপটে তিনি রেসিডিউস (Residues) এর ধারণা তুলে ধরেন।

রেসিডিউস: এ ধারণা সামাজিক জীবনে মানুষের যৌক্তিক (Rational) এবং অযৌক্তিক (Irational) কর্মকারের মূলে নিহিত। যৌক্তিক কর্মকাণ্ড বলতে তিনি বুঝিয়েছেন সেসব কাজকে যার মাধ্যমে উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভবপর হয়। পক্ষান্তরে, অযৌক্তিক কাজ হচ্ছে সেগুলো যেগুলোর মাধ্যমে কোন সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভবপর নয়।

প্যারেটোর মতে, Residues' হচ্ছে "The qualities through which a person can rise in life, and while he had had made made a list of six 'residues' he attaches the the primary importance to the Residues of Combinations and the persistence of aggregates with help of which the governing eine tries to maintains itself in power." [Source: P. Varna: Modern Political Thought; New Delhi, 1980, P-229) প্রকৃতপক্ষে, Residues' মানুষের সহজাত প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত।

উপসংহার: এলিট আবর্তনের ক্ষেত্রে যদি কথনও শ্লথ গতি দেখা দেয় বা উঁচু শ্রেণিতে স্থবির অবস্থা বিরাজ করে, তাহলে সমাজে বিপ্লব দেখা দিতে পারে। এর ফলে সমাজ দেহের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে পড়ে। এতে করে ক্ষমতাসীন এলিট নতুন এলিট শ্রেণি কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হন আর এভাবেই এলিট আবর্তিত হতে থাকে। বস্তুত, এলিট আবর্তনের মধ্য দিয়েই এলিটদের ইতিহাস রচিত হয় এবং ইতিহাসে অভিজাততন্ত্রের সমাধিক্ষেত্র গড়ে উঠে।

ভিলফ্রেডো প্যারেটো ছিলেন ফ্যাসিবাদের চিন্তার জনক"- ব্যাখ্যা কর

ভিলফ্রেডো প্যারেটো ছিলেন ফ্যাসিবাদের চিন্তার জনক"- ব্যাখ্যা কর।

অথবা, ভিলফ্রেডো প্যারেটোর রাজনৈতিক মতবাদ মূল্যায়ন কর।

ভূমিকা:- ভিলফ্রেডো প্যারেটো ১৮৪৮ সালে প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন মারচেজ র‍্যাকল প্যারেটো এবং মা মেরী মেটিনার। প্যারেটো প্যারিস এবং টিউরীনে লেখাপড়া করেন। তিনি ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে গ্রাজুয়েট ডিগ্রি লাভ করার পর ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি ইতালির রোমে রেলওয়ে কোম্পানির চাকরিতে যোগ দিন। এরপর তিনি ১৮৮৪ সালে সোসাইটি ফেরিয়ার দ্য ইতালিয়া নামক একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। ১৮৮২ খ্রি. তাঁর বাবা এবং ১৮৮৯ খ্রি. তার মা মারা যাওয়ার পর তিনি নতুন জীবনের অন্বেষায় ঝুঁকে পড়েন। চাকরি থেকে তিনি ইস্তফা দিলেন। তারপর তিনি একজন দরিদ্র রাশিয়ান মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন।

ভিলফ্রেডো প্যারেটো ছিলেন ফ্যাসিবাদের চিন্তার জনক"- ব্যাখ্যা কর


১৮৯৩ খ্রি. প্যারেটো তাঁর বন্ধু মাফিও পেস্টালিওনীর সহযোগিতায় লুসান বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল ইকোনমির অধ্যাপক ওয়ালরাস কর্তৃক প্রবর্তিত 'ইকুইলিব্রিয়াম সিস্টেম' সম্বন্ধে আগ্রহী হয়ে পড়েন এবং ক্রমশই অগণতান্ত্রিক চিন্তাধারা এবং বিশ্বাসে ঝুঁকে পড়েন।

ভিলফ্রেডো প্যারেটোর রাজনৈতিক মতবাদ

ভিলফ্রেডো প্যারেটো মূলত একজন সমাজবিজ্ঞানী। তা সত্ত্বেও রাষ্ট্র দর্শনে তাঁর অবদান মোটেই ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। নিম্নে তার রাজনৈতিক মতবাদ আলোচনা করা হলো।

১. প্যারেটোর সমাজতত্ত্ব: প্যারেটোর সমাজতত্ত্ব মূলত যুক্তি পরীক্ষণ পদ্ধতি বা মেথডের উপর নির্ভরশীল। এ পদ্ধতির মূল সূত্র হলো পরীক্ষণ এবং যুক্তির আশ্রয়ে সমাজ বিশ্লেষণ।

২. এলিট শ্রেণির আবর্তন: রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে এলিটের আবর্তনবাদ প্যারেটোর অন্যতম প্রধান অবদান। একটি সমাজ বা সম্প্রদায় এলিটদের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর দ্বারা শাসিত হয়ে থাকে। তবে তিনি একথাও বলেছেন যে, ক্ষুদ্র এলিট গোষ্ঠীর দ্বারা শাসিত হলেও একটি দেশে সে এলিট গোষ্ঠী স্থায়ীভাবে শাসনকার্যে বহাল থাকতে পারে না এবং তারা অশাসনকারী এলিটের দ্বারা অপসারিত হয়।

৩. এলিট এবং নন এলিট: প্যারেটো বলেছেন, "মানুষের এবং সকল প্রাণীর সহজাত ধরনের সকল আচরণই কেবলমাত্র তাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে করে থাকে। এসব আচরণের কোন যৌক্তিক ভিত্তি নেই। সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রে দুই ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি পাওয়া যায়। তিনি উচ্চতর যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে এলিট এবং নিতর যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে নন এলিট নামে অবহিত করেছেন।"

৪. মানুষের শ্রেণিবিভাগ: ডিলফ্রেডো প্যারেটো সমাজবিজ্ঞানে সর্বপ্রথম এলিট বা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ক্ষমতার কথা আবিষ্কার করেন। তিনি দেখান যে, সমাজের মানুষ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। একটা হলো এলিট বা প্রভাবশালী সংখ্যালঘু গোষ্ঠী অন্যটি হলো জনসাধারণ।

৫. যোগ্যতার দিক দিয়ে সব মানুষ সমান নয়: আসলে প্যারেটোর তত্ত্ব ধারা অনুপ্রাণিত হয়েই মুসোলিনী ডায় ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রদর্শনের গোড়াপত্তন করেন। প্যারেটোর রাষ্ট্রদর্শনের মূল কথা হলো যে, মানুষমাত্রই অযুক্তিবাদী এবং সকল মানুষই যোগ্যতা ও প্রতিভার দিক দিয়ে সমান নয়।

৬. গণতন্ত্র অধাতন শাসনব্যবস্থা: গণতন্ত্র অবাস্তব শাসনব্যবস্থা এই কথাটির মধ্যেই প্যারেটোর ফ্যাসিবাদের ধারণা বিদ্যমান। প্যারেটো তাঁর রাষ্ট্রদর্শন আলোচনায় 'সারকুলেশন অব দি এলিট' সম্পর্কে যেসব তত্ত্ব ও মতবাদ প্রচার হয়েছেন সেগুলো খুব মূল্যবান এবং সেকালের রাষ্ট্রদর্শনকে গোড়াপত্তন করে। প্যারেটোর রাষ্ট্রদর্শনকে সমৃদ্ধ করার পক্ষে খুবই সহায়ক।

৭. যুক্তি পরীক্ষণ পদ্ধতি: প্যারেটো তাঁর সমাজতন্ত্রের বিশ্লেষণে সাধারণভাবে যে পদ্ধতি অনুসরণ করেন তাকে যুক্তি পরীক্ষণ পদ্ধতি বলা হয়। তিনি মানুষের কর্মকাণ্ডকে যৌক্তিক ও অযৌক্তিক বলে ভাগ করেন। তিনি বলেছেন, "যে মানুষ প্রথমে অযৌক্তিকভাবে একটা কাজ শুরু করে, পরে সেটাকে যৌক্তিক বলে প্রমাণ করার চেষ্টা চালায়।"

৮. ক্ষমতা কয়েকজন লোকের যাতে কেন্দ্রীভূত থাকবে: সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে প্যারেটোই প্রথম দেখিয়েছেন যে, যে কোন সমাজেই হোক, ক্ষমতা কয়েকজনের মধ্যে কেন্দ্রীভূত থাকবে যাতে ক্ষমতাধারী সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ক্ষমতালিষ্ণু সংখ্যালঘু গোষ্ঠী কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হলেও ক্ষমতা আবার সংখ্যালঘুর হয়েই কেন্দ্রীভূত হবে।

৯. এলিট শ্রেণি: সমাজে প্রায়ই দেখা যায় যে, কিছু লোক সবল আর কিছু লোক দূর্বল, কিছু লোক জ্ঞানী আর কিছু লোক নির্বোধ। বিশেষ কোন ক্ষেত্রে যে গ্রুপটি সবচেয়ে বেশি যোগ্যতার অধিকারী সেটিই হচ্ছে সেক্ষেত্রের এলিট শ্রেণি। এ এলিট শ্রেণিই উক্ত ক্ষেত্রটিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

১০. প্যারেটোর এলিটতত্ত্ব: প্যারেটোর মতে, মানবসমাজের মধ্যে বিশেষ গ্রুপ বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে পারদর্শী। মানবসমাজে দুইজন লোক কিংবা মানুষের দুটি গোষ্ঠী কোনদিন সর্বতোভাবে সমান হতে পারে না।

১১. গণতন্ত্র ধনিকতন্ত্রের নামান্তর: সমাজে প্রত্যেক স্তরে একটি প্রভাবশালী চক্র বা এলিট থাকে। এদের অপেক্ষাকৃত উচ্চ শ্রেণিতে স্থান লাভের প্রবণতা থাকে। একটি দেশের শাসনব্যবস্থা যতই গণতান্ত্রিক চরিত্রবিশিষ্ট হোক না কেন, তা বাস্তবিক পক্ষে বিত্তবান ব্যক্তিদের কিংবা তাদের সমর্থনপুষ্ট লোকজন দ্বারা গঠিত নয়। এ প্রকৃতি শাসনব্যবস্থাকে গণতন্ত্র না বলে ধনিকতন্ত্র বলাই যুক্তিযুক্ত।

১২. এলিট গোষ্ঠীর সময়কাল: প্রথম শ্রেণির এলিটগণ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন এমন একটি গতিহীন ও স্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি হয় যায় ফলে এলিটদের স্বতঃস্ফূর্ত আবর্তন শুরু হয়ে যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এলিট গোষ্ঠীকে তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। সনাতন এলিট শ্রেণি, উদার গণতান্ত্রিক এলিট শ্রেণি এবং ফ্যাসিস্ট নাজী এলিট শ্রেণি।

১৩। রাষ্ট্র ও বিপ্লব: ম্যাকিয়াভেলী তার প্রিন্সকে যে শৃগালের মত ধূর্ত এবং সিংহের ন্যায় শক্তিশালী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তা প্যারেটোর কথার অনুরূপ। প্যারেটো মনে করেন যে, শাসক চক্র বহির্ভূত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সাধারণত মর্যাদা বা ক্ষমতার লোভে বিদ্রোহাত্মক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়।

উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, প্যারেটো ছিলেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন রাষ্ট্রদার্শনিক। তাই তিনি শিক্ষিত লোকদের সমন্বয়ে গঠিত এলিট শ্রেণির শাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে যুক্তি প্রদান করেন। দেখা যায় যে, শাসক শ্রেণির মধ্যে এক প্রকার রেসিডিউস হ্রাস পায়। হ্রাসপ্রাপ্ত রেসিডিউস সম্পন্ন এলিট শ্রেণি ক্ষমতাচ্যুত হন। এ কথা বলতে পারি যে, আদর্শ শাসনব্যবস্থা তখনই প্রবর্তিত হবে যখন শাসক শ্রেণির মধ্যে প্রথম প্রকার ও দ্বিতীয় প্রকার রেসিডিউসের সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন হবে কিন্তু যাস্তবিক পক্ষে তা হয় না।

Pareto Elite প্যারেটো এলিট তত্ত্ব কী? “আধুনিক সরকার এলিট শাসিত সরকার” ব্যাখ্যা কর।

Pareto এলিট তত্ত্ব কী? আধুনিক সরকার এলিট শাসিত সরকার

ভূমিকাঃ- আধুনিক সরকার বলতে এলিট শাসিত সরকারকে বোঝায়। এলিট (Elite) বলতেই আমরা বুঝি যারা শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে প্রতিটি সরকার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক এলিট দ্বারা পরিচালিত। আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন এলিট গোষ্ঠী। শুধু আধুনিক সরকারেই নয় সকল প্রকার সরকারেই এলিটরা শাসন করে থাকে। সুতরাং আধুনিক সরকার তো অবশ্যই এলিট (Elite) শাসিত সরকার।
প্যারেটো এলিট তত্ত্ব কী? “আধুনিক সরকার এলিট শাসিত সরকার” ব্যাখ্যা কর।


এলিট (Elite): Elite ফরাসি শব্দ। ফরাসি ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে 'Choix' যার ইংরেজি প্রতিশব্দ Choice যার বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে পছন্দ, বাছাই, মনোনয়ন ইত্যাদি ।

H.D. Lasswell বলেন-“সমাজে যারা প্রভাবশালী তারাই এলিট।”

প্যারেটো তার 'The mind and societyগ্রন্থে বলেন-“ প্রতিটি সমাজেই ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কর্মক্ষমতার দিক থেকে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। যে ব্যক্তির দক্ষতা সর্বাধিক তিনি সমাজে এলিট আর অন্যরা ননএলিট।”

মসকার বলেন-“ সমাজে দুই ধরনের লোক বিদ্যমান। রাজনৈতিক শ্রেণি ও অ-রাজনৈতিক শ্রেণি। তিনি রাজনৈতিক শ্রেণিকে এলিট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

আধুনিক সরকার বলতে এলিট (Elite) শাসিত সরকার বুঝায়ঃ

আধুনিক সরকার বলতে এলিট (Elite) শাসিত সরকার বুঝায়। কেননা এলিট সংজ্ঞায় স্পষ্ট যে, যারা শাসক তারই হলো এলিট। তাই আধুনিক সরকার হলো এলিট (Elite) শাসিত সরকার । সরকার ও এলিট মূলত একই। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণণা করা হলো-

১। সরকার গঠনঃ সাধারণত যারা শাসন করে তারাই এলিট। সুতরাং এলিটরাই সরকার গঠন করছে। বর্তমানে আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় সরকার হিসেবে এলিটের ভূমিকা অন্যতম।

২। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষাঃ এলিট (Elite) সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ভূমিকা রাখে। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে প্রসাশনিক বাহিনী জনসাধারণকে শাসন করে থাকে। ফলে আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় এলিটদের ভূমিকা অগ্রগণ্য।

৩। প্রতিষ্ঠান গঠনঃ এলিটরা শাসনকার্য সম্পাদন করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এক্ষেত্রে এলিটরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসামরিকীকরণ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গঠনে উদ্দোগী হয়।

৪। সংবিধানঃ এলিটরা সরকার হিসেবে সংবিধান গঠন ও সংবিধান সংশোধন করে থাকে । আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় এলিটরা জনকল্যাণের জন্য ও আধুনিক সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সংবিধান সংশোধন করে থাকেন।

৫। বিচার বিভাগঃ আধুনিক সরকার ব্যবস্থার ইতিহাসে এলিটরা জনগণের নায্য বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগকে সরকারের অন্যান্য বিভাগ থেকে আলাদা করে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে জনগণ ন্যায় বিচার পাবে।

৬। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাঃ আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। এ লক্ষ্যে এলিটরা গণতন্ত্রের দ্বার উম্মোচন করে ও জনগণের প্রতিনিধিদের এলিটের আসনে অধিষ্ঠিত হতে সহযোগিতা করে।

৭। জি ডি পি বৃদ্ধিঃ আধুনিক সরকার একটি গতিশীল সরকার। আধুনিক সরকার বা এলিট (Elite) প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব ব্যবস্থায় মেধার আধিপত্য খাটিয়ে জনগণের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

৮। জনকল্যাণমূলক কাজঃ আধুনিক সরকার হচ্ছে গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক সরকার। সুতরাং আধুনিক সরকার প্রভাব খাঁটিয়ে জনগণের কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় ব্রত হয়। আর এ স্থানে থাকে এলিটরা।

পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক সরকার ব্যবস্থা বলতে এলিটকে (Elite) বোঝায়। অর্থাৎ আধুনিক সরকারও যা এলিটও তাই। সুতরাং আধুনিক সরকার এলিটদের দ্বারাই সংগঠিত হতো। কেননা যারা এলিট তারাই সরকার গঠন করে েএবং আধুনিক সরকার এলিট দ্বারা গঠিত সরকার। সুতরাং বলা যায় যে, আধুনিক সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপই এলিট দ্বারা পরিচালিত।

এলিট (Elite) কি? রাজনৈতিক এলিট (The political elite) বলতে কি বুঝ?

এলিট (Elite) ও রাজনৈতিক এলিটের সংজ্ঞা দাও?

ভূমিকাঃ- সমাজে অল্প কিছু সংখ্যক লোক থাকে যারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বা পেশায় সাফল্য লাভের মাধ্যমে সমাজের উচ্চতর স্থানে পৌছান। এই সকল ব্যক্তিবর্গ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা, যোগ্যতা, নেতৃত্বের প্রমাণ দিয়ে সমাজের অন্যাদের থেকে আলাদা এবং অসাধারণ বলে বিবেচিত হন। সমাজে এই সকল ব্যক্তিবর্গ সর্বতোভাবে সম্মানিত হন।

এলিট (Elite) কি? রাজনৈতিক এলিট বলতে কি বুঝ?


এলিটঃ সাধারণভাবে বলা যায় যে এলিট হলো কোন সমাজের সেই যোগ্যতার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যারা সমাজের অন্যান্য সাধারণ মানুষদের চেয়ে অধিক প্রভাবশালী, ভূমিকা পালনে সক্ষম এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতা, দক্ষতা, নেতৃত্ব ও গুণগত উৎকর্ষ প্রদর্শনের মাধ্যমে অসাধারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। এলিট দুই প্রকার যথা- (১) রাজনৈতিক এলিট (২) অরাজনৈতিক এলিট।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ- বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে এলিট প্রত্যয়টির সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। এদের মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা নিম্নে দেওয়া হল-
সমাজবিজ্ঞানী হ্যারল্ড ল্যাস ওয়েল এর মতে- “এলিট হচ্ছেন সমাজে কতিপয় শীর্ষস্থানীয় ব্যাক্তি যারা সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধার অধিকারী বাকিরা সাধারণ জনগণ।”
সমাজবিজ্ঞানী Raymond Aron তাঁর ‘Main currents in sociological Thought’ গ্রন্থে এলিট সম্পর্কে বলেন-এলিট বলতে আমরা বুঝি স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তিকে যারা প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে সফলতা লাভ করে।”
ভারতীয় রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী S.L Siklin তাঁর বই  ‘Indian Govermment and politics’এ এলিট এর সংজ্ঞায় বলেন- “এলিট হলো সেই শাসনকারী ও প্রভাবশালী দল যারা নীতি নির্ধারণ ও কর্মপন্থাকে প্রভাবিত করে এবং চিন্তন প্রক্রিয়াকে পরিচালিত করে।”

উপরের সংজ্ঞাগুলি বিশ্লেষণ করে এই বলা যায় যে, এলিট হরো কোন সমাজের সেই অল্পসংখ্যক মানুষ যারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বা পেশায় সাফল্য লাভের মাধ্যমে সমাজের উচ্চতর স্থানে আছেন । এদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও উৎকৃষ্ট গুণে এরা অন্যদের থেকে আলাদা বলে গণ্য হয় এবং এভাবে সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সৃষ্টি হয়।

রাজনৈতিক এলিট বলতে কি বুঝ?


বর্তমান আধুনিক বিশ্বের অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো রাজনৈতিক এলিট (The political elite)।উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এলিটদের মাধ্যমেই রাজনীতি পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। সমাজে বা রাষ্ট্রে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং কার্যাবলি সম্পন্নতে ভিন্ন ভিন্ন এলিট লক্ষ করা যায়।
রাজনৈতিক এলিট (The political elite): সাধারণভাবে বলা যায় যে, যারা সমাজে উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ও ক্ষমতার অধিকারী এবং রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করে থাকে তারাই রাজনৈতিক এলিট (The political elite) । অর্থাৎ রাজনৈতিক এলিট তারাই যারা যে কোন কারণে বা যেভাবেই হোক না কেন বিভিন্ন নীতি নির্ধারন ও বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ- বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক এলিটের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। এদের মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা নিম্নে দেওয়া হল-
লাসওয়েল এর মতে- “ রাজনৈতিক এলিট কোন রাষ্ট্রের ক্ষমতাধিকারীগণদের নিয়ে গঠিত। ক্ষমতার অধিকারী হলো যাদের হাতে রাষ্ট্রের শাসনভার অর্পিত হয়।”
টি.বি বটেমোর এর মতে-“রাজনৈতেক  এলিট বলতে বুঝায় সেই সকল ব্যক্তির সমষ্টি যারা নির্দিষ্ট সময়ে রাষ্ট্রের ক্ষমতা চর্চা করে।”
সরকার, প্রশাসন, সেনাবহিনী ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সম্পন্ন লোকদের তিনি এ পর্যায়ে ফেলেছেন।
এতএব, রাজনৈতিক এলিট (The political elite) বলতে সমাজের ঐ ধরনের ব্যক্তি সমষ্টিকে বোঝায় যারা সরকারি কার্যক্রম ও শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন।
এলিট তাত্ত্বিক মস্কা এলিটকে তাঁর গ্রন্থে দুই ভাগে ভাগ করেছেন যথা- (১) রাজনৈতিক এলিট (২) অরাজনৈতিক এলিট। মস্কা রাজনৈতিক এলিট বলতে বুঝিয়েছেন-“যারা শাসন কার্য পরিচালনা করে।”
পরিশেষে বলা যায় যে, এলিট তত্ত্ব আলোচনায় রাজনৈতিক এলিট এর ধারণা গুরুত্বপূর্ণ । 

রেসিডিউস ও ডেরিভেশন কি?

প্যারেটোর রেসিডিউস ও ডেরিভেশন বলতে কি বুঝ?

ভূমিকাঃ- ইতালীয় সমাজবিজ্ঞানী ভিলফ্রেডো প্যারেটো (Vilfredo Pareto) সমাজবিজ্ঞানের জটিল আচরণকে ব্যাখ্যা করতে মনোবিজ্ঞানভিত্তিক এক নতুন ধারণা উপস্থাপন করেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ The Mind and Society (1916)-এ তিনি দেখিয়েছেন যে সমাজ কেবল প্রতিষ্ঠান বা কাঠামোর সমষ্টি নয়; বরং মানুষের আচরণ, অনুভূতি, চেতনা ও মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতার সমন্বিত রূপ। মানুষের আচরণ অনেক সময়ই যুক্তিভিত্তিক নয়, বরং আবেগ, প্রবৃত্তি ও অচেতন মানসিক উপাদান দ্বারা পরিচালিত। এই অযুক্তিক আচরণ বোঝাতে তিনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা ব্যবহার করেন: রেসিডিউস (Residues) এবং ডেরিভেশন (Derivations)।


রেসিডিউস ও ডেরিভেশন কি?

রেসিডিউস (Residues):

প্যারেটোর মতে, মানুষের আচরণের পেছনে যে গভীর মনস্তাত্ত্বিক ও জৈবিক উপাদান কাজ করে, তাকে বলা হয় রেসিডিউস। এটি কোনো নির্দিষ্ট আবেগ নয়; বরং মানুষের মনোজগতের গভীরে থাকা স্থায়ী মানসিক অবস্থা। তিনি রেসিডিউসকে বলেছেন; “manifestation of sentiments”, অর্থাৎ মানুষের অভ্যন্তরীণ অনুভূতির প্রকাশ।

 

প্যারেটো রেসিডিউস সম্পর্কে কিছু মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেনঃ

১. রেসিডিউস মানুষের গভীর মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার প্রতিফলন: এগুলো মানুষের দৈনন্দিন মনোভাব নয়, বরং ব্যক্তিত্ব ও আচরণের অচেতন স্তরের সাথে সম্পর্কিত। তাই এগুলো আবেগ বা অনুভূতির সাময়িক পরিবর্তনের মতো নয়।


২. রেসিডিউস হলো সহজাত প্রবৃত্তির সাথে সম্পর্কিত শক্তি: যদিও রেসিডিউসকে পুরোপুরি জৈবিক প্রবৃত্তি বলা যায় না, তবুও এগুলোর সাথে মানুষের সহজাত অন্তর্নিহিত প্রবণতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এটি আংশিক জৈবিক, আংশিক মনস্তাত্ত্বিক উপাদান।


৩. রেসিডিউস ব্যাখ্যাতীত ও প্রায় অপরিবর্তনীয়: প্যারেটো বলেন, রেসিডিউস হলো মানুষের এমন অভ্যন্তরীণ শক্তি যা সহজ ব্যাখ্যায় ধরা যায় না এবং সময়ের সাথে সহজে পরিবর্তিতও হয় না। এটি এক ধরনের স্থায়ী মানসিক কাঠামো।


 অর্থাৎ রেসিডিউস হলো ব্যক্তির জৈবিক ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার এমন সমন্বিত শক্তি, যা মানুষের আচরণের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।

এগুলো আবেগ নয়, আবার সম্পূর্ণ প্রবৃত্তিও নয়; বরং দুইয়ের মিশ্রণে তৈরি মানসিক ভিত্তি।


ডেরিভেশন(Derivation)

সাধারণ অর্থে Derivation হলো Residues এর ব্যাখ্যা । এগুলো সাধারণ কোন নির্দিষ্ট কাজ বা চিন্তার যুত্তি প্রদান করে থাকে।

প্যারেটোর মতে, মানুষ অধিকাংশ সময়েই যুক্তিহীন বা অযৌক্তিক আচরণ করে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মানুষ পরবর্তীতে সেই অযৌক্তিক আচরণকে যুক্তিযুক্ত করে তুলতে বিভিন্ন ব্যাখ্যা, যুক্তি, তর্ক বা নিয়ম তৈরি করে। এই যুক্তিকরণ বা বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টাকেই বলা হয় ডেরিভেশন।


ডেরিভেশন হলো রেসিডিউসের ব্যাখ্যা অর্থাৎ মানুষের আচরণ আসলে রেসিডিউস দ্বারা পরিচালিত, কিন্তু সে আচরণকে সমাজে গ্রহণযোগ্য করতে মানুষ যুক্তির আশ্রয় নেয়। সেই যুক্তির কাঠামোকেই প্যারেটো "ডেরিভেশন" বলেছেন।


ডেরিভেশনের কিছু বৈশিষ্ট্যঃ

1. অযুক্তিক আচরণকে যৌক্তিক রূপ দান: মানুষ প্রথমে আবেগ, প্রবৃত্তি বা অচেতন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজ করে। পরে সেই কাজকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে যৌক্তিক দেখাতে চায়।


2. এটি আচরণের পরবর্তী ব্যাখ্যা: আচরণ ঘটে যাওয়ার পর মানুষ তার যথার্থতা প্রমাণের চেষ্টা করে।


3. সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ভাষ্য তৈরি: ডেরিভেশন সমাজে আচরণকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যার কাঠামো তৈরি করে।


এতএব, ডেরিভেশন হলো মানুষের ভ্রান্ত বা অযুক্তিক আচরণকে যুক্তি, তর্ক ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে যৌক্তিক প্রমাণের প্রচেষ্টা।


উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় প্যারেটো ডেরিভেশন বলতে বুঝিয়েছেন এমন এক যুক্তিহীন ক্রিয়াকে যেগুলো মানুষ নানা রকম তর্ক, যুক্তি, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে যৌক্তিকরনের চেষ্টা করে থাকে।