এলিট কি? রেসিডিউস ও ডেরিভেশন কি?

এলিট কি? রেসিডিউস ও ডেরিভেশন বলতে কি বুঝ?

ভূমিকাঃ সমাজ বিশ্লেষণে গতানুগতিক পদ্ধতির বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এলিট তত্ত্বের প্রকাশ ঘটে। গতানুগতিক ও রীতিসিদ্ধ পদ্ধতিতে যেখানে সরকারের প্রতিষ্ঠানিক উপাদানগুলোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয় সেখানে স্বল্প সংখ্যক যারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে যুক্ত থাকেন।
এলিট কি? রেসিডিউস ও ডেরিভেশন কি?



এলিট (Elite) তত্ত্বঃ আভিধানিক অর্থে এলিটবাদ উৎকৃষ্ট শ্রেণীর মুষ্টিমেয় শাসনকে বোঝায়। প্রকৃতপক্ষে  এলিটবাদের মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হলোসব  দুটি প্রধান শ্রেণীর অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এক মুষ্টিমেয় ব্যক্তি যারা শাসক যাদের দ্বারা সংখ্যা গরিষ্ঠ সাধারণ জনগণ শাসিত হয় তাদের সমন্বয়ে গঠিত গোষ্ঠী হচ্ছে এলিট।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ এলিট সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন নিম্নে কয়েকটি বিজ্ঞানীর সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।
প্যারেটোর মতে "এলিট হলো এমন এক জনসমষ্টি যাদের নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে সর্বাধিক দক্ষতা রয়েছে।"
ইতালির সুপ্রসিদ্ধ রাষ্ট্র চিন্তাবিদ  গেইটানো মসকা বলেন-" সকল সমাজেই দু শ্রেণীর জনগণ দেখা যায়,  এক শ্রেণী যারা শাসন করে অন্য শ্রেণী যারা শাসিত হয়।শাসক সংখ্যা সর্বদা সংখ্যায় কম থাকেন তবে তারাই সব রাজনৈতিক কার্যসম্পাদন করেন।এ শ্রেণীর সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে এবং তা থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় সুযোগ সুবিধা  ভোগ করে।" এতএব একথা পরিষ্কার যে প্রভাবশালী সংখ্যালঘু শ্রেণীই এলিট। যারা ক্ষমতা দখল করে এবং সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে।
সুতরাং প্যারেটো রাজনৈতিক সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাধারায় যে দুই শ্রেণির এলিটের কথা বলেছেনতা রাজনৈতিক পালাবদলের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রেসিডিউস ও ডেরিভেশন কি?

অথবা, রেসিডিউস ও ডেরিভেশন বলতে বুঝ?
অথবা, প্যারেটোর রেসিডিউস ও ডেরিভেশন কি?

Pareto মূলত মনোবিজ্ঞানী প্রত্যয় দ্বারা সামাজিক বিজ্ঞানের আলোচনা করেছেন। The mind and society নামক গ্রন্থে দেখিয়েছেন সমাজের একটি বিশেষ মন আছে যা মূলত মানুষের কার্যাবলি সমন্বিত রুপ। তার মতে, মানুষের ভ্রান্ত ও যুক্তিহীন ক্রিয়া ডিরাইভেশন।
রেসিডিউস (residues):  প্যারেটো যুক্তিহীন ক্রীয়াকে residues এর দলভুক্ত করেছেন।  তিনি রেসিডিউস কে  manifestation of sentiments হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই sentiment বা আবেগ বিভিন্ন প্রকার কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে  এবং অনেকসময় একই হতে পারে। প্যারেটো এর মতে রেসিডিউস এর দুটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যথা- ১) এগুলি বিভিন্ন ক্রিয়ার পিছনে ক্রিয়াশীল মনস্তাত্ত্বিক উপাদানগুলো প্রতিনিধিত্ব করে এবং (২) এগুলো পুনরায় কোন ব্যাখ্যা অপরিবর্তনীয় ও অসমর্থ।
১। রেসিডিউসগুলো মনোভাব না বরং ব্যক্তিমনের অবস্থা।
২। রেসিডিউসগুলো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত।
সুতরাং বলা যায় যে রেসিডিউস কোন আবেগের বিষয় না এটি ব্যক্তির মনোজগতের ব্যাপার। এটা সহজাত প্রবৃত্তি নয় তবে সহজাত প্রবৃত্তির সাথে সম্পর্কিত। এতএব এটি পুরোপুরি জৌবিক কিংবা মনস্তাত্ত্বিক বিষয় নয়৷ এটা আংশিক জৈবিক আংশিক মনস্তাত্ত্বিক। তাই রেসিডিউস বলতে ব্যক্তিমনের জৈবিক ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার সংমিশ্রণ কে বোঝায়।
ডেরিভেশন(Derivation): সাধারণ অর্থে Derivation হলো Residues এর ব্যাখ্যা । এগুলো সাধারণ কোন নির্দিষ্ট কাজ বা চিন্তার যুত্তি প্রদান করে থাকে।
প্যারেটোর মতে  মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যুক্তিহীন আচরণ করে। এসব অযুক্তি ক্রিয়াগুলি পরবর্তীতে নানা যুক্তিতর্ক,ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ইত্যাদি দ্বারা তার কাজের যথার্থতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে। তখন মানুষের এ ভ্রান্ত আচরণের যথার্থতা প্রমাণের প্রচেষ্টাকেই প্যারেটো ডেরিভেশন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় প্যারেটো ডেরিভেশন বলতে বুঝিয়েছেন এমন এক যুক্তিহীন ক্রিয়াকে যেগুলো মানুষ নানা রকম তর্ক, যুক্তি, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে যৌক্তিকরনের চেষ্টা করে থাকে।

No comments:

Post a Comment