ট্যালকট পারসন্স এর সামাজিক ক্রিয়াতত্ত্ব আলোচনা কর।

ট্যালকট পারসন্স এর সামাজিক ক্রিয়াতত্ত্ব আলোচনা কর।

আদর্শ, উদ্দেশ্য, প্রকৃত ও চিন্তন প্রক্রিয়ার স্বকীয়তার কারনে ট্যালকট পারসন্স এর চিন্তা ভাবনা কিছুটা অতীত ও বিচ্ছিন্ন। তবুও তিনি সমাজবিজ্ঞান অর্থনীতি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সমাজবিজ্ঞানের উন্নতি ও অগ্রগতিতে কার অবদান সর্বাধিক। তিনি মূলত ক্রিয়াবাদী তাত্ত্বিক। তার চিন্তাধারা জটিল ও বিমূর্ততায় আচ্ছন্ন।

ট্যালকট পারসন্স এর সামাজিক ক্রিয়াতত্ত্বঃ সমাজবিজ্ঞানের ইতিহাসে ট্যালকট পারসন্স এর অবদান খুবই অসামান্য। তিনি Classical Theory (শাস্ত্রীয় তত্ত্ব) ব্যবহার করে আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্বসমূহ দাড় করাতে চেয়েছিলেন। ক্রিয়াবাদী সমাজবিজ্ঞানীদের জগতে তার অবদান বিশেষভাবে স্বীকৃত। পারসন্স ছিলেন একজন Micro Sociologists। তিনি মনে করতেন যে সামাজিক সম্পর্কে সামাজিক কর্মের দ্বারা বিশ্লেষিত হতে পারে। অর্থাৎ পারসন্স অবস্থা বিশ্লেষণে Action বা কর্মের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ১৯৩৭ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ The Structure of Social Action প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে তিনি Social Action সম্পর্কিত তত্ত্বটি প্রদান করেন।

ট্যালকট পারসন্স তিনটি প্রধান Intellectual tredition এর মাধ্যমে বিশিষ্ট চিন্তাবিদদের ব্যক্তিত্ব ও দূর্বলতাকে চিহ্নিত করেছেন। Intellectual tredition হলো- Utiliterianism, Positivism, Idealism.

এই তিনটি Tradition কিভাবে মূল পরিকল্পনা ও প্রত্যয় সম্পর্কে Synthesis তিনি তা নির্দেশ করেছেন। ট্যালকট পারসন্স তার The Structure of Social Action এ সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্ব নির্মাণে  Analytical Prelims কে উপস্থাপন করেছেন। এখানে তিনি European Classical Sociological Theory of Analysis করে তত্ত্ব তৈরি করেছেন। তিনি ম্যাক্স ওয়েবারের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে Ideal Type Strategy প্রয়োগ করেন। ক্রিয়াবাদী তত্ত্বের ভিত্তিতে তিনি জ্ঞাতি সম্পর্ক, সামাজিক স্তরবিন্যাস, রাজনৈতিক আন্দোলন ও গণযোগাযোগ বিষয়ো বিশ্লেষণ করেন। তিনি সমাজকে ক্রিয়া প্রক্রিয়াআর মাধ্যমে বিশ্লেষণের পক্ষে মত প্রকাশ করেন।তার মতে প্রত্যেক ব্যক্তির বিভিন্ন কর্মকান্ডের দ্বারা সমাজ পরিচালিত হয়। তাই সমাজ সম্পর্কিত যে কোন বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে হলে অবশ্যই ক্রিয়াকে মুখ্য বিষয় হিসেবে ধরে নিতে হবে। তিনি মনে করেন সামাজিক সম্পর্ক Social Action দ্বারাই বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।তিনি তার গ্রন্থে Action frame of reference এর কথা উল্লেখ করেন। অর্থাৎ মাক্সস এযখানে সমাজ বিশ্লেষণের কাঠামো হিসেবে শ্রেণীর কথা উল্লেখ করেছেন পারসন্স সেখানে ক্রিয়াতত্ত্বের কথা বলেছেন। পারসন্স পূর্ববর্তী চারজন তাত্ত্বিকের অবদান পর্যালোচনা করে নতুন একটি গ্রন্থ রচনা করেন যার নাম হলো স্বেচ্ছামূলক ক্রিয়াতত্ত্ব। এখানে তিনি তিনটি মৌলিক চিন্তাধারার কথা উল্লেখ করেন। (ক) Utiliterianism (উপযোগিতাবাদ), (খ)  Positivism (পজিটিভিজম/ইতিবাচকতাবাদ), (গ) Idealism (আদর্শবাদ)

উপযোগিতাবাদঃ এখানে বলা হয় ব্যক্তি সম্পূর্ণ যুক্তিনিষ্ঠ এবং অর্থনৈতিক স্বার্থমূলক উদ্দেশ্য দ্বারা প্রভাবিত।কিন্তু পারসন্স বরেন আচরণ সম্পূর্ণ যুক্তিনিষ্ঠ বা অর্থনৈতিক স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত নয়।

ইতিবাচকতাবাদঃ  পারসন্স তার গ্রন্থের প্রথম অংশে Positivism Theory of Action সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তার মূল কাজ হলো Positivism এর তাত্ত্বিক বিরোধিতা করা।

আদর্শবাদঃ Idealism এর মূল উপাদান হলো মানুষের সমস্ত কর্মই যুক্তিহীন। কিন্তু পারসন্স বলেন মানুষের আচরণ যেমন বাস্তব নির্ভর তেমনি বিষয়ভিত্তিকও।

সর্বশেষ বলা যায় যদিও পারসন্স এর Action Theory এর কিছু সমালোচনা রয়েছে তারপরও সামাজিক সম্পর্কের আলোচনায় এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Comments

Popular posts from this blog

জনসংখ্যা সমস্যা কি? উন্নয়ণশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণসমুহ লিখ?

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ অলোচনা কর?

শিল্প বিপ্লব কি? সমাজবিজ্ঞান উদ্ভব ও বিকাশে শিল্প বিপ্লব ও ফরাসি বিপ্লবের ভূমিকা