অগাস্ট কোঁৎ এর ত্রয়ী স্তর সূত্রটি ব্যাখ্যা কর।
ভূমিকাঃ- অগাস্ট কোঁৎ একজন বিখ্যাত সমাজ দার্শনিক। তিনি সমাজদর্শনের জনক হিসেবে পরিচিত। অগাস্ট কোঁৎকে (Auguste Comte) সমাজদর্শনের জনক বলার কারণ হলো তার পূর্বে আর কোন দার্শনিক এত সুস্পষ্টভাবে সমাজবিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বিষয় ব্যাখ্যা করেননি। তার প্রতিটি আলোচনায় ছিলো সমাজবিজ্ঞানের অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রেরণা স্বরুপ।
অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) এর ত্রয়ী স্তরঃ অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) তাঁর সমাজদর্শনের আলোচনায় ত্রয়ী স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। এই ত্রয়ী স্তরের প্রতিটি স্তরই সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে।অগাস্ট কোঁতের ত্রয়ী স্তর সূত্র প্রধানত মানব বৃদ্ধি তথা মানব জ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অগাস্ট কোত সমাজবিজ্ঞান বলতে সব দিকের বিবেচনায় মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির বিকাশকে বুঝিয়েছেন।
অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) তার ত্রয়ী স্তরের অর্থগত ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন- “ত্রয়ী স্তর এর মূল বক্তব্য হচ্ছে এই যে, আমাদের প্রদান প্রধান ধারাগুলোর প্রত্যেকটা এবং জ্ঞানের প্রতিটি শাখা ধারাবাহিকভাবে তিনটি স্তরের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়ে থাকে।”
এভাবে অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) এর ত্রয়ী স্তর আলোচনায় দেখা যায় তার সমাজদর্শনে উল্লেখিত শেষ স্তরটি অর্থাৎ দৃষ্টবাদী স্তরটিই বেশি প্রয়োগযোগ্য। এখন প্রশ্ন, ত্রয়ী স্তর এর মধ্য অন্য দুটি বাদে কেন ৩য় টি অর্থাৎ দৃষ্টবাদী স্তর বেশি প্রয়োগযোগ্য তার বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করা হলো।
১। যুক্তির ব্যবহারঃ আমরা জানি যে, মানুষ হলো একটি বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন যৌনজীব। কারণ সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষের মাঝে যে গুণটি সংযুক্ত হয়েছে তা হলো বুদ্ধিবৃত্তি।
২। পর্যবেক্ষণঃ অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) তার ত্রয়ী স্তরীয় আলোচনায় দেখিয়েছেন যে, মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে সমাজের বিভিন্ন বিষয়টিকে যাচাই বাচাই করার জন্য কেবল মাত্র দৃষ্টিবাদী স্তরে এসেই পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতির ব্যবহার করে।
৩। বাস্তবভিত্তিক চিন্তা চেতনাঃ অগাস্ট কোঁত (Auguste Comte) উল্লেখ করেন, তার ত্রয়ী স্তর সূত্রের প্রথম দুই স্তরে মানুষের চিন্তাভাবনা অতীব বাস্তবভিত্তিক ছিলো। মানুষ ঐ সময়ে বা ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রভাবে প্রভাবিত ছিল।
৪। পারস্পরিক সম্পর্কঃ অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) এর ভাষ্যমতে এ স্তরেই মানুষ প্রথম নিজেরা নিজেদের মধ্যে এক পারস্পরিক সম্পর্কে সম্পর্কিত হয়। এ সময়ে মানুষ তার নিজের বিবেক বুদ্ধির আলোকে একে অন্যর সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।
৫। বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিস্তারঃ অগাস্ট কোঁৎ-এর মতে, দৃষ্টিবাদী স্তরে মানুষ চিন্তা-ভাবনায় কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের প্রভাবমুক্ত হয়ে বাস্তব ও পরীক্ষিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই স্তরেই বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পরীক্ষানিরীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সত্যকে আবিষ্কার করা সম্ভব হয়। ফলে সমাজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি ঘটে।
পরিশেষে বলা যায় যে, অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) এর ত্রয়ী স্তরের আলোচনা এবং কোনটি বেশি প্রয়োগযোগ্য সে সম্পর্কিত ব্যাখ্যার আলোকে একথা নিঃসন্দেহে সর্বাধিকার বিবেচনায় দৃষ্টিবাদী স্তরই অনেক এগিয়ে। কারণ এই স্তরে মানুষ কুসংস্কারমুক্ত হয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা, পর্যবেক্ষণ ও যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়, যা সমাজ উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি।



