Showing posts with label অগাস্ট কোঁৎ. Show all posts
Showing posts with label অগাস্ট কোঁৎ. Show all posts

অগাস্ট কোঁৎ এর ত্রয়ী স্তর সূত্র ব্যাখ্যা কর

অগাস্ট কোঁৎ এর ত্রয়ী স্তর সূত্রটি ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃঅগাস্ট কোঁৎ একজন বিখ্যাত সমাজ দার্শনিক। তিনি সমাজদর্শনের জনক হিসেবে পরিচিত। অগাস্ট কোঁৎকে (Auguste Comte) সমাজদর্শনের জনক বলার কারণ হলো তার পূর্বে আর কোন দার্শনিক এত সুস্পষ্টভাবে সমাজবিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বিষয় ব্যাখ্যা করেননি। তার প্রতিটি আলোচনায় ছিলো সমাজবিজ্ঞানের অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রেরণা স্বরুপ।

অগাস্ট কোঁৎ এর ত্রয়ী স্তর সূত্র ব্যাখ্যা কর


অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) এর ত্রয়ী স্তরঃ অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) তাঁর সমাজদর্শনের আলোচনায় ত্রয়ী স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। এই ত্রয়ী স্তরের প্রতিটি স্তরই সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে।অগাস্ট কোঁতের ত্রয়ী স্তর সূত্র প্রধানত মানব বৃদ্ধি তথা মানব জ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অগাস্ট কোত সমাজবিজ্ঞান বলতে সব দিকের বিবেচনায় মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির বিকাশকে বুঝিয়েছেন।

অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) তার ত্রয়ী স্তরের অর্থগত ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন- “ত্রয়ী স্তর এর মূল বক্তব্য হচ্ছে এই যে, আমাদের প্রদান প্রধান ধারাগুলোর প্রত্যেকটা এবং জ্ঞানের প্রতিটি শাখা ধারাবাহিকভাবে তিনটি স্তরের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়ে থাকে।”

এভাবে অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) এর ত্রয়ী স্তর আলোচনায় দেখা যায় তার সমাজদর্শনে উল্লেখিত শেষ স্তরটি অর্থাৎ দৃষ্টবাদী স্তরটিই বেশি প্রয়োগযোগ্য। এখন প্রশ্ন, ত্রয়ী স্তর এর মধ্য অন্য দুটি বাদে কেন ৩য় টি অর্থাৎ দৃষ্টবাদী স্তর বেশি প্রয়োগযোগ্য তার বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করা হলো।

১। যুক্তির ব্যবহারঃ আমরা জানি যে, মানুষ হলো একটি বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন যৌনজীব। কারণ সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষের মাঝে যে গুণটি সংযুক্ত হয়েছে তা হলো বুদ্ধিবৃত্তি।

২। পর্যবেক্ষণঃ অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) তার ত্রয়ী স্তরীয় আলোচনায় দেখিয়েছেন যে, মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে সমাজের বিভিন্ন বিষয়টিকে যাচাই বাচাই করার জন্য কেবল মাত্র দৃষ্টিবাদী স্তরে এসেই পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতির ব্যবহার করে।

৩। বাস্তবভিত্তিক চিন্তা চেতনাঃ অগাস্ট কোঁত (Auguste Comte) উল্লেখ করেন, তার ত্রয়ী স্তর সূত্রের প্রথম দুই স্তরে মানুষের চিন্তাভাবনা অতীব বাস্তবভিত্তিক ছিলো। মানুষ ঐ সময়ে বা ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রভাবে প্রভাবিত ছিল।

৪। পারস্পরিক সম্পর্কঃ অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) এর ভাষ্যমতে এ স্তরেই মানুষ প্রথম নিজেরা নিজেদের মধ্যে এক পারস্পরিক সম্পর্কে সম্পর্কিত হয়। এ সময়ে মানুষ তার নিজের বিবেক বুদ্ধির আলোকে একে অন্যর সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।

৫। বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিস্তারঃ অগাস্ট কোঁৎ-এর মতে, দৃষ্টিবাদী স্তরে মানুষ চিন্তা-ভাবনায় কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের প্রভাবমুক্ত হয়ে বাস্তব ও পরীক্ষিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই স্তরেই বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পরীক্ষানিরীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সত্যকে আবিষ্কার করা সম্ভব হয়। ফলে সমাজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি ঘটে।

পরিশেষে বলা যায় যে, অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) এর ত্রয়ী স্তরের আলোচনা এবং কোনটি বেশি প্রয়োগযোগ্য সে সম্পর্কিত ব্যাখ্যার আলোকে একথা নিঃসন্দেহে সর্বাধিকার বিবেচনায় দৃষ্টিবাদী স্তরই অনেক এগিয়ে। কারণ এই স্তরে মানুষ কুসংস্কারমুক্ত হয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা, পর্যবেক্ষণ ও যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়, যা সমাজ উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি।

প্রশ্নঃ অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) কে ছিলেন? অগাস্ট কোঁৎ কে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন?

অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) কে ছিলেন? অগাস্ট কোঁত কে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন?

ভূমিকাঃ- অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) এর পরিচয়ঃ সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজ সচেতন দার্শনিকদের চিন্তা-চেতনা ফসল। এই সমাজ সচেতন দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম হলেন সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte)। তার সমাজ সম্পর্কিত চিন্তা ও তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি তার মেধা দিয়ে সমাজবিজ্ঞানের মত একটি বিজ্ঞানকে স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে দাড় করান।
অগাস্ট কোঁত কে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন


অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte): অগাস্ট কোঁৎ (ওগ্যুস্ত কোঁত) ১৭৯৮ সালের ১৯শে জানুয়ারী মাসে ফ্রান্সের মোঁপেলিয়েরে মন্টোবলিয়ারে জম্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম ছিলো ইসিডোর অগাস্ট মেরি ফ্রাঙ্কোস এক্সেভিয়ার কোঁতে। তাঁর পিতা ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারী। অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) ছাত্র অবস্থায় খুবে মেধাবী ছিলেন। ১৮১৪ সালে তিনি ইকোল পলিটেকনিকে তিনি ভর্তি হন। নানা জটিলতায় তিনি তাঁর শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করতে পারেননি। ১৮১৭  সালে সেইন্ট সাইমনের সাথে পরিচিত হওয়ার পর থেকে অগাস্ট কোঁৎ এর চিন্তা জগৎ এর ব্যাপক পরিবর্তন আসে এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি  Positive Philosophy গ্রন্থটি রচনা করেন। যা ১৮৩০ সালে প্রকাশিত হয়।

অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) কে কেন সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়?

অথবা, কেন সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে অগাস্ট কোঁৎ (ওগ্যুস্ত কোঁত) কে  আখ্যায়িত করা হয়?
অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) কে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কারণ তিনি সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞানকে একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে তুলে ধরেন। অগাস্ট কোঁত ১৮৩৯ সালে সর্বপ্রথম Sociology শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন তাই তাকে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তাঁর চিন্তা চেতনা ও দর্শন সমাজবিজ্ঞানে এক বৈপল্লবিক পরিবর্তন আনয়ন করে।
সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে অগাস্ট কোঁৎ: যেসকল কারণে অগাস্ট কোঁৎ কে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয় তা নিম্নরুপ আলোচনা করা হলো-

 ১। বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার সূত্রপাতঃ অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) ছিলেন একজন ফরাসী দার্শনিক।অতীতে সমাজবিজ্ঞান ছিলো সমাজের বিজ্ঞান কিন্তু তখন এটি বিজ্ঞানসম্মত ছিলো না। অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞানকে একটি বিজ্ঞানসম্মত শাখা হিসেবে আলোচনা করেন।

২। Sociology শব্দ ব্যবহারঃ অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) সর্বপ্রথম Sociology শব্দ ব্যবহার করেন। ল্যাটিন শব্দ Socious ও গ্রীক শব্দ Logos এর সমন্বয়ে গঠিত হয় । Socious শব্দের অর্থ সমাজ ও Logos শব্দের অর্থ বিজ্ঞান। Sociology অর্থাৎ শব্দের অর্থ সমাজের বিজ্ঞান।

৩।গ্রন্থ রচনাঃ অগাষ্ট কোঁৎ সমাজবিজ্ঞান (Sociology) সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে অন্যতম গ্রন্থ হলো Positive philosophy ও Polity। এই গ্রন্থতে তিনি সমাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারনা আলোচনা করেন।

৪। নামকরণ প্রদানঃ সমাজবিজ্ঞানের সর্বপ্রথম নামকরণ করেন অগাস্ট কোঁৎ। তিনি সমাজবিজ্ঞানকে Science of Society বলেন । তিনি  এই নামকরণ করেন ১৮৩৯ সালে।

৫। Scietific method: অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) সমাজবিজ্ঞান উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ কে Scietific method দ্বারা ব্যাখ্যা করেন। এই method সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে গড়ে তোলেন।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় সর্বপ্রথম অগাস্ট কোঁত সমাজবিজ্ঞানকে একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে তেুলে ধরেন ও সমাজবিজ্ঞানকে প্রথম আধুনিক বিজ্ঞান হিসেবে গড়ে তোলেন । সমাজবিজ্ঞানে তার যে অবদান তা বিচার করে একথা বলা যায় যে অগাস্ট কোঁতই (Auguste Comte) সমাজবিজ্ঞানের জনক। তিনিই সমাজবিজ্ঞানকে প্রথম আধুনিক বিজ্ঞান হিসেবে গড়ে তোলেন । সমাজবিজ্ঞানে তার যে অবদান তা বিচার করে একথা বলা যায় যে অগাস্ট কোঁতই (Auguste Comte) সমাজবিজ্ঞানের জনক।

Auguste Comte অগাস্ট কোঁৎ এর দৃষ্টিবাদ কী? Positivism কী?

অগাস্ট কোঁৎ দৃষ্টবাদ কী? Positivism কী ও দৃষ্টিবাদের তাৎপর্য তুলে ধর

ভূমিকাঃ- অগাস্ট কোঁৎ একজন বিখ্যাত সমাজ দার্শনিক। তিনি সমাজদর্শনের জনক হিসেবে পরিচিত। অগাস্ট কোঁৎকে (Auguste Comte) সমাজদর্শনের জনক বলার কারণ হলো তার পূর্বে আর কোন দার্শনিক এত সুস্পষ্টভাবে সমাজবিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করেনি। অগাস্ট কোঁৎ তার সমাজ বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞানের এক নতুন শাখা, ভিত্তি ও দৃষ্টিকোন তৈরী করেন।
Auguste Comte অগাস্ট কোঁৎ এর দৃষ্টবাদ কী?


দৃষ্টবাদ (Positivism): অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) এর তাত্ত্বিক নীতিগুলোর মধ্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলো দৃষ্টিবাদ। তিনি বৈজ্ঞানিকভাবে এ নীতির ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন। তিনি প্রাকৃতিক নিয়মকে অপরিবর্তনীয় বলে অভিহিত করেছেন এবং পৃথিবীর যাবতীয় সামাজিক প্রপঞ্চের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে  Auguste Comte (অগাস্ট কোঁৎ) তাঁর দৃষ্টিবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।
দৃষ্টিবাদের উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমেএ আমরা কতকগুলি মৌলিক দিকের উল্লেখ করতে পারি। যথা-

  • দৃষ্টিবাদ (Positivism) কোন অতিপ্রাকৃত বিষয় নই বরং এটি বাস্তব প্রপঞ্চকে ব্যাখা করে।
  • এটি জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত।
  • দৃষ্টিবাদ (Positivism) পরিবর্তনশীল এবং Relative truth এর সাথে সম্পৃক্ত।
  • এটি চেতনা এবং চর্চার মাধ্যমে ঐক্যর উদ্ভব হতে পারে।
  • দৃষ্টিবাদ (Positivism) কোন কাল্পনিক বিষয় নয়। এটি বৈজ্ঞানিক।
  • পৃথিবীর অপরিবর্তনীয় নীতিসমূহকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জানা যায় ।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে দৃষ্টিবাদ (Positivism): অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) দৃষ্টিবাদকে একটি বিজ্ঞানসম্মত মতবাদ বলে মনে করেন। মানব সমাজের বস্তুগত, বুদ্দিগত ও নৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনি তার দৃষ্টিবাদি (Positivism) মতবাদ প্রণয়ন করেছেন। তার দৃষ্টিবাদকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।

(ক) বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম ও নীতি শাস্ত্রঃ অগাস্ট কোঁৎ কোন অতীন্দ্রীয় সত্তার মাধ্যেমে ধর্ম ও নীতিশাস্ত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করেননি। একটি বিজ্ঞানসম্মত ও হিতকর নীতির উপর তিনি জোর দিয়েছেন।

(খ) দৃষ্টিবাদী (Positivism) রাজনীতিঃ  অগাস্ট কোঁৎ যুদ্ধবিরোধী মনোভাব পোষণ করে তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতা ও এর ক্ষতিকর দিকের কথা বিবেচনা করেন। তাই তিনি তার দৃষ্টিবাদ রাজনীতিতে যুদ্ধ বিরোধী মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।

(গ) বিজ্ঞানসমূহের দর্শনঃ অগাস্ট কোঁৎ বিজ্ঞানে অনেক শাখা ও পদ্ধতির পরিবর্তে একটি মাত্র পদ্ধতি থাকার কথা বলেন।
তিনি একটি সূত্র দ্বারা বিজ্ঞানের সকল শাখাকে বেধে রাখার কথা বলেন।


দৃষ্টিবাদের তাৎপর্য ও মূল্যায়ন:

অগাস্ট কোঁতের দৃষ্টিবাদ একটি বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা সমাজকে বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করার পথ দেখায়। এটি বিজ্ঞান এবং দর্শনের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করে। সমাজবিজ্ঞানকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও পদ্ধতিগত শাস্ত্র হিসেবে দাঁড় করাতে দৃষ্টিবাদ অনস্বীকার্য ভূমিকা রেখেছে।

তবে, দৃষ্টিবাদ নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। অনেকে মনে করেন, মানব সমাজ এতটাই জটিল ও পরিবর্তনশীল যে একে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তবুও, দৃষ্টিবাদ সমাজবিজ্ঞানকে একটি গবেষণাভিত্তিক শাস্ত্রে রূপান্তরিত করতে অমূল্য অবদান রেখেছে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, দৃষ্টিবাদি নীতির মাধ্যমে তার নীতি মৌলিক চিন্তার অভিব্যক্তি ঘটেছে। তিনি মানুষকে যে নৈতিকতাবোধে উদ্ধুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন এবং পৃথিবীকেএকটি শান্তিময় উদ্যানে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। চিন্তাজগৎ এর ইতিহাস এক অন্যন্য আদর্শ হিসেবে থাকবে।

সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশে অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) এর অবদান আলোচনা কর।

সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ অগাষ্ট কোঁৎ 

ভূমিকাঃ- মানবসভ্যতার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে যে কয়জন মনীষী অবদান রেখেছেন তার মধ্য অন্যতম হলেন অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) । তিনিই প্রথম সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে অবদান রাখেন। তিনিই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন চিন্তাকে একটি সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেন। তাই তাকে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। যতদিন সমাজবিজ্ঞান থাকবে ততদিন অগাষ্ট কোঁৎ এর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ অগাস্ট কোঁৎ


সমাজবিজ্ঞানের  উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশঃ অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশ অগাষ্ট কোঁৎ এর অবদানগুলি উল্লেখ করা হলো-
১। বিজ্ঞান হিসেবে চিহিৃতঃ সমাজে মানুষের সমস্যার সমাধান ও ক্রমবিকাশের জন্য সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি। অগাষ্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি উপলদ্ধি করেন সমাজবিজ্ঞান একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান। যা মানুষের সমস্যা বিশ্লেষণ, সমাধান, সমাজ সংগঠন সম্পর্কিত গবেষণা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে করে থাকেন। তাই সমাজবিজ্ঞানকে অগাষ্ট কোঁৎ প্রথম বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
২।  Sociology শব্দ চয়নঃ সমাজবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Sociology. যা ল্যাটিন শব্দ Socious গ্রিক  শব্দ Logos এর সমন্বয়ে গঠিত। অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) সমাজবিজ্ঞানের জন্য সর্বপ্রথম Sociology শব্দটি চয়ন করেন ।
৩। প্রকৃত জনকঃ অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞানকে একটি সুসংগঠিত বিজ্ঞান হিসেবে গড়ে তোলেন । তিনিই সর্বপ্রথম ‍sociology  শব্দটি চয়ন করেন।যা অগাষ্ট কোঁৎ এর আগে কেউ সমাজবিজ্ঞানকে একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান স্বৃীকতি দেননি । তাই অগাষ্ট কোঁৎ কে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
৪। নামকরণঃ সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞান হিসেবে একদিনে গড়ে উঠেনি। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীর কঠোর পরিশ্রমে সমাজবিজ্ঞান হিসেবে গড়ে উঠেছে। সমাজবিজ্ঞান হলো science ofsociety  এই বিজ্ঞানের উৎপত্তি ১৮৩৯ সালে। অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Positive Philosophy ও Polity থেকে সমাজ বিশ্লেষণে Positive Method তুলে ধরেন। অগাষ্ট কোঁৎ এর এই গ্রন্থ গুলো সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ আবদান রাখে।
৫। দৃষ্টিবাদঃ দৃষ্টবাদ সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে অগাষ্ট কোঁতের একটি বিশেষ অবদান। সমাজ বিশ্লেষণে তিনি বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন। দৃষ্টমান সকল বিষয়  Posiitive দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করার নামই দৃষ্টবাদ। ১৮৩০ থেকে১৮৪২ সালের মধ্যে রচিত তাঁর Positive Philosophy গ্রন্থের প্রসরের মধ্যে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন। সমাজ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে দৃষ্টবাদ এর মূল লক্ষ হলো মানবকল্যাণ সাধন করা। অগাষ্ট কোঁৎ তার যুগ পযন্ত মমত্ব বিকাশের একটি ইতিহাস তৈরী করেন।তিনি ইতিহাসে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাকে তিনি দৃষ্টবাদ বলেছেন। তার মতে দৃষ্টবাদ হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মত মতবাদ। তিনি বলেছিলেন দৃষ্টবাদ শাশ্বত সত্য ও প্রকৃত সত্যর সাথে সম্পর্কযুক্ত।
৬। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উদ্ভাবনঃ অগাষ্ট কোঁত (Auguste Comte) সমাজবিজ্ঞানকে গবেষণার জন্য সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। অগাষ্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেন। তাঁর বৈজ্ঞানিক অনুশীলন পদ্ধতি হচ্ছে পর্যালোচনা। সমাজবিজ্ঞানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার সর্বপ্রথম অগাষ্ট কোঁৎই করেন।
৭। ত্রয়স্তরের সূত্রঃ অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) সমাজবিজ্ঞান বিকাশে ত্রয়স্তরের সূত্র প্রদান করেছেন। এই ত্রয়স্তরের মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞানের ত্রয়স্তর বিশ্লেষণ করা হয়। এই ত্রয়স্তর সূত্রের মূল কথা হলো আমাদের জীবন প্রধান তিনটি স্তর এর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়ে থাকে যার প্রতিটি শাখা ধারাবহিকভাবে অতিবাহিত হয়। স্তর তিনটি হলো-
(ক) ধর্মতত্ত্ব (খ) আধিবিদ্যা (গ) দৃষ্টবাদ
৮। সামাজিক স্থিতিশীলতাঃ সমাজিক গতিশীলতার প্রবক্তা অগাষ্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম সামাজিক স্থিতিশীলতা ও গতিশীলতার ধারণা দেন। তাঁর মতে, সামাজিক স্থিতিশীলতা সমাজের গঠন ও কাঠামোর সাথে জড়িত অন্যদিকে সামাজিক গতিশীলতা মানব সমাজের উন্নতি ও প্রগতির সাথে সম্পর্কিত। তাঁর মতে সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সামাজিক স্থিতিশীলতা একান্তভাবে কাম্য।
৯। বিজ্ঞানের উচ্চক্রমঃ অগাষ্ট কোঁতের (Auguste Comte) বিজ্ঞানের মধ্যে উচ্চ স্তর হচ্ছে সমাজবিজ্ঞান। কেননা বিজ্ঞানসমুহের মধ্যে সর্বনিম্ন হচ্চে অংকশাস্ত্র, তারপর জ্যোতিবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জীববিদ্যা। সবার উপরে সমাজবিজ্ঞান। অগাষ্ট কোঁৎ এর এই উচ্চক্রম তত্ত্ব আবিষ্কার সমাজবিজ্ঞানকে মর্যাদার উচ্চ আসনে নিয়ে যায়।
১০। সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রবক্তাঃ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রবক্তা হলো অগাষ্ট কেঁৎ। তিনি সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার দিক নির্দেশনা প্রবর্তন করেন। তাঁর মতে, সামাজিক ঘটনাকে বিষয়গতভাবে বিশ্লেষণের আবশ্রকতা রয়েছে।
১১। স্বাবলম্বী হওয়ার প্রেরণাঃ অগাষ্ট কোঁৎ সমাজবিজ্ঞানের বিকাশকে উন্নতর পর্যায়ে নিয়ে যাবার জন্য সমাজ ও মানুষের স্বাবলম্বী হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছেন। তাঁর মতে, দৈবশক্তির উপর বিশ্বাস করে কোন সমাজ সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে না । তাই সমাজকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, অগাষ্ট কোঁৎ এর সমাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সমাজবিজ্ঞানকে তিনি নির্দিষ্ট একটা স্থানে দাড় করিয়েছেন । সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে অগাষ্ট কোঁত এর অবদান অপরিসীম।