সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশে অগাষ্ট কোঁতের অবদান
অথবা,সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে সমাজবিজ্ঞানে অগাষ্ট কোঁতের অবদান।
প্রিলিমিনারী টু মাস্টার্স> সমাজবিজ্ঞান
➣ভূমিকাঃ মানবসভ্যতার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে যে কয়জন মনীষী অবদান রেখেছেন তার মধ্য অন্যতম হলেন অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) । তিনিই প্রথম সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে অবদান রাখেন। তিনিই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন চিন্তাকে একটি সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেন। তাই তাকে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। যতদিন সমাজবিজ্ঞান থাকবে ততদিন অগাষ্ট কোঁৎ এর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে অগাষ্ট কোঁৎ এর ভূমিকাঃ অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) সমাজবিজ্ঞানের জনক। সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে অগাষ্ট কোঁৎ এর অবদান উল্লেখ করা হলো-
১। বিজ্ঞান হিসেবে চিহিৃতঃ সমাজে মানুষের সমস্যার সমাধান ও ক্রমবিকাশের জন্য সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি। অগাষ্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি উপলদ্ধি করেন সমাজবিজ্ঞান একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান। যা মানুষের সমস্যা বিশ্লেষণ, সমাধান, সমাজ সংগঠন সম্পর্কিত গবেষণা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে করে থাকেন। তাই সমাজবিজ্ঞানকে অগাষ্ট কোঁৎ প্রথম বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
২। Sociology শব্দ চয়নঃ সমাজবিজ্ঞান শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ Sociology. এই Sociology শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Socious গ্রিক শব্দ Logos এর সমন্বয়ে গঠিত। অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) সমাজবিজ্ঞানের জন্য সর্বপ্রথম Sociology শব্দটি চয়ন করেন ।
৩। প্রকৃত জনক হিসেবেঃ অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞানের একটি সুসংগঠিত বিজ্ঞান হিসেবে গড়ে তোলেন । তিনিই সর্বপ্রথম sociology শব্দটি চয়ন করেন। অগাষ্ট কোঁৎ এর আগে কেউ সমাজবিজ্ঞানকে একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান স্বৃীকতি দেননি । তাই অগাষ্ট কোঁৎ কে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
৪। নামকরণঃ সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞান হিসেবে একদিনে গড়ে উঠেনি। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীর কঠোর পরিশ্রমে সমাজবিজ্ঞান হিসেবে গড়ে উঠেছে। সমাজবিজ্ঞান হলো science ofsociety এই বিজ্ঞানের উৎপত্তি ১৮৩৯ সালে। অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Positive Philosophy ও Polity থেকে সমাজ বিশ্লেষণে Positive Method তুলে ধরেন। অগাষ্ট কোঁৎ এর এই গ্রন্থ গুলো সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ আবদান রাখে।
৫। দৃষ্টবাদঃ সমাজবিজ্ঞানে অগাষ্ট কোঁৎ এর একটি বিশেষ অবদান হলো দৃষ্টবাদ। সমাজ বিশ্লেষণে তিনি বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেন। দৃষ্টমান সকল বিষয় Posiitive দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করার নামই দৃষ্টবাদ। ১৮৩০ থেকে১৮৪২ সালের মধ্যে রচিত তাঁর Positive Philosophy গ্রন্থের প্রসরের মধ্যে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন। সমাজ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে দৃষ্টবাদ এর মূল লক্ষ হলো মানবকল্যাণ সাধন করা। অগাষ্ট কোঁৎ তার যুগ পযন্ত মমত্ব বিকাশের একটি ইতিহাস তৈরী করেন।তিনি ইতিহাসে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাকে তিনি দৃষ্টবাদ বলেছেন। তার মতে দৃষ্টবাদ হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মত মতবাদ। তিনি বলেছিলেন দৃষ্টবাদ শাশ্বত সত্য ও প্রকৃত সত্যর সাথে সম্পর্কযুক্ত।
৬। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রণেতাঃ অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) সমাজবিজ্ঞানকে গবেষণার জন্য সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। অগাষ্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করেন। তাঁর বৈজ্ঞানিক অনুশীলন পদ্ধতি হচ্ছে পর্যালোচনা। সমাজবিজ্ঞানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার সর্বপ্রথম অগাষ্ট কোঁৎই করেন।
৭। ত্রয়স্তরের সূত্রঃ অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) সমাজবিজ্ঞান বিকাশে ত্রয়স্তরের সূত্র দিয়েছেন। এই ত্রয়স্তর এর মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞানের ত্রয়স্তর বিশ্লেষণ করা হয়। এই ত্রয়স্তর সূত্রের মূল কথা হলো আমাদের জীবন প্রধান তিনটি স্তর এর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়ে থাকে যার প্রতিটি শাখা ধারাবহিকভাবে অতিবাহিত হয়। স্তর তিনটি হলো-
(ক) ধর্মতত্ত্ব (খ) আধিবিদ্যা (গ) দৃষ্টবাদ
৮। সামাজিক স্থিতিশীলতাঃ সমাজিক গতিশীলতার প্রবক্তা অগাষ্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম সামাজিক স্থিতিশীলতা ও গতিশীলতার ধারণা দেন। তাঁর মতে, সামাজিক স্থিতিশীলতা সমাজের গঠন ও কাঠামোর সাথে জড়িত অন্যদিকে সামাজিক গতিশীলতা মানব সমাজের উন্নতি ও প্রগতির সাথে সম্পর্কিত। তাঁর মতে সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সামাজিক স্থিতিশীলতা একান্তভাবে কাম্য।
৯। বিজ্ঞানের উচ্চক্রমঃ অগাষ্ট কোঁৎ (Auguste Comte) এর মতে বিজ্ঞানের মধ্যে উচ্চ স্তর হচ্ছে সমাজবিজ্ঞান। কেননা বিজ্ঞানসমুহের মধ্যে সর্বনিম্ন হচ্চে অংকশাস্ত্র, তারপর জ্যোতিবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জীববিদ্যা। সবার উপরে সমাজবিজ্ঞান। অগাষ্ট কোঁৎ এর এই উচ্চক্রম তত্ত্ব আবিষ্কার সমাজবিজ্ঞানকে মর্যাদার উচ্চ আসনে নিয়ে যায়।
১০। সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রবক্তাঃ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রবক্তা হলো অগাষ্ট কেঁৎ। তিনি সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার দিক নির্দেশনা প্রবর্তন করেন। তাঁর মতে, সামাজিক ঘটনাকে বিষয়গতভাবে বিশ্লেষণের আবশ্রকতা রয়েছে।
১১। স্বাবলম্বী হওয়ার প্রেরণাঃ অগাষ্ট কোঁৎ সমাজবিজ্ঞানের বিকাশকে উন্নতর পর্যায়ে নিয়ে যাবার জন্য সমাজ ও মানুষের স্বাবলম্বী হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছেন। তাঁর মতে, দৈবশক্তির উপর বিশ্বাস করে কোন সমাজ সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে না । তাই সমাজকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, অগাষ্ট কোঁৎ এর সমাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সমাজবিজ্ঞানকে তিনি নির্দিষ্ট একটা স্থানে দাড় করিয়েছেন । সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে অগাষ্ট কোঁত এর অবদান অপরিসীম।