কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কার্যাবলি উল্লেখ কর

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কার্যাবলি উল্লেখ কর

ভূমিকাঃরাষ্ট্র হলো একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। মানুষ তাদের নিজেদের প্রয়োজনে রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছে। রাষ্ট্র মানুষের বহুবিদ প্রয়োজন মিটানোর জন্য কাজ করছে। রাষ্ট্রের কাজ হলো অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং বিদেশি শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করে দেশের সর্বভৌমত্ব প্রতিহত করা অনেক উন্নয়নশীল দেশে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে গুরুত্ব অনেক।
কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কার্যাবলি উল্লেখ কর


কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কার্যাবলি/কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কাজসমূহ


১। জনকল্যাণ সাধনঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান কাজ জনকল্যাণ সাধন করা। এই রাষ্ট্র, জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বশেষে সকলের কল্যাণার্থে কাজ করে। এ ধরনের কার্যাবলি হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান ইত্যাদি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র এগুলোর ব্যবস্থা করে।

২। বৈষম্য দূরীকরণঃ বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার পুঁজিবাদের প্রভাব অপরিসীম। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার কারণে অধিকাংশ সম্পদ ধনীদের হাতে কুক্ষিগত হয়। ফলে ধনী ও দারিদ্র্যর মধ্য বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ও ধনীদের উপর অধিক করারোপ করে।

৩। পরিকল্পনা প্রণয়নঃ পরিকল্পনা প্রণয়ন জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে অন্যতম একটি কাজ। বিশেষ করে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়নে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

৪। জীবনযাত্রার উন্নয়নঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ  হলো নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে উৎপাদন বৃদ্ধি, দ্রব্যর মান নিয়ন্ত্রণ, মূল্য নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ ও সুষ্ঠু বন্টন ইত্যাদি ব্যবস্থা করা।

৫। নিরাপত্তা বিধানঃ নাগরিক জীবনের নিরাপত্তার দ্বারা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করছে। রোগ, ক্ষুধা, দারিদ্র‌্য দুরীকরণ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব।দেশের অভ্যন্তরে ক্ষুধা, দারিদ্র‌্য ও বিশৃঙ্খলা থাকলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

৬। শিক্ষা বিস্তারঃ শিক্ষা বিস্তার কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের একটি বিশেষ কাজ।শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না। অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কবল থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে।

৭। শিল্প ও বাণিজ্য সম্পর্কঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বিশেষ পূর্বশর্ত হলো শিল্প ও বাণিজ্যর উন্নয়ন। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ এর লক্ষ্যে কাজ করে। শিল্প ও বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হলে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।

৮। পরিবেশ সংরক্ষণঃ একবিংশ শতাব্দিতে পরিবেশ রক্ষা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বন সংরক্ষণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করে।

৯। নারী ও শিশু কল্যাণঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, মাতৃত্বকালীন ছুটি, শিশু শিক্ষা ও পুষ্টি উন্নয়নে কাজ করে।

১০। বেকারত্ব দূরীকরণঃ বেকার সমস্যা নিরসনে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি, শিল্প উদ্যোগে সহায়তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহ প্রদান করে থাকে।

পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপটে একটি আধুনিক রাষ্ট্র উল্লেখিত মৌলিক ও ঐচ্ছিক কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অগ্রগতির সাথে সাথে একটি আধুনিক রাষ্ট্র উল্লেখিত কার্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমে উন্নতির চরম শিখরে আহরোণ করছে। গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধকে ভিত্তি করে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সমাজে সমতা, ন্যায়বিচার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। একটি উন্নত, মানবিক ও বাসযোগ্য সমাজ গঠনে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অবদান অনস্বীকার্য

No comments:

Post a Comment