Showing posts with label ম্যাক্স ওয়েবার. Show all posts
Showing posts with label ম্যাক্স ওয়েবার. Show all posts

Max Weber ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব, সমালোচনা ও মূল্যায়ন

ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব মূল্যায়ন কর।

ভূমিকাঃ- Max Weber ম্যাক্স ওয়েবার সমাজ, সমাজবিজ্ঞান  এবং তৎসংশ্লিষ্ট আলোচনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো “আমলাতন্ত্র”। আমলাতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে তিনি সমাধিক পরিচিত।

ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব, সমালোচনা ও মূল্যায়ন


আমলাতন্ত্রঃ  সমাজতাত্ত্বিকভাবে প্রথম আমলাতন্ত্র সম্পর্কিত আলোচনার সূত্রপাত করেন ওয়েবার ।ম্যাক্স ওয়েবার তাঁর ‘Economy Society নামক গ্রন্থে আমলাতন্ত্রের আধুনিক সমাজতত্ত্ব আলোচনার সূত্রপাত হয় এবং ‘Essays or sociology’ নামক গ্রন্থে তিনি আমলাতন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

সমাজতাত্ত্বিকঃ সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম একটি আলোচ্য বিষয় হলো সমাজতাত্ত্বিক মতবাদ। সমাজতাত্ত্বিক মতবাদের মধ্যে সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা নীতি, তত্ত্ব, প্রত্যয় এবং সাধারণীকরণ সম্পর্কিত বিচার বিশ্লেষণ অন্তর্ভূক্ত। সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।

রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বঃ সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার এক বিশাল অংশ হয়ে আছে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব। সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের উদ্ভব, বিকাশ, বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের সামাজিক পটভূমি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং এদের সাথে সমাজে বসবাসকারী মানুসের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।

আইনের সমাজতত্ত্বঃ আইনের সমাজতত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন সামাজিক আইন, আইনের উৎস, সমাজে আইনের প্রভাব ও কার্যকারিতা সমাজে বসবাসরত মানুষের আইনগত অধিকার ও কর্তব্য ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে থাকে।

Max Weber (ম্যাক্স ওয়েবার) আমলাতন্ত্রকে একটি আদর্শ নমুনার মাধ্যমে আধুনিকালের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ম্যাক্স ওয়েবারের (Max Weber) মতে- “আমলাতন্ত্র এমন একটি সংগঠন যার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম রয়েছে।” এটি একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয় এবয় সেখানে ক্ষমতা ব্যবহারের নির্দিষ্ট পর্যায়ক্রমবিশিষ্ট একটি কাঠামো আছে, যার অধীনস্ত কর্মরত সকল কর্মচারীই স্থায়ীভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রত্যেক কর্মচারীর নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। অর্থাৎ প্রশাসনের বিভিন্নধাপে বিভিন্ন কর্মকর্তা যারা প্রশাসনের নীতি নির্ধারণের কাজ বাস্তবায়নের জন্য কর্মতৎপর থাকে তাদেরকে বলা হয় আমলা আর কর্মতৎপরতার সামাজিক ব্যবস্থাকে বলা হয় আমলাতন্ত্র।

আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য

  • ওয়েবার আমলাতন্ত্রের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছেন, যেমন:
  • প্রতিটি আমলার নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারিত থাকে।
  • উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একটি সুস্পষ্ট আদেশের শৃঙ্খলা বিরাজ করে।
  • প্রশাসনিক কাজ নিয়মিত এবং নীতিমালার ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়।
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কাজের ক্ষেত্রে আবেগ নয়, যুক্তি ও নিয়মই মুখ্য।
  • আমলারা নিয়োগ পান শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে, পারিবারিক বা রাজনৈতিক পরিচয়ের নয়।
  • আমলারা পেশাদার কর্মচারী, যারা দীর্ঘমেয়াদী ও নিয়মিতভাবে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন।

ওয়েবারের বিশ্লেষণের গুরুত্ব

ওয়েবারের আমলাতন্ত্র বিশ্লেষণ আধুনিক রাষ্ট্রের কাঠামোকে বোঝার জন্য একটি মাইলফলক। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে আমলাতন্ত্র কার্যকরভাবে প্রশাসন পরিচালনায় সহায়তা করে এবং সামাজিক সংগঠনের জটিলতা মোকাবিলায় কাঠামোগত সমাধান দেয়।

সমালোচনা ও মূল্যায়ন

যদিও ওয়েবারের আমলাতন্ত্র মডেল কার্যকারিতার দিক থেকে প্রশংসিত, তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন:

  • অতিরিক্ত নিয়ম-কানুনের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
  • মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব এবং যান্ত্রিকতা সৃষ্টি হয়।
  • উদ্ভাবনী চিন্তার জায়গায় একধরনের স্থবিরতা বা রুটিন মনোভাব দেখা যায়।

অনেকে একে “লাল ফিতার শাসন” হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন, যেখানে আমলারা নিয়মে এতটাই বন্দী হয়ে পড়েন যে মানবিক বিবেচনা কিংবা নতুন চিন্তার জায়গা কমে যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, একজন মানুষ তাঁর অসংখ্য সৃষ্টি থাকলেও যেকোন একটি থাকে তাঁর পরিচিত মূখ্য উপাদান হিসেবে। আর ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) এর ক্ষেত্রে পরিচিতির সেই মূখ্য উপাদানের ভূমিকা পালনকারী বিষয় ছিল আমলাতন্ত্র যার কারণে তাকে আমলাতন্ত্রে জনক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

ম্যাক্স ওয়েবারের (Max Weber) ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ

 ম্যাক্স ওয়েবারের (Max Weber) ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব  

ভূমিকাঃ- ম্যাক্স ওয়েবার ছিলেন একজন সমাজবিজ্ঞানী। সমাজবিজ্ঞানের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সম্পর্কে আলোচনা ম্রাক্স ওয়েবারের এক অমর সৃষ্টি ।সমাজবিজ্ঞানের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব হলো দুটি প্রত্যয়। ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নিয়ে অনেকের মধ্য বিভ্রান্তি রয়েছে। এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্যই সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রত্যয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।

ম্যাক্স ওয়েবার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব


ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব (Power and Authority):  Max Weber এর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব (Power and Authority) হলো দুটি মৌলিক প্রত্যয়। নিম্নে এ দুটি প্রত্যয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হলো।
ক্ষমতা (Power): ক্ষমতার ইংরেজি শব্দ Power. ক্ষমতা বলতে বোঝায় মানুষের আচার ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামর্থ্যকে । অর্থাৎ ক্ষমতা হলো, একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কীভাবে অন্য ব্যক্তিকে তার ইচ্ছানুযায়ী কিছু করাতে সক্ষম হয় চাইলেও বা না চাইলেও। অর্থাৎ, ক্ষমতা হলো অন্যের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা।

অধ্যাপক ফ্রেডারিক বলেন-“ক্ষমতা হচ্ছে এক প্রকার মানবীয় সম্পর্ক”

 সমাজবিজ্ঞানী D.D. Raphal এর মতে- “ক্ষমতা বলতে সাধারণত শক্তি দক্ষতাকে বোঝায়।তিনি আরও বলেন সামাজিক দিক থেকে বিচার করলে ক্ষমতা হলো অন্যান্যদের নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করানোর ক্ষমতা।

ওয়েবারের মতে, ক্ষমতা সবসময় একটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে, যেখানে একটি পক্ষ অন্য পক্ষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। তবে, এই প্রভাব সবসময় গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। তাই ক্ষমতা আর কর্তৃত্ব এক জিনিস নয়।

কর্তৃত্ব (Authority): আদেশ করার ক্ষমতা এবং সমাজস্থ বহিবর্গের সহজ স্বাভাবিক স্বীকৃতি এউ দুই উপাদানের সম্মিলনে যথার্থ কর্তৃত্বের সৃষ্টি হয়। কর্তৃত্বের সাথে বৈধতা বিষয়টি জড়িত।
আদেশ দান করার এবং আদেশের প্রতি আনুগত্য আদায় করার ক্ষতার অধিকারকে কর্তৃত্ব (Authority) বলা হয়

আলফ্রেড ডি -গ্রফিয়া এর মতে “কর্তৃত্ব বলতে বৈধ ক্ষমতাকে বুঝায়”
ওয়েবার বলেন, কর্তৃত্ব সবসময় একটি সামাজিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে বিদ্যমান থাকে এবং এটি শুধু আদেশদানের অধিকার নয়, বরং আদেশ পালনের সামাজিক স্বীকৃতিও।

কর্তৃত্বের প্রকারভেদঃ ম্যাক্স ওয়েবারের (Max Weber) তিন ধরনের কর্তৃত্বের কথা বলেছেন। যথা-
(ক) যৌক্তিক কর্তৃত্বঃ  যে কর্তৃত্বে আদেশ বৃদ্ধিগ্রাহ্য, আইনসম্মত এবং জনগণ সহজভাবে মেনে নেয় সে কর্তৃত্বকে যৌক্তিক বলে।

(খ) ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্বঃ যে ধরনের কর্তৃত্বে ব্যক্তি জম্মসূত্রে ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার লাভ করে তাকে ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্ব বলে।

(গ) তন্দ্রজালিক কর্তৃত্বঃ যে ধরনের কর্তৃত্বে ব্যক্তি নিজস্ব গুণাবলি বীরত্ব ও চারিত্রিক দৃঢ়তা দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয় তাকে তন্দ্রজালিক কর্তৃত্ব বলে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ম্যাক্স ওয়েবারের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ধারণাটি আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। ম্যাক্স ওয়েবার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা সম্পর্কে যে বিশ্লেষণ প্রদান করেছেন তা আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। তার সংজ্ঞা, শ্রেণিবিন্যাস ও বিশ্লেষণ সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং প্রশাসনিক কাঠামো বিশ্লেষণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত। ম্যাক্স ওয়েবার সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে যে অবদান রেখে গেছেন তা  সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে। Max Weber এর দৃষ্টিতে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব হলো সমাজবিজ্ঞানের দুটি মৌল প্রত্যয় আর কর্তৃত্ব হলো প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা। 

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের কৃতিত্ব পর্যালোচনা

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের  অবদান আলোচনা কর

ভূমিকাঃ- সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের এর অবদান অপরিসীম। যুগে যুগে যে কয়জন সমাজবিজ্ঞানী সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে অবদান রেখেছেন তার মধ্য ম্যাক্স ওয়েবার অন্যতম। তিনি সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতি, স্তরবিন্যাস, সামাজিক ক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন । তাঁর এসব অবদান সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের কৃতিত্ব পর্যালোচনা


সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের কৃতিত্ব বা অবদান:-

ম্যাক্স ওয়েবার ছিলেন একজন সমাজবিজ্ঞানী। সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নিম্নে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবার এর অবদান আলোচনা করা হলো-

১। গ্রন্থাবলি রচনাঃ ম্যাক্স ওয়েবার সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। এসব গ্রন্থসমূহ সমাজবিজ্ঞানের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হলো-
  •  The Religion of India.
  • The Religion of China.
  • Economy and Society.
  • Essays on Sociology.
২। তাত্ত্বিক অবদানঃ Max Weber সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যেসব অবদান রেখেছেন তার মধ্য অন্যতম হলো তাত্ত্বিক । তিনি বলেন সমাজকে সঠিকভাবে জানতে হলে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সমাজবিজ্ঞান বিকাশে তিনি অনেক মতবাদ প্রদান করেন।

৩। সামাজিক ক্রিয়াঃ ম্যাক্স ওয়েবারের সমাজবিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো সামাজিক ক্রিয়া। তিনি সামাজিক বিজ্ঞানকে সামাজিক ক্রিয়ার বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি ব্যক্তিকে মূখ্য বিষয় হিসেবে সমাজকে বিশ্লেষণ করেন। তিনি মনে করেন একটি সমাজকে বিশ্লেষণ করতে হলে তার কাঠামোর বদলে ব্যক্তিকে মূখ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

৪। আদর্শ নমুনাঃ আদর্শ নমুনা বলতে বোঝায় এমন ধরনের তথ্য বা নমুনা যা পরবর্তী গবেষণায় গবেষকরা অনুসরণ করেন। ম্যাক্স ওয়েবারের অন্যতম অবদান হলো আদর্শ নমুনা। তাঁর মতে সমাজ হলো একটি আদর্শ নমুনা। সমাজকে নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন।

৫। পুঁজিবাদ বিকাশঃ পুঁজিবাদ বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবার এর অবদান অতুলনীয় । তিনি ইউরোপের পুঁজিবাদ বিকাশে সহায়তা করেন। তিনি প্রমাণ করেন ধর্মীয় নীতিমালা ও মূল্যবোধ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করে।

৬। ক্ষমতা ও কর্তৃত্বঃ ম্যাক্স ওয়েবার এর এক অনন্য সৃষ্টি ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব। তিনি তিন ধরনের কর্তৃত্বের কথা বলেছেন। যথাঃ
  • যৌক্তিক কর্তৃত্ব
  • ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্ব
  • ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্ব
(ক) যৌক্তিক কর্তৃত্বঃ যে কর্তৃত্বের আদেশ আইনসম্মত এবং জনগণ সহজভাবে মেনে নেয় সে কর্তৃত্বকে যৌক্তিক কর্তৃত্ব বলে।
(খ) ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্বঃ যে ধরনের কর্তৃত্বে ব্যবক্তি জম্মসূত্রে ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার লাভ করে তাকে ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্ব বলে।
(গ) ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্বঃ যে ধরনের কর্তৃত্বে ব্যক্তি নিজস্ব গুণাবলি ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দৃঢ় সে ধরনের কর্তৃত্বকে ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্ব বলে।

৭। আমলাতন্ত্রঃ ম্যাক্স ওয়েবার আধুনিক আমলাতন্ত্র ধারণাটি ব্যাখ্যা করেন। আমলাতন্ত্র সম্পর্কে একাডেমিক আলোচনার সূত্রপাত করেন। আমলাতন্ত্র প্রত্যেক সংগঠনে অপরিহার্য বলেই ওয়েবার মনে করেন। তিনি মনে করেন সুনির্দষ্ট নিয়ম-কানুনের উপর ভিত্তি করে আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি আমলাতন্ত্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। যথা- (ক) পদসোপান, (খ)বিশেষীকরণ, (গ) শ্রমবিভাগ, (ঘ) নিরপেক্ষতা, (ঙ) অজ্ঞতনামা থাকা ও (চ) পদোন্নতির সুষ্ঠু ব্যবস্থা।

৮। সামাজিক স্তরবিন্যাসঃ ম্যাক্স ওয়েবার সমাজকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করেন। তিনি সমাজকে অর্থনীতি, ক্ষমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে ভাগ করেছেন।

পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবার যে অবদান রেখেছেন তা সমাজবিজ্ঞানের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। তিনি পুঁজিবাদ, স্তরবিন্যাস, আমলাতন্ত্র সম্পর্কে যে ধারনা দেন তা সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে সহায়তা করে। সব মিলে বলা যায় সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের অবদান অপরিসীম।

ম্যাক্স ওয়েবারের আদর্শ নমুনা কী? আদর্শ নমুনার বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ।

ম্যাক্স ওয়েবারের আদর্শ নমুনা কী? আদর্শ নমুনার বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ।

ভূমিকাঃ- সমাজবিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে ম্যাক্স ওয়েবারের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সমাজতত্ত্বে আদর্শ নমুনা ধারণাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হিসেবে ম্যাক্স ওয়েবারই প্রথম ব্যক্ত করেন। তিনি সমাজ অধ্যয়নে আদর্শ নমুনাকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।

ম্যাক্স ওয়েবারের আদর্শ নমুনা কী?

আদর্শ নমুনা (Ideal Type): সাধারণভাবে বলা যায়, আদর্শ নমুনা এমন একটি পদ্ধতি যা সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে তুলনামূলক আলোচনার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। বিশেষত ঐতিহাসিক ঘটনা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আদর্শ নমুনা গুরুত্রপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আদর্শ নমুনা একটি মডেল বা নমুনা। আদর্শ নমুনা কোনো বিষয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো সহজভাবে তুলে ধরে যার মাধ্যমে উক্ত বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সাধারণ মানচিত্র অঙ্কন করা যায়।
ম্যাক্স ওয়েবারের (Max Weber) মতে, সামাজিক কোন ঘটনাকে ব্যাখ্যামূলক আচরণ বা অনুসন্ধান করতে হলে প্রথমে সেই ঘটনার বৈশিষ্ট্যগুলোকে চিহিৃত করতে হবে এবংমানসিক রুপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। এরপর দেখতে হবে এটি মানসিক গঠনের সাথে বাস্তবতার কতটুকু মিলবন্ধন বা অমিল রয়েছে। পরিশেষে একটা উপসংহারে পৌছাতে হবে।
উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, একটি টেবিল তৈরির জন্য যেমন একটি পদ্ধতি আছে, ম্যাক্স ওয়েবার তেমনি ধারণাকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য একটি হাতিয়ার ব্যবহার করেছেন। তাঁর হাতিয়ার হলো আদর্শ নমুনা (Ideal Type)।

ম্যাক্স ওয়েবার এর আদর্শ নমুনার বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ

(Characteritics of Ideal Type): আদর্শ নমুনার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরুপঃ-
১। আদর্শ নমুনা কোন প্রকল্প (Hypothesis) নয়। এটি বিচ্ছিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা বা পরিস্থিতি বিশ্লেষণের হাতিয়ার।এর মাধ্যমে ঐতিহাসিক ঘটনা, সামাজিক প্রক্রিয়া বা গঠনসমূহকে তুলনামূলকভাবে বিচার করা যায়।
২। আদর্শ নমুনা একটি Mental Construct (মানসিক কাঠামো)। আদর্শ নমুনা বাস্তব বিশ্বের কোনো বস্তুর প্রতিরূপ নয়
৩। বাস্তবতা থেকে পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যর বিস্তার ও সংকোচন করে আদর্শ নমুনা তৈরী হয়।
৪। আদর্শ নমুনা কোন পরিসংখ্যানিক মডেল নয়।
৫। আদর্শ নমুনা একটি সঠিক ঐতিহাসিক ঘটনা এবং পাশাপাশি পরিস্থিতি বিশ্লেষণের কৌশল।
৬। গবেষক যে বিষয়টি অনুসন্ধান করতে চায় সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ধারণা হতে এটি একটি মানসিক গঠন।
৭। এটি সমাজজ্ঞিানীদের স্বপ্নের ফসল নয় বরং যৌক্তিক গঠনমূলক প্রত্যয়।
৮। এটি কোন যাচাই বাচাই করা বা পরীক্ষা করার বিষয় নয়।
৯. আদর্শ নমুনার মাধ্যমে বিভিন্ন ঘটনা বা সমাজব্যবস্থার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা সহজ হয়, যা গবেষণায় গভীরতা আনে।
১০. এই কাঠামো সময়, স্থান ও গবেষণার প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরিবর্তনশীল। ফলে এটি চূড়ান্ত বা অব্যর্থ কোনো কাঠামো নয়।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, কোন একটি বিষয় সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ এর মাধ্যমে বিষয়ের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান আহরণের জন্য ম্যাক্স ওয়েবারের (Max Weber) ‘আদর্শ নমুনা’ সমাজতাত্ত্বিক আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়এটি গবেষকের চিন্তা-ভাবনাকে একটি কাঠামোবদ্ধ রূপ দেয় এবং সামাজিক বাস্তবতার বিভিন্ন রূপকে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে। যদিও এটি বাস্তব নয়, তথাপি বাস্তব বিশ্লেষণের জন্য এটি অপরিহার্য।। উপরে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যর মাধ্যমে আদর্শ নমুনার প্রকৃত স্বরুপ অনুধাবন করা যায়।

ম্যাক্স ওয়েবার (Max weber) কে ছিলেন?

ম্যাক্স ওয়েবার (Max weber) এর পরিচয় লিখ

ভূমিকাঃ- ম্যাক্স ওয়েবার ছিলেন একজন সমাজবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়াও ওয়েবারের বিভিন্ন মতবাদ যা সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তিনি শুধু কেবল সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন না তিনি ছিলেন একাধারে লেখক ও শিক্ষক। 

ম্যাক্স ওয়েবার (Max weber) কে ছিলেন?

ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) এর পরিচয়ঃ- ম্যাক্স ওয়েবার এর পরিচয় নিম্নরুপ- 
১। জম্মস্থানঃ ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) যার আসল নাম (ম্যাক্সিমিলিয়ান কার্ল এমিল ম্যাক্স ভেবার) ১৮৬৪ সালের ২১ এপ্রিল এরফুর্ট স্যক্সনি প্রদেশের প্রুশিয়া এক মধ্যবিত্ত এশিয়ান পরিবারে জম্মগ্রহণ করেন। এরপর পরিবারের সাথে ১৮৬৯ সালে কজার্মিনির বার্লিন শহরে চলে আসেন। তার বাবা ম্যাক্স ভেবার সিনিয়র ও মা হেলেন ফ্যালেনস্টাইল। তার মা ছিলেন Calvinist বাবা ছিলেন Protestant.
২। শিক্ষাঃ  ১৮৮২ সালে আইনের ছাত্র হিসেবে ইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন । পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি জুনিয়র আইনজীবী ও প্রভাষক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৮৮৬ সালে ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) ব্রিটিশ ও মার্কিন আইনি ব্যবস্থায় বার এ্যসোসিয়েশন পরীক্ষার সাথে সমতুল্য রেফারেন্ডারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) আইনি ইতিহাসের উপর আইনের ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
২। সমাজবিজ্ঞানী হিসেবেঃ Max Weber  একজন জার্মান সমাজবিজ্ঞানী । সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে তার আবদান অনেক । তিনি সমাজবিজ্ঞানে একটি আদর্শ সমাজব্যবস্থা কাঠামো তুলে ধরেছিলেন। তিনি সমাজ কাঠামোর মধ্যে ধর্ম, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতি– এসব উপাদানের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেন। তার মতে, সমাজবিজ্ঞান শুধুমাত্র সংখ্যাগত তথ্য বিশ্লেষণ নয়, বরং মানুষের অর্থবোধ ও আচরণগত দৃষ্টিভঙ্গি বোঝাও জরুরি। তিনি “ভার্টেহেন (Verstehen)” নামক একটি ব্যাখ্যামূলক পদ্ধতি প্রবর্তন করেন যা সমাজবিজ্ঞান চর্চায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেসমাজবিজ্ঞানী হিসেবে তার নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
৩। লেখক হিসেবেঃ ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) লেখক হিসেবেও সুখ্যাতি লাভ করেছিলেন । তিনি সমাজ নিয়ে অনেক রচনা করেন । তার মধ্য অন্যতম-
  • The Religion of India
  • Economy and Society
  • Essays on Society
৪। সমাজসেবক হিসেবেঃ ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) ছিলেন একজন সমাজসেবক । সমাজকে তিনি সুন্দরভাবে সাজান। সমাজে বিরাজমান সকল ধরনের সমস্যা তিনি সমাধান করেন।
৫। ধার্মিক হিসেবেঃ ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) ধার্মিক নেতা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।ধর্ম সম্পর্কে তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেন । যথা- 
  • The Religion of India
  • The Religion of China
৬। শিক্ষক ও আইনজীবীঃ ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) ছিলেন একজন শিক্ষক ও পাশাপাশি আইনজীবী।

পরিশেষে বলা যায় যে, ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) শুধু একজন সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন না তিনি ছিলেন
 একজন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। তিনি শুধু একজন সমাজবিজ্ঞানী নন, বরং ছিলেন দার্শনিক, শিক্ষক, ধর্মতাত্ত্বিক ও সমাজসেবক। সমাজবিজ্ঞানের উন্নয়ন ও আধুনিক সামাজিক তত্ত্ব বিকাশে তার অবদান ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজও সমাজ নিয়ে যেকোনো গভীর আলোচনা ও বিশ্লেষণে ম্যাক্স ওয়েবারের নাম অগ্রগণ্য।

আমলাতন্ত্র কী? What is bureaucracy?

আমলাতন্ত্র কী? আমলাতন্ত্র বলতে কি বুঝ?

ভূমিকাঃ বিশ্বের সকল সরকারি ব্যবস্থা কোন না কোনভাবে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা। আমলাতন্ত্র একটি সর্বজনীন ধারণা।গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অপরিসীম। ম্যাক্স ওয়েবার আমলাতন্ত্রের জনক হিসেবে খ্যাত। অষ্টাদশ শতকে তিনি এ ধারণা দেন। আধুনিককালে যে কোন রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র আধুনিকীকরণ, উন্নয়ন বা পরিবর্তনের মৌলিক হাতিয়ার সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। ম্যাক্স ওয়েবারের ধারণাকে পুঁজি করে বর্তমানে অনেক দার্শনিক আমলাতন্ত্রের ব্যাখ্যা করেছেন।
আমলাতন্ত্র কী? What is bureaucracy?



আমলাতন্ত্রের শাব্দিক অর্থঃ আমলাতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Bureaucracy। শব্দটি ফরাসি শব্দ Bureau ও গ্রিক শব্দ Kratein থেকে এসছে। এর অর্থ হচ্ছে Desk Government তাই উৎপত্তিগতভাবে আমলাতন্ত্র হলো দপ্তর সরকার বা Desk Government.
আমলাতন্ত্রঃ আধুনিককালে যে কোন প্রশাসনই আমলানির্ভর। আমলাতন্ত্রের সূত্রপাত হয়েছে সেনাবাহিনীতে। বর্তমানে এটি প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আমলাতন্ত্রের জনক যদিও ম্যাক্স ওয়েবারকে বলা হয়।তবে পরবর্তীতে বিভিন্ন দার্শনিক এর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
পারিভাষিক সংজ্ঞাঃ সাধারণত আমলাতন্ত্র বলতে বোঝায় আমলাদের কর্তৃক পরিচালিত শাসন ব্যবস্থাকে। সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিকে বাস্তব রুপ দেওয়ার জন্য যে কর্তৃক ব্যবস্থা মানবশক্তি ও বিভিন্ন কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেন তারই সমষ্টিকে আমলাতন্ত্র বলে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে আমলাতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কযেকটি সংজ্ঞা নিম্নে দেওয়া হলো নিম্নরুপ- অধ্যাপক ফাইনার এর মতে- The civil service is body of officials permanent paid and skilled. অর্থাৎ আমলাতন্ত্র হলো স্থায়ী বেতনভোগী এবং দক্ষ কর্মকর্তাদের একটি সংগঠন।
Paul H Apleby এর ভাষায় আমলাতন্ত্র হলো অসংখ্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে ও জটিল শর্তে সুশৃঙ্খলভাবে পরস্পর একত্রিত হওয়াকে বোঝায়।
H. j. Laski এর মতে  আমলাতন্ত্র বলতে একটি সরকার ব্যবস্থাকে বোঝায় যার নিয়ন্ত্রণ এত মাত্রায় কর্মকর্তাদের হাতে ন্যস্ত থাকে যে তাদের এই ক্ষমতা সাধারণ নাগরিকদের স্বাধীনতা বিপন্ন করে।
Herbert A. Simon এর মতে, আমলাতন্ত্র বলতে এমন একটি সংগঠনকে বুঝায় যার মাধ্যমে শাসকবর্গ নিজেদের সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার চেষ্টা করে।
George Bernard Show এর ভাষায়, পদধিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ, দেবতূল্য আভিজাত্য ভক্তবৃন্দের  গণতন্ত্র নিয়ে আমলাতন্ত্র গঠিত হয়।
ম্যাক্স ওয়েবার বলেন কমবেশি প্রত্যকটি বড় সংগঠনই আমলাতন্ত্রের নামান্তর। তিনি তার Eassays in Sociology and Theory of Social and Economices Organigation গ্রন্থে আমলাতন্ত্রে কতকগুলো নীতিমালা উল্লেখ করেন।তার দেওয়া নীতিমালা গুলো হচ্ছে-
(ক) দাপ্তরিক কর্মকান্ডের পরিধি আইন বা প্রাশসনিক বিধান দ্বারা নির্ধারিত হয়।
(খ) কর্ম বিভাজনের মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অধস্তনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
(গ) অফিসের নথিপত্র সংরক্ষণ করা।
(ঘ) কর্মী ব্যবস্থাপনা স্থায়ী নিয়মকানুন মেনে চলে।

পরিশেষে বলা যায় যে, আমলাতন্ত্র হলো সরকারী স্থায়ী, দক্ষ ও বেতনভূক্ত কর্মচারীদের পরিচালিত একটি শাসন ব্যবস্থা। সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মচারীগণই হলো আমলা এবং তাদের পরিচালিত শাসন ব্যবস্থাই হলো আমলাতন্ত্র। আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকারি সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন করা হয়। আমলারা রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত হয়ে সরকারি নীতিকে বাস্তবায়ন করে।আমলারা বিভিন্ন সরকারি কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সরকারি কাজ সম্পন্ন করে থাকে।

নগর বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের তত্ত্ব আলোচনা কর

নগর বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের তত্ত্ব আলোচনা কর

ভূমিকাঃ- মানব সভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে শহর একটি শক্তিশালী বিপ্লব যা আমাদের জীবন যাত্রার একটি বিরাট পরিবর্তন এনেছে। ম্যাক্স ওয়েবারের (MAX WEBER) এর মতে প্রতিটি শহরের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পৃথিবীর প্রতিটি নগরের ক্ষেত্রেই ম্যাক্স ওয়েবার কিছু তত্ত্ব প্রদান করেন।

নগর বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের তত্ত্ব আলোচনা কর।

নগর বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের তত্ত্ব: একটি বিশ্লেষণ

নিম্নে ম্যাক্স ওয়েবারের প্রদত্ত নগর বিকাশের স্বরুপ সমূহ আলোচনা করা হলো।

১। শহরের অর্থনৈতিক প্রকৃতি:

যে স্থানের লোকজন কৃষির থেকে ব্যবসায় বাণিজ্যকে বেশি গুরুত্ব দেয়। অর্থনৈতিকভাবে একটি শহর সৃষ্টি হলে এর তিনটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এগুলো হলো-

(ক) ব্যবসায় বাণিজ্য স্থাপন।

(খ) উৎপাদনকারী ও ভোক্তার শহর।

(গ) কৃষিকাজে শহরের সম্পর্ক।

২। শহরের রাজনৈতিক প্রশাসন ধারণা:

অর্থনীতির পাশাপাশি প্রাশাসনিক কারনেও একটি শহর গড়ে উঠতে পারে। প্রতিটি শহরের একটি Economic Association থাকে। এরা বাজেট তৈরি করে আয় ব্যায়ের হিসাব করে। কিন্তু Peasant বা কৃষক সমাজে এটা আমরা Economic Association কে Central করার জন্য Palitical Administrative তৈরি হয়। যেমন Municipa Lity প্রাচীনকালের শহরগুলিতে এ ব্যাপারটি দেখা যেতো না। মধ্যযুগ হতে Political Administrative Concert টা দেখা যায়। তারা শহরের জনগণের জন্য আইন তৈরি করে যা মূলত বণিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার জন্য। এটাই Urban Economic Policy এবং এটি তৈরি হয় Municipality. এসব শহরকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে গঠিত শহর বলবো না।বলবো প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক শহর। কারণ, অর্থনৈতিক শহরে ব্যবসায়ী বা বণিকদের সুযোগ সুবিধা বেশি এবং তারাই ঐ শহরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।কিন্তু প্রাশাসনিক বা রাজনৈতিক শহরে আমলাদের গুরুত্ব বেশি। দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করে এসব শহর গড়ে উঠে। 

(ক) দুর্গ ও দুর্গে সন্নিবিষ্ট সেনাদল।

(খ) নগর দুর্গের সংমিশ্রণ ও বিপণন।

৩। সমাজভিত্তিক এবং সামাজিক অবস্থানের বিশিষ্টতা:

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রশাসনিকভাবে গড়ে উঠা নগর প্রাচ্যে এবং পশ্চিম দুদিকেই দেখা যেত কিন্তু সমিতিভিত্তিক এবং সামাজিক অবস্থানের বিশিষ্টতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা নগর শুধু পশ্চিমেই দেখা যেত। একটি নগর সমাজ গড়ে উঠার জন্য ব্যবসায় বাণিজ্যের আবশ্যই প্রধান্য থাকতে হয়। তবে তার সাথে নিম্নে লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি ও দেখা যায়। (ক) বাজার (খ) দুর্গায়ন (গ) বিচারালয়ের নিজস্ব স্বায়িত্বশাসিত আইন (ঘ) সংঘের সাথে সম্পুক্ততা (ঙ) অন্ততপক্ষে আংশিক সায়ত্বশাসন সেখানে প্রাশাসনিক কর্তৃপক্ষের নির্বচান অনুষ্ঠিত হয় ও সে নির্বচনে নগরবাসী অংশগ্রহণ করে।

প্রাচ্য নগর সভ্যতার বিকশিত হওয়ার আর একটি কারণ Cast System. এক্ষেত্রে ওয়েবার  বলেন ধর্মীয় আবরণে সামাজিক বিভাজনের সৃষ্টি করে ভারতীয়রা তাদের সামাজিক প্রথা শ্রেণি প্রথার সৃষ্টি করে বিভিন্ন প্রথার ভিত্তিতে যার কারনে নতুন কোন নাগরিক সম্প্রদায় বা নাগরিকের আবির্ভাব ছিল সুদুর পরাহত।

পরিশেষে বলা যায় শুধু পাশ্চাতেই নগর সম্পরদায় গড়ে উঠার জন্য যেমন বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন তা সবই প্রাচ্য অনুপস্থিত ছিলো। ভারতবর্ষে জাতিবর্ণ প্রথা, আরবদের গোত্র প্রথা, চীন, জাপানের পূর্বপুরুষ পূজা বিদ্যমান ছিলো যা নগর গড়ে উঠার বিরুদ্ধে ছিল। যেখানে এসব সমস্যা দূর করা সম্ভব হয়েছিল সেখানে নগর গড়ে উঠেছিল।

ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) কে আমলাতন্ত্রের জনক বলা হয় কেন?

ম্যাক্স ওয়েবারকে আমলাতন্ত্রের জনক বলা হয় কেন?

ভূমিকাঃ- আমলাতন্ত্র একটি সরকারি ব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের দ্বারা নেওয়া হয়।
ম্যাক্স ওয়েবারকে আমলাতন্ত্রের জনক বলা হয় কেন?


জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার তার Economy and Society গ্রন্থে বলেন যে- একটি আমলাতন্ত্র সংস্থা সবচেয়ে দক্ষ কাঠামো প্রতিনিধিত্ব করে। বিশেষ দক্ষতা, নিশ্চয়তা, ধারাবাহিকতা এবং উদ্দেশ্যের একতাই এর মূল বৈশিষ্ট্য।

সুপ্রসিদ্ধ চিন্তাবিদ ম্যাক্স ওয়েবার আমলাতন্ত্র কে যুক্তিবাদী সংগঠন হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন। তিনি সর্বপ্রথম আমলাতন্ত্র যে আধুনিক আমলাতন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সে বিষয় ব্যাখ্যা করেন। ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) এর বিখ্যাত গ্রন্থ  ‘Eassys in Socilogy’ তে  আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও বিশদ আলোচনা করেছেন । ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) এ প্রসঙ্গে সমাজতাত্ত্বিক গবেষণার সূত্রপাত করেন। তাই ম্যাক্স ওয়েবারকে আমলাতন্ত্রের আধুনিক জনক বলা হয়। Max Weber আমলাতন্ত্রকে আইনগত ও যুক্তিসংগত আদর্শ কাঠামো হিসেবে বিশ্লেষণ করেন। তাঁর মতে এটি একটি আদর্শ কাঠামো। তাঁর আমলাতন্ত্রকে “concept of Rationalism’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

ম্যাক্স ওয়েবারকে আমলাতন্ত্রের জনক বলার কারণ

১। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি:

ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) আমলাতন্ত্রকে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি বিদ্যমান ব্যবস্থা বলেছেন। এখানে ঊর্ধ্বতন অধস্তন অনুসারে কর্ম পরিধি বন্টন করা হয়েছে। প্রত্যেক কর্মচারী তার স্ব-স্ব নির্দিষ্ট কাজ করে থাকেন।

২। পদক্রম নীতি:

ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্র সংগঠনে ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন সম্পর্ক বিরাজ করে। এতে অধস্তন অফিস নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাধীন থাকে।

৩। কৌশলগত জ্ঞানের ভিত্তিতে নিয়োগ:

ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) বলেন কৌশলগত জ্ঞানের ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। কর্মচারীদের টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এভাবে ওয়েবার আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের জন্য  বৃত্তিমূলক ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

৪। আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে লিপিবদ্ধ কাজ:

এ সংগঠনের কাজসমূহ সিদ্ধান্ত এবং বিধিবিধান লিখিতভাবে উপস্থাপিত এবং রেকর্ড করা। বস্তুত ‍লিখিত বিধান ও অফিসের কাজ অফিস নামক একটি সংস্থায় পরিচালিত হয়।

৫। ভাতা প্রদান:

আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে কর্মচারীবৃন্দরা অর্থের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ভাতা লাভ ও পেনসন ভোগ করে থাকেন। কর্মচারীদের বেতন স্কেল পদ অনুযায়ী এ ভাতা বা পেনসনের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়।

৬। সততা ও নির্লিপ্ততা:

ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) আমলাতন্ত্রকে সততার ও নির্লিপ্ততার সংগঠন বলে অভিহিত করেছেন। এভাবে আমলারা প্রশাসনিক হাতিয়ারের মালিকানা পৃথক থাকবে।

৭। আইনগত কর্তৃত্বের ভিত্তি:

ম্যাক্স ওয়েবার আমলাতন্ত্রকে আইনগত কর্তৃত্বের (Legal-Rational Authority) একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, আধুনিক সমাজে কর্তৃত্বের বৈধতা নির্ভর করে আইনের উপর। আমলাতন্ত্র সেই কাঠামো যেখানে কর্মচারীরা নিয়ম, বিধি ও আইনের ভিত্তিতে কাজ করেন, যা সমাজে শৃঙ্খলা ও কার্যকারিতা বজায় রাখে।

৮। ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের পৃথকীকরণ:

ওয়েবার বলেন, আমলাতান্ত্রিক কর্মচারীরা তাদের ব্যক্তিগত জীবন এবং পেশাগত দায়িত্বকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা রাখেন। ব্যক্তিগত অনুভূতি বা সম্পর্ক এখানে কাজের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে না। এই নিরপেক্ষতা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করে।

৯। দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব ও দক্ষতা:

ম্যাক্স ওয়েবার আমলাতন্ত্রকে এমন একটি কাঠামো হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে একটি রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও নীতিমালার মাধ্যমে আমলাতন্ত্র রাষ্ট্র পরিচালনায় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ম্যাক্স ওয়েবার আমলাতন্ত্র সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ বৈশিষ্ট্য ও যুক্তিবাদী প্রতিষ্ঠিত করেছেন যার কারণে ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্র সমালোচিত হলেও তার সমর্থিত আমলাতন্ত্র (Bureaucracy) এক আদর্শিক মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।