সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের কৃতিত্ব পর্যালোচনা

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের কৃতিত্ব পর্যালোচনা

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের কৃতিত্ব পর্যালোচনা 

অথবা, সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের  অবদান আলোচনা কর।

সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের এর অবদান অপরিসীম। যুগে যুগে যে কয়জন সমাজবিজ্ঞানী সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে অবদান রেখেছেন তার মধ্য ম্যাক্স ওয়েবার অন্যতম। তিনি সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতি, স্তরবিন্যাস, সামাজিক ক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন । তাঁর এসব অবদান সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের কৃতিত্ব পর্যালোচনা


সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের কৃতিত্বঃ-

ম্যাক্স ওয়েবার ছিলেন একজন সমাজবিজ্ঞানী। সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নিম্নে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবার এর অবদান আলোচনা করা হলো-
১। গ্রন্থাবলি রচনাঃ ম্যাক্স ওয়েবার সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। এসব গ্রন্থসমূহ সমাজবিজ্ঞানের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হলো-
  •  The Religion of India.
  • The Religion of China.
  • Economy and Society.
  • Essays on Sociology.
২। তাত্ত্বিক অবদানঃ Max Weber সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যেসব অবদান রেখেছেন তার মধ্য অন্যতম হলো তাত্ত্বিক । তিনি বলেন সমাজকে সঠিকভাবে জানতে হলে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সমাজবিজ্ঞান বিকাশে তিনি অনেক মতবাদ প্রদান করেন।
৩। সামাজিক ক্রিয়াঃ ম্যাক্স ওয়েবারের সমাজবিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো সামাজিক ক্রিয়া। তিনি সামাজিক বিজ্ঞানকে সামাজিক ক্রিয়ার বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি ব্যক্তিকে মূখ্য বিষয় হিসেবে সমাজকে বিশ্লেষণ করেন। তিনি মনে করেন একটি সমাজকে বিশ্লেষণ করতে হলে তার কাঠামোর বদলে ব্যক্তিকে মূখ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
৪। আদর্শ নমুনাঃ আদর্শ নমুনা বলতে বোঝায় এমন ধরনের তথ্য বা নমুনা যা পরবর্তী গবেষণায় গবেষকরা অনুসরণ করেন। ম্যাক্স ওয়েবারের অন্যতম অবদান হলো আদর্শ নমুনা। তাঁর মতে সমাজ হলো একটি আদর্শ নমুনা। সমাজকে নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন।
৫। পুঁজিবাদ বিকাশঃ পুঁজিবাদ বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবার এর অবদান অতুলনীয় । তিনি ইউরোপের পুঁজিবাদ বিকাশে সহায়তা করেন। তিনি প্রমাণ করেন ধর্মীয় নীতিমালা ও মূল্যবোধ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করে।
৬। ক্ষমতা ও কর্তৃত্বঃ ম্যাক্স ওয়েবার এর এক অনন্য সৃষ্টি ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব। তিনি তিন ধরনের কর্তৃত্বের কথা বলেছেন। যথাঃ
  • যৌক্তিক কর্তৃত্ব
  • ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্ব
  • ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্ব
(ক) যৌক্তিক কর্তৃত্বঃ যে কর্তৃত্বের আদেশ আইনসম্মত এবং জনগণ সহজভাবে মেনে নেয় সে কর্তৃত্বকে যৌক্তিক কর্তৃত্ব বলে।
(খ) ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্বঃ যে ধরনের কর্তৃত্বে ব্যবক্তি জম্মসূত্রে ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার লাভ করে তাকে ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্ব বলে।
(গ) ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্বঃ যে ধরনের কর্তৃত্বে ব্যক্তি নিজস্ব গুণাবলি ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দৃঢ় সে ধরনের কর্তৃত্বকে ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্ব বলে।
৭। আমলাতন্ত্রঃ ম্যাক্স ওয়েবার আধুনিক আমলাতন্ত্র ধারণাটি ব্যাখ্যা করেন। আমলাতন্ত্র সম্পর্কে একাডেমিক আলোচনার সূত্রপাত করেন। আমলাতন্ত্র প্রত্যেক সংগঠনে অপরিহার্য বলেই ওয়েবার মনে করেন। তিনি মনে করেন সুনির্দষ্ট নিয়ম-কানুনের উপর ভিত্তি করে আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি আমলাতন্ত্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। যথা- (ক) পদসোপান, (খ)বিশেষীকরণ, (গ) শ্রমবিভাগ, (ঘ) নিরপেক্ষতা, (ঙ) অজ্ঞতনামা থাকা ও (চ) পদোন্নতির সুষ্ঠু ব্যবস্থা।
৮। সামাজিক স্তরবিন্যাসঃ ম্যাক্স ওয়েবার সমাজকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করেন। তিনি সমাজকে অর্থনীতি, ক্ষমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে ভাগ করেছেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবার যে অবদান রেখেছেন তা সমাজবিজ্ঞানের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। তিনি পুঁজিবাদ, স্তরবিন্যাস, আমলাতন্ত্র সম্পর্কে যে ধারনা দেন তা সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে সহায়তা করে। সব মিলে বলা যায় সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে ম্যাক্স ওয়েবারের অবদান অপরিসীম।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post