Max Weber ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্র কি? আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব, সমালোচনা ও মূল্যায়ন

ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্র কি? আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব মূল্যায়ন কর।

ভূমিকাঃ Max Weber ম্যাক্স ওয়েবার সমাজ, সমাজবিজ্ঞান  এবং তৎসংশ্লিষ্ট আলোচনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো “আমলাতন্ত্র”। আমলাতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে তিনি সমাধিক পরিচিত।

Max Weber ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্র কি?


আমলাতন্ত্রঃ  সমাজতাত্ত্বিকভাবে প্রথম আমলাতন্ত্র সম্পর্কিত আলোচনার সূত্রপাত করেন ওয়েবার ।ম্যাক্স ওয়েবার তাঁর ‘Economy Society নামক গ্রন্থে আমলাতন্ত্রের আধুনিক সমাজতত্ত্ব আলোচনার সূত্রপাত হয় এবং ‘Essays or sociology’ নামক গ্রন্থে তিনি আমলাতন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

সমাজতাত্ত্বিকঃ সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম একটি আলোচ্য বিষয় হলো সমাজতাত্ত্বিক মতবাদ। সমাজতাত্ত্বিক মতবাদের মধ্যে সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা নীতি, তত্ত্ব, প্রত্যয় এবং সাধারণীকরণ সম্পর্কিত বিচার বিশ্লেষণ অন্তর্ভূক্ত। সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।

রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বঃ সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার এক বিশাল অংশ হয়ে আছে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব। সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের উদ্ভব, বিকাশ, বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের সামাজিক পটভূমি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং এদের সাথে সমাজে বসবাসকারী মানুসের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।

আইনের সমাজতত্ত্বঃ আইনের সমাজতত্ত্ব সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন সামাজিক আইন, আইনের উৎস, সমাজে আইনের প্রভাব ও কার্যকারিতা সমাজে বসবাসরত মানুষের আইনগত অধিকার ও কর্তব্য ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে থাকে।

Max Weber (ম্যাক্স ওয়েবার) আমলাতন্ত্রকে একটি আদর্শ নমুনার মাধ্যমে আধুনিকালের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ম্যাক্স ওয়েবারের (Max Weber) মতে- “আমলাতন্ত্র এমন একটি সংগঠন যার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম রয়েছে।” এটি একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয় এবয় সেখানে ক্ষমতা ব্যবহারের নির্দিষ্ট পর্যায়ক্রমবিশিষ্ট একটি কাঠামো আছে, যার অধীনস্ত কর্মরত সকল কর্মচারীই স্থায়ীভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রত্যেক কর্মচারীর নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। অর্থাৎ প্রশাসনের বিভিন্নধাপে বিভিন্ন কর্মকর্তা যারা প্রশাসনের নীতি নির্ধারণের কাজ বাস্তবায়নের জন্য কর্মতৎপর থাকে তাদেরকে বলা হয় আমলা আর কর্মতৎপরতার সামাজিক ব্যবস্থাকে বলা হয় আমলাতন্ত্র।

আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য

  • ওয়েবার আমলাতন্ত্রের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছেন, যেমন:
  • প্রতিটি আমলার নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারিত থাকে।
  • উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একটি সুস্পষ্ট আদেশের শৃঙ্খলা বিরাজ করে।
  • প্রশাসনিক কাজ নিয়মিত এবং নীতিমালার ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়।
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কাজের ক্ষেত্রে আবেগ নয়, যুক্তি ও নিয়মই মুখ্য।
  • আমলারা নিয়োগ পান শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে, পারিবারিক বা রাজনৈতিক পরিচয়ের নয়।
  • আমলারা পেশাদার কর্মচারী, যারা দীর্ঘমেয়াদী ও নিয়মিতভাবে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন।

ওয়েবারের বিশ্লেষণের গুরুত্ব

ওয়েবারের আমলাতন্ত্র বিশ্লেষণ আধুনিক রাষ্ট্রের কাঠামোকে বোঝার জন্য একটি মাইলফলক। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে আমলাতন্ত্র কার্যকরভাবে প্রশাসন পরিচালনায় সহায়তা করে এবং সামাজিক সংগঠনের জটিলতা মোকাবিলায় কাঠামোগত সমাধান দেয়।

সমালোচনা ও মূল্যায়ন

যদিও ওয়েবারের আমলাতন্ত্র মডেল কার্যকারিতার দিক থেকে প্রশংসিত, তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন:

  • অতিরিক্ত নিয়ম-কানুনের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
  • মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব এবং যান্ত্রিকতা সৃষ্টি হয়।
  • উদ্ভাবনী চিন্তার জায়গায় একধরনের স্থবিরতা বা রুটিন মনোভাব দেখা যায়।

অনেকে একে “লাল ফিতার শাসন” হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন, যেখানে আমলারা নিয়মে এতটাই বন্দী হয়ে পড়েন যে মানবিক বিবেচনা কিংবা নতুন চিন্তার জায়গা কমে যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, একজন মানুষ তাঁর অসংখ্য সৃষ্টি থাকলেও যেকোন একটি থাকে তাঁর পরিচিত মূখ্য উপাদান হিসেবে। আর ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) এর ক্ষেত্রে পরিচিতির সেই মূখ্য উপাদানের ভূমিকা পালনকারী বিষয় ছিল আমলাতন্ত্র যার কারণে তাকে আমলাতন্ত্রে জনক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

No comments:

Post a Comment