টার্ম পেপার (term paper) কি? টার্ম পেপার লেখার নিয়ম অনার্স-মাস্টার্স
➤ভূমিকাঃ- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কোর্সে টার্মপেপার মৌখিক পরীক্ষা কিংবা মাঠ কর্ম পরীক্ষার জন্য উল্লেখ রয়েছে। আমাদের মধ্যে এমন অনেক পরীক্ষার্থী আছেন যারা টার্ম পেপার কিভাবে তৈরি করতে হয় তা জানেন না। তাদের জন্য আজকের এ লেখা টার্ম পেপার কিভাবে তৈরি করতে হয় সে বিষয়ে আলোচনা করব।
আপনারা যদি এই পোষ্টটি মনযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আশা করা যায় আপনারা সহজে টার্মপেপার লিখতে পারবেন ইনশাআল্লাহ্ কোন ধরনের সমস্যা থাকবে না। এবং সকল প্রশ্নের সমাধান পেয়ে যাবেন আজকের এই টার্মপেপার বিষয় আলোচনার মাধ্যমে।
টার্মপেপার কি?
টার্ম পেপার হলো বিশ্লেষকমূলক রচনা/ গবেষণামূলক কাজ যা, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বইয়ের সামঞ্জস্য রেখে একটি শিরোনামে তৈরি করতে হয়। যা একটি বিষয়ের শিরোনামের উপর বিশ্লেষণধর্মী ও গবেষণামূলক একটি প্রবন্ধ। যাকে একাডেমিক ভাষায় টার্মপেপার বলে। ২০১৩-১৪ সেশন হতে জাতীয় বিশ্বদ্যিালয়ের মাস্টার্স এ টার্ম পেপার এ্যাড করা হয়। টার্মপেপার মূলত কলা অনুষদ, ব্যবসা অনুষদ ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের জন্য ৫০ নম্বরের একটি বিশেষ কর্ম।
টার্মপেপার কিভাবে তৈরী করতে হয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অনার্স ও মাস্টার্স শেষ পর্ব (নিয়মিত) শিক্ষার্থীদের টার্ম পেপার (Term Paper) তৈরি করতে হয়। টার্ম পেপার যেহেতু একাডেমিক পেপার তাই এটি লেখার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালা ফলো করতে হয়। আপনারা যারা টার্ম পেপার তৈরি করতে পারেন না তারা আমার দেখানো এই নিচের নীতিমালা গুলো ফলো করে আপনার টার্ম পেপারটি তৈরি করে নিতে পারেন।
টার্ম পেপার তৈরীর নীতিমালাঃ
- খুব আকর্ষণীয় কভার পৃষ্ঠা থাকতে হবে।
- আপনার টার্মপেপার টিতে কমপক্ষে ৩০০০-৩৫০০ ওয়ার্ড থাকতে হবে।
- একটি আদর্শ টার্মপেপারে অবশ্যই ২৫-৩০ পেইজ লিখতে হবে তবে কমপক্ষে ২৫ পেইজ লিখতেই হয়।
- টার্মপেপার অবশ্যই সাদা কাগজ এ ফোর (A4) সাইজের হবে নরমাল কোন দিস্তা খাতায় লিখলে হবে না।
- এ ফোর (A4) সাইজের কাগজের একপাশে লিখবেন (দুইপাশে লেখা যাবেনা) এক সাইডে লিখবেন অন্য সাইট খালি থাকবে।
- বিভিন্ন কলেজ অনুযায়ী টার্মপেপার তৈরিকরণ ২ ধরণের হয় যেমন কোন কলেজে সরাসরি হাতে লেখা আবার কোন কলেজে কম্পিউটার কম্পোজ এ লিখে জমা দিতে হয়। এজন্য টার্মপেপার লেখার আগে শিক্ষকের পরামর্শ নিতে হয়। তবে হাতে লেখাটায় সবচেয়ে ভালো।
- সম্পূর্ণ টার্ম পেপারটি পরিষ্কার ও পরিমার্জিত রাখার চেষ্টা করবেন । পেইজে ১** ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা রাখবেন বা মারজিন দিবেন অযথা কোন ডিজাইন না করাই ভালো।
- সম্পূর্ণ টার্ম পেপারটি অবশ্যই কালো কালির বল পয়েন্ট ব্যবহার করবেন। পয়েন্ট হাইলাইট করতে সবুজ কালি/ পেন্সিল ব্যবহার করতে পারেন।
টার্ম পেপারে যা যা লিখতে হবেঃ
টার্মপেপার কিভাবে লিখতে হয় সে বিষয়ে আমরা উপরের আলোচনায় জেনেছি এখন আমরা জানবো একটি আদর্শ টার্মপেপারে কী কী লিখতে হয় সে বিষয়ে-
- বাংলা ও ইংরেজি সংমিশ্রণ করে লেখা যাবেনা। সুন্দর করে বাংলায় লিখতে হবে ।
- টার্মপেপারের ঘোষণাপত্র/লেখকের কথা থাকতে হবে।
- তত্ত্বাবধায়কের কথা/প্রত্যয়ন পত্র থাকতে হবে।
- কৃতজ্ঞতা স্বীকার থাকবে।
- সারসংক্ষেপ লেখা থাকবে।
- একটি আদর্শ টার্ম পেপারে অবশ্যই সুন্দর একটি সাজানো সূচিপত্র থাকবে । প্রতিটি শিরোনামের এর উপর (১০-১৫ টা) পয়েন্টে আলোচনা বিস্তারিত থাকবে । ২৫-৩০ পেইজে (সর্বনিম্ন ২৫ পেইজ) মধ্যে লিখতে হবে যা ৩০০০ শব্দের মত হবে ।
- উপসংহার লিখতে হবে।
- সর্বশেষ গ্রন্থপুঞ্জি/রেফারেন্স/তথ্যসূত্র একটা পেইজ লিখতে হবে।
তবে সকলের মনে রাখতে হবে যে, টার্মপেপার কারও থেকে কপি করে লেখা উচিত নয়। নিজের সৃজনশীলতা আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেই আপনার গাইড,বই, নিউজ পেপার, পত্রিকা ও ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তৈরী করতে হবে। ফলে আপনার অনেক কিছু শেখা ও জানা হয়ে যাবে।
টার্মপেপারের কভার পেইজে কি কি লিখতে হবেঃ
কভারপেইজে যা যা লিখতে হবে-
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়/নিজ কলেজের নাম ঠিকানা
জাতীয় বিশ্বদ্যিালয়/কলেজের লোগো
বিষয়/শিরোনামঃ আপনার যে বিষয়ে টার্মপেপার লিখতে বলা হয়েছে সেটায় বিষয়/শিরোনাম এর স্থানে লিখতে হবে।
(উদাহরণস্বরুপঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যানীতি কী ও তার ঐতিহাসিক বিবর্তন তত্ত্ব আলোচনা কর)
তত্তাবধায়কঃ
তত্তাবধায়ক/শিক্ষকের নাম (যিনি আপনাকে টার্মপেপার করার জন্য বলেছেন)
তত্তাবধায়ক/ শিক্ষকের পদবী
কলেজের নাম
উপস্থাপনায়
শিক্ষার্থীর নামঃ আপনার নিজের নাম
মাস্টার্স শেষ পর্ব (আপনি আপনার অধ্যয়নরত অবস্থা যেটা সেটা লিখবেন অনার্স/মাস্টার্স)
শ্রেণী রোল নং-........................
রেজিষ্ট্রেশন নং-........................
শিক্ষাবর্ষ-................................
বিভাগের নামঃ সমাজবিজ্ঞান (আপনি যে বিষয়ে অধ্যয়নরত সেটা লিখবেন)
কলেজের নামঃ............................
জমাদানের তারিখঃ.......................
টার্মপেপারের ঘোষণাপত্রে যা লিখবেনঃ
আমি (আপনার নাম) ঘোষণা করছি যে, শিরোনাম/বিষয় (উদাহরণ- শিরোনামঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যানীতির ঐতিহাসিক বিবর্তন তত্ত্ব আলোচনা কর) শীর্ষক টার্মপেপারটি সম্পূর্ণরুপে আমার নিজস্ব, একক ও মৌলিক গবেষণা কর্ম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী মাস্টার্স শেষ বর্ষের (আপনি যেটায় অধ্যয়নরত) জন্য দাখিলকৃত এছাড়া এই টার্মপেপারেটি অন্য কোন প্রকাশনার জন্য উপস্থাপন করি নাই।
শিক্ষার্থীর নামঃ আপনার নিজের নাম
মাস্টার্স শেষ বর্ষ (আপনি যেটায় অধ্যয়নরত)
ক্লাস রোলঃ...........................................
শিক্ষাবর্ষঃ..............................................
বিভাগঃ সমাজবিজ্ঞান (আপনি যে বিষয়ে পড়েন)
কলেজের নামঃ......................................
প্রত্যয়নপত্রে যা লিখবেনঃ-
এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাকোত্তর ডিগ্রি প্রাপ্তির লক্ষ্যে (কলেজের নাম) (বিভাগের/ডিপারমেন্ট নাম) এর দাখিলকৃত শিরোনাম (উদাহরণঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যানীতির ঐতিহাসিক বিবর্তন তত্ত্ব আলোচনা কর) এই টার্ম পেপারটি আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্ববধানে লিখিত/ সম্পাদন করা হয়েছে । আমি এই টার্ম পেপারটি পাঠ করেছি ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের উদ্দেশ্য উস্তাপন করতে অনুমোদন করেছি।
উপস্থাপক/শিক্ষকের নামঃ..........................
পদবীঃ..................................................
বিভাগের নামঃ..........................................
কলেজের নামঃ.........................................
কৃতজ্ঞতা স্বীকারে যা লিখবেনঃ-
সর্বপ্রথম, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি পরম করুণাম সৃষ্টিকর্তার নিকট যিনি আমাকে এ গবেষণা কর্মটি সম্পন্ন করার জন্য ধৈয্য ও শক্তি দিয়েছেন। আরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার (নিজ ডিপার্টমেন্ট নাম) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের (শিক্ষকের নাম/ যিনি তত্তাবধায়ক) আমাকে এই গবেষনা কর্মটি সম্পন্ন করতে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা এবং পরামর্শ প্রদান করেছেন। আমি বিশ্বাস করি তত্বাবধায়ক স্যারের দিকনির্দেশনা আমার টার্মপেপার কর্মটি সম্পন্ন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ স্যারকে আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য। আমি স্যারের সর্বময় মঙ্গল কামনা করছি।
শিক্ষার্থীর নামঃ আপনার নিজের নাম
মাস্টার্স শেষ বর্ষ (আপনি যেটায় অধ্যয়নরত)
ক্লাস রোলঃ...........................................
শিক্ষাবর্ষঃ..............................................
বিভাগঃ সমাজবিজ্ঞান (আপনি যে বিষয়ে পড়েন)
কলেজের নামঃ......................................
সারসংক্ষেপে যা লিখবেনঃ-
সারসংক্ষেপ বলতে আমরা বুঝি সংক্ষিপ্ত বিবরণকে। এই অংশে আপনার টার্মপেপারের পুরো বিষটির একটি সারসংক্ষেপ লিখতে হবে । অর্থাৎ আপনার সম্পূর্ন টার্মপেপারটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরতে হবে, যেন আপনার সুপারভাইজার/তত্ত্বধায়ক খুব সহজেই পুরো বিষয়টি বুঝতে পারেন আপনি কোন বিষয়ের উপর আপনার টার্মপেপারটি সম্পর্ণ করেছেন। এতে আপনার পুরো প্রবন্ধটি খুব সহজেই একটি ধারণা পাওয়া যাবে।
সূচিপত্র লেখার নিয়মঃ-
সূচিপত্রে আপনি উপরে বর্ণিত সকল বিষয় এক এক পেইজ রোমান সংখ্যায় প্রকাশ করবেন।যেমন- (i, ii*,iii,iv) তারপর ক্রমিক নং ১,২,৩,৪ এভাবে *ভূমিকা* পেইজ হতে শুরু করে *উপসংহার* পযন্ত এবং সর্বশেষ পেইজে *তথ্যসূত্র* লিখে ও তার পেইজ নাম্বার সূচিপত্রে ক্রমিকভাবে সাজাতে হবে।
গ্রন্থপুঞ্জি/তথ্যসূত্র লেখার নিয়মঃ-
টার্মপেপারে বর্ণিত সকল তথ্য আপনি কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন সে বিষয়ে এ পেইজে লিখতে হবে।
গ্রন্থাকারের নাম/লেখকের নাম (লেখকের শেষ নাম তারপর প্রথম নাম)। উদাহরণ-হোসইন মুহাম্মদ
গ্রন্থের শিরোনাম (সামাজিক সমস্যা ও প্রতিকার)। ঢাকাঃ দিকদর্শন প্রকাশনী, ২০২১, ৫৬।
আপনার বইয়ের শেষে গ্রন্থপুঞ্জি পেয়ে যাবেন এছাড়া শিক্ষকের সহায়তা নিতে পারেন কিভাবে লিখবেন।
Thanks for this post very helpful content
ReplyDeleteThank you
Deleteখুব সুন্দর উপস্থাপন আশা করি আরও সুন্দর লেখা লিখবেন
ReplyDeleteThank you
Delete