চলক কী? চলকের প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য
ভূমিকাঃ- সমাজবিজ্ঞানের গবেষণায় চলক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চলক হচ্ছে এমন এক ধরনের মান, গুণ, অবস্থা, বৈশিষ্ট্য যা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে অনুসন্ধান করা হয় এবং যা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বিভিন্নরুপে প্রকাশ পায়। পরিবর্তনশীলতা চলকের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সমাজবিজ্ঞানে চলক গবেষণার ভিত্তি গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। চলক নিয়েই গবেষণার কাজ। চলকের সংজ্ঞা দেওয়া এক চলকের সাথে অন্য চলকের সম্পর্ক আছে কি না তার অনুসন্ধান করাই হলো সমাজবিজ্ঞান গবেষণার মূখ্য কাজ।
চলকের সংজ্ঞা (Definition of variable): সাধারণ কথায় যা পরিবর্তিত হয় তাই চলক। চলক মূলত এমন এক ধরনের গুণ, বৈশিষ্ট্য, অথবা অবস্থা যা একই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি, একক কিংবা ঘটনা পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
অন্যভাবে বলা যায় যে ধারণা একাধিক মূল্যমান ধারণ করে তাকে চলক বলে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা দেওয়া হলো
Johan Galtung (1969:29) চলকের সংজ্ঞায় বলেন 'A Variable is a set if values that form a classification'.
P. V. Young (1984:280) এর মতে চলক হলো যেকোন পরিমাপ বা বৈশিষ্ট্য যা বিভিন্ন সংখ্যামান শ্রেণিতে বিভক্ত।
তাই বলা চলে চলক হচ্ছে এক ধরনের গুণ মান অবস্থা বা বৈশিষ্ট্য বা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কোন উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে ব্যবহৃত হয়।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় সামাজিক গবেষণায় চলকের গুরুত্ব অপরিসীম। যদিও চলক গবেষণার সবচেয়ে ক্ষুদ্রক্ষুদ্র কিন্তু সর্বাধিক সংবেদনশীল উপাদান। সামসজিক গবেষণার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির যেসকল উপাদান রয়েছে চলক তার মধ্যে অন্যতম উপাদান।
চলকের প্রকারভেদ বর্ণনা কর।
ভূমিকা: চলক হচ্ছে পরিসংখ্যানিক তথ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সর্বাধিক ও সংবেদনশীল উপাদান। অর্থাৎ চলক বলতে এমন বৈশিষ্ট্যকে বুঝায় যা বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হতে পারে এবং যা পরিমাপযোগ্য
∎ চলকের প্রকারভেদ: প্রকৃতিগত দিক থেকে চলক দু-প্রকার। যথা:
১. গুণগত চলক : যে সমস্ত চলক গুণবাচক বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করে এবং যা সরাসরি সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে উপস্থাপিত করা যায় না তাই গুণবাচক চলক। যেমন- মেধা, ধর্ম, বুদ্ধি ইত্যাদি।
২. সংখ্যাবাচক চলক: তথ্যের যেসব বৈশিষ্ট্য সংখ্যায় পরিমাপ করা যায়, তাদেরকে সংখ্যাবাচক চলক বলে। যেমন-ওজন, বয়স, উচ্চতা, আয়-ব্যয় ইত্যাদি।
গতিপথ অনুযায়ী চলক আবার দু প্রকার। যথা:
বিচ্ছিন্ন চলক: যে চলক একটি পরিসীমার মধ্যে যেকোনো মানের হতে পারে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন চলক বলে। যেমন-পরিবারের লোকসংখ্যা বিদ্যালয়ের কক্ষসংখ্যা ইত্যাদি।
অবিচ্ছিন্ন চলক: যে চলক একটি পরিসীমার মধ্যে যেকোনো সংখ্যামানের হতে পারে তাকে অবিচ্ছিন্ন চলক বলে। যেমন- আয়, উৎপাদন, বয়স, ওজন ইত্যাদি।
পদ্ধতি অনুযায়ী চলক তিন প্রকার। যথা: স্বাধীন চলক, (ii) নির্ভরশীল চলক, (iii) মধ্যবর্তী চলক।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, পরিবর্তনশীল রাশিই হলো চলক। বিশেষ করে সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষক যে সকল উপাদান পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার করতে চান সেইগুলো হিসেবে পরিচিত।
সামাজিক গবেষণায় চলকের বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ
চলকের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে চলকের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে চলকের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করা হলো।
১। চলক হলো ধারনার বৈশিষ্ট্যের তারতম্য।
২। চলকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো চলক পরিবর্তনশীল।
৩। চলেকর আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য চলক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
৪। চলক পরিমাপযোগ্য।
৫। চলকের বৈশিষ্ট্য হলো এটি একাধিক গুন ও মানের সমাবেশ।
৬। চলক গবেষণার দিক নির্দেশনা প্রদান করে।
৭। চলক প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এক প্রতিনিধিমাত্র।
৮। চলক গবেষণার ফলাফল প্রকাশে সহায়ক হয়।
৯। গবেষণার উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে চলক বিভিন্ন রুপ গ্রহণ করে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে সামাজিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদান হিসেবে অন্যান্য উপাদানের মতো চলকের গুরুত্ব অপরিসীম। চলকের যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে চলকের বিশিষ্টতা দান করে। পরিবর্তনশীলতা চলকের প্রধান বৈশিষ্ট্য যা সামাজিক গবেষণায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

No comments:
Post a Comment