ট্যালকট পারসন্স এর পরিচয় দাও। কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ কি?

ট্যালকট পারসন্স এর পরিচয় দাও। কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ কি?

ট্যালকট পারসন্স এর পরিচয়

➢বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিশ্ববিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ট্যালকট পারসন্স। এছাড়া তিনি আমেরিকান সমাজবিশ্লেষণ ক্রিয়াবাদী তাত্ত্বিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।

ট্যালকট পারসন্স এর পরিচয় দাও। কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ কি?

ট্যালকট পারসন্স এর জীবনীঃ ট্যালকট পারসন্স ১৯০২ সালে আমেরিকার কলারাডো রাজ্যের এক ধর্মীয় ও বুদ্ধিভিত্তিক পরিবারে জম্মগ্রহণ করেন। তিনি কংগ্রেসের একজন মন্ত্রীর পুত্র ছিলেন। যিনি পরবর্তীতে Oheo তে Marictta College এর সভাপতির দায়িতব পালন করেন। ট্যালকট পারসন্স ১৯২৪ সালে আসহার্স্ট  কলেজ হতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯২৫ সাল পর্যন্ত  লন্ডন স্কুল অভ ইকোনোমিক্সে হব হাউস, জিন্সবার্গ এবং ম্যালিনোস্কির নিকট শিক্ষা লাভ করে। পরবর্তীতে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর কাটান ও আমহার্ট কলেজে এক বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯২৭ সালে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২৭ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত তিনি হার্বার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। সে সময়ে অধ্যাপক সরোকিন পারসন্সকে আমন্ত্রণ করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করার জন্য। অধ্যাপক ট্যালকট পারসন্স তার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ১৯৩১ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৪৪ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৪৬ সালে তিনি সামাজিক সম্পর্ক আমে নতুন বিভাগের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।তারপর পারসন্স ১৯৪৯ সালে আমেরিকান সমাজবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি মনোনীত হন। যদিও ট্যালকট পারসন্স অধ্যাপক সরোকিনের আমন্ত্রণে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন কিন্তু ট্যালকট পারসন্স এর দ্রুত খ্যাতি লাভের ফলে পরবর্তীতে সরোকিন ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেন। ক্রমে দুজনের মধ্যে একটি তিক্ত সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং সরোকিন প্রকাশ্য এমনকি জার্নালে লিখিতভাবে পারসন্স এর সমালোচনা শুরু করেন। সরোকিনের তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও ট্যালকট পারসন্স এর খ্যাতি আরও বেড়ে যায়। তিনি বহু সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন।পরিশেষে বলা যায় পারসন্স মূলত আমেরিকার সমাজবিজ্হানী এবং তিনি আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে থেকে সর্বাধিক খ্যাতি লাভ করেন।

কাঠামোগত ক্রিয়াবাদ কি?

কাঠামোগত ক্রিয়াবাদী তাত্ত্বিকদের মধ্যে রবার্ট কে মার্টন, ম্যালিনোস্কি, রেডক্লিফ ব্রাউন, এমিল ডুর্খেইম ও ট্যালকট পারসন্স অন্যতম তবে রবার্ট কে মার্টন এসব পুর্বসূরি্য তাত্ত্বিকদের ক্রিয়াবাদী বিশ্লেষণের ধরন এবং ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন। তিনি যে বিষয়টিকে নিয়ে জোর দেন তা হলো সমাজ পরিবর্তন ও ক্রিয়ার মাধ্যম। তার এ অবদান পারসন্স দ্বারা প্রভাবিত।

কাঠামোগত ক্রিয়াবাদঃ ক্রিয়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গি হলো সমাজ ব্যবস্থার সামগ্রিক বা আংশিক ধরন, প্রকৃতি প্রত্যয়, অভিজ্ঞতা এবং বাস্তব তথ্য সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত প্রয়োজন সমূহের উপর উক্ত ধরন সমূহের বিভিন্ন রকম ফলশ্রুতি এবং এগুলি কিভাবে একে অপরের সাথে ক্রিয়া করার মাধ্যমে পারস্পরিক উপযোগিতা পূরণে সক্ষম হয় তারই প্রক্রিয়া। সহজ কথায় সমাজের কোন Unit অপর কোন Unit এর উপর যেভাবে ক্রিয়া সম্পাদন করে পরস্পরকে পরস্পরের সাথে অভিযোজনে সাহায্য করে সেই প্রক্রিয়া হলো ক্রিয়াবাদ। সমাজ কাঠামোর নিজস্ব অস্তিত্ব আছে  সমাজ কাঠামো ওকটি প্রতিষ্ঠান অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত যা জৈব সম্পর্কের মতই বলে রেডক্লিফ ব্রাউন মনে করেন। অরণ্যে যেমন নানা প্রজাতি পরস্পর পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত তেমনি সমাজ কাঠামোর জন্য তিনটি শর্ত উল্লেখ করেছেন, যা পরস্পর সম্পর্কিত। যেমন- (i) Social Unit গুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত (ii) Social Unit গুলো পরস্পর নির্ভরশীল এবং (iii) প্রতিটা Unit সমগ্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য অবদান রাখে। প্রতিটি Unit এর Contribution এর মাধ্যমে সমগ্রকে টিকিয়ে রাখতে তাদের কাজ ভিন্ন ভিন্ন। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ মানবদেহ। একেক অঙ্গ এক এক কাজ করছে। এরা পরস্পর নির্ভরশীল এবং এরা সমগ্র শরীরকে টিকিয়ে রাখে।

পরিশেষে বলা যায় যে, কাঠামোগত ক্রিয়াবাদীরা একটি সামাজিক কাঠামো  অথবা প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্যটির কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেছেন। একটি সামাজিক ঘটনা অন্য একটি সামাজিক ঘটনার উপর নেতিবাচক প্রভাবও থাকতে পারে।

Previous Post Next Post