দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কি? দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের কারণসমূহ
ভূমিকাঃ- দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ এ প্রত্যয়টির সাথে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। একটি দেশের জনগণ যখন কর্মক্ষম থাকে অথচ কাজ পায় না তখন তারা স্বপ্ন মজুরিতে হলেও নিম্নমানের কাজ করতে বাধ্য হয়। ফলে তাদেরকে নিম্নমানের জীবনযাপন করতে হয়। জনগণের এ দারিদ্র্য জীবনযাপন দেশের সমগ্র কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করে। অধ্যাপক নার্কস দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ধারনা দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন যে একটি দেশ দরিদ্র্য হওয়ার পিছনে মূলত দেশটি নিজেই দায়ী থাকে।
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র সংজ্ঞা:
রহিত Bura এর মতে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র বলতে এমন একটি প্রপঞ্চকে বুঝায় যেখানে দারিদ্র্য পরিবারসমূহ দারিদ্র্যের ফাঁদে আটকে পড়ে থাকে যা কমপক্ষে তিন পুরুষ পর্যন্ত থাকে। এ সকল পরিবারের মালিকানায় সীমাবদ্ধ বা কোন সম্পদ থাকে না।
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র উৎপত্তিঃ
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ধারণাটি অধ্যাপক নার্কস কর্তৃক প্রণীত। এ অর্থনীতিবিদ তাঁর Theory of big plesh তত্ত্বে বলেন একটি দেশ দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের কারণে চিরকালই দারিদ্র্য থাকে। তাঁর মতে একটি দেশ দারিদ্র্য কারণ সে দারিদ্র্য। একটি দেশ দারিদ্র্য কারণ সেদেশে মূলধনের স্বল্পতা রয়েছে।
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের কারণসমূহ
দারিদ্র্য চক্রের কারণসমূহঃ দারিদ্র্য দ্বারা এমন একটি অবস্থাকে বোঝানো হয় যেখানে মানুষ তার জীবন ধারনের জন্য নূন্যতম প্রয়োজনসমূহ থেকে বঞ্চিত থাকে। কোনো দেশ একবার দারিদ্র্য চক্র দ্বারা আক্রান্ত হলে তা পর্যায়ক্রমে কয়েক প্রজম্ম পর্যন্ত চলতে থাকে। নিম্নে দারিদ্র্য চক্রের কারণসমূহ আলোচনা করা হলো।
১। পারিবারিক পটভূমিঃ
অনুন্নত দেশের দারিদ্র্য চক্রের অস্তিত্বের পিছনের কারণগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় পারিবারিক পটভূমি তথা পিতামাতা অথবা বংশগত কিছু প্রপঞ্চ দারিদ্র্য সৃষ্টির জন্য দায়ী।
২। শিক্ষাব্যবস্থার ভিন্নতাঃ
অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশসমূহে শিক্ষাব্যবস্থার পার্থক্য লক্ষণীয় । উদাহরণস্বরুপ বলা যায় বাংলাদেশের অভিজাত এলাকায় শিশুদের জন্য কিন্ডার গার্ডেন, ইংলিশ মিডিয়াম, ইংলিশ ভার্সন শিক্ষাব্যবস্থা আছে অন্যদিকে গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় দেখা যায় এখানকার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত থাকে। এক্ষেত্রে গ্রামীণ ও শহরে শিশুদের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
৩। দারিদ্র্যের সংস্কৃতিঃ
সাধারণ অর্থে সংস্কৃতি বলতে মানুষের বিশ্বাস, ভাষা , আচার-আচরণ, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি বা জীবন প্রণালিকে বুঝায়। গবেষকগণ দাবি করেন দারিদ্র্য চক্রকে স্থায়ী ও গতিশীল করার জন্য দারিদ্র্যের কিছু নিজস্ব সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বা দৃষ্টিভঙ্গী থাকে। এ সকল মূল্যবোধ একটি সমাজকে কয়েক প্রজম্ম দারিদ্র্যের ফাঁদে বেঁধে রাখে।
৪। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি ঘাটতিঃ
দারিদ্র্যের চক্রে আটকে থাকা পরিবারগুলোর পুষ্টিকর খাবার, সুপেয় পানি, চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সামর্থ্য থাকে না। ফলে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, যা পরবর্তীতে তাদের কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতাকে সীমিত করে। স্বাস্থ্যহীন একটি জাতি উন্নয়নের পথে এগোতে পারে না।
৫। অর্থনৈতিক বিনিয়োগ অভাবঃ
অনুন্নত দেশের দরিদ্র পরিবারগুলোতে মূলধনের অভাব প্রচণ্ড। তারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারে না, কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে না এবং কোনো ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিতে পারে না। ফলে একই দারিদ্র্য পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি ঘটে।
সর্বশেষ বলা যায় যে, দারিদ্র্য সৃষ্টির জন্য বহুবিধ কারণ দায়ী থাকে, কোনো সমাজের উপর কোন দারিদ্র্য নেমে আসবে কি না তা কতকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে।

No comments:
Post a Comment