📚 কার্ল মার্কসের এর উদ্ধৃত্ত্ব মূল্য তত্ত্ব সম্পর্কে লিখ
কার্ল মার্কস (Karl Marx) ছিলেন সাম্যবাদী চিন্তাধারা ও কার্যপ্রণালির প্রথম পথ নির্দেশক। মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারায় সমাজ বিবর্তন তত্ত্ব তথা বিখ্যাত সমাজতান্ত্রিক মতবাদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কার্ল মার্কস (Karl Marx) যে কয়টি নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন তার মধ্যে “উদ্ধৃত্ত্ব মূল্য তত্ত্ব” ছিলো অন্যতম। কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর “উদ্ধৃত্ত্ব মূল্য তত্ত্ব” একটি মৌলিক আবিষ্কার। ১৮৬৭ সালে কার্ল মার্কস তাঁর “দাস ক্যপিটাল” নামক গ্রন্থে সমাজতন্ত্রের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উদ্ধৃত্ত্ব মূল্য তত্ত্বের আবতারণা করেন।
কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর উদ্ধৃত্ত্ব মূল্য তত্ত্বঃ পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার শ্রমিক উৎপাদন উপকরনের মালিকানা বা অংশীদারিত্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এমতবস্থায় শ্রমিকের পক্ষে স্বীয় শ্রমিকের পক্ষেস্বীয় শ্রমশক্তি বিক্রয় করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। শ্রম ব্যায়ের মাধ্যমে উৎপাদিত দ্রব্যর মুল্য এবং মালিকের পারিশ্রমিক বা মজুরির মধ্যকার যে পার্থক্য ঘটে তাই উদ্ধৃত্ব মূল্য তত্ত্ব। উদ্ধৃত্ব মূল্য সম্পর্কে কার্ল মার্কস সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে যে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন তাই উদ্ধৃত্ব মূল্য তত্ত্ব।
আধুনিক সমাজতন্ত্রবাদের জনক কার্ল মার্কস যে কয়টি মূল সূত্রের উপর নির্ভর করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সমাজতন্ত্রের যে ব্যাখ্যা প্রদান করেন তারমধ্যে অন্যতম মূল সূত্র ছিলো “উদ্ধৃত্ব মূল্য তত্ত্ব”।
সনাতনী শ্রম তত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত হলেও এটি ছিলো কার্ল মার্কসের একটি মৌলিক আবিষ্কার। কার্ল মার্কস ইংরেজ অর্থনীতিবিদ রিকার্ডো এবং ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদের ''Labour theory of value'' বা মূল্যের শ্রম তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, কোনো সামগ্রীর মূল্যর সর্বপ্রধান উপাদান হলো শ্রম। কাঁচামাল বা মূলধন উৎপাদনের উপাদান এবং জমি ইত্যাদি সবই মূলত প্রকৃতির দান। মানুসের শ্রম ভিন্ন এগুলোকে সামগ্রিকে রুপান্তরিত করা সম্ভব নয়। সুতরাং কোন দ্রব্যের প্রকৃত মূল্য তার পশ্চাতে ব্যয়িত শ্রমের ফল ছাড়া অপর কিছু নয়। এজন্য কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর মতে একমাত্র শ্রমের মাপকাঠিতেই আর বন্টিত হওয়া উচিত শ্রমিকদের শ্রমের ফলে উৎপন্ন সামগ্রী হতে লব্ধ আয় একমাত্র শ্রমিকদেরই প্রাপ্য অপর কারো এতে অংশ থাকা বৈধ এবং অযৌক্তিক। শ্রমের মূল্য সম্পর্কে কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর এই ধারণা “কার্ল মার্কসের উদ্ধৃত্ব মূল্য তত্ত্ব” নামে খ্যাত।
পরিশেষে বলা যায় যে, যদিও কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর উদ্ধৃত্ব মূল্য তত্ত্বের অনের সমালোচনা রয়েছে তবুও একথা বলা যায় যে, এ তত্ত্বটি একটি মৌলিক আবিষ্কার। এ তত্ত্বের মধ্য দিয়ে পুঁজিপতি শ্রেশি কর্তৃক শ্রমিক শ্রেণিকে শোষনের বিষয়টি পরিস্ফুট হয়ে উঠে। আধুনিক শিল্পপতির সহজাত দোষ-ত্রুটির নির্ভীক সমালোচনা দ্বারা শ্রমিক শ্রেণির প্রতি ন্যায্য ও অনুযোচিত ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা উদ্ধৃত্ব মূল্য তত্ত্বের মধ্যে দিয়ে অনেকাংশে প্রতিভাত হয়ে উঠেছে।