Karl Marx কার্ল মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব কী?

Karl Marx কার্ল মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব কী?

📚মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব বলতে কী বুঝায়?

ভূমিকা: মার্কসের অর্থনৈতিক মতবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব বা Surplus value Theory. উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্বের এই মার্কসীয় সিদ্ধান্ত পুঁজিপতি শোষণের রহস্য উদঘাটন করেছে। এ কারণে পুঁজিতন্ত্রের ধ্বংসের জন্য, নতুন সাম্যবাদী সমাজ সৃষ্টির জন্য সংগ্রামরত শ্রমিকদের হাতে এই শিক্ষা এক অমূল্য অস্ত্র। মার্কসের এই উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব তাঁর অর্থনৈতিক তত্ত্বের মূলকথা।
কার্ল মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব


উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব (Surplus value Theory):

সাধারণ অর্থে উদ্বৃত্ত মূল্য বলতে বুঝায় সেই মূল্যকে যা পুঁজিবাদী সমাজে মালিকশ্রেণি শ্রমিক শোষণ বা তাদের মজুরি কম প্রদান করে মুনাফা হিসেবে যে অতিরিক্ত অংশ লাভ করে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা থাকে কয়েকজন ব্যক্তির হাতে। এরা হলেন পুঁজিপতি। অপরদিকে থাকে বিপুল সংখ্যক জনগণ যাদের জীবিকা অর্জনের জন্য পুঁজিপতির কাছে শ্রম বিক্রয় করতে হয়। পুঁজিপতিরা মজুরির বিনিময়ে শ্রমিকের কাছ থেকে শ্রম বিক্রয় করে। কিন্তু শ্রমিকেরা শ্রম দিয়ে যে দ্রব্য উৎপাদন করে তার সমপরিমাণ মজুরি তারা পায় না। অর্থাৎ উৎপন্ন সামগ্রীর বিনিময় মূল্য থেকে যে পরিমাণ মূল্য শ্রমিককে দেওয়া হবে না, তাই হলো উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব।


মার্কসের মতে, শ্রমই যেহেতু উৎপাদনের প্রধান উপায় সেহেতু উৎপাদিত মূল্যের প্রদান অংশ শ্রমিকেরই প্রাপ্য। কিন্তু শ্রমিক যা - উৎপাদন করে তার যথার্থ মূল্য সে পায় না। শ্রমিকের উৎপাদিত দ্রব্যমূল্যের বিরাট অংশ মালিক আত্মসাৎ করে মালিকের এই আত্মসাৎ ও মূল্যই হলো উদ্বৃত্ত মূল্য বা Surplus Value, মার্কস বিশ্বাস করতেন নর যে অন্যান্য পণ্যের ন্যায় মানুষের শ্রমশক্তিও পণ্য। এই পণ্যের দুইটি এত মূল্য রয়েছে। যথা: বিনিময় মূল্য ও ব্যবহারিক মূল্য। মার্কস বলেছেন, শ্রমের বিনিময় মূল্য ও ব্যবহারিক মূল্যের মধ্যে পার্থক্য না রয়েছে। কেননা একজন শ্রমিক সারাদিন কাজ করার পর তাকে জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে পরিমাণ শ্রম এম একজন শ্রমিক বিক্রি করে সেই পরিমাণ মজুরি তারা পায় না। প্রং অন্যদিকে পুঁজিবাদী সমাজে পুঁজিপতিরা ইচ্ছাকৃতভাবে শ্রমিকদের ছাঁটাই করে প্রচুর পরিমাণ ভাসমান প্রতিযোগী তৈরি করে যাতে ত্ব শ্রমিকদের দিয়ে স্বল্প মজুরিতে অধিক পরিমাণ মুনাফা অর্জন করা এত যায়। এদিকে শ্রম বিক্রি না করলে শ্রমিকদের যেহেতু বেঁচে থাকার এর উপায় নেই; সেহেতু তারা বাধ্য হয়েই শ্রম বিক্রি করতে রাজী হয়। এর মার্কস বলেছেন, উদ্বৃত্ত মূল্য শ্রমিকদের দ্বারা তৈরি অথচ শ্রমিকরা এর ও প্রাপ্য নয়। তাই মার্কস এই উদ্বৃত্ত মূল্যকে চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে অর্জিত

মূল্য বলে গণনা করেছেন। উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টিকে মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা যায়: M-C-M অর্থাৎ পুঁজিপতির টাকা (M-Money) নিয়ে বাজার হতে যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও শ্রমশক্তি ক্রয় করে এবং তাদের সমন্বয়ে পণ্য (C-Commodity) উৎপাদন করে তা বাজারে গিয়ে অধিক মূল্যে (M-more money) বিক্রি করে। টাকাই উৎপাদনের শুরু এবং শেষ। পুঁজিপতিদের উৎপাদনের। উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। অতএব প্রথম M এবং দ্বিতীয় M এর মধ্যে পার্থক্য থাকে। এই প্রথম M এবং দ্বিতীয় M এর মধ্যকার পার্থক্যকেই (M-M) মার্কস উদ্বৃত্ত মূল্য বলেছেন। বিষয়টি একটি সহজ উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়। যেমন: একজন কাপড় ব্যবসায়ী তার কারখানা থেকে এক বছরে মোট দশ লক্ষ টাকার কাপড় বিক্রি করল। এই কাপড় উৎপাদন করতে তার (কারখানার বাড়ি ভাড়া + যন্ত্রপাতি কাঁচামাল শ্রমিকদের বেতন, বোনাস ও অন্যান্য খরচ বাবদ) মোট ৬ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। তাহলে এক বছরে ঐ ব্যবসায়ীর ১০ লক্ষ ৬ লক্ষ টাকা) = ৪ লক্ষ টাকা মুনাফা হিসাবে পেল। এই ৪ লক্ষ টাকাই = উদ্বৃত্ত মূল্য। এই উদ্বৃত্ত মূল্য দুইভাবে বাড়ানো যায়। যেমন: ১. শ্রম দিনের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে, ২. প্রয়োজনীয় শ্রম-সময় কমিয়ে। মার্কসের মতে শ্রমই পারে উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টি করতে। সুতরাং = শ্রমিককে শোষণ করেই মুনাফা অর্জিত হতে থাকে। মালিকের ন মুনাফা যত বাড়তে থাকে শ্রমিক তত বেশি শোষিত হয়। মালিক 'চায় মজুরি কমাতে এবং কাজের ঘণ্টা বাড়াতে যাতে উদ্বৃত্ত মূল্য বাড়ে। অপরদিকে শ্রমিকরা চায় মজুরি বাড়াতে। এর ফলে শ্রমিক শ্রেণি ও পুঁজিপতিদের মধ্যে শ্রেণিসংগ্রাম অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, উৎপন্ন সামগ্রীর বিনিময় মূল্য থেকে যে পরিমাণ মূল্য শ্রমিককে না দিয়ে মালিকশ্রেণি তা অতিরিক্ত মুনাফা হিসাবে রেখে দেয় তাই হলো এ উদ্বৃত্ত মূল্য। এর সৃষ্টি হয় মূলত শ্রমিক শোষণের মাধ্যমে এবং পুঁজিপতিরা ইচ্ছাকৃতভাবে উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টি করে। তবে মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বৃত্ত মূল্য চৌর্যবৃত্তির সমান। আর এই উদ্বৃত্ত মূল্য নিয়ে মার্কসসহ অন্যান্য তাত্ত্বিক ও দার্শনিক যে তাত্ত্বিক কাঠামো প্রণয়ন করেছে তা উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব বা Surplus Value Theory নামে পরিচিত।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post