রাজনৈতিক উন্নয়ন কী? রাজনৈতিক উন্নয়নের নির্ধারক গুলো কী কী?

রাজনৈতিক উন্নয়ন কী? রাজনৈতিক উন্নয়নের নির্ধারক গুলো কী কী?

রাজনৈতিক উন্নয়ন কী?

রাজনৈতিক উন্নয়ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জনগণকে সংগঠিত করে, সক্রিয় করে এবং তাদের অংশগ্রহণের প্রতি নির্দেশ করে। রাজনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি অর্থনৈতিক ধারনার সাথে সম্পৃক্ত।
রাজনৈতিক উন্নয়ন কী? রাজনৈতিক উন্নয়নের নির্ধারক গুলো কী কী?

রাজনৈতিক উন্নয়নঃ সাধারণভাবে, একটি সমাজ বা দেশের রাজনৈতিক অবস্থার অগ্রগতিকে রাজনৈতিক উন্নয়ন বলে। অন্যভাবে, পাশ্চাত্য উন্নয়ন মডেলের অনুরুপ প্রক্রিয়া তৃতীয় বিশ্বে প্রয়োগই হলো রাজনৈতিক উন্নয়ন।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান S.M. Lipset বলেন-“যে দেশে শিল্পায়নের মাত্রা অধিক, শহরাঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যা বেশি, শিক্ষার হার বেশি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে  সেখানে গণতন্ত্রের তথা রাজনৈতিক উন্নয়নের সম্ভবনা রয়েছে।”
 H.P Huntiagtonবলেন-“রাজনৈতিক উন্নয়ন বলতে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানিকীকরণকে বোঝায়।”
Dominic Harrod বলেন-“রাজনৈতিক উন্নয়ন হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থার এমন একটি অবস্থা, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করে। যে অর্থনৈতিক উন্নয়নই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় সেই রাজনৈতিক ব্যবস্থাই রাজনৈতিক উন্নয়ন।”
G.A, Almon ('Comittee on Comparative Politics of the social science research council') এর মতে-“রাজনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামোগত পৃথকীকরণ, ক্ষমতার প্রয়োজনীযতা এবং একত্রীকরণ ও খাপ খাওয়ানোর দক্ষতার এক নিরবিচ্ছিন্ন পারস্পরিক  ক্রিয়া  প্রতিক্রিয়ার প্রক্রিয়া বিশেষ।
এতএব রাজনৈতিক উন্নয়ন হলো রাজনীতির উন্নয়ন। যা একটি দেশ ও সমাজের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা একটি দেশের উন্নয়ন সে দেশের রাজনীতি ব্যভস্থার উপর নির্ভর করে তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে রাজনীতির উন্নয়ন প্রয়োজন।

রাজনৈতিক উন্নয়নের নির্ধারক গুলো কী কী?

রাজনৈতিক উন্নয়ন ধারণাটি মূলত রাজনীতির উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত। এটি একটি আপেক্ষিক ধারণা। রাজনৈতিক উন্নয়নের কতকগুলো নির্ধারক বা উপাদান  বিদ্যমান যা রাজনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।
রাজনৈতিক উন্নয়নের নির্ধারকসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১। জাতীয়তা ও জাতীবদ্ধতাঃ বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক যে মতাদর্শ বা চিন্তাধারা সেগুলো জাতীয়তা বিকাশের অন্তরায় হিসেবে দেখা যায়। যার পিছনে সনাতন বিশ্বাস কাজ করে। এক্ষেত্রে মানুষের মনে দুই শ্রেণির জাতীয়তাবাদ লক্ষ্য করা যায়।একটি দুর্বল জাতীয়তা ও অন্যটি এলিট শ্রেণির প্রবল জাতীয়তাবোধ। এই জাতীয়তা ও জাতীয়তাবোধ রাজনৈতিক উন্নয়নকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
২। আইনসভা ও রাজনীতিঃ রাজনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম নির্ধারক হলো আইনসভা ও রাজনীতি সংসদীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতা দলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দিতা তৈরী হয়। আর  এতে জনগণের অভাব অভিযোগ কিছুটা হলেও লাঘব হয়। জনগণ ভোটধিকারের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে। আর তাদের দায়দায়িত্ব অনেক বেশি।
৩। সেনাবাহিনীঃ একটি সেই দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হলে সেনাবাহিনীর কোন বিকল্প নেই।
৪। গোষ্ঠী ভূখন্ড সম্প্রদায়ঃ রাজনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম নির্ধারক হলো গোষ্ঠী ভূখন্ড সম্প্রদায় । এগুলি রাজনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে। একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডের নির্দিষ্ট গোষ্ঠী আলাদা রাজনীতি বিরাজ করে। যেমন পার্বত্য অঞ্চলে আলাদা জীবন যাত্রার মান তািই সেখানে আলাদা রাজনীতির উন্নয়ন বিরাজ করে।
৫। সর্বজনীন ভোটাধিকারঃ রাজনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম নির্ধারক হলো সর্বজনীন ভোটাধিকার। তৃতীয় বিশ্বে ভোট দেওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য শুধুমাত্র ১৮ বছর হলেই চলে। অন্য কোন যোগ্যতা দেথা হয় না। যেটি রাজনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬। সিভিল সার্ভিসঃ উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আমলাদের দক্ষ ও অদক্ষতার প্রশ্ন উঠে। তাই রাজনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এই সিভিল সার্ভিসকে ঢেলে সাজাতে হবে।
৭। জনমতঃ রাজনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম নির্ধারক হলো জনমত। কেননা জনমত ছাড়া কোনভাবে রাজনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই জনমত বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিশেষে বলা যায় যে, দেশের স্বার্থে ও দেশের মানুষের স্বার্থে রাজনৈতিক উন্নয়ন কাজ করে এবং রাজনৈতিক উন্নয়ন করতে হলে এর নির্ধারক সমুহের উপর জোর দিতে হবে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post