ম্যালথাস কে ছিলেন? জনসংখ্যা নব্য-ম্যালথাসীয় তত্ত্ব আলোচনা কর

ম্যালথাস কে ছিলেন? জনসংখ্যা নব্য-ম্যালথাসীয় তত্ত্ব আলোচনা কর

ম্যালথাস কে ছিলেন?

➣ভূমিকাঃ যেসব মনীষী এবং চিন্তাবিদ জনসংখ্যা বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছেন তাদের মধ্যে টমাস রবার্ট ম্যালথাস অন্যতম। জনসংখ্যা বিষয়ে তার তত্ত্বটি ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছিল। 

ম্যালথাস কে ছিলেন? জনসংখ্যা নব্য-ম্যালথাসীয় তত্ত্ব


ম্যালথাসের পরিচয়ঃ

টমাস রবার্ট ম্যালথাস ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ ধর্মযাজক এবং অর্থনীতিবিদ। ১৭৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জিসার্স কলেজে পড়াশোনা করেন।তিনি ১৭৯৩ সালে কলেজ থেকে ফেলো ডিগ্রি লাভ করেন ম্যালথাস ১৮০৪ সালে বিয়ে করেন এবং এ বছরেই তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর Haileybury কলেজ এ হিস্টরি এন্ড পলিটিক্যাল ইকোনোমি বিষয়ে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি সফলতার সাথে অধ্যাপনা করেন। ম্যালথাসের জনসংখ্যা বিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থ An Eassy on the principle of population এ বইটি দুই খন্ডে বিভক্ত ছিল। প্রথম খন্ডটি প্রকাশিত হয় ১৭৯৮ সালে। বইটি প্রকাশের সাথে সাথে সব মহলে দারুণ উত্তেজনা ও কৌতূহলের সৃষ্টি করে।

১৭৯৮ সালে প্রকাশিত এ বিখ্যাত গ্রন্থেই তিনি তার জনসংখ্যা বিষয়ক তথ্যটি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।এ তথ্যে তিনি খাদ্য উৎপাদন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে একটা সম্পর্ক নির্ণয়ের চেষ্টা করেছিলেন। এ তথ্যটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং সবার কাছে ম্যালথাসীয় জনসংখ্যা তত্ত্ব নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৮৩৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পরিশেষে বলা যায় যে সামাজিক মনোবিজ্ঞানে টমাস রবার্ট ম্যালথাস একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তার বিভিন্ন অবদানের মধ্যে জনসংখ্যা বিষয়ক তথ্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


জনসংখ্যা নব্য-ম্যালথাসীয় তত্ত্ব আলোচনা কর


জনসংখ্যা বর্তমান বিশ্বে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি বিশ্বের অনেক দেশে ইতিমধ্যে ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। জনসংখ্যা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে নব্য ম্যালথাসবাদীরা মূলত ম্যালথাসের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত। তবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বিবাহ না করা, যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা ইত্যাদির মত নৈতিক কাজ সমর্থন করেন।

নব্য ম্যালথাসীয় কারাঃ

যে সকল সমাজ বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, পরিবেশ তত্ত্ববিদ, ভূগোলবিদ এবং জনবিজ্ঞানী জনসংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য ও বিবৃতিতে জোরালোভাবে সমর্থন ও প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন তাদেরকে নব্য ম্যালথাসীয় নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কারণ তারা ম্যালথাসের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অধিক জনসংখ্যার পরিণতি বা ক্ষতির প্রভাব সংক্রান্ত মতামতকে সমর্থন করেন। তবে এদের অধিকাংশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থমাস রবার্ট ম্যালথাসের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উপস্থাপিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তারা জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিকে প্রতিরোধ করার জন্য জন্ম শাসন অর্থাৎ জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণের পক্ষে জোরালো মতামত ব্যক্ত করেন কিন্তু দেরিতে বিবাহ,যৌনমিলনে বিরত থাকা এগুলোকে সমর্থন করেন না। জে.এস মিল, Dr. drysdale প্রমুখ পন্ডিত ব্যক্তি নব্য ম্যালথাসীয় নামে পরিচিত।

নব্য ম্যালথাসীয় তাত্ত্বিকদের মূল বক্তব্যঃ

ম্যালথাস জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিলম্বে বিবাহ, চিরকুমার্য, যৌন সংযমে বিরত থাকা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কথা বলেছেন। নব্য ম্যালথাসীয়রা ম্যালথাসের জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির ফলাফল বা পরিণতি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন।কিন্তু ম্যালথাস জনসংখ্যার অধিক প্রবৃদ্ধি রোধকল্পে যে প্রতিরোধ ব্যস্থার কথা উল্লেখ করেছেন তাতে তারা সন্তষ্ট নয়। এক্ষেত্রে তারা জম্ম নিয়ন্ত্রণের সকল আধুনিক পদ্ধতি, ঔষধ পত্র, কলাকৌশল এবং গর্ভনিরোধক যেসব চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে সেগুলোকে সমর্থন করেন। ম্যলথাস তার জনসংখ্যা তত্ত্বে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় গাণিতিক হারে। এর ফলে সৃষ্টি হয় জনধিক্য সমস্যা। ফলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। কিন্তু নব্য ম্যালথাসীয়রা বলেছেন যে দম্পত্তিদেরকে যৌন মিলনের আনন্দ থেকে বিন্দুমাত্র বঞ্চিত না করেও জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণে রাখা।আর সেটা হল জম্ম নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা। দম্পতিরা তাদের ইচ্ছা মতো জন্মনিয়ন্ত্রণের যেকোনো একটি স্থায়ী বা অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করে অবাধে নির্ভয়ে যৌন সংগ্রাম করতে পারবে। ফলে যৌন মিলনের আনন্দ থেকেও বঞ্চিত হবে না এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ পাবে। নব্য ম্যালথাসীয়রা নিবিঘ্নে সন্তান উৎপাদনের বিরোধী হলেও যৌনতা বিরোধী ছিলো না। 

পরিশেষে বলা যায় যে ম্যালথাসের মতে খাদ্য উৎপাদনের তুলনায় জনসংখ্যা দ্রুত বাড়বে। এর ফলে মানুষ অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশা সম্মুখীন হবে। অন্যদিকে নব্য ম্যালথাসবাদীরা যুক্তি দেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ করে জনসংখ্যাকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা সম্ভব।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post