রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ অলোচনা কর?

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ অলোচনা কর?

রাষ্ট্র হলো জনগণের চূড়ান্ত আশা ভরসার প্রতীক। মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ স্তরে চাহিদা পূরণ ও অধিকার সংরক্সণের জন্যই রাষ্ট্রে উৎপত্তি হয়েছে। রাষ্ট্র ছাড়া মানুষের পূর্ণ বিকাশ ঘটতে পারে না। তবে এই রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মাঝে বিতর্ক রয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রের উৎপত্তির কথা বলেছেন।

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ অলোচনা কর


রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদসমূহঃ রাষ্ট্রে উৎপত্তি সংক্রান্ত যেসব উল্লেখযোগ্য মতবাদ রয়েছে তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

১। ঐশী মতবাদঃ রাষ্ট্রে উৎপত্তি সংক্রান্ত প্রথম মতবাদ হলো ঐশী মতবাদ। এ মতবাদের মূল কথা হলো রাষ্ট্র ঐশ্বরিকভাবে সৃষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান।রাষ্ট্র মানুষের সৃষ্ট কোন প্রতিষ্ঠান নয়। রাজা বা শাসক ঐশ্বরিকভাবে সৃষ্ট তাই তারা নির্ভূল। তারা যা বলবে তাই সঠিক। যেহেতু রাজা বা শাসক ঐশ্বরিক সৃষ্টি তাই তারা শাসককে সর্বময় হিসেবে মানতো এবং ভাবতো রাজাই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু এ মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়।কেননা এটা মেনে নিলে রাজা স্বৈরাচারী হয়ে উঠার সম্ভবনা বেশি থাকে।এতে রাষ্ট্রে কল্যাণ ব্যাহত হতে পারে।

২। সামাজিক চুক্তি মতবাদঃ সামাজিক চুক্তির প্রবক্তা হলেন হবস, জন লক, রুশো। তারা বলেন রাষ্ট্র কোন ঐশ্বরিক ফল নয়। রাষ্ট্র হলো মানব সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। মানুষে মানুষে যখন পারস্পরিক সহযোগিতা কামনা করে তখন তারা চুক্তিবদ্ধ হয়ে একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা বিনিময় করত। এভাবেই পরস্পরের সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে এক সময় রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সামাজিক প্রবক্তার দার্শনিক হবস বলেন প্রকৃতির রাজ্যে সর্বত্র বিশৃঙ্খলা বিরাজ করত। তখন কোন রারষ্ট্র অস্তিত্ব ছিলো না। এজন্য প্রাকৃতিক রাজ্যে মানুষের জীবন ও জানমালের কোন নিরাপত্তা ছিলোনা। সবসময় মৃত্যুভয় ছিলো।এ কারণে তারা একসময় বুঝতে পারে  যে জীবনে যদি সুখ না থাকে তাহলে এসব দিয়ে কী হবে?ফলে তারা  সর্বশেষ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সামাজিকভাবে চুক্তি করে এবং একজন প্রতিনিধি বানায়। তাকেই সবাই মান্য করে। তার হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয় এভাবেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়।

৩। জৈব মতবাদঃ রাষ্ট্রে উৎপত্তি সংক্রান্ত অতি প্রাচীন একটি মতবাদ হলো জৈব মতবাদ। এই মতবাদের ধারণা প্লেটোর লেখনিতে পাওয়া যায়। জৈব মতবাদ অনুসারে রাষ্ট্রকে জীবনদেহের সাথে তুলনা করা হয়। জীবদেহের যেমন বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ রয়েছে তেমনি রাষ্ট্রে ও বিভিন্ন অংশ রয়েছে। রাষ্ট্রে সাথে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। মানুষ ছাড়া রাষ্ট্রে কথা কল্পনা করা যায় না।মানুষ সৃষ্টি হয়েছে বলেই রাষ্ট্রে সৃষ্টি হয়েছে। তােই বলা যায় রাষ্ট্র হলো মানুষের সৃষ্টি একটি প্রতিষ্ঠান।

৪। বিবর্তনমূলক মতবাদঃ বিবর্তনমূলক মতবাদ হলো একটি ঐতিহাসিক মতবাদ।বিবর্তনমূলক মতবাদের মূলকথা হলো রাষ্ট্র কোন আকস্মিক সৃষ্টি প্রতিষ্ঠান নয়। রাষ্ট্র একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফল। যা দীরে ধীরে বিভিন্ন ঘটনার প্রবাহের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। এটি কোন পরিবার সম্প্রসারিত ফল বা ঐশ্বরিক সৃষ্ট কোন প্রতিষ্ঠান নয়। বিবর্তনের বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে আজকের এই সমৃদ্ধশারী রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে।

৫। বল প্রয়োগ মতবাদঃ বল প্রয়োগের মূল কথা হলো জোর যার মুল্লুক তার। অর্থাৎ শক্তিমানরা সর্বদাই দূর্বলদের অত্যাচার করে পরাজিত করে আধিপত্য বিস্তার করে এভাবে যারা বেশি শক্তিমান তাদের কর্তৃত্ব সবাই মেনে নিয়েছে। এক সময় তাদের ক্ষমতা রাষ্ট্রে রুপ নিয়েছে।

৬।  পারিবারিক মতবাদঃঅনেকে মনে করেন পরিবার সম্পরসারিত হয়ে রাষ্ট্রে সৃষ্টি হয়েছে। কারণ পরিবার হলো রাষ্ট্রে একক। পরিবারই হলো বৃহৎ রাষ্ট্রে একটি সংক্ষিপ্ত রুপ। পরিবারে সবাই যেমন একজন কর্তার কথা মেনে চলে সেই চেতনা থেকেই রাষ্ট্রে উৎপত্তি হয়েছে।

সর্বশেষ বলা যায় রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত তত্ত্বের মধ্যে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতবাদ হলো বিবর্তনবাদী মতবাদ।

Comments

Popular posts from this blog

জনসংখ্যা সমস্যা কি? উন্নয়ণশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণসমুহ লিখ?

শিল্প বিপ্লব কি? সমাজবিজ্ঞান উদ্ভব ও বিকাশে শিল্প বিপ্লব ও ফরাসি বিপ্লবের ভূমিকা