উন্নয়নশীল দেশ কাকে বলে? উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্যসমূহ

উন্নয়নশীল দেশ কাকে বলে?  উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্যসমূহ

মাস্টার্স ফাইনাল- উন্নয়ন ও অনুন্নয়নের সমাজবিজ্ঞান 

ভূমিকাঃ- উন্নয়নশীল শব্দটি একটি গতিশীল অবস্থাকে নির্দেশ করে। তাই বলা যায়, যে সব দেশের জনগণ উন্নত জীবনযাত্রার মানের আশায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে সচেতনভাবে উন্নতির চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। দেশের সম্পদের পরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রমশ উন্নতির পথে ধাবিত হচ্ছে, যার ফলে ভবিষ্যৎ এ এসব দেশের উন্নয়নের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সেসব দেশকে উন্নয়নশীল দেশ বলে।

উন্নয়নশীল দেশ কাকে বলে?  উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্যসমূহ


উন্নয়নশীল দেশঃ  উন্নয়নশীল দেশ  বলতে সে সব দেশকে বোঝায় যে সব দেশে কিছুটা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং ক্রমশ উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আবার, উন্নয়নশীল দেশ বলতে স্বল্পোন্নত দেশ বা নিম্ন আয়ের দেশকে বোঝায়। এছাড়া যে সকল দোশের জীবনযাত্রার মান কম, অনুন্নত শিল্পাঞ্চভিত্তিক এবং মানব উন্নয়ন সূচক অপরাপর দেশের তুলনায় নিম্নমুখী সেগুলোকে উন্নয়নশীল দেশরুপে চিহিৃন্ত করা হয়। উন্নয়নশীল দেশসমূহে জনগণের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নত দেশের তুলনায় কম। বস্তুত, উন্নয়নশীল দেশ বলতে উন্নয়নের পথে ক্রমবর্ধমান দেশসমূহকে বোঝায়। উদাহরণস্বরুপঃ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, শ্রীলংকাসহ এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গণ্য করা যায়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ অধ্যাপক লুইস বলেন-*উন্নয়নশীল দেশ* হলো এমন একটি দেশ যেখানে একটি দেশের প্রতি ঘন্টায় কাজের ভিত্তিতে উৎপাদনের অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে।
অধ্যাপক মায়ার বলেন-*উন্নয়নশীল দেশ*হলো যে দেশে পদ্ধতিগতভাবেই দীর্ঘকালীন মেয়াদে প্রকৃত জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।
অধ্যাপক বেটারিক এর মতে-“ উন্নয়নশীল দেশ হলো এমন একটি উন্নয়ন প্রক্রিয়া  যা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ক্রমশ অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে।”
অধ্যাপক স্লাইডার এর মতে-“উন্নয়নশীল দেশ হলো মাথাপিছু উৎপাদন ক্ষমতার দীর্ঘকালীন অগ্রগতি যা জাতীয় উন্নয়ন কে ত্বরান্বিত করে ।”

ন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্যঃ

১। কৃষি উন্নয়নঃ অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২। আর্থসামাজিক অবকাঠামোর উন্নয়নঃ যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পানীয়জল ইত্যাদির উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র কাজ করছে
৩। বেকার সমস্যা হ্রাসঃ  বেকার সমস্যা সমাধানের 
জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
৪। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণঃ জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানান উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
৫। মূলধনের স্বল্পতাঃ এসকল দেশে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের ঘাটতি বিদ্যমান
৬। সম্পদের অসম্পূর্ণ ব্যবহারঃ মানবসম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি।
৭। জীবনযাত্রার মানের ক্রমউন্নতিঃ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাসস্থান উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।
৮। কারিগরি জ্ঞানের প্রসারঃ বর্তমানে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছে
৯। বৈদেশিক সাহায্যর উপর নির্ভরশীলঃ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য উন্নত দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উপর নির্ভরতা রয়েছে।
১০। সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশঃ সমাজে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রচলিত আছে, যা মাঝে মাঝে উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হয়।
১১। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাঃ অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতি উন্নয়নের গতিকে বাধাগ্রস্ত করে
১২। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিঃ ধীরে ধীরে আয় বাড়ছে, তবে এখনও উন্নয়নশীল দেশের মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় অনেক কম।
১৩। শিল্পায়নের বিকাশঃ হালকা ও মাঝারি শিল্পে অগ্রগতি হলেও ভারী শিল্প এখনো সীমিত
১৪। নারীর ক্ষমতায়নঃ নারীরা শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হচ্ছে, তবে এখনও সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা বিদ্যমান
১৫। বৈষম্যঃ ধনী-গরিব, শহর-গ্রাম, নারী-পুরুষ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনও ব্যাপক বৈষম্য রয়ে গেছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, তৃতীয় বিশ্বের যেসকল দেশসমূহ দরিদ্র‌্যতার কষাঘাত হতে বের হতে বের হয়ে তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্টায় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করছে তাকে উন্নয়নশীল দেশ বলা হয়।

No comments:

Post a Comment