সমাজতাত্ত্বিক সামান্যীকরণ কী? জ্ঞানালোকের যুগ কী

সমাজতাত্ত্বিক সামান্যীকরণ কী? জ্ঞানালোকের যুগ কী

ভূমিকা:- সামগ্রিক সমাজব্যবস্থায় জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় প্রয়োগ যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু সেটা নির্ধারণ করার উপায় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের তাত্ত্বিক সর্বজনীনতা। এ প্রেক্ষিতে একটি বিষয়কে বিজ্ঞান পদবাচ্য হতে হলে বিষয়টির তাত্ত্বিক সাধারণীকরণ ও সর্বজনীনতা অবশ্যই থাকতে হবে।

সমাজতাত্ত্বিক সামান্যীকরণ কী?

সাধারণীকরণ বা সামান্যীকরণঃ

সাধারণীকরণ হচ্ছে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রধান নির্ধারক।অতএব, সাধারণভাবে বলা যায় যে, সাধারণীকরণ হলো এমন এক ধরনের প্রক্রিয়া যাকে অনুসন্ধান কাজের ফলাফলের জন্য প্রযোজ্য বলে গণ্য করে।

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কোনো প্রপঞ্চ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও নবতর জ্ঞান লাভের বা জ্ঞান আহরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে সামান্যীকরণ প্রক্রিয়া। কেননা সাধারণীকরণ নিজেই ঘটনা এবং জ্ঞানের বাহক হিসেবে কাজ করে। কোন একটি তত্ত্ব সম্পর্কে যে সাধারণীকরণ নিজেই দাঁড় করানো হয় সেটি ভবিষ্যৎ অনুসন্ধান কাজের নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে যে সাধারণীকরণ করা হয় সেটি মূলত নিশ্চিত কিংবা স্থায়ী নয় বরং এটা প্রকৃতগতভাবে অস্থায়ী। এটাকে বলা হয় Variable generalization বা Approximate or probable generalization তবে এর পাশাপাশি কিছু Invariable generalization  ও রয়েছে যেগুলো সর্বজনীন সত্য অপেক্ষাকৃত স্থায়ী।

সমাজবিজ্ঞান কিংবা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে সাধারণীকরণের ক্ষেত্রে যে চিত্র ফুটে তোলে সেটা মূলত দুটি রূপ পরিগ্রহ করে। যথা- (ক) অভিজ্ঞতামূলক সাধারণীকরণ (খ) বিশ্লেষণাত্মক সাধারণীকরণ।

(ক) অভিজ্ঞতামূলক সাধারণীকরণ:

এ ধরনের সাধারণীকরণ অভিজ্ঞতামূলক বা পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভরশীল। এ ধরনের সাধারণীকরণের ক্ষেত্রে কোনো একটি Situation উদ্ভব হয়। কারণ, নির্ণয়ের বিষয়টি মূখ্য নয় বরং Situation টি কিরূপ সেটি মূখ্য।

(খ) বিশ্লেষণাত্মক সাধারণীকরণ:

এ ধরনের সাধারণীকরণের ক্ষেত্রে গবেষক তার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গবেষণা লব্ধ বিষয় সম্পর্কে একটি ব্যাখ্যা দাড় করানো। প্রপঞ্চ কার্যকরণ সম্পর্ক আবিষ্কার প্রচেষ্টা চালাই। এটাকে Empirical generalization এর পরবর্তী ধাপ বলে গণ্য করা হয়।

উপসংহারঃ সর্বশেষ বলা যায় সমাজিক বিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের আত্মপ্রকাশ ঘটার পর থেকে অদ্যাবধি সমাজ সম্পর্কিত প্রচুর গবেষণা ও তত্ত্ব  নির্মিত হলেও সার্বজনীন কোনো তত্ত্ব দাড় করানো সম্ভব হয়নি।করণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে এটা একটি নবীন বিজ্ঞান যা নিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় তত্ত্ব নির্মাণ কম হয়েছে। বস্তুত সমাজ একটি গতিশীল প্রতিষ্ঠান। সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তাছাড়া এক সমাজের জন্য যে তত্ত্ব প্রযোজ্য সেই তত্ত্ব অন্য সমাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। সুতরাং বলা যায় সমাজবিজ্ঞানের বা সমাজতাত্ত্বিকতত্ত্বের সামান্যীকরণ এখনো সম্ভব হয়নি।

জ্ঞানালোকের যুগ বলতে কী বুঝ?

সমাজজীবনের আদিকাল থেকে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ একেকটি যুগ পার করেছে। এ যুগের ধারাবাহিকতায় আধুনিক যুগের শুরু হয়েছিল ১৫শ শতক থেকে ১৮শ শতকের শেষ পর্যন্ত আর এ যুগকেই বলা হয় ইউরোপের আলোকিত যুগ। শিল্পবিপ্লব হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত আধুনিক যুগ বলে বিবেচিত। পাশ্চাত্য ইতিহাসে রোমের পতনকে প্রাচীন যুগের শেষ ও মধ্যযুগের সূচনা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু পূর্ব ইউরোপ রোমান সাম্রাজ্য থেকে রাইজানটাইন সাম্রাজ্যের অধীনে আসে, যার পতন আরো পরে ঘটে। ১৫ শতকের মাঝামাঝি গুটেনবার্গ আধুনিক ছাপাখানা আবিষ্কার করেন। যা যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফলে মধ্যযুগের সমাপ্তি ঘটে এবং বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূত্রপাত হয়। ১৮ শতকের মধ্যে ইউরোপে জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসার এমন একটি চরম অবস্থায় উপনীত হয় যা শিল্পবিপ্লবকে অবধারিত করে তুলে। বিশ্বের অন্যান্য অংশে বিশেষ করে প্রাচীন নিকট প্রাচ্য, প্রাচীন চীন, প্রাচীন ভারতে সভ্যতা ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়, যেমন চীনের অনন্য চার আবিষ্কার, ইসলামের স্বর্ণযুগ, ভারতীয় গণিত। তবে ১৮ শতকের পর হতে ব্যাপক ব্যবসা-বাণিজ্য ও উপনিবেশায়নের ফলে সভ্যতাগুলো বিশ্বায়িত হতে থাকে। গত পাঁচশো বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, জ্ঞানবিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, অস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতা, পরিবেশগত ক্ষতি প্রভৃতি অসামান্য গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বর্তমান বিশ্বের মানুষের সামনে একই সঙ্গে ব্যাপক সম্ভাবনা ও বিপদের দ্বার উন্মোচন করেছে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ স্থিতিশীল নয়। সব সময় পরিবর্তনশীল। এ কারণেই সমাজ কখনো এক অবস্থায় থাকবে না। কালের বিবর্তনের ধারায় মানুষের প্রয়োজনে সমাজের পরিবর্তন অব্যাহত থাকবে।

No comments:

Post a Comment