কেস স্টাডি কী?
সামাজিক সমস্যা অধ্যয়নে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণপদ্ধতি হলো কেস স্টাডি বা ঘটনা অনুধাবন পদ্ধতি। সামাজিক সমস্যার উম্মেষ ও বিকাশধারা জানার জন্য সামাজিক বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও আচরণ বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেস স্টাডির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বস্তুত বর্তমানকালে কেস স্টাডি একটি সামাজিক মাইক্রো বিশ্লেষণ বা ব্যষ্টিক বিশ্লেষণ হিসেবে পরিচিত।
কেস স্টাডি বা ঘটনা অনুধাবনঃ কেস স্টাডি মূলত কোন এককের সুষ্ঠু ও সুগভীর বিশ্লেষণ পদ্ধতি।
The Social work dictionary তে কেস স্টাডি সম্পর্কে বলা হয়েছে সাধারণত দীর্ঘ সময়ব্যাপী কোনো একজন ব্যক্তি, দল ও পরিবার অথবা সমষ্টির বহুবিদ বৈশিষ্ট্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরীক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করার একটি পদ্ধতি হলো কেস স্টাডি।
রুথ স্ট্রং বলেন কেস স্টাডি হলো গুণগত মান বিশ্লেষণের একটি পদ্ধতি যেখানে কোনো ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্ক ও পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং অনুধাবনকৃত তথ্য হতে কোন বিষয়ে সাধারণীকরণ ও অনুমতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সর্বশেষ বলা যায় যে কেস স্টাডি এমন একটি পদ্ধতি যা সামাজিক একককে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গভীরভাবে ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে থাকে।
কেস স্টাডির সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ
কেস স্টাডি সুবিধাঃ ১। দুই সেট ঘটনার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা সহজতর হয়।
২। এটি সুসংবদ্ধ অনুমান গঠনে সহায়তা করে।
৩। সমস্যা সম্পর্কে ব্যাপক ও গভীর ধারণা অর্জন করা যায়।
৪। কেস স্টাডির মাধ্যমে কোনো বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র লাভ করা যায়।
৫। এ পদ্ধতিতে এককের সমগ্র দিকের গবেষণা করা হয় বলে জ্ঞানের বিস্তৃতি ঘটে।
৬। কেস স্টাডি পদ্ধতিতে নমুনায়নের প্রয়োজন হয়না।
৭। এটি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সমস্যাবিলি গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।
৮। গবেষণার বিভিন্ন ত্রুটিসমূহ এ পদ্ধতিতে দূর করা যায়।
৯। এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্য কেবল সমাজকর্ম ও মনস্তাত্ত্বিক গবেষণার কাজেই শুধু প্রযোজ্য।
১০। এ পদ্ধতিতে একক সম্পর্কে আত্মনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
কেস স্টাডির অসুবিধাঃ কেস স্টাডির অসুবিধাসমূহ নিম্নরুপঃ ১। এ পদ্ধতিতে গবেষণার জন্য সংগৃহীত নথিপত্র বা তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা কম থাকে।
২। পদ্ধতিটি মেয়াদভিত্তিক এবং কোনো মূলনীতি ছাড়াই গবেষক এটি অনুধ্যান করে।
৩। এতে অনুসন্ধানকারীর পক্ষপাতদৃষ্টতার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৪। সংগৃহিত তথ্য সমূহ পরীক্ষা করার কোন কৌশল এতে নেই।
৫। কেস স্টাডিতে গবেষক উপসংহার সম্পর্কে ভূল সিদ্ধান্ত দিতে পারে।
৬। সামান্যিকরণ ও তুলনা করা অসম্ভব ও অসুবিধাজনক।
৭। কেস স্টাডি করতে অনেক শ্রম ও সময় প্রয়োজন হয়।
৮। ব্যক্তি উত্তর প্রদানের জন্য সহজ পন্থার আশ্রয় নেয়।
৯। কেস স্টাডি পদ্ধতিটি মানুষের স্মৃতিশক্তির উপর অধিকতর নির্ভরশীল।
১০। কেস স্টাডি পদ্ধতিতে বিষয়ের সামগ্রিকতা বজায় রেখে গবেষণা করা সম্ভব হয় না।
পরিশেষে বলা যায় যে, তথ্যা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ঘটনা অনুধ্যাবন পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এ পদ্ধতি অধিক উপযোগী একটি পদ্ধতি।