সমাজতত্ত্ব কি? সমাজতত্ত্ব পরিধি আলোচনা
ভূমিকাঃ- সমাজবিজ্ঞান একটি বৃহৎবিষয়। সমাজ জীবন এবং সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণার জন্য যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে। আর তাই এর পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। সমাজবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যেসব তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে তাদেরকেই সমাজতত্ত্ব বলে।
সমাজতত্ত্ব সংজ্ঞা:
সমাজতত্ত্বের ইংরেজি প্রতিশব্দ Sociology. যা Latin শব্দ Socius এবং গ্রীক শব্দ Logos এর সমন্বয়ে গঠিত। Society শব্দের অর্থ সমাজ ও Logos শব্দের অর্থ বিজ্ঞান। সুতরাং Sociology শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে Science of society বা সমাজের বিজ্ঞান।
সমাজতত্ত্ব প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ
সমাজতত্ত্বের কিছু প্রামাণ্য সংজ্ঞা রয়েছে নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।
ডেভিস ড্রেসলার এর মতে মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণমূলক বিজ্ঞানই হলো সমাজবিজ্ঞান।
ম্যাকাইভার ও পেজ বলেছেন- সমাজবিজ্ঞানই হলো একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ ও সামাজিক বিষয়ে পাঠ করে।
গিডিংস এর মতে-''সমাজবিজ্ঞান হল ঘটনার বিজ্ঞান''
এল টি হবহাউস এর মতে - মানুষের মনের মিথস্ক্রিয়ায় সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু
সমাজতত্ত্বের পরিধি বিস্তারিত আলোচনা
সমাজতত্ত্বের পরিধি আলোচনাঃ সমাজতত্ত্ব হচ্ছে মানব জীবন ও প্রকৃতির পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ। সমগ্র সমাজ ও সব ধরনের সামাজিক সম্পর্ক সামগ্রিক ভাবে সমাজতত্ত্ব বা সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্ভূক্ত। মানব সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। যার ফলে সমাজ কাঠামো এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। নিম্নে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
১। সমাজতাত্ত্বিক মতবাদঃ
সমাজতাত্ত্বিক মতবাদ সমাজের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা সম্পর্কে আলোচনা করে। তাছাড়া সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রত্যয় নীতি সম্পর্কে আলোচনা করে এবং সামঞ্জস্য সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করে।
২। ঐতিহাসিক সমাজতত্ত্বঃ
ঐতিহাসিক সমাজতত্ত্বের সাহায্য বিভিন্ন সময়ে সমাজের বিকাশ ধারা সম্পর্কে আলোকপাত করা যায়। এটা প্রাচীন সমাজের জীবনযাত্রা সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে।
৩। পরিবারের সমাজতত্ত্বঃ
পরিবারের সমাজতত্ত্ব পরিবারের উৎপত্তি, ক্রমধারা সম্পর্কে আলোচনা করে থাকে। তাছাড়া পরিবারের বিভিন্ন কার্যাবলি সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কেও আলোচনা করে।
৪। সামাজিক বিজ্ঞানঃ
সামাজিক জনবিজ্ঞানের মূল আলোচনার বিষয় হলো মানুষ। এটি জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জনগণের মৃত্যু, জম্ম প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে।
৫। গ্রামীণ এবং নগর সমাজতত্ত্বঃ
সামাজিক তত্ত্ব গ্রামীণ ও নগর সমাজ সম্পর্কে আলোচনা করে। তাছাড়া এটি গ্রামীণ ও নগর সমাজের কাঠামো নিয়ে তুলনামুলক আলোচনাও করে।
৬। রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বঃ
বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের সামাজিক পটভূমি, উপযোগিতা রাজনৈতিক ও নাগরিক আদর্শ সমূহের উদ্ভব ও বিকাশ, সরকার ও রাষ্ট্রের কার্যাবলি, রাষ্ট্রের সাথে সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সম্পর্ক এবং নাগরিকদের সম্পর্ক নিরুপণ করা রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের কাজ।
৭। ধর্ম সমাজতত্ত্বঃ
ধর্মের সমাজতত্ত্ব ধর্ম ও ধর্মীয় জীবন বিধান সম্পর্কে আলোচনা করে। এটি ধর্মীয় আচার-আচরণ, বিশ্বাস ও প্রথা এবং ধর্মের সামাজিক গুরুত্ব বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করে।
৮। শিক্ষা সমাজতত্ত্বঃ
শিক্ষা সংক্রান্ত আলোচনার ক্ষেত্রে শিক্ষা সমাজতত্তের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষা, শিক্ষার সাথে সামাজিক শ্রেণীর সম্পর্ক সম্পর্কে গঠন, পাঠন ও গবেষণা করে থাকে।
৯। শিল্প সমাজতত্ত্বঃ
শিল্প সমাজতত্ত্ব সমাজে শিল্পের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ এবং শিল্পের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়া শ্রমিকের সাথে মালিকের সম্পর্ক, ব্যাবস্থাপক তথা শিল্প কারখানার সম্পর্ক, ট্রেড ইউনিয়নের সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করে।
১০। সাংস্কৃতিক সমাজতত্ত্বঃ
সাংস্কৃতিক সমাজতত্ত্বের এ স্তরে বিভিন্ন বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করে। সাংস্কৃতিক রীতিনীতি ও সমাজজীবনে এর প্রভাব সম্পর্ক আলোচনা করা হয় সাংস্কৃতিক সমাজতত্ত্বে।
পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই সমাজতত্ত্বের পরিধির অন্তর্ভূক্ত।

No comments:
Post a Comment