📚 কার্ল মার্কসের পরিচয় দাও।
(প্রিলিমিনারী টু মাস্টার্স> সমাজবিজ্ঞান)
ভূমিকাঃ কার্ল মার্কস (Karl Marx) একজন প্রখ্যাত বিপ্লবী, সমাজ বিজ্ঞানী, এবং অর্থনীতিবিদ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তাঁর তত্ত্বগুলি সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল আধার, যা "মার্কবাদ" নামে পরিচিত।
তিনি হেগেলের দান্তিকবাদকে ইতিহাসের বস্তবাদী বিশ্লেষণ (Historical Materialism) হিসেবে রূপান্তরিত করেন, যেখানে ইতিহাসের পরিবর্তনগুলির কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক শ্রেণী সম্পর্ক এবং শ্রেণী সংগ্রামকে প্রধান ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। তার পদ্ধতিতে মানবিক ও সামাজিক উত্তরণের প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক বিষয়কে একমাত্র কারণ বলে চিহিৃত করা হয়। আন্যদিকে, অর্থনৈতিক উপাদানগুলির মধ্য শ্রেণী সংগ্রাম সর্বাধিক গুরুত্ব পায়।
কার্ল মার্কসের জীবন ও শিক্ষাগত যোগ্যতা
কার্ল মার্কসঃ ঐতিহাসিক দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্কস ছিলেন জাতিগতভাবে একজন জার্মান ইহুদি।
জম্মস্থানঃ কার্ল মার্কস প্রশিয়ার রাইনল্যান্ড প্রদেশের ট্রিউস শহরে ১৮১৮ সালে জম্মগ্রহণ করেন।
পিতামাতাঃ কার্ল মার্কসের পিতা হাইনরিখ মার্কস । তিনি পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন। কার্ল মার্কসের মাতা ছিলেন হল্যান্ডের নাগরিক। পরবর্তীকালে তার মাতা-পিতা খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করলেও তার কোন ধর্মমত ছিলো না।
শিক্ষাঃ কার্ল মার্কস (Karl Marx) মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি ট্রিভস এর স্থানীয় স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অতঃপর প্রথমে বন বিশ্ববিদ্যালয় ও পরবর্তীতে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন শাস্ত্র অধ্যায়ন করেন। কার্ল মার্কস আইন শাস্ত্র অধ্যয়ন করলেও তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্য ইতিহাস ও দর্শন ছিলো উল্লেখযোগ্য।
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে কার্ল মার্কস (Karl Marx) ইপিজিউরাসের দর্শন এর উপর জেনা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ক্রিয়ুস নামক শহরে জেনি ভন ভেস্টফালেনের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।
কার্ল মার্কস (Karl Marx) সমাজের বৈষম্য দূরীকরণে যে মূল্যবান অবদান রেখেছেন তার জন্য তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। কার্ল মার্কস ছিলেন আধুনিক ইতিহাস চর্চা জগৎ এর এক আলোড়িত ব্যক্তিত্ব।
কার্ল মার্কসের (Karl Marx) শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্ব
দূরদর্শী সমাজতাত্ত্বিক কার্ল মার্কস মানব (Karl Marx) সভ্যতার ইতিহাসকে শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস বলে অভিহিত করেন । এ প্রসঙ্গে তিনি অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, সভ্যতার সূচনা পর্ব থেকে সবল ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা প্রশাসন অপেক্ষাকৃত দুর্বলব্যক্তি ও রাজ্যের উপর স্বীয় প্রভাব বিস্তার করতে সদা সচেষ্ট থাকে । মার্কসের মতে, শ্রেণী সংগ্রাম একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা শেষ পর্যন্ত শোষিত শ্রেণীর বিপ্লব (Revolution) দ্বারা পরিবর্তিত হয়। এই তত্ত্বটি শুধু ইতিহাস বা রাজনীতি নয়, বরং আমাদের সমাজের প্রতিদিনের জীবনেও প্রযোজ্য।কার্ল মার্কসের শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্বের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হচ্ছে নির্দিষ্ট উৎপাদন ব্যবস্থায় সমাজের মধ্যকার শ্রেণি সম্পর্ক তুলে ধরা। আধুনিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রভাবে উদ্ধুদ্ধ হয়ে বঞ্চিত ও শোষিত শ্রেণী তাদের অধিকার আদায়ের জন্য ক্রমশ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন সহ নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করতে থাকে।
শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্বঃ কার্ল মার্কস যে সকল তত্ত্ব প্রদান করেছেন তার মধ্য অন্যতম হলো 'শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্ব' (Class Struggle theory)। সময় ও অবস্থার পেক্ষাপটে ঐতিহাসিক নিয়মেই ক্ষমতা, অর্থ ও উৎপাদন ব্যবস্থায় ক্রমশ পরিবর্তন সূচিত হয়। কারণ, অবহেলিত,শোষিত ও বঞ্চিত শ্রেণীর অসন্তষ্টি, ক্ষোভ ও ঘৃণা এক পর্যায়ে আন্দোলন ও বিদ্রোহের আকারে প্রকাশ পায় এবং এভাবে ঐতিহাসিক নিয়মে এগিয়ে চলে ইতিহাস। অতি সুক্ষভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে কার্ল মার্কসের শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্ব (Class struggle theory) প্রতিটি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তজার্তিক বিধিব্যবস্থার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। রাষ্ট্রের কর্মকর্তা কর্মচারী ও সাধারণ জনগণও সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত বেতন সুযোগ সুবিধা আদায় করতে সদা তৎপর। পক্ষান্তরে সরকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে অপেক্ষাকৃত কম বেতন ও কম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে জনগণের কাছ থেকে পর্যাপ্ত কর আদায় করতে বদ্ধ পরিকর। এবাবে শাসক ও জনগণের মধ্য চলতে থাকে শ্রেণী সংগ্রাম (Class struggle).
উপসংহার
কার্ল মার্কসের তত্ত্বগুলি শুধুমাত্র অতীতের নয়, বরং বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ। তার শ্রেণী সংগ্রাম তত্ত্ব বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে এবং এটি আধুনিক ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।