দৈবচয়িত নমুনায়নের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও সুবিধা অসুবিধাসমূহ
দৈবচয়িত নমুনায়ন: যে পদ্ধতিতে সমগ্রক (Population) এর প্রতিটি এককের (বা সদস্যের) নির্বাচিত হওয়ার সম্ভবনা সমান থাকে তাকে দৈবচয়িত নমুনায়ন পদ্ধতি বলা হয়। এতে নমুনার এককগুলো দৈবভাবে (বা ক্রমান্বয়ে) নির্বাচিত করার করণে ব্যক্তিগত ঝোঁক বা পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা কম থাকে।
সুতরাং বলা যায়, যে পদ্ধত্তিতে তথ্য বিশ্বের প্রতিটি একক বা উপাদান নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা সমান থাকে বা স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা সমান থাকে তাকে নৈব্যয়িত সমুলায়ন বা সম্ভাবনা সমুদায়ন বলে। এতে নমুনার এককগুলো নৈখায়িত ভাবে নির্বাচিত হবার কারণে গবেষক, পরিচালক বা বাক্তির পক্ষপাতিত্ব করার সম্ভাবনা থাকে না।
দৈবচয়িত নমুনায়ন পদ্ধতিসমূহ কি কি?
দৈবচয়িত নমুনায়ন পদ্ধতি আবার পাঁচ প্রকার। যথা-
১. সরল সৈব নমুনায়ন,২. স্তরকৃত নমুনায়ন, ৩. প্রণালিবদ্ধ নমুনায়ন, ৪. স্বাচ্ছ নমুনায়ন ও ৫. বহু পর্যায় নমুনায়ন।
১. সরল দৈব নমুনায়ন: দৈবচয়ন পদ্ধতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও সহজ নিয়ম হলো সরল দৈব নমুনায়ন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে নমুনায়নের সকল একক বা সদস্যের নমুনায় আসার সম্ভাবনা সমান থাকে। যখন সমগ্রক এক জাতীয় হয় তখন এই গদ্ধতি সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্যতা পায়। সরল দৈব নমুনায়ন পদ্ধতি সময়ের দিক বিবেচনায় দুই ভাগে ভাগ কার যায়।
(ক) পুরাতন পদ্ধতি ও (খ) নতুন পদ্ধতি যা আধুনিক পদ্ধতি।
২. স্তরকৃত নমুনায়ন: কোনো সমগ্রককে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভক্ত করে প্রতিটি বিভাগ হতে প্রয়োজনীয় সমুদা দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করার পদ্ধতিকে স্বরকৃত দৈব নমুনায়ন বলে। এ পদ্ধতিতে সমগ্রক বিশেষ উদ্দেশ্য কতকগুলো অংশভাগ করা হয়। এ ভাগগুলোকে বলা হয় স্তর। প্রতিটি জর হতে নমুনা দৈবচয়ন ভাবে সংগ্রহ করা হয়। সমগ্রকের খন্ডিতকরণ দৈবচয়িত নমুনায়ন ও উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন পদ্ধতির সংমিশ্রণে উদ্দেশ্যমূলক, কিন্তু নমুনা নির্বাচন সম্পূর্ণ দৈবচয়িত। প্রকৃতপক্ষে এ পদ্ধতিটির সৃষ্টি।
৩. প্রণালিবদ্ধ নমুনায়ন: কতগুলো নির্দিষ্ট নিয়মানুসারে এককগুলোকে চয়ন করা হয় বলে একে প্রণালিবদ্ধ নমুনায়ন। বলে। এই পদ্ধতিতে সমগ্র একক হতে একক বা সদস্য নির্বাচনের জন্য সরল দৈবচয়নের ন্যায় এককগুলোকে ক্রমিক নম্বর দিয়ে লিখতে হয়। সমগ্রকের একক সংখ্যা N. হলে এককগুলোকে ১,২,৩------ N দিয়ে প্রকাশ করতে হবে। এখান থেকে দৈব রাশিমালার সহিত একক নির্বাচন করতে হবে।
৪. গুচ্ছ নমুনায়ন: গুচ্ছ নমুনায়ন হলো এমন নমুনায়ন পদ্ধতি যেখানে সমগ্রক থেকে নমুনা উপাদান বা একটি করে নির্বাচন না করে দল বা গুচ্ছ হিসাবে নির্বাচন করা হয়। প্রতিটি গুচ্ছ সমগ্রকের ক্ষুদ্র প্রতিনিধিত্বকারী হতে নেয়া হয়। এরপর গুাচ্ছসমূহের একটি অংশকে নির্বিচারে নির্বাচন করা হয় এবং নির্বাচিত গুাজসমূহের মধ্যকার বিশ্লেষণের একককে আবার নির্বিচারভাবে নমুনার জন্য নির্বাচন করা হয়।
৫. বহুপর্যায় নমুনায়ন: ভাজ নমুনায়নের বর্ধিত রূপ হচ্ছে বহুপর্যায় নমুনায়ন। প্রথমে সমগ্রককে কয়েকটি গুচ্ছে রূপান্তরিত করে একক নির্বাচন করতে হবে। পরবর্তীতে নির্বাচিত এককগুলোকে আবারও গুচ্ছে পরিণত করে নমুনার একক নির্বাচিত করা হয়। এভাবে বহুপর্যায়ে দৈবচয়নের ভিত্তিতে একক নির্বাচন করা হয় বিধায় এই পদ্ধতির নাম বহুপর্যায় নমুনায়ন।
দৈবচয়িত নমুনা পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা বর্ণনা কর।
ভূমিকা: যে পদ্ধতিতে সমগ্রকের প্রতিটি একবের বা সদস্যদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা সমান থাকে। তাকে দৈবচয়িত নমুনায়ন পদ্ধতি বলা হয়। এতে নমুনার এককগুলো দৈবভাবে নির্বাচিত করা হয়। দৈবচয়িত নমুনা পদ্ধতির কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো। যথা-
দৈবচয়িত নমুনা পদ্ধতির সুবিধা
১. দৈবচয়িত নমুনায়ন হলো নমুনায়ন সংগ্রহের সবচেয়ে সহজতম ও সহজবোধ্য পদ্ধতি।
২. এ পদ্ধতি সম্পূর্ণ ব্যক্তি নিরপেক্ষ।
৩. এতে সময় অন্য আলাদা পদ্ধতির চেয়ে কম লাগে।
৪. অর্থের প্রয়োজনীয়তাও কম। অর্থাৎ স্বল্প খরচে গবেষণার নমুনায়ন সংগ্রহ সম্ভব।
৫. এ পদ্ধতিতে সংগৃহীত নমুনাসমূহ বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে সংগৃহীত হয়। যার ফলে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য।
৬. এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত নমুনা হতে নিরূপণ ও সেগুলোর বিচ্যুতির নিরূপক নির্ণয় করা সম্ভব।
দৈবচয়িত নমুনা পদ্ধতির অসুবিধা
১. এ পদ্ধতিতে সমগ্রকের সমান আর একটি নুতন সমগ্র তৈরি করতে হয়। যা অনেক সময় সম্ভব হয় না।
২. সমগ্রকের উপাদানগুলোর মধ্যে অধিক অসমত্ব থাকলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না।
৩. সমগ্রকের আকার বড় মাল নৈবচয়ন পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ প্রতিনিধিত্বকারী হয় না।
উপসংহার: পৃথিবীতে সকল কিছুরই ভালো মন্দ থাকে। আলো মন্দের মধ্য থেকে আমাদের ভালকে বেছে নিতে হয়। কেন সাবধানতার সাথে, ধৈর্য্যের সাথে দৈবচয়িত নমুনার অনুবিধাগুলো মোকাবেলা করা যায়, তবে দৈবচয়ন নমুনায়ন সফল হবে।

No comments:
Post a Comment