ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সহ সম্বন্ধ কি? সহ-সম্পর্ক ও নির্ভরণকের মধ্যে পার্থক্য লিখ
ভূমিকা: কোন চলক যদি প্রাকৃতিক বা যে কোন কারণে পরিবর্তিত হয় কায়লে তার প্রভাবে তার সাথে সামাজিকভাবে সংশ্লিষ্ট লোকগুলোও আপনা আপনি পরিবর্তিত প্রায়। সামাজিক প্রভাবগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হয়। তাদের এ সম্পর্ক সহজাত। তবে যে পরিবর্তন ধনাত্মক যা ঋণাত্মক যে কোনটিই হতে পারে।
ধনাত্মক সহনম্বন্ধ (possitive correlation): পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলাকের মধ্যে যদি একটি চলকের পরিবর্তনের সাতে সাথে অপর চলকটিও একই দিকে একই গতিতে পরিবর্তিত হয় তাহলে তাকে ধনাত্মক সহসম্বন্ধ বলে। উদাহরণস্বরূপ, বেকারত্বের যাত্রা বৃদ্ধি পেলে সন্ত্রাসের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। এখানে বেকারত্ব ও সন্ত্রাস দুটি চলকেরই মাত্রা একমুখী।
ঋণাত্মক সহ সম্বন্ধ (Negative correlation): পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত দুটি চলকের মধ্যে যদি একটি চলক একদিকে হয় দিতে এবং অপর চলকটি বিপরীত দিকে পরিবর্তিত হয় তাহলে তাকে ঋণাত্মক সহসম্বন্ধ বা বিপরীতমুখীসম্পর্ক
বলে।
উদাহরণস্বরুপ-
সমাজে আর্থিক সাচ্চলতা সাথে সাথে আর্থিক দুর্নীতি হ্রাস পায়। এখানে আর্থিক সাচ্চলতা ও আর্থিক দূর্ণীতি চলক দুটির মধ্যে ঋণাত্মক বা বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান।
এতএব, পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি চলকের একটির পরিবর্তনে অন্যটির মধ্যেও পরিবর্তন সৃষ্টি হয়। তবে যে পরিবর্তন একমুখী বা ঋণাত্মক আবার বিপরীতমুখৗ বা ঋণাত্মক যে কোনটিই হয়ে থাকে।
সহ-সম্পর্ক ও নির্ভরণকের মধ্যে পার্থক্য
সহ-সম্পর্ক ও নির্ভরণের মধ্যে কয়েকটি পার্থক্য নিম্নে তুলে ধরা হলো।।
১. দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে যে সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয় তা একই দিকে বা বিপরীত দিকে পরিবর্তনের প্রবণতা পরিমাণ করতে সহ-সম্পর্ক নির্ণয় করতে হয়।অপরদিকে, পরিবর্তনশীল দুটি চলকের একটি নির্দিষ্ট কোন মানের উপর ভিত্তি করে অপর চলকের অনুরূপ গড় মানের যে পরিবর্তন হয় তাকে নির্ভরণ বলা হয়।
২. সহ-সম্পর্কের গাণিতিক বা সংখ্যাত্মক প্রকাশ হলো সহ-সম্পর্ক সহগ বা আংক। নির্ভরণের গাণিতিক বা সংখ্যাত্মক প্রকাশ হলো নির্ভরাংক।
৩. সহ-সম্পর্ক এককমুক্ত বিশুদ্ধ সংখ্যা। নির্ভরণ বিশুদ্ধ সংখ্যা নয়।
৪. সহ-সম্পর্কের উদ্দেশ্য হলো উভয় চলকের মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা পরীক্ষা করা। নির্ভরণ দ্বারা একটি চলকের উপর অন্যটির কতখানি। নির্ভরশীলতা রয়েছে তা পরিমাপ করা হয়।
৫. সহ-সম্পর্ক দ্বারা পরিবর্তনের কারণ প্রকাশ পায় না। নির্ভরণ দ্বারা একটি চলকের পরিবর্তনই যে অপর চলকের পরিবর্তনের কারণ তা প্রমাণিত হয়।
৬. সহ-সম্পর্ক হলো সম্বন্ধযুক্ত চলকদ্বয়ের আপেক্ষিক পরিমাপ। নির্ভরণ হচ্ছে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটো চলকের পরম পরিমাপ।
৭. সহ-সম্পর্ক দ্বারা দুটি চলকের মধ্যে সম্পর্কের ধাপ জানা যায়। নির্ভরণ দ্বারা দুটি চলকের সম্পর্কের প্রকৃতি সম্বন্ধে জানা যায়।
৮. সহ-সম্পর্কে উভয় চলকই সমান গুরুত্ব পায় এবং কোনটি নির্ভরশীল বা স্বতন্ত্র তা নির্ধারিত হয় না। নির্ভরণে একটি চলক নির্ভরশীল এবং অন্যটি স্বতন্ত্র চলক হিসেবে নির্ধারিত হয়।
৯. সাধারণত একটি স্কেলার মান (–1 থেকে +1) দিয়ে সম্পর্কের মাত্রা বোঝানো হয়। একটি সমীকরণ বা রেখা (Line of best fit) দিয়ে দুটি চলকের মধ্যে নির্ভরতা প্রকাশ করা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, সহ-সম্পর্ক ও নির্ভরণ উভয়ই চলকগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হলেও, এগুলোর উদ্দেশ্য, ব্যাখ্যা ও ফলাফল ভিন্ন। সহ-সম্পর্ক কেবল চলকের মধ্যে সম্পর্কের উপস্থিতি ও তার দিক নির্দেশ করে, যেখানে নির্ভরণ চলকগুলোর নির্ভরতার মাত্রা ও পূর্বাভাস প্রদান করে। গবেষণার উদ্দেশ্য অনুসারে কোন পদ্ধতি প্রয়োগ হবে তা নির্ধারণ করতে পার্থক্যগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

No comments:
Post a Comment