প্রশ্নঃ ভূমিকম্পের কারণসমূহ আলোচনা কর
ভূমিকাঃ- পৃথিবীর প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে ভূমিকম্প এক অবিস্মরণীয় নাম। ভূমিকম্প হলো এমন এক ধরনের দূর্যোগ যা পুরো পৃথিবীর অর্ধেক অঞ্চল বা পুরো পুথিবী জুড়ে অনুভূত হতে পারে। ভূমিকম্পের ফলে বহু জিনিস ধ্বংস হয়ে যায়। বেশিরভাগ ভূমিকম্পের কারণ হল ভূগর্ভে ফাটল ও স্তরচ্যুতি হওয়া এছাড়া অন্যান্য কারণেও ভূমিকম্প হতে পারে যেমন: অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, খনিতে বিস্ফোরণ বা ভূগর্ভস্থে নিউক্লিয়ার গবেষণায় ঘটানো আণবিক পরীক্ষা।
ভূমিকম্প সৃষ্টির কারণসমূহঃ ভূমিকম্প সৃষ্টির বহুবিধ কারণ রয়েছে নিচে কয়েকটি কারণ আলোচনা করা হলো।
১। ভূ্-অন্দোলনঃ উত্তপ্ত ভূঅভ্যন্তরভাগ প্রতিনিয়ত আন্দোলিত হচ্ছে। যা প্রত্যক্ষভাবে ভূমির উপর পড়ে আর এজন্য ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
২। পাথর বা শিলাচ্যুতিঃ পাহাড়ের উচু স্থান থেকে যদি কোনো শিলা বা পাথর সরে যায় তবে ভূপৃষ্ঠে হালকা ঝাকুনি অনুভব করবে। এর ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
৩। বিস্ফোরণঃ বর্তমানের প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের ফলে মানুষ নানা ধরনের পারমানবিক জিনিস আবিষ্কার করেছে যার বিস্ফোরণের ফলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
৪। আগ্নেয়গিরির অগ্যুৎপাতঃ ভূমিকম্প সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো অগ্যুৎপাত। আগ্নেয়গিরি থেকে গলিত লাভা প্রচন্ড গতিতে যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
৫। ভূগর্ভে পানির উপস্থিতিঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভূগর্ভে পানি ঢুকে পড়ে। এ পানি ঢুকে পড়ার সাথে সাথে সেখানে উত্তাপে প্রচুর বাষ্পের সৃষ্টি হয় যা ভূপৃষ্ঠকে আন্দোলিত করে ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
৬। ভূগর্ভস্থ বাষ্পঃ বাষ্প বিভিন্নভাবে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠকে ধাক্কা দেই যার ফলে হালকা নড়াচড়া হয় ও পরবর্তীতে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
৭। খনিজ পদার্থের ভাঙনঃ পৃথিবীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে।যদি কোন কারণে এসব খনিজ পদার্থের ভাঙন ঘটে তবে ভূকম্পিত হয়।
৮। ভূগর্ভস্থ আগ্নেয় পদার্থঃ বর্তামানে আগ্নেয়গিরির অগ্যুৎপাতের কারণ ছাড়াই কখনো আগ্নেয় পদার্থের চাপে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বিভিন্ন ধাক্কাধাক্কির সৃষ্টি হয়।
৯। তাপ বিকিরণঃ পৃথীবি সৃষ্টির আদিকাল থেকেই তাপ বিকিরিত হচ্ছে। তাপ বিকিরণ করার পর প্রয়োজনীয় তাপ মহাকাশে ফিরে যাএয়ার ফলে পৃথিবী ঠান্ডা থাকে। ভূ-পৃষ্ঠ ঠান্ডা হওয়ার কারণে তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আর এ সংকোচনের ফলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
১০। ভূ-পৃষ্ঠের চাপ বৃদ্ধিঃ ভূ-পৃষ্ঠে নিম্ন স্থান থেকে পানি গঠিত হয়ে উঁচু স্তরে তা অবস্থান করে তখন সেখানকার চাপ অনুভূত হয়।সেই সাথে ভারী পাললিক শিলা নিচে চলে আসে এবং এর ফলে ভূ-আন্দোলন সৃষ্টি হয় যা ভূমিকম্প সৃষ্টি করে।
পরিশেষে বলা যায়, প্রধানত অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত ভূমিকম্পের কারণে ভূপৃষ্ঠের ব্যাপক রদবদল হয়েছে। ভূমিকম্পের জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে চলাচল করা উচিত।