প্রশ্নঃ ভূমিস্বত্ব প্রথা কি?
➢ভূমিকাঃ- সামাজিক স্তরবিন্যাসের মধ্যে অন্যতম স্তর হলো ভূমিস্বত্ব প্রথা। ভূমিস্বত্ব কখনো ভূসম্পত্তি আবার কখনো সামাজিক শ্রেণি ইত্যাদিকে বোঝায়। ইউরোপ এবং রাশিয়ার স্তরবিভাগ বলতে বুঝাতে এটি ব্যবহৃত হয়। এ স্তর ব্যবস্থায় প্রতিটি স্তর ভূমিস্বত্ব নামে পরিচিত।
ভূমিস্বত্ব প্রথাঃ মধ্যযুগে ইউরোপের সামন্ত্রতান্ত্রিক সমাজে প্রথমে ভূমিস্বত্ব প্রথা বলতে জমিদারি বুঝাতো। ইংরেজি Esitates শব্দের অর্থ একজন জমিদার। পরে রাশিয়াসহ পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সামন্ত ব্যবস্থার অধীনে এস্টেট শব্দটি এক ধরনের সামাজিক স্তর ব্যবস্থা তথা শ্রেণি ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উক্ত স্তর ব্যবস্থার প্রতিটি ভিন্ন গোষ্ঠী বা স্তর এস্টেটস বা ভূমিস্বত্ব নামে পরিচিত হইতো। যেমন- যাজক, অভিজাত এবং জনসাধারণ।ভূমিস্বত্ব প্রথা বা Estate system কে তিনভাগে ভাগ করা যায়।যথা-
(ক) যাজক শ্রেণীঃ যারা প্রার্থনা ও ধর্মীয় কাজে নিয়োজিত তাদেরকে যাজক শ্রেণী বলা হতো।
(খ) অভিজাত শ্রেণিঃ যুদ্ধ ও নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত লোকদের অভিজাত শ্রেণী বলা হতো।
(গ) সর্বসাধারণ শ্রেণিঃ যারা সকলের জন্য খাদ্যের ব্যবস্তা করেন তাদের সর্বসাধারণ শ্রেণি বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীনকালে ভূমিস্বত্ব প্রথা প্রচলিত ছিলো । যাজক ও অভিজাতগণ সমাজের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। বর্তমান সমাজের স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে ভূমিস্বত্ব প্রথার তেমন কোন ভূমিকা নেই।
প্রশ্নঃ ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আলোচনা কর
একটি দেশের ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা সে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে থাকে। ব্যবস্থা যদি ভালো হয় তাহলে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু দূর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ হলে তা নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে। আর প্রত্যেকটি সমাজেরই একটা নির্দিষ্ট কাঠামো থাকে যার উপর ভিত্তি করে সমাজ তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে।
ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে সম্পর্কঃ ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান । নিম্নে বিদ্যমান সম্পর্কগুলি তুলে ধরা হলো।
১। ভূমি ব্যবস্থা লতে ভূমির সাথে ভূমি ব্যবহারকারীর মালিকানা ও ভোগ দখলের আইনগত অবস।তাকে বুঝায়। আর সামাজিক শ্রেণি কাঠামো বলতে বুঝায় একটি বিশেষ মানবগোষ্ঠী দ্বারা গঠিত কাঠামোকে ব্যবস্থাকে । যারা অন্য গোষ্ঠি হতে স্বতন্ত্র এবং তদানুসারে কাজ করে।
২। ভূমি ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে শ্রেণি কাঠামো নির্ধারণ করা হয়। যার ভূমি যত বেশি সমাজকাঠামোতে সে তত মর্যাদাপূর্ণ।
৩। ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা কৃষির উন্নয়নের গতিধারা বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। একটি দেশের কৃষির উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা একান্ত অপিরহার্য। আবার কৃষি উন্নয়ন কৃষক শ্রেণির হাত ধরেই হয়। ভূমিস্বত্বের সাথে শ্রেণি কাঠামোরও উন্নয়ন আবশ্যই।
৪। ত্রুটিপূর্ণ ভূমিব্যবস্থা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধিকতা সৃষ্টি করে। আবার শ্রেণি কাঠামোর মধ্যে ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা বা ভূমি মালিকানার সুষ্ঠু বন্টন না হওয়ার ফলে উন্নয়ন অনেকাংশে ত্বরান্বিত হয় না।
৫। ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামো উভয়কে কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়।
৬। গ্রামীণ সমাজকাঠামোতে শ্রেণি কাঠামো নির্ধারণ অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্য করা যায়। আর্থিক পরিস্থিতি বা সম্পত্তির অধিকারের ভিত্তিতে শ্রেণি বিন্যাস করা হয়। গ্রামের অর্থনীতি হচ্ছে কৃষি এবং সম্পদ হচ্ছে ভূমি।
পরিশেসে বলা যায় যে ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ও শ্রেণি কাঠামো অনেকাংশেই একে অপরের উপর নির্ভরশীল। একটি সমাজ ব্যবস্থায় শ্রেণি কাঠামো যেমন অবশ্যম্ভী, তেমনি ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থাও অবশ্যম্ভী। সুতরাং এ দুয়ের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।