পরিবারের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর

পরিবারের বৈশিষ্ট্য বা মানদন্ডসমূহ লিখ

ভূমিকাঃ পরিবার হচ্ছে সমাজের সেই আদিম ক্ষুদ্রতম এবং স্থায়ী প্রতিষ্ঠান যেখানে নারী পুরুষ বিবাহের ভিত্তিতে একত্রে বসবাসের স্বৃকৃতি পায় ও সন্তান উৎপাদন এবং লালন পালন করে থাকে। পরিবার হলো সমাজের সবচেয়ে প্রাচীন প্রতিষ্ঠান যেখানে মানুষ সুখে-দুঃখে একত্রে বসবাস করে। পরিবার হলো সমাজের মূল ভিত্তি।
পরিবারের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর

পরিবারের বৈশিষ্ট্য বা মানদন্ডসমূহ

সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পরিবার। নিম্নে পরিারের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-

১। স্থায়িত্বঃ পরিবারের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। শত শত বছর পূর্বে পরিবারের উদ্ভব হলেও এর বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা এখনও নেই।একবিংশ শতাব্দির নগর সভ্যতা ব্যাপক উৎকর্ষ লাভ করলেও পরিবারের গুরুত্ব একটুও হ্রাস পাইনি।

২। প্রচীন প্রতিষ্ঠানঃ পরিবার সর্বপ্রথম কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে সমাজবিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে একমত যে পরিবার হলো প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। কৃষির সূচনালগ্নে মানুষ একত্রিত হয়ে পরিবার গঠন করে।

৩। বৈবাহিক সম্পর্কঃ পরিবার গঠনের পূর্ব শর্ত হলো বিবাহ।বিবাহ ছাড়া আধুনিক ও সভ্য সমাজের পরিবার গঠন সম্ভব নয়। বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী যুগল জীবনযাপন করে। কেবল স্বামী-স্ত্রী একটি পরিবার গঠন করতে পারে তাই বিবাহ ব্যতীত পরিবার গঠন সম্ভব নয়।

৪। সমাজের ক্ষুদ্রতম এককঃ সমাজে পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবার হলো সমাজের একটি ক্ষুদ্র একক। মাত্র ২ জন সদস্য যেমন স্বামী ও স্ত্রী নিয়ে একটি পরিবার গঠন হতে পারে। সমাজে এত কম বিশিষ্ট সদস্য আর কোন প্রতিষ্ঠান দেখা যায় না।

৫। নিরাপদ আশ্রয়স্থলঃ পরিবার হলো ঐ পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বিপদ- আপদে, সুখে-দুখে মানুষ পরিবারেই আশ্রয় খুজে। সারাদিন যেখানেই থাক কাজ শেষে মানুষ ফিরে আসে তার পরিবারে। অসুস্থ হলে সবাই পরিবারের সান্নিধ্য পায়।

৬। প্রয়োজন মেটানোর বাহনঃ পরিবার তার সদস্যদের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। শিশু, বৃদ্ধ, অসহায় সবাই পরিবারের উপর নির্ভরশীল। খাদ্য, বস্তু, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদি প্রয়োজন পরিবার থেকেই মিটিয়ে থাকে।

৭। সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনঃ পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহন। পরিবারের কোন সদস্য যা ইচ্ছে তাই করতে পারে না। পরিবারের সবাই সবার কাছে দায়বদ্ধ। সবসময় পরিবারের সদস্য এক অপরের উপর নির্ভরশীল।

৮। ক্ষুদ্রতম সংগঠনঃ পরিবার হলো সমাজের ক্ষুদ্রতম সংগঠন। সমাজকাঠামো গঠনকারী উপাদানগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্রতম উপাদান হলো পরিবার।

৯। জৈবিক সম্পর্কঃ পরিবার সমাজ অনুমোদিত পন্থায় স্বামী-স্ত্রীর জৈবিক সম্পর্ক বজায় রাখে এবং সন্তান উৎপাদনের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে।

১০। মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির ধারকঃ পরিবার একটি প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে সমাজের মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সংস্কৃতি স্থানান্তরের প্রধান বাহক। শিশুরা প্রথম শিক্ষা লাভ করে পরিবার থেকেই। পরিবারের মাধ্যমে তারা ভালো-মন্দ, শিষ্টাচার, ধর্মীয় ও সামাজিক আচরণবিধি শিখে থাকে। তাই পরিবারকে বলা হয় ব্যক্তিত্ব গঠনের মূল ভিত্তি।
পরিশেষে বলা যায় যে, পরিবার এমন একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান যা সমাজস্বীকৃত পন্থায় নারী পুরুষ এর একত্রে বসবাসের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। পরিবার হলো মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন পরিপূরকের প্রাথমিক কেন্দ্র।

No comments:

Post a Comment