রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ- রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো রাষ্ট্র। অপরদিকে, সমাজবিজ্ঞান হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা সমাজের প্রতিষ্ঠান, সংঘ, সংস্থা, সামাজিক পরিবর্তন, গতিশীলতা, সামাজিক ও মানবিক সম্পর্ক, আচার-আচরণ, মূল্যবোধ ও সামাজিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে। সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমুহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রাষ্ট্র। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।
রাষ্টবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানরে মধ্যে সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের দুটি পৃথক শাখা। মানুষ একাধারে যেমন সামাজিক জীব তেমনি রাজনৈতিক জীব। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তা আলোচনা করা হলো-
১। পরিপূরক সম্পর্কঃ রাষ্টবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানরে মধ্যে পরিপূরক সম্পর্ক বিদ্যমান।সমাজবিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান অপরিপূ্র্ণ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় মানুষ ও রাষ্ট্র। সমাজতত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে বিভিন্ন কার্যাবলি সংক্রান্ত জ্ঞান সরবরাহ করে থাকে।
২। উৎপত্তিগত সম্পর্কঃ রাষ্টবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানরে মধ্যে উৎপত্তির দিক থেকে ঘনিষ্ঠতা বিদ্যমান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় মানুষ ও রাষ্ট্র। রাষ্ট্র প্রথম অবস্থায় সামাজিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত ছিলো। কালক্রমে তা পরিবর্তিত হয়ে রাষেট্র রুপ নেই।
৩। সমস্যায় সমসূত্রতাঃ সামাজিক সমস্যা ও রাজনীতির মধ্যে সমসূত্রতা বিদ্যমান। এদিক থেকে সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।প্রচলিত অর্থে রাজনীতি ও সামাজিক সমস্যা প্রায় একই।
৪। নির্ভরশীল সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে নির্ভরশীল সমাপর্ক বিদ্যমান।সামাজিক বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সমাজতত্ত্ব লক্ষ করা যায়।
৫। অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সমাজতত্ত্ব থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়। সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান উৎপত্তি। রাজনৈতিক পরিবেশকে সামাজিক পরিবেশ থেকে পৃথক করা যায় না।
৬। সামাজিক কার্যকালাপঃ সামাজিক কার্যকালাপের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান এর মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। তারা উভয়েই কার্যকালাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৭। রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজতত্ত্বের মূলভিত্তিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের দর্শনের মূল ভিত্তি ছিলো সমাজভিত্তিক জ্ঞান, রাজনৈতিক বিপ্লব , পরিবর্তন রাজনৈতিক দল, নির্বাচনমন্ডলী, স্বার্থগোষ্ঠী ইত্যাদি আধুনিক সমাজতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, মানব কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি। উভয় বিজ্ঞানই সমাজের মানুষের সুশৃঙ্খল জীবনধারা নিয়ে আলোচনা করে। সমাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়। রাষ্ট্র সম্পর্কিত জ্ঞান লাভের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।