দারিদ্র্য কী? বিশ্বে দারিদ্র্যর কারণসমূহ আলোচনা কর।

দারিদ্র্য কী? বিশ্বে দারিদ্র্যর কারণসমূহ আলোচনা কর।

📚প্রশ্নঃ দারিদ্র্য কী?
অথবা, দারিদ্র্যতার সংজ্ঞা দাও?
অথবা, দারিদ্র্যতা বলতে কি বুঝ?

(সমাজবিজ্ঞান মাস্টার্স-ফাইনাল)

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দারিদ্র‌্যপ্রবণ দেশ। আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা দারিদ্র‌্য সমস্যা । আভিধানিক অর্থে দারিদ্র‌্যতা বলতে আমাদের অভাব-অনটনকে বোঝায়। এটি  এক প্রকার নেতিবাচক অর্লনৈতিক অবস্থা। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির অর্থনৈতিক দূর্বলতা, অস্বচ্ছলতা ও অক্ষমতাকে দারিদ্রতা বলে। দারিদ্রের প্রকাশ ঘটে আয়ের স্বল্পতা, জীবনধারনের নূন্যতম প্রয়োজন পূরণের ব্যর্থতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুযোগের অভাবের মাধ্যম।

দারিদ্র্য কী? বিশ্বে দারিদ্র্যর কারণসমূহ আলোচনা কর।

দারিদ্র‌্যর সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন মনীষী  বিভিন্নভাবে দারিদ্র‌্যর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকজনের সংজ্ঞা দেওয়া হলো-
সমাজবিজ্ঞানী গিলিন এর মতে-যাদের জীবন-যাপনের মান সমাজে বিরাজমান জীবনযাত্রার  মানের নিচে তারাই দরিদ্র। সেজন্য তারা সমাজ জীবনে মানবিক ও দৈহিক নৈপূণ্য প্রমাণে অক্ষম হয়।
বিশ্বব্যাংকের মতে- “যদি কোন ব্যাক্তির মাথাপিছু আয় ৫০১ বা তার কম হয় তবে সে দরিদ্র এবং তার পীড়াদায়ক অবস্থায় দারিদ্রতা। (১৯৬৯ সালের রিপোর্ট)
জি গোলার্ড এর মতে- দারিদ্র‌্য হলো এমন একটি পরিস্থিতি  যেখানে একজন ব্যক্তি ও তার উপর নির্ভরশীল অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের স্বাস্থ্য ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রবাদি সরবরাহের ক্ষেত্রে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়।

বিশ্বে দারিদ্র‌্যর কারণসমূহ:

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দারিদ্র‌্যপ্রবণ দেশ। আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা দারিদ্র‌্য সমস্যা । শুধু বাংরাদেশেই নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্যতম সমস্যা হলো দারিদ্রতা।দারিদ্রতাকে বৈশ্বয়িক সমস্যা ও বলা যায় আর  এ সমস্যা একদিনে সৃষ্টি হয়নি , নিম্নে দারিদ্র্যতার কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো-
১। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বৃদ্ধিঃ আমাদের দেশে যেমন দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সারা বিশ্বে তেমনই জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ বর্ধিত অবস্থার ফলেই বিশ্বব্যাপী দ্রুত দারিদ্র্যতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।
২। সম্পদ ও সুযোগের অসম বন্টনঃ বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো সম্পদের অসম বন্টন ব্যবস্থা। অধিকাংশ সম্পদ ধনীদের  হাতে এবং গরীবদের হাতে অল্প পরিমাণ সম্পদ। এছাড়া সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ ও ধনী- গরীবের মধ্যে অসমভাবে বন্টিত যার কারণে ধনীরা দিনে দিনে ধনী ও গরীবরা দিনে দিনে আরও গরীব হচ্ছে ফলে দারিদ্র‌্যতার হার ও বেড়ে চলেছে।
৩। সম্পদের স্বল্পতা ও ভূমি মালিকদের দৈরাত্ম্যঃ বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক সম্পদ বর্তমান বর্ধিত জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম । এছাড়া, ভূমির অসম বন্টনও দারিদ্র‌্যতা সৃষ্টি করে থাকে কারণ ভূমি মালিকদের দৌরাত্মের কারণে হতদরিদ্র‌্যরা আরও দরিদ্র হচ্ছে ।
৪। বর্ণ বৈষম্য, ধনী-গরীবের পার্থক্যঃ বিশ্বব্যাপী বর্ণ বৈষম্য খুবই প্রকট আকার ধারণ করেছে । সাদা  কালো চামড়ার মানুষের মধ্য  বর্ণ বৈষম্য বেশি যা বিভিন্নভাবে কর্মক্ষেত্র হতে শুরু করে জীবনযাপন এর মাঝে পার্থক্য দাড় করিয়ে দারিদ্র‌্যতার হারকে বাড়িয়ে তুলছে ।
৫। সুশিক্ষার অভাবঃ শিক্ষার অভাব, কারিগরি জ্ঞানের অভাব ও অদক্ষতা দারিদ্র‌্যতার পিছে অন্যতম কারণ। অশিক্ষিত ও অদক্ষ লোক অধিকাংশ কর্মহীন হয় যার ফলে তারা দেশের বোঝাস্বরুপ যা দারিদ্রতার অন্যতম কারণ এছাড়া কারিগরি শিক্ষার অভাবে দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি পায়।
৬। দুর্নীতি অনিয়ম ও ন্যায় বিচারের অভাবঃ দুর্নীতি একটি দেশের জন্য অন্যতম প্রধান সমস্যা দুর্নীতি একটি দেশের কাঠামো ও উন্নয়নকে ধ্বংস করে। দুর্নীতির ফলে একদল তাদের নিজেদের সম্পদের পাহাড়  গড়ছে অন্যদিকে এক শ্রেণীর মানুষ না খেয়ে দিন পার করছে। দুর্নীতির ফলে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে গরীবরা আরো গরীব হচ্ছে। দুর্নীতির ফলে যোগ্যরা অযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছে সব মিলে দুর্নীতির ফলে দেশের দারিদ্র‌্যতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
 ৭। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবঃ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে দারিদ্র‌্যতা বৃদ্ধির কারণ হলো সরকারের অসহযোগিতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। সরকারের খামখেয়ালিপনা দারিদ্র অবস্থাকে আরো প্রকট করে তুলছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পারে দারিদ্র‌্য অবস্থাকে দূর করতে।
৮। বিদেশি বিনিয়োগের অপর্যাপ্ততা ও সুযোগের অভাবঃ আমাদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগের অপর্যাপ্ততা দারিদ্র্যতাকে দিনের পর দিন আরও প্রকট করে তুলেছে।অনুন্নত দেশগুলিতে  বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ কমে যাওয়ায় এসব অনুন্নত দেশকে দরিদ্র করে ফেলছে।
৯। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যাঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসলীলা যে কোন দেশকে দারিদ্র‌্য করে ফেলতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এর ফলে দেশে দারিদ্র‌্যতা বিরাজ করে। এছাড়া নানা সামাজিক সমস্যার ফলে একটি দেশে দারিদ্র্র্যতা দেখা দেই ।
উযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দারিদ্র‌্যতা পূর্বে ছিল বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যৎ এ থাকবে এটা পুরোপুরি নির্মুল সম্ভব নয় তবে আমরা এই দারিদ্র‌্যতার প্রকোপ কমাতে পারি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আমাদের আন্তরিক হতে হবে ও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে তবেই দারিদ্র‌্যতা কমানো সম্ভব।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post