প্রশ্নঃ সমাজবিজ্ঞানের বিষয় বস্তু আলোচনা কর।
অথবা, সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়সমূহ কী কী ?
সমাজবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো সমাজ ও মানুষ। সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করায় মানুষের স্বভাব। মানুষের চাহিদা ও সমাজ দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। বর্তমানে সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে। সমাজবিজ্ঞান মানুষের সমাজ বা দলের বৈজ্ঞানিক শাস্ত্র অথবা সমাজবিজ্ঞান হরো মানুষের ক্রিয়াকর্মের বিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানে সমাজবদ্ধ মানুষের সামাজিক দিক এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। সমাজবিজ্ঞান সমাজ বা দলের বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করে থাকে তাছাড়া সামাজিক সমস্যা, সামাজিক কাঠামো, সামাজিক পরিবর্তনশীলতা, সামাজিক স্তরবিন্যাস ও সামাজিক গতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করে । মানবজীবনে এর ভূমিকা অনেক।
সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুঃ সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজ সম্পর্কিত জ্ঞান। মানুষের জীবনধারা পর্রিবতনের সাথে সাথে সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হচ্ছে। অগাস্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম ১৮৩৮ সালে সমাজবিজ্ঞানের রীতিবদ্ধ আলোচনা করেন। এছাড়া হার্বার্ট স্পেন্সার সমাজবিজ্ঞানের মূলনীতিগুলো স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নিম্নে সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১। পরিবার সমাজতত্ত্বঃ সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলো পরিবার। পরিবার হলো সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সমাজবিজ্ঞান পরিবারের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে আলোচনা করে।
২। শিক্ষার সমাজতত্ত্বঃ সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার উদ্দেশ্য, গুরুত্ব, শিক্ষাপদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার সম্পর্ক তুলে ধরে।
৩। সামাজিক স্তরবিন্যাসঃ সমাজে বিদ্যমান সামাজিক স্তবিন্যাস আলোচনা করে সমাজবিজ্ঞান এবং সামাজিক স্তবিন্যাসে এর ব্যবধান ও শ্রেণী নিয়ে আলোচনা করে।
৪। সামাজিক সমস্যাঃ সমাজে বিদ্যমান সকল সমস্যা তার প্রতিকার নিয়ে সমাজবিজ্ঞান াালোচনা করে । সমাজের মধ্যকার সকল সমস্যার উৎপত্তি ও তা কিভাবে নিরসন করা যায় সে বিষয়ের উল্লেখ আছে সমাজবিজ্ঞানে।
৫। ধর্মীয় সমাজতত্ত্বঃ সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম আর একটি আলোচ্য বিষয় হলো ধর্মীয় সমাজতত্ত্ব। মানুষের ধর্ম, আচার-আচরণ, রীতিনীতি ইত্যাদি সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।
৬। বিকিৎসা সমাজতত্ত্বঃ সমাজবিজ্ঞান রোগীর সামাজিক পটভূমি, রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কিত সমাজের মানুষের প্রচলিত বিশ্বাস, চিকিৎসা পদ্ধতি, সামাজিক দিক ইত্যাদি আলোচনা করে।
৭। সাংস্কৃতিক সমাজতত্ত্বঃ সমাজবিজ্ঞান সাংস্কৃতির ঐতিহ্যর উদ্ভব, বিকাশ এবং সমাজ জীবনে সাংস্কৃতির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।
৮। রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বঃ সমাজবিজ্ঞান সমাজে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের প্রভাব, উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে আলোচনা করে। সমাজে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বসবাস করে। সমাজবিজ্ঞান তা নিয়ে আলোচনা করে।
৯। গ্রামীণ ও নগর সমাজতন্ত্রঃ সমাজবিজ্ঞান গ্রামীণ সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও এর সমাধান, সামাজিকীককরণ, ধর্মীয় বিশ্বাস, কুসংস্কার ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে থাকে।
১০। সামাজিক জ্ঞান বিজ্ঞানঃ সমাজজ্ঞিান তার আলোচনায় সমাজ কাঠামো, জনসংখ্যা কাঠামো, তত্ত্ব, বন্টন, হ্রাস ও বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করে।
১১। আইনের সমাজতত্ত্বঃ সমাজবিজ্ঞান সামাজিক আইন, আইনের উৎস, প্রভাব কাজ কর্ম নিয়ে আলোচনা করে যা সমাজে বসবাসরত মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
১২। সামজিক পরিবর্তনশীলতাঃ সমাজ সর্বদা পরিবর্তনশীল । মানুষের চাহিদা যেমন দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে অনুরুপ সমাজ ও পরিবর্তন হচ্ছে ফলে সমাজ এর কাঠামো ও পরিবর্তিত হচ্ছে।
সর্বশেষ বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজ সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক আলোচনা। সমাজের সকল বিষই এর আলোচ্য বিষয়।তবে সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজবিজ্ঞানের পরিধি আরও ব্যাপক হচ্ছে। মানুষের জীবনে সমাজবিজ্ঞানের প্রভাব অপরিসীম।