এমিল ডুরখেইম এর আত্মহত্যার ধরণগুলো উল্লেখ কর Mention the suicide patterns of Emile Durkheim?

এমিল ডুরখেইমের আত্মহত্যার ধরণগুলো লিখ?

(Mention the suicide patterns of Emile Durkheim?)

অথবা, এমিল ডু্র্খেইমের আত্মহত্যার শ্রেণীসমূহ তুলে ধর?

ভূমিকাঃ এমিল ডুরখেইম (Emile Durkheim) একজন প্রখ্যাত ফরাসি সমাজতাত্ত্বিক যিনি আত্মহত্যার মতো ব্যক্তিগত বলে বিবেচিত বিষয়টিকে সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেন। তার মতে, আত্মহত্যা মূলত ব্যক্তির মানসিক সমস্যা নয়, বরং সমাজ ও ব্যক্তির সম্পর্কের ভাঙনের ফলাফল। এমিল ডুরখেইম (Emile Durkheim) সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আত্মহত্যা (suicide) বিষয়টিকে আলোচনা করেছেন। এমিল ডুর্খেইম সামাজিক সংহতি বিনষ্টকারী শক্তিসমূহ নিয়ে গবেষণাকালে আত্মহত্যা বিষয়টি নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেন। ডুর্খেইম তার আত্মহত্যাকে সামাজিক সংহতির সূচনা করে গবেষণায় ব্যবহার করেন।তারপর তিনি বিভিন্ন দেশের আত্মহত্যার সম্পর্কে বিশ্লেষণ প্রদান করেন।

এমিল ডুর্খেইমের আত্মহত্যার ধরণ


জৈবিক ও ভৌগলিক কারণের ভিত্তি বিশ্লেষণ করে বলেন যে, আত্মহত্যার সাথে এসব বিষয়ের নির্দিষ্ট কোন মাত্রাগত সম্পর্ক নেই, তবে ব্যক্তির সাথে সমাজব্যবস্থার নৈকট্যের মাত্রার উপরে ব্যক্তি আত্মহত্যার প্রেষণা নির্ভরশীল। আত্মহত্যা বলতে আমরা সবাই বুঝি নিজেই নিজের মৃত্যুকে।

এমিল ডুরখেইম (Emile Durkheim) আরও বলেন- ব্যক্তি অবস্থান যখন দুটি বিপরীত মেরুতে হয়  তখন তার আত্মহত্যার প্রেষণা বৃদ্ধি পায়। ডু্রখেইম তার এ ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে তিনি আত্মহত্যা (suicide) কে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন।

ডুর্খেইমের আত্মহত্যার ধরণসমূহ

নিম্নে এমিল ডুরখেইম এর আত্মহত্যার ধরণগুলো উল্লেখ করা হলো

১। আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা (Self-centered suicide): ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যকার  সংহতি যখন দূর্বল হয়ে পড়ে এবং ব্যক্তি নিজেকে সমাজ থেকে বিছিন্ন মনে করে তখন এ ধরনের  আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা (Self-centered suicide) ঘটে। আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা (Self-centered suicide) ব্যক্তির নিজের সৃষ্টি।

যেমন- একজন বৃদ্ধ যখন পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে তিনি নিজের একাকিত্বের অনুভূতিতে ভুগে তখন আত্মহত্যা পথ অবলম্বন করেন।


২। পরার্থমুলক আত্মহত্যা (Self-inflicted suicide): কোন সামাজিক আদর্শিক ও রাষ্ট্রীয় কারণে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতার দরুন ব্যক্তি যখন আত্মহত্যায় উদ্ভুত হয় তখন তাকে পরার্থমুলক আত্মহত্যা (Self-inflicted suicide) বলা হয়। যেমন-্একজন সৈনিক নিজের জীবনকে রাষ্ট্রের জন্য উৎসর্গ করে।


৩। নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা (Anarchic suicide): সমাজব্যবস্থায় যখন মানুষ আশা-আকাঙ্খা ও আচার-আচরণ সঠিক পথে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচলন করতে ব্যর্থ হয় তখন মানুষ সমাজ জীবন থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে এবং আদর্শবর্জিত বা নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যার (Anarchic suicide) দিকে ঝুঁকে পড়ে। যেমন- যারা হঠাৎ আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, তারা মানসিকভাবে দিশেহারা হয়ে অনেক সময় আত্মহত্যা কর্ন


উপসংহারঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে এমিল ডুরখেইম (Emile Durkheim) আত্যহত্যার বিষয়ে সমাজতাত্ত্বিক যে ব্যাখ্যা ও বিষয় তুলে ধরেছেন তা থেকে সামাজিক অবক্ষয়ের সূচক এর দৃষ্টান্ত মেলে । তিনি এ আলোচনায় তুলনামুলক পদ্ধতির আশ্রয় নেন। Emile Durkheim এর গবেষণায় বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণীর মধ্যে আত্মহত্যার আনুমানিক হারের তারতম্য বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় আত্মহত্যার জন্য সামাজিক ঘটনাবলি দায়ী।এমিল ডুরখেইম আত্মহত্যাকে নিছক ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং সামাজিক কাঠামোর প্রতিফলন হিসেবে বিশ্লেষণ করেছেন। আত্মহত্যার পেছনে সামাজিক সংহতি ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাত্রা কীভাবে কাজ করে, তা তিনি নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন। তার বিশ্লেষণ আমাদের শেখায় আত্মহত্যা প্রতিরোধে সমাজকে আরও সংহত, সহানুভূতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে।

No comments:

Post a Comment