রেঁনেসা কী? রেঁনেসার বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ (write down the Characteristics of Renaissance)

রেঁনেসা কী? রেঁনেসার বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ (write down the Characteristics of Renaissance)

📚রেঁনেসা (Renaissance) কী?

অথবা,রেঁনেসা বলতে কি বুঝ।

ভূমিকাঃ রেঁনেসা (Renaissance) সভ্যতার ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ন শব্দ। মাবসভ্যতাকে মধ্য যুগ থেকে আধুনিক যুগে নিয়ে আসার পিছনে মূল ভূমিকা পালন করে রেঁনেসা । অধিকাংশ তাত্ত্বিকগণের মতে, রেঁনেসা (Renaissance) বলতে মধ্যযুগের শেষে আধুনিক যুগের মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার সমন্বয় কে বোঝায়। রেনেসাঁ সূচনা হয় ফ্লোরেন্স প্রজাতন্ত্রে, ইতালির অনেক রাজ্যের মধ্য একটি।

রেঁনেসা কী?  রেঁনেসার বৈশিষ্ট্যসমূহ  লিখ

রেঁনেসা (Renaissance): রেঁনেসা শব্দের অর্থ পুনর্জাগরন বা নবজাগরন। বহুকালের অবহেলিত প্রাচীন গ্রিস এবং রোমের কৃষ্টি ও সাহিত্য নবজম্ম দান করার জন্য সমগ্র ইউরোপে ত্রয়োদশ শতাব্দিতে এক বিরাট সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে উঠে। এ সাংস্কৃতিক আন্দোলন ইউরোপের ইতিহাসে রেঁনেসা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এতএব বলা যায় যে রেঁনেসা মধ্যযুগীয় অন্ধকার থেকে ইউরোপীয় সমাজকে আলোর দিকে নিয়ে আসে ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ ঐতিহাসিক ডেভিস (Davies) বলেন-“মধ্যযুগে মানুষের শৃঙ্খলিত ও অবরুদ্ধ স্বাধীনতা প্রীতি ও সাহসিকতাপূর্ণ চিন্তাধারা যে পুনর্জম্ম তাই রেঁনেসা নামে পরিচিত।
আসলে রেঁনেসা বলতে বোঝায়, সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক তথা অন্য যে কোন ধরনের বন্ধন থেকে মুক্ত। আর চিন্তা, যুক্তি ও বুদ্ধি বৃত্তির উপ নির্ভর করে, শিল্প, সৌন্দার্য, দর্শন ও বুদ্ধি বৃত্তির চর্চা করা। রাষ্ট্র-সমাজে, শিল্পে-সাহিত্যে, ব্যবসা-বাণিজ্যে এক কথায় জীবনের সকল স্তরে বিপ্লব আনার নামই রেঁনেসা। (আহমদ, ২০০৪:৯৬১)
উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে রেঁনেসা হলো চিন্তা জগৎ এ জাগরণ। Renaissance রেঁনেসা মানুষের মধ্যে পুরাতন ধ্যানধারনা বদলে দিয়ে নতুন ধ্যানধারনার সৃষ্টি করে। ইতালিতে সংঘটিত রেঁনেসা ক্রমান্বয়ে ইউরোপ হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

রেঁনেসার বৈশিষ্ট্যসমূহ  লিখ

রেঁনেসা আন্দোলনের ফলে যে বৈপ্লাবক পরিবর্তন সাধিত হয় তা নিম্নরুপ-
১। হিউম্যানিজমঃ রেনেসা যুগের যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে তার মধ্য হিউম্যানিজম অন্যতম। এর মূল উপজীব্য বিষয় ছিলো মানুষের দেবত্ব গুনাবলিকে প্রাধান্য দিয়ে সাহিত্যকর্মে মানবতার জয়গানকে মুখর করে তোলা।
২। ধর্মীয় মুক্তিঃ রেনেসার পূর্বে মানুষের চিন্তা, সাহিত্য যাজক সম্প্রদায় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হত। ল্যাটিন ভাষায় লিখিত ‘দ্যা বাইবেল’ ছিলো সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ।
৩। যুক্তিবাদী মানসিকতার উদ্ভবঃ অন্ধ বিশ্বাসের পরিবর্তে সকল বিষয়কে যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেবার মানসিকতা হলো রেঁনেসার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৪। ব্যক্তিত্বের বিকাশঃ ধর্মীয় পরিমশুলে পোপ তার প্রশাসনিক পরিমন্ডলে রাজা বাদশাহ ব্যতীত তৎকালীন সমাজে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিত্বের কোন মূল্যয়ন ছিলো না। রেঁনেসা মানুষকে স্বীয় ব্যক্তিত্ব খুজে নিয়ে নিজের প্রাপ্ত আইনত অধিকারগুলো বাস্তবায়িত করার জন্য প্রেরণা যুগিয়েছিল।
৫। বিজ্ঞানের অগ্রগতিঃ ষোড়শ শতাব্দিতে প্রাকৃতিক ও গবেষনামূলক বিজ্ঞান চরম উৎকর্ষ লাভ করে। এক্ষেত্রে কোপারনিকাস, টলেমি ও গ্যালিলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে মানুষের মনে এ বৈজ্ঞানিক মননশীলতার পশ্চাতে ছিলো হিউম্যানিস্টি পন্ডিতদের দ্বারা উদীপ্ত নতুন যুক্তিবাদী ও অনুসন্ধানী যুক্তিবাদী।
৬। চিত্রকলার স্বাধীনতাঃ প্রাচীন গ্রিক সাহিত্যর প্রতি অনুরাগ ধর্মীয় প্রভাব বর্জিত কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও আকর্ষণ বর্ধিত হয়। ফলে কলা, স্থাপত্যবিদ্যা, ভাস্করবিদ্যা, সংগীত, চিত্রবিদ্যা ও অংকনবিদ্যা অনুশীলনের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবরবতন সূচিত হয়।

রেঁনেসা মধ্যযুগীয় অন্ধকার থেকে ইউরোপীয় সমাজকে আলোর দিকে নিয়ে আসে।রেঁনেসার (Renaissance) ফলে ধর্মনিরপেক্ষতা, শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনা, ঐতিহাসিক গবেষণায় যে চেতনা জাগ্রত হয় সেই চেতনাটি মানবসভ্যতাকে আজকের পর্যায় এ নিয়ে এসছে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post