কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য লিখ।
ভূমিকাঃ রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে বসবাসকারী জনগণের সর্বোচ্চ কর্তৃত্বপ্রাপ্ত সংগঠন। সমাজের কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হলো সেই রাষ্ট্র যা জনগণের সার্বিক কল্যাণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। সমাজের সকল ব্যক্তির অধিকার রক্ষা ও কল্যাণরাষ্ট্র জনকল্যাণে যাবতীয় কার্যাবলি রাষ্ট্রের সংখ্যা সর্বাধিক। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র (Welfare State) সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যঃ
কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা। নিম্নে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-
১। জনকল্যাণ সাধনঃ জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রথম কাজ জনগণের কল্যাণ করা। এটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রথম বৈশিষ্ট্য। এ রাষ্ট্র কল্যাণের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। এ রাষ্ট্র জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কল্যাণের সাথে কাজ করে।
২। ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষাঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম পরিবার হলো ব্যক্তি স্বাধীনতা সংরক্ষণ। রাষ্ট্র জনকল্যাণের সাথে ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। এ রাষ্ট্র ব্যক্তি স্বাধীনতা স্বকীয়তা রক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথকে উন্নত করে।
৩। অধিকার সংরক্ষণঃ অধিকার সংরক্ষণ জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের একটি অন্যতম দায়িত্ব। অধিকার নাগরিকের জীবন বিকশিত করে। খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানসহ অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র বদ্ধপরিকর।
৪। জীবনযাত্রার উন্নয়নঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম পরিসর হল জনগণের জীবনযাত্রার মানের নিশ্চয়তাবিধান। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের্র জনগণের রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে।
৫। ন্যায় প্রতিষ্ঠাঃ ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কার্যকরী ভূমিকা রাখে। অনেক উন্নয়নশীল দেশে ন্যায় বিচারের অভাব রয়েছে। এসব উন্নয়নশীল দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের একটি মৌলিক দায়িত্ব।
৬। শিক্ষা বিস্তারঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের আরও একটি বিশেষ কাজ শিক্ষা বিস্তার। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির মুক্তি আসতে পারে না। অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী কুসংস্কারাচ্ছন্ন মধ্যে ডুবে থাকে। অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কবল থেকে দেশকে রক্ষা বা মুক্ত করার দায়িত্ব সরকার তথা রাষ্ট্রের।
৭। চিত্তবিনোদনের অভাবঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা । চিত্তবিনোদন মানুষকে কর্মের প্রতি উৎসাহ যোগায়। কর্মময় জীবনের ফাঁকে মানুষ চিত্তবিনোদনের সুযোগ খোঁজে।
৮। সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান: অসহায়, বিধবা, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী এবং বেকার জনগণের জন্য বিভিন্ন ভাতা ও সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। এটি সমাজে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করে।
৯। চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি: মানুষের মানসিক বিকাশ ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্র চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করে। সংস্কৃতি, ক্রীড়া, সাহিত্য ও বিনোদনের প্রসারে রাষ্ট্র কাজ করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান সকল গণতান্ত্রিক বিশ্বে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র মানবকল্যাণে কাজ করে থাকে।কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কেবল একটি প্রশাসনিক কাঠামো নয়, বরং এটি একটি মানবিক দর্শন। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নাগরিক জীবনমুখী ও দেশকে সমৃদ্ধশালী করার উদ্দেশ্য বিভিন্ন কাজ করে থাকে। বর্তমানে কল্যাণমূলক কাজের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতএব বলা যায় জনগণের সার্বিক কল্যাণে কাজ করে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র।

No comments:
Post a Comment