রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী? what is political sociology?

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী?

 (what is political sociology)

ভূমিকাঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান হলো মূলত একটি মিশ্র প্রকৃতির বিজ্ঞান।সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সমন্বয়ে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান লাভ করে। এই দুই বিজ্ঞানের মধ্যে চলমান সংযোগ সম্পর্কের ফলে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আবির্ভাব হয়েছে। বিশ শতাব্দির পূর্ব থেকেই মানুষের জ্ঞান চর্চার অগ্রগতির ফলে সমাজবিজ্ঞানের শাখা সমূহ পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।আর এই শাখাগুলিকে । ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হয়। আর এই শাখাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের আবির্ভাব মূলত আধুনিককালে। যদিও এর আবির্ভাব আধুনিককালে তারপরও এর বিকাশ এখনও  বর্তমান।বর্তমানে বিশ্বের গতিশীল রাজনীতিতে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের নতুন নতুন ধারা সংযোজিত হচ্ছে যার ফলে মানুষের নিকট রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী


রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান (political sociology): সাধারণভাবে বলতে গেলে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে রাজনীতি নিয়ে আলোকপাত করা হয়, যেখানে রাজনীতির বিষয়বস্তুকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা না করে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়। সুতরাং রাজনৈতিক বিষয়াদি আলোচনার জন্য সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ধারার প্রয়োগ পদ্ধতিকেই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বলে।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান হলো ক্ষমতার অধ্যয়ন এবং সমাজ, রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক বিষয়ের মধ্যকার সম্পর্ক। রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যেখানে সমাজ, রাষ্ট্র, সামাজিক কাঠামো ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। অন্যভাবে বলা যায় রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সমাজ ও রাজনীতির পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের জনক ম্যাক্স ওয়েবার। তিনি ছাড়া বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা নিম্নরুপ-
উইলিয়াম সি মিশেল এর মতে-“রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীগণ যা করেন বা করেছেন বলে দাবি করেন তার সবকিছু নিয়েই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান।
অধ্যাপক টি বি বটোমোর বলেন political sociology is concerned with power in its social contest.
S. M. Lipset বলেন-“সমাজ, রাজনীতি, সমাজকাঠামো ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে যে বিজ্ঞান অধ্যয়ন করে তাই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান।”
theodore cap এর মতে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও শ্রেণী কাঠামোর সম্পর্কে পারস্পরিক অধ্যয়নকে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বলে।

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়সমূহ:

১. ক্ষমতার উৎস, প্রকৃতি ও বন্টন।
২. শ্রেণী ও সামাজিক স্তরবিন্যাস এবং এর প্রভাব।
৩. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ও মতাদর্শ।
৪. সামাজিক আন্দোলন ও নাগরিক সমাজ।
৫. রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক।
৬. গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র এবং অন্যান্য শাসনব্যবস্থার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।

সারসংক্ষেপ: পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান (political sociology) মূলত রাজনীতির বিষয়বস্তুকে রাজনৈতিক দিক দিয়ে না দেখে সামাজিক দিক বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। যেখানে সামাজিক অবস্থানটাই বেশি গুরুত্ব পায়। সুতরাং বলা যায়, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এমন একটি বিষয় যেখানে মানুষের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক এবং সামাজিক জীবনের রাজনৈতিক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। সামাজিক কাঠামোর মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতার অবস্থান, এর ব্যবহার এবং এর ফলাফল বিশ্লেষণ করাই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য। বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক জটিলতা এবং ক্ষমতার পরিবর্তনশীল প্রকৃতির আলোকে এই শাখাটির গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে।

No comments:

Post a Comment